সঞ্চারিণী পর্ব ২২+২৩+২৪

সঞ্চারিণী পর্ব ২২+২৩+২৪
আফনান লারা

আলমারিতে আহামরি কিছু পাওয়া না গেলেও একটা ছবি হাতে আসলো যেটা কিনা শাওনের এতদূর আসা সফল করেছে।আর ছবিটা হচ্ছে একটা মেয়ের।তাও কার??এ্যামিলির।এখানে এসে দারুণ একটা প্রমাণ হাতে আসবে তা ভাবনার বাহিরে ছিল সবার।এ্যামিলির সঙ্গে রকির কানেকশান থাকতে পারে এই চিন্তাটা কেউ ভুলেও মাথায় আনেনি।
এ্যামিলির ছবিখানা পেয়ে আর বুঝতে বাদ রইলো না যে রকি এখন মালদ্বীপে অবস্থান করছে।এক টানে দুটো ধাঁধা সলভ্ হয়ে গেলো।

এ্যামিলি আর রকি একসাথে নিখোঁজ।এ্যামিলির বাসস্থান মালদ্বীপ। রকি পালিয়ে গেছে বিদেশে।তার মানে দুজনে এখন মালদ্বীপে।পরীক্ষণের জন্য হলেও মালদ্বীপে খোঁজ নেওয়া যেতে পারে।তাছাড়া মালদ্বীপে একটা মানুষকে খুঁজতে বেশি সময় লাগবেনা।ছোট পরিসর।
রকির বাসা থেকে বেরিয়ে সবাই অফিসে ফিরেছে।আজকে মিটিং বসেছে বিদেশ যাওয়া নিয়ে।এই নিয়ে শাওনকে কিছুই বলতে দিলেন না গিয়াস স্যার।সবাইকে সামনে বসিয়ে নিজেই বকবক করা শুরু করে দিয়েছেন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-‘শোনো সবাই,বিদেশে তোমরা ট্যুরে যাচ্ছো না। যাচ্ছো দুজনকে খুঁজতে।হয়ত সামনে তিন/ চারটে গলি পড়ে গেলো আর তোমাদের আলাদা ভাবে একেক গলিতে যেতে হলো।তাই এক দুজনকে পাঠাচ্ছিনা।তাছাড়া মালদ্বীপে না পাওয়া গেলে তোমাদের ওখান থেকে অন্য দেশে যেতে হবে।তাই আমি শাওন,নিতু,নুহাশ,সামিয়া,সাজিদ এবং মেধাকে পাঠাচ্ছি।প্রয়োজন হলে আরও পাঠাবো।কিন্তু তোমরা খালি হাতে ফিরতে পারবেনা।রকি আর এ্যামিলি রেদোয়ানের কেসটার শেষ সীমানায় পৌঁছে দিতে পারে আমাদের।এমন ও হতে পারে তারাই খুনি’

শাওন উঠে চলে গেলো তার কেবিনে।মেধা দেয়ালের সঙ্গে ঠাস ঠাস করে মাথায় বাড়ি দিচ্ছে।কত বার করে চেয়েছিলো স্যার যেন তাকে যেতে না বলে।কিন্তু ঘুরে ফিরে তার উপরই দায়িত্ব এসে পড়ে।বিদেশে গিয়ে শাওন ওকে একা পেয়ে কাঁচা চিবিয়ে খাবে নির্ঘাত।
গিয়াস স্যার শাওনের কেবিনের দিকে গেছেন ওকে মন খারাপ করে যেতে দেখে।

-‘আসবো?’
শাওন টেবিলের উপর থেকে মাথা তুলে বললো,’আরে স্যার জিজ্ঞেস করা লাগে নাকি?’
-‘তোমার শরীর খারাপ?ওভাবে চলে এলে।কিছু বলার নেই তোমার আমার বক্তব্য শুনে?চা খাবে?’
কথাটা বলে গিয়াস স্যার চা আনতে বললেন একজন কর্মচারীকে ডেকে।এরপর শাওনের সামনের চেয়ারটায় বসে মুচকি হেসে চেয়ে রইলেন ওর দিকে।তারপরও সে কিছু বলছেনা দেখে তিনি বললেন,’মেধাকে যেতে বলেছি বলে আমার উপর অসন্তুষ্ট? ‘

-” ও ঝামেলা ক্রিয়েট করা ছাড়া আর কিছুই পারেনা।ওকে নিয়ে গেলে দেখা গেলো সব কাজ ফেলে ওর সেফটি নিয়ে দৌড়াতে হবে আমাদের’
-‘শোনো,মেধাকে আমি নিজের চোখে লড়তে দেখেছি।চোখ বেঁধে নিয়োগ দিই নাই।আমাকে ভরসা করোনা?’
-‘তা তো করি।কিন্তু প্রথমদিন থেকে দেখছি…’
-‘ব্যস।ভুলে যেওনা সেদিন মেধা একা লড়ে তোমাদের বাঁচিয়েছিলো।আমি আর কিছু শুনতে চাইনা।বুঝলাম মাথা ধরায় সব কিছুতে মেজাজ খিটখিটে হয়ে আসছে তোমার।গরম গরম চা খাও দেখবে ভালো লাগবে”
চা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে স্যার চলে গেছেন।শাওনের মন চাইছে নিজের যাওয়াটাই ক্যানসেল করে দিতে।কিন্তু তা হয়না।তাকে যেতেই হবে।

আজকে রাত বারোটার ফ্লাইটে তারা মালদ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা হবে।সবাইকে বাসায় ফিরে পাসপোর্ট আর নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস ক্যারি করে আনার নির্দেশ দিলেন গিয়াস স্যার।
মেধা একা একা বাসায় ফিরে ব্যাগে জামাকাপড় পুরতে পুরতে বাবাকে ফোন করলো। তারা পটুয়াখালী পৌঁছে গেছেন।কোয়াটারে আছেন আপাতত।
বাবা মাকে মালদ্বীপ যাওয়ার কথা বলায় তারা বললেন টিমের সাথে থাকতে।একা কোথাও না যেতে।এই চাকরিতে দেশ বিদেশ ঘুরতে হয় তাদের জানা আছে।তাই তেমন একটা চমকালেন না তারা।
মেধা আচ্ছা আচ্ছা বলে ফোন রেখে জামাকাপড় সব ব্যাগে নিয়ে ভাবলো ক্লিপটা সঙ্গে নেবে কিনা।যদি নেয় বিপদ হতে পারে।আর যদি রেখে যায় তাও বিপদ।কিন্তু কি করলে বেস্ট হবে?

রাত দশটার সময় সবাই এয়ারপোর্টে এসে হাজির হয়েছে।
মেধা এখনও আসছেনা।অবশ্য শাওন ও আসেনি।সবাই ওদের দুজনেরই অপেক্ষা করছে এখন।

শাওনকে আসতে দেখে সামিয়া আর নিতু ইয়া বড় হা করে তাকিয়ে থাকলো।অফিসের পোশাক পরা তাও চোখে সানগ্লাস পরায় নতুনত্ব এসেছে তার মাঝে। তাছাড়া আলাদা রকমভাবে ওকে ভাল্লাগলো আজকে।
নিতু হেসে বললো,’স্যার রুপের রহস্য কি?’
-“নাইট ক্রিম দিছি। ফ্লাইটে আমার স্কিনে র‌্যাশ দেখা দেয়”
-“ক্রিমটার নাম বলা যাবে স্যার?’
-‘ফর ম্যান’

নিতু জিভে কামড় দিয়ে সরে দাঁড়ালো।শাওন মেধাকে দেখতে না পেয়ে রেগে মেগে কিছু বলতে যাবার আগেই সাজিদের হা করে তাকানো দেখে পেছনে তাকালো সে।
ব্লু জিন্স,ব্লু শার্ট আর চোখে সানগ্লাস দিয়ে মেধা আসছে এদিকে।হাতে ট্রলি ব্যাগ।এতদিন মিলন মেধাকে দুচোখে দেখতে পারতো না আর আজ সেও দিওয়ানা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেধার এমন বদল দেখে।শাওন কপাল কুঁচকে বললো,’আমরা ট্যুরে যাচ্ছিনা।ইনভেস্টিগেশনের জন্য যাচ্ছি মিস মেধা।আপনি কি তা ভুলে গেছেন?’
মেধা ট্রলি ব্যাগটাকে দাঁড় করিয়ে হাতে ঝোলানো কালো অফিসের কোটটা গায়ে দিয়ে বললো,’না ভুলিনি’

বিমানে উঠার পর শাওন কারচুপি করে তার পাশের সিটটায় নুহাশকে এনে বসিয়েছিলো যাতে কোনো ভাবে মেধা না বসে।কিন্তু নুহাশ নিতুর সঙ্গে বসার জন্য শেষ হয়ে যাচ্ছে।নিতু বসেছে মেধার সাথে।মেধা আই মাস্ক লাগিয়ে ঘুমাচ্ছে।নিতু ওকে চিমটি মেরে জাগিয়ে তুললো ।মেধা ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে।নিতু বললো শাওনকে ম্যানেজ করতে যাতে নুহাশকে ওর সাথে বসতে দেয়।
-‘অসম্ভব। নুহাশ এখানে এসে বসা মানে আমি গিয়ে শ্যাওলা স্যারের সাথে বসা।তার সাথে বসলে আমার জার্নির বারোটা বাজবে।আমি এই রিস্ক নিবোনা’

-‘শাওন ধরো আমি আজ মারা যাবো।আমার শেষ ইচ্ছে তুমি পূরণ করার সুযোগ পেলে পূরণ করবে?’
শাওন চিপস খেতে খেতে বললো,’যদি হয় সিট বদলের তবে আমি পারবোনা এই মহৎ কাজটা করতে’
-‘প্লিজ!!’
-‘নো’

নিতু আর নুহাশ বেশ বুঝতে পেরেছে শাওন,মেধা তাদের সিট বদল করতে একমত নাহ।কি করে প্ল্যান সাকসেস করা যায় তাই ভাবছে নুহাশ।শেষে একটা বুদ্ধি মাথায় আসতেই নিতুকে অপেক্ষা করে ইশারা করলো।নিতু মাথা তুলে তাকিয়ে হাত দিয়ে বললো কি হয়েছে।নুহাশ ওয়াশরুমের দিকে ইশারা করলো।নিতু বুঝতে পেরে উঠে সেদিকে গেছে।নুহাশ শাওনকে ডাকলো ওর সাথে ওয়াশরুমে নেওয়ার জন্য।শাওন চিপস খেতে খেতে জায়গা ছেড়ে উঠলো।দুজনে একটুদূর আসতেই নুহাশ নিতুর হাত ধরে ছুটে শাওনের সিটে বসিয়ে তার পাশে বসে গেলো।শাওন ও দৌড় লাগিয়েছিলো কিন্তু ততক্ষনে সিট বুকড্।শাওন কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,’এটা চিটিং’

-‘তুমি তো প্রেম করো না।এসব বোঝাতে যাবার সময় নাই আমার।এখন গিয়ে খালি সিটে বসো’
শাওন বাধ্য হয়ে মেধার পাশে বসলো চুপচাপ।
মেধা মাস্ক খোলেনি বলে জানলোনা কে বসেছে ওর পাশে।হাতটা বাড়িয়ে শাওনের বাম হাতকে শক্ত করে ধরে দাঁত কেলিয়ে বললো,’নিতু আপু তোমার পারফিউমটা জোস।মন চায় কামড়ে খেয়ে ফেলি’
শাওন চোখ কপালে তুলে মেধার হাতটা ধরলো সরাবে বলে, সঙ্গে সঙ্গে মেধা নিজেই সরে গেলো।চোখ থেকে মাস্ক সরিয়ে বললো,”নিতু আপু কউ।আপনি কখন এলেন?’

-‘এতক্ষণ টের পাওনি।আর হুট করে টের পেয়ে গেলে?’
-“লোহার মত হাত আর কার হতে পারে।সেটা বুঝতে পেরেই সরে বসলাম।যান আপনার সিটে।’
-“ওরা দখল করেছে’
মেধা আরেকটু সরে বসে মাস্কটা ডিস্কে রেখে দিলো।সজাগ থাকতে হবে।শাওন কি রেখে কি করে বসে বোঝা দায়।এমন ও হতে পারে সাইড ব্যাগটা সার্চ করা শুরু করে দিবে।তাই সাইড ব্যাগটাকে বুকের সাথে চেপে ধরে মেধা রোবটের মতন বসে থাকলো।

শাওন তার হাতের চিপসটা খেয়েই যাচ্ছে মেধাকে দেখিয়ে দেখিয়ে।
মেধা হাত বাড়িয়ে একটা নিতে যেতেই শাওন প্যাকেটটা সরিয়ে বললো,’ আমাকে তোমার এত বিশ্বাস হয়?যদি এই চিপসে কিছু মিশিয়ে দিয়ে থাকি?’

মেধা ঢোক গিলে জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে ঘুরে বসলো।শাওন মুচকি হেসে নুহাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওরা একজন আরেকজনকে চিপস খাওয়াচ্ছে।তা দেখে রশ্নির কথা মাথায় এসেছে।তাই সে এদিক ওদিক তাকিয়ে ওকে খুঁজতে লাগলো।মেধা ভেংচি মেরে বললো,’আপনার ভূতুড়ে প্রেমিকা ফ্লাইট মিস করেছে হয়ত।পরের ফ্লাইটে চলে আসবে চিন্তা করিয়েন না।আর নয়ত উড়ে উড়ে একাই আসতে পারবে।এত ভাবতে হবেনা আপনাকে’
-‘জানিনা রশ্নির কি হয়েছে।আজকাল ইচ্ছে করেই আমার সামনা সামনি সে থাকছেনা।তার আর আমার মাঝে দূরত্বটা যেন আবশ্যক হয়ে গেছে।কিন্তু কেন?আমি কি কোনো ভুল করে ফেলেছি?রশ্নি তো অল্পতেই ভুল বোঝার মেয়ে না।সে আমাকে যথেষ্ট বোঝে,তাহলে তার এভাবে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়াটাকে আমি কি ধরে নেবো?ঠিক কি কারণে সে আমার উপর রেগে আছে?

রশ্নি প্লিজ একবার আমার সামনে আসো।আমি তোমার রাগ ভাঙ্গাতে যে কোনো পরিস্থিতিতে প্রস্তুত।আমাকে সুযোগটা দাও অন্তত। তোমাকে যে পরিমাণ ভালোবাসি তা এই সময়টাতে ঠিক একই আছে।নড়চড় হয়নি।’
———
মালদ্বীপ যেতে যে সময়টা লাগার কথা তার ঠিক অর্ধেক সময়ের আগেই প্লেন ল্যান্ড করবে।অনেকে ধরে নিয়েছে মালদ্বীপ এসে গেছে হয়ত।যারা এর আগেও মালদ্বীপে সফর করেছিল তাদের মধ্যে হইহই রইরই লেগে গেলো এত জলদি ল্যান্ডের কি কারণ তা নিয়ে।
বিমানবালা এসে জানালেন প্লেনের কারিগরি ত্রুটির জন্যে কেরালাতে ল্যান্ড হচ্ছে আপাতত।
মেধা তার ব্যাগটাকে বুকে চেপে ধরে গভীর নিদ্রায় তলিয়ে ছিল।শাওন ওকে দু তিনবার ডেকেও যখন দেখলো মেধার নড়চড় নেই তখন সে এক টানে ওর থেকে ব্যাগটা কেড়ে নিলো।সঙ্গে সঙ্গে মেধা ঠিক হয়ে বসে বললো,’চোর! চোর!’

-‘বলো “পুলিশ! পুলিশ ‘
মেধা তার ব্যাগটা পুনরায় নিজের হাতে নিয়ে এসে কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো ওকে ভুল সময়ে জাগিয়ে তোলার কারণটা কি। শাওন বললো,’প্লেন ল্যান্ড করবে এখন।সজাগ থাকতে হবে তোমায়’
-‘মালদ্বীপ এসে গেছে?’
-“জ্বী না।কেরালায় আমরা’
-‘কিন্তু কেন?’
-‘কারিগরি ত্রুটি। বকবক বন্ধ করে এননাউন্স শুনো।”

কেরালার cochin Naval Airport এসে নেমেছে বিমান।সবাই এখন ওখানেই বসে আছে।এই বিমানটা মালদ্বীপ যাবেনা।কেরালা থেকে মালদ্বীপ যাবার যে প্লেন আছে সেটা আসতে গোটা একদিন লেগে যাবে।তার মানে সব অফিসারদের এখন কেরালায় একদিনের জন্য থাকতে হচ্ছে।শাওন আর সাজিদ মিলে ট্যাক্সি ধরালো দুইটা।মেধা,সামিয়া আর সাজিদ একটা ট্যাক্সিতে।অন্য ট্যাক্সিতে শাওন,নুহাশ আর নিতু।আশেপাশের একটা নামকরা হোটেলে উঠলো সবাই।নাম হলো “FLORA AIRPORT HOTEL AND CONVENTION CENTRE COCHIN’

সম্পূর্ণ খরচ গিয়াস স্যারের বলে নুহাশ আর নিতু আকাশে ভাসছে।
বিশাল হোটেলটা দেখে ঢোকার আগেই ফটোশুট শুরু করে দিয়েছে নিতু আর সামিয়া।মেধা ঘুরে ঘুরে দেখে শুধু
বাকিরা গেছে কাগজপত্র সই করতে।মেধা,সামিয়া আর নিতু একটা রুমে থাকবে।শাওন,নুহাশ আর সাজিদ অন্য রুমে।যার যার কাগজপত্র ফিল আপ শেষে এবার তারা রুমে ফিরে আসলো।সম্পূর্ণ ইংলিশে কথা বলতে হয়েছে তাদের।কেরালার ভাষা তাদের কারোরই জানা নেই।

রুমে এসে মেধা গায়ের শার্টটা পাল্টে একটা টি শার্ট আর জ্যাকেট পরে নিলো।নিতু লম্বা হয়ে শুয়ে আছে।তার পাশেই সামিয়া মরার মতন ঘুম দিয়েছে।অথচ মেধার ঘুম আসছেনা।এসময়ে গরম কফি খেলে বেশ লাগতো তাই ভেবে রুম থেকে বের হলো সে।লিফটে না গিয়ে সিঁড়ি বেয়েই নিচে নামলো।কফির অর্ডার দিয়ে আলাদা সিটে এসে বসলো এবার।বাম দিকে মাথা ঘুরাতেই শাওনকে দেখলো সে।শাওন ও এসেছে কফি খেতে।মেধা মুখে হাত দিয়ে নিজেকে ঢেকে ফেলার আগেই শাওন চেয়ার টেনে বসে বললো,’চিনে ফেলেছি’

-‘আপনি এখানে কি করেন?’
-‘তুমি কি করো?’
ওয়েটার দু কাপ কফি তাদের সামনে রেখে চলে গেছে তন্মধ্যে।মেধা এক কাপ নিজের দিকে টেনে শাওনের চোখে চোখ রাখলো।শাওন টেবিলে হাত রেখে বললো,’প্রথমে বোকা বোকা নাটক করেছিলে কেন?’
-“আমি তো বোকাই’
-“বুঝলাম।সোজা উত্তর জীবনেও দেবে না।বোকা অথবা চালাক।এত কিছু সেজে তোমার ঠিক কি লাভ হচ্ছে?রেদোয়ানের কেসটা সলভ হতে দাও।তোমার কাহিনী আমি এক পর্বে শেষ করে দেবো।’
মেধা কফিতে চুমুক দিয়ে তাচ্ছিল্য করে কিঞ্চিত হেসে ঠোঁট বাঁকালো।শাওন তার কফিটা খেতে খেতে বললো,’তোমার কি বিশ্বাস হচ্ছেনা আমি ঠিক কতদূূর লিমিট ক্রস করতে পারি?’

-“একদমইনা’
শাওন চুপচাপ গরম গরম কফিটা শেষ করে ফেললো।এত জলদি শেষ করলো যে এখনও খালি কাপ থেকে ধোঁয়া উঠছে।
ভালো মানুষের মতন উঠে দাঁড়িয়ে শাওন মেধার হাত থেকে ব্যাগটা হ্যাচকা টান মেরে ছুটে চলে গেলো।মেধার মনে হলো পায়ের তলার মাটি সরে গেছে।নিজের কফিটা রেখে সেও ছুটলো।পথে ওয়েটার থামিয়ে দিলো ওকে কফির বিল পে করার জন্য।শাওন আবার এগিয়ে এসে কার্ড বের করে বিলটা পে করে দিলো কারণ মেধা ভিসা কার্ড আনেনি।এরপর আবার ছুটলো সে।মেধা হাঁপিয়ে গেছে ওর পিছু নিতে নিতে।এত বড় অফিসার কিনা শেষ রাতে এসে বাচ্চামো শুরু করেছে।করিডোরের শেষ প্রান্তে শাওন মেধার ব্যাগটাকে ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে ওকে দেখাচ্ছে।আর প্রথম প্রান্তে মেধা নিচে বসে হাঁপাচ্ছে ঠিক সিঁড়ির পাশেই।

হঠাৎ একটা সুন্দর মেয়েকে দেখে মেধা ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়ালো।হাঁপাতে হাঁপাতে নিচে বসে গিয়েছিলো সে।মেয়েটার গায়ে কফি কালারের থ্রি পিস।গলায় ওড়না ঝুলানো আর খোলা চুল।দেখে বাংলাদেশী মেয়ে মনে হলো।মেয়েটা এক দৃষ্টিতে মেধাকে দেখছে।শাওন চেঁচিয়ে বললো,’কি হলো মেধা?আর শক্তি নেই?ব্যাগ লাগবেনা তোমার?আমি কিন্তু ব্যাগের ভেতরে সার্চ করবো এখন।নিশ্চয় জরুরি কিছু হবে এটাতে তাই নয় কি?’
মেধা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে বললো,’তুমি বাংলাদেশের?’
মেয়েটা কিছু বললোনা।সিঁড়ি পেরিয়ে সে করিডোরে পা রাখতেই শাওনের কথা বন্ধ হয়ে গেলো।হাতের ব্যাগটা ছেড়ে দিয়ে বললো,’এখন সময় হলো আসার?’

মেধা মেয়েটার পাশে দাঁড়িয়ে শাওনের দিকে তাকিয়ে রইলো।শাওন এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো মেয়েটাকে।
মেধার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব।শাওন আস্তে করে বললো,’মিসড্ ইউ সো মাচ রশ্নি’
-‘তার মানে এটা রশ্নি?আমি রশ্নিকে দেখতে পেলাম?এতদিন তো দেখতে পাইনি।তাহলে আজ হঠাৎ কেন দেখলাম?’
শাওন রশ্নির কপালে চুমু দিতে যাওয়ার আগেই সে অদৃশ্য হয়ে গেলো।মেধাও দেখছেনা,শাওন ও না।
শাওন মাথায় হাত দিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ালো চুপচাপ।মেধা কাছে এসে বললো,’জানেন আমি আজ রশ্নিকে দেখেছি।এখন যে গায়েব হয়ে গেলো সেটাও দেখলাম’

শাওন মাথা ঘুরিয়ে বললো,’মিথ্যা বলছো কেন?’
-‘উনার গায়ে কফি কালারের জামা ছিল তাইনা?’
শাওন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,’হ্যাঁ।ঠিক বলেছো’
-‘আপনার উপর রাগ করে চলে গেছে নাকি?”
-“নাহ।ওরে টাচ করতে চেয়েছিলাম বলেই চলে গেছে।ওকে টাচ করতে গেলেই এমন পালিয়ে যায়’
-“দেখি আমার হাতটা ধরেন তো’
-“তুমিও গায়েব হতে চাও?”
-“হতে পারে ভূত আপনার মধ্যে আছে।টেস্ট করা দরকার।
শাওন চলে যেতে যেতে বললো,’তোমার ব্যাগটা ছেড়ে দিলাম।আজ আর মুড নেই কোনো কিছুর’
-‘আমি জানি ইচ্ছে করে গায়েব করেছেন।আরেহ উনি তো জানেনই যে ঐ ভূত আপুকে ধরলে তিনি গায়েব হয়ে যান তাহলে আবার চুমু দিতে গেলেন কোন দুঃখে।এই স্যারের বউয়ের কপালে দুঃখ আছে।রশ্নিকে চুমু দিতে গিয়ে বারবার রিজেক্ট হওয়াতে দেখা গেলো তার মাঝে অচুমু রোগ দেখা দেবে।’

পরেরদিন সকালটা বেশ অন্যরকম ছিল।আর তা হলো কেরালা বাসীর একটা দারুণ অনুষ্ঠান সকাল থেকেই শুরু হয়েছে।সাদা পোশাকে নারী পুরুষের সমারোহ ঘটেছে হোটেলটার নিচ তলায়।নিতু মেধাকে জাগিয়ে তুললো খুব তাড়াতাড়ি।সেখানে যাওয়ার জন্য এক্সসাইটেড হয়ে আছে তারা।মেধা শুধু ফ্রেশ হয়ে আসলো।গায়ের জামা চেঞ্জ করলোনা।

নিচে কেরালা মেয়েদের দারুণ পোশাকে দেখে তাদের তিনজনের মন চাইলো সেম সাজটা দেওয়ার।যেমন ভাবা তেমন কাজ।ড্রেসিং রুমে এসে মনের মতন শাড়ী আর ওরনামেন্টস পেয়ে গেলে তারা।তবে শর্ত হলো অনুষ্ঠান শেষ হলে এগুলো ব্যাক দিয়ে দিতে হবে।আজকে অনুষ্ঠানে যারা গান করবে তাদেরই বারতি পোশাক ছিল এগুলো।
সাদা শাড়ি,খোঁপায় সাদা ফুলের গাজরা আর কপালের মাঝে একটা সাদা চন্দনের টিপ।নিতু আর সামিয়া হাসতে হাসতে শেষ।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তারা নিজেদেরই চিনতে পারছেনা।মেধা আনকম্পোর্টেবল ফিল করছে।আগে কখনও এই সাজ সে দেয়নি।বড় জোর সেলোয়ার কামিজ পরা হতো।শাড়ি জীবনে দুবার পরেছিলো বাবার কলিগের ছেলের বিয়েতে।আর আজ তৃতীয় বার।মাথার ফুলগুলোকে নাড়তে নাড়তে রুম থেকে বের হলো সে।বাকিদের মতন সাজার শখ মিটে গেছে।সবার মাঝে ঢুকে পড়ে যখন গান শুনলো তখন মনে বড়ই আনন্দ জাগলো।শাড়ী পপরাটা ঠিক এই মূহুর্তে সার্থক মনে হলো।

শাওন,নুহাশ আর সাজিদ এই ভীড়ের মাঝে ওদের তিনজনকে খুঁজে পেয়ে আশ্চর্য হয়ে গেলো তারা।মুখটা গোল করে চেয়ার টেনে বসে হা বন্ধ করলো একসাথে।প্রথম দেখায় ভাবলো সেম দেখতে হয়ত কেরালাতে অন্য নামে নিতু,মেধা আর সামিয়ার মতন মেয়ে আছে।কিন্তু না এরা তো আমাদের মতনই অফিসার।
নিতু আর সামিয়া ওদের পাশে বসলো।এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যাথা হয়ে গেছে।মেধা এত ভীড়ের ভেতরে গিয়ে তার কানের দুল খুঁজছে।ডায়মন্ডের ছিল।কখন যে খুলে পড়ে গেলো।জন্মদিনে বাবা গিফট করেছিল এটা।এখন কি করে পাবো’

খুঁজতে গিয়ে হাতে চাপা খেলো সে।হাত ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে উঠে দাঁড়াতেই ব্যালেন্স করতে না পেরে পড়ে যাওয়া ধরতেই শাওন ধরে ফেললো।কোনো কথা না বলে ওকে ভীড় থেকে নিয়ে এসে বললো,’তুমি ওখানে মরতে গেছো?আর একটুর জন্য তো পদদলিত হয়েই মরতা।তার উপর নিচে বসে কি করছিলে?’
-“আমার কানের দুল হারিয়ে গেছে”
নিতু দুল একটা এগিয়ে ধরে বললো,’আমি পেলাম।এটা তোমার?’
-“আরে হ্যাঁ।থ্যাংক ইউ আপু”
শাওন গাল ফুলিয়ে বসলো আবার।তারপর নুহাশের দিকে ফিরে বললো,”স্যার কে বলেছিলাম এরে আমাদের সঙ্গে না দিতে।দেখলে তো এখন একটা বিপদ ডেকে আনতো’

নুহাশ চুপচাপ নিতুর হাতটা ধরে ওকে নিয়ে হোটেলের বাহিরে চলে গেছে।এখানে থাকলে শাওন মেধার নামে নালিশ শুনিয়ে শুনিয়ে কান পাকিয়ে ফেলবে তার চেয়ে বরং নিজের প্রেমিকাকে নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরে আসা উচিত।
সাজিদ মেধাকে দেখে চোখ নামাতে পারছেনা।এদিকে সামিয়া শাওনের কাছাকাছি যেতেও লজ্জা পাচ্ছে।কাজে জয়েন হওয়ার পর থেকেই শাওনকে পছন্দ করে সে।বলতে পারেনা।শাওনকে যতটুকু পছন্দ করে তার চেয়ে বেশি ভয় পায়।মেধাকে যে হারে ধমক দেয় সে তাতে করে আর কখনও পছন্দের কথা মুখ ফুটে বলা যাবেনা।

মেধা কানের দুলটা লাগাচ্ছিল অন্যমনস্ক হয়ে।যে জন্মদিনে বাবা এটা গিফট করেছিল সেই দিনটার কথা ভাবছিল।শাওন নালিশটা অনবরত করছিল ঠিকই কিন্তু শুধুমাত্র সাজিদের কাছে।নালিশ শেষে যখন দেখলো তার নালিশে কারোর কিছুই যায় আসছেনা।সবাই সবাইকে নিয়ে ব্যস্ত ঠিক সেসময়ে শাওন নালিশের টপিক বাদ দিয়ে এক দৃষ্টিতে মেধার দিকে তাকিয়ে রইলো।এই বেশে ওকে প্রথমবার দেখা।এর আগে সবসময় অফিসের পোশাকে দেখা হতো।শাড়ীতে মেধাকে চেনাই যাচ্ছেনা।প্রথম দেখায় শাওন ভাবতেও পারেনি এটা মেধা হতে পারে।

মেধা বিরক্ত হয়ে গেছে।কানের দুলটা কিছুতেই লাগাতে পারছেনা।সামিয়াকে ডাকলো কিন্তু সে মেধার ডাকে সাড়া না দিয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে ভীড়ের মাঝে ঢুকে গেছে।রইলো শাওন আর সাজিদ।দুটোই ছেলে।লজ্জার কারণে আর বলতে পারলোনা সে।রাগ করে দুটো কানের দুলই ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলো।
শাওন মুখ ঘুরিয়ে বসেছে।ফিল্মের নায়কের মতন নায়িকার কানে দুল লাগিয়ে দেবার মন মানসিকতা তার নেই ঠিক এই মূহুর্তে।আর মেধার সাথে ওরকম সুসম্পর্ক ও নেই যে এই কাজটা সে করবে।

মেধা মুখটা ভার করে বসেছিলো।একজন ওয়েটার এসে ওদের টেবিলের উপর কেরালার ফেমাস একটি ডিশ সার্ভ করে চলে গেছে।ডিশটার নাম সাধ্যা,উৎসব ওনামে পরিবেশন করা হয় এটি।মজার বিষয় হলো সেদ্ধ ভাত আর কলা পাতায় এটি পরিবেশন করা হয়েছে।বিষয়টা ট্রেডিশনাল লাগলো খুব।মেধা এক চামচ মুখে দিয়ে টেস্ট বুঝে নিজের খাবারটা কাছে টেনে নিলো।শাওন ওর আগ্রহ দেখে নিজেও টেস্ট করলো।দারুণ লাগলো তার কাছেও।এমন করে এক একে সবাই খাবার খেতে বসে গেছে।

অসাধারণ একটি খাবার।তারা আজ কেরালায় একটু ঘোরাঘুরি করতে চেয়েছিলো কিন্তু ভাগ্যক্রমে মালদ্বীপের একটা প্লেন এসে নেমেছে বিমানবন্দরে।যার কারণে তারা চাইলে এখনই রওনা হতে পারে।শাওন বললো আর দেরি করা ঠিক হবেনা।তাই সবাই জামাকাপড় পাল্টে অফিসের পোশাকে বেরিয়ে পড়লো বিমানবন্দরের দিকে।
শাওন এবার সাজিদের সঙ্গে বসেছে।সামিয়া মেধার সাথে।কারোর মুখে কোনো কথা নেই।সারাটা দিন গেলো জার্নিতে।রাতে তারা মালদ্বীপ এসে পৌঁছেছে।শাওন বললো রেস্ট করা যাবেনা।খাওয়া দাওয়া সেরেই টিম আকারে নেমে যেতে হবে ওদের দুজনকে খুঁজতে।এ্যামিলির ছবিটা তারা আগে দেখেনি।রকির বাসায় যে ফটোটা পেয়েছিল তাতে এ্যামিলির হাতের ট্যাটুতে এ্যামিলি নামটা লেখা দেখেই আন্দাজ করতে পারলো এটাই হয়ত এ্যামিলি।যাই হোক হাতে হাতে দু খানা ফটো রেখেছে তারা।রকির আর এ্যামিলির আলাদা আলাদা করে।

মালদ্বীপের লোকাল রেস্টুরেন্টে ডিনারটা সেরে তারা টিম করে নিলো।তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে প্রতিটা টিমে একজন পুরুষ থাকবে।তাই নুহাশ নিতু আলাদা গেলো।শাওন সামিয়াকে বেছে নিয়েছে।বাকি রইলো মেধা আর সাজিদ।
সবাই যার যার মতন বেরিয়ে পড়েছে।নিতু আর নুহাশ গেছে Dharavandhoতে।
শাওন আর সামিয়া গেলো Gan এর দিকে।
মেধা সাজিদের সঙ্গে Fuvahmulah দিকে গেছে।
আলাদা আলাদা দূরত্বের জায়গা বেছে নিলো তারা।

শাওন পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাঁটছে ধীরে ধীরে।মাঝে মাঝে চোখ বুলিয়ে আশপাশটা চেয়ে নিচ্ছে।ল্যাম্প পোস্ট জায়গায় জায়গায়।যার কারণে তাদের হাঁটাচলায় সমস্যা হলোনা।
সামিয়া চুলে হাত দিয়ে বারবার শাওনের দিকে খেয়াল করছিল।শেষে ঢোক গিলে বুকে সাহস এনে বললো,’স্যার একটা কথা বলবো?’
-“হ্যাঁ বলো’
-“………’
-‘হোয়াট?’
-‘ইয়ে মানে স্যার আই থিংক আই লাইক ইউ’
শাওন ব্রু কুঁচকে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলো।সামিয়া মুখটা ফ্যাকাসে করে সেও ছুটে শাওনের কাছে এসে বললো,’সরি স্যার।’
শাওন কিছুই বললোনা।চুপ করে থাকলো।

নুহাশ আর নিতু হাত ধরে হাঁটছে সমতল রাস্তাটাতে।তাদের প্রেম যেন নতুন করে শুরু হয়েছে।এই প্রেম কখনও পুরোনো হবেনা।প্রতিদিন নতুন ভাবে জন্ম নেবে।ভালোলাগা নতুন করে ভালো লাগবে।
ওদিকে মেধা দ্রুত গতিতে হেঁটে চলেছে আর সাজিদ ওকে দেখে হাঁটতে গিয়ে এই নিয়ে দুবার হোঁচট খেলো।মেধা পেছনে তাকিয়ে বললো,’কি হয়েছে?অন্ধকারে দেখতে পান না?যথেষ্ট আলো এখানে।’
-“না মানে।তুমি একটু আস্তে হাঁটলেও তো পারো।আমার পায়ে ব্যাথা ধরেছে’
-“এত জলদি??’
কথাটা বলে মেধা হাসতে হাসতে একটা ধাক্কা খেলো সামনের মানুষটার সাথে।একটা মেয়ে।সরি বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো সে।
মেধা মেয়েটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কি ভেবে তাকে গিয়ে আটকালো সামনে থেকে।তার মুখ থেকে মাস্কটা সরিয়ে দেখলো এটা এ্যামিলি না।তাই মেয়েটাকে যেতে দিলো। সাজিদ কাছে এসে বললো,’এ্যামিলির মতন মনে হলো।আমি তো ভাবলাম এত জলদি পেয়ে গেলাম বুঝি’

সবাই ঘুরেফিরে এক জায়গায় এসে থামলো।পথে সামিয়া পানিতে পড়ে গিয়েছিল বিচের পাশ দিয়ে আসার সময়। ওর কোটটা সম্পূর্ন ভিজে গেছে।ভোর পর্যন্ত ওরা খুঁজছিল রকি আর এ্যামিলিকে।সামিয়ার কোটের ভেতরে ছিল হাতা কাটা গেঞ্জি যার কারণে চেয়েও সে কোটটা খুলে হাতে নিতে পারছেনা।এদিকে ভেজা কোটটা পরে থাকাও সম্ভব না।বিষয়টা বুঝতে পেরে মেধা নিজের গায়ের কোটটা খুলে ওকে দিয়ে দিলো।
সামিয়া মুচকি হেসে ধন্যবাদ জানালো।তার আর কোনো অভিযোগ রইলো না মেধার প্রতি।

শাওন,নুহাশ আর সাজিদ কফিশপ খুঁজছে।এই সকাল সকাল গরম চা অথবা কফি খেলে বাকি কাজটা করতে সহজ হতো।সারা রাত ধরে তারা রাস্তাঘাটে,বিচে ওদের দুজনকে খুঁজেছে না ঘুমিয়ে।তারা মনে করেছে হয়ত রাতের বেলা পালানোর পরিকল্পনা করতে পারে ওরা দুজন।তাই রাতটাকে তারা বলতে গেলে পাহারা দিয়েছিল।
অনেক খুঁজে একটা কফিশপ পেলো যেটাতে কিনা কফি বানানো শুরু হলো সবেমাত্র।সবাই চেয়ার টেনে এক এক করে গোল হয়ে বসলো।কফি খেতে খেতে নেক্সটে কোথায় যাবে তা নিয়ে আলোচনা করে ঠিক হলো এবার তারা ছবি নিয়ে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাবে।অফিসার বলে মানুষ তাদের তথ্য দিতে বাধ্য।

এমন ও হতে পারে কেউ না কেউ ওদের দেখেছে।কফিটা শেষ করে আবারও টিম আকারে বের হয়ে গেলো তারা।
নিতু বিচের দিকে এসে বালু দিয়ে নুহাশের সঙ্গে দুষ্টুমি করছে।আর মেধা, সাজিদ thainadooএর দিকে যাচ্ছে।একটু দূরেই।তবে আবার ফিরে আসা যাবে সঠিক সময়ে।
শাওন আগে আগে হাঁটছিল আর সামিয়া পিছু পিছু।সকাল সকাল এখানের মানুষেরা মর্নিং ওয়াকে বের হওয়ায় ছবি দিয়ে জিজ্ঞেস করা তাদের জন্য সহজ হয়ে গেলো।কেউই ওদের দেখেনি বলছে।শাওন ছবিগুলো ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে রাস্তার পাশের একটা বাড়ির দরজায় নক করলো।একজন বয়স্ক মহিলা এসে দরজা খুললেন।ব্রেড খেতে খেতে কপাল কুঁচকালেন তিনি।শাওন ইংরেজীতে প্রশ্ন করলো এ্যামিলিকে দেখেছে কিনা
মহিলা ছবিটা ভালো করে দেখে বললেন ‘No’

শাওন থ্যাংক ইউ বলে সামনের দিকে যেতে যেেত বললো,’সামিয়া আই থিংক তোমায় বিপরীত পাশের গলিটাতে যাওয়া উচিত।আমি এদিকের সব বাসা চেক করছি তুমি ঐদিকটা দেখো।তাহলে ইজি হবে’
সামিয়ার কোনো উত্তর না পেয়ে শাওন পেছনে তাকালো।সম্পূর্ণ রাস্তা ফাঁকা।সামিয়া গেলো কোথায়।
দু তিনবার ডাকার পরেও ওর কোনো সাড়া মিললো না।শাওন পিছিয়ে যেতে যেতে অনেকটা পথ এসেও সামিয়াকে কোথাও পেলোনা।সবার হাতে ওয়াকিটকি ছিল।শাওন ওয়াকিটকিতে সবাইকে এটা জানিয়ে দিলো যে সামিয়া মিসিং।সবাই যেন Dharavandhoতে এসে থামে।
ওয়াকিটকি রেখে শাওন ছোটা শুরু করেছে।সব জায়গায় চেক করেও সামিয়াকে সে পেলোনা।পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে মেয়েটা কোথায় গেলো।ওর কাছে তো গান ও ছিল।

সবাই শাওনের কথা মতন ফিরে এসেছে।আরেক দফা খোঁজা হলো কিন্তু সামিয়াকে পাওয়া গেলোনা।তার মানে ওকে অপহরণ করা হয়েছে।এবং এটাও ক্লিয়ার হলো রকি আর এ্যামিলি মালদ্বীপেই আছে।ওরা জেনে গেছে আমরা সবাই ওদের ধরতে এসেছি।কিন্তু সামিয়াকে কি কারণে নিয়ে গেলো?’
নিতু বললো,’এখন কি হবে স্যার?’
-“আমরা তো সাধারণ জনগণ না যে পুলিশ স্টেশনে গিয়ে অপহরণ বলে একটা জিডি করে আসবো।আমরাই পুলিশ।সুতরাং আমাদেরই খোঁজার কাজটা করতে হবে।এক কাজ করো।এসব জায়গা তো আমাদের দেখা হয়ে গেছে।
এবার আমরা বাকি যে জায়গা বাকি আছে সেটাও খুঁজে দেখবো।সবাই টিম আকারে ভাগ হয়ে যাও।নুহাশ তুমি মেধা আর নিতুকে নিয়ে উল্টো দিকে যাবে।আমি সাজিদকে নিয়ে এদিকটায় যাচ্ছি। ‘
-‘ওকে’

-‘ও কে?কাকে ধরে নিয়ে এসেছো তোমরা?
-‘মেধা।’
-“ইউ স্কাউন্ড্রেল!ও মেধা নয়।এটা সামিয়া নয়ত নিতু।অন্য অফিসার।এই কারণে আমি চেয়েছিলাম এখানকার ছেলেগুলোকে কাজে রাখতে।কিন্তু না।তোর বুদ্ধিতে আমি এই বলদগুলোকে কাজে পাঠালাম।আর দেখলি তো?একটা দিন আমার নষ্ট করলো।আমি চেয়েছিলাম আমার প্ল্যানের কথা কেউ না জানুক।
এখন হলো তো!!এতক্ষণে ঐ অফিসার সবগুলো হন্তদন্ত হয়ে এই মেয়েটাকে খুঁজতে লেগে পড়েছে।তারা সাবধান ও হয়ে গেছে নিশ্চয়।’
-‘কিন্তু স্যার!মেয়েটার কোটের মধ্যে মেধা লেখা ছিল।আমরা ভুল করিনি।আপনি মেয়েটার মুখোশ সরিয়ে দেখতে পারেন।’

সঞ্চারিণী পর্ব ১৯+২০+২১

-‘মেধাকে আমি চিনবোনা??এটা যদি মেধা হতো এতক্ষণ ওরে বেঁধে রাখা যেতো?’
-‘কে তোমরা??আমাকে এখানে নিয়ে এসেছো কেন?আমার মুখ থেকে মুখোশটা সরাও বলছি আদারওয়াইজ তোমাদের সবার কপালে শনি আছে।তোমরা জানোনা আমি কে!আমি সামিয়া!!নিতু নয়য়!আমার সঙ্গে তোমরা পারবেনা ‘
–‘এই মেয়েটাকে যে জায়গা থেকে নিয়ে এসেছো ঐ জায়গায় ফেলে এসো।

মেধা নামের মেয়েটাকে চাই আমার।সামিয়াকে নয়।এবার গাড়ীতে উঠানোর আগে তার মুখের মাস্ক সরিয়ে চেক করে নিবা মেধা নাকি অন্য কেউ।গায়ের পোশাকের নাম দেখে কিডন্যাপ করতে বলিনি তোমাদের’
আদেশ পেয়ে সামিয়াকে নিয়ে লোকগুলো ওকে আবারও গাড়ীতে উঠালো।
মেধা সামিয়াকে খুঁজতে খুঁজতে একটা গলিতে ঢুকে পড়েছে।নুহাশ আর নিতু সামিয়াকে নিয়ে কথা বলতে বলতে ওরাও মেধার পিছু আসছিলো।গলিতে ঢুকে সামনে মেধাকে দেখতে না পেলেও ওরা দেখলো সামিয়াকে।হাত পা বাঁধা অবস্থায়।
ছুটে এসে ওর মুখ থেকে মুখোশ সরিয়ে হাতের বাঁধন খুলতে খুলতে নুহাশ জিজ্ঞেস করলো ও ঠিক আছে কিনা।

-‘আমি ঠিক আছি।মেধা কোথায়?’
-‘আরে ওসব পরে।আগে বলো তোমাকে কারা কিডন্যাপ করেছিল?আর কি জন্যে?’
-‘মেধাকে দরকার আমার।ওরা আমাকে নয় বরং মেধাকে চায়।মেধাকে ডাকো।সে কোথায়?’
-‘মেধা তো এখানেই ছিল।কোথায় গেলো?

সঞ্চারিণী পর্ব ২৫+২৬+২৭