হৃদয়হরণী পর্ব ১৩

হৃদয়হরণী পর্ব ১৩
তানিশা সুলতানা

টেনশনে ছোঁয়া শান্তিতে নিঃশ্বাসও নিতে পারছে না। কিভাবে যাবে? কোথায় যাবে? কোথায় থাকবে? বিয়ে করবে কি করে? টাকা পাবে কোথায়?
পায়চারি করতে করতে ছোঁয়ার পা ব্যাথা হয়ে গেছে৷ সেই সকাল থেকে পায়চারি করছে। একটা দানাও তার পেটে পড়ে নি৷ কিন্তু সাদি দিব্যি আছে৷ গাণ্ডেপিণ্ডে গিললো। এখন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে প্যান্ডেল দেখছে। প্রচুর টাকা খরচ করেছে তার বাবা৷

“সাদি তুমি কোনো গন্ডগোল করবে না।
সেলিমের আওয়াজ শুনে সাদি পেছন ঘুরে তাকায়। কিন্তু কোনো কথা বলে না।
সেলিম এগিয়ে আসে। দাঁড়িয়ে যায় সাদির মুখোমুখি
” দেখ সাদি মায়া ভালো মেয়ে। রিলেশন এখনকার মেয়েরা দুই একটা করেই থাকে। আর একটা সেলফি তোলা খারাপ কিছু না। হতে পারে ছেলেটা মায়ার কোনো কাজিন।
সাদি সেলিমের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটা ভীষণ স্বার্থপর। নিজের স্বার্থের জন্য যা খুশি করতে পারে।
সেলিম আবারও বলে

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আমার মেয়ে আমার কলিজা। সাদি তুই ভালো করেই জানিস তুই স্বাভাবিক না। তোর সাথে আমার মেয়ে ভালো থাকবে না। তুই কোনো কথাবার্তা ছাড়া মায়াকে বিয়ে করে নিবি।
সাদি রেলিং এর ওপর বসে পড়ে। জবাব দেয় না। সাদির থেকে জবাব না পেয়ে সেলিম বিরক্ত হয়। সাথে এটাও বুঝে যায় এই ছেলে জবাব দেবে না।

” আমার মেয়ের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নে।
বলেই সেলিম চলে যায়। ছোঁয়া সাদির রুমে আসছিলো। সেলিমকে দেখে চুপটি করে ফুলদানির পেছনে লুকিয়ে পড়ে। কারণ বাবা একটু আগে পই পই করে বলে দিয়েছে “সাদির আশেপাশে না যেতে”
বাবা তো আর জানে না তার মেয়ে সাদির সাথে পালানোর প্লানিং করছে৷
সেলিম সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই ছোঁয়া পা টিপে টিপে সাদির রুমে ঢুকে পড়ে। রুমে সাদিকে না দেখে বেলকানিতে চলে যায়।

সাদিকে রেলিং এর ওপর বসে থাকতে দেখে বুক কেঁপে ওঠে ছোঁয়ার। আতঙ্কে উঠে সাদির হাত ধরে টেনে নিচে নামায়। সাদি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে। ছোঁয়ার হাত পা কাঁপছে। ঠিক ভাবে শ্বাস টানতে পারছে না মেয়েটা। যেনো এই মুহুর্তে ভয়ংকর কিছু ঘটে গেছে।
সাদি দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে। এই টুকুনি মেয়ে এতোটা গভীর ভাবে কি করে ভালোবাসতে পারে ভেবে পায় না সাদি।

“আই এম ওকে
সাদির কথায় ছোঁয়া ছলছল চোখে তাকায় সাদির দিকে।
” এখানে আর বসবেন না প্লিজ।
সাদি ফোঁস করে শ্বাস টেনে বেলকনিতে থাকা চেয়ারে বসে পড়ে। চোখ দুটো বন্ধ করে প্রশ্ন করে
“ভেবেছো?
” নাহ

আমার ভাবতে হবে না। আমি আপনার সঙ্গ চাই না, আপনার সঙ্গী হতে চাই। আপনার ভালো সময়ে না আপনার খারাপ সময়ে আপনার কাঁধে হাত রাখতে চাই। পাশের রুম কেনো আমাকে কিচেনে থাকতে দিলেও হবে। আপনার থেকে কখনো কিছু পাওয়ার আশা করি না আমি। আপনাকে শুধু দিতে চাই। অফুরন্ত ভালোবাসা দিয়ে আপনার জীবনটা রাঙিয়ে দিতে চাই।

সাদি মন দিয়ে ছোঁয়ার কথা শুনে। কিন্তু সাথে সাথে কোনো জবাব দেয় না। মনে মনে কিছু একটা চিন্তা করে বলে
“পার্লারে চলে যাও। সেখান থেকে সামির তোমায় নিয়ে আসবে।
ছোঁয়া মাথা নারায়।
সে ভীষণ খুশি। দুটো লাফ দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সাদি সামনে বলে পারছে না।
” আর শুনো

জেনে বুঝে আগুনে ঝাঁপ দিচ্ছো। পরে আফসোস করতে পারবে না।
ছোঁয়া সাদির ঘন কালো চাপ দাঁড়ির দিকে তাকিয়ে জবাব দেয়
“আফসোস যখন করবো তখন নাহয় বাবু সোনা বলে আফসোস মিটিয়ে দিয়েন।
বলেই ছোঁয়া এক দৌড়ে চলে যায়। সাদি ছোঁয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

ছোঁয়া সেলিমকে পার্লারে যাওয়ার কথা বলতেই তিনি না করে দেয়। কিন্তু তার এই না বেশিখন টিকে থাকে না। ছোঁয়ার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করা তার মনটা গলিয়ে দেয়। অনুমতি দিয়ে দেয় পার্লারে যাওয়ার।
ছোঁয়ার সাথে পার্লারে যাচ্ছে সাদির মামাতো বোন সুইটি।
সিমিকেও যেতে বলেছিলো কিন্তু সিমি যাবে না। সে বাড়িতেই সেজে নিবে।

তাকে সাজাবে সিফাত।
এদের ভালোবাসা দেখে ছোঁয়া বরাবরই মুগ্ধ হয়। ছোঁয়ার থেকে নয় বছরের বড় সিমি। ছোঁয়া ছোট থেকেই দেখছে তাদের ভালোবাসা। এই দুটো মানুষকে কখনোই ঝগড়া করতে দেখে নি ছোঁয়া। একটু কথা কাটাকাটি ও হয় নি। মাঝেমধ্যে সিমি রেগে গেলে সিফাত চুপচাপ অভিযোগ শোনে আর সিফাত রেগে গেলে সিমি চুপচাপ শুনে। রাগ পড়ে গেলে আবার সরি বলে দেয়।
ছোঁয়া প্রাণ ভরে দোয়া করে বোনের জন্য। সারাজীবন তারা এইভাবেই থাকুক।

ছোঁয়ার সাজা হয়ে গেছে বেশ কিছুখন আগে। এখন সুইটি সাজছে। ছোট্ট পার্লার। নতুন নতুন দিয়েছে। এখানে সাজানোর লোক একজনই। তাই আগে পড়ে সাজতে হচ্ছে।
ছোঁয়া বাইরে একটু উঁকি দিয়ে দেখে সামির দাঁড়িয়ে আছে।
” সুইটি আপু তুমি সাজো আমি একটু আসছি।
সুইটিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ছোঁয়া বেরিয়ে যায়। সামির বাইক নিয়ে এসেছিলো। সামিরের বাইকে বসে মুহুর্তেই হাওয়া হয়ে যায়।

কাজি অফিসের সামনে বাইক থামে। ছোঁয়া বাইক থেকে নেমেই এক দৌড়ে ভেতরে ঢুকে যায়। সেখানে আশিক শিপন আর দুটো মেয়ে। এদেরও চেনে ছোঁয়া। সাদির বন্ধু। রিমি এবং আফরা।
সাদি বাড়িতে পড়ার টিশার্ট আর টাউজার পড়েই এসেছে। ছোঁয়া গিয়ে রিমির পাশে দাঁড়ায়।
“আপু আমাকে কিউট লাগছে না?
ঘুরে ঘুরে রিমিকে দেখাতে থাকে।
রিমি কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাদি ধমক দিয়ে বলে ওঠে

” চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক ইডিয়েট
ছোঁয়া মুখ বাঁকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। এখনই বিয়ে করবে তবুও ধমক দিতে হবে। বজ্জাত লোক একটা।
একটু পরেই কাজি চলে যায়। নিয়ম মেনে দুজনের বিয়ে পড়িয়ে দেয়। ছোঁয়ার ঠোঁটের কোণা থেকে হাসি সরছেই না। সে আজকে ভীষণ খুশি। এতোদিনের কান্নার ফল বুঝি আজকে পেয়ে গেলো?
সাদি আর ছোঁয়া পাশাপাশি বসানো হয়েছে।
ছোঁয়া সাদির দিকে একটু চেপে বসে ফিসফিস করে বলে

হৃদয়হরণী পর্ব ১২

“দেখলেন আমাদের বিয়েটা হয়ে গেলো? বলেছিলাম না আপনাকে আমিই পাবো? পেলাম তো?
সাদি জবাব দেয় না। তাকিয়ে থাকে সদ্য বিয়ে করা বালিকা বধুর দিকে।

হৃদয়হরণী পর্ব ১৪