সাতরঙা প্রজাপতি পর্ব ৯

সাতরঙা প্রজাপতি পর্ব ৯
লেখনীতে: মাশফিত্রা মিমুই

মাঝরাতে হুট করে ঘুমটা ভেঙে গেলো জ্যোতির।পাশ ফিরে ঘুমঘুম চোখে তাকালো। আবছা দৃষ্টিতে শোভনকে দেখতে না পেয়ে কপালে ভাঁজ পড়ল। হাত দিয়ে পাশ হাতড়াতে লাগলো। এবার নিশ্চিত হলো পাশে শোভন নেই। এক লাফে শোয়া থেকে উঠে বসলো। সতর্ক কণ্ঠে ডাকল,
“শুনছেন, এত রাতে কোথায় গেলেন?”

বিপরীত মানুষটির থেকে কোনো উত্তর এলো না।বিছানা ছেড়ে নেমে ঘরের লাইট জ্বালালো জ্যোতি।পুরো ঘর ভালো করে পর্যবেক্ষণ করল, সত্যি সত্যি শোভন ঘরে নেই। এবার দরজার দিকে তাকালো। না দরজাও ভেতর থেকে লাগানো। বাথরুমে খোঁজ করল কিন্তু সেখানেও পেলো না। দৃষ্টি গেলো বারান্দার দরজার দিকে। বারান্দার দরজা হাট করে খোলা।
জ্যোতির মাথায় প্রশ্ন এলো,”এখন আবার বারান্দায় কী করছেন উনি? ধূমপান করতে গেলো নাকি! এই লোকটা না সত্যিই ভীষণ অদ্ভুত।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ভাবতে ভাবতেই বারান্দায় এলো জ্যোতি। দোলনায় শরীর হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে শোভন। জ্যোতি শোভনের সামনে গিয়ে কোমরে হাত রেখে দাঁড়ালো। আবছা আলোয় শোভনের ঘুমন্ত মুখখানা দেখতে পেলো। বললো,”বিছানা রেখে এখানে এসে ঘুমিয়ে আছে কেন? আচ্ছা সত্যি সত্যি ঘুমিয়েছে তো নাকি এমনি চোখ বন্ধ করে বসে আছে?”
একটু ঝুঁকে নির্দ্বিধায় ডান হাতটি শোভনের গালে রাখলো জ্যোতি। সুযোগে আলতো করে গাল টেনে দিয়ে বললো,”এভাবে এখানে ঘুমিয়ে আছেন কেন? লোকজন দেখলে তো ভাববে বউ ঘরে জায়গা দেয় না তাই হয়তো স্বামীকে বাহিরে এসে শুতে হয়েছে।”

তাতে শোভনের কোনো হেলদুল নেই। ঘুমন্ত মানুষের কানে কী আর এত কথা যায় নাকি? ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল জ্যোতির। এই প্রথম স্বামীকে ছোঁয়ার সুযোগ পেয়েছে সে। এই প্রথম স্বামীকে ছুঁতে পেরেছে সে। নিঃশব্দে শোভনের মুখে আলতো করে হাত বুলিয়ে চুল ছুঁয়ে দিলো। আঙুল দিয়ে চুলগুলো এলোমেলো করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আচমকা কেউ শক্ত করে হাতটি ধরে ফেললো তার। ভয় পেয়ে গেলো জ্যোতি। হাতের দিকে তাকাতেই নিজের হাতটি শোভনের হাতের মুঠোয় দেখতে পেলো। একটানে জ্যোতিকে নিজের কাছে নিয়ে এলো শোভন। শুকনো ঢুক গিললো জ্যোতি। প্রায় কেঁদে দিবে এমন একটা অবস্থা।

সে এখন শোভনের কোলে। জ্যোতির কোমর জড়িয়ে ধরে তার বাহুতে মুখ ডুবালো শোভন। ঘুমঘুম কণ্ঠে বললো,”সমস্যা কী হে? আমার চুল টানছিলে কেন দজ্জাল মেয়ে?”
ভয়টা তড়তড় করে বেড়ে গেলো। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।আমতা আমতা করে অগোছালো কণ্ঠে জ্যোতি বললো,”কই মোটেও আমি আপনার চুল টানছিলাম না।”
শোভনের পাল্টা প্রশ্ন,”তাহলে কী করছিলে?

কোনো উত্তর খুঁজে পেলো না জ্যোতি। বলতে ইচ্ছে করল,”আমার স্বামীর চুল আমি ছুঁয়েছি তাতে আপনার কী?” কিন্তু গলা পর্যন্ত কথাটি এসেই আটকে গেলো বলতে পারলো না। শোভন আর কিছু বললো না। পূর্বের ন্যায় জ্যোতিকে ধরে বসে আছে।
কিছুক্ষণ নিরবতার পর জ্যোতি প্রশ্ন করল,”রাতে বারান্দায় ঘুমিয়েছেন কেন?”
“এমনি একটু বসে ছিলাম। কখন যে ঘুমিয়ে গেছি খেয়াল ছিলো না।”
“ওহ।”

জ্যোতিকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসলো। জ্যোতি তার দিকে তাকালো। ভ্রু জোড়া কুঁচকে শোভন বললো,”উঠছো না কেন? নাকি আমার কোলে বসেই সূর্যোদয় দেখতে চাইছো?”
লজ্জায় জ্যোতির চোখেমুখে রক্তিম আভা ফুটে উঠল। দ্রুত শোভনের কোল থেকে উঠে কিছুটা দূরে সরে গেলো। ঘরে যেতে যেতে বললো,”নিজেই তো জোর করে বসালেন। এখন আবার নিজেই এসব বলে অপমান করছেন?”
শোভন উত্তর দিলো না।সেও ঘরে চলে এলো।জ্যোতি বিছানায় বসলো। শোভন বললো,”লাইট নিভিয়ে দিলাম। শুয়ে পড়ো।”

“উহু শুবো না।”
“কেন?”
মৃদু হেসে জ্যোতি উত্তরে বললো,”ঘুম যখন ভেঙেই গেছে আবার শোয়ার কী দরকার? আর দেড় ঘণ্টা পর তো ফজরের আজান হবে।”
“তো আর কী তুমি বরং বসে থাকো। এটুকু সময় না হয় আমি ঘুমাই।”
“উহু আপনিও ঘুমাবেন না।”
শোভন চমকালো। বললো,”মানে?”

জ্যোতি আহ্লাদি স্বরে বললো,”চলুন না আজ আমরা একসঙ্গে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ি।”
কোনো প্রতিক্রিয়া করল না শোভন। সুইচ বোর্ডের কাছ থেকে বিছানায় এসে বসলো। বললো,”যাও তবে ওযু করে এসো।”
উৎফুল্ল হয়ে উঠলো জ্যোতির মন। ঠোঁটের হাসি আরো প্রশস্ত হলো। বসা থেকে উঠে গেলো। বাথরুমের দিকে যাওয়া ধরলো। গম্ভীর কণ্ঠে পেছন থেকে শোভন বললো,”বাসি কাপড় যে বদলে ওযু করতে হয় এখন তাও কী শিখিয়ে দিতে হবে?”

জিভে কাম’ড় দিলো জ্যোতি। বললো,”মনেই ছিলো না।”
আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো। মেঝেতে দৃষ্টি স্থির রেখে বসে আছে শোভন। খানিকক্ষণ সময় নিয়ে বের হলো জ্যোতি। শোভন যেতে যেতে বললো,”জায়নামাজ বিছাও। আমি ওযু করে আসছি।”
এবার শোভন চলে গেলো ওযু করতে। জ্যোতি দুটি জায়নামাজ বিছিয়ে অপেক্ষা করছে শোভনের জন্য। শোভন ওযু করে বের হলো বাথরুম থেকে তারপর দুজনে একসঙ্গে জায়নামাজে দাঁড়ালো নামাজ পড়ার জন্য।

একেবারে ফজরের নামাজ শেষ করে দুজনে জায়নামাজ থেকে উঠেছে। আজ আর হাঁটতে বের হওয়া হয়নি শোভনের। জ্যোতি চা বানিয়ে নিয়ে এলো। বাহিরে মৃদু ঠান্ডা বাতাস। বারান্দার গাছগুলো একবার বামে তো আরেকবার ডানে হেলেদুলে বেড়াচ্ছে। শোভনের হাতে চায়ের কাপটা দিয়ে পাশেই বসলো জ্যোতি। কিছুক্ষণ সময় পর বললো,
“ঘরের বাজার প্রায় শেষ হয়ে গেছে।”

কথাটি কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই বিরক্তিতে ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেলো শোভনের। এই বাজার করাটাই তার ভালো লাগে না। শোভন যখন একা থাকতো তখনও তাকে বাজার অথবা রান্নাবান্না নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয়নি। বুয়া এসে সব রান্না করে দিয়ে যেতো। যা লাগতো তা দাড়োয়ানকে বলে দিতো। দাড়োয়ান গিয়ে বাজার করে নিয়ে আসতো আর শোভন শুধু মাস শেষে টাকাটাই দিতো।
শোভন প্রশ্ন করল,”আজকের দিন যাবে?”
“মনে হয় না।”

চা খেয়ে উঠে গেলো শোভন। মানিব্যাগ পকেটে ভরে যেতে যেতে বললো,”দরজা লাগাও আমি বাজারে যাচ্ছি।”
জ্যোতি দরজা লাগানোর জন্য পেছন পেছন এলো।শোভন দাঁড়িয়ে পড়ল। কিছু একটা মনে পড়েছে। পেছন ঘুরে জিজ্ঞেস করল,”কী মাছ আনবো?”
“আপনার যা ইচ্ছে নিয়ে আসুন।”
“তা বললে তো হবে না। তুমি কোনটা খাও কোনটা খাও না আমি কী তা জানি নাকি?”
“আমি সব ধরণের মাছই খাই।তাই আপনার যা ইচ্ছে আপনি নিয়ে আসুন।”
“ঠিক আছে দরজা লাগাও।”

শোভন চলে যেতেই দরজা আটকে দিলো জ্যোতি।
জায়েদা খাতুনকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। আগের থেকে অনেকটা সুস্থ তিনি। জ্বর কমে গেছে। সম্পা শাশুড়িকে নিজ হাতে সকালের নাস্তা করাচ্ছে। অস্পষ্ট স্বরে জায়েদা খাতুন শুধালেন,”জ্যোতির কী খবর?”
সম্পা স্মিত হেসে উত্তর দিলো,”ভালো মা।”
মনে মনে শান্তি পেলেন জায়েদা খাতুন। সন্তানের ভালো থাকার খবরে সকল পিতা-মাতার মনই প্রশান্ত হয়ে যায়। জায়েদা খাতুনের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।

বাজার হাতে বাড়ি ফিরলো শোভন। জ্যোতির হাতে বাজারের ব্যাগ দিয়ে নাস্তা করে নিলো তারপর অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে গেলো। অফিসের ব্যাগ কাঁধে ঘর থেকে বের হতেই জ্যোতি এগিয়ে এলো। ছাতাটা সামনে ধরে বললো,”আজ মনে হয় বৃষ্টি হবে। ছাতাটা সঙ্গে নিয়ে যান। কাজে লাগবে।”
ছাতাটা নেওয়ার মোটেও ইচ্ছে হলো না কিন্তু স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে আর না করতে পারলো না শোভন। অগ্যতা ছাতাটা জ্যোতির হাত থেকে নিয়ে ব্যাগে ভরলো। যেতে যেতে বললো,”আসছি। আমার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। রাতে ঠিক সময়ে খেয়ে নিও।”

জ্যোতি মাথা নাড়িয়ে শোভনকে এগিয়ে দিলো দরজা পর্যন্ত। তারপর শোভন যেতেই দরজা আটকে চলে এলো। সকাল থেকে আকাশটা মেঘলা। মৃদু ঠান্ডা বাতাস বইছে। মনে হয় বৃষ্টি হবে। ছোটো বালতিতে করে পানি এনে মগের সাহায্যে গাছে পানি দিতে লাগলো জ্যোতি।গোলাপ গাছে গোলাপের দুটো কলি ধরেছে। যত্ন সহকারে গাছে পানি দিয়ে বারান্দার গ্ৰিল ধরে দাঁড়ালো। আকাশটা দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। জ্যোতির চুলগুলো উড়ছে বাতাসে। বাম হাতের আঙুল দিয়ে সামনে আসা চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিলো। কিছু একটা ভেবে জ্যোতির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল। দ্রুত সেখান থেকে রান্নাঘরে চলে গেলো।

ছোটো বেলায় মাকে দেখতো। বৃষ্টি হলে কিংবা আকাশ মেঘলা হলেই চাল ডাল সহ ঘরে যা থাকতো তাই দিয়েই খিচুড়ি রান্না করতো। আর তারা দুই-ভাই বোন মিলে মজা করে তা খেতো। অনেকদিন হলো খিচুড়ি খাওয়া হয়নি। জ্যোতিও আজ খিচুড়ি রান্না করার কথা ভাবলো। রান্নার আয়োজন শুরু করে দিলো।
শোভন অফিসে এসে পৌঁছেছে। নিজের ডেস্কে বসে ফাইল ঘাটতে লাগলো। সাজেদ আজ অফিসে আসেনি। কাজের মধ্যে তনিমার ডাক পড়ল। শোভন তনিমার কেবিনে এলো। প্রশ্ন করল,”ম্যাম কেন ডেকেছিলেন?”

তনিমা পূর্ণ দৃষ্টিতে শোভনের দিকে তাকালো। এই চাহনিটা দেখলেই বেশ বিরক্ত লাগে শোভনের। অবশ্য মাঝে মধ্যে সব কিছুতেই তার বিরক্তি কাজ করে। তনিমার এমন দৃষ্টি আর নিরবতায় আলগোছে দীর্ঘশ্বাস ফেললো শোভন। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে রেজিগনেশন লেটার এনে তনিমার মুখের উপর ছুড়ে মে’রে কড়া কয়েকটা কথা বলে চলে যেতে। নির্ঘাত স্যালারির পরিমাণটা একটু বেশি এবং বাদ বাকি সব সুযোগ সুবিধা আছে তাই এই দুঃসাহসিক কাজটি করতে পারে না।
তনিমা মনোযোগ দিয়ে শোভনকে দেখছে। শোভন তার মনোযোগ নষ্ট করে দিয়ে বললো,”আপনি নিশ্চয়ই আমাকে দেখার জন্য এখানে ডাকেননি? কাজের কথা বললে ভালো হতো।”

তনিমা ডান ভ্রু উঁচিয়ে বললো,”এটা কাজের জায়গা। কাজের জায়গায় আপনাকে দেখার জন্য ডাকতে যাবো কেন?”
“তাহলে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তাকিয়ে আছেন কেন?”
লজ্জা পেলো তনিমা। নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,
“আপনার কথার চক্করে আসল কথাটাই তো ভুলে গেছি। এখন আপনি যান। পরে মনে পড়লে না হয় ডেকে আনবো।”
শোভনের মেজাজ বিগড়ে গেলো। যেতে যেতে বিড়বিড় করে বললো,”হ্যাঁ আমি তো আপনার বাবার অফিসের কাম’লা যখন তখন শুধু ডাকবেন।”

শোভন যেতেই তনিমা মুচকি হাসলো।শোভন চেয়ারে এসে বসলো। নিঃশব্দে বললো,”সারাজীবন শুনে এলাম অফিসের পুরুষ বসরা তার মেয়ে অধস্তনদের দিকে নাকি নজর দেয় সারাক্ষণ বিরক্ত করে কিন্তু এখানে তো সব উল্টো ঘটছে! যত্তসব।”
দুপুরের ব্রেক দিতেই শোভন তার চেয়ার ছেড়ে উঠে নামাজ পড়তে চলে গেলো। অফিসে পুরুষ এবং নারীদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা আছে। নামাজ শেষ করে লাঞ্চ করে চেয়ারে এসে বসলো। মোবাইল হাতে নিতেই জ্যোতির কথা মনে পড়ল‌।

কন্টাক্টে গিয়ে জ্যোতির নাম্বারটির দিকে দৃষ্টি স্থির করে ভাবলো,”কল কী দিবো নাকি দিবো না?”
দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে লাগলো শোভন। শুকনো ঢুক গিললো। জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
“নিজের বউকে ফোন দিতে এত ভাবনা কিসের? বউয়ের খোঁজ নেওয়াও একটা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আর এই দায়িত্ব তো আমাকে পালন করতেই হবে।”

মন থেকে সব দ্বিধা ঝেরে ফেলে জ্যোতির নাম্বারে কল দিলো শোভন। কিন্তু কলটা রিসিভ হলো না। বাজতে বাজতেই কল কেটে গেলো। কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল তার। আবারো কল দিলো অথচ এবারও রিসিভ হলো না। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার পরও একই অবস্থা।

রান্না শেষে গোসল করে এসে নামাজ আদায় করেছে জ্যোতি। এখন জায়নামাজে বসে কোরআন তেলাওয়াত করছে। মোবাইল সাইলেন্ট করা। বিছানায় পড়ে আছে। এদিকে মুহূর্তেই শোভনের মনে নানান চিন্তা হানা দিলো। ‘জ্যোতি ঠিক আছে তো? কল ধরছে না কেন? কী হয়েছে?’কাউকে ফোন করে যে জানতে পারবে তারও উপায় নেই।

ব্রেক টাইম শেষ। যে যার যার মতো কাজ করতে বসে পড়ল। কিন্তু শোভন কিছুতেই কাজে মন দিতে পারছে না। স্ত্রীর চিন্তায় মশগুল হয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর উঠে গেলো শোভন। এই চিন্তা নিয়ে আর বসে থাকা যাচ্ছে না। ছুটি নিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে গেলো। বাড়ি থেকে অফিসের দূরত্ব পনের মিনিটের মতো হবে। প্রায়দিন ধীর পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরে সে কিন্তু আজ আর হাঁটতে ইচ্ছে হলো না। যত তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌঁছানো যাবে ততই শান্তি। একটা রিকশা থামিয়ে তাতে উঠে গেলো। কয়েক মিনিটেই পৌঁছে গেলো বাড়ির সামনে। রিকশা ভাড়া মিটিয়ে একপ্রকার দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠলো উপরে। কলিং বেল বাজানোর কথা ভুলেই গেলো চিন্তার চক্করে। জোরে জোরে দরজায় কড়াঘাত করতে লাগলো।

জ্যোতি সবে খেতে বসেছে। দরজার কড়াঘাতের শব্দে হাত ধুয়ে উঠে গেলো। এগিয়ে যেতে যেতে বললো,”কলিং বেল রেখে এভাবে দরজা ধাক্কাচ্ছে কে?”
লুকিং হোলে চোখ রেখে শোভনকে দেখে ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা চমকেও গেলো। সবেমাত্র সাড়ে তিনটা বাজে এখনি অফিস ছুটি? দরজা খুলে দিলো জ্যোতি। স্ত্রীকে দেখে ভেতরের উথাল পাতাল ঝড় থামলো। দুশ্চিন্তা কমলো। কিছু বলার জন্য জ্যোতি ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করতেই শোভন তাকে সেই সুযোগ না দিয়ে নিজেই পাল্টা প্রশ্ন করল,”কোথায় ছিলে তুমি?”

হঠাৎ এমন একটি প্রশ্নে আরো চমকে গেলো জ্যোতি। উত্তর দিলো,”ঘরেই তো ছিলাম।”
“তাহলে মোবাইলে কী হয়েছে? কল ধরছিলে না কেন?”
জ্যোতি ঘরে চলে গেলো। মোবাইল এনে ভালো করে দেখলো। স্ক্রীনে ২৭ টা মিসড কল ভেসে আছে। মিনমিনে স্বরে বললো,”নামাজ পড়ছিলাম। মোবাইল সাইলেন্ট ছিলো।”
শোভন আর প্রতিক্রিয়া করল না। ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,”মোবাইল সাইলেন্ট করে যেখানে সেখানে রেখে দেওয়ার জিনিস নয়। এমন ভুল যেনো আর কখনো না হয়।”

“আমি ফোন ধরিনি বলেই কী আপনি কাজ ফেলে রেখে চলে এসেছেন?”
পথিমধ্যে থেমে গেলো শোভন। উত্তেজনাও থেমে গেলো। অধীর আগ্রহে উত্তরের অপেক্ষা করছে জ্যোতি। একটু ভেবে শোভন বললো,”তোমার জন্য কেন আসতে যাবো? কাজ শেষ তাই চলে এসেছি।”
“এত বড়ো অফিসে কাজ শেষ হলে যখন তখন চলে আসা যায়?”

সাতরঙা প্রজাপতি পর্ব ৮

“সে কৈফিয়ত কী তোমায় দিবো নাকি? আমার উপর এসব জেরা একদম করতে আসবে না।”
আর দাঁড়ালো না। চুপচাপ ঘরে চলে গেলো শোভন। গোমড়া মুখে দাঁড়িয়ে জ্যোতি বললো,”যাহ এতে রেগে যাওয়ার কী আছে? বউকে নিয়ে চিন্তা হতেই পারে তা বলতে অসুবিধে কিসের?”

সাতরঙা প্রজাপতি পর্ব ১০