হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৩১

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৩১
সাইয়ারা মম

আরফান বিকেল থেকে শরীর অসুস্থ বোধ করছে । মাথাটা কেমন যেন ভন ভন করে । কেমন কেমন লাগে ।ইফতারি করে আরফান একটা যে ঘুম দিয়েছে আর ওঠার নাম নেই । মিহু যা কাজ ছিল সব গুছিয়ে রুমে এলো । দেখলো রুমের মধ্যে সব অন্ধকার । তাই আলো জ্বালিয়ে বেডের কাছে গেল । ঘুমন্ত আরফানকে দেখতে একটা ছোট্ট বাচ্চার মতো লাগে । মিহু কতক্ষণ আরফানের চুলে হাত বুলিয়ে দেয় আবার কতক্ষণ গাল টেনে দেয় । তারপর নিজের মনেই হাসতে থাকে । আবার দুই হাত দিয়ে আরফানের গাল দুটো চাপ দিয়ে বলতে থাকে

– কি কিউট একটা মানুষ । দেখলে মনে হয় সারা জনম তাকিয়ে থাকি ।
বলতে বলতে একবার অন্য দিকে তাকিয়ে আবার আরফানের দিকে তাকাতেই মিহু ভয় পেয়ে যায় । একটু আগেও যে গভীর ঘুমে ছিল এখন সে ভ্রু কুঁচকে মিহুর দিকে তাকিয়ে আছে । মিহু ভয় পেয়ে উঠে গেল
– আল্লাহ্, আপনি তো ভয় পাইয়ে দিলেন । এমন করে কেউ তাকায় ?
– তুমি আমাকে ডাকোনি কেন ?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মিহু হতভম্ব হয়ে আছে । আরফানকে ডাকবে ? কিন্তু কিসের জন্য? মিহু বুঝতে না পারায় আবার জিজ্ঞেস করল
– কিসের জন্য ডাকব?
– আজব মিহু এখন কি মজা করার সময়? যদি সেহরীর টাইম শেষ হয়ে যায়?
মিহু একটু বোকা হেসে বলল- আপনি মজা করছেন নিশ্চয়ই? এখন সেহরী করতে যাবো কোথা থেকে ? এখন তো রাত ৯ টা বাজে
আরফান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো আসলেই নটা বাজে । কিন্তু আরফানের কিছু মনে পড়ছে না কেন ? মাথাটা আবার ঝনঝন করতে লাগলো । আরফানের এমন অস্বাভাবিক ব্যবহার দেখে মিহু বলল

– আপনি ঠিক আছেন তো?
– হ্যাঁ হ্যাঁ আমি ঠিক আছি । তুমি আমাকে একটু কফি বানিয়ে দাও তো
– দিচ্ছি বলে মিহু না চাইতেও চলে গেল । আজব তো আরফান হঠাৎ এমন ব্যবহার করবে কেন ?

আরফান নিজেও বুঝতে পারছে না ওর সাথে কি হয়েছে? জীবনে এমন পরিস্থিতিতে পড়েনি কখনো । আচ্ছা আরফান আজকে দিনে কি কি করেছিল কিছুই তো মনে করতে পারছে না । কিছু কিছু অস্পষ্ট মনে পড়ছে । আরফান অফিস থেকে ফিরে কোথাও একটা গিয়েছিল কিন্তু কোথায় গিয়েছিল সেটা মনে পড়ছে না। আচ্ছা এমন কি হতে পারে আরফান হয়তো ঐ সময় কোনো বিষয় সম্পর্কে জেনেছিল কিন্তু কেউ চায় যে ঐ বিষয় টা আরফান না জানুক । তাই আরফান তার ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়েছে ? কিন্তু কে করবে আর কেন ই বা করবে ?

আরফান আর ভাবতে পারল না কিছু । মাথার মধ্যে সব এলোমেলো হয়ে পড়েছে । মনে হচ্ছে মাথার কোনো একটা জায়গা ছিড়ে যাচ্ছে । মাথা ধরে বেডের মধ্যেই আবার বসে পড়লো ।
মিহু কফি নিয়ে আসার পরে বেডের দিকে তাকিয়ে দেখলো আরফান মাথা ধরে কেমন অস্বাভাবিক ব্যবহার করছে । দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে মিহু কফি রেখে আরফানের কাছে বসে পড়ল । তারপর আরফানকে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা করে বলতে লাগল

– আপনার কি হয়েছে? এরকম করছেন কেন ? কোথায় ব্যাথা লাগছে ?
– মিহু আমার মনে হচ্ছে আমার মাথায় কেউ ব্লেড দিয়ে আঘাত করছে । আমি সহ্য করতে পারছি না । প্লিজ কিছু করো মিহু নইলে আমি মারা যাবো
– প্লিজ এমন কথা বলতে হয় না । আপনি একটু ধৈর্য্য ধরুন আমি কিছু করার চেষ্টা করছি

মিহু কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না । আরফানের এমন অবস্থা সহ্য ও করতে পারছে না । চোখ দিয়ে অঝোরে বৃষ্টি নামার সাথে সাথে দিগ্বিদিক হয়ে দৌড়ে রেবেকার ঘরে গেল । রেবেকা এশার সালাত পড়ে মাত্র তারাবির সালাম পড়তে বসবে তখন মিহুর এমন অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গেল । মিহু কান্নার দরুন কিছুই বলতে পারছে না শুধু হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে । রেবেকা এসে দেখলো আরফানের অস্থিরতা আরো বেড়ে গিয়েছে তাই তিনি নেহালকে ডেকে আনলেন । এরপর আরফানকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করলেন ।

হাসপাতালে এমার্জেন্সি রুমের সামনে বসে প্রতিটা প্রাণী নিস্তব্ধ হয়ে আছে । নেহাল দৌড়া দৌড়ি করছে এই ওষুধ সেই ইন্জ্ঞেকশন এগুলো নিয়ে আসা নিয়ে । নীলু হাটু মুড়ে মাথা নিচে দিয়ে আছে । মিহু তো সেই কখন থেকে কান্না করতে করতে গলা ভেঙে ফেলেছে । পিহু ওকে সামলাচ্ছে ।
আরফানের এই অবস্থার খবর পেয়ে পিয়াস দৌড়াতে দৌড়াতে এসেছে । দৌড়ের কারণে সারা শরীর ঘামে ভিজে গিয়েছে । ওদের ফ্যামিলি ডাক্তার জাভেদ হাসান ও এখানে চলে এসেছে । এমন কি মাহিন এসেছে সাথে সাথে তুলিও । পিয়াস এসেই পিহুকে জিজ্ঞেস করল

– ভাবী আরফান ভাই এখন কেমন আছে ।
– ভাইয়া ডক্টর এখন পর্যন্ত কিছুই জানায় নি । অনেকক্ষণ হয়ে গেল তিনি বের ও হচ্ছেন না ।
জাভেদ হাসানের এখানের সাথে চেনা পরিচিতি আছে তাই সে ডক্টরের কাছে চলে গেল । মাহিন এক কোণে বসে একবার মিহুর দিকে তাকালো । যতোই হোক প্রথম ভালোবাসা বলে কথা । ওর এমন অবস্থা দেখে খারাপ লাগছে । তবে নীলুর দিকে তাকাতেই মনের মধ্যে আঘাত হানলো । নীলু তো এমনিতে এতো ট্রেস নিতে পারে না । তাহলে ও এখন কেমন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে? এখন ফর্মালিটি দেখিয়ে লাভ নেই কারণ এখন জীবন আগে । গতিশীল পায়ে নীলুর দিকে এগিয়ে গিয়ে নীলুর পাশে বসল ।

– নীলু তুমি কি আমার কথা শুনছো ? দেখো এই পরিস্থিতিতে তোমার উচিত সবাইকে সামলানো সেখানে তুমি যদি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ো তাহলে
নীলুর কোনো রেসপন্স না দেখে মাহিন নীলুর হাত ধরে একটু নড়া দিল । দেখলো নীলু কিছুই বলছে না।তাই একটু জোরে নড়া দিতে নীলু মাহিনের দিকে হেলিয়ে পড়লো । মাহিনের যেটা ভয় হয়েছিল সেটাই হয়েছে , নীলু জ্ঞান হারিয়েছে । মাহিন নীলুকে একটি আলাদা কেবিনে দিয়ে আসলো । আর রেবেকাকে ওর কাছে রেখে আসলো
একটু পরে ডক্টর বের হতেই মিহু উঠে দাঁড়িয়ে ভাঙা গলায় জিজ্ঞেস করল

– উনি কেমন আছেন এখন ?
– দেখুন পেশেন্টের রক্তে প্রচুর পরিমাণে অ্যালকোহল আর বিষাক্ত পদার্থ পাওয়া গিয়েছে । তাই আমাদের এক্ষুনি এ পজেটিভ রক্ত প্রয়োজন তিন ব্যাগ ।
কেউ কিছু বলার আগেই পিয়াস বলে উঠলো – ডক্টর আমার এ পজেটিভ রক্ত । আমার কাছে থেকে নেন ।
– কিন্তু আমাদের তিন ব্যাগ লাগবে । আপনার শরীর থেকে সর্বোচ্চ দুই ব্যাগ ই নেওয়া যাবে । কিন্তু আপনার যা শরীর সেখানে এক ব্যাগ নেওয়া ই রিস্কের বিষয় ।

– আপনি এখন আমার কাছ থেকে নিন । আমি না হয় পড়ে অন্য একজনের থেকে নিয়ে নেবো
– তার কোনো দরকার নেই পিয়াস । আমার রক্তের গ্রুপ ও এ পজেটিভ । আর আমার ছেলের এমন অবস্থায় তো আমি বসে থাকতে পারি না ।

রেবেকার কথা শুনে ডক্টর পিয়াস এবং রেবেকাকে আসতে বলল তার সাথে । আসলে সব সৎ মা সমান নয় । কেউ ভালো কেউ খারাপ । অনেকেই আছে যে সন্তানের ভালো করতে চায় কিন্তু সৎ মা হওয়ার ফলে তাকে লাঞ্ছনার স্বীকার হতে হয় । সৎ মা যদি ভালোর জন্য ও তাকে বকা দেয় তাহলেও সে খারাপ । আর তার একটাই কারণ , তিনি হলেন সৎ মা ।
আরফানকে বেডে দেওয়ার পর থেকে মিহু সেই যে আরফানের হাত ধরে বসে আছে আর ছাড়ছেই না । এমনকি ডক্টর আরফানের কেবিনে কাউকে ঢুকতে নিষেধ করেছে কিন্তু মিহু কারো কথা শুনছেই না । আরফানের হাত ধরে বসে আছে । নেহাল জিজ্ঞেস করেছিল জাভেদ হাসান কে যে আরফানের সাথে এমন কি হয়েছে?

– আরফানের রক্তে প্রচুর পরিমাণে মানে হাই পাওয়ারের অ্যালকোহল আর বিষাক্ত পদার্থ পাওয়া গিয়েছে । যেটা আরফানের কিছু স্মৃতি ধ্বংস করে দিতে পারে । হয়তো আরফানের জ্ঞান ফেরার পরে অনেক কিছু নাই মনে থাকতে পারে । আবার অনেক কে ভুলেও যেতে পারে ।

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৩০

( মিহু আর পিহুর চেহারা এক না এটা অনেক আগেই গল্পে বলে দিয়েছি কিন্তু কালকে মিহুর দাদুর কথা নিয়ে একটু সমস্যা আছে , যেটা আমি সামনের কয়েক পর্বে ক্লিয়ার করব । ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।)

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৩২

1 COMMENT

Comments are closed.