হৃদয়হরণী পর্ব ৪৭

হৃদয়হরণী পর্ব ৪৭
তানিশা সুলতানা

ছোঁয়া এখনো কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে ভয় পেয়ে গেছে খাট ভাঙাতে। খাট তো বেশ মজবুত। তাহলে ভাঙলো কি করে?
সাদি কি বেশি ভাড়ি হয়ে গিয়েছে? না কি অন্য কোনো ব্যাপার?
নিশ্চয় সাদি ভারি হয়ে গিয়েছে বেশি। বাই এনি চান্স সাদি যদি ছোঁয়ার ওপরে পড়তো। তাহলে ছোঁয়ার কি অবস্থা হতো?

এতোখনে নিশ্চয় পটল তুলতো।
শুকনো ঢোক গিলে ছোঁয়া। ভয়ার্তক দৃষ্টি তাকায় সাদির মুখ পানে। বেচারা বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকাচ্ছে। নিশ্চয় ছোঁয়াকে এভাবে পিঁসে ফেলতে না পেরে বিরক্ত সে।
সামির বেশ আরাম করে হাই তুলছে। তার মনের মধ্যে খুশির প্রজাপতি গুলো পাখা মেলে উড়ছে।
শিপন এবং আকাশও মজা ওড়াতে প্রস্তুত।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ভাই বলছি কি
তোর বউটা এখনো ছোট। একটু বড় হওয়ার চান্স দে। তুই যেভাবে খাট ভেঙেছিস তাতে তো মনে হচ্ছে ছোঁয়াকে
আশিক বাকি কথা শেষ করতে পারে না। তার আগেই সামির বলে ওঠে
” নাহহহহহহ

ছোঁয়া আমার ছোট বোন। তার সাথে এরকম অন্যায় আমি হতে দিতে পারি না। সেলিম চাচা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে ছোঁয়াকে সুরক্ষিত রাখার।
সাদি কপাল চাপকে হাত মুষ্টি বন্ধ করে নেয়। মনে মনে নিজেকে বেশ কয়েকটা গালিও দিয়ে ফেলেছে ইতোমধ্যে। কেনো এসেছিলো হনুমানের দলকে এখানে? বাসর ঘর না সাজালে কি বাসর হয় না? অবশ্যই হয়।
শিপন বলে ওঠে

“সামির চল আমরা ছোঁয়াকে নিয়ে চলে যাই। সেলিম চাচা তার আদরের মেয়েকে সবার আগে বার্থডে উইশ করবে তো।
সাদি এবার ক্ষেপে ওঠে
” বুঝেছি বাসর করতে হলে বউ নিয়ে বনবাসে যেতে হবে আমার।
সাদির কথাটায় বেশ মজা পায় সামির। সাদির পিছে হাত দিয়ে বেশ ভাব নিয়ে বলে
“সেখানেও পেছন পেছন চলে যাবো ভাই।

সাদি চোখ পাকিয়ে তাকায় সামিরের দিকে। সামির এক গাল হেসে শার্টের কলার ঠিক করে
” ঐশির সাথে আমার বিয়েটা দিয়ে দে। তোর ভাঙা খাটের কসম আর জীবনেও জ্বালাবো না তোদের।
এতোখনে ছোঁয়া মুখ খুলে। সে মাথার ঘোমটা ফেলে বলে ওঠে

“সামির ভাইয়া তুমি কিন্তু ঠিক করছো না। এর দায় যে আমার ঘাড়ে এসে পড়বে সেটা জানো তুমি?
আমাকে চুমু খাবে না। এমনকি ঘরেও নেবে না বজ্জাত লোক।
তোমরা ওনার পেছনে লেগো না।
চোখ বড় বড় হয়ে যায় সকলের। রিমি হেসে ফেলে। মেয়েটা একদমই বাচ্চা।
সামির সাদিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে এগিয়ে যায় ছোঁয়ার দিকে।

” সাদি চাচা চুমুও খায়?
কোথায় চুমু খায়? হাতে? না কি গালে?
ইরা সামিরের পিঠে থাপ্পড় মেরে বলে
‘কি রে তোর না ছোট বোন হয়।
“সর বা*ল

কথায় কথায় টাচ করবি না। আমার শরীরের একটা ভার্জিনিটি আছে। আমি চাই আমার সব ভার্জিনিটি সব ঐশি নষ্ট করুক।।
তুই ছুঁবি না।
ইরা ভেংচি কেটে চুল টেনে দেয় সামিরের।
সামির ইরাকে ধাক্কা দিয়ে সরায়
” আপাতত ছোঁয়া আমার বন্ধুর বউ। আমার হক আছে ওদের রোমাঞ্চের ঘটনা শোনার।
রিমি বলে ওঠে

“তাহলে তো তোর হক আছে ওদের বাসর ঘরে বসে থাকার।
” আয় তোরে একখান চুমু খাই। এতখনে আসল কথা মনে করাই দিছোস। বন্ধুর বাসর ঘরে আমি থাকমু।
সাদির ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে।
সে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
“ইটস ওকে

তুই থাক বাসর ঘরে
বলেই সে ছোঁয়ার হাত ধরে টানতে টানতে সকলের চোখের পলকে বেরিয়ে যায়। এবং পাশের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়।
সামির বেচারার বুঝতে পাক্কা দুই মিনিট সময় লাগে কি হলো?
যখন বুঝতে পারে তখন চিল্লায়ে বলে ওঠে ” বন্ধু আমারে ছাড়া রুম লক করিস না। আমি তোদের ডিস্টার্ব করবে না। শুধু একটু দেখবো”
কে শোনে কার কথা। সকলে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
সামির সাদি যে রুমে ঢুকেছে সেই রুমের দরজার সামনে বসে আহাজারি করতে থাকে।
“বন্ধুরে অন্যায় করিস না। আমি একটা ভোলাভালা পোলা। আমারে না নিলে তোর শশুড়কে কল করবো আমি”
সাদি জবাব দেয়

“হুম দে
আমার শশুড় আর তুই নাগিনী ডান্স কর গিয়ে। আপাতত বিরক্ত করিস না”
“তোর নাম আমি ইতিহাসের পাতায় লিখতে চাইছিলাম চাচা। তোর মেশিন নিয়ে বই লিখতে চাচ্ছিলাম। তুই এতো বড় অন্যায় করিস না।
ছোঁয়া বড়বড় চোখ করে সাদির দিকে তাকিয়ে আছে। সাদি সাউন্ড বক্স চালিয়ে দিয়েছে। সামিরের বকবকানি আপাতত শোনার মুড নাই। সামির যে এক দুই ঘন্টার মধ্যে থামবে না এটা সাদির জানা।
ছোঁয়া রিনরিনিয়ে বলে
” আপনার ওয়েট কতো?
সাদি বিছানা চাদর ঠিক করতে করতে জবাব দেয়।
“৮০

ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে। খাট যে এমনি এমনি ভাঙে নি এতোখনে পাক্কা কনফার্ম হয়ে গেলো।
সাদি এক পলক তাকায় ছোঁয়ার মুখপানে। বুঝে যায় বোকা প্রেয়সীর মনোভাব
” তুমি ভয় পেয়ো না। আমার ওজনের প্রভাব তোমার ওপর পড়বে না।
ছোঁয়া যেনো লজ্জা পেলো। মাথা নিচু করে ফেলে।

ঘড়ির কাটা টিকটিক শব্দে জানান দেয় রাত বারোটা বেজে গিয়েছে। সাদির প্রেয়সীর জন্মদিন চলে এসেছে।
সাদি পকেট থেকে একটা ছোট্ট বক্স বের করে ছোঁয়ার সামনে হাঁটু মুরে বসে পড়ে
“আমি না গুছিয়ে প্রপোজ করতে পারি না। কবিতা লিখে মনোভাব প্রকাশ করতে পারি না। সোজাসাপ্টা ভাষায় বলছি তোমাকে আমি ভালোবাসি। ভীষণ ভালোবাসি।
তুমি আমার হৃদয়হরণী। তোমাকে ছাড়া আমার একটা মুহুর্ত চলে না। তোমাকে ছাড়া আমি আমাকেই ভাবতে পারি না।
সারাজীবন আমার হয়ে থেকো হৃদয়হরণী।

ছোঁয়া সাদির হাত থেকে বক্সটা হাতে নেয়। সাদির হাত ধরে তাকে তোলে।
” শুভ জন্মদিন শখের নারী। সারাজীবন এরকমই থেকো। আমার আধ-পাগলা বউ হয়ে আমাকে রাঙিয়ে দিও।
ছোঁয়া মুচকি হেসে মাথা রাখে সাদির বুকে। এরকম একটা রাত চেয়ে এসেছে ছোঁয়া। এমনটাই কল্পনা করে গিয়েছে সব সময়। অবশেষে স্বপ্ন সত্যি হয়ে গেলো?

হৃদয়হরণী পর্ব ৪৬

“হৃদয়হরণী মানে কি সাদু?
” হৃদয় মানে জানো তো? হরণী মানে হরণ করা বা দখল করা।
যে তোমায় হৃদয়টা দখল করে বসে আছে তাকেই হৃদয়হরণী বলে।

হৃদয়হরণী পর্ব ৪৮