সঞ্চারিণী পর্ব ১৬+১৭+১৮

সঞ্চারিণী পর্ব ১৬+১৭+১৮
আফনান লারা

-‘নিজেকে দোষী বানাতে চাও নাকি আমার চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা করছো?কোনটা সঠিক?’
-‘আপনার কি মনে হয়?আমি হাতে ব্যাথা পেয়ে বলে দেবো যে আমি কি করেছি?’
শাওন মেধার হাত ছেড়ে দিলো।নিজের কোটটা ঝাঁকিয়ে একটু সরে দাঁড়িয়ে বললো,’তুমি কিছুই করোনি।’
কথা শেষ করে চলে গেলো শাওন।মেধা ওর শেষ কথাটা ঠিক বুঝলোনা।এত কিছু ইঙ্গিত দিয়ে বলার পরেও সর্বশেষে সে এটা কি বলে গেলো?সত্যি কি বিষয়টাকে সে এতটা ছোটখাটো হিসেবে ধরে নিলো নাকি এর পেছনে তার অন্য প্ল্যান কাজ করছে।হাতের টিস্যুটাকে নিচে ফেলে একটা দিয়াশলাই কাঠি দিয়ে আগুন ধরিয়ে টিস্যুটাকে জ্বালিয়ে ফেললো মেধা।তাকে খুব শীঘ্রই একটা বড় লড়াইয়ে নাম দিতে হবে।একান্তই নিজেকে রক্ষা করার লড়াই।

-‘আজ যারা তাকে রেখে সবাইকে মারতে চেয়েছে কাল তারাই এসে সবার আগে আমাকেই মারবে।এটা আমি জানি।একটা ক্লিপের জন্য কতটা হিংস্র হতে পারে।যাই হোক না কেন ঐ ক্লিপের বর্তমান ঠিকানা সম্পর্কে আমি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ জানে না আর জানবেও না।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

শাওন রুম থেকে বের হতেই রায়হান এসে জানালো কদিন আগে মাঝরাতে যেসব আসামি ধরা পড়েছিল তারা নাম নিতে প্রস্তুত। যে ওদের সেইরাতে গুলি করেছিল তার নাম বলতে চায় তারা।শাওন বললো আজ রাতে যাবে দেখা করতে।এখন কাজ হলো আহত হামলাকারীদের থেকে কথা বের করা।মোট ছয়জন এসেছিলো আজ হামলা করতে।সবাই আহত হয়ে কাঁতরাচ্ছে ফ্লোরের উপর।সবার হাত বেঁধে রাখলো রায়হান আর নুহাশ মিলে।শাওন ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো।

দু মিনিট ধরে সবাইকে দেখলো এক এক করে, তারপর বললো,’তোমাদের বস কে?’
কেউ উত্তর দিচ্ছেনা দেখে শাওন একটা ধমক দিয়ে একজনের কপালে গান তাক করে বললো,’উত্তরের জন্য বাঁচিয়ে রেখেছি।সেই উত্তরই যদি না পাই তাহলে তোমাদের রেখে আমার কি লাভ?’

যার কপালে শাওন গুলি তাক করেছিলো সে নড়েচড়ে কি যেন বলতে চাইলো কিন্তু পারলোনা।মূহুর্তেই সে মারা গেলো।তাকে বিষ দেওয়া হয়েছিলো।মুখ দিয়ে ফ্যানা বের হয়ে তৎক্ষনাৎ সে মারা গেলো।শাওন পিছিয়ে গিয়ে ডাক্তারকে ডাকতে বলেছে।ডাক্তার এসে বললেন সে মারা গেছে।শুধু তাই নয়।মাত্র তিন মিনিটের ব্যবধানে বাকি যারা ছিল তারা সবাই মারা গেছে।সবাই বিষের কারণে মারা গেলো।শাওন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করতে ছুটে গেলো কন্ট্রোল রুমে।নুহাশ চেয়ার টেনে বসে আধ ঘন্টা আগে রিভাইস করলো ভিডিওটাকে।ঐ ছয়জন বাদে সন্দেহ করার মতন কাউকেই নজরে পড়লোনা।তার মানে দাঁড়ায়, তারা এখানে আসার আগেই বিষপান করেছিলো।
শাওন টেবিলে জোরে হাত রেখে বললো,’একের পর এক প্রমাণ লোপাট করে যাচ্ছে ঐ খুনি।আর আমরা হাতের উপর হাত রেখে দেখে যাচ্ছি।এখন মনে হচ্ছে নিজেই নিজের সাথে আলাপ করা যাবেনা পরবর্তী প্ল্যান নিয়ে।’

-‘শাওন আমার মনে হয় খুনিটা কোনো সিরিয়াল কিলার হবে।’
-‘সেটা না।সে শুধু তার পাঠানো লোকদের মেরেছে।মানে যাদের দিয়ে আমাদের মারতে চায় তাদের আগে থেকেই বিষ খাইয়ে পাঠায় যাতে আমরা ওদের ধরলেও তাকে যেন ধরতে না পারি।এমন বিষ খাওয়ায় যেটার কিনা রিয়েকশান দেখা দেয় এক ঘন্টার ভেতরে।
তার এত ভয় কিসের?অপরাধ করার সময় মনে ছিলো না?একের পর এক খুন করে যাচ্ছে।দুটো খুনের বোঝাকে ঢাকতে সে এতগুলো খুন করলো।একে যত জলদি হোক নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে হবে’

মেধা অফিসের পোশাক পরে বের হতেই সামনে পড়লো সামিয়ার।অগ্নি দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সে।পারছেনা মেধাকে কাঁচা গিলে খাচ্ছে এখনই।রাগে ফু্ঁসতে ফুঁসতে সে বললো,’আমি জানতে চাই তুমি এমনটা কেন করলে?আমাকে ওয়াশরুমে আটকালে কোন সাহসে?কাল দায়িত্ব টা শাওন স্যার নিজে আমায় দিয়েছিল।তুমি কোন অধিকারে ছিনিয়ে নিলে দায়িত্বটা?সবার কাছে বড় হতে চাও তাই না??কি ভাবো নিজেকে?আমি এই ব্রাঞ্চের একজন অফিসার বিগত দু বছর ধরে।কতগুলো কেসে আমি লড়েছি জানো তুমি?তুমি অফিসে জয়েন করেছো কতদিন হলো?’
-‘দেখো সামিয়া আপু,তুমি বামহাতি।তোমার পক্ষে এতগুলো মানুষকে একা হাতে সামলানো সহজ হতোনা’
-“শাওন স্যার,রায়হান,নুহাশ,সাজিদ মিলন ওরা কি ছিল না?একা আমি শুট করতাম?’
-“হ্যাঁ।কারণ আজ তো কি হয়েছিলে তুমি জানোই।শাওন স্যারকে শুট করেছিলো তারা।বাধ্য হয়ে সবাই আত্নরক্ষার জন্য লুকিয়ে পড়েছিলো মূহুর্তেই।’

-‘কথা ঘুরাবেনা।আর কখনও আমার কাজে মাথা ঘামাতে আসবেনা।তুমি তোমার কাজ করো আর আমি আমার কাজ।এরপর যেন তোমাকে আমার সামনে না দেখি’
ঝাড়ি দিয়ে সামিয়া চলে গেলো।মেধা ওর এত লম্বা ভাষণ এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে ফেলেছে।সামিয়া না বুঝে এসব বলছে তাই আর গভীরে গিয়ে ভাবলোনা মেধা।তার কাছে ভাববার জন্য আরও অনেক বিষয় আছে।

তখন থেকে ফোন রিং হচ্ছে অথচ কোন জায়গায় মেধা ফোন রেখেছিলো তাই ভুলে গেছে। সব জায়গায় ব্যস্ত হয়ে খুঁজছে সে এখন। ফোনও বেজে যাচ্ছে।শেষে সোফার নিচে পেলো।ফোন হাতে নিয়ে দেখলো অপরিচিত নাম্বার থেকে কল।রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে অট্টহাসি শোনা গেলো।ওপারের মানুষটা হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যাচ্ছে।মেধা চুপ করে তার হাসি শুনছে।লোকটা হাসি থামিয়ে বললো,’তো অফিসার মেধা।কেমন আছেন?’
মেধা কিছু বলার আগেই শাওন ওর হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে কানে ধরলো।মেধা অপ্রস্তুত ছিল।চমকে তাকিয়ে রইলো সে।শাওন কানে ধরতেই লাইনটা কাটা গেলো।ওপারের মানুষটা কি করে বুঝলো শাওন ফোন নিয়েছে?এদিক ওদিক তাকিয়ে শাওন ফোন সোজা করে ধরে নাম্বারটা দেখে বললো,’কার নাম্বার এটা?’

-‘এভাবে ফোন নেওয়া খারাপ স্বভাব ‘
-‘তুমি তো বললে রহস্য আমি সলভ্ করতাম।তাহলে আমি তোমার সাথে যা খুশি তাই করবো।ঐ যে রহস্যের জন্য।চাইলে এখন তোমার ফোনটা সাথে নিয়ে যেতে পারি।কিন্তু নেবো না।রাখো তোমার ফোন। এক মিনিট,তার আগে শুধু একটা কথা মাথায় রাখবে।শাওন তোমায় প্রতি প্রতি পদে পদে ফলো করবে আজ থেকে।’
মেধা ফোন কেড়ে নিয়ে বললো,’আমার রহস্য বের করতে গিয়ে রেদোয়ানের কেসটাকে পেন্ডিং ফেলে রাখবেন না।সেটা অধিক জরুরি।আমার রহস্য তো যেকোনো দিনই সামনে আনতে পারবেন।আফটার অল আপনি একজন সিনিয়র অফিসার।সব কিছুতে পটু’

-‘তোমার হাত ভেঙ্গেছিল কি কারণে?’
-“সিঁড়ি থেকে পড়ে’
-‘শুনলাম তোমার বাসায় তো লিফট দিয়ে যাওয়া যায় তাহলে পড়লে কি করে?’
-‘লিফট নষ্ট ছিল বলে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়েছিলাম তাই’
-“ওহ।ভালো।বাসায় ফিরে যাও।আজকে আর তোমার কাজ নেই।অনেক কাজ করে ফেলেছো’
মেধা চুপচাপ চলে গেলো।শাওন রায়হানকে ডেকে বললো ঐদিনকার আসামি গুলোকে দেখতে যাবে।রায়হান মাথা নিচু করে বললো ওদের সাথেও একই ঘটনা ঘটেছে।বিষক্রিয়াতে মৃত্যু।

শাওনের খুব রাগ হলো।রেগে-মেগে কাঁচের টেবিলে ঘুষি মারতে গিয়ে থেমে গেলো সে।রশ্নি চিৎকার করে থামিয়েছে ওকে।রশ্নিকে দেখে মূহুর্তেই শরীরের সব রাগ যেন শূন্য হয়ে গেলো।হাতের কম্পনের তাপমাত্রা কমে গেলো।কপালের রেখা মিলে গেলো সাথে সাথে।চোখ বন্ধ করে প্রশান্তির নিশ্বাস ফেলে চেয়ারে টেনে বসলো সে।দূরে মেধা গিয়াস স্যারের সাথে কথা বলছে।যায়নি এখনও।শাওন রশ্নির দিকে তাকিয়ে বললো,’মেধা আসলে কে জানো?’

-‘নাহ।ভালোই তো মনে হয়’
-‘ও ভালো না খারাপ তা জিজ্ঞেস করিনি।ও আসলে কে?ওর রহস্যটাকি তা জানতে চাই আমি।ওর কথা বার্তায়, প্রতিটি শব্দে আমি রহস্য খুঁজে পাই।অথচ খুঁজতে গিয়ে কোনো প্রমাণ পাইনা।সে একজন অফিসার।তার সাথে অপরাধ জগৎয়ের সম্পর্ক থাকার কথাই না।কিন্তু আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটলো আজ।হামলাকারীরা ওকে রেখে সবাইকে শুট করেছে।বিষয়টা আমাকে ভাবাচ্ছে।মাথায় কিছুতেই নিতে পারছিনা।মেধার সঙ্গে ওদের কি লেনাদেনা থাকতে পারে?আবার আরেকটা লজিক আসছে সামনে, তা হলো মেধা নিজে ওদের শুট করেছে।যদি মেধা ওদের দলের কেউ হতো সে তো শুট করার কথানা’

রশ্নি শাওনের চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,’সবকিছু নেগেটিভ ভাবতে নেই।তারা মেধাকে তন্নি ভেবেছে।তন্নিকে মারা তাদের উদ্দেশ্য ছিলনা।তাই হয়ত ওকে রেখে বাকিদের উপর হামলা করেছে’
-‘দারুণ বললে।আমি এটা ভাবিনি একবারও।তারা তো মেধাকে তন্নি ভেবে আসতে পারে।তাদের টার্গেট হয়ত তন্নি ছিলনা।আমি এবং বাকি অফিসাররা ছিলাম’
-“ঠিক’

-‘আর আমি ভাবলাম না জানি মেধার সাথে কত কি রহস্য ঝুলে আছে।সেটাই,একজন অফিসার কেন অপরাধী হবে?’
-‘আজ যেভাবে লড়েছো আমার বেশ ভালো লেগেছে।গর্ব করে বলতে পারছি এই ক্যান্ডিডেটকে আমি নিজে চয়েস করে এনেছি।তুমি আমার পছন্দের মান রাখলে।সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখলাম, কি করে সব সামলে নিয়েছিলে।আসলেই তুমি এক হাতেই সব পারবে।আমি তোমার ট্রেনিং করা বাস্তবে দেখেই তো তোমাকে নিয়োগদান করেছি।এমনি এমনি গিয়াস কিছু করেনা। শুধু তাই নয়।শাওনকেও আমি নিজে পছন্দ করে নিয়েছিলাম।তুমি তো একা হাতে পাঁচ ছয়জনকে শুট করেছো।শাওন একা বিশজনের বেশিজনকে থামিয়ে দেওয়ার ছেলে।তার ট্রেনিং দেখে নয় বরং অনেকবছর আগে একটা মর্মান্তিক ঘটনায় আমি স্বচক্ষে ওকে লড়তে দেখে আমার অফিসের সিনিয়র অফিসার বানিয়ে নিয়েছিলাম।আর আজ এতগুলো বছর ধরে ও আমার নাম ধরে রেখেছে।আশা করি তুমিও আমায় নিরাশ করবেনা।বিশ্বাস আছে’

মেধা মুচকি হেসে বললো,’থ্যাংক ইউ স্যার।আজ আমি আসি তাহলে?’
-“ঠিক আছে যাও’
—-
মেধা চলে গেলো।শাওন বাসায় ফিরলো নয়টার দিকে।দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেই বাবাকে দেখলো সোফায় বসে আছেন।মনে হচ্ছে ওর অপেক্ষায় ছিলেন এতক্ষণ।শাওন বাবার সামনে বসলো চুপচাপ।বাবা জিজ্ঞেস করলেন সে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল কিনা।এটা শুনে পকেট থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে বাবার হাতে ধরিয়ে দিলো সে।বাবা ঔষুধগুলোর নাম ভালো কররে পড়ে বললেন,’কিনে আনছো নাকি আবার এক মাস পর গিয়ে কিনবে?’
-“কিনছি।এই যে প্যাকেট’

-‘তৃনার আম্মু শাওনকে খাবার দাও।জলদি ডিনার করে ঔষুধ খাবে সে’
শাওন উঠে চলে আসলো তার রুমে। আগে ফ্রেশ হবে তারপর যা হবার হবে।
রশ্নি ঔষুধ গুলো এক এক করে দেখছে।শাওন শাওয়ার অন করে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আয়নাতে চোখ রাখতেই মেধার কথা মাথায় আসলো।
-‘দুটো দিক মানতে পারছিনা।মেধাকে রহস্যময়ী মনে হয় আবার একেবারে সাধা সিধেও মনে হয়
কোনটা সঠিক?ওর অধ্যায়ের রহস্য খুঁজে আনতে হবে তা নাহলে অন্য কেসে মন বসাতে পারবোনা।’

-‘শুনলাম তুমি নাকি আজকে একা হাতে কয়েকজনকে শুট করেছিলে?’
ভাতগুলোকে নাড়াতে নাড়াতে মেধা মাথা নাড়ালো বাবার প্রশ্নে।বাবা নড়েচড়ে বসলেন।সবাই এবার চুপ।তিনি আবার বললেন,’চাকরি কেমন লাগছে তোমার?’
-‘ভালো’
-‘আমার ট্রান্সফার হয়ে গেছে শুনেছো?’
মেধা চোখ তুলে চমকে বললো,’নাহ শুনিনি।কখন হলে?আর কোথায়?’
-‘পটুয়াখালীতে।’
-‘বাবা আমার পক্ষে তো যাওয়া সম্ভব হবেনা’

-‘সেটা জানি।তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবেনা।আমরা পটুয়াখালী চলে যাবো।মৌমিতার স্কুলেও টিসি করিয়ে নেবো।তোমায় একা থাকতে হবেনা।তোমার ফুফাতো বোন সাবরিন এসে থাকবে।আপার সাথে কথা হয়েছে।তাদের বাসায় এত মানুষের মাঝে তোমার থাকা ডিফিকাল্ট হবে বলে আমি এই সিদ্ধান্ত নিলাম,তাছাড়া সাবরিনের ভার্সিটি এখান থেকে কাছে বলে আপা সহজেই রাজি হয়েছেন।খাওয়া দাওয়া তো সব বুয়া সামলাবে।বুঝলে?ছুটি পেলে পটুয়াখালি চলে আসবে’

-‘হুম।’
মেধা উঠে রুমে চলে আসলো।বাবা মাকে ছেড়ে একা থাকাটা এটাই নতুন তা কিন্তু না।একবার তার ট্রেনিংয়ের জন্য অনেকদূরে গিয়ে দু তিন মাস থাকতে হয়েছে তাদের ছেড়ে।সুতরাং অভ্যাস আছে।মা ব্যাগ গুছাতে ব্যস্ত। মৌমিতা মেধাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাজুড়ে দিয়েছে।তার কান্না থামার শেষ নেই কোনো।মেধা ল্যাপটপে টিপাটিপি করতে করতে মৌমিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কাল বাদে পরশু চলে যাবে সবাই।তার একটা বিষয় ভেবেই বিরক্তি পাচ্ছে।কারণটা হলো ফুফাতো বোন সাবরিন যে কি জিনিস।ঘুমায় সেখান থেকে উঠে পড়তে বসে।বই হাতে রেখে আবার ঘুমায়।ওর পড়া দেখলে নিজেরই পড়তে বসতে ইচ্ছে করবে।কিন্তু ঐ যে আমার তো পড়াশুনা শেষ আর কি পড়বো?তবে ওকে দেখলো হুদাইও কোনো বই কিনে এনে পড়তে ইচ্ছে করবে।পাঁচদিনের জন্য একবার সে বেড়াতে এসেছিল।আমার এক লাইব্রেরী বই কেনা শেষ।

এমন ও হতে পারে খেতে বসে ওকে সহ খাইয়ে দিতে হবে।পড়ুয়া মেয়ে কিনা।তার আবার খেতে বসার সময় আছে?আমি না খাওয়ালে দেখা গেলো সে খাবেই না।মরে পড়ে থাকবে।
আচ্ছা আমি একা থাকলে কি এমন হবে?আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সাহস আছে কারোর?’আজকে রাতের ঘুম নষ্ট হবে ঐ সাবরিনের কথা ভাবতে ভাবতে’

পরেরদিন সকাল দশটা বাজে অফিসের সবাই এসে হাজির হয়েছে,এমনকি মেধাও।
আজ সঠিক সময়ে কিনা মেধাও এসে পড়েছে অথচ শাওন ফেরেনি।সমস্যা সেটা ছিলনা।সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো গিয়াস স্যারের আদেশ।তিনি মেধাকে একটা ক্যাব ধরিয়ে দিয়ে বললেন সোজা শাওন স্যারের বাসায় যেতে।তারপর তার সঙ্গে তারই গাড়ীতে করে রেদোয়ানের বাসায় পৌঁছাতে।
-‘আমার আর শাওন স্যারের বোঝাপড়া তিনি আরও মজবুত করতে চান।হঠাৎ এই মূহুর্তে সামিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম মনে হলো আমার কাছে।আমি না গিয়ে সামিয়া গেলে ভালো হতোনা?বললাম স্যারকে।কিন্তু স্যার বললেন সামিয়ার সঙ্গে শাওন স্যারের রেষারেষি নেই কিন্তু আমার আছে ষোলআনা।তাই বাধ্য হয়ে শাওন স্যারের বাসায় যাচ্ছি এই প্রথমবার।’

আজিমপুর এসে সবাইকে জিজ্ঞেস করে অবশেষে শাওনের বাসার ঠিকানা পেলো সে।কলিংবেলে চাপ দিয়ে এদিক ওদিক তাকানোর আগেই দরজা খুলে গেলো।একটা বাচ্চা এসে দরজা খুলেছে।মেধার গায়ের পোশাক দেখে সে চেঁচিয়ে মাকে ডাক দিলো
কারণ শাওন অফিসে যাওয়ার সময় যে পোশাক পরে মেধা ঠিক একই পোশাক পরে আছে।তৃনা ছুটে এসে বললো,’কি হয়েছে আরিফা?’

দরজার ওপারে মেধাকে দেখে চুল ঠিক করে হালকা হেসে আবার বললো,’আপনি শাওনের অফিসের লোক?’
-“হ্যাঁ।আসলে স্যার আজকে দেরি করছেন তো।তাই গিয়াস স্যার আমাকে বললেন উনাকে সাথে নিয়ে আসতে’
-‘আসুন না ভেতরে আসুন।বসুন।আমি শাওনকে ডেকে দিচ্ছি।আসলে কাল রাতে কড়া ডোজের ঔষুধ খেয়েছো তো তাই এখনও ঘুমাচ্ছে’
মেধা সোফায় বসলো।আরিফা মেধার পাশে বসে বললো,’তুমি ভাইয়ার মতন গুল্লি করো সবাইকে?’
-“হ্যাঁ।’

-‘কোথায় করো গুল্লি?একেবারে মাথায়?’
-‘নাহ।হাতে -পায়ে।যেন সে মারা না যায় সে বুঝে শুট করতে হয়’
-‘ওহ।তুমি গুল্লি খেয়েছো কখনও?’
-“না’
-“খাবেনা?’
মেধা মুখটা ঘুরিয়ে বসলো।
-‘কি জ্বালাতন।এরকম বকবক করা মেয়ের পাল্লায় পড়তে হলো শেষে।এত প্রশ্ন করে কেন?তার ভাইয়ারে করতে পারেনা?শ্যাওলা স্যার কখন আসবে?আর দু মিনিট বসলে এই মেয়ে আমাকে পাবনা মেন্টাল হসপিটালের রেগুলার রুগী বানিয়ে দেবে।’

-‘কি হলো বলো।তুমি গুল্লি খাবেনা?’
-“আমি খাবো কেন?আমি বরং গুল্লি করবো’
-“কেন সবসময় তুমি দিবা?তোমাকেও গুল্লি খেতে হবে।হবেই হবে।ভাইয়াকে বললো তোমায় গুল্লি করতে’
মেধা মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলো।তৃনা শাওনের রুমের পর্দা সরিয়ে ওকে কয়েকবার ডেকে ছুটে গেলো রান্নাঘরে।

-‘শাওনের অফিসের লোক মেয়েটা।ভালোমন্দ কিছু খাওয়াতে হবে।কাল রামিমেরা অনেক মিষ্টি এনেছিলো।ওগুলো দেওয়া যাবে আর নুডুুলস রাঁধবো?চা তো আছেই’
তৃনাকে ব্যস্ত হতে দেখে মেধা উঠে ছুটে গেলো বলার জন্য যে সে নাস্তা করেই এসেছে।কিছু খাবেনা।শাওনের রুম সামনে পড়ে।ঠিক সেসময়ে শাওন বের হচ্ছিলো।আচমকা মেধার সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুজনে দুদিকে ছিঁটকে পড়লো।
আরিফা হাতে তালি দিয়ে লাফাতে লাফাতে বললো,’ইয়ে!!ক্রাইম ব্রাঞ্চের দুটো অফিসার পড়ে গেছে।ইয়ে!!”
মেধা ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়ালো লজ্জা পেয়ে।শাওন ও উঠে গিয়ে বললো,’দেখে হাঁটতে পারোনা?তোমাকে দিয়ে কোনো কাজ ঠিকভাবে রীতি মত হয়না।আমায় বাসায় কেন আসলে? ঝাড়ি খেতে তোমার ভালো লাগে?’
-“মোটেও না।গিয়াস স্যার আদেশ করলেন।তা নাহলে আমি আসতাম না এদিকে।আপনার যদি বিশ্বাস না হয় স্যারকে প্রশ্ন করতে পারেন কল করে’

-“থাক থাক।ওসবের দরকার নেই।তৃনা আপু জলদি নাস্তা দাও আমায়’
শাওন গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো।তৃনা নুডুলস বানাতে বানাতে বললো,’টেবিলে আছে।নিজে নিয়ে খা।আমি তোর কলিগের জন্য একটু হালকা পাতলা নাস্তা বানাই’
-‘আরে আপু ওসব করিওনা।আমি খেয়ে এসেছি’
-‘খেয়ে এসেছো তো কি হলো?আমি নুডুলসে্ ডিম দিয়ে ফেলেছি।আর নামানো যাবেনা।’
শাওনের মা ভেতরের রুম থেকে দেখতে আসলেন কে এসেছে।মেধাকে দেখে মাথায় ঘোমটা টেনে ঠিক করে বললেন,’ওহহহ তুমি বুঝি শাওনের অফিসের? ‘

মেধা সালাম দিয়ে মাথা নাড়ালো।উনি মেধাকে বসতে বলে নিজেও বসলেন পাশে
-‘শাওন ঠিকঠাক কাজ করে তো?নাকি সারাদিন ধরে ধরে ঝাড়ি দেয় সবাইকে?’
আন্টির কথায় মেধার খুব হাসি পেলো।যাকে বলে বুক ফাটা হাসি।কিন্তু শাওনের ভয়ে হাসিটাকে থামাতে গিয়ে একেবারে কাশি উঠে গেলো তার।তৃনা কাজ ফেলে এসে এক গ্লাস পানি দিয়ে গেলো ওকে।পানিটা খেয়ে মেধা বললো,’শাওন স্যার ঝাড়ি দেয়না’

শাওনের মা এবার জিজ্ঞেস করলেন মেধার বাসা কোথায়।কিসে চাকরি করে।
মেধা তার বাবার পরিচয় দিতেই উনি চিনে ফেললেন।একটু কাছে এসে উৎকণ্ঠা হয়ে বললেন,’তাহলে তুমি ফেরদৌস ভাইয়ের মেয়ে।বাহ বেশ ভালো।আমি তো ভাবতেও পারিনি তার মেয়ে তারই মতন এরকম সাহসী হবে।আসলে এসব চাকরি করা সবার সাধ্য না।উদ্যমী,
সাহসীরাই পারে দেশের জন্য লড়াই করে যেতে।আমি তো গর্ব করে বলি আমার শাওন ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসার।তোমার পরিবার ও নিশ্চয় তোমায় নিয়ে গর্ব করে।যাই হোক,তোমার বাবা -মাকে নিয়ে অবশ্যই আসবে আমাদের বাসায়।দাওয়াত দিলাম।আসতেই হবে তা নাহলে শাওনকে দিয়ে আনাবো’
-‘আসলে আন্টি,বাবা মা আর আমার ছোটবোন কাল সকালেই পটুয়াখালী চলে যাবে।বাবার ট্রান্সফার হয়েছে তো তাই।’

-‘সেকি!তুমিও যাবে নাকি?’
-‘নাহ।আমার তো যাওয়া সম্ভব না।মিঃ রেদোয়ানের কেস এখনও পেন্ডিং হয়ে আছে।’
-‘ওহ আচ্ছা।তো একা থাকবে কি করে?’
-“আমার ফুফাতো বোন এসে থাকবে।তাছাড়া একা থাকার অভ্যাস আছে আমার।আহামরি কিছুনা।’
শাওন রেডি হয়ে এসে দেখলো তৃনা আর ওর মা মিলে মেধাকে জমপেশ খাওয়াচ্ছে।মেধা শেষে কূল না পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।এক ছুটে শাওনের কাছে গিয়ে বললো,’খাওয়ানো উচিত উনাকে।উনার শরীর দেখেছেন?অপরাধী খুঁজতে খুঁজতে তার কি হালটাই না হলো’

তৃনা হেসে বললো,’শাওন নুডুলস দুচক্ষে দেখতে পারেনা।মিষ্টির ধারের কাছেও তাকে পাওয়া যায়না।মোট কথা এক্সট্রা মিষ্টি আর এক্সট্রা ওয়েলের তৈরি খাবার সে খায়না।
মেধা ভেঁংচি মারলো।সবাই দেখলেও শাওন দেখলো না।কারণ ওকে লুকিয়েই ভেঁংচি মেরেছে সে।তৃনা,আরিফাকে হাসতে দেখে শাওন যেইনা পেছনে তাকালো মেধা মুখ ঠিক করে থতমত খেয়ে বললো,’স্যার যাবেননা?দেরি হয়ে যাচ্ছে’
শাওন আর কথা বাড়ালোনা।চললো ওকে সাথে নিয়ে।কার গ্যারেজ থেকে বের করে আনার পর মেধা আজ আবারও শাওনের পাশের সিটটায় বসতে গিয়ে ওর থেকে ধমক খেলো।শেষে বিড়বিড় করে গালি দিয়ে পেছনের সিটে গিয়ে বসেছে সে।

শাওন সেই আগের মতন রশ্নিট সাথে কথা বলছিল।মেধা তার মাথাটাকে মাঝে বরাবর ঢুকিয়ে কয়েকবার চেক করলো কিন্তু কিছুই দেখলো না।শাওন গড়গড় করে কথা বলেই যাচ্ছে রশ্নির সাথে।মহাখালীতে এসে মেধা ফোন টিপা বাদ দিয়ে খেয়াল করলো শাওন ঝিমোচ্ছে।তা দেখে ওর চোখ কপালে উঠে গেছে।মাথা এগিয়ে এনে চেঁচিয়ে শাওনকে ঝাঁকিয়ে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুললো সে।শাওন চোখ ঘঁষে বললো,’কি হয়েছে?’

-‘কি হয়েছে মানে?এমন জায়গায় এসে কেউ ঘুমায়?আপনি ড্রাইভিং করছেন এই মূহুর্তে, সেটা মনে আছে নাকি ভুলে গেছেন?আপনি মরুন না আপনার অদৃশ্য প্রেমিকাকে সাথে নিয়ে।কিন্তু আমার ক্ষতি ডেকে আনছেন কেন?স্যারকে বলবো আর কখনও যেন আপনার সঙ্গে আমাকে কাজ করতে না দেয়।যদি দেয় তো চাকরি ছেড়ে দেবো’
-“এই বিষয়ে স্যারের সাথে আমার ও কথা আছে। ঘুরে ফিরে তিনি সবসময় তোমাকে আমার সাথে রাখে এটা ঠিকনা।
আর আমি কখনও ড্রাইভ করার সময় ঘুমাইনা।কাল ঘুমের ঔষধ খেয়েছিলাম বলেই হঠাৎ ঘুমে ধরলো’

-‘আজকে আপনার অফিসে আসা উচিত হয়নি।ছুটি নিয়ে নিতেন’
-‘আমার যত অসুখই হোক আমি ছুটি নেইনা।চুপচাপ বসে থাকো’

শাওন পকেট থেকে একটা চুইংগাম বের করে মুখে দিয়ে নড়েচড়ে বসলো।মেধা জানালায় হাত রেখে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
-‘শাওনের এই অদৃশ্য প্রেমিকাটাকে দেখার খুব ইচ্ছে।তবে তার কাজকর্ম দেখা কিন্তু তাকে না দেখতে পাবার সাইন্সটা মাথায় ঢুকছেনা কিছুতেই।সে কি ইচ্ছে করেই নিজের থেকে আমার সামনে লুকিয়ে থাকছে নাকি তাকে দেখতে না পাবার পেছনে অন্য কারণ।যেহেতু শাওন স্যার বাদে আর পাঁচটা মানুষ তাকে দেখতে পায়না সেখানে আমি তার কাজ দেখতে পাই অথচ তাকে দেখতে পাইনা।আমার মনে হয় তাকে একদিন দেখতে পাবো।সেদিনের অপেক্ষায় আছি।আচ্ছা স্যার একটা প্রশ্ন করবো?’

-‘না’
মেধার রাগ আরও বেড়ে গেলো।মুখের উপর না করার মানুষ একেবারে পছন্দ না তার।ইচ্ছে করছে সিটে একটা উষ্ঠা মেরে শ্যাওলা স্যারের নাক ফাটিয়ে দিতে।হাত মুঠো করে রাগ দমিয়ে নিলো সে।
রেদোয়ানের বাসা এসে গেছে।দরজা খুলে শাওনের আগেই চলে আসলো সে।শাওন একটু পরেই পৌঁছালো।আজকে রেদোয়ানের বাসার সামনের ভাঙ্গা লম্বা সরু কাঁচটা দেখছে সবাই।

সব কিছু বুঝতে পারলেও বাইরের এই আয়নাটা কেন ভাঙ্গা সেটা মাথায় ঢুকছেনা।রায়হান এসে কাগজ ধরিয়ে দিলো শাওনের হাতে।রেদোয়ানের ইনকাম ট্যাক্সের কাগজপত্র সব। তাতে যে অংক লেখা আছে, রেদোয়ানের ফুলদানি থেকে পাওয়া গুপ্তধন প্লাস করলে ইনকাম ট্যাক্স আরও বেশি হবার কথা।তার মানে সে ট্যাক্স দেওয়ার ভয়ে এত বড় ফুলদানি আনালো তারপর সেখানে লুকালো টাকা।বাহ!কি বুদ্ধি।এই বুদ্ধি নিয়ে শেষে কিনা মরলো।কি লাভ হলো?
যে ফুলদানিটা মিসিং সেটা এখনও পাওয়া গেলোনা।হিসেব মিলছেনা কিছুতেই।রেদোয়ানের বাসার ফ্রিজ থেকে সন্দেহ করার মতন কিছুই মিললো না।নিতু বমি করছে ওয়াশরুমে গিয়ে।রেদেয়ানের ফ্রিজে নাকি সব অক্টোপাস। অনেক মানুষেরই অক্টোপাস মাছ অনেক পছন্দের।কিন্তু নিতুর তার ঠিক উল্টো। দেশি মাছ ছাড়া বাহিরের কোনো মাছই সে খেতে পারেনা।খেতে পারা দূরে থাক, চোখের দেখা দেখলেও বমি এসে পড়ে ঠোঁটের দোরগোড়ায়।
মেধা ফ্রিজের সব ফলকে একটা ঝুঁড়িতে ঢেলে ছুরি দিয়ে একটা একটা করে কাটছে।এগুলোকেও পরীক্ষা করাতে পাঠাতে হবে।

শাওন ভাঙ্গা কাঁচটার সব হারানো অংশগুলো খুঁজছে নুহাশ আর রায়হানকে সাথে নিয়ে।
সাজিদ ওখান থেকে এসে মেধার সামনে বরাবর বসে বললো,’আপেল একটা খেয়ে দেখতে পারেন।আমি খেলাম।অনেক মিষ্টি’
মেধা চোখ তুলে সাজিদের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য করে হাসলো তারপর বললো,’এমন ও হতে পারে আপেল খেয়ে রেদোয়ান বা তার ওয়াইফ আশার মৃত্যু হয়েছে’
সাজিদ হাত ভাঁজ করে মাুখটা একটু এগিয়ে নিয়ে বললো,’উহু!তাদের শরীর রক্তাক্ত ছিল,ক্ষত ছিল।বিষক্রিয়া হতে পারেনা’

-‘যদি হয়?’
-‘হবেইনা।আমার এক্সপেরিয়েন্স আছে।এরকম কেস অনেক দেখেছি’
মেধা দাঁত কেলিয়ে বললো,’তাহলে তো বলতে পারবেন কে আসল খুনি?’
-“আমি জানি আসল খুনি কে?কিন্তু বলবোনা।কারণ আমি দেখতে চাই শাওন স্যার সঠিক মানুষটাকে খুঁজে বের করতে পারে কিনা।’
মেধা আপেলের টুকরো গুলোকে প্যাকেট করতে করতে বললো,’অনেক সময় নিজের বীরত্ব দেখিয়ে মনজয় করে নিতে হয়।
আমার মনে হয় আপনার কাছে এটা মোক্ষম সুযোগ’

-“শাওন স্যার খুঁজুক।তার দ্বারা যদি ভুল হয় তারপর নাহয় আমি সামনে দাঁড়াবো’
মেধা যেতে যেতে বললো,’ফ্লার্টিং করায় আপনার অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে।ফ্লার্টিং করতে এমন কিছু মিথ্যে ব্যবহার করবেন যেটা কিনা প্রয়োজনে প্রমাণ করে দেখিয়ে দিতে পারেন।আপনাকে আমি দশে শূন্য দিলাম’
সাজিদ মাথার চুলগুলেকে এলোমেলো করতে করতে জিভে কামড় দিলো।মেধাকে দেখে এতক্ষণ বোঝার উপায় ছিল না যে সে সাজিদের ফ্লার্ট করা ধরে ফেলেছে সে।শাওন স্যার ঠিকই বলে।এই মেয়েটার মাঝে রহস্যের প্রতিটা অক্ষর একেবারে সুঁই সুতো দিয়ে আটকে দেওয়া।

সঞ্চারিণী পর্ব ১৩+১৪+১৫

রায়হানকে ডেকে প্যাকেটটা ধরিয়ে দিয়ে মেধা ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো গুলোর স্পটে এসে বললো,’হয়ত খুনি এখান দিয়ে প্রবেশ করেছে তাই এই গ্লাসের এমন করুণ পরিণতি।’
নুহাশ একটা কাঁচের টুকরোকে উল্টে পাল্টে বললো,’হ্যাঁ তাও হতে পারে’
শাওন মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,’এত সোজা না।খুনি এত সাউন্ড করে ভেতরে যাবেনা খুন করতে।এটা কমন সেন্স।তাছাড়া মিস মেধা আপনি তো বলেছিলেন রেদোয়ানের কেসটা আত্নহত্যার কেস’

-‘কিন্তু আশার তো মার্ডার হয়েছে।হয়ত তাকে যে খুন করেছে সে এখান দিয়ে প্রবেশ করেছিল’
শাওন মেধার দিকে ফিরে বললো,’তাহলে তুমি আমায় বোঝাও।রেদোয়ান যদি আশাকে না মেরে থাকে।বাইরের কেউ যদি ওকে মেরে থাকে তাহলে কোন দুঃখে রেদোয়ান সুইসাইড করতে গেলো?’
নুহাশ কাঁচের টুকরো দিয়ে মাটি খু্ঁড়তে খুঁড়তে দুষ্টুমি করে বললো,’খুশির ঠেলায় মরছে।শুনছি রেদোয়ান নাকি মাঝে মাঝে পাগলামি করতো।তার পাগলামির ফুটেজ আসবে আজকে দুপুরের দিকে।’

-‘তাই নাকি?কিরকম পাগলামি?’
-‘ক্লাবে গিয়ে অতিমাত্রায় মদ খাওয়া তারপর উন্মাদের মতন নাচানাচি। টাকার ব্যবহার সে ক্লাবে বেশি করত।’
-‘তাহলে তো ফুটেজ পরে দেখা যাবে।আগে ঐ ক্লাবে যেতে হবে।আজ রাতে আমরা সেই ক্লাবে যাবো।রেদোয়ানের আশেপাশে অথবা ঐ ক্লাবে যতজন যেতো সবাইকে জিজ্ঞাসা করতে হবে’
-“তাদের আবার কি জিজ্ঞেস করবে?’
-“হতে পারে তাদের মাঝেরই কেউ খুনি।রেদোয়ানের শত্রুর অভাব নেই।টাকা থাকা মানুষের শত্রু এমনি এমনি হয়।হয়ত রেদোয়ানেরও তাই।আমরা আগে টার্গেট করবো তার ঘনিষ্ঠ ফ্রেন্ডদের।তাদের থেকে অনেক ক্লু পাওয়া যাবে’

সঞ্চারিণী পর্ব ১৯+২০+২১