হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৫

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৫
সাইয়ারা মম

সকাল থেকে সবাই মিলে তোড়জোড় করছে।আজকে কথা পাকাপোক্ত করবে কবে এঙ্গেজমেন্ট হবে আর কবে বিয়ে।আরফান রাজি হয়েছে শুনে তুলির যেন খুশির বাধ মানছেই না।সে যখন শুনেছে তখন ই পার্লারে গিয়ে ফ্রেশিয়াল করে এসেছে।তুলির মা আর খালা তো তুলির পেছনে লেগে আছে কোন সাজে ওকে ভালো মানাবে।আজকেই তুলি পার্লার থেকে সেজে আসতে চেয়েছিল কিন্তু সেটা অতিরিক্ত হয়ে যাবে বলে তুলির মা নাকোচ করে দিয়েছে।

মিহুর ওপর আজকে সবগুলো রান্নার দায়িত্ব পড়েছে।প্রতিটা পদে মিহুর হাতের ছোঁয়া রয়েছে।সকাল থেকে খেটেই যাচ্ছে।যদিও মহুয়া আর মিহুর ফুফুও সাহায্য করেছে।একটা বাজতেই মিহুর সব রান্না শেষ হলো।মেহমানরা বারোটার দিকে এসেছে।পুরুষেরা সবাই মসজিদে গিয়েছে জুমার নামাজ পড়তে।আর মহিলারা ঘরের মধ্যে অবস্থান করছে।মিহু সবকিছু ঠিকঠাক করে রুমে গেল।এখন গোসল না করলে শরীরটা একদম ঘ্যানঘ্যান লাগবে।গোসল শেষ হলে মিহু নামাজটা পড়ে নেয় তারপর শ্যাম্পু করা চুলগুলো ছেড়ে দেয়।চুলগুলো পিঠ ছড়িয়ে কোমরের নিচে চলে যায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-মাশাআল্লাহ।তোমার চুলগুলোতো খুব লম্বা আর সুন্দর
বিদিশার বয়সী একটি মেয়ের কথা শুনে মিহু দরজার দিকে তাকায়।নীল গাউন পড়া সুন্দর একটি মেয়েকে দেখে মিহু হতভম্ব হয়ে যায়। কে এই মেয়ে? যে ওর রুমে অবস্থান করছে?
মিহুকে হতভম্ব হতে দেখে নীলু খিল খিল করে হেসে দেয়।মিহু মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।নীলু ওর দিকে তাকিয়ে বলে
-আমি নীলু।আরফান আর নেহাল ভাইয়ের বোন।আচ্ছা তুমি বুঝি পিহু ভাবির জমজ বোন?
মিহু মুচকি হেসে বলে-হ্যাঁ।কিন্তু তুমি আমাকে চিনলে কীভাবে?

-নেহাল ভাই তোমার কথা বলেছে।আচ্ছা তোমার চুল এত লম্বা কিভাবে বানালে?
-আমি তো বানাইনি।এগুলো আমার এমনিতেই হয়েছে।আমার মায়েরও নাকি এরকম চুল ছিল
-তাই বুঝি?তাহলে পিহু ভাবির অমন বড় চুল নেই কেন?সে তো তোমার বোন।
-পিহুর ও ছিল কিন্তু ও কেটে ফেলে তাই ছোট চুল ওর।কিন্তু তুমি কী আমাকে কিছু বলবে?
-না,কেন?

-না ইয়ে মানে হঠাৎ আমার ঘরে এলে যে।
-হঠাৎ কোথায়? আমি তো আগের বার আসি নি তাই তোমাদের বাড়ি ঘুরে দেখছিলাম।তোমাদের সবার রুম ওপরে দো তলায় কিন্তু তুমি নিচে থাকো কেন?
মিহু মনে মনে হাসল। এই মেয়ে দেখছি বয়সে বড় হলেও অনেক আচরণই শিশুর মতো।সব কিছু জানার ইচ্ছা তার।তবে মিহুর ওকে ভালো লাগছে।উত্তরে বলল
-আসলে হয়েছে কি তুমি আমার দাদুর কথা শুনেছো তো?
-হুম

-আমার দাদুর কোমরে ব্যাথা আছে তাই তিনি ওপরের রুমে থাকতে পারেন না।এই কারণে তিনি নিচে রুম নিলেন আর দাদুর মাঝে মধ্যেই এটা সেটা লাগে সেগুলো এনে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। এজন্যই মূলত এই রুমে থাকি।তরে এই রুমের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে সেটা কি আন্দাজ করতে পারো?
নীলু চারদিকে একবার তাকালো তারপর কিছুক্ষণ ভাবলো।তারপর বলল
-তোমার এইরুমে বিশেষ কেউ তার প্রিয় জিনিসগুলো সাজিয়ে রাখত।
মিহু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।একটু আগেও যে মেয়েটিকে ও বোকা ভেবেছে সেই মেয়েটি নির্দ্বিধায় কি সুন্দর এই প্রশ্নের উত্তরটা বলে দিল।মিহুর ঘোর কাটল বিপাশার ডাকে।

-এই নীলু তুমি কী ফ্রেশ হয়েছো?
-হ্যাঁ হয়েছি।
-এই দাড়াও দাঁড়াও।তুমি আমার রুমে ফ্রেশ হতে এসে আমাকে মিথ্যা বলেছ আর এখন ফ্রেশ না হয়েই চলে যাচ্ছ?
-কই মিথ্যা বললাম? আর ফ্রেশ হয়েছি তো।মাইন্ড ফ্রেশ তো সব ফ্রেশ।কথাগুলো বলে নীলু চলে গেল।বিদিশাও ওর পেছনে পেছনে গেল।
নেহালের বেজেছে মহা ঝামেলা।আরফান ভাই আসে নাই।বলেছে নীলু যা বলবে তাই হবে।আর এদিকে নেহাল এসে ফেসে গেছে।তুলির খালা তার পানে চিবানো দাত দিয়ে কয়েকটা হাসি দিল।তারপর জিজ্ঞেস করল

-তা বাবাজি কদ্দূর?
উনি যে কিসের কথা জিজ্ঞেস করছেন সেটা ও বুঝতেই পারছেনা।কোনো কথা না বলায় তিনিই বললেন
-কদ্দূর পরালেহা করছ?
-জ্বী বাংলায় অনার্স কমপ্লিট করে এখন লেকচারার পদে আছি।
ফচাৎ করে পানের পিক ফেলে আবার জিজ্ঞেস করল
-ল্যাকচারা আবার কী?
-হ্যাঁ আন্টি কিছু বললেন?
-কইছি ল্যাকচারা কী
নেহাল কিছু বুঝতে পারছে না দেখে পিয়াস বলল
-ল্যাকচারা মানে শিক্ষাকতা।

-কি বাংলার শিক্ষক? আরে রে বাংলা পরতে গেলা ক্যান?ইংরাজি পরতা।জানো ইংরাজি না পারলে কত্ত খতি অয়। আরে কবির মাইয়্যাডার কফাল এক্কেবারে পুরলি।শ্যাস ম্যাস কিনা বাংলার ষাড়ের কাছে মাইয়্যা দিবি।
খালার বলা ষাড় শব্দটা শুনে নেহাল ভয় পেয়ে গেল। তাকে কি কোনোভাবে ষাড়ের মতো লাগছে?আজকে তো পিহুর পছন্দ করা খয়েরি পাঞ্জাবি পড়ে আসছে।কই ভিডিও কলে যখন কথা হলো তখন তো কিছু বলল না।ও কাঁপা কাঁপা কন্ঠে পিয়াসকে বলল

-ভাই আমাকে কি ষাঁড়ের মতো লাগছে?
পিয়াস ও ঘোরের মধ্যে আছে।এই মহিলার কোন এঙ্গেলে নেহালকে ষাড় মনে হয়।তাও আবার যেই সেই ষাড় না বাংলার ষাড়?
পিয়াস আর নেহালকে কোমায় পাঠাতে সেখানে বিদিশা এসে উপস্থিত হল।সব কথা শুনে ওর হাসতে হাসতে চোখের পানি বের হয়ে গেছে।

-ভালো বলেছে আন্টি।আপনারা তো ইংরেজী ষাড় বাংলা ষাড়ের মানে বুঝবেন কিভাবে।
কথার মাঝে মাহিন এসে ওদের উদ্ধার করল। আসলে খালা ষাড় বলতে স্যার অর্থাৎ শিক্ষক বুঝাইছে।সবকিছু শুনে নেহাল হাফ ছেড়ে বাচল।ভাগ্যিস মাহিন এসেছিল না হলে আজকে সত্যিই সে ষাড়ের সমান হয়ে যেত

আলোচনার পরে কথা হলো যে যতটুকু ছোট আয়োজন করে পারা যায় সেভাবে বিয়ে হবে। এক কথায় ঘরোয়া ভাবে।কারণ পিহুর দাদু জানিয়েছে সে কখন আসবে তার ঠিক নেই আবার নেহালের ভার্সিটিতে এক্সাম শুরু হবে।ঐদিকে আরফান আর দশদিন পরে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।কারণ সে একটা ডিল করেছে যেখানে তার প্রডাক্ট বাহিরে পাঠানো হবে।সে আবার সেটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।তাই বলা হয়েছে এঙ্গেজমেন্ট বা গায়ে হলুদ করা হবে না।আর এক সপ্তাহ পড়ে বিয়ে।তবে পরে রিসিপশন বড় করে আয়োজন করা হবে।
সবাই যখন নেহালদের এগিয়ে দিতে গেল তখন বিদিশা পিয়াসকে লক্ষ্য করে বলল

-ইংরেজী ষাঁড় আবার আসবেন
-অবশ্যই আসবো।এখানে না এলে তো জানতামই না যে জ্বীনের বাদশা আছে
বিদিশার নাম নিয়ে বলায় গাল দুটো বোম করে বসছে।নীলু তা দেখে হেসে ফেলল।বলল
-এই বিদিশা আজকে থেকে তাহলে আমরা ছেলে পক্ষ আর তোমরা মেয়ে পক্ষ।দেখা যাক কারা এই কয়েকদিনে কাদের বেশি পচাতে পারে

-ওকে।তোমার শর্ত একসেপ্টেড।
বাসায় আসার পরে রেবেকা নীলুকে জিজ্ঞেস করল
-নীলু তোমার কী ভাবিদের পছন্দ হয়েছে?
-হ্যাঁ মামণি।আমি তো পিহু ভাবিকে আগে থেকেই চিনি।আর আরফান ভাইয়ের জন্যও মেয়ে পছন্দ হয়েছে।
রেবেকা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
-পিহুকে আগে থেকে চিনতে মানে?

-কেন নেহাল ভাই তোমাকে কিছু বলেনি?কই আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম তুমি জানো কিনা তখন তো বলল তুমি নাকি জানো
নেহাল পানি খাচ্ছিল কিন্তু নীলুর কথা শুনে পানি গলায় আটকে গেল।পিয়াস পেয়েছে সুযোগ। নেহাল সব সময় ওকে ভয় দেখায়। এই পানি গলায় আটকানোর ছুতোয় সে নেহালের পিঠে সপাট করে দু তিনটে কিল বসিয়ে দিল।নেহাল পারছেনা কিছু বলতে না পারছে কিছু সইতে।তার এখন মনে হলো ‘হাতি কাদায় পড়লে পিপড়াও লাথি মারে’ এই প্রবাদটা তার জন্য বানানো।
কোনো মতে পানিটুকু গিলে রেবেকাকে বলল

-আরে মা ঐ,,,,,,,,ঐ,,,,,,ঐতো ঐতো,,,, না মানে ঐযে ঐযে
-নেহাল ভাই এরকম ঘাবড়াচ্ছো কেন?রমন বটমূলের কথা তুমি মামনিকে বলো নাই?
-হ্যাঁ ভাই পিহু ভাবির সাথেই তো তোমার বিয়ে হবে।এখন বলে দাও।কিছুই হবে না
পিয়াস কথাগুলো বলে দাত ক্যালিয়ে বসল।নেহাল যদি এখন কিছু না করে তাহলে এই দুই বাটপার মিলে ওর বিয়ের সাধ ঘুচিয়ে দেবে।নীলুকে বলল

-নীলু তুই যে ভাইয়ের জন্য মেয়ে পছন্দ করেছিস তা ভাইকে বলবি না?তাকে ছবি দেখাবি না?আর পিয়াস তোকে না কাকিমণি বাসায় যেতে বলেছে?তুই এখনো এখানে কি করো যা ভাগ।
নীলু আর পিয়াস দুজনে মিলে একটু নেহালকে পচাতে চেয়েছিল।কিন্তু এ বেটাতো বাঘের মতো ক্ষেপেছে।নীলু তো সুযোগ বুঝে কেটে পড়েছে।আর পিয়াস তো আগেই ভো দৌড় দিয়েছে।আর মন মনে বলছে
‘খালা যে ওকে বাংলার ষাঁড় বলেছে মন্দ বলেনি।আসলেই একটা ষাঁড়।’

ষাঁড়ের কথা মনে পড়ায় বিদিশার কথা মনে পড়ল।ফোনটা বের করে বিদিশা লিখে সার্চ দিল।
রেবেকা শান্ত হয়ে নেহালের দিকে তাকালো।নেহাল তার মায়ের সামনে হাটু ভেঙে রেবেকার হাত দুটো ধরল। একটা বড় দম ফেলে বলল

-মা আমি জানি তুমি কী জিজ্ঞেস করবে?কেনো তোমার কথার অবাধ্য হয়েছি তাইতো?মা একটা প্রোডাক্ট খারাপ হলে কি ঐ ধরনের সকল প্রডাক্ট খারাপ? এই ধর একটা আম পচা হলে কি সকল আম ই পচা হয়ে যাবে?
আমি পিহুকে ভালো বাসি দুবছর ধরে।পিহুও আমায় ভালোবাসে।মা চাইলেই কিন্তু আমরা আগেই পালিয়ে যেতে পারতাম।কিন্তু মা আমি তোমার কথাকেই প্রধান্য দেই।ইভেন এখনো দেই।

-তাহলে আমি যদি বলি পিহুকে বিয়ে না করতে কি করবি তখন? আমার কথা শুনবি তখন?
একটু চুপ থেকে বলল-তুমি যদি বলো এ বিয় হবে না তাহলে অবশ্যই হবে না।আমি পিহুকে করব না বিয়ে।
বলে উঠে দাঁড়াল।তারপর চলে যেতে উদ্যত হতে রেবেকা ওর হাত টেনে ধরল।ওকে তার পাশে বসিয়ে বলল
-পাগল ছেলে।তুই কি ভেবেছিস আমি এইটা করব?বোকা একটা।আমি তো তোকে পরীক্ষা করেছিলাম তুই কেমন সন্তান?
নেহালের চোখে পানি এসে গিয়েছিল রেবেকার কথা শুনে।মাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল

-মা আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছো।এরকম কেউ করে?আমি একটু হলেই মরে যেতাম।
রেবেকা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।তার ঠোটে মুচকি হাসি লেগে থাকলেও অন্তরে তার বেদনার অশ্রু ঝরছে।সে তার ছেলেকে বলেছিল এইসব প্রেম ভালোবাসায় না জড়াতে।কারণ তিনি এই ভালোবাসায় বিশ্বাস করে ঢকেছেন।
ঘটনাটা প্রায় তিন দশক আগের।তিনি গ্রামের সাধারণ মেয়ে হলেও অসম্ভব মেধাবী ছাত্রী ছিলেন।দেখতে শ্যাম বর্ণের হলেও চেহারায় আলাদা সৌন্দর্য ছিল।তখন তিনি ছিলেন ক্লাস নাইনের ছাত্রী।ঐ সময়ে ক্লাস নাইনে পড়া যেই সেই ব্যাপার না।নেহালের বাবা আকবার হঠাৎ করেই একদিন তাদের গ্রামে আসে।তিনি এসেছিলেন গ্রামীণ পরিবেশের সংস্কৃতি গবেষণা করতে।গ্রামের মানুষ কোন ধরনের খাবার খায়,কেমন পোষাক পড়ে?

এইগুলো এনালাইসিস করে তিনি তার ব্যবসার একটা অংশ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন।কিন্তু তিনি এসে ফেসে গেলেন রেবেকার মায়ায়।গ্রামে স্কুল নিয়ে ততটা মাথা ব্যাথা ছিলনা কারোর ই।রেবেকা কাপড় পড়ে আচল কোমরে গুজে দুটো বেণী করে স্কুলে যেত।তার হাতে থাকত একটা লাঠি যেটা দিয়ে সে ঝোপঝাড় খোঁচাতে খোঁচাতে যেত। একদিন একটা ঝোপে কিছু নড়তে দেখে দিয়েছিলেন এক বাড়ি কিন্তু সেই বাড়ি পড়েছিল নেহালের বাবার মাথায়।তিনি শহরে থাকতেন তাই গ্রাম্য পরিবেশ অতটা বুঝতেন না।

ঝোপের মধ্যে তার ক্যামেরা পড়ে গিয়েছিল।ঝোপে যে অনেক বিষাক্ত জিনিস থাকতে পারে সেটা তিনি বুঝতেই পারেন নি।তিনি তার ক্যামেরা পাওয়ার পরে হঠাৎ করেই মাথায় আঘাত অনুভব করেন।ক্যামেরা নিয়ে পেছন ফিরতে এক ষোড়শী কন্যাকে দেখে তার অন্তর শীতল হয়ে যায়।তখনই তিনি রেবেকার প্রেমে পড়ে যান। আস্তে আস্তে রেবেকার সাথে বন্ধুত্ব করেন।তারপর দুজনেই দুজনকে ভালোবাসতে আরম্ভ করেন। একদিন রেবেকা আকবরের সাথে কথা বলছিল তখন গ্রামের মানুষ তাদের হাতে নাতে ধরে ফেলে।

রেবেকার চরিত্রের ওপরে থুথু ফেলতে লাগে সবাই।আকবর তখনই সিদ্ধান্ত নেয় রেবেকাকে বিয়ে করার। এত কিছুর পরে তাদের ভালোবাসার পূর্ণতা পায়। আকবর বলে সে অনাথ তার কোনো অভিভাবক নেই।শুধু ঢাকায় তার ব্যবসা আছে।ব্যবসার সুবাদে তাকে ঢাকা যেতে হয়। এর মাঝে কেটে যায় অনেক দিন।রেবেকার কোল জুড়ে এলো নেহাল।নেহালকে নিয়ে ভালোই কাটছিল তার দিন কিন্তু একদিন আকবর ঢাকা গিয়ে আর গ্রামে ফিরল না।সেইতো গেল আর ফেরার নাম নাই নেহালের তখন পাচ বছর ছয় মাস বয়স। এভাবে যেতে যেতে ছয় মাস চলে যায়।রেবেকা ভাবে যে আকবরের হয়তো কোনো একসিডেন্ট হয়েছে।তাই সে তার ছয় বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে ঢাকা যায়।

কোথায় যাবে কীভাবে যাবে তা জানে না।অনেক ঝঞ্ঝাটের পরে এক চাচার সহায়তায় ঢাকা গিয়ে আকবরের গোডাউনে যায়। ঐ গোডাউনের ঠিকানা একবার আকবর বলেছিল।সেখান থেকে আকবরের ঠিকানা বের করে একটা আলিশান বাড়ির সামনে আসে।দাড়োয়ান তাকে ভেতরে যেতে দিচ্ছিল না।তখন দশ বছর বয়সী একটি ছেলে দাঁড়োয়ানকে বলে যে রেবেকাকে যেন ভেতরে ঢুকতে দেয়।ছেলেটা ছিল অনে সুন্দর আর হাসিখুশি।ও নেহালকে জিজ্ঞেস করেছিল

-তোমার কী হয়েছে?
-আমার আব্বু হারিয়ে গেছে।তাকে খুজতে এসেছি
-তাই।জানো আমার বাবার অনেক পরিচিতি।সে খুঁজে দিবে।আসো আমার সাথে।
তখন ছেলেটা আকবরকে ওর বাবা বলে পরিচয় করিয়ে দেয়।রেবেকা জানতে পারল রেবেকা আকবরের দ্বিতীয় স্ত্রী।আকবরের প্রথম স্ত্রী ছিল আট মাসের প্রেগন্যান্ট।রেবেকা আকবরের দ্বিতীয় স্ত্রী শুনে তিনি মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যান কিন্তু পড়েন সিড়ির ওপরে।

ফলে তাকে হাসপাতালে নিতে হয়।কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো তার প্রথম স্ত্রী মারা যায় আর পেটের সন্তান টা জন্মগ্রহণ করে ঠিকই তবে তার মধ্যে একটু সমস্যা আছে।আর সেই সন্তান দুটি হলো আরফান এবং নীলু।
আরফান তখন অতটা না বুঝলেও এটা বুঝতে পেরেছে রেবেকার জন্য ওর মা মারা গেছে।তখন আরফান রেবেকার ওপরে চেচিয়ে উঠেছিল কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো আকবর আরফানকে একটা চড় মেরে চুপ করিয়ে দিয়েছে।আর আরফান তখন থেকেই চুপচাপ স্বভাবের হয়ে উঠেছিল।রেবেকা চলে যেতে চাইলে আকবরের বাড়ির মানুষ তাকে যেতে দেয় নি।কারণ নীলুর একটা মা প্রয়োজন। আর রেবেকা নীলুর মা হয়ে উঠল।নীলু এখন পর্যন্ত জানতে পারল না তার মা রেবেকা নয়।

এসব ভেবে তার চোখ থেকে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।কিন্তু তিনি তা সন্তর্পণে মুছে নেন।মনে মনে বলতে থাকেন
-আমি ভালোবাসাকে অপছন্দ করি না নেহাল। আমি ভীষণ ভয় পাই বাবা।আমার ভীষণ ভয় হয়।ভালোবাসার মতো একটা পবিত্র জিনিস শেষ করে দিয়েছে কয়েকটি জীবন। আমার জন্য আজ আরফান মা হীনা বেচে আছে।বাবা বড্ড ভয় হয় যে। এই ভালোবাসা নামক বন্ধন আবার কারো জীবন নষ্ট না করে দেয়।যে ভালোবাসা অন্যের ভালোবাসার কদর বুঝেনা সেটার কোনো প্রয়োজন নেই।কোনো প্রয়োজন নেই।

মিহু পড়তে বসছে।তখনই বিদিশা এলো।ওর আশে পাশে ঘুর ঘুর করতে লাগল।ব্যাপারটা মিহু খেয়াল করে বইটা বন্ধ করে রাখল তারপর ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-কিছু বলবি?
-হুম বলে মাথা ওপর নিচে ঝাকালো।
-কি বলবি?
-বলছি আমায় মেহেদী লাগিয়ে দেবে?
-মেহেদী এখন লাগিয়ে কি করবি?বিয়ের আগের দিন লাগাবি।আর এখন পারবো নারে।এই সিট টা না পড়ে থাকলে পড়ে পড়া হবে না আর এক্সামে ফেল করব।কালকে থেকেই তো বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।
বিদিশা মন খারাপ করে চলে গেল।হঠাৎ করেই ফোনে নোটিফিকেশন আসল।পিয়াস ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে।ও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট না করে মেসেজ দিল

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৪

-কি হে ইংরেজি ষাট হঠাৎ রিকোয়েস্ট পাঠালেন
ওপাশ থেকে উত্তর এলো-হে জ্বীনের বাদশা আমার একটা মন্ত্র শেখা লাগবে।শেখাবেন আপনি?

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৬