শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ২৫

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ২৫
আলিশা

অথৈ একটু পর অসুস্থতার মুখোশ খুলে তার আসল রূপে এলো। বলে উঠলো আমার নিকট বসে
— ওহ তুমি জেনে গেছো? তাহলে আরো একটু জেনে রাখো। তুমি কিচ্ছু জানো না। জানার এখনো অনেক বাকি। তুমি যা জানো তা এক সমুদ্র পানির এক চামচ।

— আর কি বাকি আছে জানার? তুমি যে একটা নিচ প্রকৃতির মানুষ, তুমি ভালোবাসার নামে কলঙ্ক, তুমি মা নামের কলঙ্ক এসবই জানি। কি করে পারো তুমি এসব করতে? ছোঁয়ার কথা একবারও মনে হলো না? ছিহ! তুমি জানো স্মরণ তোমাকে কতটা ভালোবাসে?
অথৈ কাউকে ইশারায় তার হাত বাঁধতে বলল। অতঃপর আমায় বিরক্ত সূরে বলল

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— এই চুপ কর তো। কি অথৈ অথৈ করে মাথা খাচ্ছিস। চুপচাপ বসে থাক। এই ওর মুখটা বেঁধে ফেল তো। নীতিবাক্য আমার ভালো লাগে না।
একজন লোক এসে আমার মুখ বেঁধে দিলো। আমার বুঝে উঠতে বাকি রইলো না ওদের মতলব। ঘরে ঢুকলো সেদিনের লোকটা। যে লোকটা অথৈকে কিডনাপ করার মতো করে নাটক সাজিয়ে স্মরণকে ফোন করেছিল। সে এবারও ফোন দেওয়ার বন্দবস্ত করলো। তার পূর্বে হঠাৎ আমার দিকে গাঢ় নজর দিয়ে বলে উঠলো

— এটা কি দ্বিতীয় বউ নাকি? কি কপাল মাইরি। এতো সুন্দর সুন্দর বউ পায় কোথায়?
লোকটার কথার ভঙ্গিতে আমার গা গুলিয়ে এলো। এক পা আমার দিকে এগোতে চাইলেই আমি বড় বড় চোখে চাইলাম। ক্ষমতা থাকলে আমি ওকে অগ্নিচোখে ভস্ম করতাম। লোকটা এগোতে চাইলেই অথৈ বলে উঠলো
— আরে ভাই পালিয়ে যাবে না ও। সময় অনেক পাবেন। আগে কাজটা করেন। স্মরণের এখানে আসার ব্যবস্থাটা আগে পাকা করেন।

লোকটা সরে দাঁড়ালো। বেশ করে বুঝলাম অথৈ এই লোকের সঙ্গে একরারনামায় আছে। এরা দলবদ্ধ হয়ে কাজে নেমেছে। তবে কি আমার আঁচই ঠিক? ওরা কি স্মরণকে একেবারে পথ থেকে সরিয়ে দিতে চায়? ওরা কি স্মরণকে মে*রে ফেলতে চায়? ভাবতেই গায়ে কাটা দেয় যেন।

ওদের সাজানো নাটক শুরু হয়ে গেলো। স্মরণকে ফোন করতেই ওপাশ হতে তার হতাশা মিশ্রিত উত্তেজিত কন্ঠ কানে এলো। আমি নতমস্তকে ঠাঁই বসে রইলাম। কোনো ছটফট ভাব ধারণ না করে শান্ত চোখে তাকিয়ে রইলাম অথৈয়ের দিকে। অথৈ গলাকাটা মুরগির মতো তড়পাচ্ছে। কি নিখুঁত অভিনয় তার। কেউ এসে আমার মুখের বাঁধন খুলে দিলো যেন আমিও অস্থির গলায় স্মরণকে কিছু বলি। তবে আমি একটা শব্দ বলতেও নারাজ। কেবল একবার স্মরণের পানে তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নিলাম। এবার তার প্রতি রাগ হলো। কেন সে আমাকে বিশ্বাস করলো না। বলেছিলাম এসবের পেছনে অথৈ জড়িয়ে আছে আষ্টেপৃষ্টে। স্মরণের ব্যাকুল কন্ঠ আমার কানে এসে বাজলো। সে বলছে

— একটা আঁচড়ও যেন না পরে ওদের গায়ে।
— আঁচড় পরে গেছে অফিসার। তুমি যদি কাল দশটার আগে এখানে না আসো তাহলে গলাটাই পরে যাবে ওদের।
— আমি আসবো।
— হুম হুম। তাড়াতাড়ি। আর একটা কথা অফিসার। এতোদিন ভাবতি আমি তোকে ফাঁকি দিচ্ছি। অথৈয়ের নাম করে অন্য কাউকে মাস্ক পরিয়ে ভিডিও ফোন করছি। কিন্তু দেখ.. তোর আরেকটা বউও আছে। তোর বউকেই জিজ্ঞেস করে নে ওটা অথৈ কিনা।
আমার দিকে ফোন ঘুরিয়ে দিতেই আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম মাত্রাতিরিক্ত রাগে। হয়তো এই রাগ অথৈয়ের প্রতি নয়তো স্মরণের প্রতি।

অথৈ ও লোকটার নাটক শেষ হতেই ওরা বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। যাওয়ার কালে আমাকে অথৈ বলে গেলো
— আমি যে অভিনয় করছি কিডনাপ হওয়ার একথা বলে দিলেই তোর পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দিতাম। বেচে গেছিস। স্মরণ না আসা অব্দি চুপচাপ থাক। তোর স্বামী আসলে কি করবো জানিস? প্রথমে তোদের কিছু ঝটকা খাওয়ানো কথা বলবো। তারপর দুটোকেই আকাশে পাঠিয়ে দেবো। ‘আকাশে বাতাসে চল সাথী উড়ে যাই ডানা মেলে’ গান করতে করতে উড়ে যাবি। সুখের না বিষয়টা?

আমি প্রত্যুত্তর করিনি। খাইরুন এলো আধঘন্টা পর। এক গ্লাস পানি নিয়ে। আমার হাতের বাঁধন, পায়ের বাঁধন, মুখের বাঁধন খুলে দিলো। আমি যেন একটু স্বস্তি পেলাম। খায়রুনের আনা এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে পান করে কুঁকড়ে বসে হাঁটুতে মুখ গুঁজে কেঁদে উঠলাম। কি হবে আগামীতে? স্মরণ কে আসতে বারণ করলাম কেবল অথৈয়ের আসল চেহারা দেখাবো বলে। তবে তার আসাটাও যে বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। আচ্ছা পুলিশ, টিম এগুলো নিয়ে কি আসবে না সে?

খাইরুন আমাকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিলো। আর খবর দিলো শান্তকে গতকাল সে এখান থেকে বের হতে সাহায্য করেছে। অর্থাৎ শান্ত এখন বিপদমুক্ত। আমি খাইরুনের হাতটা ধরে বললাম
— বোন, আমি যদি কাল মা*রা যাই দয়া করে আমার হয়ে শান্তকে বোলো ও যেন আমাকে ক্ষমা করে। ওকে অনেক বড় বিপদে ফেলেছিলাম আমি।
খাইরুন কেবল তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। অতঃপর চলে যাওয়ার মুহূর্তে বলে গেলো
— বনের বল ঠিক রাখুন। চরম বিপদে আপনার হাতে কোনো অস্ত্র না থাকলে সমস্যা নেই কিন্তু মনের বল না থাকলে জিতে যাওয়া সম্ভব নয়।

চিন্তায় চিন্তায় রাত কাটলো। ভোর হলো কখন সে খবর আমার রাখা হলো না। কখন যেন ক্ষুধা, স্মরণ আর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ বেহুঁশের মতো ঘুমিয়েছি তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। শরীরটা দূর্বল লাগছে। শক্তি নেই যেন হাতে পায়ে। চোখ খুলে উঠে দাড়িয়ে একবার দরজার পানে চাইলাম। কেউ আমাকে ডেকেছে কিনা জানি না। গতরাতে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করেছিলাম। সেই বন্ধ দরজার ছিটকিনি খোলার আগে একবার উঁকি দিলাম ছোট বন্ধ জানালার ফাঁক দিয়ে। কেবল ভোর হয়েছে।

বাইরে দু’টো গাড়ি দাড় করানো। একটার সম্মুখে কপালে হাত রেখে অনবরত পায়চারি করছে কে যেন। আরেকটা গাড়ির সামনে জনাকয়েক দাঁড়ানো। কেবল পা দেখা যাচ্ছে। আমি একটা পাটের বস্তার ওপর উঠে জানালা একটু খুলে উঁকি দিতেই কিছুটা থমকে গেলাম। বুকটা ধ্বক করে উঠলো স্মরণকে দেখে। খুব করে ইচ্ছে হলো তাকে ডাকতে। তবে পরক্ষণেই দেখি কিছু অসাধু লোক স্মরণ ও আরো কিছু ভদ্রলোককে কিছু বলছে। বুঝলাম ভদ্রলোক গুলো আর কেউ নয় বরং অফিসার ওনারা। একটুপর অফিসার গুলো গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। কেবল একা রইলো স্মরণ। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপতে লাগলো। একা সে?

— এই মরলি নাকি দরজা খোল।
দরজায় ঠকঠক আওয়াজ সাথে যেন হুকুম। আমি এগিয়ে গেলাম। খুলে দিলাম দরজা। একটা লোক এসে আমাকে অন্য ঘরে নিয়ে গিয়ে চেয়ারের সাথে বেঁধে দিলো। আমি অনুরোধ করলাম তাকে আমার মুখটা খোলা রাখার জন্য। কিন্তু সে শুনলো না। আমি অসহায় হয়ে বসে মুখ, হাত পা বাঁধা অবস্থায় বসে রইলাম। একটুপর এলো গত রাতের সেই লোকটা। তারপর এলো অথৈ। সঙ্গে একটা লোক। লোকটার হাতে ছুড়ি। বেশ বুঝলাম স্মরণ আসতেই ছুড়িটা অথৈয়ের গলায় ধরা হবে। আমার অনুমানের হেরফের হলো না। যখনই স্মরণ ভেতরে প্রবেশ করলল তখনই অথৈয়ের গলায় ছুড়ি ধরা হলো। স্মরণ প্রথমে আমাকে দেখেই ছুটে আমার নিকট আসার জন্য পা বাড়াতেই তাকে বলা হলো

— এটা তো রুলসে নেই অফিসার। আমাদের ডিল হয়েছে তুমি আসবে, আমরা কিছু কথা বলবো। তারপর তুমি আমাদের কথা মানলে দু’টো বউ নিয়ে বাড়ি ফিরবে নয়তো না।
স্মরণ এবার আমার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে যখনই অথৈয়ের পানে চায় তখনই যেন যে স্থির হয়ে যায়।

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ২৪

অপলক তাকিয়ে রইলো অথৈয়ের দিকে। অথৈয়ের চোখভরা মিথ্যা জল।স্মরণকে বসানো হয় একটা টেবিলে। গতরাতের লোকটা তাদের সকল কেইস তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেয় স্মরণ কে। আরো কিছু অবৈধ কাজের বৈধতা চেয়ে একটা স্টাম্প রাখে টেবিলে। অতঃপর তাতে সই করার জন্য বলে।

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ২৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here