হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ২

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ২
সাইয়ারা মম

মেহমান যাওয়ার পরে সব কিছু গোছাতে গোছাতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে টের পাইনি।সেই কোন সকালে একবার পান্তা ভাত খেয়েছিলাম তারপর কাজের ঠেলায় আর কিছু খাওয়া হয়নি।এখন সারা শরীর ম্যাজম্যাজ করছে তাই না খেয়েই একটু দরজাটা চাপিয়ে শুয়ে পড়লাম।ঘুমের মাঝে টের পেলাম কে যেন মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

মনে হচ্ছে মা যেমন করে সন্তানকে আগলে রাখে সেরকম করে আগলে রাখছে।তবে ঘুম অনেক গাঢ় হওয়ায় আর কিছুই মনে নেই।যখন ঘুম থেকে উঠলাম তখন রাত দশটার কাছাকাছি।ক্ষুধায় পেট টা চো চো করছে।চোখে মুখে পানি দিয়ে রান্নাঘরে গেলাম।পাতিলের তলায় দুই মুঠো ভাত দেখলাম। এটা দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলাম।প্লেটে ভাত নিলাম তখন বড়চাচি রান্নাঘরে আসলেন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-মিহু বুঝলি মাহিন ওর কয়েকজন ফ্রেন্ড নিয়ে আসছিল ওদের খাইয়ে দিয়েছি তাই আজ ভাত একটু কম পড়েছে।তুই আজ একটু কষ্ট করে মরিচ দিয়ে খেয়ে নে।
চাচির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।না খাওয়ার বিষয় নিয়ে নয়।তিনি আমার সাথে অনুনয় বিনয় করে কথা বলছেন।
-আর খাওয়ার পরে একটু কষ্ট করে থালাবাসন গুলো ধুয়ে রাখিস,মহুয়া আজকে আসে নাই।
মহুয়া আমাদের বাসায় কাজ করে।ও থাকা শর্তেও অনেক কাজ আমার করতে হয়।কারণ ও নাকি কাজে ফাকি দেয়।ভালোভাবে কাজ করে না তাই আমাকে দিয়ে রান্নাবান্না আর কাপড়-চোপড় ধোয়া মোছা করায়।মহুয়া আসেনি বলে আমার সাথে এমন বিনয় এর স্বরে কথা বলছেন। একটু মুচকি হেসে বললাম

-ঠিক আছে।
-আর শোন সকালে একটু তাড়াতাড়ি উঠিস।তোর ফুফু আসবে সাথে বিদিশা।ওর ভাই আর ভাবি আসবে গায়ে হলুদের আগে।তাই তাদের জন্য রুম ঠিক করে রাখবি।
ভাত খাচ্ছিলাম আর চাচির কথা শুনছিলাম।তখনই হঠাৎ মাহিন ভাই বোতল নিয়ে আসলেন পানি নিতে।আমাকে দেখে মজার ছলে বললেন

-কিরে মেও বিড়াল কয়বার খাওয়া লাগে?এতবার খেলে যে মোটা হয়ে যাবি পরে আর জামাই পাবি না।আর তুই এই অসময়ে ঘুমিয়ে ছিলি কেন?বিরিয়ানি এনেছিলাম।মা বললো তুই নাকি খেয়ে-দেয়ে ঘুমাচ্ছিস তাই আর ডাকি নাই।
মুখে একটা উচ্ছ্বাসের ভাব ফুটিয়ে বললাম
-আরে ভাই আমাকে নিয়ে এতো টেনশন করো না।দেখোই তো আমি প্রতি বেলায় দুইবার করে খাই তারপরও মোটা হচ্ছি না।তাই অযথা বকবক করো না।

-এটাও ঠিক বলছো যখনই তোর কথা জিজ্ঞেস করি হয় খেয়ে ঘুমাচ্ছিস না হয় পড়ছিস।
-আসলে কি বলোতো ভাই আমার তো কোনো কাজ নাই তাই অযথা সময় নষ্ট করি।তোমার তো কাজের অভাব নাই তাই তুমি সময় নষ্ট করো না।
-আরে হ্যাঁ আমিতো আমার ল্যাপটপ অন করে রেখে এসেছি।ভালো কথা মনে করেছিস
মাহিন ভাই পানি নিয়ে চলে যাওয়ার পরে চাচি কৈফিয়তের সুরে বললো
-বুঝলি মাহিন ওর ফ্রেন্ডদের সামনে বসে জিজ্ঞেস করেছিল তাই বলেছিলাম। আমি যাই না হলে সকালে উঠতে দেরি হয়ে যাবে।

বলে চলে গেলেন। আমিও কিছুই বললাম না।কি বলব? আর কাকেই বা বলব?
রাত আড়াইটার দিকে বই পড়ে উঠলাম।ঐ সময় ঘুমানোর ফলে চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছে না।তাই ছাদে গেলাম। অল্প খাওয়ার জন্য ক্ষুধা মিটে নাই।তারপরও ব্যাপার না এতেই সারা রাত চলে যাবে।ছোট বেলায় যখন মন খারাপ করে কান্না করতাম তখন দাদু চাদের পাশের একটা তারা দেখিয়ে বলতো ঐ যে দেখেছিস তোর মা আকাশে বসে তোকে দেখে।তখন আমি দাদুর কথা বিশ্বাস করে ঐ তারাটাকে মনের সব কথা বলতাম।বড় হওয়ার সাথে সাথে ব্যাপারটা যে ভিত্তিহীন তা জেনেও এখনো মনের সব কথা বলি ছাদে এসে।আজকে দু চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু গড়ে পড়ছে।থামার কোনো নাম নাই।মনের সব অভিযোগ জানালাম।

সিড়ির কাছে বসে আরেকজন এই অভিযোগ শুনে কান্না করছে।আর মনে মনে বলছে
-আমায় ক্ষমা করে দিস। আমি সব জেনেও তোকে সাহায্য করতে পারছি না।তবে কথা দিলাম তোকে এই জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবো।আর সব সময় নিরবে পাশে থাকব।
সকাল সাড়ে পাঁচটা বাজে।এর মধ্যেই একটি সাদা হুডি আর কালো ট্রাউজার পড়ে রাস্তায় দৌড়াচ্ছে এক যুবক।তার মুখে মাস্ক।জগিং করা শেষ হলে তার রুমে এসে মিনি ছাদের সুইমিং পুলে সাঁতার কাটে।তারপর ছাদের একপাশ থেকে সিড়ি দিয়ে নেমে পড়ে ফুলের বাগানের মধ্যে।তার সবচেয়ে পছন্দের ফুল বেলী।কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে সে এখন পর্যন্ত তার বাগানে বেলীর একটা চারা আনতে পারেনি।বাগানে সবকিছু থাকতেও যেন অপূর্ণ রয়েছে।বাগানে একটা দোলনা আছে সেটায় বসে ব্লুটুথের মাধ্যমে কথা বলছে

-হুম পিয়াস বল।
পিয়াসের হাত পা কাঁপছে।সবাই মিলে ওকে বোকা বানালো।ওর হাত দিয়ে আরফানকে ফোন দেওয়াচ্ছে যে ওকে ড্রয়িং রুমে আনতে হবে।যা কিছুই বলুক না কেন ওকে এখানে আনতে হবে।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল
-ভাই তুমি কই?
-কেন?
আরফানের গম্ভীর কথা শুনে পিয়াসের হার্ট এটাক করার অবস্থা।কোন মতে বলল

-ভাই একটু ড্রয়িং এ আসো কথা আছে।
বলেই ফোনটা কেটে দিল। এখন পিয়াস জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে।মনে হয় বাঘের গুহা থেকে বেঁচে ফিরছে।
-নেহাল নীলু থাকতে আমার হাতে ফোন দেওয়ালি কেন?নীলু তো ভাইয়ের অর্ধেক পরাণ।তাইলে?
-আরে ভাই বুঝিস না কেন নীলুই তো ভাইকে রাজি করাবে।তাই ও এখন কোনো কথা বলবে না।
-ওহ তারমানে আমার রোল শেষ তাই না

-আরে পিয়াস ভাই এত খুশি হতে নেই।একটু পড়ে যখন ভাইয়া এসে জিজ্ঞেস করবে তখন কী বলবে?
নীলু চোখ নাচিয়ে পিয়াসকে জিজ্ঞেস করল।নীলুর কথায় পিয়াসের কেঁদে দেওয়ার অবস্থা।
-ভাই আর বোন এ কোন বিপদে ফেললি।ছোট থাকতে ভাইয়ের হাতে অনেক মাইর খাইছি এখন আর খাইলে মান ইজ্জত কিচ্ছু থাকবে না।ভাই কোনো মতে বাচাইস।
পিয়াসের আকুতি মিনতির আগেই আরফানের আগমন ঘটলো।পিয়াসকে জিজ্ঞেস করল
-কি জন্য ডেকেছিস?
-ভাই আম্ ম্ মি ডাক্ কি নাই তো

আরফান শান্ত চোখে পিয়াসের দিকে তাকিয়ে আছে।নেহাল বুঝতে পারলো এই পিয়াস যেকোনো মুহূর্তে গড়বড় করে দিতে পারে।তাই সে নিজেই বলল
-ভাই আসলে হয়েছে কি নীলু কালকে থেকে মন খারাপ করে বসে আছে।আমাদের কিছু বলছে না।দেখোতো তোমাকে কিছু বলে নাকি।
নেহালের কথা শুনে আরফান নীলুর পাশে বসল।খুব নরম স্বরে জিজ্ঞেস করল
-মন খারাপ?
নীলু মাথা নাড়ালো
-কী জন্য?
চুপ করে থাকলো
-ওদের যেতে বলব?
নীলু কিছু বলার আগেই পিয়াস বলল

-হ্যাঁ ভাই আমরা গেলেই মনে হয় ও বলতে পারবে।নেহাল চল্ চল্।
নেহালের মনে হচ্ছে পিয়াসকে ধরে কাঁচা চিবিয়ে ফেলি।আরফান কি বলছে তা তারা ওর জন্য সামনে বসে শুনতে পাবে না।নেহাল পিয়াসের গলায় হাত দিয়ে বের হয়ে আসলো।রুমের বাইরে এসেই ওর গলা চেপে ধরল।
-ভাই ছাড় মরে যাব তো।
নেহাল ওর গলা ছেড়ে বলল-হাদারাম

কিছুক্ষণ বসার পরে পিয়াস বলল-চল আমরা উঁকি মেরে দেখে আসি আরফান ভাই কি বলছে?
বলার পরে নেহালের চোখের দিকে তাকাতেই নিজে নিজে বলে উঠল
-ভাই বুঝেছিস আম্মু না কি যেন নিতে বলেছিল। আমি সেটা কিনে দিয়ে আসি ঠিক আছে।পাশাপাশি ই তো বাড়ি।যাব আর আসবো।বলে চলে গেল আর বিরবির করতে লাগলো
-একটায় চক্ষু দিয়ে চাকু মারে আরেকটায় কথা দিয়ে ছুড়ি
-কিছু বলবি না?

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ১

-তুমি জানো নেহাল ভাইয়ের বিয়ে হচ্ছে
-হ্যাঁ তো সমস্যা কোথায়?
-ভাই তোমার ছোট হয়ে আগে বিয়ে করছে কেন?
-আরে কোথাও কি লেখা আছে নাকি বড় ভাই বিয়ে না করলে ছোট ভাই আগে বিয়ে করতে পারবে না।
-আমি চাই তুমি আগে বিয়ে করো।

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৩