শেষ থেকে শুরু পর্ব ১১

শেষ থেকে শুরু পর্ব ১১
লাবণ্য ইয়াসমিন

অরিনের শরীর মোটামুটি ভালো আছে কিছুক্ষণ আগে জ্ঞান ফিরেছে। আবির বাড়ির পরিস্থিতি সামলে হাসপাতালে আবার ফিরে এসেছে। আপাতত অরিনের অসুস্থতার কথা কাউকে বলতে চাইছে না। আরাফাত একটা পরিকল্পনা করেছিল কিন্তু এই মেয়েটার জন্য সব ঠিকঠাক হবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ হচ্ছে। বাইরে আরাফাতের সঙ্গে আবির বসে আছে। আরাফাত আর হৈমন্তী বাড়িতে যায়নি। ভালোবাসার চাইতেও কৃতজ্ঞতাবোধ বেশি কাজ করছে। হৈমন্তী বন্ধুর বিপদে বাড়িতে গিয়ে বসে থাকতে পারবে না তাই গেলো না।

আবিরের উপরে ওর আগেই ভরসা ছিল না এখনো আরও নেই। ছেলেটা ভাব নিয়েছিল নিজের বোনকে সামলে নিবে অথচ সে এরকম একটা কাজ করে বসলো। লোকটার এই অতিরিক্ত হাবভাবের জন্য এই অবস্থা। হৈমন্তী ওর উপরে মোটামুটি বিরক্ত। অরিন চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে হৈমন্তী ওর পাশে চেয়ারে বসে আছে। আবির ফিরে আসার সময় ওর জন্য মনে করে ড্রেস নিয়ে এসেছে। মুখে বরফ দেবার কথা বলেছিল হৈমন্তী রাজি হয়নি। এইটুকু থাপ্পড় খেয়ে ওর কিছু হবে না। এর থেকেও কঠিন আঘাতে যার মৃত্যু হয়নি তার সামান‍্যতে কিছু হয়না। হৃদয়ের সঙ্গে শরীর মন সব শক্ত হয়ে গেছে। হৃদয় পটভূমিতে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে এখন খরা চলছে। অনাবৃষ্টিতে সব পুড়িয়ে ফেলবে। হৈমন্তীর ধ‍্যান ভাঙলো অরিণের ফিসফিস কথা বল‍ার শব্দে। মেয়েটকে ওকে ডাকছে তবে কথা বলার শক্তি নেই। হৈমন্তী কানটা ওর মুখের কাছে এগিয়ে নিয়ে শুনলো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

> এতোকিছুর পরেও ভাইয়া রবিনকে কিছু বলেনি পযর্ন্ত। বিয়ে ভাঙার পরিবর্তে অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। এসব নিয়ে রেগে ছিলাম তখন রবিন ফোন দিয়েছিল। আমি নিজেকে সামলাতে পারিনি খুব সরি। কখনও আর এমন করবো না ক্ষমা করে দাও।
হৈমন্তী কিছু বলতে চাইলো কিন্তু হলো না ওর পেছন থেকে উত্তর আসলো,
> হারপিকের টেস্টটাও দেখে নিলে দারুণ মজা হলো। মানুষকে আনন্দের সহিত বলবে আমি হারপিক খেয়েছিলাম। আমার তো ভাবলেই গা গুলিয়ে বমি আসছে। ছি ইয়াক।
হৈমন্তী অসহায় চোখে পেছনে তাঁকিয়ে আরাফাত কে চুপ করে বললো। আরাফাত কখন পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে ওরা বুঝতে পারেনি। অরিন লজ্জায় চোখ বন্ধ করে আছে। ওর চোখের কোনা দিয়ে পানি ঝরছে। ওকে চুপচাপ দেখে আরাফাত আবারও বলল,

> মাথামোটা হলে এমনিই হয়। বিয়ের দিন ওই বাপ ছেলেকে লকাপে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা হতে বঞ্চিত করতে চলেছিলে। সুইসাইড করার এতো সখ আমাকে বলতে ফিনাইল নয়তো উন্নতমানের ইদুর মারা ওষুধ এনে দিতাম। লোকজন জানলে কি ভাববে বলো। মান সম্মান থাকবে? তোমার জন্য তো এখন লোকজন বাথরুমের জন্য হারপিক কেনা ছেড়ে দিবে। কি এক্টা অবস্থা।
আরাফাত ঠোঁট উল্টে কথাগুলো বলল।হৈমন্তী এবার চুপ থাকলো না। উঠে গিয়ে ভাইয়ের হাত ধরে টানতে টানতে আবিরের পাশে বসিয়ে দিয়ে বলল,
> দয়াকরে চুপচাপ বসে থাকো নয়তো পাশের রুমে কেবিন খালি আছে সেখানে গিয়ে ঘুমিয়ে যাও। বিরক্ত করবে না।

হৈমন্তী ওকে বসিয়ে দিয়ে ঝড়ের বেগে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করলো। ফারজানা হক স্বামীকে নিয়ে বাড়িতে গেছেন। বাড়িতে লোকজন আছে কাউকে বুঝতে দিলে ঝামেলা হতে পারে। তাছাড়া রবিনের বাড়িতে এখনো পযর্ন্ত কিছুই জনানো হয়নি আর হবেও না। যখন আসবে তখন বুঝবে। হৈমন্তী অরিনের পাশে গিয়ে আনমনে বলল,

> আমার কথাগুলো মন দিয়ে শুনবে,রবিন তোমার জন্য উপযুক্ত না। আরাফাত ভাইয়াকে দেখো তোমার জন্য সব এক করে ফেলেছে। ও তোমার যত্ন নিবে। ভালোবাসা একদিনে তৈরী হয়না। যখন এক সঙ্গে থাকবে দেখবে ভালোবাসা তৈরী হয়ে যাবে। কিন্তু তুমি যেই প্রস্তাবটা রেখেছো সেটা অবান্তর প্রস্তাব। আমি আবিরকে কেন আর কখনও বিয়ের ঝামেলায় নিজেকে জড়াতে চাইছি না। আমার পরিকল্পনা দীর্ঘ, সেখানে বিয়ে বা শশুরবাড়ির চিন্তাধারা নেই । তুমি আমার সব কথায় শুনেছো। কতটা কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছি। সামান্যতে ভেঙে পড়তে নেই। আমি ভূল করেছিলাম ভেঙে পড়ে। তুমি ভাইয়াকে বিয়ে করে নাও। প্লিজ আমার অনুরোধ রাখো।
অরিন চোখ বন্ধ করে ফুঁপিয়ে যাচ্ছে। ভেবেছিল আবিরের জন্য হৈমন্তীকে রাজি করাতে পারবে কিন্তু পারলো না। হৈমন্তীর জিদের কাছে হার মেনে নিতে হলো। মেয়েটা এমন জিদ কেনো করছে ওর মাথায় আসছে না। হৈমন্তী মোটামুটি বুঝে নিয়েছে অরিন রাজি হয়েছে তাই ফোনটা হাতে নিয়ে বাইরে গিয়ে আরাফাতকে বলল,

> ভাইয়া তুমি একটু অরিনের পাশে গিয়ে বসবে?
আরাফাত ওর দিকে তাঁকিয়ে জিঞ্জাসা করলো,
> তুই কোথায় যাবি?
> ঘরে দম বন্ধ লাগছে তাছাড়া উনার সঙ্গে একটু কথা আছে অরিনকে নিয়ে। তুমি যাও আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছি। ওর যদি কিছু লাগে।
আরাফাত দ্বিতীয়বার আর প্রশ্ন করলো না। ভেতরে চলে গেলো। আবির চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে আরেক চেয়ারে পা তুলে বসে আছে। হয়তো ঘুম পাচ্ছে। হৈমন্তী ওকে আস্তে করে ডেকে বলল,

> আপনার সঙ্গে কথা ছিল।
আবির চোখ বন্ধ করেই বলল,
> হুম বলো শুনছি।
> অরিন রাজি হয়েছে ভাইয়াকে বিয়ে করতে।
> জানি।
হৈমন্তী কিছুটা অবাক হলো আবিরের জানি কথাটা শুনে। যদি জানে তবে এমন খাপছাড়া টাইপ আচরণ করছে কেনো ভেবে হৈমন্তীর রাগ হলো। ইচ্ছে করলো ধাক্কা দিয়ে ব‍্যাটা কে ফেলে দিতে। ও বহু কষ্টে রাগ কন্ট্রোল করে বলল,

> সর্ব জানতা শমসের যে আপনি। জানতে যে হবেই। তো এতোই যখন জানেন বিয়ের ব‍্যবস্থা করতে পিছিয়ে যাচ্ছেন কেনো?
আবির হৈমন্তী কথায় পাত্তা না দিয়ে চোখ খুঁলতে খুঁলতে সোজা হয়ে বসে বলল,
>আমার সঙ্গে একটু বাইরে যাবে প্লিজ ।আমার ভীষণ মন খারাপ কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। কান্না কান্না পাচ্ছে।

আবিরের দিকে তাঁকিয়ে হৈমন্তীর খারাপ লাগলো। একের পর এক ঝামেলা এসে হাজির হচ্ছে। ছেলেটা ওকে কয়েকবার বিপদ থেকে রক্ষা করেছে আর আজ ছেলেটার মন ভালো করতে এইটুকু করতে পারবে না।? হৈমন্তী মানা করতে পারলো না। একবারে রাজি হয়ে গেলো। আবির ওর পায়ের দিকে তাঁকিয়ে জিঞ্জাসা করলো হাটতে অসুবিধা হবে কিনা। হৈমন্তীর হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে তবুও মুখে স্বীকার করলো না। জোর করে হেসে মাথা নাড়িয়ে জানালো কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। আবির ওকে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। হৈমন্তী বাইরের দিকে তাঁকিয়ে আছে। হৈমন্তীর গায়ে সাদা রঙের থ্রি পিচ মাথায় হিজাব দেখতে বেশ শুভ্র লাগছে।

তবে আবির একবারও ওকে দেখলো না। হঠাৎ ব্রিজের উপরে এসে গাড়ি থামিয়ে দিলো। আবির ওকে নামতে বলে দরজা খুলে ওকে সাহায্য করল। প্রথমে নিজের হাতটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে কি জানি কি ভেবে হাত ফিরিয়ে নিয়ে সামনে এগিয়ে পানির দিকে চেয়ে থাকলো। আকাশে চাঁদের আলো ছাড়া দ্বিতীয়ত কোনো আলো নেই। জোছনা উফছে পড়ছে। মৃদু মন্দ বাতাসে চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে। আবির ডান হাতের আঙুল দিয়ে চুলগুলো ঠিকঠাক করে নিলো কিন্তু আবারও এলোমেলো হলো। এবার আর কিছুই করলো না।ব্রিজের উপর দিয়ে মাঝেমধ্যে একটা দুটো গাড়ি চলছে আবার নির্জন হয়ে যাচ্ছে। হৈমন্তী ধীরপায়ে আবিরের পাশে এসে দাঁড়ালো। দুজনের দৃষ্টি পানির দিকে। হৈমন্তী বেশিক্ষণ পানির দিকে তাঁকিয়ে থাকতে পারলো না। কেনো জানি মনের মধ্যে কু ডাকছে। উপর থেকে লাফিয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে। খরস্রতা নদী লাফিয়ে পড়লে কূলে যেতে যেতে শক্তি শেষ। মৃত্যু অনিবার্য। আবির ওর দিকে তাঁকিয়ে বলল,

> লাফিয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে? আমারও করছে কিন্তু আমি মরবো না।
হৈমন্তী অবাক হয়ে বলল,
> কিসব আজেবাজে চিন্তাধারা আপনার? অন‍্য কিছু বলুন কেনো এনেছেন আমাকে?
আবির দূরে দৃষ্টি রেখে বলল,
> তোমাকে একটা অনুরোধ করতে চাই। রাখবে না জানি।যদি না রাখো তবে এটাই হয়তো তোমার সঙ্গে আমার শেষ দেখা। আর কখনও তোমার সামনে আসবো না। আমি এখানে থেকে দূরে কোথাও চলে যাবো। এই শহর আমাকে আর দ্বিতীয়বার দেখবে না।
আবির মুখ টা কঠিন করে কথাগুলো বলল। হৈমন্তীর শরীর কাঁপছে। বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করছে। হৈমন্তী কিছুটা অনুমান করতে পারলো আবির কি বলতে চাই। ওর মনে হলো এই মূহুর্ত্তের আবির যেনো কিছু বলতে না পারে। অদৃশ্য হয়ে যেতে ইচ্ছে হলো। এখানে আসাটা ওর বোকামি হয়েছে। চরম বোকামি। হৈমন্তীর নিরবতা দেখে আবির বলল,

> বলো রাখবে তো?
> বলুন কি বলবেন?
আবির চোখ বন্ধ করে বলল,
> আমাকে বিয়ে করবে হৈমি? কথা দিচ্ছি তুমি যতদিন না চাইবে আমি তোমার সামনে আসবো না। তুমি আমি ছাড়া পৃথিবীর কেউ জানবে না তোমার আর আমার সম্পর্কের কথা। তুমি তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে যেখানে খুশী সেখানে চলে যাও। কখনও ফিরে এসোনা শুধু সবখানে নিজের পরিচয় পত্রে স্বামীর স্থানে আবির এহসান লিখে দিবা। তুমি আমাকে এইটুকু করুণা করবে আশাকরি। কাউকে না বলে ফিরে যাচ্ছো যাও বাধা দিবো না।

আবিরের চোখ দুটো ছলছল করছে। এই মেয়েটাকে দেখার জন্য প্রায় দিন হাসপাতালে গিয়ে অপেক্ষা করতো। তখন ঠিক ভালো করে চেনাজানাও ছিল না। এক সন্ধ্যায় কিছু বাজে ছেলেদের থেকে ওকে বাঁচিয়েছিল। হৈমন্তীর জ্ঞান ছিল না। আরাফাত ওর সহায়তাই হৈমীকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তখন থেকেই পরিচয়। আরও কিছু টুকরো টুকরো জীবন্ত স্মৃতি যেগুলো মনের মধ্যে এখনো সতেজ হয়ে আছে। আবির আনমনে বলল,
> ভরসা করতে পারো ঠকবে না। বলছিনা তো আমাকে ভালোবাসতে হবে। বলেছি শুধু আমার পরিচয়টা বহন করতে।
হৈমন্তীর মনে হলো কেউ ওর গলা চেপে ধরে রেখেছে কন্ঠ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। তবুও জোর করে বলল,

> এগুলো আপনার খামখেয়ালি। ভালোবাসা বলতে পৃথিবীতে কিছু নেই। যা আছে তা শুধু আমাদের অভ‍্যাস আর প্রয়োজন। কিছুদিন আমার থেকে দূরে থাকুন সব ঠিক হয়ে যাবে।
আবির ভ্রু কুচকে ফেলল। ও দ্রুত কন্ঠে বলল,
> পাঁচ বছর তুমি আমার থেকে দুরেই ছিলে হৈমি। দুবছর তোমার আশেপাশে থেকে ভালোবেসেছি পরের তিন বছর একদম দূরে।। আরও কতো সময় নিতে বলছো? আমার জীবনের অন্তিম সময় পযর্ন্ত নিতে বলছো? আমি আর পারবো না। তুমি হয় আমাকে মুক্তি দাও নয়তো আমার প্রস্তাব মেনে নাও।

> সম্ভব হবে না। দয়াকরে বোঝার চেষ্টা করুণ। আমি ডিভোর্সী স্বামী পরিত্যক্তা। গ্রামে যদি কোনো ছেলে বা মেয়ে ভালোবেসে বিয়ে করে তাহলে শুধু মেয়েটাকেই দোষারোপ করা হয়। লোকে বলে মেয়েটার চরিত্র খারাপ। কোনো মেয়েকে যদি কোনো ছেলে বিরক্ত করে এটা যদি লোকজন জানে সেখানেও বলা হয় মেয়েটার চরিত্র খারাপ। কোনো মেয়ের বাচ্চা হচ্ছে না তবে মেয়েটা বাজা। মোটকথা সব দোষ মেয়েদের। এই যে আপনি আমাকে জোর করছেন যদি আমি আপনার কথা মেনে নিয়ে বিয়ে করি লোকজন কিন্তু আপনাকে কিছু বলবে না। সেই আমাকেই বলবে আমি খারাপ আমার চরিত্র খারাপ হ‍্যান ত‍্যান কতকি। কিছু মানুষ ভাবে ছেলেদের সম্মান যায় না। আপনি ভূল বুঝবেন না আমি এই সমাজ বদলাতে চাই। যেই গ্রাম থেকে আমার লড়াই শুরু হয়েছে।উপযুক্ত হয়ে আমি সেখানেই ফিরে যেতে চাই।

আবির বুঝলো এভাবে হবে না। ও চুপচাপ গাড়ির ভেতর থেকে ছুরি বের করে হৈমন্তীর সামনে এসে দাঁড়ালো। হৈমন্তীর চোখেমুখে আতঙ্ক। চাঁদের আলোতে ধারালো ছুরিটা চকচক করছে।ওর ভয় হচ্ছে নিজের জন্য না আবিরের জন্য। ছুরি দিয়ে কি করবে কে জানে। হৈমি ভয়ে ভয়ে বলল,
> এটা কি করবেন? হাত কেঁটে যাবে ফেলে দিন।
আবির ওর দিকে তাঁকিয়ে ছুরি দিয়ে বাম হাতের কব্জি বরাবর দাগ টেনে দিলো। ফিনকি দিয়ে কয়েক ফোঁটা রক্ত হৈমন্তীর মুখে গিয়ে পড়লো। আবির এখনো হৈমন্তীর দিকে তাঁকিয়ে আছে। হৈমন্তী কেঁদে ফেলল। আবিরের থেকে ছুরিটা কেড়ে নিতে গেলো কিন্তু পারলো না। আবির আরেকবার হাতে টান দিল। এবার মনে হলো ও হাত কাঁটতে মাজ পাচ্ছে। ছোট ছোট দাঁগ আঁকতে আঁকতে বলল,

> বলেছিলাম তো তোমার পথে আমি আসবো না তবুও বিশ্বাস করছো না। এবার নিশ্চয়ই বিশ্বাস হবে। আমি জানি এটা অন‍্যায় তবুও আমার কিছু করার নেই।
হৈমন্তীর মাথায় যন্ত্রণা করছে। কি বরবে কিছুই মাথায় আসছে না। শেষপর্যন্ত হুট করে বলে ফেলল,
> আপনার প্রস্তাবে আমি রাজি প্লিজ এসব করবেন না। আমি রক্ত দেখতে পারিনা ভয় করে। আপনি আমার জীবন বাঁচিয়েছেন আমি পারিনা আপনার জীবন নিতে।
হৈমন্তীর কথা শুনে আবির থেমে গেলো। ঠোঁটের কোনে প্রাপ্তির হাসি ফুঁটে উঠলো। ওর মনে একটাই চিন্তা যদি একবার বিয়ে হয়ে যায় হৈমন্তী যেখানেই যাক ওরি থাকবে।

প্রায় শেষ রাত মাথায় সাদা হিজাবের ঘোমটা দিয়ে মসজিদে বসে আছে হৈমন্তী। ওর সামনে আবির মাথায় টুপি দিয়ে হাটু গেড়ে বসে আছে। ডানদিকের একটু দূরে পর্দার আড়ালে মসজিদের ঈমাম সাহেস উকিল আর আবিরের সেক্রেটারি জাবেদ আলী বসে আছে। হৈমন্তী রাজি হয়েছে শুনে জাবেদ কে ফোন করেছিল আবির। জাবেদ ওর বাধ‍্য আর অনুগত। হৈমন্তী বুঝতে পারলো আবির আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিল। নয়তো এখানে এসেই সবাইকে পেয়ে যেতো না। উকিল সাহেব হৈমন্তীর সাইন নিয়ে নিয়েছে।

সাক্ষী হিসেবে মসজিদের ঈমাম আর জাবেদের সাইন নিয়ে কাজী বিয়ে পড়িয়ে দিলো। মসজিদের ভেতরে মৃদু আলো জ্বলছে। হৈমন্তীর চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো ফ্লোরে। আজকের এই স্মরণীয় রাতটা আবির জীবনেও ভুলবে না। আজ দুপুরে হৈমন্তী আমেরিকার টিকেট কেটেছে দুদিন পরে চলে যাবে। আবির দুপুরের পরেই কথাটা জেনেছে ।

শেষ থেকে শুরু বোনাস পর্ব

আবিরের মনে হলো এবার গেলে ও আর ফিরবে না তাই জোরজবরদস্তি করে এই বিয়েটা করে নিলো। তবে ও কথা রাখবে। কথার খেলাপ কখনও করবে না। হৈমন্তী না চাইলে এই বিয়ে বা সম্পর্কের কথা কাউকে বলবে না। বিয়ের পরে আবির হৈমন্তীর সঙ্গে একটা কথাও বলেনি। ওকে হাসপাতালের সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো।

শেষ থেকে শুরু পর্ব ১২

1 COMMENT

Comments are closed.