স্পর্শানুভূতি পর্ব ৩৩

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৩৩
writer:Nurzahan akter (allo)

একটা মেয়ে চাইলে যেমন সব কিছু গুছিয়ে নিতে পারে!তেমনি একটা মেয়ে চাইলে সবকিছু ভেঙে চুড়ে চূর্ণ -বিচূর্ণ করে দিতেও তাদের সময় লাগে না। সেটা হোক…….
…..যে কোন রিলেশন -সংসার-অথবা পরিবার……

রাসেল রেডি হয়ে ওর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো!রাসেল লেকের পাড়ে গিয়ে দেখে মিষ্টু সহ আরো কয়েকটা বাচ্চা গোল হয়ে মাঠের মাঝখানে ঘাসের উপর বসে আছে।মিষ্টু কিছু বলছে আর বাচ্চা গুলো খুব মনোযোগ সহকারে শুনছে!রাসেলের বাবা রাসেলকে দেখে! আর সবধানে বাসায় ফিনতে বলে উনি চলে গেল!রাসেলও বসে বসে মিষ্টুদের কাহিনী দেখছে!একটা সময় মিষ্টু রাসেলকে দেখে দৌড়ে রাসেলের কাছে এসে রাসেলের পকেটে হাত ঢুকিয়ে রুমাল নিয়ে চলে গেল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মিষ্টু বাচ্চাদের সাথে কানামাছি খেলছে আর হাসছে!রাসেল বসে বসে সেটা দেখছে! তারপর ওরা দুজনেই সব বাচ্চাদের সাথে ফুচকা আর আইসক্রিম সাথে পপকোন, হাওয়াই মিঠাই খেলো। আজকে ৫ দিন পর আবার মিষ্টুকে এত হাসি খুশি দেখলো রাসেল।মিষ্টুর দুষ্টুমি গুলোকে এ কয়েকদিন খুব মিস করছে রাসেল।ওরা আজকে অনেক মজা করলো দুজন মিলে তারপর সন্ধ্যায় রাসেল আর মিষ্টু বাসায় ফিরে গেল!রাসেল মিষ্টুকে বাসায় রেখে একটু বাইরে গেল ওর কিছু কাজ আছে তাই!মিষ্টু রাসেলের আম্মু আর রোজের জন্য কিছু খাবার এনেছে ওগুলো রান্না ঘরে মিষ্টু ফ্রেস হতে চলে গেল।

তারপর ফ্রেস হয়ে এসে দেখে! ওর আনা খাবার গুলো রাসেলের মা বসে বসে খাচ্ছে আর সিরিয়াল দেখছে।মিষ্টু এবার চুপিচুপি গিয়ে রিমোট টা নিয়ে চ্যানেল বদলে দিয়ে! একটা মুভি দেখতে শুরু করলো।মিষ্টুর মুখে শয়তানি হাসি ফুটে উঠেছে!মিষ্টু রাসেলের মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে উনি রাগী চোখে মিষ্টুর দিকে তাকিয়েই আছে।মিষ্টু তখন বলে…

মিষ্টুঃশাশু মা!একটা বুদ্ধি দেন তো।আপনার তো গাটে গাটে শয়তানি বুদ্ধি!আপনি এসব বুদ্ধি দিতে ভালো পারবেন আমি জানি..
শাশু মাঃএই মেয়ে ভদ্র ভাবে কথা বলো।
মিষ্টুঃভদ্র ভাবেই তো কথা বলছি শাশু মা!শাশু মা আপনাকে নাতি-নাতনী উপহার দিবো ভাবছি!কত ডজন নাতি-নাতনী পেলে আপনি খুশি হবে বলে তো।
শাশু মাঃতুমি যে অত্যন্ত অসভ্য একটা মেয়ে এটাই তার প্রমান!ফালতু মেয়ে একটা। রাসেল কি দেখে তোমাকে বিয়ে করছে কে জানে…??
মিষ্টুঃএই শাশু মা একদম বকবেন না!বকলে কিন্তু বাবাকে বলে দিবো আপনি কার সাথে যেন প্রেম করেন।আর আমাকে ফালতু আর অসভ্য বলার আগে নিজে কেমন সেটা ভেবে তারপর অন্যকে ফালতু, অসভ্য বলবেন।আর আপনি যে ফোনে গুজ গুজ করে কাকে আলাভু আলাভু করেন,সাথে চুমু চাট্টিও দেন।তা এসব কোন ধরনের সভ্যতার কাজ শুনি..
শাশু মাঃমা মা নে কি?কি বলছো এসব?আমি কখন এগুলো করছি?
মিষ্টুঃআর যাকে আলাভু আলাভু করেন!আপনার সেই প্রেমিক কে বলে দিবেন! যে আপনি আর উনাকে এক টাকাও দিতে পারবেন না।আমার বর আর বাবা এত কষ্ট করে টাকা রোজগার করবে আর আপনি সেটা আপনার প্রেমিককে গিয়ে বিলাবেন তা তো আমি হতে দিবো না। আমাকে এত কাঁচা খেলোয়াড় ভাববেন না শাশু মা। আমার ফোনে আপনার বেশ কিছু প্রেম আলাপ! আমি কালেক্ট করে রেখেছি..বাবাকে প্রমান দিতে হবে তো তাই না।
শাশু মাঃ এএ এক একদম মিথ্যা কথা বলবে না..আমি এসব কিছু করি না।
মিষ্টুঃওকে আজকে বাবার সামনেই সব প্রমান দিলেই তো বুঝবেন মিষ্টু মিথ্যা বলে না?তখন আবার বলবেন না তো যে আমি ভালা না!আমি কিন্তু তখন উওরে বলবো আমি তো ভালা না ভালা লইয়া থাকো।?
শাশু মাঃএই মেয়ে তুমি কিন্তু বেশি বেশি করছো!একদম আমার পেছনে লাগতে আসবে না।
মিষ্টুঃআমার সাথে বাজি ধরছেন ভুলে গেলেন নাকি শাশু মা!আর আপনার সেই বুড়ো হাবড়া প্রেমিকের সাথে তারাতারি ব্রেকআপ করেন! আর আমার বাবার সাথে সংসারে মনোযোগ দেন! কারন বাবা যথেষ্ট ভালো মানুষ। আর নয়তো একটা সময় দেখবেন আপনি এ কুলও হারাবেন ওকুলও হারাবেন।
শাশু মাঃ ইয়ে মা মা নে..
মিষ্টুঃশাশু মা আপনার সেই বুইড়া হাবড়া প্রেমিকটাকে আপনি ছেড়ে দিলে! হয়তো উনি কয়েকদিন আরমান আলিফের আর আমি তো ভালা না ভালা লইয়া থাইকো গানটা হয়তো শুনবে! তারপর ঠিকই আপনাকে ভুলে যাবে!আপনি একদম চাপ নিবেন না। আর আমি আছি তো..
শাশু মাঃ প্লিজ তুমি কাউকে বলো না!আমি ওর সাথে ব্রেকআপ করে ফেলবো।
মিষ্টুঃশাশু মা লোকটা আপনাকে না আপনার টাকাকে ভালবাসো তাই বলছি সময় থাকতে ওই রাস্তা থেকে সরে আসুন।রাসেল অথবা বাবা জানলে কিন্তু ওরা আপনার মুখের দিকে ফিরেও তাকাবে না। রাসেল আর রোজ এখন বড় হয়েছে ওরা যদি এসব জানে ওরা কত লজ্জা পাবে একবার ভেবে দেখছেন।রাসেলকে ভালবাসেন না বাট রোজের কোন বন্ধুরা যদি জানে তাহলে রোজ কতটা লজ্জাতে পড়বে একবার ভেবে দেখবেন। আর দিন- রাত ক্লাবে না ঘুরে নিজের হাজবেন্ডকে আর ছেলে মেয়েদের সময় দেন! আর একটা কথা ভুলে যাবেন না আপনি এখন কারো মা আর কারো ওয়াইফ! তাই এসব বেহায়াপনা ছেড়ে দেন।কারন এখন আপনাকে এসব মানায় না…

মিষ্টু আজকে বিকালে ঘুম থেকে উঠে যখন নিচে নামছিলো তখন ওর শাশু মায়ের এসব কথা শুনে। আর যখন ওর শাশু মা ওয়াশরুমে যায় তখন !ওদের কথার রেকর্ড কিছু কালেক্ট করে নেয় ওর ফোনে!মিষ্টু একটাকেই এটাকেই ওর একটা অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করবে!

রাত ৯ টাতে সবাই খাবার টেবিলে হাজির!রাসেল কাউকে তোয়াক্কা না করে একটা প্লেটে ভাত নিয়ে মিষ্টুর মুখে খাবার তুলে দিতে যাবে !ঠিক তখনই মিষ্টু আগে রাসেলের বাবার সামনে হা করে!আর বাবাও বুঝতে পেরে মিষ্টুর মুখে খাবার তুলে দেয়।বাবা যখন আবার মিষ্টুর মুখে খাবার দিতে যাবে তখন, মিষ্টু বাবার হাত টেনে রোজের মুখের সামনে ধরে।রোজ চোখ ছলছল করে একবার মিষ্টুর আর আরেকবার বাবার দিকে তাকিয়ে ভাতটুকু খেয়ে নিলো।মিষ্টু বিশ্বজয় করা হাসি দিলো….মিষ্টু রোজের দিকে তাকিয়ে বললো।

মিষ্টুঃরোজ আমরা মেয়েরা চারটা জায়গাতে বড্ড বেশি দূবল! বাবা, মা , ভাই, বর, এই চারজনকে কারো সাথে ভাগ করতে চাই না।কারন প্রতিটা মেয়ের জীবনে এই চারজনের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।তবে আজকে থেকে আমি না তুমিও বাবার হাতে খাবে কেমন।
রোজঃহুমম!
মিষ্টুঃ বাবা!
বাবাঃ বল মা! আমি শুনছি
মিষ্টুঃদেখো আমরা তোমার হাতে খাচ্ছি তাই! তোমার বউও তোমার হাতে খাবে তাই মনে হয়ে কেমন লোভাতুর দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
শাশু মাঃএই মেয়ে এসব কি বলো?
বাবাঃএভাবে তাকানো কি আছে?আমাকে বললেই তো হয়। আমি খাইয়ে দিতাম তাই বলে আমার মেয়েদের খাবারে লোভ দিবে। হা হা হা
শাশু মাঃ (এসব ঢং দেখলে শরীর জলে যায়!আমরা এত সুখের দরকার পড়বে না। আমার তো লাগবে টাকা আর এই টাকার জন্যই আমি এখনো এখানে পড়ে আছি।কে কি করলো এসব আমি এত দিন দেখি নি। আর দেখার প্রয়োজনও নেই…)

বাকিরা সবাই হাসছে!মিষ্টু এবার রাসেলের পাশে গিয়ে বসে আর হা করে।রাসেল মিষ্টুকে খাওয়াতে থাকে!রাসেলের বাবা রাসেলের দিকে তাকিয়ে বলে।
বাবাঃআমার ছেলেটা এত রোমান্টিক এটা আমার
আগে জানা ছিলো না।হা হা
রাসেলঃবাবা আবার মজা নিচেছা তুমি..আসলে মিষ্টু একা একা হাতেই খেতে পারে! বাট ও একা খেলে ওর পেট ভরে না।এজন্য আমি..
মিষ্টুঃ রোমান্টিক তাও আবার তোমার ছেলে!বাবা হাসালে আমাকে! দাঁড়াও আগে হেসে নেয় কেমন।আর
তোমার ছেলে একটা পাকা ঢেঁড়স একটা।হা হা হা
বাবাঃএই দুষ্টু মেয়ে! আমার ছেলেকে শুধু শুধু ঢেঁড়স বলবি না।চাইলে গাধা,গরু,রামছাগল বলতে পারিস।হা হা হা
রাসেলঃ মজা নাও আমারও আসবে!
(সময় আসুক আর তোমাকে হাতের কাছে পায় তারপর তোমাকে বোঝাবো আমি কেমন! এখন আমি আর কিছু আর বলবো না মিষ্টু রাণী।কথায় না কাজে দেখাবো আমি। মনে মনে)
মিষ্টুঃ ওকে ড্যাডু
রোজঃএটা কেমন ডাক?
মিষ্টুঃএটা হচ্ছে ন্যাকামির শেষ পযায়ে যে ডাকের অবস্থান এটা হচ্ছে সেই ডাক হা হা হা
রাসেলঃ হা হা হা! হুম বুঝেছি এবার হা করো। (মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে)
মিষ্টুঃহুমম (মুখে খাবার নিয়ে)

আজকে অনেকদিন পর খাবারে টেবিলে এত হাসাহাসি হলো!রোজ মিষ্টুকে কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না।সবাই যে যার রুমে চলে গেল!তারপর দুজনেই পাশাপাশি বেডে শুয়ে আছে বাট কারো মুখে কোন কথা নেই।রাসেল মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে একটা ধন্যবাদ দিলো! বাট মিষ্টু কিছু না বলে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিলো।রাসেল দুপুরে অনেকটা সময় ঘুমিয়েছে তাই ওর আর ঘুম পাচ্ছে না বাট মিষ্টু ঘুমিয়ে গেছে।রাসেল যখন দেখলো মিষ্টু ঘুমিয়ে গেছে তখন মিষ্টুকে ওর বাহুডোরে জড়িয়ে নিলো। আর মিষ্টুও বিড়াল ছানার মত চুপটি করে রাসেলের বুকে ঘুমিয়ে পড়লো!

আসলে মিষ্টু চোখ বন্ধ করে ছিলো কারন মিষ্টু ঘুমিয়ে গেলে রাসেল কি করে সেটা দেখার জন্য মিষ্টু জেগে ছিলো।মিষ্টু মুচকি হেসে রাসেলকে জড়িয়ে ধরলো!আর রাসেল মনে করছে মিষ্টু ঘুমাচ্ছে তাই মিষ্টুর কপালে আদর দিয়ে বলছে..

রাসেলঃএই পাগলী আমি কিন্তু তোমাকে ভালবাসি ভালবাসি করতে পারবো না।সব গল্পে দেখি নায়ক -নায়িকা ভালবাসি না বললে তাদের মিলই হয় না।আমি কিন্তু পারবো না ভালবাসি ভালবাসি করতে।আর মুখে বললেই বুঝি ভালবাসা যায়!বিয়ে করছি,একসাথে থাকি,এক বেডে থাকি, এত কেয়ার করি,এত ভালবাসি তাও যদি মুখে বলতে হয় ভালবাসি এটা তাহলে কেমন ভালবাসা শুনি।এই পাগলী তোকে যে বড্ড বেশি ভালবাসি রে তুই বুঝে নিস কেমন।তবে আগেও তোমাকে বাসতাম তবে কবুল বলার পর থেকে আমি তোমাকে বেশি ভালবেসে ফেলছি মনে হয়।জানিনা কবুল এই তিনটা শব্দের মাঝে কি এমন জাদু আছে?একটা কথা মনে রাখিস রে পাগলী….
মিষ্টু ছাড়া রাসেল অচল…

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৩২

মিষ্টুঃওরে চুন্না! তোমার পেটে পেটে এত।ওকে ওকে এবার থেকে এমন থেরাপি দিবো ভালবাসি বলতেও বাধ্য হবে।কারন আমি তোমার মুখ থেকেই ভালবাসি কথাটা শুনবো! কারন ভালবাসার মানুষটার মুখে ভালবাসি কথাটা শুনেও যে মনের ভেতর যে স্পর্শানুভূতিটা কেমন হয় তা বোঝানো যাবে না।ওকে ওকে রাসেল বেটুয়া সরি সরি রাসেল জানু এবার রেডি থাকবে আমাকে সরাসরি ভালবাসি কথাটা বলার জন্য ।তবে সামনা সামনি ভালবাসি না বলো এখন তো শুনে নিলাম কতটা ভালবাসো হা হা হা।এটাই বা কম কিসের শুনি… (মনে মনে)

এভাবে ওদের দুষ্টুমি, আর খুনশুটি আর ঝগড়াঝাটি করে কেটে যায় ১ টা মাস…
একদিন সকালে…
রাসেলের লোক রাসেলকে জানায় রাবেয়া খালাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রায় ১৫ দিন ধরে উনি নিখোঁজ
আর এটা মে বি মুহিতের কাজ….

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৩৪