হারিয়েছি নাম পরিচয় পর্ব ১৪

হারিয়েছি নাম পরিচয় পর্ব ১৪
লেখিকাঃ দিশা মনি

মেঘলার রিফাতের সামনে গিয়ে বলে,
‘একবার আমার কথাটা শুনুন।’
রিফাত দাড়িয়ে যায়। মেঘলার বুকে একটু আশার সঞ্চার হয়। সে রিফাতের সামনে এসে বলে,
‘ধন্যবাদ আপনাকে। আমি বেশি সময় নেবো না। শুধু আপনাকে বলতে চাই যে কোন পরিস্থিতিতে আমি,,,’
মেঘলার কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই সে দেখতে পায় ফাবিহাকে। ফাবিহা এসে রিফাতকে বলে,
‘আমাকে পুনরায় একবার সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আমি জানতাম তুমি আবার আমাকে কাছে টেনে নিবে।’
রিফাত ফাবিহাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,

‘আমি ভেবে দেখলাম তুমি আমার জন্য ঠিক। অন্তত মিথ্যা পরিচয়ে আমার জিবনে এসে আমার মন নিয়ে তো খেলোনি। তোমাকে তাই ক্ষমা করাই যায়।’
ফাবিহা খুশিতে লা’ফিয়ে ওঠে। মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘এই ঠকবাজ মেয়েটা এখনো এখানে কি করছে? ওকে তুমি ক্ষমা করে দিয়েছ নাকি রিফাত? এই ভুলটা করো না। এখনই সিকিউরিটি দেখে বের করে দাও এই বিশ্বাসঘাতকটাকে।’=

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মেঘলার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছিল কথাগুলো শুনে। রিফাত কোন প্রতিক্রিয়া না করে চুপচাপ দাড়িয়ে ছিল৷ রোদেলা আর চুপ করে থাকে না। রিফাতের দিকে আঙুল তুলে বলে,
‘আপনি মেঘলার সাথে এমন ব্যবহার করতে পারেন না। আর কেউ না জানলেও আমি খুব ভালো করেই জানি আপনি ধোয়া তুলসীপাতা নন। আপনিও সমানভাবে দোষী।

আপনি আমাকে কেন বিয়ে করতে চেয়েছিলেন সেটা কি আমি জানি না ভেবেছেন? মুবিনের থেকে আমাকে আলাদা করার জন্য। আপনি ভেবেছিলেন যে মুবিন আপনার থেকে আপনার বাবাকে কেড়ে নিয়েছে তাই আপনিও আমাকে ওর থেকে কেড়ে নিয়ে প্রতিশোধ নেবেন। এখন যখন জানলেন আপনি নিজের কাজে সফল হন নি তখন খুব রাগ হচ্ছে। মনে হচ্ছে আপনি হেরে গেছেন। তাই সব রাগ মেঘলার উপর দেখাচ্ছেন।’

মেঘলা পুরো কথাগুলো শুনে হতবাক হয়ে যায়। এখন মেঘলার মনে হতে থাকে রিফাত তার সাথে এতদিন শুধু অভিনয় করে গেছে। ভালোবাসা,কেয়ার সবকিছু ছিল লোক দেখানো। আসলে সে মেঘলাকে রোদেলা ভেবে এমন করছিল শুধুমাত্র মুবিনের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দ্যেশ্যে।
মেঘলা রোদেলার হাত ধরে বলে,

‘রোদ চল এখান থেকে। একটু আগে আমাকে সবকিছু বলে দিতি তাহলে এতক্ষণ এখানে বসে থাকতাম না।’
যাওয়ার সময় রিফাতের সামনে এসে বলে,
‘আপনার জন্য আমার মনে যত ভালোবাসা ছিল সব এখন থেকে ঘৃণায় পরিণত হলো। হ্যা এটা ঠিক ভুল আমারও ছিল কিন্তু আপনার মতো কারো উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য, কারো ভালো বাসা কেড়ে নিতে চাইনি, কারো সাথে ভালোবাসার মিথ্যা নাটক আমি করি নি।’

কথাগুলো বলে আর একমুহূর্ত না দাড়িয়ে চলে যায় মেঘলা।
মেঘলা নিজের বাড়িতে ফিরে আসে। তার বাবা-মা ইতিমধ্যে সবকিছু জেনে গেছে। এখন তাদের নিজেদের পরিস্থিতির কথা ভেবে ভয় করছে। মুনিয়া তো রোদেলাকে সমানে দোষ দিয়ে যাচ্ছে,

‘সব হয়েছে তোর জন্য। না তুই বিয়ের দিন ওভাবে পালিয়ে যেতি আর না মেঘলাকে এভাবে বিয়ে করতে হতো। সবকিছুর মূলে আছিস তুই। এখন আমাদের কি হবে? রিফাতের বাবা এখন নিশ্চয়ই আমাদের সবকিছু কেড়ে নেবে। শেষপর্যন্ত রাস্তায় গিয়ে বসতে হবে আমাদের।’
রোদেলা নিজেও বুঝতে পারছিল না কি করবে। এখন সত্যিই তাদের সামনে অনেক বড় বিপদ। এমন সময় তাদের বাবা মঞ্জুরুল ইসলাম তাদের সামনে আসে। তাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছিল। মঞ্জুরুল ইসলাম রোদেলার হাতে একটা খাম ধরিয়ে বলে,

‘এই নে। তোদের দুই বোনের জন্য ব্যাংকে কিছু টাকা জমা রেখেছিলাম। এরমধ্যে ১৫ লাখ টাকা আছে। তোরা দুইবোন এই টাকা নিয়ে দূরে কোথাও চলে যা। আমি জানি আমিনুল হক আজই আমাদের সবকিছু কেড়ে নিবে। আমি আর তোর মা নাহয় গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাব। সেখানে যা একটা করে হোক চালিয়ে নেব। তুই একটা কাজ কর মেঘলাকে নিয়ে চট্টগ্রামে চলে যা। মেঘলা তো চট্টগ্রাম মেডিকেলে চান্স পেয়েছিল৷ ওখানে গিয়ে নিজের পড়াশোনা সম্পূর্ণ করুক। আমার মেয়েটার কত ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হওয়ার। শুধুমাত্র আমার স্বার্থপরতার জন্য মেয়েটাকে এমন দিন দেখতে হলো।’

মুনিয়া স্বামীর এই কাজকে সমর্থন করে।
‘ঠিক বলেছ তুমি। আমরা খুব স্বার্থপর হয়ে গেছিলাম। নিজেদের মেয়েদের কথা ভাবিনি। এখন আমাদের ওদের কথা ভাবতে হবে। রোদেলা আর দেরি করিস না। আজই মেঘলাকে নিয়ে চট্টগ্রামে চলে যা। নিজেদের খেয়াল রাখিস। আমি চাই না, তোরা আর কষ্ট পা। এখান থেকে দূরে গেলেই তোরা ভালো থাকবি।’

রোদেলা তার মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে থাকে। রোদেলা নিজের রুম থেকে তার মা-বাবার সব কথা শুনতে পায়। যদিও সে তার মা-বাবার উপর খুব রেগে ছিল। কারণ তাদের জন্যই আজ মেঘলার জিবনটা এমন হয়ে গেল। তবুও আজকের কথাগুলো শুনে তার নিজের মা-বাবাকে ক্ষমা করে দিতে ইচ্ছা করছে।
মেঘলা নিজের রুম থেকে দৌড়ে বাইরে এসে নিজের মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরে। কাদতে কাদতে বলে,

‘আমার সাথে কেন এমন হলো? আমি যে পারছিনা এত কষ্ট সহ্য করতে।’
মঞ্জুরুল ইসলাম মেঘলার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
‘আর কষ্ট করতে হবে না তোকে। দেখবি তোর ভবিষ্যত সুখের হবে। এখন তুই নিজের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ কর গিয়ে।’

মেঘলা ও রোদেলা তাদের মা-বাবার থেকে বিদায় নেয়। আজ সব ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবে তারা। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী একটি বাসে উঠে পড়ে দুজনে। রোদেলা মেঘলার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘তুই এখনো মন খারাপ করে থাকবি মেঘ? একটু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা কর।’
‘রোদ একটা কথা বলবি।’
‘হুম বল।’

‘তুই আমার সাথে কেন যাচ্ছিস? আমি নাহয় সবকিছু হারিয়ে চলে যাচ্ছি কিন্তু তুই তো কিছু হারাস নি। মুবিন তো তোকে সত্যি ভালোবাসে। তোদের বিয়েও হয়ে গেছে। তোরা দুজন তো সুখে থাকতেই পারিস।’

‘আমাদের নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। মুবিন এমনিতেও এখানে থাকে না। ও তো খুলনায় থাকে। পরে ওর সাথে যোগাযোগ করে নেব। এখন আপাতত আমার তোকে সামলাতে হবে। তোর জিবনটা গুছিয়ে দিয়ে তবেই আমি শান্তিতে থাকতে পারব। হাজার হোক এটা অস্বীকার করার তো উপায় নাই যে আমার জন্য তোর জিবনটা এমন এলোমেলো হয়ে গেছে।’
মেঘলা আর কিছু বলে না। চুপচাপ বসে থাকে। কিছুক্ষণ পরে বাস চলতে শুরু করে।

রিফাতের মনটা আজ সকাল থেকে কেমন ছটফট করছে। মেঘলার কথা খুব মনে পড়ছে তার। বিশেষ করে মেঘলার বলা শেষ কথাগুলো তাকে ভীষণ ভাবাচ্ছে। মেঘলা রিফাতকে ঘৃণা করবে এই কথাটাই তার কানে বাজছে বারবার।
‘ঐ মেয়েটার এত সাহস হয় কি করে? নিজে অন্যায় করে আবার আমাকে কথা শোনায়। একটা ঠক মেয়ে। ওর কথা আমি আর ভাবব না।’

রিফাত না চাইতেও মেঘলাকে ভুলতে পারছিল না। মেঘলার অভাব খুব করে বোধ করতে লাগছিল সে। মেঘলার স্মৃতি খুব কষ্ট দিচ্ছিল। রিফাত নিজেকে বোঝাচ্ছিল একটা চিটার মেয়ের কথা ভাববে না কিন্তু তার মন মানতে চাইছিল না। রিফাতের মনে হতে থাকে,

‘আমার উচিৎ ছিল মেঘলা কি বলতে চাইছিল সেটা শোনা। তা না করে শুধুমাত্র নিজের রাগ মেটানোর জন্য ফাবিহাকে এভাবে ডেকে এনে এরকম একটা নাটক করলাম। এটা একদমই ঠিক হয়নি।’
এমন সময় মেহের রিফাতের রুমের সামনে এসে বলে,

হারিয়েছি নাম পরিচয় পর্ব ১৩

‘ভেতরে আসব?’
রিফাত মেহেরকে দেখে বিরক্ত হয়ে বলে,
‘হ্যা আসুন।’
মেহের রিফাতকে এসে বলে,
‘তুমি মেঘলাকে সম্পূর্ণ ভুল বুঝেছ। মেয়েটা কোন পরিস্থিতিতে কি করেছে সেটা তোমার জানার দরকার ছিল।’

হারিয়েছি নাম পরিচয় পর্ব ১৫