শেষ থেকে শুরু পর্ব ৫ || নন্দিনি চৌধুরী || ধারাবাহিক গল্প

শেষ থেকে শুরু পর্ব ৫
লেখিকা নন্দিনি চৌধুরী

হাসপাতালের করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে আরিশ,সালমা,মেহেরাব।অপারেশন থিয়েটারের ভিতরে নেওয়া হয়েছে সায়মাকে।সুইসাইড করছে সায়মা।সকালে সায়মার মা ফোন করেছিলো ওকে।সে ফোন করে জানিয়েছে সায়মা সুইসাইড করেছে।তখোনি আরিশ হাসপাতালে এসেছে।আরিশ করিডোরের এককোনে দাঁড়িয়ে আছে।সবকিছু কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে তার।
মেহেরাব আরিশের দিকে এগিয়ে এসে ঠাস করে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দিলো।আরিশ গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে মেহেরাবের দিকে।মেহেরাব চিৎকার করে বলে উঠেন,

মেহেরাব:আমার সব থেকে বড় ভুল ছিলো তোমার হাতে নিজের এক মেয়েকে তুলে দেওয়া।আমার সেই মেয়েকে তো তুমি আগলে রাখতে পারলেনা।পরোকীয়ায় জরিয়ে গেলে আমার আরেক মেয়ের সাথে।তাকে তো আমি শ্বাসন করতে পারছিনা।কিন্তু তোমাকেও আমি ক্ষমা করবোনা।কি লাভ পেয়েছো এসব করে।মুগ্ধকে ছাড়লে সায়মার জন্য।আর এখন সায়মা তোমার জন্য সুইসাইড করলো কারন কি?
সালমা:আমার মেয়ের যদি কিছু হয় আমি তোমাকে ছাড়বোনা বলে দিলাম।
আরিশ:আংকেল আন্টি আমি জানিনা ও কেন সুইসাইড করলো।কালকেও তো আমার সাথে কথা বললো তাহলে কেন সুইসাইড করবে।

সালমা:ও তোমাকে বিয়ের কথা বলেছিলো। তুমি ওকে না করে দিয়েছো।কেন না করছো ওকে?
আরিশ:আন্টি আমি এই মূহূর্তে বিয়ের জন্য তৈরি না বলেই ওকে না করেছি।
সালমা:আমার মেয়ে এখন তোমাকে ভালোবেসে মরতে বসেছে।
ওদের কথার মাঝে ডাক্তার বেরিয়ে আসে।সালমা মেহেরাব ডাক্তারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেশ করে।
মেহেরাব:আমার মেয়ে কেমন আছে এখন?
ডাক্তার:হুম অল্পের জন্য বেঁচে গেছে।এতো পরিমাণ ব্লিডিং হয়েছিলো আমরা ভেবেছিলাম যে হয়তো বাঁচানো যাবেনা।
সালমা:দেখা করতে পারবো এখন?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ডাক্তার:হ্যা কেবিনে দেওয়া হবে একটু পর।
একটু পর সায়মাকে কেবিনে দেওয়া হয়।মেহেরাব সালমা দেখা করতে যেতে চাইলে আরিশ আগে দেখা করবে জানায়।মেহেরাব রাজী হচ্ছিলেন না কিন্তু সালমা রাজী হোন।
আরিশ সায়মার কেবিনে এসে দেখে সায়মা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।হাতে ব্যান্ডেজ করা।আরিশ আসতে করে সায়মার কাছে বসে ডাক দেয়,
আরিশ:সায়মা!

আরিশের ডাকে সায়মা চোখ খুলে তাকায়।আরিশ সায়মাকে তাকাতে দেখে বলে,
আরিশ:এসব পাগলামির কোনো মানে হয়।আজ যদি তোমার কিছু হয়েযেতো তাহলে কি হতো বলোতো।
সায়মা:ভালো হতো কিছু হয়ে গেলে।তুমিও বেঁচে যেতে আমরাও বেঁচে যেতাম।
আরিশ:দেখো আমি তোমাকে বলেছি এখন বিয়ের জন্য আমি রেডিনা। আমার টাইম লাগবে। এটাতো আর বলিনি আমি তোমাকে বিয়ে করবোনা।
সায়মা:আরিশ I am Pregnant!
আরিশ সায়মার কথা শুনে অবাক হয়ে যায় বসা থেকে দাঁড়িয়ে গিয়ে বিস্মিত কণ্ঠে বলে,
আরিশ:What! কি পাগলের মতো কথা বলছো সায়মা।

সায়মা:আরিশ আমি সিরিয়াস।লাস্ট মান্থ থেকে পিরিয়ড অফ। ভেবেছিলাম হয়ত এমনি। কিন্তু শরীর যখন কয়েকদিন যাবত খারাপ লাগছিলো। মাথা ঘুরছিলো, বমি হচ্ছিলো তখন ভয় লাগছিলো। তাই টেস্ট করি দুইবার আর দুইবারই রিপোর্ট পজিটিভ। তাও আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে আবার টেস্ট করি সেখানেও পজিটিভ।আমার গর্ভে তোমার বাচ্চা।আর এখন যদি তুমি আমাকে বিয়ে না করো তাহলে আমার মরা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
আরিশ:কিন্তু এটা…….

সায়মা:কেন বিশ্বাস হচ্ছেনা যে এটা তোমার বাচ্চা।তোমার আর মধ্য কয়েকবার ফিজিকাল রিলেশন হয়েছে। তাহলে এখানে অস্বিকার করার তো কোনো ওয়ে নেই।
আরিশ:আমি অস্বিকার করছিনা সায়মা।তুমি রেস্ট নেও আমি এখন আসছি।সন্ধ্যা এসে তোমাকে।জানাচ্ছি কি করবো সেটা।
আরিশ মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেলো আর সায়মা ঠোঁটে ফুটে উঠলো শয়তানি হাসি।
আরিশের মাথা কাজ করছেন।সে নিজের অজান্তেই সায়মার মোহে পরে আর মুগ্ধের উপর রেগে এই কাজ করেফেলেছে।কিন্তু এখন সায়মাকে তার বিয়ে করতেই হবে।আর যাইহোক বাচ্চার জন্য হলেও করতে হবে।সে সময় চেয়েছিলো সব কেমন আজব লাগছিলো কিন্তু এখন তার সময় নিলে হবেনা।কেউ জানার আগেই বিয়ে করতে হবে।

মুগ্ধকে স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছে রুহি।মুগ্ধ মাথা নিচু করে খাচ্ছে।রুহির নিজেকে কেমন অপরাধি লাগছে।রুহির মা আর রাজিব সকালেই চলে গেছে।যাওয়ার আগে মাফ চেয়েগেছে মেহের রুহির কাছে।মুগ্ধে সকাল ৮টার দিকে জ্ঞান ফিরে।মুগ্ধ একদম চুপ হয়েগেছে।মেহের অফিসে গেছে খুব দরকারি একটা মিটিং আছে।যাওয়ার আগে রুহিকে বলে গেছে আজকে মুগ্ধকে কলেজে না যেতে দিতে।রুহি মুগ্ধকে ফ্রেশ করিয়ে এখন স্যুপ খাওয়াচ্ছে।
রুহি:পাখি রাগ করে আছিস আমার উপর?
মুগ্ধ রুহির কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।
মুগ্ধ:রাগ কেন করবো ভাবিপু তোমার উপর?
রুহি:ওইযে কাল রাজিব আর মা……

মুগ্ধ:না ভাবিপু এখানে তোমার কি দোষ বলো।তুমি তো আর জানতেনা এমন হবে।আমি তোমার উপর রেগে নেই।
রুহি:সত্যি!
মুগ্ধ:হুম সত্যি।
রুহি মুগ্ধকে জরিয়ে ধরলো।মুগ্ধ ও রুহিকে জরিয়ে ধরলো।
দুপুরে মুগ্ধ শুয়ে ছিলো তখন ওর ফোনে একটা কল আসে। মুগ্ধ ফোনে তাকিয়ে দেখে unknown নাম্নার। মুগ্ধ ফোন রিসিব করতে অপাশ থেকে বলে উঠে,
ওপাস:আসসালামু আলাইকুম।আমি সাদিয়া।
মুগ্ধ:ওলাইকুমুস সালাম।সাদিয়া তুই!
সাদিয়া:হুম আজকে কলেজে আসলিনা। তাই কল দিলাম কেন। কোনো প্রব্লেম আছে কল দিছি তাতে?
মুগ্ধ:আরে না কি প্রব্লেম থাকবে আমার তো খুশি লাগছে তোর কল দেওয়াতে।
সাদিয়া:আজকে কলেজে আসলিনা কেন?
মুগ্ধ:একটু অসুস্থ দুইদিন পর থেকে আসবো।

সাদিয়া:অহ আচ্ছা খেয়াল রাখিস নিজের আর তোর এফবি আছে?
মুগ্ধ:হ্যা আছে কেন?
সাদিয়া:সব ক্লাসের পড়া ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়ে দিতাম। আইডি নাম কি?
মুগ্ধ:আমার নামই।
সাদিয়া:ওকে আমি রিকু দিচ্ছি তুই এক্সেপ্ট কর।
মুগ্ধ:আচ্ছা।
মুগ্ধ কল কেটে এফবিতে গেলো।অনেকদিন পর আসলো আবার সে এফবিতে।একটু পরেই ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসলো।সাদিয়া হাসান নামে।মুগ্ধ রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করলো।এরপর সাদিয়া তাকে ক্লাসের পড়াগুলো দিলো।সে সব গুলো নোট করে আইডি অফ করে বের হয়ে গেলো।

সন্ধ্যায় আরিশ আর সায়মার বিয়ে আয়োজন করা হয়েছে বাসায়।সায়মাকে বিকালে বাসায় নিয়ে আসছে।আরিশ ফোন করে জানিয়েছে সে বিয়ে করতে রাজী।সায়মা আর সালমার খুশি দেখে কে। রাজ্যসহ রাজপুত্র পাচ্ছে।মেহেরাব এই বিয়েতে কোনোভাবেই মত দেয়নি।কিন্তু তার কথায় পাত্তা দেয় কে।সালমা সব আয়োজন করেন।ঘোরোয়া ভাবেই বিয়েটা হবে।
সালমা:আমি বলছিলাম না তোকে এই উপায় একদম কাজে দেবে দেখলিতো।
সায়মা মাকে জরিয়ে ধরে বলে,
সায়মা:উফ মা তুমি আসলেই জিনিয়াস।তোমার উপায় একদম ১০০ তে ১০০ কাজে লেগেছে কিন্তু মা এই বাচ্চা মানে এরপর কিভাবে কি করবো?
সালমা:আরে দুই এক মাস গেলে মিথ্যা মিস্কেরেজ এর গল্প বানিয়ে দেবো। যেমন আজনে বানিয়েছি মিথ্যা সুইসাইড আর বাচ্চার গল্প।
সায়মা:ওকে মা।

সায়মা আর মা মিলে একটা মিথ্যা সুইসাইডের নাটক বানায়।তারা হাসপাতালের ডাক্তারকে টাকা খাইয়ে মিথ্যা সুইসাইডের নাটক সাজায়।সাথে মিথ্যা প্রেগ্নেন্সির কথা বানায়।তারা জানে আরিশ বাচ্চার কথা শুনলে না করতে পারবেনা।তাই তারা এই পরিকল্পনা করে।
হয়ে গেলো আরিশ সায়মার বিয়ে।ছলোনার জাল পেতে আরিশকে বিয়েতো করলো সায়মা।কিন্তু সেকি পারবে টিকিয়ে রাখতে তার এই ছলোনার সংসার।
রাত ১০টা,
মুগ্ধ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।চোখ দুটো তার পানিতে ভোরা।হাতে তার মোবাইল ফোন যেখানে বড় বড় করে লেখা “Sayma Islam got married With Arish Islam”.

শেষ থেকে শুরু পর্ব ৪

মুগ্ধ:ডিভোর্স এর এক সপ্তাহও হলোনা এর মাঝেই নতুন ঘর বেধে ফেললে আরিশ।আর আমাকে দেখোনা।আমাকে লোকে যা ইচ্ছা তাই বলে যাচ্ছে।নতুন কিছু শুরু করা তো দুরের কথা।এখন এভাবে থেকেই সয্য করা আমার কাছে বিষের মতো লাগছে।যাই হোক সুখি থাকো তুমি দোয়া করি।
“জীবনের অপূর্ণতাতেই ভালোবাসা সুন্দর”
“কিছু ব্যাথা সবাইকে জানাতে হয়না।কিছুটা দেয়াল জানুক কিছুটা আয়না দেখুক”
সাদাফ নিজের রুমে বসে আছে।মা তার বিয়ের জম্য উঠে পরে লেগেছে।কিন্তু সে কিভাবে মাকে বুজাবে।সে যে পারবেনা তার প্রেয়শীর জায়গা অন্য কাউকে দিতে।হ্যা তার প্রেয়শী তাকে ধোকা দিছে কিন্তু সেতো ভালোবেসেছে।এখনো ভালোবাসে।সব কিছু শেষ হয়ে গেছে।কিন্তু সে পারবেনা “শেষ থেকে শুরু” করতে।সে যে তার প্রেয়শীকেই ভালোবাসে।
শরৎচন্দ্র বলেছিলেন,

“বড় প্রেম শুধু কাছেই ডাকেনা দুরেও ঠেলে দেয়”
সাদাফ:ভালো আছো জানি।কিন্তু কতটা ভালো সেটা জানতে চাই।কেন আমার সাথে এমন ছলোনা করলে।আচ্ছা টাকাই কি তোমার কাছে সব।আমার ভালোবাসার কি কোনো দাম ছিলোনা।জানিনা এর উত্তর কোনোদিন আমি পাবোকিনা। জানো আমার কলেজে একটা মেয়ে আছে মুগ্ধ নামের।তোমার নাম আর তার নাম এক কিন্তু চরিত্র একদম ভিন্ন।তুমি ছোলনামই আর সে একদম নিষ্পাপ একটা মেয়ে।সেদিন মুগ্ধ নাম শুনে মনে হয়েছিলো ওটা তুমি কিন্তু পরে ভাবি তুমি এখানে আসবে কিভাবে তুমিতো বড়লোক স্বামী নিয়ে সুখে আছো।

শেষ থেকে শুরু পর্ব ৬