শেষ থেকে শুরু পর্ব ৬ || নন্দিনি চৌধুরী || ধারাবাহিক গল্প

শেষ থেকে শুরু পর্ব ৬
লেখিকা নন্দিনি চৌধুরী

সায়মা আরিশের বিয়ের আজকে চারদিন পার হয়েগেছে।এই চারদিন আরিশ সায়মার কাছে তেমন যায়নি।শুধু সায়মার কখন কি দরকার না দরকার সেগুলার খেয়াল রেখেছে।আরিশ কেন জানি মানতে পারছেনা সায়মাকে।কিন্তু সেতো নিজেই সায়মার দিকে এগিয়েছিলো সায়মার দিকে এগিয়েইতো সে মুগ্ধকে ছেড়েদিয়েছে।তাহলে কেন পারছেনা সায়মার কাছে যেতে।আরিশ মাথায় হাত দিয়ে বসে বিড়বিড় করে বলছে,

“কেন মুগ্ধ কেন।কেন শুধু সম্পত্তির লোভে তুমি আমাকে বিয়ে করলে।সম্পত্তির লোভে তুমি দুইজন মানুষকে ঠকালে।আমার ভালোবাসায় তো কোনো খাদ ছিলোনা।তুমি বললে সম্পত্তির বাকি অংশ আমি তোমাকে দিয়ে দিতাম।কিন্তু তুমি সম্পত্তির জন্য আমাকে মারতে চাইলে ছিহ মুগ্ধ ছিহ।আমি তোমাকে কোনোদিন ক্ষমা করবোনা কোনোদিন না।তোমার জন্য আমি সায়মার দিকে এগিয়েও এগোতে পারছিনা।মেয়েটা আমাকে তোমার নোংড়া পরিকল্পনার হাত থেকে আমাকে বাঁচিয়েছিলো।আর সেই মেয়েটাকে আমি কষ্ট দিচ্ছি।”

আরিশ অফিসে বসে এসব ভাবতে লাগলো আর ডুব দিলো অতিতে………।
মুগ্ধ আরিশের বিয়ের ২বছর পূর্ন হবার দুই মাস আগে মুগ্ধ আরিশের কাছ থেকে পাওয়ার অফ এটোনি আর মুগ্ধের ভাগের সম্পত্তির প্যাপার গুলো নিয়েছিলো।আরিশ কোনো আপত্তি করেনি সেগুলো দিতে।কিন্তু পেপার গুলো মুগ্ধকে দেওয়ার দুইদিন পরেই আরিশের একটা এক্সসিডেন্টে হয়।সিলেট থেকে ঢাকা আশার পথে এই এক্সসিডেন্টে হয়।তখন সায়মা তাকে সেফ করে হাসপাতালে নিয়ে আসে।হাসপাতাল থেকে সায়মা আরিশকে নিয়ে ওদের বাসায় যায়।মুগ্ধ বোনকে পেয়ে কিছুদিন থেকে যেতে বলে।এরপর থেকে শুরু হয় মুগ্ধ আরিশের মাঝে ঝামেলা।একদিন সকালে আরিশ অফিসে বসে কাজ করছিলো তখন সায়মা ওকে কল দেয় আর বলে ৫মিনিটের ভিতর দারচিনি ক্যাফে আসতে।আরিশ ভেবেছে হয়তো কোনো জরুরি দরকার তাই যেতে বলছে তাই আরিশ সেখানে যায়।আরিশ কে দেখে সায়মা ওকে নিয়ে একটা আড়ালে গিয়ে দাঁড়ালো আর বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সায়মা:একটু পর এখানে মুগ্ধ আসবে দেখো ও কিসের জন্য এসেছে।
আরিশ সায়মার কথায় বেস অবাক হয়।সত্যি একটু পর মুগ্ধ আসে সাথে একটা লোক ও আসে।মুগ্ধ তার সাথে কিছু কথা বলছিলো আর সম্পত্তির কাগজ আর পাওয়ার ওফ এটোনির কাগজটা দিলো।আরিশ অবাক হয়ে দেখে যাচ্ছিলো।একটু পর মুগ্ধ আর লোকটা চলে গেলো।সায়মা তখন বলতে লাগলো,

সায়মা:জানো আরিশ প্রায় দেখছি মুগ্ধ এই লোকটার সাথে দেখা করে প্রথমে বাসায় আসতো।এরপর বাসায় না এসে এভাবে দেখা করে।জানো সেদিন তোমার এক্সসিডেন্টে স্পোটে আমি এই লোকটাকে দেখেছিলাম।আমার কি মনে হয় জানো মুগ্ধ তোমাকে মেরে ফেলতে চায় সম্পত্তির জন্য।কারন তুমি মারা গেলে বাকি যা সম্পত্তি আছে তাও মুগ্ধের নামে হয়ে যাবে।আর একটা কথা তোমাকে বলতে চাই আরিশ সেটা হলো মুগ্ধ কিন্তু তোমাকে বিয়েই করেছে এই সম্পত্তির জন্য নাহলে কিন্তু ও তোমাকে বিয়ে করতোনা।একটু সাবধানে থেকো।

সেদিন মুগ্ধের ব্যাপারে আরিশের মনে সন্দেহ জেগে যায়।আর সেই সন্দেহকে বাস্তব করে ফেলে যেদিন আরিশের উপর আবার প্রানঘাতিক হামলা হয়।সেদিনও মুগ্ধ অই লোকটার সাথে দেখা করেছিলো আর সেদিন বিকালেই আরিশের উপর হামলা হয়।কিন্তু সেদিনও আরিশকে বাঁচিয়ে নেয় সায়মা।এরপর আরিশ বিশ্বাস করে নেয় মুগ্ধ তাকে মারতে চায় সম্পত্তির জন্য।আরিশ চেয়েছিলো মুগ্ধকে সরাসরি জিজ্ঞেশ করতে কিন্তু সায়মা তাকে বলে যে সে যদি মুগ্ধকে গিয়ে জিজ্ঞেশ করে তাহলে মুগ্ধ মিথ্যা বলবে স্বিকার করবেনা।তার থেকে সে জেনো মুগ্ধকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়।বেস এরপর আরিশ সায়মার সাথে মিশে গেলো।সায়মা যা বলতো তাই করতে লাগলো।সায়মার সাথে আরিশের সম্পর্কের কথা সায়মা নিজেই মুগ্ধকে জানায়।সেদিন মুগ্ধ আরিশকে গিয়ে জিজ্ঞেশ করলে আরিশ স্বিকার করে আর বলে তাকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে।সেদিন মুগ্ধ শুধু এতোটুকু বলেছিলো আমাকে এভাবে কেন ঠকালে।আরিশ সেদিন আর কোনো উত্তর দেয়নি।এরপর দিয়ে দিলো মুগ্ধকে ডিভোর্স।

বর্তমানে,,,
সায়মা ওর মায়ের সাথে ফোনে কথা বলছে,
সায়মা:মা আমিতো পেপারগুলো খুজে পাচ্ছিনা।
সালমা:ভালো করে খুজে দেখ সব তো আরিশের কাছেই থাকার কথা।মুগ্ধ তো আর পেপার গুলো নিয়ে যেতে পারবেনা।
সায়মা:তাহলে পেপারগুলো গেলো কই?
সালমা:ভালো করে খোজ।

সায়মা:আচ্ছা তুমি এটা বলো যে মুগ্ধের প্রোপার্টি পেপার গুলো পাইছো?
সালমা:আরে না তোর বাবার থেকে বের করতেই তো পারছিনা মেহেজাবিন সেই পেপার কই রেখেছে।
সায়মা:আচ্ছা তুমি অদিকটা দেখো আমি এদিক সামলাচ্ছি।
সালমা:আচ্ছা সাবধানে কাজ করিস।আরিশ জেনো সন্দেহ না করে।
সায়মা:আচ্ছা।
আজকে কলেজে এসেছে মুগ্ধ এই চারদিন বাসায় থেকেছে সে। মন শরীর কোনোটা ভালো যাচ্ছিলোনা তার।আজকে সে কিছুটা ভালো অনুভব করছে তাই কলেজে চলে আসলো।

কলেজের আজকে প্রথম ক্লাসটা সাদাফের।সাদাফ ক্লাসে আসতেই চোখ গেলো মুগ্ধের দিকে।এই চারদিন মেয়েটা আসেনি।সাদিয়ার থেকে শুনেছে মেয়েটা অসুস্থ।চেহারাও তাই বলছে।চেহারা কেমন মলিন হয়েরয়েছে।সাদাফ ক্লাসে এসে সবার থেকে পড়ানিলো।মুগ্ধে থেকে সে আশা করছিলো মুগ্ধ হয়তো পড়া পারবেনা।কিন্তু না মুগ্ধ পড়া পেরেছে।সাদাফ এতে খুশি হলো যাক মেয়েটা তাহলে পড়াশুনায় ফাঁকি দেয়না।হঠ্যাৎ পিয়ন এসে নোটিশ দিয়ে যায় তিনদিন পর কলেজে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আছে।যে যে অংশ নিতে চায় তারা যেনো নাম দিয়ে দেয়।মুগ্ধের এসবে এখন ইন্টারেস্ট নেই তাই সে কিছুতেই নাম দেবেনা বলে ঠিক করলো।

বাসায় এসে মুগ্ধ ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো।মেহের খাবার টেবিলে বসে ফোনে কথা বলছে। মুগ্ধকে দেঝে ইশারা করে বসতে বললো।মেহের ফোন রেখে মুগ্ধে দিকে তাকিয়ে বললো,
মেহের:শুনলাম আরিশের নাকি সায়মার সাথে বিয়ে হয়েগেছে?
মুগ্ধ:হুম আমিও শুনেছি।
মেহের:মানুষ কতটা খারাপ হলে এই বিয়ের সম্মতি দেয়।এক মেয়ের সংসার এক মেয়ে ভাংলো তাতে তার কিছু যায় আসলোনা।
মুগ্ধ:বাদ দেও ভাইয়া।এসব নিয়ে আর কিছু শুনতে চাইনা।
মেহের:হুম

মুগ্ধ:আরিশের সাথে আমার একটা শেষ কাজ রয়েগেছে ভাইয়া।আমি জানি সায়মা কিসের জন্য এসব করেছে।(মনে মনে)
মুগ্ধ খেয়ে উঠে রুমে চলে যায়।রুমে গিয়ে একজনকে কল দেয়।
মুগ্ধ:আসসালামু আলাইকুম।
………………………….
মুগ্ধ:জি আমার কাজ হয়েছে?
………………
মুগ্ধ:জি ওগুলা রেডি করে রেখে দেন। আমি যেদিন বলবো সেদিন পাঠিয়ে দিবেন মিস্টার ইসলামের কাছে।
মুগ্ধ ফোনটা রেখে আরিশের একটা ছবি বের করে সেটার দিকে তাকিয়ে বলে,,

আমি জানিনা সায়মা তোমাকে কি বুজিয়েছে।তবে আমার বিশ্বাস ছিলো তুমি আমাকে কোনোদিন ছাড়বেনা।কিন্তু না তুমি আমাকে ছেড়ে দিলে।তুমি জীবনে সব খুশি আনন্দ দিয়েছিলে আবার তুমিই সব কেড়ে নিলে।যাই হোক ভালাও থাকো।এটাই দোয়া।

“জীবনে সব থেকে ভালো যেই মানুষটা রাখতে পারে। সেই মানুষটাই সব থেকে বেশি কষ্ট দিয়ে যেতে পারে।”
মেহেরাব মেহেজাবিনের ছবি হাতে নিয়ে বসে আছে।তার দুচোখে পানি সে ছবিটাতে হাত বুলাচ্ছে আর বলছে,
আমাকে ক্ষমা করে দিও মেহেজাবিন।মিথ্যা ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে আমি তোমার ভালোবাসাকে পায়ে ঠেলে দিয়েছিলাম।নিজের হাতে নিজের ছেলেমেয়েকে মা হারা করেছি।আমি যদি জানতাম যে জীবনের সব চেয়ে বড় ভুলটা আমি করছি তাহলে করতাম না এই ভুলটা।ছেলেটা আমার সেই যে পর হলো আজ ও আমার সাথে কথা বলেনা।মেয়েটা থেকেও নেই।নিজের ছেলেমেয়ের কাছে আমি চরম অপরাধি।কিন্তু আমি কি করবো বলো আমি যদি সায়মা আর সালমাকে কিছু বলি তাহলে আমি জানি এর শোধ ওরা মুগ্ধের উপর থেকে নেবে।তোমার মেহের অনেক বড় হয়েগেছে।বোনের দায়িত্ব সে নিয়েছে।বোনকে একদম আগলে রাখছে।

শেষ থেকে শুরু পর্ব ৫

সাদাফ আজকে অনেকদিন পর গিটার হাতে নিয়ে বসেছে। শেষ সেদিন সে গিটার হাতে নিয়েছিলো, যেদিন তার প্রেয়শী অন্যের ঘরে চলে গিয়েছিলো।
সাদাফ গিটার টুংটাং সুর তুলছে।আজ বেশিই মনে পড়ছে তার প্রেয়শীকে।মুগ্ধকে দেখলেই তার প্রেয়শীর কথা মনে পরে।ছয় মাস সে তার প্রেয়শীকে না দেখে ভালোবেসেছে।শুধু তার চোখ দুটো সে দেখেছিলো।যেদিন সে ভেবেছিলো সে প্রেয়শীকে সামনাসামনি দেখবে,সেদিন প্রেয়শী তাকে ছেড়ে চলে যায় বড় লোক বাড়ির বউ হতে।
সাদাফ:”প্রথম প্রেম মানুষকে যেমন হাসতে শিখায় তেমন কাঁদতেও শিখায়।প্রথম প্রেম আমাদের ভালোবাসতে শিখায়।”
সকালে,,,,,

মুগ্ধ আজকে কলেজে যাচ্ছে হেঁটে হেঁটে।আজকে তার ইচ্ছা হয়েছে হেঁটে হেঁটে যাবে।মেহের না করেছিলো তবুও আজ সে হেঁটে যাবে।সাদিয়ার জন্য অপেক্ষা করবে চার রাস্তার মাথায়।মুগ্ধ আপন মনে রাস্তার আশপাশ দেখতে দেখতে যাচ্ছে।আগে আরিশের সাথে ঘুরতে বেরোলে এভাবে হেঁটে হেঁটে দুজনে ঘুরতো।আরিশের কথা মনে পরেতেই বুক চিড়ে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস।মুগ্ধ হেঁটে চার রাস্তায় মাথায় এলো।সাদিয়া আজকে ওর সাথে হেঁটে যাবে বলেছে।মুগ্ধ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলো তখন চোখ গেলো একটা দোকানে দিকে।সেখানে চোখ যেতেই মুগ্ধের বুকটা ছেঁত করে উঠে।আরিশ আর সায়মা ঠিক তার অপর সাইডে এক সাথে দোকানের সামনে দাঁড়ানো।মুগ্ধে মুখ থেকে বেরিয়ে আসে,,,
“আরিশ সায়মা”।

শেষ থেকে শুরু পর্ব ৭