শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ২৬

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ২৬
আলিশা

বদ্ধ অবস্থায় চেয়ারে বসে কেবল হাশফাশ করতে লাগলাম। স্মরণ কলম হাতে তুলল। হাতে তুলে দু সেকেন্ড গড়াতেই হঠাৎ বলে উঠলো
— আগে ফোন করে কেসগুলোর একটা ব্যবস্থা করি। আগে থানায় ফোন করি। পরে না হয় সাইন করবো।
— উমমম, চালাকি?
স্মরণ হাসলো। ফিচেল হেসেই বলল
— দু’টো বউ তোমার হাতে বন্দি। এখানে চালাকি করার কোনো সুযোগ আছে আমার?
— ওকে। ফোন করো তাহলে।
স্মরণ বলে উঠলো

— ফোন, ওয়ালেট সব তো তোমার লোক নিয়ে নিয়েছে। তোমার ফোনটা দাও।
লোকটা ফোন এগিয়ে দিলো। স্মরণ তা হাতে নিয়েই প্রথমে ফোন করলো কোথায়। সেখান থেকে পুলিশ স্টেশনের ফোন নাম্বার সংগ্রহ করেলো। অতঃপর পুলিশ স্টেশনে ফোন করতে করতে উঠে দাড়িয়ে পরলো। একটু পায়চারির ছলাকলা করে আচমকা কক্ষে দাড়িয়ে থাকা এক লোকের কোমড় থেকে গান তুলে নিয়ে দ্রুত বেগে চলে গেলো কালপ্রিটের কাছে। বলে উঠলো

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— ওদের গলা থেকে ছুড়ি নামাতে বল। নইলে লাশ পরবে তোর। গলাও কাটবো তোর।
লোকটা যেন ভরকে গেলো। চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে অকথ্য এক গালি উচ্চারণ করে বলে উঠলো
— এই ছেড়ে দে ওদের।

আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম স্মরণের দিকে। স্মরণ ভালোভাবে বন্দুক তাক করতে ব্যস্ত তখন। অথৈয়ের গলা থেকে ছুড়ি সরানো হলো। অথৈ তখন চটজলদি চলে এলো আমার নিকট। ওকে দেখেই ভয়ে আমার অন্তরাত্মা শুকিয়ে গেলো। অথৈ আমার হাত, পায়ের বাঁধন খুলে দিলো। তবে খুলল না আমার মুখের বাঁধন। বরং আমার হাত শক্ত করে ধরে রাখলো। আমাকে রুম থেকে বাইরে বের করলো। সঙ্গে স্মরণ কে ইশারায় বাইরে বের হতে বলল। স্মরণ অথৈকে বিশ্বাস করে বাইরে বের হতেই আমাকে আটকে ফেলল কিছু লোক সঙ্গে অথৈকে আটকানোর মিথ্যা নাটক। অথৈ তখন চেচিয়ে বলল

— স্মরণ বাঁচাও।
স্মরণ হাশফাশ করে উঠলো। হঠাৎই তার মাথায় পেছন থেকে কেউ লাঠির আঘাত করতেই স্মরণ ছিটকে দূরে সরে এলো। আমি ততক্ষণে খেয়াল করলাম আমার হাত মুক্ত। পাশে কেউ নেই। তড়িৎ গতিতে সামনে তাকিয়ে দেখি অথৈয়ের হাতে লাঠি। স্মরণ পেছন ফিরে যেন স্থির হয়ে গেলো। প্রায় মিনিট গড়িয়ে গেলো তার নিজেকে ধাতস্থ করতে। এক হাত মাথার পেছনে রেখে চোখ দু’টো অথৈয়ে আবদ্ধ করে অবাক কন্ঠে উচ্চারণ করলো

— অথৈ…
অথৈ বিদ্রুপ করে দুঃখী নজরে চাইলো আমাদের দিকে। আমি স্মরণের নিকট বসে তার আঘাতপ্রাপ্ত মাথায় হাত দিতেই চমকে উঠলাম। রক্তের ধারাপথ তৈরি হয়েছে।
— তোমার অথৈ তোমাকে ঠকালো তাই না? ইশ! কি দুঃখ।
অথৈয়ের কথা শুনে স্মরণ আমার দিকে চাইলো। আমি চোখ নামিয়ে নিলাম। অথৈ এবার আমার দিকে এগিয়ে এলো। আমার মাথার এলোমেলো চুলগুলো ঠিকঠাক করতে চাইলো যেন। আমি ঝাড়ি দিয়ে ওর হাত সরিয়ে দিতেই বলে উঠলো

— ইশ! বোকা মেয়ে একটু ফিটফাট হও। কাল খবরের কাগজে তোমার ছবি বের হবে তো। শিরনাম থাকবে, ” সিআইডি অফিসার স্মরণের বউ খেয়ার খুন সঙ্গে স্মরণও।”
স্মরণ অবিশ্বাস্য নজরে তাকিয়ে রইলো। অথৈ আমাদের থেকে একটু দূরে একটা চেয়ারে বসলো। সঙ্গে লোকটাও। এরপর বলল

— এবার কিছু কথা মনোযোগ দিয়ে শোনো। মনে কৌতুহল নিয়ে মৃত্যু বরণ করা উচিত নয়। দুলাভাই আমাকে কি চেনা যাচ্ছে না?
আমি চমকে উঠলাম। স্মরণ ওর দুলাভাই? স্মরণ যেন ভ্রু কুচকে চাইলো। এবার সম্পূর্ণ আলাদা মনে হলো আমার অথৈবেশী মেয়েটাকে।
— ওহ সরি। আমার কথা তো অথৈ আপনাকে জানায়নি মনে হয়। আমি আপনার শালিকা। অথৈয়ের জমজ বোন। অথৈয়ের খুনি। আপনাকে এখানে টেনে আনা অর্থি। আর আপনার ও আপনার বর্তমান বউয়ের হবু খুনি।
আমি চমকে উঠলাম। স্মরণ যেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। আমি তখন প্রশ্ন করে বসলাম।

— কিভাবে বিশ্বাস করবো তুমি অথৈয়ের বোন? আর কেন?
মেয়েটা স্মরণের দিকে চাইলো। বলে উঠলো
— দেখুন তো কোনো পার্থক্য পান কিনা। আমার কপালের বাম দিকে একটা তিল আছে তাই না? অথৈয়ের এটা ছিলো না। ঠিক বললাম আমি?
স্মরণ প্রশ্নের বিপরীতে জবাব চাইলো

— অথৈয়ের সাথে তোমার কি শত্রুতা ছিলো?
— ও যে আমার সব গোপন খবর আপনাকে বলে দিতে চেয়েছিল এটাই তো বড় শত্রুতা। আমি যে একটা পতুতালয়ের মালকিন এটা কেন বলতে চাইবে সে আপনাকে? কেন? ও আমার থেকে আমার শৈশব কেড়ে নিয়ে কি ও শান্তি পাচ্ছিলো না? আমি বড় হয়ে যখন আমার রাস্তা আমি দেখে নিলাম তখন কেন ও মাথা ঢোকাবে। ও যখন বাংলাদেশে থাকতে চাইলো তখন বাবা মা ওর কথা মেনে নিলো। আমার আসলে ভুল হয়ে গেছে। ছোট বেলাতেই আপনাকে খু*ন করা উচিত ছিলো আমার। শুধু আপনার জন্য ও অস্ট্রেলিয়ায় আর ফিরলো না। মা বাবাও ওকে টাইম দিলো। ওর পছন্দ মেনে নিলো। আমি একাই গেলাম সেখানে। পরিবার ছাড়া থাকতে আমার কষ্ট হয়নি?

অর্থির কথা শুনে আমি হতবাক। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে আমার। তার এলোমেলো বাঁক স্পষ্ট করলো তার শৈশবের ক্ষত। যে ক্ষত মনে জমে একসময় হয়েছে শয়তানের অস্ত্র। তবে মেয়েটা না বুঝলেও আমি বুঝলাম অথৈ বোন হিসেবে অর্থিকে সবসময় চেয়েছিল স্মরণের নজরের বাইরে রাখতে। চেয়েছিল অর্থিকে বিপথ থেকে সৎপথে আনতে। আমি প্রশ্ন করলাম

— তুমি বাংলাদেশে কবে এসেছো? আর অথৈয়ের সঙ্গে দেখা কবে হলো?
— অথৈয়ের বিয়ের দশদিন আগে অথৈয়ের সঙ্গে দেখা হয়। তখন সে আমার কুকর্ম কোনোভাবে টের পেয়ে যায়।
আমি তখন শক্ত গলায় মেয়েটাকে বললাম
— বোকা মেয়ে তুমি কি বোঝোনি অথৈ যখন পাঁচ বছর স্মরণের সঙ্গে সংসার করে তোমার কথা বলেনি তখন আগামী দিন গুলোতেও বলতো না। ও চাইছিল তুমি এই কাজ থেকে সরে আসো।

— নাহ! এতো তো সহজ না। আমি কেন আমার কাজ থেকে সরে আসবো? ও কেন এটা বোঝাতে চাইবে আমাকে।
বুঝলাম মেয়েটা একটু হলেও সাইকো। তর্ক করা ছেড়ে দিলাম। যে দ্বিতীয় কালপ্রিট যার সঙ্গে স্মরণের একদফা হাঙ্গামা হয়ে গেলো সে হঠাৎ বলে উঠলো
— এই থাম তো। অর্থি তোর আবেগ ঢালা বন্ধ কর। আমার তো অফিসারের বউকে লাগবে। অথৈয়ের মতো।
একথা বলতেই স্মরণ রেগে গেলো। উঠে দাড়িয়ে বলে উঠলো

— জয়, তোর চোখ তুলে নিতে কিন্তু আমার সময় লাগবে না।
জয় লেকটা হো হো করে হেঁসে উঠলো। অর্থি বসে রইলো নির্বিকার। তার কি আগেও মায়া হয়নি তার বোনের জন্য? আর এখনও হয়না? অনুতপ্ত না সে? ভাবনার মাঝে একটা মেয়ে এসে আমাকে ধরে জোর করে কোথাও নিয়ে যেতে চাইলে আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরে দিলাম। তখনই ঘিরে ধরলো কিছু লোক আমাকে ও স্মরণ কে। আমি আচমকা স্মরণের গান ধরা হাতটা আমার কপালে রাখলাম। স্মরণ যেন চমকে উঠলো। আমি কম্পমান গলায় স্মরণ কে বললাম

— আর যাই হয়ে যাক। আমি ওদের হাতে পরতে চাই না। একটা নিকৃষ্ট দৃশ্যের মুখোমুখি আমি হতে চাই না। অথৈয়ের সঙ্গে যা হয়েছে তা আমার সঙ্গে হতে দিতে দেবেন না প্লিজ। আপনি আমাকে গুলি করুন। তারপরও আপনি আমাকে ওদের হাতে পরতে দেবেন না। স্মরণ হতবুদ্ধি হয়ে গেলো। জয় নামক লোকটা এসে স্মরণের পিঠে লাঠির আঘাত করতেই স্মরণ আমার হাত শক্ত করে ধরলো। আমিও তার হাত শক্ত করে ধরে নিজের কপালেই বন্দুক তাক করে রাখলাম। হঠাৎ অর্থি বলে উঠলো

— এভাবে হবে না। আগে তো ওর স্বামীকে প*টি*য়ে আধমরা কর।
আমি চমকে উঠলাম। সবার উদ্দেশ্যে বললাম
— মা*র*লে আমাকে মা*রো। ওনাকে কেন?
কথাটা বলেই স্মারণের দিকে তাকিয়ে ভেজা চোখে বললাম

— একটা কথা আপনাকে বলা হয়নি। যদি ম*রে যাই আফসোস হবে আমার। আপনার একটা উপহার ছিলো আমার কাছে। আপনার একটা অনাগত সন্তান আমার মাঝে ছিলো। হয়তো আমাদের আর একসাথে শেষ বিকেলে সমুদ্র পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা হলো না। ছোয়াকে একটা খেলার সাথী দেওয়া হলো না আমার।
কথাটা বলেই দুচোখ বন্ধ করে মাথায় গুলি করার জন্য প্রস্তুত হতেই একটা শব্দ অতঃপর একটা কন্ঠ আমার কানে এলো।চোখ খুলে সামনে তাকাতেই দেখি খাইরুন দাড়িয়ে। হাতে তার শক্ত মজবুত একটা লাঠি। মাটিতে লুটিয়ে পরেছে জয় নামক লোকটা। খাইরুনকে দেখে অর্থি অবাক হয়ে বলল

— খাইরুন তুই?
খাইরুন কোনো কথা না বলে অপর হাতের দা জয়ের গলায় ধরে বলল
— বুবু ওদের ছেড়ে না দিলে এই জয়কে খু*ন করবো আমি।
অর্থি যেন চিন্তায় পরে গেলো। জয় ভীতু কন্ঠে বলে উঠলো
— অর্থি বাঁচা, বাঁচা আমাকে।
তবে অর্থি আচমকা তড়িৎ গতিতে যেন চলে এলো আমার কাছে। আমার পেছনে দাড়িয়ে আমার পিঠে ছুড়ির ঠোঁট রেখে খাইরুন কে বলল

— ও ম*র*লে আমার লাভ। মে*রে ফেল। প্রতিবার ভয় দেখিয়ে টাকা নেয় আমার থেকে। আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দেবে বলে বলে মাথা খায়।
কথাটা বলার মাঝেই হঠাৎ স্মরণ আমাকে হেঁচকা টান দিলো। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই। স্মরণের টানে আমি তাল সামলাতে না পেরে মাটিতে পরতেই কর্ণকুহরে পৌঁছালো স্মরণের ব্যাথাতির চিৎকার। ধ্বক করে উঠলো আমার বুকটা। পিছু ফিরে চাইতেই দেখি স্মরণের বুকের ডান পাশে অর্থি ছুড়ি গেঁথে দিয়েছে। চিৎকার করে উঠলাম আমি। অর্থিকে তৎক্ষনাৎ ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলাম। স্মরণের বুকের ছুড়ি বের করার জন্য উদ্ধত হতেই স্মরণ বলে উঠলো

— কিচ্ছু কোরো না। সরো তুমি।
কথাটা বলেই অর্থির পায়ে পাড়া দিয়ে ধরলো। ইতিমধ্যে কোথা থেকে যেন এগিয়ে এলো একটা লোক। স্মরণের দিকে বন্দুক ছুড়ে দিতেই সে তা ক্যাচ ধরে অর্থির মাথায় তাক করলো। অতঃপর বলল

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ২৫

— পুলিশ কে ফোন করো। স্যারকে ফোন করো।
কথাটা বলতে বলতেই সে ঢলে পরলো মাটিতে। লোকটা এসে অর্থিকে আটকে ফেলে ফোন করলো সকলকে। আমি কান্নায় ভেঙে পরলাম।

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ২৭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here