সবটাই তুমিময় পর্ব ৩১ || লেখনিতে – মিথিলা মাশরেকা

সবটাই তুমিময় পর্ব ৩১
লেখনিতে – মিথিলা মাশরেকা

-হাইচ্ছু!!!
দাবাং মার্কা হাচির শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো আমার।মেঝেতে বসা অবস্থাতেই পিছিয়ে গেছি অনেকদুর।সামনের সোফাটায় অঙ্কুর বসে নাক ডলছেন।আমার পিঠ পিছনের অন্য আরেক সোফায় ঠেকেছে।নিজের অবস্থানটা বুঝতে কয়েকসেকেন্ড সময় লাগলো আমার।অঙ্কুর বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-সমস্যা কি তোমার?আমার বাসায় যখন ছিলে,তোমার আতিথিয়তায় তো একবিন্দু ছাড় দেইনি।আর একদিন এ বাসায় থাকতে এসেছি।তোমরা দুই দাদু নাতনি মিলে তো…

এটুক বলে উনি হাতে থাকা ওড়নাটায় নাক মুছতে লাগলেন।কপাল কুচকে তাকিয়ে আছি তারদিক।কিসব বলছেন উনি?আমি কি করলাম?রাতের মাথাব্যথা কি মাথা খারাপ করে দিয়ে গেছে ওনার?অঙ্কুর নাক মোছা শেষ করে ওড়নাটা সামনে ধরে ভ্রুকুচকে তাকালেন।আর চোখ বড়বড় হয়ে গেলো আমার।ওটা আমার ওড়না!একটানে ওড়নাটা ছিনিয়ে গলায় পেচিয়ে নিলাম।উনি কিছু না বলে কুশন ঠিকঠাক করে শুয়ে পরলেন আবারো।চোখের উপর হাত রেখে বলে উঠলেন,

-আমাকে ঘুমোতে দেবে না এই প্লান করেছো?
-মানে?
-মানে ও ঘরে তোমার দাদু ষাড়ের মতো নাক ডাকছে।এখানে সোফায় এসে ঘুমিয়েছি,মাথার সমস্ত চুল আমার মুখের উপর ছেড়ে দিয়ে কুম্ভকর্নের ঘুম ঘুমাচ্ছিলে তুমি!এখন আবার এমনভাবে নজর তাক করে আছো!ঘুম হবে না এভাবে আমার!
উঠে রুমে চলে আসলাম।তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে গিয়ে না হয় ওখানেই মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে পরেছি,না হয় দুটো চুল পরেছে মুখের উপর,তাই বলে এতোগুলো কথা শোনাতে হবে?দোষটা আমারই!কে বলেছিলো তার মাথায় হাত বুলাতে?ঘুম পেলে উঠে আসি নি কেনো?তাছাড়া উনি কখন ওড়না হাতে মুঠো করে নিয়েছেন টের না পেয়ে,ওড়না ছেড়েই দশ ক্রোশ দুরে লাফিয়ে চলে গেলাম?নিজের উপর রাগ নিয়ে আবারো রুমে এসে মনিমাকে জরিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সকালে ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজাচ্ছিলাম মনিমার সাথে।দাদু নিউজ দেখছে।দাদীমা,নানীমা সোফায় বসে কথা বলছিলো।অঙ্কুরকে দেখিনি এ সকালে।মনিমার দিকে তাকাতেই পারছি না।চোখ ভরে উঠছে বারবার তার চলে যাওয়ার কথা মনে পরতেই।দাদু বলে উঠলো,
-মেয়েটাকে বেশ মানিয়েছে অঙ্কুরের সাথে।দেখো আফরা?
টিভিতে তাকালাম।অঙ্কুরের একটা এড ছিলো।রাইতা নামের এক নতুন মডেলের সাথে।নানীমা বললো,
-হ্যাঁ।ভালোই মানিয়েছে দুজনকে।অঙ্কুর কি বলে আফরা?বিয়েশাদী করবে না?
মনিমা আমার দিক তাকালো।কিছুটা ইতস্তত করে বললো,

-আসলে কাকী,অঙ্কুর তো….
দাদীমা বললো,
-ওসব আসলে নকলে ছাড়ো আফরা।ছেলে বড় হয়েছে,বিয়ে দিয়ে দাও।আশেপাশে এমন সুন্দরীরা ঘুরলে দেখবে,তুমি ভাবার আগেই তোমার ছেলে বউ নিয়ে এসেছে।তখন আবার আফসোস না করতে হয়,মনের মতো বউমা পাওনি।
দাদুও বললো,
-হ্যাঁ।আর যদি ওর পছন্দও থাকে,শুভকাজে বেশি দেরি করো না।বিয়েটা দিয়েই দাও।
-হ্যাঁ জমিদারমশাই,ঠিকই বলেছো।বিয়েটা করেই নেবো ভাবছি।

মনিমা কিছু বলতে যাচ্ছিলো।তাকে বলার সুযোগ না দিয়ে অঙ্কুর কথাটা বলে উঠলেন।এতোক্ষন সবার কথাতে খারাপ লাগছিলো।কিন্তু অঙ্কুরের কথা শুনে ভেতরটা মুচড়ে উঠলো আমার।ডাইনিং টেবিলের চেয়ারটা শক্ত করে ধরে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলাম।অঙ্কুর ট্রাউজারের পকেটে হাত ঢুকিয়ে হেলতে দুলতে বেরিয়েছেন।ঘাড় বাকিয়ে আমার দিকে তাকালেন উনি।চোখ সরিয়ে নিলাম।উনি বললেন,
-মা?ব্রেকফাস্ট করেই বেরোবো আমরা।তোমার প্যাকিং হয়ে গেছে?
মনিমার দিকে তাকালাম।সে মাথা উপরেনিচে নাড়ালো।বিস্মিত না হয়ে পারলাম না।আমাকে ছেড়ে চলে যাবে,তবুও এতোটা স্বাভাবিক মনিমা?অবশ্য হওয়া উচিত নয় কি?এতোদিন পর নিজের ছেলেকে পেয়েছেন বলে কথা!দাদু বললো,

-তোমরা আজই যাবে?
-হ্যাঁ দাদু!পরের বাসাতে আর কতো?এমনিতেও কাল রাতে যা ঘুমিয়েছি!
মনিমা আস্তে করে আমাকে বললো,
-ভোরে উঠেই বললো বাসায় যাবে।আমাকে নিয়ে।তুই নাকি যাবি না?তুই নাকি বলেছিস,দাদুর কাছে থাকবি কিছুদিন?
মাথা তাড়াতাড়ি উপরেনিচে নাড়ালাম।মনিমা বললো,
-রাগারাগি করেছিস দুজনে?
ঘাড় নেড়ে না বুঝালাম।মনিমা বললো,
-তাহলে এভাবে….

-আ্ আমিই জোর করেছি ওনাকে।একটু সময় নিয়ে দাদুকে সবটা বলতে।কিছুদিন তাদের সাথে থেকে একটু বুঝতে শিখি তাদের।তারপর না হয়…
-বেশ।যা খুশি কর দুটোতে মিলে!আমি কিছুই বলবো না!শুধু বলবো,যা করার তাড়াতাড়ি কর!তোকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হবে আমার আন্নু!অঙ্কুর?আয় খেয়ে নে!আন্নু সার্ভ করে দিচ্ছে।আমার আরো কিছু জিনিস গোছানোর আছে।আমি একটু আসছি।

মনিমা ঘরে চলে গেলো।অন্যদিক ফিরে কাদছিলাম।হাতে স্পর্শ পেতেই মুছে ফেললাম চোখ।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি অঙ্কুর চেয়ার ধরেছেন।সরিয়ে নিলাম হাত।উনি ওই চেয়ারটা টেনেই বসে পরলেন।গলা উচিয়ে বললেন,
-দাদু?এডের মডেলটাকে পছন্দ হয়েছে তোমার?
-দেখতে তো বেশ সুন্দরীই দেখছি।
অঙ্কুর আমার দিকে তাকিয়ে বিশ্বজয়ের হাসি দিলেন একটা।দু পা পিছিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে মাথা নিচু করে দাড়ালাম।অঙ্কুর আরো জোরে বললেন,

-আরে জমিদারমশাই,এদিকে আসো তো!বেশ ইন্টারেস্টিং কথা তুলেছো!আফটার অল,বিয়ের কথা!
দাদু টিভি বন্ধ করে দিয়ে ডাইনিংয়ে আসলো।মনিমা আসনি এখনো।আমিই সার্ভ করতে লাগলাম সবাইকে।দাদু বললো,
-মেয়েটাকে চেনো অঙ্কুর?
-কাকে?রাইতাকে?আরে ওকে তো আমি পার্সোনালি চিনি দাদু।বেশ ভালো একটা মেয়ে।ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সবে ঢুকেছে।আপাতত এড করেছে দু তিনটে,তারমধ্যে একটা আমারই সাথে।আর কিছু নামিদামী কালেকশনের র ্যাম্পওয়াক করেছে।এটুকোই যা।তাছাড়া ওর ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ডও বেশ ভালো।
দাদীমা বললো,

-পছন্দ হয়?
-হুম।অনেকটাই।
-তো কি বলো?বিয়েটিয়ে করবে?আফরাকে বলি?
গ্লাসে পানি ঢালছিলাম।একপলক অঙ্কুরের দিকে তাকালাম।উনি ঠোট কামড়ে ঘাড় বাকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেন।বললেন,
-করবো করবো!এএসএ বিয়ে করবে,পুরো দেশবাসী জানবে দাদীমা!ডোন্ট ওয়ারী!মাকে আমিই বলবো।
মনিমা চলে আসলো।অঙ্কুর আর কোনো কথা না বলে খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন।বাকিরাও আর কোনো কথা বলে নি।খাওয়া শেষে নিজেকে শক্ত করে নিলাম মনিমার চলে যাওয়া দেখবো বলে।ব্যাগপত্র নিয়ে বেরোনোর সময় অঙ্কুর আমার সামনে দাড়ালেন।মুচকি হেসে বললেন,
-নিজেকে এতো স্ট্রং দেখানোর দরকার নেই অদ্রি।তুমি…দুর্বল!আই নো দ্যাট ভেরি ওয়েল!আসছি।বি রেডি ফর নেক্সট!আমিও দেখবো তোমার সহ্যক্ষমতা কতো!
আচমকাই এর অজানা ভয়ে শরীর নেতিয়ে আসতে লাগলো আমার।সানগ্লাস চোখে দিয়ে চলে গেলেন উনি।মনিমা এসে আমার গালে হাত রেখে বললো,
-নিজের খেয়াল রাখিস।আর বাকিদেরও।হুম?
হাসিমুখে মাথা নেড়ে হ্যা বোঝালাম।দাদু,দাদীমা,নানীমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো মনিমা।নকল হাসিতে বিদায় দিলাম তাকে।

সময় বহমান।মনিমা চলে গেছে বেশ কিছুদিন হয়ে গেছে।এ কয়দিনে শুধু ফোনে কথা হয়েছে তার সাথে।অঙ্কুরের সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি।টিভিতে দেখেছিলাম।প্রেস কনফারেন্সে।কিন্তু তার কথা না চাইতেও প্রতিমুহুর্তে মনে পরেছে।লুকিয়ে লুকিয়ে কেদেছি।কারনছাড়াই।বা হয়তো কারনটাই স্বীকার করার অধিকার আমার নেই।ইদানিং রাইতার সাথে বেশ কয়েকটা ইভেন্ট,পার্টিতে দেখা যায় তাকে।নিউজ,অনলাইনে লেখালেখি হয় দুজনকে নিয়ে।এমনটাও হওয়ার ছিলো বলে মনকে বুঝিয়ে চোখের জল বারবার আটকে দিয়েছি।

দাদু দাদীমাকে বলেছিলাম তাদের সাথে গ্রামে চলে যাবো।কিন্তু তারাই আমার পড়াশোনার জন্য থেকে গেছে।
বেশ অনেকগুলো দিন পর ভার্সিটি এসে আস্থা,তানহাকে পেলাম।অনেকক্ষন যাবত কোনো কথা বলেনি কেউই।একেবারে এসে দেখা করবো বলে ওদের সাথে ইচ্ছে করেই যোগাযোগ করিনি।তানহার গম্ভীরতাটা মেনে নিলেও আস্থার এতো চুপচাপ থাকাটা মানতে পারছিলাম না।আবার কিছু বলারও ইচ্ছে নেই।উপরের দিকে তাকিয়ে থেকে আস্থা শান্তভাবে বললো,

-তুই জার্নালিস্ট আকাশ-অনিতার মেয়ে,মনিমা এএসএ’র আসল মা,তার বাবার বাজে ব্যবহারের জন্য সে আলাদা থাকতো,তোর দাদু তোর বাবা মায়ের বিয়েতে রাজি ছিলেন না,ওনারা পালিয়ে বিয়ে করেছিলো বলে তার রাগ ছিলো এতোদিন,সবই মানলাম।কিন্তু তোর আর এএসএ’র বিয়েটার সাথে এদের গুলিয়ে ফেলছিস কেনো?
বিস্ময়ে তানহার দিকে তাকালাম।ও মিনমিনে গলায় বললো,
-মনিমাকে ফোন করেছিলো ও।সে বলেছে সে এএসএ’র বাসায়।তারপর ওর প্রশ্নে….
সেকেন্ড পাঁচেক উত্তরের অপেক্ষা করেও উত্তর পায়নি আস্থা।সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যে বলার জন্য পাঁচ সেকেন্ড যথেষ্ট ছিলো না আমার জন্য।আস্থা বলতে লাগলো,
-তোর দাদু তোর বাবা মায়ের বিয়ে মানেনি বলে তোদের বিয়েও মানবে না এটা কোনো কথা?যারা কিনা এতোদিনে এসেছে বাবা মা হারা নাতনির খোজ নিতে।সে হিসেবে,তোর বিয়ে কোথায় হবে তা ঠিক করার কোনো অধিকারই নেই তাদের।কদিন হলো চেনে তোকে তারা?কি দায়িত্ব পালন করেছে তোর প্রতি?

-আরে ইয়ার!বিয়েটা হয়ে গেছে তোদের!আজ হোক বা কাল,বলতে তো হবেই তাইনা?আর এএসএ’ই বা চুপ কেনো?মনিমার এইসব উদ্ভট যুক্তি সে কেনো মেনে নিলো সেটাই বুঝতে পারছি না!
আমি আর তানহা তখনো চুপ।একজন স্বাভাবিক মানুষের স্বাভাবিক বিবেচনাবোধ তো এগুলোই বলবে।কিন্তু ঘটনা তো আরো বিস্তৃত।অঙ্কুর তো চানই না বিয়েটা নিয়ে দাদু কিছু জানুক।এটা তো চুক্তির বিয়ে,বালির বাধের মতো ক্ষনস্থায়ী।আপাতত ভাঙনটা শুধু দুরুত্বে সীমাবদ্ধ,যেকোনো সময় কোনো উত্তল ঢেউ একেবারে নিঃশেষ করে দিয়ে যাবে।আস্থা আবারো বললো,

-এতো জটিলতা কেনো ইয়ার?তোদের লাভ ম্যারেজ।হানিমুনেও গিয়েছিলি তোরা।ও ম্যাচট্যাচ যাই হোক না কেনো।তোরা একসাথে ছিলি।এতোগুলো দিন হয়ে গেলো!এএসএ কেনো তোর সম্পর্কে এখনো কাউকে কিছু বলছে না?কি চাইছে সে?
-এখন সবাইকে জানালে তো দাদুও জেনে যাবে।
-যদি তাই হয়,তবে তোর দাদুকেই আগে জানাক!আর কতোদিন?আন্নু,আই সাজেস্ট,তুইই কথা বল!তুই না হয়….
-আমি অঙ্কুরের অনুমতি‌ ছাড়া কিছু করবো না আস্থা।উনি যা ভেবেছেন,যেমনটা ভেবেছেন,আমি চাই তাই হোক,তেমনভাবেই হোক।

আস্থা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার কাধে হাত রেখে বললো,
-বেশ।তাই হোক।তবে আমি বলবো,কাউকে এতোটাও বিশ্বাস করতে নেই যাতে সেই বিশ্বাসের নাম অন্ধবিশ্বাস হয়ে যায়।
অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম ওর দিকে।আজকের আস্থার কথায় মজার কোনো রেশ নেই।ও তো প্রচন্ড সিরিয়াস।আমার লাইফ নিয়ে।যে ও এতোদিন অঙ্কুরকে সাপোর্ট করতো,আজ ওই আমাকে অন্ধবিশ্বাসে বিশ্বাসী না হওয়া শেখাচ্ছে।এতোসব আঘাতের ভেতরেও মনে অনেকটা প্রশান্তি।চোখ এবার খুশিতে ভরে উঠছিলো।আস্থা আমার গালে হাত রেখে মৃদ্যু হেসে বললো,

-এভাবে দুরেদুরে থাকিস না তোরা।বাইরের দুনিয়াটার জন্য একে অপরকে‌ এভাবে কষ্ট দিস না।হুম?
মাথা নাড়লাম।ও বাবু হয়ে আরাম করে বসে হাই তুলে বললো,
-নইলে ইয়ার দেখিস,রাইতা ম্যাডাম আবার সুযোগের সদব্যবহার না করে ফেলে!
ভ্রুকুচকে তাকাতেই ও হেসে বলে‌ দিলো,
-আই অ্যাম জোওওওকিং!
মৃদ্যু হাসলাম।কিন্তু কথাটা তো কোথাও লেগেছে আমার।সাথে ভয়,খারাপ লাগাও দানা বেধেছে।বিষয়টা থেকে নিজেকে বের করতে তানহাকে বললাম,
-তিহানের কি খবর রে?
তানহা চুপ করেই রইলো।আস্থা তানহার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যে হেসে বললো,
-তিহান?ও তো জব্বর আছে!টিউশনি করছে,পার্টটাইম জব করছে!আর কি লাগে!
-মানে?

-মানে সবই ঠিক আছে,শুধু আগের মতো ক্যাম্পাসে বসার সময় হয় না ওর।
কথা শেষ করতে করতেই আনমোনা হয়ে গেলো ও।আস্থা বললো,
-স্বার্থপর।চাকরিটা হওয়ার পর আমাদের সাথে সময় কাটানো কমিয়ে দিয়েছে।
-সময় কাটানোর জন্য সময় থাকতে হয় আস্থা।তুইই তো বললি ওর কতো কাজ!
তানহার কথায় আবারো তাচ্ছিল্যে হাসলো আস্থা।কি বুঝে বলে উঠলো,

সবটাই তুমিময় পর্ব ৩০

-তোদের এতোসব আজব প্রেমকাহীনির চিপায় পরে‌ নিজেরটার‌ কথাই‌ ভুলে গেছি।এই‌ আন্নু?তোর রোহান ভাইয়া,মানে আমার সাইয়া,মানে তোদের উডবি জিজু,ওই‌ রাউডিটার নাম্বারটা দে তো!ব্যাটাকে পাইনা অনেকদিন!একটু জ্বালাবো!
কয়েকমুহুর্ত একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে থেকে হেসে দিলাম তিনজনে।এই মেয়েটা পারেও!ওরা কাছে থাকলে কেমন যেনো হালকা লাগে নিজেকে।দুঃখগুলো ভুলে যাই অনেকটাই।এরমধ্যে তানহার ফোন বেজে‌ উঠলো।সাথেসাথে মুখ কালো করে ফেললো ও।দেখলাম ওর বাবার ফোন।ও রিসিভ করে বললো,

-হ্যাঁ পাপা,বলো।
অনেকক্ষন শুধু শুনে কান থেকে ফোন নামিয়ে নিলো তানহা।ফোনটা কেটে‌ দিয়েছে হয়তো।পাথর হয়ে বসে রয়েছে।ওর কাধে হাত রাখলাম।টলোমলো চোখে আমার দিক একপলক তাকালো।তারপর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি আসছি বলে হনহনিয়ে উঠে চলে গেলো ওখান থেকে।

সবটাই তুমিময় পর্ব ৩২