স্বামী পর্ব ৮

স্বামী পর্ব ৮
লেখকঃপারভেজ ইসলাম

হঠাৎ করে নিজেকে শুন্যে অনুভব করলাম।আমি যেন আকাশে উড়ছি।কিন্তু হঠাৎ করে বুঝলাম কোমড় কেউ স্পর্শ করে রয়েছে।কিন্তু সে স্পর্শ খারাপ স্পর্শ নয়।আস্তে আস্তে চোঁখজোড়া খুলে দেখি নীল কোর্ট।আরেকটু উপরে তাকাতেই দেখি আদৃত।আমার হাত তার কাধে।আমি তার কোলে।তিনি আমাকে কোলে নিয়ে হাটছেন এর মানে।কিন্তু কি দিয়ে কি হলো আদৃত এসে আমাকে সোফায় বসিয়ে আমার কপাল পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন।

আদৃতঃআপনি কি ঠিক আছেন?এতোখানিক কেটে গিয়েছে। জলদি রক্ত বন্ধ করতে হবে।
একজন সার্ভেন্ট এসে ফার্সট এইড বক্স দিয়ে যাই।আদৃত হেক্সিসল নিয়ে আলতো করে তুলোতো লাগিয়ে দিয়ে আমার কপালে চেপে ধরেন।মনে হলো কাটায় যেন লবণ দিয়ে দিলো।অনেক জ্বালা করে উঠে আমি চিল্লিয়ে উঠি।
আদৃতঃসরি জান্নাত সরি।প্লিজ ঔষধ লাগাতে দেন।প্রথম প্রথম জ্বলবে।
এই বলে উনি আমার কপালে ফু দেন আর ঔষধ লাগাতে থাকেন।লোকটার দিকে তাকালাম।চোঁখে চিন্তাময়ভাব আর পানি দুইটায় রয়েছে।কেমন যেন পাগল হয়ে উঠেছেন রক্ত দেখে।সবাই আছে কিন্তু কেউ এমন করছে নাতো।উনি কি এখনো সেই আগের মতোই ভালোবাসেন আমায়?এমন বিচলিত হওয়ার কারণ কি?উনি আস্তে ধীরে আমার কপালে ব্যন্ডেজ করে দিয়ে আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে জিজ্ঞেস করেন,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আদৃতঃকি হয়েছিলো সেইখানে জান্নাত?কপালে আঘাত পেলেন কিভাবে?
তার মানে আদৃত যা হয়েছে,সেই ছেলে যা করেছে তার কিছুই জানে না।
আদৃতঃজান্নাত আপনি বললেন না ব্যথা পেলেন কিভাবে?
আমিঃ(আমি আবার সত্যবাদী যা হয় তাই বলি।আর তাছাড়াও এখানে আমার কোনো দোষ নেই আর আদৃত পরে জানলে অনেক কষ্ট পাবেন।তাই আমি যা সত্যি শেষ টু শুরু সব বললাম।সব বলার পর লক্ষ করলাম আদৃত হাত মুষ্টিবদ্ধ করে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।এদিকে সবাই আমার কথা শুনে আরাফের দিকে তাকিয়ে পড়েছে)

আরাফঃব্রো ট্রাস্ট মি এই মেয়ে মিথ্যা বলছে।আমার সাথে কথা বলতে এসেছিলো কিন্তু আমি পাত্তা দেইনি।পরে আমার হাত ধরে বসে বলেই আমি ধাক্কা দিয়েছিলাম।এসব রাস্তার মেয়েরা যতই ভদ্র সাজুক দিন শেষে……ঠাসসসস…..ঠাসসসসস….
আদৃত উঠে দাঁড়িয়ে আরাফকে পর পর দুইটা চড় মারলেন।দাদি আর লায়লা এসে আমার পাশে দাঁড়ালেন।আরাফ গাল ধরে মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে।আরাফ আদৃতের দিকে তাকিয়ে বললোঃ
আরাফঃব্রো তুমি এই রাস্তার মেয়ের জন্য….ঠাসসস
আদৃতঃতুমি কাকে রাস্তার মেয়ে বললে জানো?সে কে কোনো আইডিয়া আছে তোমার?
আরাফ এবার জোড়ে তাচ্ছিল্য করে বলে উঠলোঃসে যেই হোক না কেনো অন্তত ভদ্র না।ভদ্র হলে তোমার সাথে এই বাড়িতে দিনের পর দিন সাথে থাকত না।ভুলে যেও না তোমাদের পাশেই থাকি। এই মেয়ে যে রাত দিন সারাদিন তোমার বাড়িতেই পড়ে থাকে অনেক দিন থেকেই খেয়াল করেছি।

আমি কেঁদেই যাচ্ছি।কি বলব কি।সবাই আমাকে খারাপ ভাবছে এখন।
আদৃতঃওহ আমার বাড়িতে এক মাস থাকে বলে ও খারাপ মেয়ে তাইতো?
আরাফঃএক্সজেক্টলি।(আমার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)
আদৃতঃতাহলে তো তোমার বোন জান্নাতের থেকেও খারাপ কেননা জান্নাত আমার বাড়ি এক মাস যাবৎ থাকে।আর আরিশা যে তোমার বন্ধুর বাড়ি আরো এক বছর আগে থেকে থাকে।সেইখানে পড়াশোনা করে।

আরাফ আদৃতের কলার ধরে গর্জে বলে ওঠেঃআমার বোনের ব্যাপারে কোনো বাজে কথা বললে এখানেই খুন করে ফেলব তোকে।
আদৃত নিজের কলার ছাড়িয়ে নেন।একপাশটা গুটিয়ে গিয়েছে।সেটা ঠিক করে নিয়ে বললেন,
আদৃতঃকেনো নিজের পরিবারের কথা আসলে তখন খুন করবে আর অন্যের মেয়েকে তাচ্ছিল্য করবে।তোমার বোন তোমার ফ্রেন্ডের বাড়ি থাকলে ভদ্র আর আমার বান্ধবী আমার বাড়ি থাকলে অভদ্র।নিজের বোনের ব্যাপারে কথা উঠলে যে ভাই সিংহ হয়ে ওঠে অন্যের বোনকে একা পাইলে,তাকে বেইজ্জত করার সময় সেই ভাই ই হিংস্র,লাগামহীন হয়ে ওঠে।বাহ এই হলো মানুষ,এই হলো মানসিকতা।
এবার লায়লা সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,

লায়লাঃবাদ দেও আদৃত এদের স্বভাবতই এটা।নিজের বোন হলে ভালো আর অন্য মেয়ে হলে যতই ভালো হোক খারাপ জিনিস বের করবেই।
আদৃতঃপার্টি ইজ ওভার গাইজ।সরি ফর অল দিস ড্রামা।
বলেই আদৃত আমার কাছে এসে পুনরায় আমাকে কোলে তুলে নেন।আমি তার ঘাড় জড়িয়ে ধরি হঠাৎ করে কোলে তুলে নেওয়ার জন্য।আদৃতের মুখের দিকে তাকায় এবার।তাকে এতোটা রাগতে কখনো দেখিনি।কি সুন্দর করে উত্তর দিয়ে দিলেন আরাফকে।এই লোকটার একটু বেশিই বুদ্ধি।আদৃত আমার রুমে এসে আমার বিছানার উপর আমাকে শুয়িয়ে দিয়ে বললেন,
আদৃতঃ ১০ মিনিট শুয়ে থাকবেন তারপর উঠে চেঞ্জ করে কিছু খেয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন।
এরই মধ্যে লায়লা আর দাদি চলে আসেন।আদৃত দাদিকে আমার খেয়াল রাখতে বলে রুম থেকে বেরিয়ে যান।
লায়লাঃআপনি কি এখন আগে থেকে ভালো আছেন?(আমার পাশে বসে।মেয়েটা অনেক ভালো।প্রথম প্রথম ওমন কেন লাগছিলো কি জানি)

আমিঃজ্বি আমি এখন ঠিক আছি।শুধু কপালটাই হালকা ব্যথা।
লায়লাঃকেটে গিয়েছে ব্যথা থাকবে।আপনি কিন্তু আরাফের কথা নিয়ে কষ্ট পাবেন না।বন্ধুর বাড়ি মানুষ থাকতেই পারে।আমিও তো সুইডেন থেকে এসে যখন বাড়ির কাজ হচ্ছিল তখন এইখানে ছিলাম।
আমিঃওহ আপনি সুইডেন থাকেন?
লায়লাঃনা আমার স্বামী থাকে।
আমিঃকি আপনি ম্যারিড?(চমকে গিয়ে)
লায়লাঃজ্বি হে কেনো?(কৌতুহলী হয়ে)

আমিঃ(হায়রে আমি এখন কি বলব যে আমি ভাবছিলাম উনি আদৃতকে পছন্দ করেন এইটা ভেবেছিলাম।উফফ আমি যে কেন অলয়েজ এত বেশি বুঝি)না আসলে জানতাম নাতো তাই।
লায়লাঃওহ।আমার স্বামী আসলে আপনার মতো এতো গুণী মেয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে আনব।তখন পরিচিত হয়ে নিয়েন।
আমিঃজ্বি অবশ্যই।
লায়লাঃআমি এখন আসি।আর আপনি নিজের খেয়াল রেখেন।
দাদিঃআরে তুমি এতো রাতে একা যাবা কিভাবে?আদৃতকে বলো তোমাকে দিয়ে আসতে।
লায়লাঃতার কোনো দরকার নেই দাদি।আমার ড্রাইভার আছে।
লায়লা চলে গেলেন।অনেক ভালো মানুষ উনি।দাদি কাবার্ড থেকে ড্রেস এনে চেঞ্জ করতে বললেন।

পুরো বাড়ি জুড়ে রোজ দিনিই নিরবতা বিরাজ করে কিন্তু আজকে কেনো যেন নিরবতাটা একটু বেশি।জালনা দিয়ে ভেসে আসছে ঝিঝি পোকার ডাক।জালনার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম পর্দাগুলো এলোমেলো ভাবে উড়ে চলেছে।একজন সামনের দিকে এগোচ্ছে তো একজন পিছনের দিকে।দুইটা পর্দা দুইদিকে যেতেই দেখতে পেলাম রুমের সামনের বড় গাছটা।সকালে হাজারো ভিন্ন ভিন্ন পাখির মেলা বসে গাছে।সবাই যেন ক্ষণিকের জন্য আমার সাথে দেখা করতে এইখানে আসে।মাঝে মাঝে একডাল থেকে অন্য ডালে উড়ে গিয়ে বসে,আবার মাঝে মাঝে ডাল থেকে উঠলে আর এসে ডালে বসে না উড়ে যাই তাদের গন্তব্যে।

আদৃত আর আসেননি।আমার জন্য তার এতো বড় পার্টি ভেস্তে গেল।কিন্তু উনি আজকে আমার জন্য যতটুকু করলেন বন্ধু হিসেবে নই হয়তবা একসময়ে ভালোবাসতেন সেই জন্য করেছেন।নইলে এখনো ভালোবাসেন সেই জন্য এমন টা করেছেন।এইকয়দিন আদৃতের সঙ্গ বেশ ভালো লাগে।যতক্ষণ আশেপাশে থাকেন বেশ খুশি থাকি।দূরে চলে গেলে বড্ড মিস করি তাকে।তার জন্য অনুভূতিটা আস্তে আস্তে বদলে যাচ্ছে।মনের মধ্যে তার জন্য ভালোলাগা নইলে ভালোবাসা কোনোটা বাসা বাধতে শুরু করেনি তো?তার আশেপাশে থাকার অনুভূতি অন্যরকম।কিন্তু ভালোবাসা শব্দটা মাথায় আসলেই তার সাথে দল বেধে চলে আসে ঘৃণা জিনিসটা।খুব ঘৃণা করি এখন ভালোবাসাকে।রায়হান ৩ মাস হতে চলল কিন্তু খোঁজ পর্যন্ত নিলো না।

২ মাস পর।এখন পেটটা হালকা বড় হয়েছে।চেকাপ করিয়েছি।বেবি ভালো আছে আর কোনো সমস্যা হয়নি।কিন্তু আমার গায়ে রক্ত কম এটা একটা সমস্যা।আমি রুমে বসে কিছু ডিজাইনের কাজ করছি।আদৃতের সাথে বন্ধুত্বটা আরো মজবুত হয়ে উঠেছে।সব থেকে ভালো বন্ধু আমার সে এখন।রোজ তার সাথে অনেক গল্প করি।সেও অনেক গল্প করেন।সে এখন অফিসে।তাই কাজ করছি।নইলে বোর হয়ে যাব।এখন বাসায় থেকেই কাজ করছি।বাবু হলে তারপর অফিসে গিয়ে কাজ করব।আগে ভাবতাম কবে বাবু হবে কবে এই বাড়ি থেকে যাব।কিন্তু এখন ভাবি এইখানেই থেকে যেতে পারতাম।কিন্তু তখন আবার বিবেক দিয়ে ভাবি।যেতেই হবে আমি যাওয়ার আগে আদৃতকে বলব বিয়ে করে নিতে।এরই মধ্যে শুনি নিচ থেকে শব্দ আসছে।বিছানা থেকে নেমে আসতে ধীরে সিড়ি দিয়ে নেমে দেখি দাদি অনেক কান্না করে আর অনেক চিন্তিত।বুঝলাম না।

স্বামী পর্ব ৭

আমিঃদাদি কি হয়েছে?সব ঠিক আছে তো?
দাদিঃনারে কিছু ঠিক নেই দাদুভাই এর এক্সিডেন্ট হয়েছে নাকি।এখন হসপিটালে।আমি যাচ্ছি।
সব শুনে মনে হচ্ছিল আস্তে আস্তে পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সড়ে যাচ্ছে।আদৃত ঠিক আছে তো।দমটা মনে হচ্ছে বন্ধ হয়ে যাবে।কিছু হয়ে গেলে আদৃতের।খুব ভয় লাগছে আদৃতকে হারিয়ে ফেলব নাতো?
আমিঃদাদি আমিও যাব।
দাদিঃতুই অসুস্থ তো।
আমিঃনা আমি সুস্থ বাড়ি থাকলে আরো অসুস্থ হয়ে যাব।
দাদিঃআচ্ছা আই।
দাদি এখন আমায় তুই করেই বলে।

হসপিটালে পৌঁছে আদৃত যেই রুমে আসে সেই রুমে গেলাম।রুমে ঢুকতেই চক্ষুচড়াকগাছ।মহাশয় একদম ঠিক আছেন।কপালে হালকা কেটে গিয়েছে।বসে বসে সামনে বসে থাকা একজনের সাথে গল্প করছে।কি করতে মন চাই।উফ কতো ভয় পেয়েছিলাম।আমাদের দেখে আদৃত বলে,
আদৃতঃআরে আপনি এইখানে এই অবস্থায় আসতে গেলেন কেন?
দাদিঃওকে আমি এনেছি।আগে বল তুই ঠিক আছিস?
আদৃতঃহুম এই যে এই ব্যক্তির জন্য (সামনে থাকা ব্যক্তিকে দেখিয়ে)ঠিক আছি।
দাদিঃকে উনি?

আদৃতঃযে আমাকে এনেছেন হসপিটালে।আমি তো আপনার নামই জিজ্ঞেস করতে ভুলে গিয়েছি।
উনি নাম বলার আগেই দাদি উনার সামনে গিয়ে উনার মাথায় হাত রেখে বলে উঠেন,
দাদিঃঅনেক অনেক ধন্যবাদ দাদুভাই।
আমিও মুখে একটা হাসি নিয়ে সেই ব্যক্তির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।কিন্তু ব্যক্তিকে দেখে আমার হুশ আর হাসি দুইটায় উড়াল দেই।সেই ব্যক্তিও আমার দিকে তাকাতেই যেন ভূত দেখেছেন এমন অবস্থা।আমি অস্ফুটস্বরে বলি,
আমিঃ তুমি………

স্বামী পর্ব ৯

1 COMMENT

Comments are closed.