সঞ্চারিণী পর্ব ১৯+২০+২১

সঞ্চারিণী পর্ব ১৯+২০+২১
আফনান লারা

-‘আমি আগে থেকেই বলে রাখি,আজ ক্লাবে আমি যাচ্ছিনা।ক্লাবে যাওয়া মানে রাত ১২টার পর ফেরা।আর আমি যদি ১২টার পর ফিরি, বাবা মা আমাকে সাথে করে কাল পটুয়াখালী নিয়ে যাবে।
তাছাড়া ওরকম পরিবেশে আমার যাওয়ার শখ বিন্দুমাত্র ও নেই’
শাওন মেধার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হোসে বললো,’কে রে এটা?কে চয়েজ করে এনেছে এরে??উনি কি আসলেই অফিসার নাকি একজন স্কুলে পড়ুয়া স্টুডেন্ট?যার এখনও ইন্টারে পড়া বাকি?আব্বুর ভয় কাজ করে আজও’

মেধা কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,’কি বুঝাতে চাইছেন আপনি?আমি কি ভুল কিছু বললাম?’
-“অবশ্যই।শুধু রাত বারোটা কেন?রাত ১/২টা অবধি তোমাকে ক্লাবে উপস্থিত থাকতে হবে।গিয়াস স্যার যদি মানাও করে তাও আমি তোমায় সাথে করে নিবোই নিবো।চাকরিতে জয়েন করেছে দুদিন ও হলোনা,উনি ফাঁকি দেওয়া শুরু করে দিছেন।তা হচ্ছেনা’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেধার মনে পড়লো বাবার কাছে শ্যাওলার নাম নিলে হয়ত মানাতে পারবে তাকে।তাই সে আর কথা বাড়ালোনা।
নুহাশ কাঁচের টুকরো সব ল্যাবে পাঠিয়ে দিয়েছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সার্চের জন্য।
রেদোয়ানের খাটের বক্স থেকে কিছু কাগজপত্র বেরিয়ে এসেছে শুনে শাওন আপাতত সেখানে এসে হাজির।কাগজগুলো বিভিন্ন জায়গার জমির দলিল।রেদোয়ানের এত টাকা পয়সা ছিল আর সে মিডিয়ার সামনে শো অফ করতো এত কম?মানুষ টাকা অধিক থাকলে শো অফ বেশি করে আর রেদোয়ান দেখি তার উল্টো ভাবনার মানুষ।সে ইনকাম ট্যাক্সের ভয়ে এত এত টাকার কথা কিনা লুকিয়ে রাখলো।

প্রায় শো অফ করা সম্পত্তির দিগুণ সম্পত্তির মালিক ছিল সে।জেনেশুনে গরীব ঘরের মেয়েকে বিয়ে কেনোই বা করলো?আর তাকে টর্চারই বা কেন করত?তার কি পরকিয়া ছিল?আশার বাবার মতে রেদোয়ানের চরিত্র প্রকাশ্যে বিদঘুটে ছিল।রেদোয়ানকে চরিত্রহীন এওয়ার্ড দিয়ে গেলেন তিনি। তার মানে নিশ্চয় এমন ঘটনা ঘটেছে।তবে কার সাথে ঘটেছে?সেই নারীকে কই পাওয়া যাবে?’
-“পাওয়া গেছে’

রায়হানের কথা শুনে শাওন ঘাঁড় ঘুরিয়ে তাকালো।রায়হান বললো,’তার নাম এ্যামিলি।বাড়ি মালদ্বীপ।তবে স্থায়ী বাসিন্দা না।তাকে একবার একদেশে দেখা যায়।
বড়লোকের গার্লফ্রেন্ড হলে যা হয় আর কি!’
-‘নাইস!তা সেই এ্যামিলি এখন কোন রাষ্ট্রে বসবাসরত? ‘
-“তার টাকা দেওয়া বিবাহিত বয়ফ্রেন্ড মরে গেছে বলে সে এখন বাংলাদেশেই আছে।তবে পলাতক’
-‘পলাতক?তাহলে তো সন্দেহের তীর তার দিকে ছুঁড়তে হচ্ছে।নুহাশ আর নিতুকে পাঠাও ঐ পলাতক এ্যামিলিকে খুঁজতে।আমি বরং ক্লাবের ফুটেজ দেখে আসি।আর হ্যাঁ,
মিস অতিরিক্তকে বলো এবার একটু কাজ টাজ করে দেখাতে।একদিন শুট করে কি দশদিন ধরে তার প্রশংসা শুনে যাবে?বলো রেদোয়ানের গেস্ট রুম সার্চ করতে যেতে।টিম আকারে ভাগ হয়ে যাও।মেধার সঙ্গে মিলনকে পাঠাও’
-“স্যার আমি যাবো?’
-“না সাজিদ।তুমি আমার সঙ্গে চলো’

মেধা আর মিলন রেদোয়ানের গেস্ট রুমে এসে হাজির।কত বড়লোক হলে আলাদা গেস্ট হাউজ বাহিরে একটা রেখে আবার বাসার ভেতরে গেস্ট রুমও রাখে।বাসার নিচ তলাতেই গেস্ট রুমটা।একেবারে পেছনের সাইডে বলে এতদিন কেউ এটা পরোক করে দেখতে আসেনি।তবে ওয়াশরুমের মিররে লেগে থাকা শুকনো সাবানের ফ্যানা বলে দেয় এটা ব্যবহার হয়েছে বেশিদিন হয়নি।
-‘মিলন তুমি বিছানা ওলটপালট করে দেখো।আমি আলমারি দেখছি আপাতত ‘
মিলন চশমা ঠিক করে বিছানার চাদরটা উল্টে দেখলো কিছু নেই।তারপর এক এক করে দুটো তোষক সরিয়ে ফেললো।বিছানাতে কিছুই নেই।মেধা আলমারি খুলে পুরোনো তোয়ালে ছাড়া কিছুই পেলোনা।মিলন বিছানার নিচ থেকে একটা লিপস্টিক খুঁজে পেলো সবার শেষে।
মেধা ওর হাত থেকে লিপস্টিকটা নিয়ে দেখে চোখ বড় করে বললো,’এটা তো Couture Beauty Diamond Lipstick।রেপ্লিকা না তো?’

-“রেপ্লিকা কেন হবে?এরকম হা করছো কেন?লিপস্টিক দেখলে মেয়েদের মাথার ঠিক থাকেনা আজ প্রমাণিত ‘
-“আরে কথা সেটা না মিলন।এই লিপস্টিকের দাম জানো তুমি?১৪মিলিয়ন!!!!
তার মানে কোটি টাকার উপরে।রেদোয়ান এত বড়লোক?
মাই গড!!এত দামি লিপস্টিক কিনা খাটের তলায় রেখে মরছে!’
-‘আশা লিপস্টিক ইউজ করত না।তার কোনো ছবিতেই আমরা লিপস্টিক দেখিনি।এমন কি যেদিন সে মারা গেছে সেদিনও তার ঠোঁটে লিপস্টিক ছিলনা’
-‘তাহলে এটা কার?’
-‘ল্যাবে পাঠিয়ে দিতে হবে।টেস্ট করলেই বোঝা যাবে এটা কার।আপাতত এটার কয়েকটা ছবি তুলি।১৪মিলিয়নের লিপস্টিকের পিক তুলে আপলোড করলে অন্তত ১৪হাজার লাইক তো পেয়েই যাবো’
মেধা লিপস্টিকটা মিলনের হাতে দিয়ে পুরো রুমটা আবারও ঘুরে দেখা শুরু করলো।এই রুমে লিপস্টিক বাদ দিয়ে আর কিছুই পেলোনা যেটা কিনা সন্দেহের আওতায় আনা যায়।শুধু ঐ ফ্যানা বাদে।

ফুটেজে রেদোয়ানকে দশ বিশটা মেয়ের মাঝে দেখা গেলেও সিওর হওয়া গেলোনা ঠিক কোনটা এ্যামিলি।কারণ সে একবার একটা মেয়ের সঙ্গে কথা বলছিল।শাওন ফুটেজ অফ করে রুম থেকে বের হতে গিয়ে মেধার সঙ্গে আবারও ধাক্কা খেয়ে গেলো।কপাল মুছতে মুছতে বললো,’আমাকে ধাক্কা দেওয়াতে মাস্টার্স পাশ করেছো?’
-“নাহ।স্নাতক সম্মান’
-“চুপ!কি জন্যে এখানে এসেছো?’
-“এই লিপস্টিকটা দেখাতে।ল্যাবে চলে যাবে তার আগে মিলন বললো আপনাকে দেখাতে’
-‘এটা সেই লিপস্টিক না যেটার দাম ১৩/১৪মিলিয়ন হবে?’
“-ওয়াও!আপনি জানেন কি করে?’
-‘তৃনা আপু আমাকে এই লিপস্টিকটা দেখিয়ে বলেছিলো কিনে দিতে।।’
মেধা ব্রু কুঁচকে বললো,’ঘুষ খান?’
-“আমার বামহাতটা দেখেছো?এটা দিয়ে চড় মারলে দাঁতের জায়গা নড়ে উঠে আসামিদের।তোমাকে এখন এই হাত দিয়ে চড় মেরে দেবো।

আমি ঘুষ খাবো কোন দুঃখে?বড় আপুরা ছোট ভাইদের সাথে এমন মজা করতেই পারে।নিজের বউ ও মাঝে মাঝে এসে বলে আকাশের চাঁদ এনে দিতে।সেটা তো সম্ভব হয়না।তারা বলতে পারে।কিন্তু আমরা যে কিনে দিব তা তো সচরাচর হয়না।১৪মিলিয়ন আমার ১৪ বছরের ইনকাম ও না।’
-‘তার মানে আপনার ১৫বছরের ইনকাম?’
-“তুমি যাও এখান থেকে।না এক মিনিট!তোমাকে সাথে নিয়ে ক্লাবে যাবো।অতিরিক্ত কথা বলতে তুমি শীর্ষে।তোমাকে নিয়ে গেলে লাভ হবে এই প্রথমবার’
-‘স্যার আপনি সিনিয়র বলে যাচ্ছেতাই বলতে পারেননা।গিয়াস স্যারের কাছে নালিশ করবো’
-‘করো।স্যার সোজা আমার কাছেই পাঠাবেন।’

মেধা বাধ্য হয়েই যাবে বলে কথা দিয়ে এখন মুখটা হাঁড়ি করে রেদোয়ানের পুরো বাড়িতে চক্কর দিচ্ছে।এত বড় লিপস্টিক নাকি এ্যামিলির জন্য কিনেছিলো রেদোয়ান।
-‘উক্তিটা শাওন স্যারের।হয়ত গিফট আর নয়ত গিফট দিয়ে ফেলেছে আর সে এই রুমেই ছিলো।তড়িগড়িতে লিপস্টিক নেওয়ার কথা ভুলে গেছে।
মানুষ গিফট হিসেবে গাড়ী দেয়,ডায়মন্ড দেয়,বাড়ি দেয়।আর রেদোয়ান কিনা কোটি টাকার লিপস্টিক কিনে দিলো।তার গার্লফ্রেন্ড মনে হয় লিপস্টিককে ডায়মন্ডের চেয়েও বেশি পছন্দ করতো।আইডিয়া!!!
ফুটেজে যে মেয়ের ঠোঁটে লিপস্টিক থাকবে সে হলো এ্যামিলি।পেয়েছি স্যার!’
শাওন ব্রু কুঁচকে কফিতে চুমুক দিলো।মেধার উল্লাসে কোনো পাত্তাই সে দিলো না।মেধা সামনে ঘুরে এসে বললো,’কি হলো স্যার?বুদ্ধিটা ভালো লাগেনি?’

-“তুমি নিজের চোখে ফুটেজ দেখে আসো তারপর নাচানাচি করিও”
মেধা এক রাশ আগ্রহ নিয়ে ফুটেজ দেখতে গেলো।রেদোয়ানের সঙ্গে যত মেয়ে ছিল সবগুলোর ঠোঁটে লাল টকটকে লিপস্টিক। আশ্চর্য!!
স্যার আমার মনে হয় রেদোয়ান ঐ একটা লিপস্টিক নিয়েছে তারপর ওগুলো ভাগ করে সবাইকে দেবে বলে ঠিক করেছে।ধরুন একজনে যদি এক চিমটি লিপস্টিক নেয় তার ভাগে লক্ষ লক্ষ টাকা পড়লো’
শাওন মেধার ভাঙ্গা হাতটা টেনে ধরে সামনে এনে বললো’তুমি বোকা না,অবুঝ ও না,পারফেক্ট ট্রেইন্ড্ একজন অফিসার।সকাল থেকে বোকা সেজে কি বুঝাতে চাও?আমি কালকের ঘটনা ভুলে যাবো?’
মেধা হাত টান দিয়ে ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,’বুদ্ধি গুলো কাজে লাগান।আপনার কাজে দেবে’
-‘রেদোয়ান ছেঁসড়া না।ও চাইলে পাঁচ ছটা গার্লফ্রেন্ডকে কোটি টাকার লিপস্টিক আলাদাভাবেই গিফট করতে পারতো’
-“রাইট শাওন স্যার!!লিপস্টিক আরেকটা পেলাম।’

মিলনের কথা শুনে মেধা চোখ কপালে তুলে বললো,’আমি সিওর এই বাড়ি মাটি থেকে উপড়ে তুললে স্বর্নের খনি পাওয়া যাবে।আমার কথা তোমরা সবাই মিলিয়ে নিও’
শাওন মিলনের হাত থেকে লিপ্সটিকটা নিয়ে বললো,’আর পাবোনা।এটাই লাস্ট লিপ্সটিক। এমনিতেও এইই দুটো কিনে ফকির হয়ে গেছে রেদোয়ান।ঐ এ্যামিলিকে আজকের মধ্যে খুঁজে পেতে হবে।২০% ক্লু তার থেকেই পাবো’
-“স্যার আমার মনে হয় ও খুনি।নাহলে পালাতো না’
-‘আরে না।সে কেন রেদোয়ানকে মারবে??রেদোয়ান তো আত্নহত্যা করেছে।তাই না মিস মেধা?’
মেধা লিপস্টিকটা রেখে চোরের মতন হেঁটে চলে গেলো।মিলন হাত ভাঁজ করে বললো,’স্যার ঐ মেয়েটার কথা কানে নিবেননা।না জেনেই বলেছে আত্নহত্যা।
এটা আত্নহত্যা কেস হতেই পারেনা।ইম্পসিবল ‘
-‘হুম তা তো শেষেই বোঝা যাবে’

ঘড়ির কাঁটা নয়টার পেট ছুঁই ছুঁই।অফিসের পোশাক পাল্টে নরমাল ড্রেসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সবাই।মেধা বাসায় ফিরে নরমাল একটা ওয়েস্টার্ন টপসের উপরে জিন্সের কোটি পরে বেরিয়ে পড়েছে।
ঠিক হলো,সবাই আলাদা আলাদা ভাবে ক্লাবে ঢুকবে।একসাথে ঢুকবেনা।শাওন দুপুরে ঔষধের ডোজটা খাওয়ার পর থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেনা।শরীর খারাপ লাগছে।মাথা ঘুরছে আর সবকিছু ঝাপসা মনে হচ্ছে।একটু কাজ করেই হাঁপিয়ে যাচ্ছে সে।আরেকটা সমস্যা হলো এত কিছুর ভেতরে সে রশ্নিকে সামনে দেখছেনা।সে কি রাগ করে আসছেনা নাকি এর পেছনে একমাত্র দোষী ঔষুধ গুলো??ডাক্তার কি রশ্নিকে মন থেকে তাড়ানোর কোনো ঔষুধ দিয়ে দিলো নাকি? ‘

বাসায় আর আসলো না সে।কালো শার্টের উপরে যে অফিসের ব্যাজ লাগানো কোটটা পরিহিত ছিল সেটা খুলে রেখে দিয়ে বেরিয়েছে ক্লাবের উদ্দেশ্যে।ক্লাবের নাম রয়েল ব্লু।
সব নীল।সব জায়গায় নীলের হাতছানি।লাইটিংয়েও নীল ব্যবহার হয়েছে।ক্লাবে ঢুকার সময় নুহাশকে এক নজরে দেখলো শাওন।সে তন্মধ্যে ক্লাবে ঢুকে পড়েছে।ক্লাবের ভেতরে প্রবেশ করার পর বাকি সবাইকে কোণায় কোণায় নজরে পড়লেও মেধাকে দেখতে পেলোনা সে।মেজাজ খারাপ হচ্ছে।দেরি করা কি ওর স্বভাব নাকি ইচ্ছে করে এমন করছে মেয়েটা?এখন থেকে কাজ শুরু না করলে পরে অনেক কিছু বাদ পড়ে যাবে।নূন্যতম কমন সেন্স নাই এই মেয়েটার।

ফুটেজে দেখা যতগুলো চেনামুখ ছিল রাত যত গড়াচ্ছে ততজনকেই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে এক এক করে।শুধু দেখা গেলোনা এ্যামিলিকে।সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর্ব শুরু হয়ে গেলো।মেধা এসেছে ঠিক সেই মূহুর্তে।শাওন ওর সঙ্গে কথা বলছেনা।রাগে তার মাথা ধরে আছে।
কথা বলতে গেলে দেখা গেলো রাগারাগি শুরু হয়ে যাবে।মানুষে ঝট পাকিয়ে যাবে।কাজের কাজ আর হবেনা।
নুহাশ মেধাকে বললো কাজে লেগে পড়তে।বুঝতে দেওয়া যাবেনা যে তারা সবাই অফিসার।কথার ছলে সত্যি কথা বের করিয়ে আনতে হবে।

মেধা একটা ছেলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো।ছেলেটাকে দেখে বিদেশী মনে হয়েছে।সোনালী চুল আর ফকফকা ফর্সা শরীর। কথাবার্তায় ১০% বাংলা আর ৯০% ইংরেজী।মেধাকে দেখে সে দিওয়ানা হয়ে গেছে তা বুঝতে দু মিনিট সময়ও লাগলোনা।মেধার জন্য সুবিধা হয়ে গেলো।সে রেদোয়ানের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলো ছেলেটাকে।ছেলেটা বললো এই ক্লাবে অনেক বড় বড় লোক আসে।তবে রেদোয়ানকে সে চেনে।কারণ রেদোয়ান সেবার একটা বড় পার্টি করেছিল এই ক্লাবে।জনপ্রতি ৫গ্লাস বিয়ার খাইয়েছিল সেদিন।ছেলেটা রেদোয়ানের সম্পর্কে কিছু হয়না তাও পার্টিতে তাকে জয়েন হতে বলা হয়েছিলো বলে ছেলেটা রেদোয়ানকে নিয়ে প্রশংসা করলো অনেক।
মেধা জিজ্ঞেস করলো ছেলেটা এ্যামিলি নামে কাউকে চেনে কিনা।সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটা ফোন বের করে কতগুলো ছবি স্ক্রল করে একটা ছবি পেলো যেটাতে কিনা রেদোয়ানের সঙ্গে এ্যামিলি দাঁড়িয়ে আছে।তবে তার এক পাশ দেখা যাচ্ছিল শুধু।মেধা ছবিটা নিয়ে শাওনের কাছে ছুটতে গিয়েই ধাক্কা খেলো একটা লোকের সঙ্গে।ঠিক সেই মূহুর্তে লাইট অফ হয়ে গেছে।মানুষের মধ্যে চেঁচামেঁচি শুরু হয়ে গেলো।মেধার হাত থেকে ফোনটা নিচে পড়ে গিয়েছিলো।সে নিচে ফ্লোরের উপর হাতিয়ে ফোনটা খোঁজার চেষ্টা করেও পেলোনা।২মিনিটের ব্যবধানে কারেন্ট চলে আসলো।কিন্তু ফোন গায়েব সাথে গায়েব ঐ ছেলেটাও।মেধা উঠে পুরো ক্লাব খুঁজলো তাও ছেলেটাকে পেলোনা।

ক্লাবের পেছনে বড় আকারের একটা পুল ছিল।
পুলের কিণারায় বেগুনী রঙের পোশাকে একটা ছেলেকে দেখলো সে যে কিনা ফোন এগিয়ে ধরে কিসব ইশারা করছিলো ওকে।মেধা তা দেখতে পেয়ে দোতলা থেকে ছুটে এসে যতক্ক্ষনে সেখানে পৌঁছালো ততক্ষণে ছেলেটা গায়েব।পুলের পাশেই ঘন বন।মেধা ঐদিকটা যাওয়া ধরতেই কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে পা থামিয়ে নিলো।পেছনে তাকাতেই মুখোমুখি হলো শাওনের।সে একটা ধমক মেরে বললো,’এখানে কি করো তুমি?’
-‘একটা ছেলের ফোনে এ্যামিলিকে হাফ দেখলান।কিন্তু ছেলেটা ফোন সমেত গায়েব।কারেন্ট গেলো আর আসলো।সাথে করে সব নিয়ে গেলো।
-‘এ্যামিলিকে পুরোটা দেখোনি?’
-“নাহ।তবে অর্ধেক দেখলাম।মনে হয় সামনা সামনি দেখলে চিনে ফেলবো’
-‘আমরা যাদের জিজ্ঞেস করেছি তারা কেউই এ্যামিলি সম্পর্কে জানেনা।কিন্তু ছেলেটা গায়েব হলো কেন?আমি বুঝতেছিনা, সব খবর ঐ খুনি কি করে পেয়ে যায়!’
—-৭

শাওন আবার চলে গেছে নুহাশদের কাছে।মেধা চারিদিকটা ভালো করে দেখে নিতে নিতে সেও শাওনের পিছু পিছু চলে আসলো।সব কাস্টমার এক এক করে চলে যাচ্ছে এখন।মেধা আর শাওন মিলে ফুটেজে ঐ ছেলেটাকে দেখছে যার ফেনে এ্যামিলির ছবি ছিল।ছেলেটাকে এরপরে আর কোনো ফুটেজেই দেখা গেলোনা
আশ্চর্যকর হয়ে দাঁড়ালো একটা বিষয়।আর সেটা হলো ক্লাব থেকে বের হওয়ার যে সেকশান আছে।সেকশান “সি” সেখান দিয়ে কাউকে বের হয়ে যেতে দেখা গেলোনা।তার মানে খুনি আর ঐ ছেলেটা ক্লাবেই আছে।এই ভেবে ক্লাব খুঁজে দেখা হলো কিন্তু তাদের পাওয়া গেলোনা।তাহলে গেলোটা কোথায়?ক্লাবের পাশেই ঘন জঙ্গল।তারা ধারণা করে নিলো।ঐ জায়গা দিয়ে চলে গেছে হয়ত।

ক্লাব থেকে বের হওয়ার পর শাওন সুইমিং পুলটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,’কেসটাতে রহস্যের অভাব নেই।জানিনা আর কত সময় লাগবে খুনিকে খুঁজে পেতে।লড়ে যাব যতদূর পারি।রিপোর্ট এসেছে আশার।আশা মাথায় চোট পেয়ে মারা গেছে।তা নিশ্চয় সেন্টার টেবিলে পড়ে নয়।তাহলে কিসে??কি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করা হয়েছিলো?’
-“স্যার আলমারিতে যে হাতুড়ি পাওয়া গিয়েছিল সেটা না তো?’
-‘না সাজিদ!সেটা না।সেটা পুরোনো রক্ত ছিল।একেবারে হলদে ভাব ছিল।নতুন রক্ত হলে লাল হতো।আর যেটা দিয়ে মেরেছে সেটা কেন সামনে রাখবে?আমি রিপোর্টে বিশ্বাস করিনা।আমি তথ্য বের করে যেটা জানতে পারবো ঠিক সেটা বিশ্বাস করবো।বাই দ্যা ওয়ে!মেধা কোথায়?ওর কাজ আছে।যেটুকু হাফ দেখেছে তার স্কেচ তৈরি করে নিলে আমরা সবাই দেখতে পাবো’
-‘এখানেই তো ছিল।পুলের ঐ সাইডটাতে হাঁটছিল তো দেখলাম’

মেধা বনের অর্ধেক পথ একা একা চলে এসেছে।সে আজ ঐ ছেলেটাকে খুঁজে বের করবেই করবে।ঘুটঘুটে অন্ধকার।ছোট বড় পোকামাকড়ের আওয়াজ ভেসে আসছে কানে।গায়ের পশম দাঁড়িয়ে আসছে তাতে।গরম অথচ গা কাঁপছে।পায়ের তলায় হাজারো শুকনো পাতা।সেগুলোর শব্দ শুনে মনে হয় তার সঙ্গে আরও কজন হাঁটছে।
ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে হেঁটে চলেছে মেধা।অনেকদূরে কিঞ্চিত আলো নজরে আসছে।কাছে আসতেই মেধা আস্তে করে ফোনের লাইটটা বন্ধ করে দিলো।আলোটা একটা ল্যাম্পপোস্টের।বনের শেষ হয়েছে মেইন রোডে এসে।তার মানে ওদের খুঁজে পাওয়া অসম্ভব।

ল্যাম্প পোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে মেধা রোডটার শেষ প্রান্ত অবধি চেয়ে দেখলো।যানবাহন,মানুষ কিছুরই কোনো চিহ্ন নেই।শুকনো পাতার খসখসে আওয়াজ কানে আসতেই মেধা পাশে ফিরে তাকালো।কেউ নেই।পাতার খসখস আওয়াজ এবার তার পেছন থেকে আসলো।তাকানোর আগেই অনেক জোরে একটা আঘাতে ছিঁটকে পড়লো সে রোডের উপর।মাথা মনে হয় ফেটে যাবে।ব্যাথা এবার মাথায় পেয়েছে।মাথায় হাত দিয়ে মেধা সামনে তাকিয়ে সেই বেগুনি রঙের পোশাকের ছেলেটাকে দেখতে পেলো।চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে তার।গান বের করে শুট করার ক্ষমতা তার মাঝ থেকে উঠে আসছে ধীরে ধীরে।ছেলেটার অট্টহাসি শুনে মেধা চিনে ফেললো তাকে।মুখে একটা মুখোশ লাগানো।মেধার সামনের সবকিছু ঘুরছে।মুখোশ না থাকলেও সে মুখটা দেখে চিনতে পারতোনা।ছেলেটা চেয়েছিলো আরও আঘাত করতে।কিন্তু বন থেকে কজনের হেঁটে আসার আওয়াজ কানে আসতেই সে পালিয়ে গেলো।শাওন রোডে এসে মেধাকে এমন অবস্থায় দেখে সবাইকে বললো চারিদিকটা সার্চ করতে।এরপর মেধার কাছে এসে নিচে বসে বললো,”কোথায় ব্যাথা পেয়েছো?’

-“মাথায়।’
-“কে ছিল?চিনেছো?’
-“না!মুখোশ ছিল।চিনতে পারলাম না।’
নুহাশ,রায়হান,সাজিদ আর মিলন জনমানবশূন্য এলাকাটা অন্ধকারে আলো জ্বালিয়ে সবটা সার্চ করেও কাউকে পেলোনা।ছেলেটা মনে হয় হেলিকপ্টার নিয়ে পালিয়েছে।এত কম সময়ে কি করে গা ঢাকা দিলো।
গাড়ী ডেকে মেধাকে নিয়ে তারা হসপিটালে আসলো।মাথায় হালকা চোট লেগেছে।রক্ত বের হয়নি।জাস্ট ব্যাথাটা ঘাড়ো ছিল।শাওন মেধাকে ধমকিয়ে যাচ্ছে সেই কখন থেকে।মেধা কেন একা একা বাহাদুরি দেখাতে এত ঘন জঙ্গল পার হলো।আজ যদি তার কিছু হতো গিয়াস স্যার শাওনকে দোষারোপ করতেন
মেধা ব্রু কুঁচকে বললো,’আপনাকে দোষ দিতো কেন?আমিও একজন অফিসার।আমি ভীতু না মোটেও।একা একা পারবো বলেই পথ পাড়ি দিয়েছি”

-“দেখলাম তো কেমন পারলে!বাড়ি খেয়ে অজ্ঞানই হয়ে যেতে যদি আমরা না পৌঁছাতাম।’
-‘দুপায়ে দুইটা গান আছে আমার।দ্বিতীয় বার হার্ম করতে আসলে শুট করে দিতাম’
-“একবারের বাড়িতেই তোমার অবস্থা কাহিল করে দিয়েছিল।দ্বিতীয়বার আর প্রয়োজন ছিলনা’
মেধা মাথা ধরে উপরে তুলতেই বাবাকে দেখে আচমকা ভয় পেয়ে গেলো।শাওন ও চমকে গেছে।সালাম দিয়ে সরে দাঁড়িয়ে জায়গা করে দিলো উনাকে।উনি মেধার পাশে বসে বললেন,’বুঝলে শাওন!!মেয়েকে ছোট থেকে সাহসী মনে করে এরকম একটা চাকরির জন্য তৈরি করেছি।
আমি চেয়েছিলাম ওকে পুলিশ বানাতে।কিন্তু তার ইচ্ছে ছিল ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসার হওয়া।বলতে গেলে একই।তাই রাজি হলাম।প্রতিদিন তাকে চোট পেতে দেখি।এটা কিন্তু স্বাভাবিক। যত চোট পাবে ততই সে শিখবে।এটা মনে করতাম।

কিন্তু এখন মনে হয় বেশি হয়ে যাচ্ছে।এই তো কদিন আগে মাইক্রো বাসের ধাক্কায় হাত ভেঙ্গে ছিল অথচ এখন পর্যন্ত হাতে প্লাস্টার।আর আজ মাথায় চোট পেলো।মাথায় চোট পাওয়া মোটেও স্বাভাবিক না।আমি কাল চলে যাব পটুয়াখালী। তাকে কার ভরসায় দিয়ে যাচ্ছি জানিনা।তবে তুমি আমার বন্ধুর ছেলে।একটু দেখে রেখো।হয়ত সবসময় দেখে রাখতে পারবেনা তাও তোমার সাধ্যে যতটুকু থাকে’
-“বাবা!!আমার দায়িত্ব আরেকজনকে দিয়ে তুমি আমাকে ছোট করছো”
-‘তুমি নিজের দায়িত্ব নেওয়া শিখলে আমি কাউকে আর দায়িত্ব দিতে যাবনা’
-“আমার খবর দিলো কে তোমায়?’
-“ভুলে যাচ্ছো আমি একজন পুলিশ অফিসার?’

মেধা মাথায় হাত দিয়ে ঘঁষতে ঘঁষতে শাওনের দিকে তাকালো।শাওনের মনে পড়লো মেধা বলেছিল সে সিঁড়ি থেকে পড়ে ব্যাথা পেয়েছিল হাতে।তাহলে আঙ্কেল কেন বলছে সে বাসের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে হাতে ব্যাথা পেয়েছে?
ওসব পরে দেখে নিবে ঠিক করে শাওন শুরু করলো নালিশ দেওয়া।মেধা পাকনামি বেশি করে, সাহস দেখাতে যায় বেশি,সবসময় চোট পেয়ে বসে থাকে,কথা শোনেনা,বাচ্চামো করে।আর কিছু সে বাদ রাখলোনা,এক নিমিষে সব রকমের বিচার সে দিয়ে দিলো।যেন মেধা তার পাকা ধানে মই বসিয়েছিলো।

শাওনের মুখে নিজের মেয়ের নামে এত নালিশ শুনার পরেও তিনি চমকালেন না।
গম্ভীর গলায় বললেন,’এটা তো আমরাও দেখে আসছি সেই কবে থেকে।তবে এতশত কিছুর মাঝে মেধার একটা ভালো দিক হলো শুট করতে পারে যখন তখন।কোনো টাইমিং নেই।
অন্যকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনে সে।এই দু’টো ব্যাপারে কনফার্ম থেকো।এখন চলো মেধা,আমার সঙ্গে যাবে তুমি।তোমাকে নিতেই আসলাম।’

মেধা বুঝতে পেরেছে শাওন কেন এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।সে যে মিথ্যে বলে ধরা খেয়েছে তা নিজেই টের পেয়ে গেলো।শাওনের সামনে দিয়ে বাবার হাতে ধরে ঐ জায়গা থেকে কেটে পড়লো কোনোমতে।শাওন মেধার বিষয়টা ভাবতে ভাবতে গাড়ীতে উঠেই রশ্নিকে পাশে দেখতে পেলো।ও সারাদিনে কেন আসেনি সেটা জিজ্ঞেস না করে বলা শুরু করেছে মেধার ব্যাপারে হাজারটা কথা।বিষয়টা রশ্নির কাছে বেমানান লাগলো।পুরোটা সময় শাওন মেধাকে নিয়ে কথা বলে গেলো অনর্গল।রশ্নি ভাবলো হয়ত কাজের চাপ অনেক বেশি।কাজ নিয়ে কথা বলতেই পারে।এ আর এমন কি।তাছাড়া যতটা দূরত্ব তার আর শাওনের মাঝে সৃষ্টি হবে ততই তো ভালো।
শাওন বাসায় এসে ডিনারটা সারার সময় পেলোনা

সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
আর মেধা আজ বাবা মায়ের মাঝখানে ঘুমোতে এসেছে।মন চাইছে তাদের সঙ্গে চলে যেতে।কিন্তু তা সম্ভব হলো না।
সকাল সকাল তারা চলে গেলেন মেধাকে একা করে।মেধা দরজা লাগিয়ে ঘুমোতে এসে দেখলো আটটা বেজে এসেছে।আর ঘুমানো যাবেনা।তৈরি হয়ে রেদোয়ানের বাসার দিকে ছুটতে হবে।গিয়াস স্যার শাওন স্যারকে ঘুম থেকে তুলে আনার দায়িত্ব দেওয়ার আগেই আগেভাগে গিয়ে রেদোয়ানের বাসায় উপস্থিত হতে হবে।তাহলে আর কিছু বলতে পারবেননা।

এরকম ভালো মানের বুদ্ধি মাথায় ঠেসে মেধা রেডি হয়ে চললো রেদোয়ানের বাসার দিকে।এক ঘন্টার ভেতরে পৌঁছেও গেলো।এসে দেখলো শাওন আগে থেকেই সেখানে এসে গেছে।মনে হলো প্ল্যান কাজে আসলোনা।শুধু শুধু এত ছুটতে হলো।জ্যামে পড়ে পায়ে হেঁটেও অর্ধেক পথ আসতে হয়েছিল,তারপর ভাগ্যক্রমে সিএনজি পেয়েছিল।
প্ল্যান ফ্লপ হয়েছে বলে মন খারাপ করে মেধা সোফায় এসে বসলো।আজকে সবাই সেই মিসিং ফুলদানিটা খুঁজছে।এত বড় বাড়ি যে, রুম একটার খুঁটিনাটি বের করতে গোটা একদিন লেগে যায়।
সবাই গেলো ফুলদানি খুঁজতে রেদোয়ানের বাসার বাহিরের সাইডটায়।
মেধাও যেতে চাইলো।কিন্তু তার সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে শাওন।মেধার মনে ছিলনা কালকে রাতের ঘটনা।কপাল কুঁচকে হাত নাড়িয়ে ইশারা ইঙ্গিতে জানতে চাইলো কি এমন হয়েছে।শাওন মেধার সেই প্লাস্টার সমেত হাত চেপে ধরে বললো,’সিঁড়ি থেকে পড়ে হাতে ব্যাথা পেয়েছিলে তাইনা?’

-“দেখুন।সোজাসুজি ও উত্তর দিতে পারি আমি।এভাবে টর্চার করার কি আছে?’
-“সোজা আঙ্গুলে ঘি ওঠেনা কি করবো! ‘
-“হাত ছাড়ুন তাহলে বলবো আমি।নাহয় বলছিনা সরি’
শাওন মেধার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,’আচ্ছা বলো’
মেধা মূহুর্ত শেষ হবার অপেক্ষায় রইলোনা।উধাও হয়ে গেলো।শাওনের মনে হলো চোখে ধুলো দিয়েছে সে।রুমে সে ছাড়া আর কেউ নেই আপাতত।এত জলদি উধাও হয়ে গিয়ে বোকা বানালো মেয়েটা।এভাবে আর কত লুকিয়ে বেড়াবে।একদিন তো ধরা পড়তেই হবে।

শাওনের নির্দেশে রেদোয়ানের বাড়িটা বাদ দিয়ে সম্পূর্ন জায়গাটাতে খনন শুরু হলো।যে যেভাবে পারছে মাটি খুঁড়ে যাচ্ছে।হয় ফুলদানি খুঁজে পাবে,নাহয় লাশ পাবে আর নয়ত খড়কুটো।যাই হোক খালি হাতে ফেরা যাবে না।শাওন ও হাত লাগিয়েছে।বারতি লোক এনেও এক দু জনের শর্ট পড়ে যায়।যার কারণে শাওন নিজেই কোদাল হাতে নিয়েছে।কোনো আশ্চর্যজনক কিছু ঘটলোনা।কিছুই পেলোনা তারা।ভেবেছিল ফুলদানিটা হয়ত এখানেই পাবে।তার মানে দাঁড়ায় খুনি সঙ্গে করে নিয়ে গেছে ফুলদানিটা।এত বড় ফুলদানি কি করে নিতে পারলো?একটা কাকপক্ষী ও দেখলোনা?

ভাবলাম রেদোয়ান হয়ত একটা ফুলদানিকে ইচ্ছে করেই মাটির তলায় লুকিয়ে রেখেছে।কিন্তু নাহ।তীর অন্য জায়গায় গিয়ে আটকেছে।ফুলদানি তাহলে খুনির বাসায় অবস্থান করছে এখন।
মিলন ছুটতে ছুটতে এসে থামলো শাওনের সামনে।শাওনের সারা শরীরের কাদা মাখো মাখো হয়ে আছে।গার্ডের হাত থেকে টিস্যুর বক্সটা নিয়ে মাটির উপর এসে বসলো সে।মুছতে মুছতে বললো,’ওমন হাঁপাচ্ছো কেন?খুনি তোমাকে ধাওয়া করলো নাকি?’

-“না স্যার।খারাপ খবর আছে’
-“আবার কে মরলো?রেদোয়ানের গুষ্টিতে আর কে আছে মরার?’
-“ওটাই তো সমস্যা। রেদোয়ানের ফুফাতো ভাই যেটা আছে রকি!সে হসপিটাল থেকে পালিয়েছে’
শাওন বক্সটা রেখে সামনে তাকিয়ে থেকে বললো,’জানতাম ওর মধ্যে গণ্ডগোল আছে।দুজনকে লাগিয়ে রেখেছিলাম ওর খবর বের করতে।তারা কি ঘুমোচ্ছিল?কই পালিয়েছে জানো?হসপিটালে খবর নিয়েছো?’
-‘নিয়েছি।সে এতক্ষণে বিদেশ পৌঁছে গেছে।তবে কোন দেশে গেছে তা জানতে পারলাম না।বিদেশে গেছে জানলাম কারণ একজন নার্স জানালো রকিকে সে ফোনে বিদেশ যাবার কথা বলতে শুনেছে’
-‘কোন দেশ সেটা বের করতে রকির বাসায় যেতে হবে আমাদের।এই খুনের পেছনে পাক্কা ওর হাত আছে।নাহলে আমি সব জিজ্ঞেস করে আসার পরপরই সে পালাবে কেন?ডায়রিয়া রোগী না সে?তার মানে সব নাটক ছিল।নাটক বাহির করছি আমি।আজকেই আমরা ওর বাসায় যাব।সবাইকে বলো ফ্রেশ হয়ে নিতে।’

গিয়াস স্যার এসে দেখলেন নিতু আর নুহাশ ফিসফিস করে কি বলছে আর হাসছে শুধু।তিনি আরেকটু কাছে এসে বুঝতে পারলেন বিষয়টা।
নুহাশ বলছে রকিকে খুঁজতে বিদেশ যেতে হতে পারে।আর নিতু বললো সে বিদেশ গিয়ে শপিং করবে।খুশিতে তারা শেঅ হয়ে যাচ্ছে
গিয়াস স্যার হালকা কাশি দিতেই দুজনে সরে দাঁড়ালো।তিনি সবাইকে লক্ষ করে বললেন,’এটা ঠিক যে রকিকে দেশে পাওয়া না গেলে আমাদের কিছু অফিসার বিদেশ যাবে তাকে খুঁজতে।তবে কারা যাবে সেটা আমি ঠিক করবো।আগে থেকে আনন্দিত হয়ে লাভ মেই।’
নিতুর মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।তার চেয়ে সামিয়া,সাজিদ ভালো অফিসার তা সে জানে।ধরেই নিলো তারাই যাচ্ছে।শাওন তো যাবেই।বাদ পড়বে সে।
তাই মন খারাপ করে দূরে একটা চেয়ার টেনে বসলো নিতু।

শাওন তার কোট পরতে পরতে এসে বললো রকির বাসায় যাবে।সে,সাজিদ আর নুহাশ।বাকিরা রেদোয়ানের বাসায় কাজ চালু রাখবে।গিয়াস স্যার বলতে চাইলেন মেধাকেও সাথে নিতে।কিন্তু তার আগেই শাওন বেরিয়ে গেলো।স্যার মনে মনে ঠিক করলেন বিদেশ গেলে মেধা শাওনের সঙ্গে অবশ্যই যাবে।এটা ফাইনাল।
মেধা হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো কারণ স্যার ওকে যেতে বলেননি শাওনের সঙ্গে।তা নাহলে রকির বাসায় গিয়ে ওকে একা পেয়ে গলা চেপে ধরতো শাওন।
শাওনের থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই মঙ্গল।
সাভারে এসে রকির বাসা খুঁজতে অনেকটা সময় লেগে গেছে।
কারণ একই জায়গায় ২৪জন রকির বসবাস।শেষ বাসাটা অবশেষে আসল রকির বাসা হলো।ইয়া বড় তালা ঝুলানো সেখানে।

বিশ তলার একটা দালানের বারো তম তলায় তার ফ্ল্যাট।দেখে মনে হয় রেদোয়ান রকিকেও টাকা দিয়ে শূন্যের উপরে রাখতো।লোক লাগিয়ে তালা ভাঙানো হলো।তাতেও কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে বৈকি!
লোকাল তালা ভাঙ্গানোর লোক দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে শুরুতেই সফল হলোনা তারা।তাই অফিসিয়াল লোক আনিয়ে তালাটা অবশেষে ভাঙ্গতে পারলো।হয়ত মাছ বাজার আরও সুন্দর,শুটকির বাজারের গন্ধ আরও ভালো,সমুদ্র সৈকত আরও সুন্দর।

সঞ্চারিণী পর্ব ১৬+১৭+১৮

এমন নিকৃষ্ট পরিবেশ দেখে ওসব ভালো লাগছে আর কি!!!
মাছ বাজারের মতন করে রেখেছে পুরো ফ্ল্যাট,কল ছেড়ে রেখেছে বলে ফ্ল্যাট এখন ভাসমান অবস্থায়।কিসের বাজে দূর্গন্ধে শুটকির গন্ধ ভালো বলে বোধগম্য হচ্ছে।শাওন নাকে হাত দিয়ে বললো,’আজ আমাদের অফিসারদের মধ্যে কোনো মেয়ে আসলে নির্ঘাত বমি করে দিতো।পারফিউম স্প্রে করো জলদি নাহলে দম আটকে মারা যাবো।বারান্দার গ্লাস খোলো।’
সাজিদ আর মিলন ছুটে গিয়ে তাই করলো।শাওন একটা রুম দেখতে পেলো যেটাতে স্টিকার দিয়ে লেখা’DANGER Zone’

তার মানে ¸ঐ ছাগলের রুম এটা।দরজা খুলে ভেতরে ঢুকার আগেই মদের বোতল কতগুলো গড়িয়ে গড়িয়ে পায়ের কাছে এসে ঠেকলো তার।ভেতরে তো কেউ নেই।তাহলে এরা গড়িয়ে এদিকে এলো কি করে?
শাওন এদিক ওদিক তাকিয়ে পেছনে তাকাতেই দেখলো দরজার সাথে সুতো বাঁধানো।সেই সুতো গিয়ে বিয়ারের শেলফে গিয়ে আটকেছে।কেউ দরজা খুললে বিয়ার গিয়ে তার সামনে পড়বে গড়িয়ে গড়িয়ে।আহা কত বুদ্ধি ছাগলটার।মানে সে এত বড় অলস!বাসায় ফিরে শেলফ থেকে বিয়ার নেওয়ার শক্তি তার নেই।অটোমেটিক বিয়ারের বোতল গড়িয়ে আসবে তার কাছে।ওয়াও নাইস!!এটা তো শুধু ছাগল না!রামছাগল! ‘

হাসতে হাসতে শাওন বিছানার তোষক উপরে উঠিয়ে ফেললো।
জন্মবিরতিকরণ পিল পেলো এক পাতা।আরও কত কি পেলো।ছেলের বাসায় এগুলো কি করে?তারমানে মেয়েও থাকতো এখানে।
সাজিদ রান্নাঘরে মুসুর ডালের বোয়ামের ভেতরে একটা ছুরি লুকানো পেয়ে সেটা দেখাতে আসলো শাওনকে।শাওন তোষক টেনে দিয়ে ওর দিকে তাকালো।ছুরিটাকে সাইড করে রাখতে বলে রকির আলমারি খুললো এবার।

সঞ্চারিণী পর্ব ২২+২৩+২৪