স্বামী পর্ব ৫

স্বামী পর্ব ৫
লেখকঃপারভেজ ইসলাম

হসপিটালের বেডের উপর শুয়ে আছি আমি। হেচকি তুলে তুলে কানছি আর অনরবত চোঁখের পানি ফেলেই চলেছি।চাইতেও এই চোঁখের পানি থামানো সম্ভব না।খুব রাগ হচ্ছে নিজের উপর।সকাল থেকে মনের মধ্যে এতো ভয় বিরাজ করা সত্ত্বেও কেনো যে টুল বেয়ে উঠলাম ঘড়ির ব্যাটারি চেঞ্জ করার জন্য।আদৃত বারে বার বলেছিল যে কোনো কাজে সার্ভেন্ট ডাকতে।সতর্ক করেছিল তাদের বাসায় থাকি,,তাদের উপর বোঝা,,এসব ফাউল কথা যেন আর মাথায় না আনি।আমি কেনো যে তার কোনো কথা শুনলাম নাহ।

তখন টুল থেকে পা পিছলে পড়ে যাই।পড়ার সাথে সাথে পেটে ব্যথা অনুভব করার সাথে বুকের মধ্যে একরাশ ভয় এসে জোড়ো হয়।দাদি শব্দ পেয়ে জলদি এসে সার্ভেন্টদের সাহায্যে আমাকে হসপিটালে নেন।ভয়ে,ব্যথায় আমার অবস্থা ছিলো করুণ।ডাক্তার দ্রুত সব পরীক্ষা করান।খুব ভয়ে ছিলাম।বাচ্চাটার কিছু হয়ে গেলে আমি মনে মনে ভেবেই নিয়েছিলাম আমার পক্ষে আর বেঁচে থাকা সম্ভব নই।ডাক্তার চিকিৎসা শুরু করে।রিপোর্ট এসেছে।ডাক্তার জানালো যে যেহেতু টুলটা উচু ছিলো না আর আমিও বেশি একটা উপর থেকে পড়েনি তাই তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।কিন্তু ভয় পাওয়ার জন্যবাচ্চার উপর একটু ইফেক্ট পড়তে পারে।এই শুনে ভয় আরো বেরেই চলেছে যদিও ডাক্তার বলেছেন তেমন কোনো সমস্যা হবে না।আমার শরীর বেশ দুর্বল আর যেহেতু এতো ভয় পেয়েছি তাই কয়দিন হসপিটালে থাকতে হবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

দাদি আমার পাশে বসে আসেন।আমি ভেবেছিলাম তিনি হয়তবা আমার উপর রাগ করবেন।অনেক বকা দিবেন।কিন্তু উনি আমার পাশে বসে আমার মাথায় আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।হঠাৎ করে দাদি বলে উঠলেনঃথাক আর কানতে হবে না।ডাক্তার তো বলেছেন যে বাচ্চার তেমন কিছু হবে না।আর যা হয় সব আল্লাহর ইচ্ছায়।
আমিঃদাদি অনেক বড় কিছু হয়ে গেলে তখন কি হতো?(কানতে কানতে)
দাদিঃযেহেতু কিছু হয়নি আর একথা মুখেও এনো না।আর এখন থেকে সাবধানে চলাফেরা করবে নইলে ভাগ্য সবসময় এমন সহায় হবে না।দাদুভাই এর কথা একটু কানে নিবে।

আমিঃআমি তো বুঝিনি দাদি।কিভাবে যে পা পিছল কাটল।
এরই মধ্যে কেউ হুড়মুড়িয়ে কেবিনে ঢুকলেন।আমি আর দাদি সেইদিকে তাকাতেই দেখি আদৃত।ঘেমে ভিজে যাওয়ার ফলাফলস্বরূপ পড়নে থাকা আকাশি শার্টটাও ভিজে গায়ের সাথে এটে আছে।চোঁখমুখে একটা আশনংকা,,ভয়মিশ্রিত ভাবটা আমি প্রথমবার তার দিকে তাকানোতেই আমার নজরে পড়েছে।সাথে এটাও বুঝতে পেরেছি যে তিনি অসম্ভব রেগেও আছেন।সেইদিনের সেই লালরঙা ভাবটা আজকেও আছে তার চেয়ারায়।

তিনি কিছুটা উচু গলায় দাদিকে বললেনঃদাদি জান্নাতের সাথে একান্তে কিছু কথা বলতে চাই।
দাদিঃদাদুভাই শোন ও এমনি অসুস্থ তার উপর ভয় পেয়েছে এখন কিছু বলিস না।সুস্থ হোক
আদৃতঃদাদি প্লিজ ৫ টা মিনিট দেও।(হাত মুষ্টিবদ্ধ করে)
দাদি আর কিছু না বলে আমার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে গেলেন।
আমি চুপচাপ চোঁখের পানি ফেলাতে লাগলে উনি গর্জে বলে উঠেনঃএই ন্যাকা কান্না একদম কানবেন না।এখন মিথ্যা চোঁখের জল ফেলিয়ে কিহ প্রমাণ করতে চান?যে আপনি বাচ্চার অনেক চিন্তা করেন কেয়ার করেন?
আমি উনার কথাই বেশ অবাক হই।এসব কি ধরনের কথা।আমার বাচ্চাকে নিয়ে অবশ্যই আমি কেয়ার করব।যা হয়েছে ভুলবশত।
আমিঃআপনি কি ধরনের কথা বলছেন আদৃত?(উঠে বসে)

আদৃতঃসঠিক কথা বলছি।আপনাকে যেমন ভেবেছি আপনি মোটেও তেমন না।সেল্ফিস আপনি।আপনি আর বাচ্চা যেন সুস্থ থাকেন তাই আমি নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছি।কিন্তু আপনি আপনার আত্মসম্মান বোধকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে,নিজের কাজ নিজে করতে গিয়ে উফফ আরেকটুর জন্য কি।হিয়ে যেতো জানেন?আসলে যারা কম বুঝে তাদের তাও কোনোনা কোনো ভাবে কষ্ট করে হলেও বোঝানো যেতো কিন্তু আপনার মতো বেশি বোঝে যারা কোনো তাদের যতই বোঝাই না কেন তারাই ঠিক।এতো জেদ কেনো আপনার জান্নাত?

উনার কথা গুলো সব সত্যি।সত্যিই আমি বেশি বুঝি।জেদ কিন্তু জেদ করে কিছুই করিনি।কাউকে বিরক্ত করতে চাইনা বলে এমন করেছি।কিন্তু তাকে এসব বলার সাহস নেই আমার।এরই মধ্যে আদৃতের এতো রাগারাগি আর চিল্লাচিল্লি শুনে তাড়াতাড়ি একজন নার্স রুমে আসলেন।নার্স কিছু বলার আগে উনি কিছু না বলেই চলে গেলেন।দেখলাম দাদিও গেলেন তার পিছন পিছন।নার্স এসে আমায় বলল,
নার্সঃঠিক আছেন?
আমিঃজ্বি।কিন্তু বাবু?
নার্সঃডাক্তার তো বলেছে সিরিয়াস কিছু না তাহলে কেনো এতো চিন্তা করছেন?
আমিঃমনের মধ্যে ভয় করে যে।

নার্সঃআমারো মন চাচ্ছে আপনাকে বকি।কিন্তু আপনার স্বামী যে পরিমাণ বকা দিলো।তা শুনে তো আমি নিজেই ভয় পেয়েছি।কিন্তু অনেক লাকি আপনি।আপনার স্বামী যেভাবে ছুটে আসলেন উনায় দেখে মনে হচ্ছিলো যেনো উনার নিজেরি কিছু হয়েছে।অনেক বেশি ভালোবাসে আপনাকে আর বাচ্চাকে।
আমি কিছু বললাম না।বুঝেছি উনি আদৃতকে আমার স্বামী ভেবেছেন।উনাকে কি বলব যে আদৃত আমার স্বামী না।স্বামী কেন উনার সাথে তো কোনো সম্পর্ক নেই আমার।আমার স্বামী বেইমানি করেছে,ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে তাই উনি আমায় আশ্রয় দিয়েছেন।উনার প্রথম ভালোবাসা ছিলাম কিন্তু আমি তার ভালোবাসাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।নার্স বললেন,
নার্সঃএতো ভেবেন না রাগ করে থাকতে পারবে না।ভেঙে যাবে রাগ।আপনি মেডিসিন নিয়ে রেস্ট নিন।
নার্স মেডিসিন নিয়ে চলে গেলেন।এরই মধ্যে দেখি দাদি ফিরে এসেছেন।

আজকে ৭ টা দিন পার হয়ে গেল।এই ৭ টা দিন আমি এই হাসপাতালের চার দেয়ালের মাঝেই বন্দি ছিলাম।এখন আর হাসপাতালের এই কক্ষটাকে আমার ভালো লাগে না।নিজেকে এক বদ্ধ পাখি মনে হয় আর এই কক্ষটাকে একটা সোনার খাঁচা।সোনার খাঁচা বললাম কারণ কক্ষটা যে কোনো দিক দিয়ে কম তা নয়।আদৃত সব থেকে ভালো কক্ষে আমায় রেখেছেন।কিন্তু এইখানে সব থাকলে নেই স্বাধীনতা নামক জিনিসটি।নিজেকে ডাক্তার,নার্স আর দাদির হাতের পুতুল মনে হয়।যেভাবে তারা চাই আমায় ঠিক সেইভাবেই থাকতে হয়।না পারি মন মতো হাটাচলা করতে,না পারি জালনার পাশে দাড়িয়ে খোলা আকাশটাকে দেখতে।এই জন্যই এই সুন্দর কেবিনটা আমার কাছে একটা তুচ্ছ স্থান মাত্র।মন শুধু এই বলেই জ্বালিয়ে মারছে যে কবে ফিরবি বাসায়?কবে আবার নিঃশ্বাস নিবি খোলা বাতাসে?শাস্তি পাচ্ছি আমি নিজের বোকামির জন্য।

আদৃত তো ভুলেই গিয়েছেন আমায়।আমাকে একবার দেখা তো দূরে থাক ফোন পর্যন্ত দেননি দাদির ফোনে।দাদিকে রোজ জিজ্ঞেস করি যে আদৃত কি আমার খোঁজ নেন?আমি কেমন আছি ভুল করে হলেও একবার জিজ্ঞেস করেন?দাদি মুখটা কাচুমুচু করে রেখে বলেন উনি নাকি দাদির সাথে প্রয়োজনের বেশি কথায় বলেন না।দাদির উপর রাগ করার কি হলো বুঝিনা।

খাটের উপর শুয়ে শুয়ে বা হাতের আঙুলের দিয়ে চুল নিয়ে খেলা করছি।সারাদিন এই কাজটায় করি।অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।এরই মধ্যে নার্স আসলেন।এই নার্স মেয়েটা বেশ চটপটে আর ভালো।একটা ছেলের সাথে প্রেম করে।সেই প্রেমিকের কথা আর তাদের প্রেমের কাহিনী রোজ সন্ধ্যায় এসে আমায় বলে।বেশ ভালোই লাগে।কিন্তু আবার হঠাৎ হঠাৎ রায়হানের কথা মাথায় আসতেই বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠে।মেয়েটা এসে আমায় বললোঃআমাকে রেখে তো চলে যাচ্ছেন আজকে?আমার তো আপনাকে অনেক মনে পরবে।
আমি তার কথার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কিছুই বুঝে উঠতে সক্ষম হয়নি।অগত্যা জিজ্ঞেস করে বসলামঃকোথায় যাবো আমি?আমায় কি অন্য কোনো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে।

নার্সঃনা ডাক্তার আপনাকে রিলিজ দিয়ে দিয়েছেন আজকে।কিন্তু আপনাকে কড়া ভাষায় বলতে বলেছেন এমন কোনো ভুল বা বোকামি দ্বিতীয়বার যেন আবার না করেন।আর খাওয়া দাওয়া,ঘুম সব ঠিক মতো করবেন।কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করবেন না।আর শুনেন মাঝে মাঝে মাথা ঘুরতে পারে আপনার যেমন হুটহাট দাঁড়ালে বা ঘুম থেকে উঠলে বাহ এমনিও তাই সাবধান।আর শরীলে রক্ত হয় এমন খাবার খেতে বলেছে।ভালো না লাগলেও খেতে হবে।
রিলিজ দেওয়ার কথা শুনে খুশিতে আমার মনের মধ্যে লাড্ডু ফুটছে।দুর্বল না হলে এখনি লাফ দিয়ে নেমে উনার সাথে নাচতে শুরু করে দিতাম।কিন্তু উনি আবার বললেন,

নার্সঃএতো খুশি হয়েন না বেশি দুর্বল হয়ে পড়লে আবার ভর্তি হতে হবে।
আমিঃসেটা তখন দেখা যাবে।আমাকে এতো সুন্দর নিউজটা দেওয়ার জন্য অনেকগুলো ধন্যবাদ।কিন্তু আপনাকে অনেক মনে পরবে।
নার্সঃসে তো আমারো মনে পড়বে।
আমিঃআপনি মাঝে মাঝে না হয় দেখতে যেয়েন আমাকে যে আমি ডাক্তারের কথা ঠিক মতো শুনছি নাকি।
নার্সঃতা না হয় যাবো।

উনি আমার হাতের ক্যানেলা খুলে দিলেন।খুলে দেওয়ার সাথে সাথে সামান্য রক্ত বেরিয়ে আসে।উনি তুলো দিয়ে রক্ত মুছে সেই স্থানটা আস্তে কিছুক্ষণ চেপে ধরে রাখেন।কিছুটা ব্যথা লাগলেও একটু পর রক্ত বন্ধ হয়ে আসে।উনি একটা লিকোপ্লাস্ট লাগিয়ে দিলেন।
আমিঃদাদি কোথায় জানেন?
নার্সঃহসপিটালের বিল দিতে গিয়েছেন।
আমিঃআচ্ছা।

আপনাদের তো নার্স মেয়েটার নামটাই বললাম না।মেয়েটার নাম জোসনা।জোসনা আমার সাথে কথা বলছে আর তার কাজ করছে।আমার পক্ষে আর শুয়ে থাকা সম্ভব না।তাই আমি উঠে দাড়ালাম।কিন্তু জোসনার কথা সত্যি প্রমাণ করতে আমার মাথাটা সত্যিই চক্ক্র দিয়ে উঠলো।আমি তাড়াতাড়ি বিছানায় বসে পড়ি।তখনই কেউ দরজার কাছ থেকে বলে উঠেঃআরে আরে আরে!কি করছেন টা কি?নার্স এতোক্ষণ ধরে বুঝালো তাও কোনো কথা আপনার কানে গেল না।

আমি আমার কল্পানাতেও আনিনি যে আমি হাসপাতালে আদৃতকে দেখবো।আমার তো এমন অবস্থা যেন আমি আমাবস্যার রাতে চাঁদ দেখে ফেলেছি।আমি কি এই দিন দুপুরে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি?বুঝে উঠতে পারছি না।এবার আদৃত এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃআরে আপনি কি ঠিক আছেন?
আমি তাও তাকিয়েই আছি।আদৃত দাঁড়িয়ে আমার সামনেই ভাবতেই কেমন যেনো লাগছে।এবার জোসনা এসে ঝাকিয়ে বললোঃআরে উনি কিছু জিজ্ঞেস করছেন।কই হারালেন আপনি?
আমার এবার হুশ আসলো।আমি বললামঃআপনি এইখানে কখন এলেন আবার।
জোসনাঃআরে উনি তো রোজ এইখানে এসে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকেন।

আমি এবার উনার দিকে চোঁখ বড় বড় তাকিয়ে বললামঃকিহহ!আপনি লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখতে আসতেন।
আমি আদৃতের দিকে তাকিয়ে দেখি একহাত পকেটে রেখে মুখিটা উপরের দিকে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কোনো কথা নাই আর তার মুখে।তারমানে আমাকে এতোদিন দাদি মিথ্যা বলেছেন।নিশ্চয়ই এই লোকের কথায়।বাট আদৃত রেগে নেই ভাবতেই কেমন যেন ভালো লাগা কাজ করছে।আমি বেজাই খুশি।খুশি হলে আবার আমার মাথার কোনো ঠিক থাকে না?।হুট করে উঠে দাঁড়িয়ে টুস করে আদৃতকে জড়িয়ে ধরলাম।

আমিঃথাংকু!থাংকু! আমার উপর রাগ না করে থাকার জন্য।
উনি তো জমে বরফ হয়ে গিয়েছেন।আকস্মিক আমার এমন কাজে উনি নড়াচড়া বন্ধ করে দিয়ে স্ট্যাচু অব লিবার্টিতে পরিণত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।জোসনা তাড়াতাড়ি উহুম উহুম করে কাশি দেই।এতে করে খুশি আর ঘোরের গ্রহ থেকে আমি আবার আমার বাসস্থান পৃথিবী নামক গ্রহের,এশিয়া নামক মহাদেশের মধ্যের দেশ বাংলাদেশের ঢাকায় যে হসপিটালে ছিলাম সেইখানে পৌঁছে আদৃতকে ছেড়ে দিয়ে মাথা নিচু করে বেড ঘেষে দাড়ালাম।আদৃত অফিসে যাচ্ছি বলে চলে গেলেন।লজ্জায় নাক,মাথা,চুল,নখ সব কাটা যাচ্ছে।কি করলাম আমি এ?।এই জন্যই বলে ভাবিয়া করিও কাজ,করিয়া ভাবিও না।কিন্তু সর্ব্দা অঘটন ঘটানোর পরেই এই প্রবাদ বাক্য আমার মনে পড়ে।তাকিয়ে দেখি রিমি হাসছে।আমি আবার চুপচাপ বসে পড়লাম।

নিজের রুমে সরি আদৃতরা যেই রুমে থাকতে দিয়েছে সেই রুমে খাটের উপর বসে বসে অতীতের বিচরণে নিজেকে ব্যস্ত করে ফেলেছি।আগে একদিন আমায় না দেখলে রায়হানের নাকি রাতে ঠিক মতো ঘুম হতো না।আমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর সে আমার দিকে তাকিয়েই থাকত।ঘুমের মধ্যে যার কিছুটা আভাস আমি পেতাম। কিন্তু এখন আমি নেই বলে হয়তবা তার ঘুমটা ভালো হয়।সে এখন কই থাকে?কি করে?খুব জানতে চাই কিন্তু তখনি মন বলে ওঠে সে যেখানেই থাকবে ভালো থাকবে।বাসা থেকে তোকে বের করে দেওয়া হয়েছিল তাকে না।তার কথা স্মরণে এনে নিজেকেই নিজের কাছে অপমান করাটা নেহাত বোকামি।তাই আমি এসব চিন্তাকে মন থেকে বাদ দিলাম।আজকে যে কাজ করেছি তার পর কিভাবে যাব আদৃতের সামনে।যাব কিন্তু কথা বলব না।

রাতে আমি ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছি।দাদি এসে খাবার দিয়ে গিয়েছেন।তাই আর আমার রুম থেকে বের হওয়া লাগেনি।এখন রাত ১ঃ৫৬।কিন্তু আমার চোঁখে ঘুম নামক কোনো কিছুই নেই।অসস্তি লাগছে আদৃতের সাথে সব মিটমাট না করা পর্যন্ত।তাকে বলতে হবে যে আমি মানুষটাই এমন।জালানার পাশে দাঁড়িয়ে পর্দা গুলোকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিলাম।শান্তি লাগছে না তাও।আমার রুমের সাথে কোনো বেলকনি নেই।কিন্তু আলাদা খোলা একটা বেলকনি আছে এই বাড়িতে।এই রাতে কেউ জেগেও নেই।আমি তাই রুমের দরজাটা আস্তে করে খুললাম।খুলে ধীর পায়ে বেলকনির দিকে এগোচ্ছি।

এমন ভাবে পা ফেলছি মনে হচ্ছে আরেকটু জোরে পা ফেললে ফ্লোর যেন ব্যথা পাবে।আদৃতের রুমের গেট বন্ধ।বেলকনির কাছে এসে দেখি দরজা দেওয়া।দে তো দে উপরের ছিটকানি দিয়ে রেখে দিয়েছি।হাত বাড়ালাম সেম প্রব নাগাল পাই না।কিন্তু এবার স্বপ্নেও দূর দূর উঁচু হয়ে দরজা খোলার কথা ভাবাও পাপ।তাই আর চেষ্টা বাদ দিয়ে যেই ঘুরব সেই দেখি পিছন থেকে হাত এসে দরজার ছিটকানি খুলে দিল।আমি জলদি করে তাকিয়ে দেখি সাদা পাঞ্জাবি,চোঁখে চশমা পরিহিত আদৃত দাঁড়িয়ে।মন চাচ্ছে দৌড়ে পালাতে।কিন্তু পাদ্বয়কে যেন ফ্লোর নিজের সাথে আঠা দিয়ে নিজের সাথে এটে রেখেছে।আমি কাপা কাঁপা কণ্ঠে উনাকে বললাম,

আমিঃআপনি এখনো ঘুমোননি?
আদৃতঃআপনি এতো রাতে এইখানে?রুমের মধ্যে অসস্তি লাগছিল নিশ্চয়ই? (গেট খুলতে খুলতে)
আমিঃজ্বি আসলে আমি প্রকৃতি প্রেমি।রুমের মধ্যে বা বদ্ধ স্থানে থাকতে পারিনা।
উনি আমাকে ইশারায় বেলকনিতে যেতে বললেন।আমিও পা বাড়ালাম উনিও পা বাড়ালেন।আমি রেলিং এর সাথে ঘেঁষে দাড়ালে উনি বলে উঠলেন,

আদৃতঃআরে আরে সড়ে এসে দাড়ান।আপনার দেখি বুদ্ধি বাচ্চাদের মতো।এই বুদ্ধি নিয়ে একা থাকবেন কি ভাবে?
আমিঃআমার যথেষ্ট বুদ্ধি বুঝেছেন।
আদৃতঃবুদ্ধি বলতে বোঝাই আইকিউ।আর বেশিরভাগ সবার আইকিউ একই।কিন্তু শুধু বুদ্ধি থাকলেই হয় না।কখন কিভাবে কাজে লাগাতে হবে সেটা জানতে হয়।সঠিক সময়ে বুদ্ধি খাটিয়ে সঠিক ডিসিশন নিতে হয়।যেটা সবাই পারে না।যারা পারে তারাই সফল হয়।
বাহ এই লোক এতো কিছু কিভাবে বলে?
আমিঃআপনি যে আমায় চিন্তাবিদ বলেছিলেন কিন্তু আমার তো মনে হয় আপনি একজন চিন্তাবিদ।কতো সুন্দর সুন্দর উত্তর দেন।
আদৃতঃচিন্তা থেকে না অভিজ্ঞতা থেকে বললাম।
আমিঃকেমন অভিজ্ঞতা জানতে পারি?

স্বামী পর্ব ৪

আদৃতঃদেখুন আমি আর আমার দুইবন্ধু একসাথে বিজনেস স্টার্ট করি।এরই মধ্যে একজন জানেন সাকশেসই হয়নি।সে এখন চাকুরী করে।সে ব্যর্থ ছিল কারণ সে বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে পারিনি।আমি সাকসেশফুল বাট তৃতীয় জন আমার থেকেও বেশি বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে জানে।বুঝেছেন আমার কথা?
আমিঃহে কথা একদম ঠিক।আচ্ছা আপনার কি মনে হয় আমি কি আমার বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে পারি?
আরহানঃনা আপনার বুদ্ধিকে আপনি কাজে লাগাতে পারেন না।
আমিঃকিভাবে বুঝলেন?

আদৃতঃদেখেন আপনি যদি বুদ্ধি খাটিয়ে ভাবতেন তাহলে আপনি রায়হানের থেকেও বেশি ভালো কিছু করতে চাইতেন।কিন্তু আপনি চান চাকুরি করতে।কিন্তু চাকুরি যদি বেশি ভালো মানের নাহ হয় তাহলে?তাহলে কিহ রায়হান আপনার যোগ্যতা বুঝবে?নাহ বুঝবে না।আপনাকে নিজেকে প্রমাণ করতে হলে আরো বুদ্ধি দিয়ে ভাবতে হবে।
আমিঃআপনার তো অনেক বুদ্ধি আপনিই বলে দেন।
রায়হানকে যোগ্যতা প্রমাণ করতে আপনার বিশেষ কোনো গুণ আপনার অনেক সাহায্য করতে পারে।

আমিঃযেমন?
আদৃতঃএটা আমি কিভাবে বলব।আপনিও খুঁজে নিয়েন আপনার গুন।আর একটা কথা।
আমিঃকি?
আদৃতঃআমাকে আজকে যেভাবে জড়িয়ে ধরলেন খুশিতে অন্য কাউকে আর জড়িয়ে ধরবেন না।আপনি যে অনেক আবেগী হয়ে পড়েন মাঝে মাঝে খুশিতে সে বুঝে ফেলবে।
আমি উনার কথা শুনে চোঁখ বড় বড় করে তাকালাম উনার দিকে।

স্বামী পর্ব ৬