শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ২৮

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ২৮
আলিশা

হসপিটালে পৌঁছাতেই প্রিয়ার আগমন। গাড়ি থেকে এসিস্ট্যান্ট বেশে আমাকে নামিয়েই সম্মুখে পথ দেখিয়ে দিলো। মুখে বলল
— ম্যাম প্লিজ আসুন।
আমি ওর বাহুতে একটা থাপ্পড় দিয়ে চোখ রাঙালাম ওকে। ও হেসে উঠলো। অতঃপর আমার হাতের মাঝে নিজের হাত রেখে আলাপে বিলাপে জমলো। কুশল বিনিময়ের মাঝপথে আমার রূপের প্রশংসা করলো। অথৈকে নিয়ে কথা তুলল সঙ্গে অর্থিকে নিয়েও৷ বলে ফেলল

— তোর কি কপাল ভাই, মৃত সতিনকে সামনে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে তোর। এই আমারও না খুব দেখার ইচ্ছে ওই ডেঞ্জারাস মহিলাকে। আচ্ছা ও আবার তোর বরের সাথে সংসার করেনি তো? ছোটবেলায় একটা নাটক দেখেছিলাম জি বাংলায়। দুই জমজ বোন। বিয়ে হয় একজনের সঙ্গে কিন্তু পাল্টাপাল্টি করে দু’জনে সংসার করে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

প্রিয়া কথাটা ঠাট্টার ছলে বললেও আমার মনে সন্দেহের বীজ বোনা হয়ে গেলো। হঠাৎ মনে পরে গেলো আলমারিতে পাওয়া দু’টো চিরকুটের কথা। যেখানে অথৈ কাউকে সতর্কবাণী লিখেছিল। সেটা কি সত্যিই অথৈ লিখেছিল নাকি অর্থি? বিষয়টা জটিল হয়ে মস্তিষ্কে গেঁথে রইলো। ভাবনা আর প্রসারিত হতে পারলো না। স্মরণ এসে দাঁড়ালো আমার সম্মুখে। ভাবনা বিলিন হয়ে মাথা চাড়া দিলো অভিমান। তার ঝগড়া, তার আমার গলায় হাত রাখার বিষয়টা মানস্পটে ভেসে উঠলো। আমি দৃষ্টি অন্যপ্রান্তে রেখে দাড়িয়ে রইলাম। প্রিয়া দু একটা ভালোমন্দ কথা বিনিময় করলো। এরই মাঝে এলো অঙ্কন। আমার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলো সে। ছোঁয়ারও আগমন হলো। আমার কোলে চড়ে বসে আমার কপালে হাত রেখে জ্বর মাপলো। গলা জড়িয়ে ধরে কপোলে কপোল রাখতেই স্মরণ বলে উঠলো

— ছোঁয়া নেমে আসো। তোমার মা এখন ডক্টরের কাছে যাবে।
আমি কিছুটা অবাক হয়ে তাকালাম স্মরণের দিকে। ডক্টরের কাছে কেন? স্মরণ মুচকি হেসে আমাকে চোখ মারলো হঠাৎ। আমি যেন বেকুব হয়ে গেলাম। আশপাশ পর্যবেক্ষণ করলাম। কেউ দেখে ফেলল না তো? পাশে তাকিয়ে দেখি অঙ্কন আর প্রিয়া উধাও। ওরা আবার কোথায় হাওয়া হলো? প্রশ্নটা মনে রেখে উত্তর খুঁজতে একটু সামনে তাকাতেই দেখলাম দু’জনে ঠোকাঠুকিতে ব্যস্ত। অঙ্কন প্রিয়াকে বোঝাচ্ছে এই সময় লাফালাফি, ঝাঁপাঝাপি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। ওদিকে প্রিয়া বোঝাচ্ছে সে মোটেও লাফালাফি, ঝাঁপাঝাপি করছে না।

— ছোঁয়া তোমার ভাই বা বোন আনছে।
স্মরণের বলা কথা কানে আসতেই আমি ফিরে চাইলাম তার দিকে। অতঃপর ছোঁয়া হাতটা ধরে বললাম
— ছোঁয়ার ভাই বা বোন আসছে। আপনার তো কিছু আসছে না। এতো খুশি হচ্ছেন কেন আপনি?
স্মরণ যেন আমার কথায় আকাশ থেকে পরলো। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। আমি তার চাহনি উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে লাগলাম অজানা দিকে। হঠাৎই শাড়ির আঁচলে টান পরলো। আমি পেছন ফিরে ক্ষিপ্ত হয়ে বললাম

— আপনার না বুকে ব্যাথা তারপরও এমন টানাটানি করছেন কেন? সরুন বলছি। রোগী রোগীর মতো থাকুন। অন্যের বউয়ের আঁচল ধরে টানবেন না প্লিজ।
স্মরণ নিজের মাথার ব্যান্ডেজে হাত ছুঁতে ছুঁতে হালকা হাসলো। শাড়ি ছেড়ে আমার হাতটা ধরে কোনো এক ডাক্তারের রুমের দিকে যেতে যেতে বলল
— আগে তো আমি বাবার ভূমিকা পালন করবো তারপর না রোগীর ভূমিকা।

ডাক্তারের কাছে টেস্ট করার পর রিপোর্ট এলো সবই ঠিকঠাক। তবে আমার শরীর কিছুটা দূর্বল। নিয়ম করে খাওয়া দাওয়া করতে হবে। স্মরণ মনোযোগ সহকারে ডাক্তারের কথা শোনার পর হসপিটালের বেডে ফিরলো। আর নড়াচড়া করবে না সে। অঙ্কন ইতিমধ্যে বন্ধুর অবস্থা পরখ করে ধমকে উঠলো তাকে। বলে উঠলো

— এখানেও তোর গোয়েন্দাগিরি করতে হবে? রোগী রোগীর মতো থাক না।
স্মরণ পাল্টা জবাব দিয়ে বলল
— তুই বাবা নামের কলঙ্ক। নিজে একজন হবু বাবা হয়ে আরেকজন হবু বাবার অনুভূতিকে তুচ্ছ করছিস।
অঙ্কন যেন স্মরণের কথায় স্তব্ধ হয়ে গেলো। অতঃপর স্মরণের হাত ধরে হ্যান্ডশেক করে বলে উঠলো
— কংগ্রাচুলেশন বেয়াই। তোর বউ নিতে পারি নাই কিন্তু আমার সন্তান তোর সন্তান কে নেবেই নেবে। আমি এনে দেবো।
আমি হেসে রুম থেকে প্রস্থান করলাম। স্মরণ ও অঙ্কনের কথোপকথন চলতে লাগলো।

দিন পার হলো এরই মাঝে দু’টো। চিরকুট নিয়ে আমার মনের কৌতুহল মেটাতে সকলের আড়ালে আমি থানায় উপস্থিত হয়েছিলাম। অর্থির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে সরাসরি প্রশ্ন করেছি। সে কিভাবে অথৈকে মে*রে*ছে আর অথৈয়ের সঙ্গে তার কতটুকু সম্পর্ক ছিলো, কোনো চিরকুট সে স্মরণের আলমারিতে রেখেছিল কিনা এবং স্মরণের বাসায় তার যাতায়াত ছিলো কিনা। অর্থি থানায় পাগলপ্রায় হয়েছিল। আমি প্রশ্ন করলেও জবাব দিলো বহুক্ষণ পর। পুলিশ এতে অবশ্য আমাকে সাহায্য করেছে।

অর্থির ভাষ্য মতে, অথৈয়ের সঙ্গে প্রথমদিকে তার সম্পর্ক সুসম্পর্কই ছিলো। ঝামেলা বাঁধলো যখন অথৈ তাকে সব রকমভাবে কাজ ছেড়ে মায়ের কোলে ফিরে যেতে বলে। অর্থি মানতে পারলো না বিষয়টা। আরো ঝামেলা হলো যখন মেয়ে অপহরণ করার কেইস স্মরণের হাতে পরলো। ইনভেস্টিগেশন যখন স্মরণ করতে শুরু করলো তখন অথি বলেছিল স্মরণ কে এই কাজ থেকে সরে যেতে। তার হাতে কিছু অফিসার ছিলো যারা টাকার বিনিময়ে তাদের অপরাধ ঢেকে ফেলতো। তবে স্মরণকে তারা বাগে আনতে পারেনি। অথৈও আরো চাপ দেয় অর্থিকে। শেষ পর্যায়ে অর্থি উল্টো অথৈকে চাপ দিতে শুরু করলো স্মরণকে কেইস থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা বলার জন্য।

অথৈ নারাজ ছিলো। সে চাইছিলো না অন্যায়ের সঙ্গে আপস করতে। দুই বোনের ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে অর্থি অথৈকে সাময়িক সময়ের জন্য আটকে রেখে নিজে যেতো স্মরণের বাসায়। কোনো প্রমাণ সরানোর জন্য বা কখনো স্মরণের পরের পদক্ষেপ জানার জন্য। শুনেই আমার হাত পা কেঁপে উঠেছিল।যদি স্মরণের কোনো ক্ষতি করে ফেলতো? অর্থি আরো বলেছে স্মরণ একদিন তাকে ধরেই ফেলেছিল প্রায়। ভীষণ ধূর্ত সে। অথৈ আর অর্থি জমজ হলেও কথাবার্তা, আচার আচরণ তো আলাদা।

কেইস নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত প্রশ্ন করায় স্মরণ ক্ষেপেছিল একদিন। সেিন নাকি অনেক কথা কাটাকাটি হয় অর্থির সঙ্গে স্মরণের। তার স্টাডি রুম এলোমেলো থাকে কেন, কোনো একটা প্রয়োজনীয় জিনিস হাতের কাছে থাকে না ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। সেদিনের পর থেকে অর্থি আর স্মরণের সামনে যায়নি। যখন দীর্ঘ সময়ের জন্য স্মরণ বাসায় থাকতো না তখনই কেবল অথি যেতো। এভাবে যাওয়ার আসা দেখে অথৈ ক্ষেপে যায়। একদিন অর্থিকে থ্রেট দিয়ে বসে আর যদি অর্থি স্মরণের বাসায় যায় তবে অথৈ সব যা যা জানে সবই ব্যক্ত করবে স্মরণের কাছে। অর্থির মাথা আউলে যায়। তখন সে ভালোভাবে হাত মেলায় জয়ের সঙ্গে।

নেশাদ্রব্যের ব্যাবসা, নারী পাচারের কাজে যে সম্পূর্ণভাবে জড়িত। তার শত্রুও স্মরণ ছিলো। দু’জনে এক হয়ে অথৈকে তুলে আনে। অর্থি শুরুতে চেয়েছিল অথৈকে দিয়ে শুধু হুমকি দেবে স্মরণকে। স্মরণ যদি এরপর বেশি বাড়াবাড়ি করে তবে অন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে জয় একথার দ্বিমত করে অথৈকে প্রথমে ধ্বসন ও পরে নিরংশ ভাবে হ*ত্যা করে। আর চিরকুটের লেখক অর্থি ছিলো। তার এক লোক স্মরণের বাসায় এসেছিল অর্থির সঙ্গে কাজের কথা বলতে। তখন স্মরণ বাসাতেই ছিলো। অর্থি কাগজ কলমে চিরকুট লিখে জানালা দিয়ে ছুড়ে দিতে চেয়েছিল লোকটাকে। তবে সফল হয়নি। তখনই স্মরণ দরজায় করাঘাত করলে তড়িঘড়িতে সে লুকিয়ে ফেলে চিরকুট।

এমন সব লোমহর্ষক পরিকল্পনা ও কাহিনি শোনার পর আমার অথৈয়ের জন্য কষ্ট হলো। অর্থির ওপর ঘৃণা হলো। শেষ মুহূর্তে আমি আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থি ও অথৈয়ের ছোট বেলায় একসঙ্গে ওঠা একটা ছবি অর্থির মুখের ওপর ছুড়ে দিলাম। এই ছবি সংগ্রহ করেছি গতকাল অথৈয়ের বাড়ি থেকে। সেখানে এই বিষয়গুলো নিয়ে অথৈয়ের মায়ের সঙ্গে আলোচনা করে জানতে পারলাম তিনি এসবের কিছু জানেন না। তার আরেক মেয়ের সঙ্গে তার যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিলো। সে যে বাংলাদেশে ছিলো একথাও তিনি জানতে পারলেন দু’দিন আগে টিভির পর্দায় দেখে। ছবিটা অর্থির দিকে ছুড়ে দিয়ে বলেছি

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ২৭

” তুমি নিজেই নিজেকে খু*ন করেছো। তুমি শুধু তোমার বোনকে খু*ন করোনি। কি করে পারলে নিজের মতোই দেখতে একটা মানুষ কে এমন একটা ডেঞ্জারাস পরিকল্পনায় ফাঁসাতে? ”
অথি যেন তখন মিইয়ে পরেছিল। আমার ইচ্ছে ও এই ছবিটা বুকে নিয়ে রাতদিন কান্না করুক। মানুষিক অশান্তি, মনস্তাপে ভুগুক। সে তো পারতো সব ছেড়ে বেরিয়ে আসতে।

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ শেষ পর্ব 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here