স্বামী পর্ব ৭

স্বামী পর্ব ৭
লেখকঃপারভেজ ইসলাম

শাড়ি পড়তে হবে ভাবতেই কেমন একটা লাগছে।এমনি আমার শাড়ি কখনোই পছন্দ না।হুম ডিজাইন করতে ভালোবাসি পড়তে নই।মইরা কখনো নিজের দোকানের মিষ্টি খাইনা।তার উপর এখন প্রেগ্ন্যাসির ৩ মাস রানিং। আমার কেন যেন ঢিলাঢালা পোশাকেই আরাম লাগে।বাট এতো বড় পার্টি।কেমন করে যাই থ্রিপিচ করে।শাড়ি তোরেই পড়তে হবে আমার।তার পর অনুষ্ঠানতো শাড়িকে নিয়েই।যদি শাড়ি ডিজাইন করে ফেমাস হয়ে অনুষ্ঠানে শাড়ি ছাড়া থ্রিপিচ পরে যাই দেখাগেলো সকলে বলবে “শাড়ি দ্বারা স্বার্থক হয়ে শাড়িকেই দূরে ঠেলে দিল”লও ঠ্যালা তখন তো এলাহি কান্ড হয়ে যাবে।আমি ২ টা শাড়ি আনছিলাম।চকোলেট কালার আর বেগুনি।বেগুনিটার পার সোনালী।হেব্বি ভাড়ী।শাড়ি বের করে খাটের উপর রেখে ভাবতেছি কোনটা পরব।আমি তোহ বেশি লম্বা না মিডিয়াম।৫’৩” হিল পড়তে হবে।ভাবতেই বিরক্তি লাগছে।ঝামেলা।

শাড়ি নিয়ে পড়ে আছি যে কোনটা পরব।আমার গায়ের রং হলদে ফর্সা,মাথার চুলগুলো এখন মাজা ছুই ছুই,চোঁখ তো সবাই বলে বড় টানা টানা নাকি,ঠোঁটে অইসব রং ফং বেশি মাখিনাই বলে এখনো গোলাপি।এরই মধ্যে আদৃতের কণ্ঠ শুনি।
আদৃতঃব্যস্ত নাকি আপনি?
আমিঃব্যস্ত মানে শুধু ব্যস্ত না মহা ব্যস্ত।এখনো কোন শাড়ি পরব ঠিকই করতে পারিনি।বাজে ৫ঃ২০।
আদৃতঃশাড়ি কেন পড়বেন?সেইদিন পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন নাকি?
আমিঃনা তো কেনো?(অবাক হয়ে)
আদৃতঃতাহলে শাড়ি পড়ার খেয়াল আসলো কিভাবে মাথায়?শাড়ি সামলাতে পারেন?
আমিঃপ্রতিবার শাড়ি পরে রাস্তায় নেমে উস্টা খাওয়ার জাতীয় রেকর্ড আছে আমার।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আদৃত একটা নিশ্বাস নিয়ে আমার দিকে বিরক্তিকর ভাব নিয়ে আমার দিকে তাকালো।আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে কোনোরকম পরিবর্তন নেই আমার মধ্য।আদৃত লালরঙা শপিং ব্যাগ আর কালো রঙের ব্যাগ এদিয়ে দেন।আমি দুইহাত দিয়ে দুটো ব্যাগ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম দেখতে।একটাই লং কুসুম হলুদ কালারের জরজেট ড্রেস নিচে গাঢ় মেজেন্টা কালার পাড়।কাতান গোলাপি মিস্টি মিক্স উড়না।উড়নাটার মাঝে গোলাপ ছাপা।আর একটাই মেকাপের হালকা জিনিস।আমি আদৃতের দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
আমিঃজামাটা অনেক সুন্দর কিন্তু জামা পড়ে পার্টিতে গেলে মানুষ কি ভাববে?

আদৃতঃকি ভাববে মানে আপনিই তো বললেন পোশাকটা যথেষ্ট সুন্দর।আপনার জন্যই যেন তৈরি।আর মানুষ পোশাক পড়ে স্বাভাবিক,আরামে থাকার জন্য অসস্ত্বিতে পড়ার জন্য নয়।আর যারা পোশাক দেখে মানুষকে যার্জ করে আমার দৃষ্টিতে তারা শিক্ষিত হলেও মুর্খ।শিক্ষিত মানুষ পোশাক দ্বারা মানুষকে বিচার করে না কর্মদ্বারা বিচার করে।আর এই শাড়িতে আপনি পড়ে গেলে?তখন?এখন জলদি করে রেডি না হয়ে আস্তে সুস্থে রেডি হয়ে আছেন।পার্টির টাইম শুরু হবে যখন আপনি পার্টিতে উপস্থিত হবেন তখন।এখন আস্তে ধীরে কাজ করবেন কিন্তু।

আমিঃআপনার কথাগুলো শুনলে নিজেকে অপদার্থ মনে হয়।ইশ যদি আপনার মতো করে জিনিস গুলোকে সহজ করে ভাবতে পারতাম।
আদৃতঃআমি সহজ করে নয় সঠিক জিনিসটা ভাবতে চাই।এখন যাই আমারো রেডি হতে হবে।

আদৃত লোকটা বড়ই অদ্ভুত।অন্যদের মত তিনি সবার কাছে ভালো হতে চাননা।বরং উনি নিজের কাছে ভালো হতে চান।উনার চিন্তাধারাতেও উনি নিজের মতবাদ সবার আগে রাখেন।কি কি ভাবলো কখনো দেখেননা।কেউ উনাকে নিয়ে সমালোচনা করলে তিনি সেই বিষয় নিয়ে ভাবেন।যদি মনে হয় সেইটা তার জন্য ভালো নয় সমালোচকদের কথা ঠিক উনি সেই জিনিস ত্যাগ করেন আর যদি মনে হয় সেইটাই ভালো উনি সমালোচকদের নিয়ে চিন্তা করা ত্যাগ করেন।সত্যিই এমন মানুষ হাজারে একজন হয়।

ওয়াসরুম থেকে চেঞ্জ করে এসে আয়নার সানমে দাঁড়ালাম।আমি তো কাঠি কিন্তু মিডিয়াম মিডিয়াম লাগছে একবারে বাচ্চা হাতি লাগছে না।যাক আমি ভাবছিলাম মনে হয় আমাকে বাচ্চার হাতি মতো লাগবে।কিন্তু বাচ্চা বিড়াল লাগছে।কিন্তু জামাটা এককথাই অসম্ভব সুন্দর।আদৃতের পছন্দ আছে বলতে হবে।কালার কম্বিনেশনটা জাস্ট ওয়াও।সাজতে একসময় খুব পছন্দ করতাম সাজতে বলতে কাজল পড়প্তে আর চুড়ি পড়তে।কিন্তু যার জন্য পড়তাম সেই তোহ এখন অন্যকে সাজাতে ব্যস্ত।তাও হালকা সাজ দেওয়া যায়।প্যাকেটটার সব জিনিস বের করে নিচে দেখি চুড়ি সাদা স্টোনের।বাহ খুব সুন্দর।সাদা স্টোনের দুলও আছে।সেটাও পরে নিলাম।সাইড দিয়ে সিথি করে চোঁখে টেনে টেনে কাজল দিলাম।লিপস্টিক টাও মাখলাম সুন্দর করে।মুখে হালকা ক্রিম আর ফেস পাউডার দিয়ে নিলাম।আমি রেডি।ওয়াও মেয়ে হয়েও ১০ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়েছি।আমি তো বরাবরই এমন।উপরন্ত রায়হান সময় নিয়ে সচেতন ছিল।তাই ওর সাথে থাকতে থাকতে আমিও দ্রুত কাজ করতে শিখে গিয়েছি।

রুম থেকে বের হতেই দেখি নিচে লোকের ভীড়।আগন্তুকরা আসতে শুরু করে দিয়েছে।সব আগন্তুকরাই যে অনেক উচ্চপদের লোকজন গেটআপই বলে দেই।আমি একাই তেজপাতা নাকি।না অনেকে সাধারণ ভাবে এসেছেন।সিম্পল কিন্তু সুন্দর সুন্দর শাড়ী পরে।তারা সাধারণভাবে আসলেও তাদেরকেই অসাধারণ লাগছে।আদৃত বরাবরই সঠিক।এরই মধ্যে চোঁখ পড়ল একজন মহিলার উপরে।উনি আমার ডিজাইন করা কালো শাড়ি পড়ে এসেছে।আমি আসতে করে শিড়ি দিয়ে নামতেই সেই মহিলা আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন,

মহিলাঃথ্যাংক্স জান্নাত।আমার শাড়িটাকে এতো সুন্দর করে ডিজাইন করে দেওয়ার জন্য।এই শাড়িটা এখন আমার ফেভারিট শাড়ি।
উনার কথা শুনে মনে মনে উনাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করলেও ইচ্ছাটাকে বালি চাপা দিয়ে দিলাম।আর চাইনা মানইজ্জত হারাতে!
আমিঃমোস্ট ওয়েলকাম।আপনার শাড়িটা পছন্দ হয়েছে জেনে অনেক ভালো লাগল।বাই দ্যা ওয়ে আপনি আমাকে চিনলেন কিভাবে?
মহিলাঃএই ড্রেসটা আমি জান্নাতকে আমাকে এতো সুন্দর শাড়ি গিফট করার জন্য দিয়েছিলাম। ড্রেসটা যেহেতু আপনার পরনে তার মানে আপনিই জান্নাত।

উনার কথা শুনে মাথার উপর যেন ছাদ ধসে পড়ল।বলে কি ইনি?এই জামা ইনার গিফট করা।আর আমি মাসুম ভাবলাম আদৃত এনেছে।এই মূহুর্তে নিজকে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ধৌত করতে ইচ্ছা করছে।মনে মনে আদৃতের উপর যা রাগ হচ্ছে কিন্তু উনি তো
একবারো বলেননি উনি দিয়েছেন যা ভাবার একাই ভেবেছি।যে পরিমাণ রাগ হচ্ছে এখন।উফফ।তাও আমি ভদ্রতা সহিত শান্ত হয়ে মুখে হাসি এনে উনাকে বললাম,
আমিঃঅনেক অনেক ধন্যবাদ।
এরই মধ্যে উনি আমার পিছনে সিড়ির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
মহিলাঃওই তো আদৃত নামছেন।

উনার কথা শুনে পিছনে ঘুরেই আমি হা।এ কোন আদৃত।আদেও আদৃত নাকি কোনো হিরো।ব্লু কালারের কোট,প্যান্ট,ভিতরে সাদা শার্ট,টাই,ব্লাক সু,ব্লাক ওয়াচ চুলগুলো আবার আজকে সুন্দর করে ব্রাশ করা।একহাত পকেটে রেখে ভুবন ভোলানো এক হাসি।জানিনা কেনো বেশকয়দিন ধরে আদৃতের কথা,তার হাসি তার উপস্থিতি খুব ভালোলাগে।তার অফিসে থাকার সময়টুকুতে তাকে অনেক মিস করি।হয়তবা আমার ভালো একজন বন্ধু তাই।আদৃত হাসতে হাসতে আমার দিকে এগোচ্ছেন আর হাসছেন।কিন্তু আমার সাথে কথা বলার আগে কালা শাড়ি বলে উঠলো,

কালা শাড়িঃOh mygod adreet you are too much handsome dear.
বলেই আমার পাশ থেকে গিয়ে আদৃতকে জড়িয়ে ধরল।তওবা,তওবা,আস্তাগফিরুল্লাহ ছি ছি সেইদিন আমি ভুল করে তাও শুধু রিমির সামনে জড়িয়ে ধরায় নাক কাটা যাচ্ছিলো আর এই কালা শাড়ি।দেখে আমি।এমা একি আদৃতো জড়িয়ে ধরল।সেইদিন আমি জড়িয়ে ধরার স্ট্যাচু হয়ে গিয়েছিল আর আজকে ।তাতে আমার কি আদৃতের লাইফ আদৃতের উইশ।এবার আদৃত আমার সামনে এসে দাড়ালেন।
আদৃতঃজান্নাত নাকি জান্নাতের হুর কোনটা আপনি?
আমিঃজান্নাত কেন বলুন তো?
আদৃতঃমাশাল্লাহ আজকে যে একদম হুর লাগছে আপনাকে।
আমিঃআপনাকেও আজকে অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে।
আদৃতঃথ্যাংক্স।

আদৃত এবার হলরুমের মিডিলে যেইখানে মেঝেতে গোল করে ডিজাইন করা সেইখানে দাঁড়ালেন।
আদৃতঃAttention please guys.আজকের পার্টিতে আসার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।আপনারা মূল্যবান সময় নষ্ট করে এখানে এসেছেন দেখে অনেক খুশি হয়েছি।তাই এখন সময় এসেছে যার জন্য আজকের পার্টি তার সাথে পরিচিত হওয়ার।
কথাগুলো বলেই আমার কাছে এসে আমাকে নিয়ে পুনরায় সেইখানে গেলেন।

স্বামী পর্ব ৬

আদৃতঃগাইজ মিট হার।জান্নাত ইসলাম।ভবিষ্যতের আয়াসাকশেসফুল ডিজাইনার।গাইজ লুক এট মিস লায়লা,মাই বেস্ট ফ্রেন্ড। (সবাই কালা শাড়ির দিকে তাকালো।মানে কালা শাড়ির নাম লায়লা আর উনি আদৃতের বেস্টি।)তার পরনের শাড়িটা জান্নাতের ডিজাইন করা।এন্ড ডু ইউ নো শাড়িটা নাম করে ডিজাইনার শফিরুর রাহমানের অনেক পছন্দ হয়েছে।(এ কথা শুনে আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম)এই জন্যই আজকের পার্টি।আর জান্নাত আপনাকে জানায়নি কারণ এটা আপনাকে আমি সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।
এরপর আদৃত এখান থেকে গিয়ে কালা শাড়ি থুক্কু লায়লার পাশে দাঁড়ালেন।কয়েকজন এসে আমার সাথে পরিচত হওয়ায়,আমার সম্পর্কে জানতে ব্যস্ত।তাদের সাথে কথা বললেও চোঁখ আমার আদৃতের উপর।লায়লা আদৃতের বাহুতে হাত রেখে কথা বলছে।উফফ আমার এতো রাগ হচ্ছে কেনো?আমার হঠাৎ করে খুব গরম আর অসস্তি লাগছে।বসার জন্য গিয়ে দেখি কোথাও জায়গা।তাই সবার থেকে একটু আলাদা হয়ে কর্ণারে দাড়ালাম।দেখলাম নাচের পর্ব শুরু।ওই মেয়ে আদৃতের সাথে নাচছে।উফফ আমি এসে দেয়ালের সাথে ঘেষে দাঁড়ালাম।এমনি দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর।

ঃহ্যালো বিউটিফুল।
এমন কথা শুনে সামনে তাকিয়ে দেখি কালো কোর্ট প্যান্ট পরা একজন লোক।
আমিঃসরি আমাকে কিছু বলেছেন।
লোকঃইয়েস বিউটিফুল।আই আম আরাফ।(হাত বাড়িয়ে দিয়ে)
আমি হাত না বাড়িয়ে বললামঃজান্নাত।
আরাফঃআই নো।ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আমার ড্যন্স পার্টনার হবে?
আমিঃআহা কতো শখ।বাচিনা।(মনে মনে)সরি বাট আমার ইচ্ছা নেই।(বিরক্তি নিয়ে।লাইন মারছে বুঝছি।)
আরাফঃপ্লিজ বিউটিফুল।
আমিঃনো সরি।ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।(বলেই চলে আসতে লাগলে আরাফ আমার হাত ধরে বসে।আমি চোঁখ বড় বড় করে রাগী দৃষ্টিতে আরাফের দিকে তাকায়)
আরাফঃলাই দিয়েছি বলে এই না যে ঘাড়ে উঠে বসবে।
আমিঃহাত ছাড়ো।(রেগে)
আরাফঃএতো অহংকার কিসের রূপের নাকি গুণের?

আমি আর কিছু না বলেই জোড়ে হাত টান দিয়।অনেক জোড়ে টান দেওয়ার জন্য আমি ছিটকে যাই আর পিছনে দেওয়াল থাকার ফলস্বরূপ দেয়ালের সাথে কপাল বাড়ি খাই।আমি কপালে খুব বেশি ব্যথা অনুভব করি।ভাগ্যিস পেটে লাগেনি।আমি পেটে আগেই হাত দিয়ে রেখিছিলাম।পেট থেকে হাত সরিয়ে কপালে হাত দিতেই বুঝি কিছু একটা হাতের আঙুলে লেগেছে।পড়ে হাতটা চোঁখের সামনে আনা মাত্র বুঝতে বাকি রইল না যে সেটা রক্ত।হঠাৎ মাথার মধ্যে কেমন যেন চক্কর দিয়ে উঠে আর…….

স্বামী পর্ব ৮