শেষ থেকে শুরু পর্ব ১১ || নন্দিনি চৌধুরী || SA Alhaj

শেষ থেকে শুরু পর্ব ১১
লেখিকা নন্দিনি চৌধুরী

সাদিয়া আর রাজীবের এংগেজমেন্ট।সাদিয়া আর রাজীব দুই বছর রিলেশনে ছিলো।রাজীব একজন সিনিওর পুলিশ অফিসার।চাকরি পাওয়ার পরপরেই সাদিয়ার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়।সাদিয়ার ফ্যামিলির সবাইও রাজী হয়ে যায়।সাদিয়া অবশেষে তার ভালোবাসাকে পাচ্ছে।

সাদাফ আড়ালে আড়ালে মুগ্ধকে দেখে যাচ্ছে।যেনো হাজার বছর পর আজ দেখছে সে মুগ্ধকে।মুগ্ধ সাদিয়ার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে মাঝে মাঝে একটু ছবি তুলছে।সাদাফ ৫০টার বেশি ছবি উঠিয়ে রেখেছে ফোনে মুগ্ধের।সাদাফের এক বন্ধু সাদাফের কাছে এসে ওর হাতে একটা গিটার দিয়ে বললো,
সাদাফ:দোস্ত আমাদের আজকে একটা গান শোনা তোর বোনের বিয়ে উপল্লখ্যে।
সাদিয়া:হ্যা ভাইয়া শোনা না।
সাফাফ:আচ্ছা

সাদাফ:”তুমি না ডাকলে আসবোনা”
“কাছে না এসে ভালোবাসবোনা”
“দুরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়”
“নাকি চলে যাওয়ার বাহনা বানায়”
“দুরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পপটা পুরোনো
“ডুবে ডুবে ভালোবাসি তুমি না
বাসলেও আমি বাসি”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পুরা গানটা সাদাফ মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে গাইলো।সাদাফের গানের মাঝে একদম হারিয়েগেছিলো মুগ্ধ।সাদাফের গানের গলা খুব ভালোলেগেছে মুগ্ধের।সাদাফ গান শেষে উঠে চলে যায়।মুগ্ধ সাদাফের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।রাতে সবাই খাওয়া দাওয়া করে নিলো।সাদিয়া আজকে জোর করে মুগ্ধকে রেখে দিয়েছে তাদের বাসায়।মেহের প্রথমে রাজী হচ্ছিলোনা।পরে সাদাফ আসস্ত করলো যে মুগ্ধের কোনো সমস্যা হবেনা।মেহেররা চলে যাওয়ার পর।সাদিয়া মুগ্ধ ফ্রেশ হয়ে নেয়।সাদিয়া মুগ্ধকে একটা সুতির জামা দিলো পরতে।ফ্রেশ হয়ে মুগ্ধ সেটা পরে নেয়।অনেক ক্লান্ত থাকায় সাদিয়া বিছানায় শুতেই ঘুমিয়ে যায়।কিন্তু মুগ্ধের ঘুম আসছেনা।এটা তার একটা সমস্যা নতুন জায়গায় ঘুমাতে পারেনা।তাই মুগ্ধ আসতে করে উঠে যায় বিছানা থেকে।রুম থেকে বেরিয়ে আসে।এই ২য় তোলায় দুইটা রুম সামনে একটা বড় বেলকোনি।মুগ্ধ আসতে করে বেলকোনিতে যায়।বেলকোনিতে চারটা সোফা।অনেকগুলা ফুলের গাছ মরিচ বাতি লাগানো নানা রংএর।মুগ্ধ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।ভালোই লাগছে তার এখানে।তখন পিছন থেকে সাদাফ বলে উঠে,

সাদাফ:”এতো রাতে এখানে কি করছেন মিস মেহুরানী।”
সাদাফের হঠ্যাৎ কথায় চমকে যায় মুগ্ধ।তাড়াতাড়ি পিছনে ফিরে দেখে সাদাফ দুইহাত ভাজ করে দাঁড়ানো।সাদাফের পরনে একটা ব্লাক গেঞ্জি আর টাউজার।সাদাফকে দেখে মুগ্ধ মাথা নিচু করে বলে,
মুগ্ধ:জ.জি.ঘ.ঘুম আ.আসছিলোনা ত.তাই এখানে আসছিলাম।
সাদাফ:আ.আপনি ত.তোতলানো বন্ধ করে তারপর কথা বলেন।
মুগ্ধ:জ.জি।
সাদাফ:আমি বাঘ না ভাল্লুক ও না।তাই নরমাল হোন আগে।
মুগ্ধ:জি

সাদাফ মুগ্ধকে ক্রোস করে বেলকনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
সাদাফ:আচ্ছা মিস মেহুরানী আপনি কি কোনোদিন কারো চোখ থেকে প্রেমে পড়েছেন?
সাদাফের কথাটা শুনে চমকে যায় মুগ্ধ।প্রেম কি জিনিশ সেটা সে কোনোদিন জেনেনি।যখন কৈশোরে পা দিয়েছে তখনই ছোট মা বিয়ে দিয়ে দিলো আরিশের সাথে।বিয়ের পর আরিশের সাথে মানিয়ে নিতে অনেক সময় লেগেছিলো।আরিশের কেয়ার দেখে সে তার ছোট মনের এককোণায় জায়গা দিয়েছিলো আরিশকে কিন্তু সে ঠকালো তাকে।ভালোবায়ায়া জিনিশটা বুঝার আগেই ভালোবাসা জিনিশটার প্রতি অবিশ্বাস এসেগেছে তার।
মুগ্ধ আসতে করে উত্তর দিলো,

মুগ্ধ:নাহ্।
সাদাফ:হুম পিচ্চি মানুষ কেম্নে প্রেমে পড়বেন বলেন।আমি পড়েছি একটা ছোট পরীর চোখের প্রেমে।
মুগ্ধ:তাই কিভাবে।
সাদাফ:আমি যখন ভার্সিটতে তখন আমাদের ভার্সিটির সামনে একটা গার্লস স্কুল ছিলো।সেখানে অনেক মেয়েরা পড়তো।আমি কোনোদিন কোনো মেয়ের দিকে সেভাবে তাকাতাম না।কিন্তু একদিন একটা মেয়ের সাথে আসার পথে ধাক্কা লাগে।মেয়েটা সম্ভবত খুব দুর্বল ছিলো তাই আসতে ধাক্কাও পরে যায়।আমার অপরাধ বোধ কাজ করায় তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই।সেও আমার হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো।তার সেই মায়াবি চোখ দুটো দিয়ে একটু সময় আমার দিকে তাকিয়ে ছুটে চলে যায় স্কুলে।মেয়েটার মুখ স্কাফ দিয়ে বাধা তাই মুখ দেখতে পাইনি।শুধু চোখ দুটো দেখেছিলাম।আর সেই চোখ দুটোর প্রেমেই আমি পড়েযাই।
মুগ্ধ:তারপর তাকে বলেদিয়েছেন মনের কথা?

সাদাফ:নাহ্ বলা হয়নি তাকে মনের কথা তার আগে তাকে হারিয়ে ফেলেছি।
মুগ্ধ:অহ।
সাদাফ:হুম।জানেন মিস মেহুরানী এই দুনিয়াটা গোল। আমার বিশ্বাস একদিন তার সাথে আমার দেখা হবে। আর আমার মনের কথা আমি তাকে জানাবো।
মুগ্ধ:হ্যা নিশ্চই।আচ্ছা আমি এখন যাই।কাল সকালে আবার ক্লাস আছে।
বলেই মুগ্ধ রুমে চলে যায়।সাদাফ তখনো রেলিং ধরে বাহিরে তাকানো।

“ঠকায় একজন তবে বিশ্বাস উঠে যায় সবার থেকে।আমি জানি মুগ্ধ তুমিও সেই অবস্থায় আছো।কিন্তু আমি তোমাকে নতুন করে ভালোবাসতে শিখাবো।যেখানে তোমার সব শেষ সেখান থেকে একটা নতুন শুরু করবে শেষ থেকে শুরু করবে।”
সাদাফ আপনমনে কথা গুলো বলে নিজের রুমে চলে আসলো।দুইজন দুই প্রান্তে একজন ভালোবাসার জন্য মরিয়া আরেকজন জীবন সামনে নেওয়ার জন্য।
সকালে,,,,
সাদাফ,মুগ্ধ,সাদিয়া তিনজন কলেজে চলে আসলো।সাদিয়া আর মুগ্ধকে ক্লাসে পাঠিয়ে সাদার টিচার রুমে চলে আসলো।ক্লাসে আসতেই মুগ্ধ দেখলো সায়মা আর আরো কিছু মেয়ে একসাথে বসে কথা বলছে।মুগ্ধ তাদের পাত্তা না দিয়ে সাদিয়ার সাথে অন্য এক বেঞ্চে গিয়ে বসলো।কিছুক্ষনের মধ্য অই মেয়েগুলোর ভিতর থেকে একটা মেয়ে এসে মুগ্ধের সামনে দাঁড়ালো।
মেয়েটা:মুগ্ধ আমি শুনলাম তুমি নাকি ডিভোর্সি।

মেয়েটার কথা শুনে চমকে যায় মুগ্ধ তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,,
মুগ্ধঃমানে কি বলছো এগুলা?
মেয়েটাঃঢং করোনাতো জেনো ভাজা মাছ উলটে খেতে পারোনা।সব শুনেছি তোমার ব্যাপারে।হুহ তুমি ডিভোর্সি। তোমার স্বামী তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে।তাইতো বলি আমাদের থেকে তোমাকে অনেক বড় বড় লাগে।কিন্তু তুমি কলেজ ফরমে অবিবাহিত লিখেছো কেন।অহ আচ্ছা বুজেছি নিশ্চইন কলেজে কোনো ছেলে পটানোর জন্য রাইট।
মুগ্ধ মেয়েটার কথা শুনে এভার রেগে গেলো উঠেই মেয়েটার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পর লাগিয়ে দিলো।তারপর চিৎকার করে বলতে লাগলো,

মুগ্ধঃমাইন্ড ইউর ল্যাংগোয়েজ।কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা কি শেখানো হয়নি তোমাকে।দেখেতো ভালো ঘরের মনে হয় কিন্তু ব্যবহারতো রাস্তার মেয়েদের মতো।লিসেন হ্যা আমি একজন ডিভোর্সি। তাতে কোন মহাভারত অসুদ্ধ হয়েছে।আমি ডিভোর্সি তাতে তোমাদের কি সমস্যা তোমরা কি আমাকে এক বেলা এসে খাবার দিচ্ছো।নাকি আমাকে এসে শান্তনা দিচ্ছো।নাকি আমি তোমাদের কোনো পাকাধানে মই দিয়েছি।আরে ডিভোর্সি বলে যা ইচ্ছা তাই বলে যাবে।শুনো মেয়ে বাংলাদেশে গড়ে হিসাব করলে প্রতিদিন ৩০টার বেশি ডিভোর্স হয়।সেই সবগুলা ডিভোর্সে শুধু মেয়েটার দোষ থাকেনা।

ছেলেদের ও থাকে।মেয়েদের চেয়ে একটা ছেলে একটা সম্পর্ক অনায়াসে ভেংগে ফেলে।জাস্ট মোহে পরে ভুলে যায় তার যে একটা স্ত্রী আছে।একটা পুরুষ প্রথমে হয় ছেলে তারপর হয় স্বামী তারপর হয় বাবা।এই ভুমিকা গুলো পালন করা এতোটা সহজ না তেমনি একটা মেয়ে প্রথম মেয়ে তারপর স্ত্রী তারপর মা হয়।এই দায়িত্ব পালন করে একটা সম্পর্ক মজবুত হয়।কিন্তু একটা পুরুষ সে কি করে একটা পরোনাড়ীর পাল্লায় পরে নিজের এই দায়িত্ব গুলা ভুলে যায়।জরিয়ে যায় পরোকীয়ায়।তেমনি একটা নারীয়ও জরিয়ে যায়।এক পর্যায় ডিভোর্স হলে দোষ শুধু মেয়েদের।

মেয়ে স্বামীকে সুখ দিতে পারেনি,চোখে চোখে রাখতে পারেনি আঁচলে বেধে রাখতে পারেনি তাই আজ ছেড়ে গেলো।এখন বলোতো একটা বিয়ে মানে কি শুধুই শারীরিক চাহিদা এটা পেলেই কি সংসার একদম সুখের হয়ে গেলো।না কোনোদিন না বিয়ে একটা পবিত্র সম্পর্ক হারাম কে হালাল করে বিয়ে।বিয়ের সম্পর্ক টা মজবুত থাকে বিশ্বাস,ভরসা,আস্থা,পাশে থাকে এই সব প্রতিশ্রুতি নিয়ে।তাহলে কেন বিয়ে করে স্বামীকে আচঁলে বেঁধে রাখবো চোখে চোখে রাখবো।আমি তাকে বিশ্বাস করলে আমার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখার দায়িত্ব তার তাই না।

কিন্তু না রাখেনি।এইযে তুমি বলছো কলেজের ফরমে কেন আমি ডিভোর্স তা লেখিনি।শোনো কোনো আইনে এটা লেখা নেই যে ডিভোর্সি হলে তা সব জায়গায় ঢোল বাজিয়ে বলতে হবে।আর জানি কি বলছিলে অন্য ছেলে পটাবো শুনো আমি তাদের মতোনা যারা ডিভোর্সের চারদিনের মাথায় অন্য কাউকে বিয়ে করবো।সো আশা করি নেক্সট টাইম বুঝে শুনে কথা বলবা।আদার ওয়াইজ আমি প্রিন্সিপালকে জানাবো।
কথাগুলো বলে মুগ্ধ ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসলো।আর মেয়েটা মাথা নিচু করে লজ্জায় দাঁড়িয়ে রইলো।
সাদাফ ক্লাসে এসে দেখে মুগ্ধ নেই।সবাইকে এরকম দেখে সাদাফ বলে,
ক্লাসে কি হয়েছে এরকম থমথমে কেন।আর মিস মুগ্ধ কোথায়?
সবাই চুপ করে আছে।সাদাফ তাই সাদিয়াকে জিজ্ঞেশ করলো,
সাদাফঃমিস সাদিয়া কি হয়েছে ক্লাসে?

শেষ থেকে শুরু পর্ব ১০

সাদিয়া শুরু থেকে শেষ সব বলে দিলো।সব শুনে সাদাফের খুব রাগ লাগছে।বেশ ভালোই বুজতে পারছে এগুলা সায়মার কাজ তবুও নিজেকে সামলে বলে,
আজকে যে ঘটেছে সেটা জেনো আর না ঘটে।তাহলে নেক্সট টাইম কলেজ থেকে আউট করে দেওয়া হবে।কারো পার্সোনাল লাইফ নিয়ে কেউ কথা বলবেন না।
সাদাফ কোনো রকম ক্লাস শেষ করে মুগ্ধকে খুঁজতে বেরিয়ে গেলো।মুগ্ধের ফোন ওফ।সাদাফের খুব চিন্তা হচ্ছে।সাদাফ তাই মেহেরকে কল লাগায়।মেহেরতো কথা শুনে পাগল প্রায় বাসায় কল দিয়ে জানতে পারলো মুগ্ধ বাসাও যায়নি।তাহলে মুগ্ধ গেলো কোথায়?

মুগ্ধ আজকে মায়ের কবরের এখানে এসেছে।মায়ের কবরটা খান বাড়ির অপর পাসের সাইডে দেওয়া এখানে শুধুই মায়ের কবর আর বাবার কবর দেওয়া।মায়ের কবরের কাছে এসে মাথা রেখে কাঁদছে। ছোট বেলায় এভাবেই কাঁদতো মুগ্ধ।আজ মাকে খুব মনে পড়ছে।
মুগ্ধঃকেন চলে গেলে মা কেন চলে গেলে।আমি যে এখন কারো কোলে মাথা রেখে কাঁদতে পারিনা।আমাকে যে কেউ এখন আর তোমার মতো আদর করেনা।আজ আমি ডিভোর্সি বলে সবাই যা ইচ্ছা বলে।জানো মা ভাইয়া আছে বলেই আজ বেঁচে আছি নাহলে অনেক আগেই চলে যেতাম তোমার কাছে।আর নিতে পারছিনা এসব।তবুও আমি লড়ে যাচ্ছি রোজ লড়ে যাচ্ছি।ক্লান্ত হয়ে গেছি লড়তে লড়তে।সেই ছোট বেলা থেকে লড়াই করে আসছি।আমার সাথে কেন হয় এমন।

শেষ থেকে শুরু পর্ব ১২