স্বামী পর্ব ৯

স্বামী পর্ব ৯
লেখকঃপারভেজ ইসলাম

নিরবঃভাবি তুমি এখানে?আমি তো শুনলাম তুমি নাকি এখন আর ঢাকায় থাক না।তোমার স্বামীর সাথে থাক।
(হে হে রায়হান না নিরব রায়হানের বন্ধু???)
আমিঃহোয়াট?কে বলেছে এসব?কিন্তু আগে বল তুমি বাংলাদেশে?তুমি তো সিংগাপুর ছিলে।
নিরবঃ৩ মাস আগে এসেছি ভাবি।ভাবি তোমাদের ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে?
আমিঃহুমম।(মাথা নিচু করে)
নিরবঃএই অবস্থায় ডিভোর্স?রায়হানকে ছাড়াটা কি অনেক দরকার ছিলো ভাবি?(বুঝলাম প্রেগন্যান্ট বলে এমন বলল।কিন্তু শেষের কথাটুকু বুঝতে পারলাম না)

আমি তো নিরবের কথা গুলো শুনছি আর প্রতি কথা শুনে এক একটা করে শক খাচ্ছি।তার বলা কথাগুলো অবাক করে দিচ্ছে আমায়।স্বামীর সাথে ঢাকার বাইরে থাকি মানে?আর রায়হানকে আমি ছাড়লাম কবে?
আমিঃনিরব ভাইয়া তুমি কি বলছো?
নিরবঃভাবি রায়হানের সাথে দেখা হয়েছিল আমার।ও সব বলেছে আমাকে।
এদিকে দাদি আর আদৃত একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে তো একবার নিরবের দিকে।কে কখন কথা বলছে তাকানোটা তার উপর নির্ভরশীল।
আমিঃনিরব ভাইয়া রায়হান তোমাকে কি কি বলেছে বলবেন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নিরবঃকেনো তুমি যা যা করেছো রায়হান তাই বলেছে আমাকে।তুমি নাকি এখন আর ওর সাথে মানিয়ে নিতে পারছো না।তোমার চাহিদা পূরণ করা আর ওর পক্ষে নাকি সম্ভব হয়ে উঠছে না।তুমি চাও বিলাসবহুল জীবন।তাই তুমি নাকি ওকে ডিভোর্স দিয়ে অন্য একজনকে বিয়ে করেছো।আমার প্রথম প্রথম কথা গুলো বিশ্বাস না হলেও এখন সব তো চোঁখের সামনে।থ্যাংক্স টু হৃদিতা ওহ যদি রাইট টাইম এ রায়হানের লাইফে না আসতো তাহলে হয়ত ছেলেটা শেষ করে দিত নিজেকে।
আমি মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে চোঁখ দিয়ে টপটপ করে পানি ফেলাচ্ছি আর কথাগুলো শুনছি।কারো মুখের দিকে তাকানোর শক্তি বা সাহস আমার নেই।রায়হান তুমি এতো জঘন্য হয়ে গেলে কিভাবে?আমার সাথে বেইমানি করলে এতোদূর মেনে নিলাম কিন্তু আমাকে লোকের কাছে খারাপ,লোভী মেয়ে প্রমাণ করে দিলে।একবার বিবেকেও বাধলো না তোমার।এরই মধ্যে আদৃত উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,

আদৃতঃআপনি রায়হানের কি হন?
নিরবঃজ্বি ওর বাল্যকালের বন্ধু আমি।
নিরব ভাই আমাকে উদ্দেশ্য করে আবার বললেন,
নিরবঃজানো জান্নাত আমরা সর্বদা রায়হানকে বলাতাম যে ওর ভাগ্য আছে বলেই তোমাকে পেয়েছে।কারণ তুমি সর্বদা ওকে বুঝতে,ওর সাথে মানিয়ে নিতে। তুমি সামান্যতেই খুশি থাকতে।তোমাদের ভালোবাসায় ভালোবাসাটা পরিপূর্ণভাবে ছিলো।নাই ছিল ছলনা নাই ছিল চাহিদা।আমরা সবাই আমাদের গার্লফ্রেন্ডদের সাথে তারা যেন তোমার থেকে কিছু শেখে এই নিয়ে ঝগড়াও করতাম।কিন্তু তুমি তোহ হীতে বিপরীত বের হলে।খারাপ সময়ে পাশে থেকে ভালো সময়ে এসে ওকে ছেড়ে দিলে।

নিরব ভাইয়ার কথাগুলো শুনে প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও এখন অসম্ভব রাগ হচ্ছে।মনে হচ্ছে নিঃশ্বাসগুলো যেন বন্ধ হয়ে আসছে।মন বলছে রায়হানকে গিয়ে বেইমানির শাস্তি স্বরূপ সবার সামনে অপদস্ত করে আসতে।আমার মুখের কথাগুলো যেন হারিয়ে ফেলেছি।জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে লাগলাম।এই অবস্থা দেখে আদৃত আমায় বিছানায় বসালেন।মাথায় রাগ চড়ে বসার জন্য এখন কোনো দিকেই ভ্রুক্ষেপ নেই।আমি তাও বললাম,

আমিঃরায়হান আমার সাথে বেইমানি করে যত বড় ভুল করেছে তার থেকেও বড় ভুল করেছে আমার নামে মিথ্যা রটিয়ে।ভাইয়া যে মেয়ে বিপদে পাশে ছিল সেই মেয়ে ভালো সময়ে ছেড়ে এসেছে এরকম অবাস্তব কথা তুম বিশ্বাস করলে কিভাবে?বিবেক সায় দিলো কিভাবে ভাইয়া।তুমি আমায় নিজের ছোট বোন বলতে আর সেই তুমিই।আমাদের ডিভোর্স হয়েছিল কারণ রায়হান এখন স্মার্ট কাউকে চাই।আমার মতো সাধারণ মেয়ে তার পছন্দ নাহ।(এর পর এক এক করে সব বললাম)
নিরবঃআই আম সো সরি জান্নাত।রায়হান কথাগুলো যেভাবে বলেছিল বুঝিই নি মিথ্যা।আর এ কথা অনেক কেই বলেছে।রায়হান এতো নিচে নেমে কিভাবে?কিন্তু তোমার উচিত ছিল সত্যি সবাইকে জানানো।এইভাবে চুপচাপ চলে এসেছো বলেই এরকমটা হয়েছে।সবাই রায়হানকে বিশ্বাস করেছে।

আমি হসপিটালের বেড হাত দিয়ে চেপে ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।
আদৃতঃরায়হানকে শেষ করে দেব আমি।ওর ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে।হৃদিতারও।
আমিঃআমি রায়হানের বাড়ি যাব।
উপস্থিত তিনজন ব্যক্তিই যে আমার কথা শুনে আশ্চর্যের চরম পর্যায়ে পৌছিয়েছে বুঝেছি।
আদৃতঃকি বললেন?

আমিঃআমি রায়হানের সাথে দেখা করতে যাব।ওই অসভ্যের সাহস হয় কিভাবে এভাবে আমায় অপদস্ত করার।ভাবে কি নিজেকে।বিপদে ওর পাশে থেকেছি।সফল হতে সাহায্য করেছি।আর ও।ওহ একের পর এক বেইমানি করেই যাচ্ছে।নিজে অন্যকারো সাথে ফুর্তি করে আমাকে খারাপ বানিয়ে দিচ্ছে।(জোড়ে চিল্লিয়ে কথা গুলো বললাম।ঘেমে আমি একাকার।চোঁখ বেয়ে অবাধ্য কান্না গুলো ঝরেই যাচ্ছে।)

আদৃতঃজান্নাত শান্ত হন।এতো রাগ এই সময় ঠিক নয়।
নিরবঃহে জান্নাত।আর রায়হান দেশের বাইরে নাকি।হানিমুনে যাওয়ার পর ওইখানে ওর স্ত্রীর কিছু কাজ পরে গিয়েছে।ওরা ওইখানে।
আমিঃবউ এর টাকায় ঘুরে আমাকে লোভী বলে।বেইমানের বেইমান।ওকে ছাড়বো।
হঠাৎ করে বুঝলাম পেটে হালকা হালকা ব্যথা করছে।তাই পেট টা চেপে ধরলাম।বিষয়টি আদৃত বুঝে জলদি ডাক্তারকে ডাক দিলো।ডাক্তার এসে জলদি আমার চেকআপ করতে লাগলেন।আদৃত এইটুকুতেই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

খাটের উপর চুপচাপ মুখটা গোমড়া করে বসে রয়েছি।ইশ সব জ্বালিয়ে দিতে পারতাম।যে কাজ তুমি করনি সেই অপবাদ পাওয়া যে কত কষ্ট আর অপমানের যার সাথে হয় সেই বোঝে।আর আমার রাগটা আগা গোড়ায় বেশি।মিথ্যা মোটেও সহ্য করতে পারিনা।আদৃত আমার সামনে বসে সোফাতে।সে অনেক বেশি চিন্তিত।আসলে রাগ করার জন্য বেশ অসুস্থ হয়ে গিয়েছি।বার বার রাগ কমাতে বলছে।রায়হান আসলেই তার ব্যাবস্থা করা হবে।তাও রাগ কমার নাম গন্ধ নেই আমার।তিনি এবার উঠে এসে আমার সামনে বসলেন,
আদৃতঃআপনার রাগ,দুঃখ,কষ্ট কোনো কিছু দিয়েই রায়হানের কিছু যাই আছে না।কিন্তু আপনি এইভাবে মুখ গোমড়া করে আছেন,,কথা বলছেন না,,হাসছেন না এই দেখে যে আমার কষ্ট হচ্ছে।তার কিহ কোনো মূল্য নেই।

উনার কথাগুলো শুনে উনার দিকে তাকালাম।কথাগুলো বুকে এসে লাগল।আদৃতের কষ্টও সহ্য হয়না আমার।তিনি যে অসুস্থ মনেই নেই।আমার ভাগ্যটাও ভাগ্য।আমার দুইতরফা ভালোবাসা শেষ হয়ে গেলোও ঠিকিই,,কিন্তু আদৃতের একতরফা ভালোবাসা এখনো তার মনের মধ্যে বেঁচে রয়েছে।হয়তবা এক তরফা ভালোবাসা গুলো এমনিই হয়।যার কোনো সমাপ্তি নেই……।আমি উনার দিকে তাকিয়ে জোড়পূর্বক হাসি দিলাম।তিনি তাও মুখ মলিন করে বললেন,

আদৃতঃজোড়পূর্বক হাসি আর খুশির হাসি এক নয়।
আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললাম,
আমিঃতাহলে এখন কি নিজেই নিজেকে কুতুকুতু দিয়ে হাসব?
আদৃত আমার কথায় মলিনভাবে হেসে বললেন,
আদৃতঃসেটাও জোড়পূর্বক হাসিই হবে।
আমিঃহুম তাও ঠিক।বাট রাগ কমে গিয়েছে।এখন আর ওতো খারাপ লাগছে না।
আদৃতঃসত্যি?
আমিঃ৩ দুগুণি ৬ সত্যি।আর এমনিও রাগ করে থাকলে আমাকে রোহিংগা রোহিংগা লাগে।
আদৃত আমার কথাই বেশ জোড়েই হেসে দিলেন

আর কয়েকদিন বাকি বাবুর পৃথিবীতে আসার।এখন অনেক সাবধানে থাকি দরকার ছাড়া খাট থেকেই নামি না।আসলে ২৮৮ ধারা জারি করেছেন আদৃত যে নামাই যাবে না।এখন আমার শরীর টাও দুর্বল না কিন্তু তাও মাঝে মাঝে মাথা ঘুরে।যে পরিমাণ ডালিম খাওয়ায়ছে তার উপর আবার রক্ত দেওয়া লাগলে ডালিমের উপর থেকে আমার বিশ্বাস উঠে যাবে।আজকে ফ্রাইডে আদৃত নিচে নাস্তা করছে।আমার নাস্তাটাও উপরে খাটে দিয়ে যাই।বাবু হইলে চলে যেতে হবে ভাবতেই এখন কষ্ট হয়।আদৃতকে কি তখন আর কখনো দেখতে পাবো না।।হঠাৎ করে শুনলাম কেউ জান্নাত জান্নাত বলে চিল্লাচ্ছে।কণ্ঠটা তো.. বেশ পরিচিত।তাড়াতাড়ি খাট থেকে নেমে আস্তে আস্তে গেলাম।গিয়ে দেখি আমার প্রাক্তন।রায়হান….

রায়হানের দিকেই তাকিয়ে রইলাম বেশি কিছুক্ষণ।সে এখন আর আমার নয় সে এখন আমার প্রাক্তন।আগের মতোই আছে সে।পরনে লাল শার্ট ব্লাক প্যান্ট।তার গায়ে রঙ দুটো যা মানায়।এরই মধ্যে সবাই প্রায় এসে জড়ো হলো ডাইনিংএ।গার্ডদের আদৃত বের হয়ে যেতে বললো।আমি তার দিকে ঘৃণা মিশ্রিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।সে এবার উপরের দিকে আস্তে লাগলে আদৃত এসে তার বাহুধরল।সেও সঙ্গে সঙ্গে ছাড়িয়ে নেই।আমি আস্তে আস্তে সিড়ি দিয়ে নামলাম।রায়হান আমায় দেখে তাচ্ছিল্য করে বলল,
রায়হানঃতুমি তো দেখি এইখানে এসে ভালোই সংসার সাজিয়েছো।
আমিঃসবাইকে নিজের মতো ভাবাটা বন্ধ কর।আমি তোমার মতো লোভী,বেইমান না আর অযোগ্যও নয়।
রায়হানঃজান্নাত মুখ সামলিয়ে কথা বলো।নইলে..

আমিঃনইলে কি করবেন রায়হান ফেরদৌস?আপনার রাগ,কষ্ট কোনো কিছু দিয়েই আমার কিছু যাই আছে না।ইভেন আপনার বাঁচা মরা দিয়েও কিছু যাই আসে না।আপনাকে তো বেইমানের সারিতে ফেলাও কম।নিজে বেইমানি করলেন আর আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেন।বেইমানি করার সাহস আছে কিন্তু বেইমান ডাক শোনার সাহস নেই।(তাচ্ছিল্য করে)
রায়হানঃআমি বেইমান হলে তুমি কি?তুমিও তো আমার বাচ্চার কথা লুকিয়েছো।নিরবের থেকে জেনে গিয়েছি তুমি প্রেগন্যান্ট।
আমিঃএক্সকিউজ মি তোমার বাচ্চা মানে?আমার বাচ্চা।এই ৯ মাস আমি দেখে রেখেছি।এই ৯ মাসে একবারো খোঁজ নিয়েছো?না নেওনি।

রায়হানঃজানলে তো খোঁজ নিতাম।কিন্তু তুমি তো জানাওনি পর্যন্ত।ছিহ আমার বাচ্চা পেটে নিয়ে এই লোকের বাড়িতে…..ঠাসসস….
রায়হানের মুখে গিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিলাম।সব কিছুর একটা সীমা থাকে।আর আমার ধৈর্যের বাধ অনেক আগেই ভেঙে গিয়েছে।আদৃত এসে আমার পাশে দাঁড়ালেন।দাদিও দাঁড়ালেন।
আদৃতঃজান্নাত শান্ত হন।এতো রাগ ঠিক নয়।আপনি আরো অসুস্থ অনেক।
আমি এক হাত পেটে রেখে রায়হানের দিকে রক্তচক্ষু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাগে ফুসতেছি।ভালোবাসা তোহ মরেই গিয়েছে।এখন ঘৃণাটা ভালোবাসার থেকেও তীব্র।

রায়হানঃযে করেই হোক আমি আমার বাচ্চা নিয়েই ছাড়বো।দরকার হলে কোর্টে যাব তাও।আমার বাচ্চা আমার চাই।
আমিঃযে পুরুষ বউকে ছেড়ে অন্যমেয়ের সাথে চলে যাই সে যে বাচ্চা সামলাতে পারবে তা অবাস্তব।
রায়হানঃযে মেয়ের নিজের থাকার জায়গার ঠিক নেই,অন্যের বাড়ি থাকছে সে কিভাবে বাচ্চা সামলাবে।বাচ্চা পালবে কিভাবে?সে তো নিজেই অন্যের বোঝা।তুমি সিংগেল মাদার তোমাকে বাচ্চা না দেওয়ার হাজারটা কারণ বের করব।ইউ ওয়েট এন্ড ওয়াচ।
আদৃত রায়হানের দিকে তেড়ে যেতে লাগলে আমি থামিয়ে দেই।রায়হান আর কিছু না বলে শয়তানের মতো হাসি দিয়ে সেইখান থেকে চলে যাই।আমি ডাইনিং এর সোফায় বসে পড়ি।

আমিঃএখন কি হবে আদৃত।রায়হান সত্যি সত্যি কেস করলে।সিংগেল মাদার এর কাছে কি বাচ্চাদেবে তারা?
আদৃতঃতারা দিতে বাধ্য থাকবে।আপনি চিন্তা করবেন না একদম।আমি সব থেকে ভালো লইয়ার হায়ার করব।আপনি শান্ত হন।
আমিঃআমার বাচ্চাকে যদি রায়হান নিয়ে নেই তখন কি হবে?আমি কি নিয়ে বাচব।আদৃত প্লিজ কিছু করেন।
আদৃতঃআপনি আগে শান্ত হন।
উনার কথায় সস্তি পেলাম না আজ।

রায়হান সত্যি কেস করেছে।ওর কোর্টকে জানিয়েছে আমাদের দুইজনের ইচ্ছায় ডিভোর্স হয়েছে।কিন্তু আমি প্রেগ্ন্যাসির কথা লুকিয়েছি।আমি আরো অন্যের বাড়ি থাকি।বাচ্চার ভরণপোষণের ভার নিতে পারব না।তার দিকটাই ভারী।কি যে হবে।আমি রুমে বসে সব ভাবছিলাম।হঠাৎ করে দেখি আদৃত আমার সামনে বসে।
আমিঃআরে আপনি কখন আসলেন?
আদৃতঃযখন চিন্তা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তখন।আপনার থেকে কিছু জানার ছিলো।
আমিঃহুম বলেন।

আদৃতঃরায়হান যদি বাবুর জন্য আবার আপনায় ফিরে পেতে চাই তখন কি করবেন?
আমিঃযে আমায় ছেড়ে চলে গিয়েছে সে কখনোই আমার যোগ্য নই।যদি সে আমার যোগ্য হতো তাহলে সে আমার মর্ম বুঝত আর যারা মর্ম বুঝে তারা ছেড়ে চলে যাই না।
আদৃতঃবাবুর জন্য আমায় বিয়ে করবেন?
আমি উনার কথা শুনে উনার দিকে চোঁখ বড় বড় করে তাকালাম।
আদৃতঃএ ছাড়া আর পথ নেই।আপনার যেহেতু কোনো ঢাল বা কোনো কিছুই নেই উকিল বলল রায়হানের জেতার চাঞ্চ অনেক।কিন্তু আপনি আমায় বিয়ে করলে আর আমি বাচ্চার দায়িত্ব নিলে কোনো সমস্যায় হবে না।
আমিঃকিন্তু আদৃত।

আদৃতঃআমি জানি আপনার জন্য সহজ নই।কিন্তু বাবুকে পাওয়ার জন্য এই সহজ রাস্তায় খোলা।বাট বিয়েটা হবে লোক দেখানোর জন্য।আপনি যখন বাবুকে নিজে নিজে সামলাতে মানে নিজে প্রতিষ্ঠিত হবে তখন নাহ হয় চলে যেয়েন।
আমিঃকিন্তু অনেকে তো আর আপনার মতো বন্ধু পাইনা।তারা তো নিজেরাই সামলায়,নিজেরাই লড়ে যাই।
আদৃতঃকারণ তাদের প্রাক্তন রা আপনার প্রাক্তনের মত এতোটা নীচ নয়।বাকিটা আপনার কাছে ইচ্ছা।
বলেই উনি চলে গেলেন।

ডাইনিং এ বসে আছি।দাদি তার নাতবৌকে পেয়ে আর কেস জেতার খুশিতে একগাদা রান্না বান্না করছেন।হ্যা আমি আদৃতের বিবাহিত স্ত্রী আর কেস আমরায় জিতেছি।কেস জেতার মূখ্য দুইটি কারণ হলো আদৃত আমায় আমার বাবুকে মেনে নিয়েই কোর্ট ম্যারেজ করেছেন আর হৃদিতা রায়হানকে বলেছে বাবু নইলে তার মধ্যে যেকোনো একজনকে বেছে নিতে।তাই রায়হানও আগ্রহ দেখাইনি।এই ক্ষেত্রে বিয়েটা নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় ছিল।কিন্তু আজকে কোর্টে যাওয়ার আগেই যে কোর্ট ম্যারেজ করা হয়ে গিয়েছিল।রাদিথ উপরে।একটু পরে ডক্টরের কাছে যাব।শরীরটা ভালো নই।আল্ট্রাসোনো করানো লাগতে পারে।তাই হসপিটালে যাওয়া।দাদি আর আমি যাব আদৃত বাড়িই থাকবেন।দাদি রান্না করে আমাকে নিয়ে বেরোলেন।সিজার আর ৮ দিন পর।দাদিতো কি কি করবেন,,কি কি কিনবেন সব ঠিক পর্যন্ত করে ফেলেছেন।মনে হয় প্রেসার বেরেছে।

উফফফ বিরক্তিকর ডাক্তারই নাকি আসেননি
আজকে।কেমনটা লাগে?ধুর ছাতা।আবার বাড়ি ফিরে আসলাম।ভাগ্যিস জ্যাম ছিল না।ময়না খালা আমাকে ধরে হাটছেন।দাদি আসার পথে মার্কেটে নেমে গিয়েছেন।বাবুর জন্য দোলনা আরো কতো কিছু কিনবেন বলে।আসলে দাদি সত্যি জানেননা।আদৃত পরে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বলবেন।আমার খুব খারাপ লেগেছে বিষয়টা।দাদি কষ্ট পাবে ভেবেই কেমন অপরাধী মনে হচ্ছে নিজেকে।আচ্ছা আমি যদি আদৃতকে বলি আমি তার স্ত্রী হয়েই থাকতে চাই।চাই আমার বাবুর বাবা সেই হোক সে কি রাজি হবে?কিন্তু হলেও বাবুর জন্য হবে।উফফ এই জিনিসগুলো ক্যালকুলাসের ম্যাথের মতো জটিল।গুলিয়ে যাই।এসব ভাবতে ভাবতেই গেটের কাছে গিয়ে থমকে গেলাম।আমি যার কণ্ঠ শুনলাম তার এইখানে আসা অবাস্তব।ময়না খালাকে গাড়ি থেকে ব্যাগটা আনতে বললাম।আমি দরজার কাছে গিয়ে দরজার ফাঁকা থেকে তাকিয়ে দেখি আদৃত আর হৃদিতা বসে।আমি তাড়াতাড়ি সেখান থেকে সড়ে আবার তাকালাম।হুম হৃদিতা আর আদৃত সোফায় বসে হাসাহাসি করছে।মনে হচ্ছে দুইজন দুইজনের বেশ পরিচিত।তাদের বলা কথাগুলো কানে ভেসে আসলো আমার,

হৃদিতাঃসো ফাইনালি আদৃত নিজের ভালোবাসার মানুষকে তিন বছর সাধনা করার পর পেয়েই গেলে।এতো কাঠখড়ি পোড়ানোর পর তুমি সফল হলে।
আদৃতঃকিন্তু তুমি না থাকলে তা কখনো সম্ভব হতো না।থ্যাংকস রায়হানকে প্রেমের জালে ফেলানোর জন্য।
হৃদিতাঃকামওন আদৃত পজিশন আর টাকার জন্য সব করতে রাজি। এখন বলো রায়হানকে ডিভোর্স কবে দেব।
আদৃতঃযেদিন ইচ্ছা।
হৃদিতাঃআহা বেচারা রায়হান আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।ভাবছে আমিও ওকে অনেক ভালোবাসি কিন্তু ও বেচারা জানেও না যে আমি তুমি যা বলেছো তাই করেছি।তুমি ওর ভালোবাসা আর লোভটাকে পরীক্ষা করানোর জন্যই ওকে আমার অফিসে জব দিয়েছিলে।আর আমিও তোমার কথা রাখতে ওকে প্রেমের জালে ফেলালাম।
আদৃতঃইয়াহ হৃদিতা।আমি ভাবিওনি রায়হান তোমার প্রেমের জালে পা দেবে।ভাবতাম ওহ জান্নাতকে সত্যি ভালোবাসে কিন্তু আমি ভুল ছিলাম।

স্বামী পর্ব ৮

জান্নাতঃও যদি আমার প্রেমের জালে না পরত তখন?
আদৃতঃজান্নাত আর রায়হানকে ওদের মতো থাকতে দিতাম আর আমি আমার মতো থাকতাম।কিন্তু হয়তবা ভালোবাসাটা একটু বেশিই খাঁটি ছিলো তাই আমি জান্নাতকে পেয়েছি।
আদৃতের কথাগুলো শুনছি আর আবাকের শীর্ষে পৌছাচ্ছি।তার মানে আদৃত ইচ্ছা করেই হৃদিতাকে পাঠিয়ে আমার সংসার ভেঙেছেন।আমার সংসারে আগুন লাগিয়েছেন।আমাকে পাওয়াটাও তার প্লান ছিলো।আমার সাথে আদৃতো বেইমানি করল।সবাই বেইমান।শুনলাম আদৃত আবার বলল,

আদৃতঃএক মেঘাচ্ছন্ন বিকেলের বৃষ্টির পানিতে ভিজতে দেখেছিলাম তাকে।চুলগুলো বারে বার মুখের উপর পড়ছিলো। আলতো করে চুলগুলো ছড়িয়ে বাকা দাতে হেসে বাচ্চাগুলোর সাথে পুনরায় বৃষ্টির স্বাদ নিচ্ছিলো।সাদা কোনো পরি।অপরুপা ছিল সেই অপরিচিতা।তার সেই হৃদয় মাতানো হাসির প্রেমে পরে যাই।এর পর তাকে দেখি ভার্সিটির কম্পিটিশনে।প্রথম শুনি তার ভয়েস।কি সুন্দর করে সব উপস্থাপন করল।নিজের শাড়ি কে আর নিজেকে বেস্ট প্রমাণ করে।সেই অনুষ্ঠানে সুন্দরীদের মধ্যেও সেই ছিল সবার থেকে মায়াবী।সেইদিন প্রথম তার হাতের স্পর্শ পাই।ওকে হারানোর পর দুই বছর যাবৎ ওকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি।কিন্তু সম্ভব হয়নি।তখন ভাবি আমার ভালোবাসার মানুষ যার সাথে আছে সে তার ভালোবাসার মর্যাদা দিচ্ছে তো?আর তখন..

আমি এবার আর স্থির থাকতে পারলাম না। দরজার পিছন থেকে সামনে এসে বলে উঠলাম,
আমিঃএসব প্লান করলেন তাইতো?
আমায় দেখে দুইজনই ভূত দেখার মতো চমকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে।

স্বামী পর্ব ১০