হৃদয়হরণী পর্ব ৯

হৃদয়হরণী পর্ব ৯
তানিশা সুলতানা

পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছে যারা একা একাই মজা করতে জানে, ঘুরতে জানে। যাদের বন্ধুর প্রয়োজন পড়ে না। সেই সমস্ত মানুষের তালিকায় ছোঁয়াও পড়ে। তার তেমন কোনো ভালো বন্ধু নেই৷ হ্যাঁ কলেজে কয়েকজন ছিলো। যাদের সাথে হাই হ্যালো পর্যন্তই সম্পর্ক।

বন্ধু নেই বলে কিন্তু ছোঁয়া পিছিয়ে নেই। সে একা একাই মজা করতে জানে।
এই আজকে ঘুরতে বেরিয়েছে। পুরো শহরটা একা একাই চক্কর দিয়েছে। সেই বিকেলে ফুসকা খেয়েছিলো এখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। খিধেও পেয়েছে। রাস্তার পাশে সুন্দর একটা রেস্টুরেন্ট। বাইরে থেকেই কি সুন্দর দেখাচ্ছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ছোঁয়া টুপ করে ঢুকে পড়ে। মোমো আর কোল্ড কফি অর্ডার করে চুপচাপ বসে থাকে। ফোনটাও সাথে নেই যে একটু দেখবে। কেমন এতিম এতিম লাগছে। সবাই কি সুন্দর পার্টনার নিয়ে এসেছে। ছোঁয়া মনে মনে ভেবে ফেলে এবার একটা পার্টনার বানাতেই হবে।
আর একা একা নাহহ

“আরেহহহ তুমি ছোঁয়া না?
মাথা তুলে তাকায়। মেয়েটাকে একবার দেখাতেই চিনে৷ ফেলে। এটাই তো সাদির হবু বউ মায়া। ছোঁয়া জবাব দেয় না। মায়া ছোঁয়া পাশে বসে। তারপর একটা ছেলেকে বলে
” ভাইয়া আমার হবু ননদ।
ছেলেটা এক গাল হেসে ছোঁয়ার সামনাসামনি বসে

“হাই আমি নিবর
ছোঁয়া মাথা নিচু করে ছোট্ট করে বলে
” আমি ছোঁয়া।
“বাহহহ খুব সুন্দর নাম। তা একা কেনো?
” আমি একা ঘুরতেই পছন্দ করি।
ছোঁয়ার জবাবে ছেলেটা অসন্তুষ্ট হয়। মনে হচ্ছে জোর করে কথা বলছে।
“ছোঁয়া তোমার ভাইয়া কোথায়? কখন থেকে ওয়েট করছি আসছেই না।
” জানি না।

ছোঁয়ার চোখ দুটো টলমল করছে। ওহহ তাহলে এখন এরা এখানে দেখা করবে?।যতই নিজেকে বোঝাক না কেনো অবুঝ মনটা বোঝে না৷ এই সব বিষয় গুলো মানতে কষ্ট হয়।
সালার কপাল খারাপ হলে যা হয় আর কি। যার থেকে বাঁচার জন্য একটুখানি শান্তি খুঁজতে বাইরে এলো পদে পদে তার সামনেই পড়তে হচ্ছে।

“তোমার ভাই টা এমন কেন বলো তো? কতোবার কল করলাম নো রেসপন্স। কতো টেক্সট করলাম। কথাই বলতে চায় না। আরেহহ বাবা আমি তার হবু বউ না? আমার সাথে একটু কথা বলবে না?
মায়ার কথায় ছোঁয়া কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। ওয়েটার তার খাবার দিয়ে যায়। সে চুপচাপ খেতে শুরু কর।
নিরব ছোঁয়াকে দেখছে। বেশ মনে ধরেছে তার।

মায়া বিরক্ত। মেনার্স জানে না মেয়েটা। হবু ভাবিকে সামনে বসিয়ে গান্ডেপিন্ডে গিলে যাচ্ছে। ভাইয়ের সামনে খানিকটা অপমানিত বোধ করে সে।
কোনো কথা না বলে উঠে যায়। ছোঁয়া তবুও কিছু বলো না।

রাত আটটার দিকে বাসায় ফেরে ছোঁয়া। সিমিকে বলে বেরিয়েছিলো তাই আর কেউ কিছু বলে না। নিজের রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই সাদি ঢুকে পড়ে ছোঁয়ার রুমে। ছোঁয়া হুরমুরিয়ে উঠে বসে।
মায়ার সাথে ভালো ভাবে কথা বলে নি বলে হয়ত সাদি তাকে কথা শোনাতো এসেছে। এটাই ভেবে নেয় ছোঁয়া।
লম্বা দম নিয়ে বলতে শুরু করে

” আপনার বউয়ের ভাইকে যে দু ঘা দেই নি এটাই আপনার ভাগ্য। আমি সবার সাথে কথা বলতে পারি না। মানুষ চিনে কথা বলি। আপনার বউয়ের ভাইয়ের নজর খারাপ। আপনার বউকেও আমার ভালো লাগে না। তাই কথা বলি নি৷ আপনার বউ বলে তাকে মাথায় উঠিয়ে নাচতে আমি পারবো না।
এক দমে কথাগুলো বলে থামে ছোঁয়া। সাদি ভ্রু কুচকে ছোঁয়ার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বেলকনিতে চলে যায়। ছোঁয়াও পেছন পেছন যায়।

সাদির বেলকনি থেকে একটা কলম ছোঁয়ার বেলকনিতে এসে পড়েছে সেটাই নিতে এসেছে সাদি।
ছোঁয়া ভেংচি কাটে।
সাদি কলম উঠিয়ে ছোঁয়া দিকে তাকায়
“ফাস্টলি আমার বিয়ে হয় নি। সেকেন্ডলি বউয়ের ভাই হোক বা অন্য কেউ বাজে নজরে তাকালে চোখ তুলে ফেলবে। বাকিটা আমি দেখে নিবো।

বলেই সাদি চলে যায়। ছোঁয়া আবার বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। প্রতিবাদ করা শিখিয়ে গেলো? ছোঁয়ার হাসি পায়। লোকটা একটু বেশিই আদুরে লাগে। এই এখন ধূসর রংয়েট টিশার্ট এলোমেলো চুলো কতো ভালো লাগছিলো। অধিকার থাকলে আলতো হাতে এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দেওয়ার ইচ্ছে জেগেছিলো মনের মধ্যে।
ছোঁয়া বিরবির করে বলে

” যদি ভাগ্যক্রমে আপনাকে পেয়ে যাই। ভালোবাসায় আপনার জীবনটাকে রাঙিয়ে দিবো। আপনার ওই গম্ভীর মুখ খানায় হাসি ফুটাবো।
আই প্রমিজ
প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। তারপর টেবিলে খেয়াল করে তার ফোনটা রাখা। ভীষণ খুশি হয়ে ফোনটা হাতে নেয়। আহহহা এবার শান্তি লাগছে। সব পারা যায় কিন্তু ফোন ছাড়া থাকা যায় না।

বাবাকে ভিডিও কল করে ছোঁয়া। আজকে তাদের আসার কথা ছিলো। কেনো আসলো না?
বাবার সাথে কথা বলা শেষ হতেই সাবিনা চলে আসে ছোঁয়াকে ডাকতে। সবাই খেতে বসবে। সাবিনার মুখটা কালো। এমন তাকে কখনো দেখে নি। আজকে কি হলো? কোনো বিষয় নিয়ে মন খারাপ?
ছোঁয়া সাবিনাকে টেনে বিছানায় বসিয়ে দেয়। সাবিনার কোলে মাথা রেখে আহ্লাদী সুরে জিজ্ঞেস করে

” কি হয়েছে মাম্মা?
সাবিনা ছোঁয়ার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
“আমার ছেলেটাকে মানুষ করবো কিভাবে? মায়ার সাথে কথা বলে না সে। আজকে রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করেছে সাদি যায় নি। দুদিন পরে বিয়ে হবে। মেয়েটার মনের অবস্থা কেমন হয়েছে ভেবে দেখ? আমাকে কল করে প্রচন্ড কান্নাকাটি করেছে মেয়েটা। আমার এসব ভালো লাগছে না।

ছোঁয়া নিজেও সাদির ভাবনায় বিভোর হয়ে যায়। মানুষটা তো মায়াকে ভালোবেসে বিয়ে করছে না। বা মায়ার প্রতিও তার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। তাহলে মায়ার জায়গায় পাত্রী ছোঁয়া হলে খুব কি ক্ষতি হয়ে যেতো? ভালোবাসা চায় না তার থেকে। সুখের সময়ও তার পাশে থাকতে চায় না ছোঁয়া। সুখটা সে একাই উপভোগ করুক।
শুধুমাত্র দুঃখে, মন খারাপ, একাকিত্বে ছোঁয়াকে সাথি বানালে তাতেই সন্তুষ্ট থাকতো ছোঁয়া।
তাকে সারাজীবন দেখার একটা সুযোগ চেয়েছিলো শুধুমাত্র। এর তো বেশি কিছু না।
সাবিনা আবার বলে ওঠে

” আমি কি ভুল করছি ছোঁয়া?
ছোঁয়া সাবিনার হাতে চুমু খায়।
“তুমি কোনো ভুল করছো না। বিয়েটা তিনি করতে চেয়েছে। এখানে তোমার দোষ নেই। তাছাড়া বিয়ে হয়ে গেলে সবটা ঠিক হয়ে যাবে। তুমি চিন্তা করো না।
ছোঁয়ার কথায় সাবিনার মনটা অনেকখানি হালকা হয়। একটু আশার আলো দেখতে পায় সে।

” খাবি চল
সবাই বসে আছে তোর জন্য।
যদিও পেট ভরা তবুও ছোঁয়া যায়। একটুখানি আড্ডা তো দেওয়া যাবে।
সবাই বসে আছে। গল্প করছে। কিন্তু সাদি সে খেয়ে যাচ্ছে। করলা সিদ্ধ করলা ভাজি আর করলা দিয়ে ইলিশ মাছের ঝোল।

তাও আবার চামচ দিয়ে সাহেবি পদ্ধতিতে খাচ্ছে। ছোঁয়া বড়বড় চোখ করে সাদির প্লেটের দিকে তাকিয়ে থাকে।
কাটা চামচ দিয়ে করলা ধরে ছুড়ি দিয়ে কেটে মুখে পুরে তারপর অল্প ভাতে ভাজি মিশিয়ে মুখে দিচ্ছে। খুব তৃপ্তি নিয়ে চিবচ্ছে। ছোঁয়ার ভীষণ ইচ্ছে করছে সাদিকে একটুখানি জ্বালাতে।
ছোঁয়া সাদির সামনাসামনি বসে

“বড় মা তোমার বুড়ো ছেলেকে বলবা মিষ্টি খেতে। সে যে করলার বংশধর। তা যেনো নতুন ভাবির সামনে প্রুফ না করে। এমনিতেই বুড়ো হয়েছে। ভাগ্য ক্রমে নাক বোচা একটা বউ পাচ্ছে। সেই বউ যদি চলে যায় তাহলে সারাজীবন কিন্তু দেবদাস হয়ে কাটাতে হবে।
ছোঁয়ার কথায় সকলে মুখ টিপে হাসে। সাদি শব্দ করে প্লেটে চামচ রেখে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
” ইডিয়েট

“বড় মা তোমার বুড়ো ছেলে স্কুল কলেজ থেকে একটাই ইংলিশ শিখেছে এটা আমরা জানি। তাই তাকে কথায় কথায় ইডিয়েট বলতে না করে দিও। আমরা সবাই জানি। তিনি ইংলিশে কাঁচা৷
জিজু ঠিক বলেছি?

সিফাত আমতা আমতা করে। কি বলবে সে? শালির দিকে টানলে ভাই ক্ষেপে যাবে।
সাদি আর ছোঁয়ার দিকে নজর দেয় না। চুপচাপ খেতে থাকে। ছোঁয়া মনে মনে কয়েকবার বলে ” পাষান পাষন পাষান
খেতে খেতে ছোঁয়া আবার বলে ওঠে
“চাচ্চু ভাবছি বিয়

বাকিটা শেষ করার আগেই সাদি ধমক দিয়ে বলে ওঠে
” আরেকবার বিয়ে শব্দটা উচ্চারণ করলে থাপ্পড়ে গাল লাল করে দিবো। ইডিয়েট
বয়স কতো তোমার?

হৃদয়হরণী পর্ব ৮

যখন যেটা মন চাইবে সেটাই না?
সকলে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সাদির দিকে।

হৃদয়হরণী পর্ব ১০