প্রেয়সী পর্ব ৫৯(২)

প্রেয়সী পর্ব ৫৯(২)
নন্দিনী নীলা

সকাল থেকে ফুয়াদ সমুদ্র কে সারা বাসায় খোঁজে এবার বিরক্ত হয়ে মাকে ডেকে বলল,,” আম্মু ভাইয়া কোথায়? রাতে কি বাসায় ফিরে নাই?”

নাফিসা বেগম কপাল কুঁচকে বলেন,,” আমি কি জানি? তোরা কেউ কি আর আমার কাছে বলে কিছু করিস? সবাই বড় হয়েছিস এখন আর মায়ের ইচ্ছাতেই কিছু করবি নাকি। তোদের জীবন তোরা নিজেদের মতোই চালাবি।”
ফুয়াদ মায়ের সামনে অসহায় মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। কথাটা জিজ্ঞেস করেও ভুল করল। এখন মায়ের চাপা রাগ সব ওর উপর আসবে। ফুয়াদ চুপ করে দাঁড়িয়ে মায়ের কথা গিলছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ফাহাদ হামি দিতে দিতে এগিয়ে এসে সোফায় বসল। তারপর বড় ভাইয়ের বকা খাওয়া দেখে মিটিমিটি হাসতে লাগল। ফুয়াদ চোখ রাঙিয়ে তাকাল ফাহাদের দিকে।
ফুয়াদ চিন্তিত মুখে ফাহাদের পাশে বসল। ফোন বের করে সমুদ্র কে আবার কল করল। ফোন রাতে অফ থাকলেও এখন অন দেখাচ্ছে। তা পেয়ে কিছুটা নিশ্চিন্ত হলো। ফোন রিসিভ করে জড়ানো কন্ঠে সমুদ্র হ্যালো বলে উঠল।

” হ্যালো,
” কোথায় তুমি?” সমুদ্র বলল।
” কে ছোটো?”
” হুম, তুমি রাতে বাসায় আসো নি কেন? কন্ঠ এমন লাগছে কেন? সারারাত ড্রিংকস করছো নিশ্চয়ই?” ফুয়াদ রাগী গলায় বলে উঠল।

সমুদ্র বলল,,” না রে বেশি করিনি। ঘুম থেকে উঠলাম তো তাই এমন লাগছে!”
” মিথ্যা বলো না তুমি এখনো ক্লাবে আছো ড্রিংকস না করে আমাকে বিশ্বাস করতে বলছো।!”
” আমি ক্লাবে নাই।”
” তাহলে রাতে কোথায় ছিলে?”

” আমি বেশি ড্রিংকস ও করি নাই। আমি এখন এক জায়গায় এসেছি কয়েকদিন বাসায় ফিরতে পারব না। আম্মুকে জানাই দিস। আমি বললে ইমোশনাল ব্লাকমেইল শুরু করে দিবে। তাই বলি নাই তুই জানাই দিস।”
” কয়েকদিন বাসায় ফিরবে না মানে কি? দুইদিন পর আমার আর মধুর বিয়ের একটা পার্টি রেখেছেন আম্মু তুমি সেখানে উপস্থিত থাকবে না? আর এভাবে কাউকে কিছু না জানিয়ে কোথায় গেছো?”

” সেটা বাসায় এসে বলব। শুধু শুনে্ রাখ আমি ঘুরতে এসেছি। অনেকদিন ঘুরা ঘুরি হয় না বাসায় থেকে বোরিং হয়ে গেছি। মনটা একটা চাঙ্গা করা দরকার। আর তোর আর মধুর জন্য অনেক শুভকামনা র‌ইল। কাছে না থাকলেও দোয়া আর ভালোবাসা থাকবে। ভালো থাকিস আমাকে ফোনে হয়ত পাবি না ভয় পাস না। আমি ঠিক সময় মতো চলে আসব।”

সমুদ্র নিজের কথা শেষ করে এক সেকেন্ড ও বিলম্ব না করে ফোন কেটে দেয়। ফুয়াদ কথার প্রেক্ষিতে কিছু বলবে তার সুযোগ ও দেয় না। ফুয়াদ ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে হতভম্ব চোখে‌। ওকে কিছু বলতে ও দিল না। নাফিসা বেগম উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ফোন কানে দেখে নামাতেই,
তিনি বললেন,,” কি বলল কোথায় আছে? বাড়ি আসে নাই কেন? দিন দিন বেড়েই চলেছে।” কঠোর কন্ঠে বললেন।
ফুয়াদ বলল,,” ভাইয়া কোথায় বেড়াতে গিয়েছে জায়গার নামটা বলল না। কিছু দিন বাসায় ফিরবে না এমনটাই বলল।”

” বললেই হলো নাকি। ওকে এক্ষুনি বাসায় আসতে বল। ওর এতো বড় স্পর্ধা ও আমার পারমিশন ছাড়াই এমন সিদ্ধান্ত নেয়।”
” আমার কথা শুনবে?”
” আমার কাছে দে ফোন। কল লাগা।”
ফুয়াদ ফের ডায়াল করে সমুদ্রের নাম্বারে। এবার আবার গতকালের মতো নাম্বার সুইচ অফ বলছে।

” আম্মু ফোন তো বন্ধ বলছে।”
” ওই মাত্র না কল কথা বললি।”
” হুম বলছি তো। এখনি আবার বন্ধ বলছে।”
স্পিকার দিয়ে কল দিয়ে শোনাল ফুয়াদ।
নাফিসা বেগম বিড়বিড় করে বললে,,” আমার কপালেই এসব ছিল। মাইনষের ছেলে মেয়ে কত ভদ্র। বাবা মায়ের কথার বাইরে যায় না। আর আমার সন্তানেরা মায়ের ইচ্ছার কোন মূল্য দেয় না। যা ইচ্ছে করে বেড়ায়।‌একজন তো একাই বিয়ে করে এনেছে। আরেকজন বেড়াতে চলে গেছে…”

ফাহাদ মায়ের কাছে গিয়ে বলল,,” আম্মু কান্না করো না। আমি তোমার ভালো ছেলে আছি তো। আমি তোমার সব কথা শুনব। তোমার কথার বাইরে কিচ্ছু করব না কখনো।”
নাফিসা বেগম ছেলের কথা শুনে আরো আহ্লাদি হয়ে ফুয়াদকে শুনিয়ে শুনিয়ে এটা ওটা বলতে লাগল। ফুয়াদ দাঁত কিড়মিড় করে ফাহাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ফাজিল এখন মায়ের কাছে ওকে ভিলেট বানাচ্ছে। ফাহাদ ভাইয়া কড়া চোখের চাহনি দেখে ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলল,,” আম্মু আমি যাই আমার কোচিং আছে। মৌমাছি আর ভাইয়ার বিয়ের পার্টির দিন আসব।”

“দুই দিন বাসা থেকে কোচিং করা যায়। সেখানে যেতে হবে না এখন।”
” কিন্তু আম্মু।”
” এই মাত্র না বললি আমার কথার বাইরে যাবি না।” রাগী কন্ঠে বললেন।
ফাহাদ নিজের কথার জালে নিজেই ফেঁসে গেল। মুখ কালো করে নিজের রুমের দিকে হাঁটা ধরল।
রাহী আর তিন্নি বাসায় আসলো তারপর সবাই মিলে শপিং করতে যাবে সেসব ঠিক করতে লাগল।
তিন্নি মায়ের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,,” আম্মু এসব কি গো। যার জন্য আমাকে বাসা থেকে তাড়ালে এখন দেখি তাকে বাসার ব‌উ বলে স্বীকৃতি দিতে এতো আয়োজন করছো।”

আনিতা বেগম বললেন,,” মায়ের সাথে এভাবে কথা বলছিস দিন দিন অসভ্য হচ্ছিস। যা এখানে থেকে।”
” আর কখনো আমার বান্ধবীকে নিয়ে বাজে কথা বলবে না। মনে থাকে যেনো।”
চিত্রা খুব একটা সবার সাথে মিশে না। আজ তিনি ও বললেন যাবে। মধু, তিন্নি, রাহী ও চিত্রা চারজন শপিং এ যাবে। ফুয়াদ যাওয়ার জন্য তোষামোদ করছে কিন্তু চিত্রা বলেছেন তাকে নেওয়া যাবে না‌। শুধু মেয়েরা যাবে শপিং করতে।

” আমিও হাজব্যান্ড আমার ও কেনাকাটা আছে ভাবি আমাকে রেখে কেন যাচ্ছ তোমরা?”
” এক বেলা একটু ব‌উ ছাড়া থাকলে কিছুই হবে না দেবর। তোমার জন্য ও শপিং করা হবে আর চয়েজ করবে তোমার ব‌উ তাই তুমি চুপচাপ বাসায় থাকো।”
ফুয়াদ টেরা চোখে মধুর দিকে তাকিয়ে আছে। মধু মিটিমিটি হাসছে ফুয়াদের মুখের ভঙ্গি দেখে। বেচারা যেতে পারবে না তাই মুখটা দেখার মতো হয়েছে।

সবাই রেডি হয়ে গাড়িতে উঠে বসল। মধু সবার পেছনে আসছে কারণ ও একটু পর পর পিছু ঘুরে ফুয়াদ কে দেখছে আর দাঁত কেলিয়ে হাসছে।
মধু গাড়ির দরজা খুলতে যাবে পেছনে থেকে ফুয়াদ ওর হাত টেনে ধরে। ও বিস্মিত নয়নে ওর দিকে চেয়ে বলল,,” আপনি না ভেতরে ছিলেন এখানে আসলেন কখন?”

ফুয়াদ উত্তর দিল না। ও নিজে দরজা খুলে ভেতরে বসে থাকা রাহীর দিকে তাকিয়ে বলল,,” শোন আমি না গেলে মধু ও যাবে না। তোরাই বরং আমাদের দুজনের জন্য শপিং করে নিয়ে আয়। আমরা বাসাতেই থাকি।”
” ভাইয়া…”

ফুয়াদ কেউ নিয়ে যেতে রাজি হতে হলো এছাড়া আর কোন উপায় নাই যে।
ফুয়াদ যাবে তাই আর ড্রাইভার কে নেওয়া হলো না ড্রাইভিং সিটে ফুয়াদ ও পাশে মধু বসল। পেছনে চিত্রা, রাহী ও তিন্নি বসল। গাড়ি চলতে শুরু করল।
চিত্রা পেছনে থেকে বলে উঠল,,” আমার দেবর দেখি ব‌উ পাগলা। এক মিনিট ও ব‌উ কে ছাড়া তার চলে না। চোখের আড়াল হতেই দেবে না।”

চিত্রার কথা শুনে তিন্নি আর রাহী হেঁসে উঠল। এদিকে লজ্জায় মধুর মুখশ্রী লাল হয়ে উঠল। লজ্জা পেছনে ঘুরতেই পারছে না। কিন্তু ফুয়াদ কে রাগী চোখে শাসিয়ে যাচ্ছে।
ফুয়াদ কথার প্রেক্ষিতে উত্তর দিল,,” আমার বড় ভাই টাও তো ব‌উ ছাড়া কিছুই বুঝে না। ভাবি আপনি বাবার বাসায় গেলেই ভাই চলে যায় পিছু পিছু। তখন বাসার সবাই ও বলে ভাই নাকি ব‌উ পাগলা। আমাদের রক্তে একটা ব‌উ পাগলা ভাব আছে।”

চিত্রা নিজেও লজ্জা পেয়ে গেল। আর এই সমন্ধে কিছু বলল না। কথা ঘুরিয়ে ফেলল,,” সমুদ্র কে তো আলাদা লাগছে। বিয়ের নাম মাথাতেই নেয় না। বাসায় থাকলে তো খোচানো যেতো। সে ব‌উ আনতে না পারলেও ছোটো ভাই ব‌উ নিয়ে এসেছে। তিনি তো খোঁচা খাওয়ার ভয়ে মনে হয় পালিয়েছে।”
তিন্নি বলে উঠল,,” আমার কেন জানি তাই মনে হচ্ছে। ভাইয়া লজ্জা আসতে পারছে না এমন না হয় যেখানে গেছে সেখানে থেকে বউ নিয়ে হাজির হয়।”

রাহী বলল,,” না রে ভাই আর ব‌উ দুটো দুই প্রান্তের। ভাই এ জীবনে বিয়ে করবে বলে মনে হয় না আমার।”
ফুয়াদ একটা দুইটো কথা বলছে আর পেছনে তিন জন‌ই অনেক কথা বলছে। কিন্তু এই সময়টা একদম নিশ্চুপ মধু। ও কোন কথাই বলছে না। সকালে যখন ফুয়াদের কাছে শুনেছে সমুদ্র কোথাও বেড়াতে গিয়েছে বাসায় ফিরবে না কয়েকদিন। তখন থেকেই ওর মনটা ফুরফুরে।

সমুদ্র মত দূরে থাকবে ও ততোই শান্তি পাবে। ও কথাটা শুনে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। এখন যখন সমুদ্রের বিয়ের কথা‌ নিয়ে আলোচনা চলছে তখন মধু ঢোক গিলছে। সমুদ্র কাউকে বিয়ে করে আনলে সবচেয়ে বেশি খুশি ও নিজেই হবে‌। ওর উপর থেকে নজর চলে যাবে আর ও রক্ষা পাবে। মনে মনে চোখ বুজে প্রার্থনা ও করে ফেলল। সমুদ্র যেন বিয়ে করেই বাসায় ফিরে আর ওর প্রতি থেকে সমস্ত আকর্ষণ চলে যায়।

প্রেয়সী পর্ব ৫৯

তিন্নি পেছনে থেকে মধুর কাঁধে ধাক্কা দিয়ে বলে উঠল,,” এই মধু কি হয়েছে তোর? আমরা সবাই এতো কথা বলছি, হাসাহাসি করছি, আর তুই বোবা হয়ে বসে আছিস কেন?”
মধু ছিটকে উঠে চোখ মেলে তাকাল পেছনে। তিন্নি সহ তিন জোড়া চোখ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ও মেকি হাসি এনে বলল,,”আমি তো
সবার কথা শুনছি তো।”

প্রেয়সী পর্ব ৬০