শূণ্যতার পূর্ণতা তুমি পর্ব ১৪

শূণ্যতার পূর্ণতা তুমি পর্ব ১৪
রোকসানা আক্তার

সূবর্ণাকে নিয়ে এসে এবার আকাশ সবার সামনে যেয়ে বসলো।সূবর্ণাকে বললো,
আকাশঃসূবর্ণা?হয়েছে টা কি আসলে?সবকিছু ডিটেইলসে বলবি!আমি শুনবো….!
সূবর্ণা কাঁপতেছে খালি।মুখ দিয়ে যেন কোনো কথা আসছে না সূবর্ণার।আমি সূবর্ণার মুখের দিকে তাকালাম।চোখমুখ কেমন ডেবে গেছে।ঠোঁট শুঁকিয়ে গেছে।মাথার চুলগুলোও জট পেকে পাখির বাসার মতন হয়েছে!লাবণ্য মুখের মেয়েটার চেহারাটা কেমন যেন এই ক’দিনে হয়ে গেলো!আমার ভেতরটা কুঁকড়ে উঠলো সূবর্ণা কে দেখে।সূবর্ণাকে ভালো করে দেখতে পারিনি আমি।শাশুড়ী মা আমাকে সূবর্ণার রুমে যাওয়া নিষেধ করে দিয়েছিলেন!আকাশ আবারো।বলে,

“বলছিস না কেন?”
“ভাইয়া…।”
“হু,বল?”
“ভাইয়া ভাবীর কোনো দোষ নাই!সব দোষ আমার!ভাবী কিছুই জানে না এ ব্যাপারে!”
বলে কাঁদতে থাকে সূবর্ণা!আকাশ বলে,
“আমিতো তোকে তোর ভাবীর কথা জিজ্ঞেস করিনি।আমি বলতেছি প্রথম থেকে সব বল,ওই ছেলের সাথে তোর কীভাবে কি হয়েছে,কিভাবে প্রেম,সব বুঝিয়ে বল!”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা আসতেছে না ভাইয়া।”
বলে সূবর্ণা আবারো কেঁদে উঠে।আমি দেখতেছি আকাশ রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতেছে।চোখ টকটকে লাল হয়ে গেছে আকাশের!আকাশের রাগের পরিমাণটা এই জীবনে আজ প্রথম আমার বেশি চোখজোড়া আওড়ালো!আকাশ বললো,
“আমি তোকে কি মেরেছি?আমি তোকে কি বকা দিয়েছি!?”
“নাহ!”
“তাহলে বলতে অসুবিধে কোথায় তোর!?”
পাশ থেকে সানহা বলে,

“কিভাবে সাজিয়ে মিথ্যে বানিয়ে ভাবীর কাহিনীটা গল্প থেকে কাট করবে সেই চিন্তা করতেছে!”
“আমি কি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি সানহা!”
সানহা চুপ হয়ে যায় আকাশের কথায়!সূবর্ণাি বুঝতেছে ভাইয়া রেগে আছে।তাই বুকে সাহস নিয়ে টপটপ করে বলতে থাকে সব তারপর!সবাই সব শোনে!কথার শেষে আবারো বলে,
“ভাবীকে কিছু বলো না ভাইয়া!ভাবী কিছুই জানে না।মা-আন্টি,আপু উনারা সব আন্দাজে ভাবীর নামে অপবাদ দিচ্ছে!”
আকাশ সূবর্ণার কথায় পাত্তা দিলো না তেমন।বললো,
“নিহালের নাম্বার আছে তোর কাছে?”

“নাম্বার নাই।কিন্তু…!”
“কিন্তু কি…?”
গলার স্বর খুব ছোট্ট করে বলে,
“মুখস্ত!”
সবাই তা শুনে মুখে হাত!শাশুড়ী মা বলে,
“দেখছিস দেখছিস নাম্বার মুখস্থও রাখে!ওরে কুটিকুটি করে ভাঁজ তাহলে শিক্ষা হবে বেয়াদপটার।”
“নিহালের নাম্বারটা বল!”
সূবর্ণা নাম্বার বলার পর আকাশ তা ফোনে তুলে।তারপর কল লাগায়।ঢুকেও কল।রিসিভ হয় সাথে সাথে ওপাশ থেকে,
“হ্যালো?”
“কেডা?”
“জ্বী,আমি সূবর্ণার ভাই!”

“জ্বী,ভাই আসসালামু আলাইকুম বলেন।আপনারা সবাইতো আমাকে দেবদাস বানিয়ে রাখলেন!কত মিস করতেছি আমার জানুটাকে!জানু আমার কি করে?”
“জানুর কথা পরে বলবো…।আমাকে কিছু কি সত্য তথ্য দিতে পারবেন?”
“হু,অবশ্যই ভাই।কেন দিবো না।বলেন আপনি!”
“সূবর্ণার সাথে তোমার প্রে কীভাবে?”
“ওহ এইটা জানবার জন্যে কল!?তাইতো ভাবি আমাকে সূবর্ণার ভাই ক্যান কল দিব!”
“যেটা বলেছি সেটার জবাব দাও আগে!”
“কিন্তু ভাই বললে যে আপনার সংসারে আগুন লাগবে?”
“আগুন..?”

“জ্বী!আপনার বউ ই তো সব!সে ই তো সূবর্ণার সাথে প্রেম করার জন্যে আমাকে উশকিয়েছে!সূবর্ণা যাতে তাকে সাপোর্ট করে সবকিছুতে!আপনাদের সংসারে তো প্রথমে তূখান্ড ঝামেলা ছিল!সব জানিতো আমি।সুপ্রভা বলেছিলো!”
“তুমি রাখতে পারো তাহলে…!”
“আর কিছু শুনবেন না?”
“প্রয়োজন নেই!”
বলে কল কেঁটে দেয়!সূবর্ণার সাথে আমারো সারা শরীর কাঁপতেছে!সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে এবার!আমার চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি বেয়ে পড়ে এবার!আমি কথাও বলতে পারছি না!সূবর্ণা বারবার বলতেছে,
“ভাইয়া,উনি সব মিথ্যা বলতেছে!”
আন্টি বলেন,

“পেয়েছিস তো প্রমাণ?আমার মিথ্যা বলি সবাই!হু!!!”
আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না।পেছন ঘুরে রুমে চলে এলাম!বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম।রেলিং শক্ত করে ধরলাম!ভেতরটা আমার এতটা জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে কেনো?আমার মনে শান্তি নাই কেনো?কেনো শান্তি নাই!হে আল্লাহ,একটু শান্তি দাও আমাকে! আর কত অগ্নি পরিক্ষায় ফেলবে আমায়!আমি যে আর পারছি না!তারপর আকাশকে আর রুমে আসতে দেখি নি।আমিও আর রুম থেকে বের হইনি।

জানি না বাইরে কি হচ্ছে!বিছানার উপর চুপচাপ বসে থেকেছিলাম!শরীরটা ভালো নেই।কেমন যেন লাগতেছে।শক্তি নাই এক পশলাও।রাত এগোরটা বাজতে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকার আওয়াজ পাই।কিছুটা বেঁকে বুঝলাম আকাশ ঢুকেছে!আকাশ আমাকে কিছু বললো না।বাথরুমে ঢুকে গেলো সোঁজা।সে ভীষণ ক্লান্ত!এসেছে আর তো বিশ্রামও নিতে পারেনি।আমি পাশ ফিরে শোয়ার প্রস্তুতি নিলাম এবার।

আকাশ মনে হয় তার পনেরো মিনিট পর বের হলো বাথরুম থেকে।কিছুক্ষণ সারা রুমে খটখট করে বিছানায় এলো!হয়তো আমার দিকে তাকিয়ে আছে!আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছে বলতে কিছু আকাশকে…!কেনজানি বলতেও পারছি না!কান্না করতে ইচ্ছে করতেছে খালি তার সামনে।এমন সময় বমি পায় খুব!তরহর শোয়া থেকে উঠে যাই!কিন্তু পা বাড়িয়ে নিচে নামতে গেলেই “ওয়াক” শব্দ তুলে পুরো বিছানা লন্ডবন্ড করে দিই।আকাশের গাঁয়েও ছিটকে বমি যায়!কিন্তু আকাশ কোনো উল্টো রিয়াকশন না করে আমার মাথা ধরতে আসে।বলে,
“আস্তে আস্তে,এখানেই শেষ করো পুরো বমিটা!নাহলে পুরো ঘর হবে।”

আমি আকাশের কথায় বিছানায় সবটা ঢাললাম পেঁটে যত মলমূত্র ছিল।বমিটা শেষ হয়ে এলে খাটের চৌকাঠ ধরে উঠে দাঁড়ালাম।তারপর আস্তে আস্তে পা ফেলে বাথরুমে গেলাম।মুখে পানি মারতে থাকলাম অনেকক্ষণ!বাথরুমে প্রায় অনেকগুলো মিনিটস কেঁটে যায় আমার!তারপর বের হই।বের হয়েই দেখি আকাশ আগের বিছানার চাদরটা পালটে নতুন আরেকটা বিছিয়েছে!অবাক হলাম খুব!আর নিচেও যে কিছুটা বমির কণা ছিটকে পড়েছে তাও পরিষ্কার করেছে!আমি জানি না এই মুহূর্তে আমার কেমন রিয়াকশন করা উচিত!চুপচাপ যেয়ে শুয়ে পড়লাম আবার!আকাশও একটুপর আমার পাশে এসে বসলো!তারপর ছোট গলায় বললো,

“স্যালাইন করে দিব?”
আমি দু’পাশে মাথা নাড়লাম।আকাশ আবার বললো,
“সুপ্রভা!”
সাথে সাথে আমার ভেতরটা ধক করে উঠলো।আমি উঠে বসার চেষ্টা করলাম তখন।আকাশ বাঁধ সাঁধলো!
“উঠার দরকার নেই তোমার!আমি যেটা বলতাম…আমি তোমাকে ভুল বুঝি নি!আমি সবগুলো মেসেজ দেখেছি!সানহা সব ডিলিট করে দিয়েছিলো আমি সব ব্যাক করলাম আবার!সব মেসেজ পড়লাম আবার।দেখে যা দেখলাম তুমি এতে নেই!আমার আগেও বিশ্বাস ছিল তুমি এরকম করবে না!আমার লক্ষীটি কখনোই আমার খারাপ চাইবে না আমার আমার বিশ্বাস ছিল!”

আমার চোখে পানি চলে এলো সাথে সাথে।শরীরের ক্লান্তিও হার মানলো না আর।উঠে বসে আকাশকে জড়িয়ে ধরলাম আষ্টেপৃষ্টে!কেঁদে দিলাম এবার!খুব কাঁদতে থাকলাম!আকাশ বলে,
“আরেহহ পাগলী কাদতেছে যে..!এই সুপ্রভা?এই?”
কান্না যেনো আর থামছেই না!
“সুপ্রভা?”
আমি কান্নামুখর কন্ঠে বললাম,
“আমি ভাবলাম আপনি আমাকে ভুল বুঝেছেন!আপনি যদি সত্যি সত্যি আমাকে ভুল বুঝতেন আমি কতটা কষ্ট পেতাম জানেন!একদম মরেই যেতাম!”

“দাৎ বোকা!তুমি জানো না সুপ্রভা আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি।কত যে মিস করেছি তোমাকে!”
বলে আকাশ আমাকে আবারো জড়িয়ে নেয়।তারপর কিছুক্ষণ ধরে চলে আমাদের এই মান-অভিমান।কথার শেষ পর্যায়ে আমি আকাশের কানের কাছে আমার মুখটা এনে ফিসফিস করে বলি,
“শুনবেন একটা কথা?জানেন কিছু আপনি?”
“কি..!”
“আমার বলতে লজ্জা করে!” বলে মাথাটা নুইয়ে ফেললাম।আকাশ কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে রইলো।বললো,
“বলো?”
“আপনি বাবা হতে যাচ্ছেন!আমি আজ সাড়ে তিনমাস প্রেগন্যান্ট!”
আকাশের যেন বিশ্বাসই হলো না আমার কথা!বললো,
“সত্যি!”

শূণ্যতার পূর্ণতা তুমি পর্ব ১৩

আমি মাথা নেড়ে ইঙ্গিত করলাম “হ্যা।” আকাশ কি বলবে,কি করবে কিছুই যেন আসছে না মাথায়!আমাকে জোর করে বিছানায় শুইয়ে দিলো!আমার শরীরের উপর আলতো করে শুয়ে বললো,
“এই পাগলী আমাকে কিছু জানাও নি কেনো!এত বড় খুশির সংবাদ!”
“সারপ্রাইজড হবেন তাই!”
“হয়েছি।অনেক!”
দুজনের উষ্ণতা জড়ানো কথার মাঝে আমার ঠোঁটের উপর আকাশের উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে কেঁপে উঠলো সর্বাঙ্গ!

শূণ্যতার পূর্ণতা তুমি পর্ব ১৫