স্বামী পর্ব ১০

স্বামী পর্ব ১০
লেখকঃপারভেজ ইসলাম

খাটের কোণায় বসে আছি আমি।আমার সামনে লায়লাপু জাহানের সাথে খেলা করছে।আমি বসে বসে এক দৃষ্টিতে তাই দেখে চলেছি।জাহান হলো আমার মেয়ে বয়স তার মাত্র ২১ দিন।লায়লা আপুর মতে দেখতে নাকি হুবুহু আমার মতো।হুম আমার মেয়ে হয়েছে আর আমি এখন লায়লা আপুর বাসায় রয়েছি।

আসলে সেইদিন আদৃতের বলা কথা গুলো শুনে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।রাগ আর ঘৃণারো জন্ম হয়েছিল তার সাথে।আদৃত আর হৃদিতা উঠে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমার লিভার পেইন শুরু হয়।আদৃত আর হৃদিতা আমায় জলদি হসপিটালে নেন।তারপর বাবু হওয়ার পর হসপিটালে ছিলাম যতদিন আদৃতের চেহায়াও দেখতে চাইনি।আদৃত যখনই দেখা করতে বা কথা বলতে আসতেন মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে শুয়ে থাকতাম।নইলে রাগে চিল্লাচিল্লি করতাম।তারপর আর আসতেন নাহ আদৃত।কেন করল সে এমনটা?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কিহ পেল সে আমার সংসার ভেঙে?এখন সে আমার স্বামী ভাবতেও ঘৃণা করছে।তার জন্য আমার সাজানো গোছানো জীবনটা তছনছ হয়ে গিয়েছে।হসপিটাল থেকে ৫ দিন পরে রিলিজ দেওয়া হলে দাদি আর হৃদিতা বার বার অনুরোধ করে আদৃতের বাসায় যাওয়ার।কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকি।আদৃত লায়লাপুকে সব বললে আপু অনেক জোড় পূর্বক আমাকে নিয়ে আসে।আমি এখন আগের থেকে অনেক সুস্থ।আমার জীবনটা এখন একটা খেলনা মনে হচ্ছে।প্রথমে রায়হান আমায় পুতুল ভেবে আমার মনটা নিয়ে খেলা করল আর এখন আদৃত।

লায়লাঃএতো মনোযোগ দিয়ে কি ভাবছ জান্নাত?
আমিঃনা আপু এমনিই ভাবছি সামনে কি কি করব?
লায়লাঃযাই করো না কেন ভেবে চিন্তে করো জান্নাত কারণ তুমি এখন আদৃত আজাদ খানের স্ত্রী।
আমিঃআমি তারমতো বেইমানকে আমার স্বামী ভাবিনা আপু।
লায়লাঃআদৃত কি বেইমানী করেছে যে তুমি তাকে বেইমান বলছ?বরং সে আসল বেইমানকে তোমার সামনে এনেছে।
আমিঃআপু আদৃত যদি হৃদিতাকে রায়হানের সাথে রিলেশন করতে না বলত তাহলে এমন কিছুই হতো না।আমার নিজের সন্তানকে নিয়ে এইভাবে ঘুরে বেড়াতে হতো না এর বাড়ি থেকে ওর বাড়ি।

লায়লাঃএক্সজেটলি আদৃত হৃদিতাকে বলেছিল রায়হানকে নিজের প্রেমে ফেলতে।রায়হানকে সে বলেনি হৃদিতার প্রেমে পড়তে।রায়হান নিজ ইচ্ছায় হৃদিতার প্রেমে পড়েছে।আর লিশেন যে ঘরে বউ থাকতে অন্য মেয়ের প্রেমে পড়ে সে যেকোনো মেয়ের প্রেমেই পড়তে পারে।তোমার তো কপাল ভালো যে আদৃত তাও হৃদিতাকে পাঠিয়েছিল।রায়হান বেইমানি করলে তোমায় সামলিয়েছে।ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।নইলে আরাফের মতো কারো কবলে পড়লে বুঝতে।এইখানে যদি হৃদিতার প্রেমে না পড়ে অন্য কারো প্রেমে পড়ত তখন?তখন কি করতে?তখন তো আদৃতকেও পেতে না।বললে না বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেরাতে হচ্ছে তখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হতো।(আপু বেশ রাগ নিয়ে এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বললো)

আমি চুপ।আপুর কথা গুলো ভাবছি।আপু আবার বললো,
লায়লাঃএকবার ভেবে দেখেছো এই যে এতো ভালো একজন ডিজাইনার হয়েছো কার জন্য?শুধু আদৃতের জন্য।তোমার তো কপাল ভালো যে আদৃত তোমায় ভালোবাসে।একবার ভেবে দেখেছো যাকে এতবছর ধরে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছো,,বাবা-মাকে কষ্ট দিয়েছো সে ঠিকিই চলে গেল অন্য নারীর জন্য,কিন্তু যাকে ভালোবাসা তো দূর কখনো যার ভালোবাসাকে বুঝতেও চাইলে না সে ঠিকিই তোমায় ভালোবেসে গেল।এমন কিন্তু না যে আদৃতের লাইফে মেয়ে আসেনি হাজারো মেয়েরা হাজারো ভাবে ওকে নিজের করে নিতে চেয়েছে।কিন্তু আদৃত ফিরেও তাকায়নি তাদের দিকে তোমার জন্য।

আমি এখনো মাথা নিচু করে কথা গুলো শুনছি।ঠিকিই তো বলেছে আপু আদৃত তো আর জোড় করেনি ভালোবাসতে।সে নিজ ইচ্ছাতেই হৃদিতার প্রমে পড়েছে।আর যাকে ভালোবাসলাম সে আমার মর্যাদা দিলো না।কিন্তু যাকে ভালোবাসলাম না সে।উফফ কি করব আমি।কিন্তু যাই হোক আদৃত তো আমায় অন্ধকারে নাহ রাখতে।
আমিঃকিন্তু আপু আদৃত আমাকে এইভাবে অন্ধকারে না রেখে কথাগুলো বলতে পারত।
লায়লাঃআচ্ছা জান্নাত তুমি রায়হানের থেকে বাবুর কথা কেন লুকিয়েছিলে?
আমিঃবাবুকে যেন রায়হান না নিয়ে যায় তাই।

লায়লাঃমানে বাবুকে হারানোর ভয়ে।এক্সজেক্টলি এই জন্য আদৃতও তোমাকে বলেনি।তোমাকে হারানোর ভয়ে।আর এখন শুনেই যে রাগ করছ।তখন শুনলে যে কি করতে।আদৃতের মার্ডার করে দিতে।কারণ তখন আদৃতকে সেই ভাবে চিন্তেও না।আর তোমার যে পরিমাণ রাগ,জেদ।এই জন্য কথা গুলো আমিও তোমায় আগে বলিনি।বিষয়টা নিয়ে ভেবো।
আমিঃভাবতে গেলেই সব গুলিয়ে যাচ্ছে জটিল লাগছে।
লায়লাঃকারণ তুমি জটিল করে ভাবছ।সব রাগ জেদ বাদ দিয়ে মাথা ঠান্ডা করে ভেবো।মনটা শান্ত করে চিন্তা করো।আর নেও ছোটো পরি ঘুম।

আপু বাবুকে শুয়িয়ে দিয়ে বের হয়ে গেলেন।আমি গিয়ে বাবুর পাশে শুয়ে বাবুর হাত গুলো খেলতে লাগলাম আর ভাবতে লাগলাম আদৃত যা করেছে সব তো আমায় ভালোবেসেই করেছে।কিন্তু সে তো অন্যভাবেও কাজটা করতে পারত।আর রায়হান যদি কখনো আমায় রেখে অন্য কাউকে ভালো না বাসতো তাহলে আমি তো আগের মতোই সুখি থাকতাম।রায়হান তুমি যদি হৃদিতার প্রেমে না পড়তে কিছুই ঘটত না।আনি তুমি জাহান মিলে কতোই না সুখি হতাম।পরিবারটা পূর্ণতা পেত।কিন্তু রায়হান যদি সত্যি হৃদিতা ছাড়া অন্যকারো প্রেমে পড়ত।উফ বেইমান এখন তোমায় নিয়ে যে ঘৃণা আমার বুকে জমা হয়েছে তারপর আর ভাবতে চাইনা তোমায় নিয়ে।কিন্তু আদৃতের জন্য আদেও ঘৃণার জন্ম হয়েছে?কারণ মন বারেবার তার হয়েই কথা বলছে।তার হয়েই সুপারিশ করছে।আমি কিহ সত্যি আদৃতকে ভালোবেসে ফেলেছি?তার ভালোবাসার কাছে আমার ভালোবাসাটা হেরে গিয়েছে?হয়তবা তার ভালোবাসাটাই নিখুঁত ছিল আমার ভালোবাসাতেই খুঁত ছিল।সে ঠিক মানুষটাকেই ভালোবেসেছিল আর আমি ভুল মানুষটাকে।

হঠাৎ করে ফোনের রিংটন এর আওয়াজ আসতেই জলদি করে ফোন নিয়ে মিউট করে দিলাম।বাবুর ঘুম ভেঙে গেলে বিপদ।আমার মতো শুধু ভ্যা ভ্যা করে কান্দে।ওমা ৯ টা বাজে।কালকে ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।কিন্তু কি করব তা ভেবে রেখে ঘুমিয়েছিলাম।ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি আননোন নাম্বার।আমাকে আবার কার মনে পড়ল।ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে কেউ বললোঃ-হ্যালো আপু আমি হৃদিতা বলছি।আমার আর রায়হানের ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে।আমিও চলে যাচ্ছি আজকে রাতে বাংলাদেশ থেকে।তাই শেষ কলটা তোমায় করলাম।

আমিঃডিভোর্স দিয়েছো ও কিছু বলেনি?
হৃদিতাঃহুম বলেছে আমাকে আর আদৃতকে নাকি শেষ করে দেবে আর তোমায় নিয়ে কিছু বলিনি।
আমিঃহাস্যকর।কিছুই করতে পারবে না তোমাদের সে।এই জন্য চিন্তা করো না।তোমায় নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই।তবুও একটা কথায় বলব সম্মানের পরে টাকাকে রেখ।তুমি টাকার জন্য এবার যা করেছো করেছো।এবার ভালো কাউকে খুঁজে নিও নিজের জন্য।

হৃদিতাঃজ্বি আপু।আর আপু আমি আপনার স্বামীকে কখনোই কেড়ে নিতে চাইনি যেভাবে বলা হয়েছে সেইভাবেই কাজ করেছি।ধন্যবাদ আমার জন্য মনে কোনো অভিযোগ পুষে না রাখার জন্য।
আমিঃসে আমার স্বামী নই এখন সে প্রাক্তন।আমার স্বামী এখন আদৃত আজাদ খান।
হৃদিতাঃসরি আপু।ভালো থাকবেন।
আমিঃতুমিও ভালো থেকো।
ফোনটা রেখে দিয়ে বাবুর গায়ের উপর পাতলা কাঁথা দিয়ে ফ্রেস হতে গেলাম।একবারে রেডি হয়েই নিচে নামলাম।হালকা গোলাপি রঙের থ্রিপিস পড়েছি।নিচে নেমে৷ খাবার টেবিলে বসতেই আপু বলল,

লায়লাঃকোথাও যাচ্ছো নাকি?
আমিঃজ্বি আপু।একটা কাজ আছে।
লায়লাঃকখন যাবে?
আমিঃএই তো নাস্তা করে উঠেই যাবো।
লায়লাঃবাবুকে নিয়ে যাবে?
আমিঃহ্যা আপু নইলে একা কিভাবে রেখে যাবো?
লায়লাঃবাবু আমার কাছেই থাকুক।তুমি গিয়ে ঠান্ডা মাথায় আদৃতের সাথে কথা বলো।

স্বামী পর্ব ৯

আপুর কথা শুনে বিষম খেলাম।আপু আমার দিকে পানির মগটা এগিয়ে দিলো।আমি এই ভেবে অবাক হচ্ছি যে আপু কিভাবে জানল।
আপুঃতুমি রেডি হয়ে নিশ্চই ঘুরতে যাবে না এখন।থাকে আদৃতের বাড়ি সেইখানে যাবে।আর কালকের বলা কথা গুলো মাথায় রেখো।
আমিঃআচ্ছা।আপু রায়হানদেরো ডিভোর্স হিয়ে গিয়েছে।হৃদিতা ফোন দিয়ে বলল।
লায়লাঃএতো হওয়ারই ছিলো।আল্লাহ কর্মের শাস্তি ওকে দেবেন এটা খুব ভালো করেই জানতাম।ওহ এখন আবার বাবুকে নিয়ে ঝামেলা করতে পারে।
আমিঃলাভ নেই আপু।কোর্ট ডিসিশন দিয়ে দিয়েছে।
লায়লাঃতাও।ওর মতো লোককে দিয়ে বিশ্বাস নেই।ওরা বেইমান,স্বার্থপর,অমানুষ।
আমিঃহুম।

নাস্তা করে বের হয়ে গেলাম।বাবুকে আপুই সামলাবেন।আপু একদম নিজের বোনের মতো।অনেক ভালোবাসেন আমায়।ছোটোবোনের মতো।আদৃতের বাড়ি গিয়ে কলিংবেল দিতেই ময়না খালা এসে গেট খুলে আমায় দেখেই জড়িয়ে ধরলেন।আমিও জড়িয়ে ধরলাম।দাদিকে খুঁজতে গিয়ে শুনি তিনি নাকি আদৃতের উপর রাগ করে চলে গিয়েছেন গ্রামে।শুনে খুব খারাপ লাগল।আজকে শুক্রবার বিধায় আমি জানি আদৃত বাড়িই আছেন।কিন্তু এসে শুনি উনি নাকি বেশ কয়দিন রুমেই বন্ধ রেখেছেন নিজেকে।

উপরে যাওয়া বারণ।খাওয়ার আগে সার্ভেন্ট গিয়ে রুমের সামনে খাবার রেখে আসবেন।শুনে রাগ হচ্ছে।নিজের এতো অযত্নের মানে কি হুহ।উপরের দিকে পা বাড়ালাম।আদৃতের রুমের সামনে গিয়ে দেখি দরজা ভিড়ানো লাগানো না।আস্তে করে গেট খুলে ভিতরে ঢুকেই হা।টর্নেডো,আইলা,সিডোর সব যেন এক দিনে রুমের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে।কি অবস্থা কি।সব লন্ডভন্ড।কিন্তু আদৃত কই?এবার ঘুরতেই আমার চোঁখ আটকে গেল।খাটের সাইডে কারো হাত দেখা যাচ্ছে।সেই হাত জুড়ে রক্তের ছড়াছড়ি।আমি দুইএকপা পিছিয়ে গেলাম।আদৃত নিজেকে কিছু কতে ফেলেননি তো?

স্বামী পর্ব ১১