শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ২৭

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ২৭
আলিশা

কান্নারত অবস্থায় স্মরণের বুকে থাকা ছুড়ি আমি পুনরায় হাত দিয়ে ওঠানোর চেষ্টা করতে চাইলেই একটে বন্দুক ছুড়ে দেওয়া লোকটা আমাকে বাঁধা দিয়ে বলল
— ম্যাম, এটা করবেন না। বেশি রক্তক্ষরণ হবে। পরে সমস্যা হতে পারে।

আমি তখন হাত গুটিয়ে নিয়ে চুপচাপ রইলাম। পাঁচ মিনিটের মাথাতেই পুলিশ, সিআইডি টিম এলো। স্মরণ কে হসপিটালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হলো। জাহিন এলো তার একটু পরই। জাহিনের সঙ্গে গাড়িতে উঠে হসপিটালে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম। তার পূর্বে খাইরুনের সঙ্গে কিছু কথা বলতে চাইলেও সুযোগ হলো না। জাহিন আমাকে তাড়া দিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে ছুটলো হসপিটালের উদ্দেশ্যে। গাড়িতে বসে শরীরটা নেতিয়ে গেলো আমার। কখন যেন দু-চোখ বুঁজে এসেছে তা বলা মুশকিল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চোখ খুলে নিজেকে পেলাম হসপিটালের বেডে। মলিন, নোংরা শাড়িটা পাল্টাতে চাইলে জাহিন নিচের শপিংমল হতে শাড়ি এনে দিলো। বাবাকে পেলাম আমার মাথার নিকট। জয়নব খালাকেও পেলাম। স্মরণের কথা জিজ্ঞেস করতেই বাবা বলল সে ঠিক আছে। শুধু বুকে একটু ছুরির আঘাত আর মাথার পেছনে সামান্য একটু কেটে গেছে। একটা সেলাই করানো হয়েছে। আর আমার নাকি প্রচন্ড জ্বর শরীরে। আমার জন্য কিছু শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করলেন বাবা। ডাক্তার এসে প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দিলো। ওষুধ জোগাড় করতে আবারও ছুটলো জাহিন।

স্মরণের কর্মস্থলের অফিসার ও পুলিশের আলাপচারিতা থেকে জানা গেছে যে ছেলেটা শেষ মুহূর্তে স্মরণ কে গান দিয়ে সাহায্য করেছে সেই ছেলেটা পুলিশের লোক। তার কাজ ছিলো ওখানকার লোকেদের টাকার বিনিময়ে নিজের দলভুক্ত করা। তবে তা সম্ভব হয়নি। তাই সে বিশৃঙ্খল পরিবেশে স্মরণকে কোনো প্রকার সাহায্য করতে পারেনি। কেবল শেষ মুহূর্তে এসে গানটাই ছুড়ে দিতে পেরেছে। এই সমস্ত খবর জাহিনের থেকে পেলাম আমি। আরো শুনলাম জয়, অর্থিকে থানায় রাখা হয়েছে।

জাহিন বলল ভয়ঙ্কর শান্তি হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। এবার আর জাবিন হবে না। বরং আইনের যে সমস্ত লোক জয়ের সঙ্গে জড়িত তাদেরসহ শাস্তি হতে পারে। হতে পারে বললে ভুল হবে শাস্তি পাইয়ে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে সি আই ডি ডিপার্টমেন্ট। জাহিনের কথার মাঝে খাওয়া শেষ করে ওষুধ খেয়ে নিলাম আমি। তখনই হঠাৎ স্মরণ হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে এলো আমার দিকে। বাঁকা হয়ে হাঁটছে সে। দেখেই স্পষ্ট বোঝা যায় বুকে প্রচন্ড ব্যাথা। বুকের ওপরের সাদা ব্যান্ডেজে রক্ত ভেসে উঠেছে। খোাল শার্টে সে আমার নিকট এসেই বলে উঠলো

— ঠিক আছো তুমি? শুনলাম জ্বর? দেখি?
সে একথা বলে আমার কপালে হাত দিতেই আমি অভিমানে তার হাত সরিয়ে দিয়ে নরম সুরে বললাম
— আমি ঠিক আছি ।
স্মরণ যেন বুঝলো আমার অভিমান। নার্স ডক্টর বলে উঠলো তাকে
— আপনি নড়াচড়া করলে আপনার রক্তক্ষরণ হবে। আঠারো ঘন্টা অন্তত বেড রেস্ট করুন।
স্মরণ নীরবে ওদের কথা মেনে নিলো। বলল
— আমি কি বাসায় বসে ট্রিটমেন্ট নিতে পারি?

ডাক্তার হ্যা সূচক উত্তর করলো। স্মরণ আমার পাশে বসলো। বাবা, জয়নব খালা ও জাহিনের দরুন নীরব থাকা ছাড়া আর কোনো ভাবে অভিমান প্রকাশ করতে পারলাম না। জাহিনের হাতে ফোন। তাতে চালু করা এখনকার তাজা খবর। খবরে আমাদের কাহিনীই বলে যাচ্ছে। কিভাবে ধরা হলো, কে অথৈ কে খুন করলো এসব নিয়েই কথা বলছে সাংবাদিক। এরই মাঝে ফোন করলো কেউ। বাবার ফোনটা বেজে উঠলো। বাবা বললেন অঙ্কন ফোন করেছে। ফোন রিসিভ করতেই অঙ্কনের ছটফটিয়ে ওঠা বাঁক

— আঙ্কেল স্মরণ ঠিক আছে?
বাবা আপডেট জানালেন। স্মরণের হাতে ফোন দিলে স্মরণ কথা বলতে শুরু করলো। অঙ্কন জানালো সে, প্রিয়া আর ছোঁয়া আসছে।

যদিও স্মরণ বাসায় বসে চিকিৎসা নিতে চাইলো তবে তা সম্ভব হলো না। আমি তার জন্য ভেতরে ভেতরে চিন্তায় অস্থির হলেও ওপরে ওপরে ‘না ধরি, না ছুঁই’ ভাব নিয়ে বাসায় চলে এলাম। জাহিন মাঝ রাস্তায় জিজ্ঞেস করলো
— ম্যাম, স্যারের এই অবস্থা আর আপনি বাসায় যাচ্ছেন?
আমি জবাব দিলাম
— আপনি আছেন তো। চিন্তা কিসের। স্যার তো সংসার করে তার বিবেক বুদ্ধির সাথে। খেয়ার সাথে তো আর করে না। করলে এতো রুড আচরণ তো আর খেয়ার সাথে করতে পারতো না।

বাসায় এসে ফল জল খেয়ে ফ্রেশ হয়ে একটা ঘুম দিলাম সব চিন্তা ঝেড়ে। ঘুম ভাঙলো বিকেল তিনটার নাগাদ। জয়নব খালা এরমাঝে হসপিটাল থেকে বাসায় এসে খাবার রান্না করেছেন। আমাকে ভাত,মাছ খাইয়ে ছেড়ে দিলেন। আমি খাবার শেষে শান্তকে ফোন করি। শান্ত ফোন ধরেই অস্থির গলায় শুধায় আমাকে

— খেয়া, ঠিক আছিস তুই?
আমি ধরা গলায় বললাম
— সরি দোস্ত, আমি বুঝতে পারিনি ওরকম একটা সিচুয়েশনে পরতে হবে। আমাকে মাফ করিস। ওরা কি তোকে কোনো টর্চার করেছে?

— আরে ধুর, কি যে বলিস না। তুই আমার ফ্রেন্ড না। গ্রামে অবহেলা, নির্যাতন চুকিয়ে ভার্সিটি চাস হলো। তারপর তোদের পেলাম। তোদের দেখে বাঁচার স্বপ্ন বুনতে শিখেছি। এতিম একটা ছেলেকে তোরা যেভাবে আপন করেছিস। তোদের জন্য জানও কুরবান করা যায়।
আমি ফোনের এপাশে নিশ্চুপ রইলাম। শান্ত মনের আবেগ কাটিয়ে বলে উঠলো

— কটকটি নাকি বিদেশ ছেড়ে দেশে আসছে? এবার এলে আর যেতে দিচ্ছি না। কতদিন হলো সবার সঙ্গে একসাথে বসে আড্ডা দেই না।
— নীলিমা মনে হয় আমার ওপর রেগে আছে বুঝলি। সেদিন দেখা হয়েছিল আমার এসব ঝামেলার কারণে ওকে একপ্রকার ইগনোর করে চলে আসছি। সজীব কেমন আছে? ওর সাথে কথাই হয় না……

কিছুসময় গল্প হলো আমাদের। হারিয়ে গিয়েছিলাম যেন আগের দিনগুলোতে। এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো আমার জীবনে কোনো ঝুট ঝামেলা নেই। কী চমৎকার জীবন আমার! তবে এই অনুভূতি বেশিক্ষণ টিকলো না। ফোন এলো জাহিনের। শান্তর কল কেটে জাহিনের কল রিসিভ করতেই সে ওপাশ হতে অশান্ত, অস্থির কন্ঠে বলল
— ম্যাম, তাড়াতাড়ি আসুন আপনি। নইলে আমার চাকরি আজ যাবেই যাবে।

একটুর জন্য ভয় পেয়ে গেছিলাম। এমন করে কেউ ফোনের ওপাশ হতে ডেকে ওঠে? কিছুটা ক্রোধ নিয়ে বললাম
— কি হয়েছে জাহিন ভাই? আপনার চাকরি কেন যাবে?
— স্যার আপনাকে এক্ষুনি হসপিটালে নিয়ে যেতে বলেছে। সঙ্গে প্রিয়া ম্যামও। সে তো আমার প্রেমিকার ফোন নাম্বার আমার ফোন থেকে টুকে নিয়ে আমাকে রীতিমতো ব্লাকমেইল করছে। প্লিজ আসুন ম্যাম।

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ২৬

আমি প্রিয়ার কান্ডে বরাবরের মতো আজও বিরক্ত হলাম। মেয়েটা আমাকে ফাঁসানো ছাড়া আর কি কিছু শেখেনি? জাহিন আমার ড্রাইভার, আমরা অ্যাসিসটেন্ট তবুও আমি জানি না তার একটা গার্লফ্রেন্ড আছে আর সে কিনা বিদেশে বসে উসুল করলো এসব? মারাত্মক মেয়ে! এই মেয়েকে অঙ্কন সামলায় কিভাবে? আমার মায়ার মন দয়ার মন জাহিনের প্রতি দয়া দেখিয়ে গাড়ির নিকট গেলো। অতঃপর জাহিনের সঙ্গে হসপিটালে।

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ২৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here