হৃদয়হরণী পর্ব ১০

হৃদয়হরণী পর্ব ১০
তানিশা সুলতানা

সাদির বিয়ের দিন ঘনিয়ে এসেছে। আজ বাদে কাল গায়ে হলুদ। সাবিনা সবার জন্য জামাকাপড় কিনেছে। কিনেছে সাদির জন্যও। সামির সাদিকে ধরে বেঁধে দুইবার শপিং এ নিয়ে গেছে। কিন্তু বেচারা সাদি কিছুই কেনে নি৷ জোর করেও তাকে একটা জিনিস কেনাতে পারে নি। শেষে বাধ্য হয়ে সামির নিজের পছন্দে সাদির জন্য কয়েকটা পাঞ্জাবী কিনে আনে। বিয়েতে শেরওয়ানি পড়তে হয় বেচারা সাদি ভুলেই গিয়েছিলো।

এক চোট বকা খেয়েছে সে সাবিনা বেগমের কাছ থেকে।
সাবিনা ছোঁয়ার জন্য কলাপাতা রংয়ের শাড়ি কিনেছে। তার মধ্যে হলুদ রংয়ের ফুল। শাড়িটা বেশ সুন্দর।
সবাই মিলে কেনাকাটা দেখছে। সাদির একমাত্র ফুপি সুমি এবং তার দুই ছেলে ইমন আর রিমন তারাও এসেছে।
ইমন অনার্স পড়ছে আর রিমন ছোঁয়ার সমবয়সী। ওদের তিনজনের খুব ভাব। মনের কথা একে অপরের সাথে খুব ভালো ভাবেই শেয়ার করতে পারে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সাদি এক পাশে পরিকে কোলে নিয়ে বসে আছে। এসব কেনাকাটাতে তার মন নেই ইন্টারেস্টি ও নেই।
ছোঁয়া আড়চোখে বারবার সাদিকে দেখছে। আজ বাদে কাল লোকটা অন্য কারো হয়ে যাবে। তার পাশে অন্য কেউ থাকবে।
মস্তিষ্কে এসব ঘুরপাক খেলেও মন বলছে অন্য কথা। মন বারবার বলছে “সাদি তোর ছোঁয়া। সে অন্য কাউকে বিয়ে করবে না। তুই দেখে নিস”

ইমন ছোঁয়ার মাথায় গাট্টা মেরে বলে
“কিরে ছ্যাঁকা খাইছিস না কি?
ছোঁয়া সাদির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে
” বিচ্ছেদ তো তাদের হয় যারা সম্পর্কে জড়ায়। আমি তো মায়ায় জড়িয়েছি। আর তিনি আমাকে অবহেলায় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। প্রাণ থাকতে আমাদের বিচ্ছেদ হবে না”
ছোঁয়ার ভাড়ি কথা বোঝে না ইমন। সে বুঝতে চায়ও না। তার মতে ছোঁয়া সারাক্ষণ ভুলভাল বকে।

“তা ভাবি ছেলের বউ কেমন?
সুমির কথা শুনে সাবিনা মুচকি হাসে
” আলহামদুলিল্লাহ ছোট আপা। বউ আমার মাশাআল্লাহ।
সাদি পরিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
“যতটা ভালো হলে হবু শাশুড়ীকে ঝাঁড়ি দিয়ে কথা বলতে পারে।

বলেই সাদি চলে যায়। সাবিনার হাসি মুখটা চুপসে থাকে। থমথমে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সিমি এগিয়ে এসে বলে
” মা কি বলছে এসব? তোমাকে ঝাঁড়ি দিয়েছে?
সাবিনা জবাব দিতে পারে না। চুপ হয়ে য়ায়। সুমি রেগে বলে
“এই মেয়েকে তুমি বাড়ির বউ করতে চাইছো? মাথা ঠিক আছে তোমার?
সাবিনা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে

” এতে যদি আমার সাদু ভালো থাকে আমি হাজারটা ঝাঁড়ি খেতেও প্রস্তুত। মেয়েটার কি দোষ বলো? সাদু কথা বলে না। ফোন তুলে না। তাই একটু কড়াভাবে বলেছে।
“হ্যাঁ হ্যাঁ তাই তো। মেয়েটার তো দোষ নেই।
ছোঁয়া তাল মিলিয়ে বলে।
সিমি চোখ পাকিয়ে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়া মুখ বাঁকায়। ছোঁয়া আসলে এই কথা বলতো না কিন্তু সিঁড়ির দিকে সাদিকে দেখেছে তাই বললো।

সাদির বন্ধু বান্ধবরা আজকেই চলে এসেছে। আসলে তারা হাতে হাতো সব কাজ করে দেবে। ছোঁয়া পার্লারে গিয়েছিলো। ফেইস আর চুল গুলো একটু পরিপাটি করে এসেছে।
এখন সে দুই হাতে মেহেদী পড়ে সাড়াবাড়ি ঘুরঘুর করছে। সকলেই কাজে ব্যস্ত। কাল গায়ে হলুদ হাজারটা কাজ পড়ে আছে৷ একমাত্র ফ্রী হচ্ছে ছোঁয়া এবং পরি। পরি তবুও খেলছে। ছোঁয়া সোফায় বসে আছে।
ভীষন পানি পিপাসা পেয়েছে ছোঁয়ার।
সে পরিকে বলে

” মাম্মাম একটু পানি খাইয়ে দাও।
পরি শোনেই না ছোঁয়ার কথা। ছোঁয়া হতাশ হয়। ফোঁস করে শ্বাড টেনে বলে
“আমি কি এবার পানি বীনা মারা যাবো?
তখনই কেউ ছোঁয়ার মুখের সামনে পানির গ্লাস ধরে। ছোঁয়া কথাবার্তা ছাড়া আগে পানি খেয়ে নেয়। তারপর তাকায় পানি দেওয়া ব্যক্তিটার দিকে।
কিন্তু সাদিকে দেখবে কল্পনাও করে নি ছোঁয়া। ছোঁয়ার মুখে পানি ছিলো তা ফোঁস করে ফেলে দেয়। সাদির ওপর পড়ে পানি। দু পা পিছিয়ে যায় সাদি।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে

” ইডিয়েট
ছোঁয়া চোখ দুটো একবার বন্ধ করে আবার খুলে বলে
“আপনি এখন কেনো? বিয়ে না করবেন। যান নাচেন গিয়ে। কি গানে নাচবেন ভেবে পাচ্ছেন না? আমি সিলেক্ট করে দিচ্ছি
“বয়স আমার ৫০ পেরিয়েছে ও সজনী গো তোমার গলায় এই বুড়ো মালা দিবে”
দারুণ না গানটা? এই গানেই ডান্স করেন গিয়ে।
সাদি বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। এই মেয়ে এতো ফালতু কথা বলে কি করে?

“কি গান পছন্দ হয় নি? কাপল গানে ডান্স করতে চান? বুড়ো বয়সে কোমর ভাঙ্গবেন আপনি। তখন আপনার সুন্দরী বউ দৌড়ে পালিয়ে যাবে।
সাদি দুই হাতে নিজের চুল টানে। কেনো এসেছিলো সে পানি খাওয়াতে? এর মেয়ের প্রতি একটুও মায়া দেখানো সম্ভব না। আস্ত একটা বেয়াদব মেয়েটা।
সাদি যেতে নেয় ছোঁয়া বলে ওঠে

” বাড়ি তাহলে করছেন ই?
সাদি থেমে যায়। তাকায় ছোঁয়ার দিকে। মেয়েটাকে একটু অন্য রকম লাগছে। চেহারায় অন্য রকম একটা ভাব এসেছে। চুল গুলো একটু বেশিই সোজা লাগছে৷
সাদি চোখ নামিয়ে নেয়

“তোমার বয়স কম। পার্লারে আর যাবে না। মনে থাকে যেনো
বলেই চলে যায় সাদি। ছোঁয়া ফোঁস করে শ্বাস টানে। মানুষটা এমন কেনো? বোঝে না? না কি বুঝতে চায় না?
ভাগ্য কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে? ছোঁয়ার মনের কথাটা কি ঠিক হবে? শখের পুরুষটাকে পেয়ে যাবে ছোঁয়া? জীবনটা সুন্দর হয়ে উঠবে? না কি অন্ধকারে ছেয়ে যাবে?

মাঝরাতে সাদির ফোন বেজে ওঠে। সবেই চোখ দুটো লেগে গিয়েছিলো সাদির। এমন সময় ফোন বাজাতে ভীষণ বিরক্ত হয়। আরও বিরক্ত হয় ফোনের স্কিনের নাম্বার দেখে। মায়া নামের মেয়েটি। বেহায়া মেয়ে বলতে বাধ্য হয় সাদি।
ফোন কেটে আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করে সাদি। তখনই ফোনে মেসেজ আসে। কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে মেসেজ অপেন করে।

হৃদয়হরণী পর্ব ৯

মায়া নামের মেয়েটি মেহেদী পড়েছে। দুই হাত ভর্তি করে। তার পিক দেওয়া।
তার নিচের একটা পিক দেখে সাথে সাথে সাদি স্কিনশর্ট মারে। আর সাথে সাথেই পিকটা আনসেন্ড হয়ে যায়। সাদি আগেই বুঝেছিলো এমন হবে।
এবার ফোনটা বন্ধ করে শুয়ে পড়ে সাদি।

হৃদয়হরণী পর্ব ১১