শূণ্যতার পূর্ণতা তুমি পর্ব ১৩

শূণ্যতার পূর্ণতা তুমি পর্ব ১৩
রোকসানা আক্তার

শাশুড়ী মায়ের কথায় আমার ভেতরটা ঠুকরে উঠে খুব!আতঙ্কে চোখমুখ লাল হয়ে আসে।নিহাল আসলে চাচ্ছে টা কী!কী উদ্দেশ্য তার!?
সেদিন ছিল ভরদুপুর।আমি শুয়ে আছি।শরীরটা ভীষণ অসুস্থ।নিস্তেজ শরীরটা নিয়ে উঠতে হাঁটতে আর রথ চলছে না।ইদানীং একটু বেশিই দুর্বলতা লাগে!কোনকিছুই খেতে করে না।খাবার দেখলেই নাকে গন্ধ আসে।বমি করে দেওয়া অবস্থা হয়ে যায়!

কিন্তু আমার অবস্থা কেউই বুঝে না!আর বুঝবেই বা কে!সূবর্ণা যা একটু বুঝতো,সেও রুম বন্দী।তাকে রুম থেকেই বের হতে দেয় না শাশুড়ী মা।ঠিক এমন সময় কল বেজে উঠে আমার ফোনের।আমি নাম্বারটির দিকে তাকিয়ে অবাক!বিদেশ থেকে কল করেছে কেউ!ভেতরটা কম্পন করে উঠে খুব!আকাশ কল করেছে না তো?রিসিভ করতেই হ্যাঁ আকাশ!
“হ্যালো সুপ্রভা?সুপ্রভা কেমন আছো?”
দীর্ঘ তিনমাস পর আকাশের গলার স্বর শুনতে পেলাম।কেনজানি চোখে পানি জমে গেল।কিছু অস্ফুট আর্তনাদও করে উঠলাম!আকাশ বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“তুমি কাঁদতেছো সুপ্রভা?কিছু হয়েছে সুপ্রভা?”
আমি যেন কোনো কথাই বলতে পারছি না।এমন সময় দরজায় করাঘাত পড়ে।শাশুড়ী মা দরজায় কড়া নাড়তেছেন।আমি ফোনটা হাতে নিয়েই দরজা খুলে দিই।শাশুড়ী মা সাথে সাথে আমার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে যান।ফোনটা কানে নিয়ে বলেন,
“তুই আসবি কবে?তোর কোনো খোঁজ নাই কেনো?”
আকাশ কি বললো শাশুড়ী মাকে শুনলাম না।শাশুড়ী মা বলেন,
“বাসায় অনেককিছু হয়ে গেছে যা তোকে আমি বুঝিয়ে বলতে পারবো না।তুই তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।

———–
” কবে আসতেছিস তাহলে?”
———-
“আচ্ছা।রাখ।বাকি কথা বাসায় আসলে হবে।”
কল নিজেই কেঁটে দিলো শাশুড়ী মা।আকাশের সাথে একটু মন খুলে কথা বলতে পারলাম না।আকাশও হয়তো কথা বলতে চেয়েছিল খুব।দু’জনই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম দুই পাশ থেকে।শাশুড়ী ফোনটা নিজের হাতে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে বলেন,
“বেসিনে যে দুপুরের এঁটো থালাবাসনগুলো রেখে এসেছো।তা ধুঁবে টা কে!”

বলেই চলে যান!আমি ফোনটার দিকে একপলক তাকাই।শাশুড়ী মা কিছুটা দূরে চলে গেলে ফোনটা হাতে নিই।দাঁড়িয়ে থাকি ফোনটা নিয়ে কিছুক্ষণ।আকাশের আর কোনো কল এলো না।এক পশলা নিশ্বাসে বুকটা আবার ভারী হয়ে উঠলো!
দিন তিনেক কেঁটে গেলো।তখন দুপুর।রোদের ঝাঁ ঝাঁ গরমে শরীর থেকে বুদবুদ করে ঘাম ঝরতেছে!সানি বার কয়েক উকি মেরে গেছে আমাকে।কারণ গতকাল রাতে ওকে বলেছিলাম আমি ছোট্ট বেলায় আমার নানুদের বাঁশ ঝাড়ের কাছে একটা সাদা শাড়ি পড়া মহিলা ভূত দেখেছিলাম।ভূত দেখেছি শুনেই আমার আর পিছু ছাড়লো না।কাহিনীটা শুনবে শুনবে…তখন বলেছি বড় ছেলে,এসব শোনার ইন্টারেস্ট কম।কিন্তু বিদেশে বড় হওয়া এরা যে এসব আজগুবি গল্পে বোকা থাকে তা সানিকে না দেখলে বুঝতামই না।থালাবাসন ধোঁয়া প্রায় শেষের দিকে, সামি আবারো আসি,

“ভাবী!কখন তোমার বিজি শেষ হবে?আমাকে আর কত অপেক্ষা করাবে বলো?”
আমি সানির দিকে তাকিয়ে হাসলাম।খুবই মিষ্টি চেহারা সানির।দেখতে মায়া মায়া খুব!এমন সময় শাশুড়ী মা চোখমুখ বড় করে করে কৌতূহল বসত দরজার দিকে যেতে যেতে বলেন,
“আকাশ!”
সানি সেদিকে তাকিয়ে,
“আকাশ ভাইয়ার মতন দেখতে!”
তারপর হলরুম জুড়ে কথাবার্তার কোলাহল!আমি হাতটা মুছে কিচেনের দরজার দিকে এগিয়ে হলরুমের দিকে উকি মারি একটু।আকাশ এসেছে!তবে আমি উকি মারাতে আকাশের নজর যায়!দেখে ফেলে আমাকে।দেখে সামান্য চোখজোড়া কুঁচকে ইশারায় বুঝায়,

“কি অবস্থা হু?”
আমি নৈশব্দে হেসেে দিই শুধু।তখন সানহা এবং তার মেঝো বোন এগিয়ে যায় আকাশের দিকে।সামহা আকাশের দিকে হাত বাড়িয়ে,
“হাই ভাইয়া,আমাকে নিশ্চয়ই চিনতে পেরেছেন।বুঝতে অবশ্যি আমাকে অসুবিধে হয়নি?”
আকাশ সানহার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।সানহার চোখমুখ রহস্যময়। আকাশ আমতা আমতা কন্ঠে বলে,
“সানহা?”
“য়ু হু,ভুল!”
“তাহলে সিনতু?”
সিনতু হলো আন্টির মেঝো মেয়ের নাম।সিনতু পাশ থেকে খিলখিল করে হেসে দেয়!আকাশ অপ্রস্তুত হয়ে যায়!মাথা চুলকায়!সানহা দুইদিকে হাত ভাঁজ করে এবার মুচকি হাসে!আকাশ।আনার বলে,

“আন্টির মেয়ে,না আন্টি?”
“আন্টির বড় মেয়ে বুঝতে পারলেন!নাম ভুলে গেলেন!”
আকাশ বলে,
“আসলে বুঝে উঠতে সমস্যা হয়েছিল।নাম তো তোমাদের প্রায় মিল!তবে তুই না খুব ছোট্ট ছিলি?এত বড় হয়ে গেলি?কিসে পড়িস তুই এখন?”
“মা শুনো?কি বলে!আমি নাকি ছোট্ট!আমি তোমার ৩.৫ বছরের মাত্র ছোট্ট!”
“সো ডিফারেন্স!”
“হইছে!”
আকাশ হাসে।সানহা রাগ করে ফেলেছে তাকে ছোট্ট বলাতে তাই।আমি সেদিকে হেঁটে যাই এবার।এমন সময় আকাশ আশপাশে তাকিয়ে বলে,
“সূবর্ণা কোথায়?সূবর্ণাকে যে দেখতেছি না মা!”
সাথে সাথে ঝংকার গলায় বলে উঠেন,

“বাহহহ….এতক্ষণে তাহলে জিজ্ঞেস করলি?”
“কি হয়েছে মা?”
শাশুড়ী মা বলতে যেয়েও দমে যান!বোনের দিকে তাকিয়ে,
“তুই বল ওকে!”
এ বলে শব্দ করে হেঁটে যেয়ে সোফার উপর বসেন!আকাশ আন্টির দিকে তাকিয়ে,
“কি হয়েছে আন্টি? ”
সাথে সাথে সানহা বলে উঠে,

“কি হয়েছে?তোমার বউকে গিয়ে জিজ্ঞেস করো!”
আকাশ চোখমুখ কুঁচকে আসে।তারপর আমার দিকে তাকায়।আমার চোখ থেকে আপনাতে কেনজানি এবার ছলছল করে পানি টপকাতে থাকে!আকাশ আমার দিকে আসতে পা বাড়ায় সানহা বলে উঠে ঠিক সেই মূহুর্তে,
“তোমার বউ তোমার বোনের ইজ্জত তার আপন কাজিন,নিহাল নামের ওই কুলাঙ্গারকে দিয়ে ডুবিয়ে দিচ্ছে!নিহালকে তো ভালে করেই চেনো,না?”
আকাশ বলে,
“নিহাল!?”
“হু।”

“মানে নিহালের সাথে কি!”
“বললাম তো সব তোমার বউ!”
“কি করেছে নিহাল?”
তখন আন্টি স্বাভাবিক কন্ঠে গুছিয়ে বলে,
“বাবা যা হবার হয়েছে!মাথা গরম করো না!এখন সূবর্ণার যাতে সামনে আর কোনো সমস্যা না হয় সেটা ভাবতে হবে!ওই ছেলে তোমার বোনের সাথে ছয় মাা সম্পর্ক করতেছে!তোমার অবুঝ বোন ওই ছেলেকে উল্টাপাল্টা মনে হয় ছবি দিয়েছে!বা কেউ দিতে উসকাইছেও কি না জানি না।কারণ,সূবর্ণা ছোট্ট, ওকে অন্যকেউ যা বলবে তা করতেও পারে!এখন ওই ছেলে বলে সূবর্ণার খারাপ ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল করে দেবে!বারবার ফোন দিয়ে হুমকি দিচ্ছে!”
শাশুড়ী মা কেঁদে উঠে!কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“ছেলে আমার বুঝে না!এখনো মনে হয় অবুঝ!আজকে এসব বাসায় কি হচ্ছে?কার কারণে হচ্ছে?কারণ কি এখনো ধরতে পারছে না?!আমার মেয়ের ইজ্জত নিয়ে হানাহানি এখন!সমাজে মুখ দেখাবো কিভাবে!কিভাবে!”
আকাশ রেগে গেছে হয়তো!বলে,

“সেই ফোনটা দাও আমাকে!যে নাম্বারে ও কল করে!”
সানহা বলে,
“আগে তোমার বউকে সামলাও!সবকিছু উনিই লকরতেছেন!এইজন্যেই তো সূবর্ণার প্রিয় ব্যক্তি তোমার বউই হতে যাবেই বা কেনো?!ওই যে ছোট্ট অবুঝ মেয়ের দুজন মিলে ব্রেণ ওয়াশ করেছে?!”
আকাশ চুপ করে থাকে!চুপ করে থাকার মাঝে আমার দিকে তাকায়!ভাবভঙ্গিতে ফুঁটে উঠছে,
“সূবর্ণা ওরা এসব কি বলতেছে!”
আমি আকাশের মনোকথা বুঝেও কোনো উত্তর করতে পারছি না!চোখে পানি ভাসছে।দমমুখ বন্ধ করে বলো উঠলাম,
“নাহ নাহ নাহ!সব মিথ্যে!আমার নামে মিথ্যে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে সব!আমি কিছুই জানি না!”
আকাশ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো।তারপর সবার দিকে।তারপর ছোট্ট একটা দম ফেলে চলে গেল রুমে!

আকাশ চলে যাওয়ার পরপরই সানহা আমার দিকে ঘুরে তাকালো।বলে,
“তুমি ভাবছো ওই ছেলে কে!আমরা তার কিছুই জানি না?এই সানহা!বাংলাদেশে কম আসি,তাই বলে বাংলাদেশের মানুষগুলাকে যে কম চিনবো ওইরকম মেয়ে আমি নই।তোমার বাপ-দাদা চৌদ্দ গুষ্টিকেও এই সানহা বের করতে পারবে!”
আন্টি বলেন,
“যাও যাও এবার স্বামীর কানের কাছে গুজগুজ করে স্বামীকে আবার নিজের কথায় নিয়ে আসো!”
আন্টি কথাটা ইনসাল্ট করে বলেছেন তা বুঝতে পেরেছি আমি।আমি বললাম,
“সব যে আপনাদের প্লান মতন হচ্ছে তা আমি বুঝতেছি!তবে দেখবো কতদূর যায় আপনাদের প্লান!”
এ বলে রুমে এলাম।আকাশ চোখমুখ বন্ধ করে বিছানার উপর চুপচাপ বসে আছে!আমি আলতো পায়ে হেঁটে আকাশের পাশে বসলাম।আকাশ বুঝতে পারলো আমি যে বসলাম।সে কিছুটা নড়ে উঠলো।তারপর মাথা তুলে দৃষ্টি জানলা বরাবর বাইরের দিকে দিয়ে তাকিয়ে রইলো!আমি কাঁপা কাঁপা মুখে বললাম,

“ভালো আছেন?”
আকাশ কোনো জবাব দিলো না!আমি চুপ করে গেলাম।কিন্তু চুপ করেও থাকতে কষ্ট হচ্ছে আবার!আবার বললাম,
“সূবর্ণার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না!তবে হ্যাঁ,সূবর্ণা আমার কাজিনের সাথে রিলেশন করে এটা সত্য!কিন্তু বিশ্বাস করেন ও যে রিলেশন করে তার কিছুই আমি জানি না!আর নিহাল যে সূবর্ণার সাথে প্রেম করছে তা আমিই একমাত্র কারণ?এইটা কোনো রিজন হয়?নিহাল কি সূবর্ণা কে আগে থেকে চেনে না?বা সূবর্ণাও নিহালকে?যে প্রেম আমি করিয়ে দিব?!”
আকাশ কথা বলতেছে না কোনো!আমি তাকিয়ে রইলাম আকাশের জবাবের অপেক্ষায়!আকাশ উঠে দাঁড়িয়ে এবার বেলকনিতে চলে গেলো!আমিও পেছন পেছন গেলাম আকাশের।বললাম আবার,

“তুমি বিশ্বাস করেছো তাদের কথা?”
আকাশ এবার আমার দিকে তাকালো।মিনিট দেড়েকের মতন তাকিয়ে থেকে জবাব তুললো,
“সূবর্ণা কোথায়?”
“সে তার রুমে।”
আকাশ ছুটে গেল সূবর্ণার রুমের দিকে!

শূণ্যতার পূর্ণতা তুমি পর্ব ১২

(আর ইররেগুলার হবো না।আজকে রাতে ১২ টাট দিকে আরেকটা পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করবো।)

শূণ্যতার পূর্ণতা তুমি পর্ব ১৪