প্রেয়সী পর্ব ৬০

প্রেয়সী পর্ব ৬০
নন্দিনী নীলা

শপিং মলে এসেই বর ব‌উ এর কেনাকাটা বাদ দিয়ে সবাই নিজেদের কেনাকাটা করতে ব্যস্ত। তিন্নি, রাহী ও চিত্রা তিনজন নিজেরা কি পরবে পছন্দ করছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। একটু পর পর মধুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করছে, কেমন লাগছে। মধু গালে হাত দিয়ে তিনজনের কান্ড কারখানা দেখছে। আর হাত দিয়ে সুন্দর লাগছে দেখাচ্ছে। এদিকে ওরা চারজন শপিং মলের ভেতরে এসেছে। ফুয়াদ গাড়ি থেকে নামতেই কেউ ওকে কল করে তাই ও আধা ঘন্টা পর আসবে বলে গাড়ি নিয়ে চলে গেছে। আর ওদের বলে গেছে কেনাকাটা করতে। ও এসে জয়েন হবে।

মধু কিছু দেখছে না দেখে একজন এসে বলল,,” ম্যাম আপনি কিছু নেবেন না?”
মধু গালে থেকে হাত সরিয়ে বলল,,” আমার হাজব্যান্ড আসবে তারপর।”
” ওকে ম্যাম।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মধু দরজার দিকে তাকাচ্ছে শুধু ফুয়াদ কখন আসবে। তিন্নি একটা লেহেঙ্গা উল্টে পাল্টে দেখছে। মধু চারপাশে চোখ বুলাতে বুলাতে ওর দিকে যাওয়া ধরল। হঠাৎ মধুর চোখ আটকে গেল শাড়ির সারির দিকে। মধু চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে। শাড়ি দেখে নয় শাড়ির আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা সমুদ্র কে দেখে। ও সঙ্গে সঙ্গে চোখ সরিয়ে নিল। সমুদ্র কেমন যেন চোখ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ও অজান্তেই ঢোক গিলল। সমুদ্র এখানে কোথা থেকে এলো? উনি না কোথায় বেড়াতে গিয়েছে! ফুয়াদ কে তো সে কথাই বলা হয়েছে। তাহলে এখানে আসলো কীভাবে? ও তাড়াতাড়ি আবার তাকাল সেই দিকেই। ফুয়াদ কে মিথ্যা কেন বলল সমুদ্র!

মধু সঙ্গে সঙ্গে আবার তাকিয়ে দেখল সমুদ্র সেখানে নাই‌। শুধু শাড়ি ঝুলছে। মধু মাথায় হাত দিয়ে তিন্নির দিকে আর না এগিয়ে শাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। ওর বুকের ভেতরটা কাঁপছে। এইমাত্র সমুদ্র কে ও স্পষ্ট দেখেছে এখানে দাঁড়িয়ে ওর দিকে কড়া চাহনি দিয়ে তাকিয়ে আছে এখনি কোথায় চলে গেল‌। ও শাড়ির সেখানে তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগল সমুদ্র কে না পেয়ে ও পুরো রুম সমুদ্র কে খুঁজতে লাগল কিন্তু কোথাও সমুদ্রের টিকিটি ও পাওয়া গেল না। ও কি তাহলে ভুল দেখল অসম্ভব। এতোটা বাস্তব কখনোই কল্পনা হতে পারে না। তাহলে এতো দ্রুত কোথায় চলে গেল?

মধু ঘুরতে ঘুরতে মলের বাইরে চলে এসেছে।
এদিকে তিন্নি আর রাহী নিজেদের জন্য সব প্যাক
করে ফেলেছে এবার ও খুঁজতে লাগল মধু কে। এইখানেই তো দাঁড়িয়ে ছিল মেয়েটা গেল কোথায়? ফুয়াদ যাওয়ার আগে বলে গেছে মধুর জন্য সব নিজে পছন্দ করে কিনবে তাই ওরা আর মধুর জন্য কিছু দেখে নি। ভাইয়া আসলেই কিনবে তাই নিজেদের জিনিস কিনলো। এখন মধু কোথায় গেল? সারা মল খোঁজে ও মধু কে না পেয়ে ওরা ভয় পেয়ে গেল‌। মধুর জন্য না কেনায় মধু কি ওদের উপর রাগ করে চলে গেল নাকি?

তিন্নি মধুর নাম্বারে কল দিল নাম্বার রিং হয়ে বেজে কেটে গেল মধু রিসিভ করল না।
মধু পাগলের মতো সমুদ্র কে খুঁজতে খুঁজতে শপিং মলের বাইরে এসে উদ্ভান্তের মতো দাঁড়িয়ে আছে।
ফুয়াদ কাজ শেষ করে এসে দেখে মধু বাইরে দাঁড়িয়ে আছে একা ও মধুর দিকে গাড়ি থেকে নেমেই ইশারা করল হাত নাড়িয়ে। মধু কোন ধ্যানে আছে কে জানে ওর ইশারা খেয়াল ই করল না। ও গাড়ি লক করে সিঁড়ি বেয়ে উঠে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াল তখন মধুর খেয়াল হলো ওকে।

” কি হয়েছে এখানে একা এভাবে দাড়িয়ে আছো কেন?”
মধু উত্তেজিত গলায় বলল,,” এই মাত্র আমি সমুদ্র ভাইয়াকে দেখেছি এখানে। কিন্তু এখন তাকে খোঁজে পাচ্ছি না।”
ফুয়াদ কপাল কুঁচকে বলল,,” হোয়াট? আর ইউ শিউর?”
” হ্যা আমি ভাইয়াকেই দেখেছি কিন্তু…”

” আরে না তোমার কোথায় ভুল হয়েছে? ভাইয়াকে তুমি এখানে কোথায় পাবা ভাইয়া তো বেড়াতে গিয়েছে ঢাকা নাই। তুমি হয়তো ভাইয়ার মতো অন্য কাউকে দেখেছ।”
মধু আত্নবিশ্বাসী গলায় বলল,,” অসম্ভব আমি ভুল দেখি নাই আমি শিউর ওটা সমুদ্র ভাইয়াই ছিল। আমি তাকে চিনতে ভুল কেন করব।”

” কিন্তু ভাইয়া এখানে কোথা থেকে আসবে ভাইয়া ঢাকা নাই নিজে বলেছে। ভাইয়া আমাকে মিথ্যা বলে না কখনো।”
মধু বলল,,” তুমি কি বলতে চাইছো আমি মিথ্যে বলি?”
” আমি কি একবার ও বলছি তুমি মিথ্যা বলেছ? তোমার দেখায় ভুল আছে এটাই বলেছি। একরকম কত মানুষ আছে। অনেক সময় আমাকেও অনেকে বলে আমাকে নাকি এখানে ওখানে দেখেছে অথচ আমি ওখানেই যাই ই নাই। তখন আমি বিছানায় চিৎ হয়ে ঘুমাচ্ছিলাম। দেখায় তো ভুল হতেই পারে তাইনা।”

“কিন্তু আমি ভুল দেখি নাই ওটা ভাইয়া ই ছিল।”
ফুয়াদ মধুর হাত ধরে ওর কাঁধ জড়িয়ে বলল,,” উফফ বাদ দাও তো। চলো শপিং করি।”
মধু বাদ দিতে পারল না। ওর মন বলছে আশেপাশেই সমুদ্র আছে। এখনো হয়তো কড়া চোখে ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। কিন্তু ফুয়াদ কে এটা কিভাবে বুঝাব। সে তো ভাইকে অন্ধ বিশ্বাস করে। সমুদ্র যে ওকে পছন্দ করে ভালোবাসে এটাও তো ফুয়াদকে বললে বিশ্বাস করবে না উল্টো ওকেই ভুল বুঝবে। এ কোন বিপদ ঘাড়ে চাপলো ওর। সমুদ্র কি ওর আর ফুয়াদ ওর বিয়েটা মানতে পারছে না তাই ইচ্ছাকৃতভাবে দূরে আছে কিন্তু আড়াল থেকে ওদের নজরে রাখছে। ভয়ে মধু এদিক ওদিক নজর ঘুরাচ্ছে।

তিন্নি মধু কে ফুয়াদের সাথে দেখে এগিয়ে এলো রাগী চোখে। এসেই ধমক স্বরে বলল,,” এই তুই আমাদের না বলে কোথায় গিয়েছিলি? দুজনে নিশ্চিন্তে আসছিস এদিকে আমরা টেনশনে মরতাছি।”
মধু তিন্নির কথার ধ্যানেই নেই ও আছে ওর চিন্তায় মশগুল।‌ তিন্নি ওর দিকে থেকে ফুয়াদের দিকে চেয়ে বলল,,” দুজনে একসাথে কীভাবে?”
” আমার ব‌উ, আমি ছাড়া থাকতেই পারে না এক দন্ড। তাই স্বামীর অপেক্ষায় গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।” ভাব নিয়ে বলল ফুয়াদ।

তিন্নি ঠোঁট বেকা করে বলল,,” ভালোবাসা উতলে পরতাছে। এদিকে আমাদের হার্ট অ্যাটাক করিয়ে।”
মধু আর পরের দিকে ইনজয় করতে পারল না খালি এদিক ওদিক থেকে ওর মনে হতে লাগল সমুদ্র ওকে দেখছে। ও খালি সেই সংকায় বাকি সময়টা কাটালো। বাসায় ফিরে শান্তি অনুভব করল। কি কিনেছে দেখেই নি। ওর ধ্যান ছিল কোথায় ওই জানে। ফুয়াদ বাড়ির সবার জন্য কেনাকাটা করেছে। সবারটা সবাইকে দিয়ে রুমে আসতেই দেখে মধু রুমে বসে কিনে আনা সব ড্রেস উল্টে পাল্টে দেখছে। ও দরজা লক করে এসে বলে,,” দেখেই না কিনলে এখন আবার কি দেখছ?”

মধু বলল,,” আমি দেখে কিনলাম কখন? সব না আপনি কিনলেন!”
” আমি কি তোমাকে না দেখিয়ে প্যাক করেছিলাম?”
মধু মনে মনে বলল,,” তখন তো ওতো খেয়াল ই করি নাই। তাই তো এখন ভালো করে দেখছি। আমার জামাইয়ের দেখি পছন্দ ভালোই।”

জোরে বলল,,,” তো! আমার ড্রেস আমি যতবার, যতক্ষণ ইচ্ছে দেখব আপনার কি?”
ফুয়াদ বলল,,” আমার আবার কি? দেখো, সারা রাত দিন দেখতেই থাকো।”
বলে ফুয়াদ শার্ট খুলে সোফার উপর রেখে ওয়াশরুমে গেল। মধু ভেংচি কেটে লেহেঙ্গা নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখছে ওকে কেমন লাগছে। ফুয়াদ নীল রঙের লেহেঙ্গা এনেছে। ওরনাটা মেরুন রঙের। ফুয়াদের শেরোয়ানি ও নীল।

ফুয়াদ হাত মুখ ধুয়ে এসে দেখে মধু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ওরনা মাথায় দিয়ে ঢং করছে।
ফুয়াদ তোয়ালে নিয়ে মুখ মুছে ট্রি শার্ট পরে মধু কে বলে,,” আপনার দেখা হলে চলেন নিচে একটু মহারানী।”
মধু ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল,,” একটু আগে না বললেন আমার যতক্ষণ খুশি দেখব এখন নিচে কেন যাব?”
” আপনার শাশুড়ি আপনাকে নিচে যাওয়ার জন্য আহ্বান করেছে।”

মধু নাফিসা বেগম যেতে বলেছে শুনতেই বিছানায় এসে লেহেঙ্গা রেখে সোজা হয়ে বলল,,” আন্টি কেন ডেকেছে?”
ফুয়াদ রাগী গলায় বলল,,” মা বলবে মা‌‌। আন্টি কি হ্যা?”
ফুয়াদের কথার উত্তর না দিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে মধু নিচে নেমে গেল।
এদিকে তিন্নি বাসায় আসার পর পরই একটা মেসেজ আসছে ওর ফোনে। মেসেজ এ লেখা,” এতো কেনাকাটা করলে? বাসায় কারো বিয়ে নাকি?”

মেসেজটা এসেছে সেই নাম পরিচয় হীন ছেলের নাম্বার থেকে। তিন্নির মাথায় শয়তানি বুদ্ধি চাপে। ছেলেটা মাঝে একবার দেখা করতে চেয়েছিল ও ভেবেছিল মধু কে সঙ্গে নিয়ে দেখা করতে যাবে কিন্তু যেতে পারেনি তার পর দিন ই মধু মিসিং। তারপর আর ওই ছেলের কল রিসিভ করেনি ও একদিন রিসিভ করে খুব বাজে কথা বলায় ছেলেটাই ফোন দিত না। আর ও নাম্বার ব্লক করে দেয়। আবার কয়েকদিন ধরে নিউ একটা নাম্বার থেকে মেসেজ আসা শুরু করেছে। ও মেসেজ দেখেই নিশ্চিত হয়েছে এটা ওই ছেলে ছাড়া আর কেউ হতেই পারে না। ও রেসপন্স করেনি এতো দিন কিন্তু আজ আবার মেসেজ দেখে বুঝতে পারছে ছেলেটা ওকে ফলো করে। ও তাই নিজেই ছেলেটা কে কল করল।

একবার রিং হতেই ফোন রিসিভ হলো।
” হ্যালো।”
” আমি তো বিলিভ করতে পারছি না তুমি আমাকে কল দিয়েছ?”
তিন্নি বলল,,” ঢং বাদ দিয়ে বলেন, আপনি আমাকে ফলো করেন কোন সাহসে?”
ছেলেটা বলল,,” ফলো করে তো ভালোই হলো তোমার থেকে রেসপন্স পাওয়া গেল।”

” উত্তর দিন।”
” কিসের উত্তর?”
” মেজাজ খারাপ করবেন না!”
” আচ্ছা করলাম না। তুমি বলো এতো কেনাকাটা করলে যে কারো বিয়ে নাকি?”
তিন্নি বলল,,” হ্যা।”

” কার বিয়ে?” ছেলেটা জিজ্ঞেস করল।
তিন্নি বলল,,” আমার বিয়ে।”
“হোয়াট?” চিৎকার করে বলল ছেলেটা।
তিন্নির ঠোঁটে দুষ্টু হাসি। ও বলল,,” কান বয়রা করবেন নাকি এতো জোরে কেউ চিৎকার করে?”
ওপাশ থেকে বলল,,” দেখো তিন্নি আমার সাথে মজা করো না। আমার কিন্তু বুকের ভেতরটা কাঁপছে সত্যি তোমার বিয়ে?”

প্রেয়সী পর্ব ৫৯ (২)

” আপনি কি আমার বেয়াই যে মজা করব। বিশ্বাস না হলে ১০ তারিখ চলে আইসেন আমার বিয়ে খেতে ও আমার হাজব্যান্ড কে দেখতে কেমন। আর আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না ওকে। বাই আল্লাহ হাফেজ।”
বলেই তিন্নি কল কেটে হাসতে লাগল।

প্রেয়সী পর্ব ৬১