বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ শেষ পর্ব 

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ শেষ পর্ব 
সাদিয়া জাহান উম্মি

দেহের মাঝে আলাদা এক অন্যরকম শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।কাঁপছে শরীর অনবরত।ঢোক গিলছে একেরপর এক আরাবী।আলতো করে বামহাতটা পেটের উপর ছোঁয়ালো।সত্যি সত্যিই কি ও মা হতে যাচ্ছে? ওর আর জায়ানের ভালোবাসার চিহ্ন ওর পেটে আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। ওদের সন্তান আসতে চলেছে?প্রচন্ড খুশিতে দুহাতে মুখ চেপে কেঁদে উঠলো আরাবী।সাথি সাথে সাথে আরাবীকে বুকে জড়িয়ে নিলেন।আরাবীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেন,’ আহা বোকা মেয়ে।কাঁদে না।এতোটা কান্না করার মতো কিছু না।এটাতো খুশির সংবাদ।আমাদের বাড়িতে একটা নতুন অথিতি আসতে চলেছে।তুমি মা হবে আরাবী কাঁদে না তো।’

আরাবী সশব্দে কেঁদে সাথিকে ঝাপ্টে ধরে বলে উঠে,’ মা আমি আপনি বুঝতে পারছেন না মা।আমার মনের ভীতরটায় কি চলছে।আমি ভাষার মাধ্যমেও আপনাকে বুঝিয়ে বলতে পারবো না।’
আরাবী মা হেসে দিলেন জলভরা চোখ নিয়ে মেয়ের কথা শুনে।তিনি আরাবীর মাথায় হাত রেখে বলে,’ মেয়ের আমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।কি বলছিস এসব?ভাবি আর আমি বুঝবো না কিভাবে?বড় ভাবি দুটো সন্তানের মা হয়েছে, আমি তোর মা আর মিলি ভাবি ইফতির মা।আমরা বুঝি মা হওয়ার অনুভূতিটা কতোটা মিষ্টি।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আরাবী সাথিকে ছেড়ে এইবার ওর মা’কে জড়িয়ে ধরে বসে রইলো কতোক্ষন।পুরো বাড়ি জুড়ে হৈ-হুল্লোড়। সাথি উঠে চলে গেলেন।তারপর একটু পর একগাদা ফল কেটে এনে আরাবীকে জোড় করে খাইয়ে দিলেন।সাথি এইবার নূরকে বললো,’ জায়ানকে ফোন করে জানাবি না খবরটা? ওযে বাবা হচ্ছে এটা শুনলে নিশ্চিত ছেলেটা আমার ছুটে চলে আসবে।’
আরাবী কিভাবে কথাটা বলবে ভেবে পাচ্ছে না।তাও লাজ লজ্জা একসাইডে রেখে। নত মস্তকে মিনমিন করে বললো,’ মা,একটা কথা প্লিজ।উনাকে আপনারা কেউ এই বিষয়ে জানাবেন না।আমি উনাকে নিজেই বলবো সার্প্রাইজ দেবো।’

সবাই হেসে দিলো আরাবীর কথায়।লজ্জা পেলো আরাবী।গালগুলোতে লাল আভার রেশ দেখা দিলো।সাথি আরাবীর কপালে চুমু খেয়ে বলেন,’ তুমি যা চাইবে তাই হবে। আমরা কেউ কিছু বলবো না।ঠিক আছে?’
আরাবী লাজুক হেসে মাথা নাড়ালো।এরমাঝেই নাহিদ সাহেব আর ইফতি দুজন চিল্লাতে চিল্লাতে বাড়িতে প্রবেশ করলো।পারলে খুশির চোটে তারা এই ঘরশুদ্ধ মাথায় তুলে নাচতেন।আরাবী মা হবে জানতে পেরে তারা তৎক্ষনাৎ ছুটে চলে গিয়েছিলেন মিষ্টি আনতে।একগাদা মিষ্টি নিয়ে তারা হাজির।আরাবী এদের দুজনের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ।কি পাগলামি করছে দুজনে।আরাবী মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বলে,’ বাবা! আপনি কি শুরু করলেন?আপনার হাটুতে ব্যাথা তা জানা সত্তেও এইভাবে লাফাচ্ছেন কেন আপনি?’

নাহিদ সাহেব হাসি হাসি মুখে বলেন,’ আরে কি বলছো বউ মা।আজ সব কিছুর থেকে আমার ছুটি।আমি দাদা হচ্ছি।খুশিতে আমার কি যে করতে মন চাচ্ছে।আজ আমি কেজিতে কেজিতে মিষ্টি খাবো।কোন লিমিট মানবো না।তোমার শাশুড়ি মায়ের কথাও শুনবো না তোমারও না।’

মিহানও তাল মেলালো,’ একদম।আজ আমরা দুভাই মিলে মিষ্টি খেয়েই দিনপার করবো।কোন বাধা মানবো না।’
আরাবী রাগ দেখাতে গিয়েও হেসে ফেললো।ইফতি একটা ছোট্ট টেডিবিয়ার এনে আরাবীর হাতে দিলো।আরাবী হাসিমুখে তাকালো ইফতির দিকে।ইফতি আরাবীকে হালকাভাবে জড়িয়ে ধরে বলে,’ অনেক অনেক ভালোবাসা তোকে বোন। আমি মামা হচ্ছি।ইস কি আনন্দ যে আমার লাগছে।

এখন থেকে বেশি বেশি খাবি।আমার একটা গুলোগুলো আম্মা লাগবে।’
আরাবী হেসে মাথা দুলালো।চোখের কোণে জল জমেছে।এই মানুষটা ওর জন্যে যা করেছে তা কোনদিন ভুলবে না আরাবী।নিজের আপন ভাই না হয়েও ওকে সর্বদা একজন বড় ভাইয়ের মতো আগলে রেখেছে সর্বক্ষণ।আরাবী ইফতিকে জড়িয়ে ধরলো।ইফতি আরাবীর মাথায় স্নেহভরা হাত বুলিয়ে দিলো। তারপর সরে আসলো।নূর তো খুশিতে একটু পর পর খুশিতে খিলখিলিয়ে হাসছে আর সোফায় লাফাচ্ছে। আর বলছে, ‘ আমি ফুপি হচ্ছি।আমি ফুপি হচ্ছি।’

পুরো পরিবারের এসব কান্ড দেখে আরাবীর মনটা খুশিতে ভরে গেলো।মনে পরে গেলো একটু আগের ঘটনা।সকাল থেকেই আরাবীর শরীরটা ভালো লাগছিলো না।নাস্তা কোনরকম খেয়েছিলো তাও পেটে রাখতে পারেনি। উগলে দিয়েছিলো সব। এর মাঝে জায়ান ফোন করে জানায় ও আজ আসছে।রাত হবে তার আসতে আসতে। জায়ানের বিডিতে ফিরছে শুনে শরীরের অসুস্থতা ভুলে গিয়েছিলো আরাবী।খুশি মনে অফিসে চলে গিয়েছিলো।কিন্তু দুপুর হতে আবারও খারাপ লাগতে শুরু করে ওর।অস্থির হয়ে এদিক ওদিক হাটছিলো।কিছুতেই কাজে মন বসাতে পারছিলো না।

লাঞ্চ টাইমে ইফতি আসে ওর অফিসে। জায়ান যেহেতু নেই।তাই আরাবীকে অনেকটা আগলে রাখে ইফতি।আরাবীর যে একা খেতে ভালো লাগেনা সে ভালো করেই জানে।দেখা যাবে ও না খেয়ে থাকবে।জায়ান বার বার ওকে বলেছে আরাবীর খেয়াল রাখার দায়িত্ব এই কদিন পুরোটা ওর।আর জায়ান তো প্রতি বেলার খবর ওর থেকে নেয় যে আরাবী ঠিকঠাক খেয়েছে কিনা।তো সেই সুবাদে ইফতি অফিসে যায়।আরাবীর চোখ মুখ দেখে প্রশ্নও করেছিলো যে খারাপ লাগছে কিনা।

আরাবী -ঠিক আছে, বলে এড়িয়ে গেলো ব্যাপারটা।কিন্তু খাবার টাইমে দুতিনবার ভাত খেতেই আরাবী ওয়াশরুমে ছুটে গিয়ে সব বমি করে ফেলে দেয়।প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায় ইফতি আরাবীকে ফ্রেস করিয়ে দিয়ে কেভিনে আনতেই ওর বাহুতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে আরাবী।ইফতি তৎক্ষনাৎ আরাবীকে নিয়ে বাড়ি এসে পরে। অতঃপর ডাক্তারকে ফোন করে বাড়িতে আনা হলে তিনি চেক-আপ করে বলেন আরাবী অন্তঃসত্ত্বা দেঢ় মাসের।

এ কথা জানতে পারার পর থেকেই বাড়ির প্রতিটা মানুষের খুশিতে আত্মহারা হয়ে কি থেকে কি করবে দিশা না পেয়ে।এদিক সেদিন ছুটাছুটি করেই চলেছে। অতিত থেকে ফিরে এলো আরাবী। হাসি মুখে তাদের এই আনন্দগুলো প্রাণ ভরে দেখলো। আচ্ছা জায়ান যখন জানতে পারবে ও বাবা হচ্ছে।তখন সে কেমন করবে?তার রিয়েকশনটা কেমন হবে? প্রচন্ড খুশিতে কি চিল্লাপাল্লা করে বাড়ি মাথায় তুলে নিবে?কি করবে লোকটা? এসব ভাবতেই চট করে একটা বুদ্ধি আসে আরাবীর।ইফতি আর নূরকে টেনে নিজের রুমে নিয়ে আসলো।নূর আর ইফতি জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টি ছুড়ে মারলো আরাবীর দিকে।নূর প্রশ্ন করলো,’ কি হয়েছে ভাবি?কোন সমস্যা হচ্ছে তোমার?’

আরাবী মাথা নাড়িয়ে না জানালো।
ইফতি জিজ্ঞেস করলো, কিছু খেতে ইচ্ছে করছে?আচার খাবি?তেঁতুল আচার?আমের আচার?’
আরাবী এইবারও নাসূচক মাথা নাড়ালো।ইফতি আর নূর চিন্তিতভাবে ওর দিকে তাকালে।আরাবী বলে উঠলো, এমন কিছুই না ভাইয়া।শুধু চিন্তা করছো।আমি তোমাদের দুজনকে একটা কাজ দেবো তা করে দিবে তোমরা!’
নূর বলে উঠলো,’ কি কাজ ভাবি?’

‘ তবে শুনো আমার কথা।তবে এই কথা যেন বড়োরা না জানে। তাহলে আমি কিন্তু প্রচন্ড লজ্জা পাবো!’
ইফতি হেসে দিলো আরাবীর কথায়।অতঃপর বললো, ‘ ওকে বলবো না!’
আরাবী এইবার নূর আর ইফতিকে সবটা বুঝিয়ে বললো।সব শুনে নূর আর ইফতি মুখ টিপে হাসছিলো।আরাবী রাগ করে মুখ ফুলিয়ে তাকালে। সাথে সাথে হাসি বন্ধ করে আরাবীকে সরি জানালো।তারপর আরাবীর কথা মতো ওরা নিজেদের কাজে চলে গেলো। ওরা যেতেই আরাবী নিজের ফোনের ওয়ালপেপারে জায়ানের ছবিটায় চুমু খেয়ে বিরবির করলো,’ জলদি আসুন। আপনার জন্যে যে আজ আমি একা অপেক্ষা করছি না।আজ আমরা দুজন আছি।জলদি এসে পরুন।অনেক বড়ো সার্প্রাইজ আছে আপনার জন্যে।’

এয়ারপোর্ট থেকে সোজা বাড়িতে এসে পৌছালো জায়ান।ইফতি ওকে নিতে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু জায়ান মানা করে দিয়েছে।বাড়ির ভীতর ঢুকতেই নিহাদ সাহেব এসে জায়ানকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে।জায়ান অবাক হয় বাবার এমন কান্ডে।কারন এমন অহরহ বিজনেস ট্রিপে ও বহুত গিয়েছে।কিন্তু ওর বাবা তো এমন কোনদিন করে নাই।আজ হঠাৎ এমন খুশি হওয়ার কারন কি?জায়ান সবার দিকে জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে তাকালো।সবাই মুখ টিপে হাসছে।জায়ানের ভ্রুজোড়া কুচকে এলো।সবার এমন অদ্ভূত ব্যবহারের কারন খুঁজে পেলো না।নিহাদ সাহেব জায়ানকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,’ তুই এসেছিস?তোর জন্যে আমরা কতো অপেক্ষা করছিলাম জানিস?’

জায়ান ভ্রু-কুচকে বলে,’ হঠাৎ? আমি তো এমন বিজনেসের কাজে কতো দেশের বাহিরে যাই।তো আজ এতো খুশি হওয়ার কারন কি?আর বাকি সবাইও কেমন যেন অদ্ভূত ব্যবহার করছে।’
জায়ানের প্রশ্নকে একদম পাত্তা না দিয়ে সাথি বলেন,’ হয়েছে এতো কথা বলতে হবে না।এসেছিস এইবার ফ্রেস হয়ে খেয়ে নেহ!’

জায়ানের সন্দেহ একটুও কমলো না।বরংচ সবার দিকে অদ্ভূতভাবে তাকিয়ে থেকে সিড়ির দিকে হাটা দিলো।আরাবীকে দেখার জন্যে মনটা আকুপাকু করছে।মেয়েটাও এমন কেন?ও আসছে জানে তাহলে নিচে আসলো না কেন?ওকে দেখার জন্যে যে জায়ানের হৃদয়টা বড্ড ছটফট করছে তা কি মেয়েটা বুঝে নাহ? জায়ান সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। রুমের দরজা খুলে ভীতরে ঢুকে দেখে পুরো রুম অন্ধকার।জায়ান অবাক হলো বেশ।এমন টাইমে ঘরের লাইট বন্ধ থাকার তো কোন কথা নাহ।জায়ান ডেকে উঠলো,’ আরাবী?কোথায় তুমি? রুম এমন অন্ধকার কেন?’

আরাবীর কোন জবাব নেই।জায়ান বিরক্ত হলো বেশ।মেয়েটা কি শুরু করলো?জায়ান রাগ নিয়ে রুমের লাইট জ্বালালো।লাইট জ্বালিয়ে সামনে তাকাতেই জায়ানের মুখটা বিষ্ময়ে হা হয়ে গেলো।এইগুলো কি?পুরো রুম জুড়ে বাচ্চাদের ছবি দিয়ে ভরা।কয়েকটা খেলনাও দেখা যাচ্ছে।গ্যাস বেলুনগুলোতে জড়ি সুতো লাগানো।ওইগুলো রুমের উপরের দেয়ালের সাথে ঠেকে আছে।বিধায় জড়ি সুতো গুলো পুরো রুম জুড়ে ঝুলছে।হালকা বাতাসে তা দুলে দুলে উঠছে।জায়ান বিছানার দিকে তাকালো।সেখানে গোলাপের পাপড়িগুলোর মাঝে একটা বাচ্চা ছেলের কাপড় রাখা সাথে একজোড়া জুতো আবার একটা বাচ্চা মেয়ের কাপড় রাখা সাথে একজোড়া জুতো।জায়ান অবাকের রেশ নিয়েই এগিয়ে গেলো সেদিকে।ওর শরীরটা কাঁপছে,হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়েছে বহুগুন।

কাঁপা কাঁপা হাতে বিছানায় রাখা জামা-কাপড়গুলো আলতো হাতে ছুঁয়ে দিলো জায়ান।সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিলো।এমনসময় একজোড়া হাত ওর পেটের কাছে এসে থামলো।ঝট করে চোখ খুললো আরাবী।
আরাবী হাসলো জায়ানকে দেখে।লোকটা যে কি পরিমান শক পেয়েছে তা তার মুখের এক্সপ্রেশন দেখেই বোঝা যাচ্ছে।জায়ান আরাবীর হাতদুটো ছুটিয়ে ওকে সামনে আনতেই।আরাবী জায়ানকে সামনে থেকে ঝাপ্টে ধরলো।কেমন যেন কান্না পাচ্ছে আরাবীর।

অসহ্য সুখে মরে যেতে ইচ্ছে করছে।লোকটাকে দেখে কান্নাগুলো ঠেলেঠুলে বেড়িয়ে আসতে চাইছে।অতি সুখে আরাবীর পাগলের মতো কাঁদতে মন চাইছে লোকটাকে ধরে।হলোও তাই আরাবী নিজেকে ধরে সামলে রাখতে পারলো না। জায়ানের বুকের মাঝে মুখ গুজে দিয়ে হুঁহুঁ করে কেঁদে উঠলো।জায়ান ঝট করে আরাবীকে কোলে তুলে নিলো।সেভাবেই বিছানার উপরে বসে পরলো।সাদা রঙ্গের শাড়ি পরেছে আরাবী।কি সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে।জায়ান আরাবীর মাথাটা বুকে চেপে ধরলো।জায়ান আরাবীকে কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না।জায়ান কাঁপা গলায় বললো,’ আরাবী আমি যা ভাবছি তা যদি সত্যি হয়।তাহলে প্লিজ একবার বলো সেই কথাটা।আমি তোমার থেকে শুনতে চাই।’

আরাবী কোন কথা বললো না।কান্নাগুলো দমানোর চেষ্টা করলো।অতঃপর মুখ উঠিয়ে জায়ানের চোখের দিকে তাকালো।জায়ানের সেই চোখে আরাবী এক আকাশসম অস্থিরতা দেখতে পাচ্ছে আরাবী। আরাবী নিজের কোমড় থেকে জায়ানের একটা হাত ছুটিয়ে নিজের পেটের উপর রাখলো।তারপর কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলল,’ শীঘ্রই আমরা এক থেকে দুই হচ্ছি।আপনি বাবা হচ্ছেন জায়ান!’

আরাবীর কথাটা শেষ হতে দেরি জায়ান একঝটকায় আরাবীকে নিজের বুকের মাঝে চেপে ধরলো আরাবীর গলার মাঝে মুখ ডুবিয়ে দিলো।আরাবীর টের পেলো ওর গলার মাঝে ভেজা ভেজা উষ্ণ কিছুর আভাস পাচ্ছে। তাহলে কি জায়ান কাঁদছে। জায়ানের শরীর কাঁপছে আরাবীর খুব ভালোভাবে টের পাচ্ছে।আরাবী বলে উঠলো,’ কাঁদছেন কেন?’

জায়ান দুবার জোড়েজোড়ে নিশ্বাস টেনে মুখ উঠিয়ে আরাবীর দিকে তাকালো।জায়ানের চোখ দুটো লাল হয়ে গিয়েছে।নাকটাও লাল হয়ে আছে।জায়ান ধরা গলায় বলে,’ তুমি আমাকে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে খুশির খবরটা দিলে আরাবী।আমি তোমাকে বুঝাতে পারছি না আমার কেমন লাগছে।জীবনের পূর্ণতা বুঝি একেই বলে।আমার লাইফটা পরিপূর্ণ আরাবী।আর তা হয়েছে একমাত্র তোমার কারনে আরাবী।তুমি আমাকে পূর্ণতা দিয়েছো।আমি বাবা হবো আরাবী।আমার ছোট্ট একটা প্রিন্সেস আসবে আরাবী। থ্যাংক ইউ আরাবী।থ্যাংক ইউ সো মাচ!’

জায়ান কপালে চুমু খেলো।তারপর বললো,’ বলো কি চাই তোমার।কি লাগবে?আমাকে তো জীবনের সবথেকে দামি উপহারটা তুমি দিবে।আমি তোমাকে কি দেবো আরাবী?’
আরাবী জায়ানের গলায় মুখ গুজে দুহাতে জায়ানের গলা জড়িয়ে ধরলো।তারপর হালকা আওয়াজে বললো,’ আজ কি আমি আপনার মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দটা শুনতে পারি?’
জায়ান হেসে দিলো আরাবীর কথায়।মেয়েটাকে এতো ভালোবাসে ও।কিন্তু এতো বছর হয়েছে বিয়ের আজও দুজন দুজনকে ভালোবাসি বলেনি।তবে আজ কোন অপেক্ষা করলো না।নির্দ্বিধায় বলে উঠলো,’ আমি তোমাকে ভালোবাসি।অনেক অনেক ভালোবাসি।আমি আমার আরাবীকে ভালোবাসি। আমি আমার কাঠগোলাপকে ভালোবাসি।’

আরাবীর সারা শরীর কেঁপে উঠলো।ভালোবাসি শব্দটা শুনতে কি মধুর লাগে।আরাবীর মনটা ভালোলাগায় জুড়িয়ে গেলো।নিজেও বলে উঠলো, ‘ আমিও ভালোবাসি আপনাকে।অনেক ভালোবাসি।’
জায়ান নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরলো আরাবীকে।আরাবীও আরো গুটিয়ে গেলো জায়ানের বুকের মাঝে। ভালোবাসার বৃষ্টিতে আজ দুজন সিক্ত হচ্ছে একে-অপরের মাঝে।

ওদের এই ভালোবাসার সাক্ষি বুঝি প্রকতিও হতে চাইলো।তাইতো আকাশে মেঘেরা গর্জন করে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলো। প্রেমের বৃষ্টি। সেই প্রেমের বৃষ্টিতে ভিজছে আজ প্রকৃতি। সাথে ভিজছে কাঠগোলাপ গাছটি।কাঠগোলাপ গাছটিকে অত্যন্ত প্রেমময়ী লাগছে।কারন সেই গাছে দুটো ফুল ফুটেছে।শুভ্র রাঙ্গা সিন্ধতায় মোড়ানো দুটি #বৃষ্টি_ভেজা_কাঠগোলাপ।যারা সাক্ষি রইলো জায়ান আরাবীর এই সীমাহিন ভালোবাসার

সমাপ্ত

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন কেমন হয়েছে জানাবেন।আজ শেষ পর্ব দিলাম।আমার সাইলেন্ট রিডারদের আজ বলবো প্লিজ দীর্ঘ এই গল্পটা পড়ে আপনাদের কেমন লেগেছে আজ অন্তত জানাবেন। পরবর্তী গল্প নিয়ে দ্রুত হাজির হবো।আশা করি আপনারা এই গল্পের মতোই নতুন গল্পটাও ভালোবাসা দিবেন।অবশেষে সবাইকে ভালোবাসা অবিরাম।

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৪২