প্রেয়সী পর্ব ৫৯

প্রেয়সী পর্ব ৫৯
নন্দিনী নীলা

ফুয়াদ মধুর অপেক্ষায় মায়ের রুমে কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে। মধু ভেতরে গেছে মা ওর উপর কোন রাগারাগী করে নাকি সেই চিন্তায় অস্থির হয়ে পায়চারী করছে।
এদিকে মধু রুমে নাফিসা বেগমের রুমে এসে দাঁড়িয়ে আছে। নাফিসা বেগম ওর দিকে এক পলক চেয়ে আলমারির কাছে চলে গেল। তারপর আলমারি খুলে সেটার ভেতরে থেকে গয়নার বক্স বের করে আনল। মধু ফ্যালফ্যাল করে নাফিসা বেগমের দিকে তাকিয়ে আছে।

বিশেষ করে নাফিসা বেগমের হাতের বক্সের দিকে। তার মনে কি ঘুরছে কি করতে চাইছে বুঝার চেষ্টা করছে। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে মধু। তিনটা গয়নার বক্স বের করে বেডের উপর রাখল।
তারপর মধুর দিকে চেয়ে বললেন,,” এখানে থেকে এক সেট পছন্দ মতো নিয়ে যাও। পার্টির দিন সেটাই পরবে।”
মধু জড়োসড়ো হয়ে হাত মুঠো করে দাঁড়িয়ে ছিল। এবার ওর হাতের মুঠো একাই খুলে গেল আর মুখটা হা হয়ে গেল। ও ভেবেছিল একা রুমে ডেকেছে ওকে কড়া কয়টা কথা শুনিয়ে দিতে এ তো পুরোই উল্টো কাহিনী ঘটলো। আন্টি ওকে গহনা দেওয়ার জন্য ডেকে এনেছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মধু থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে মুখটা হা করে তাই নাফিসা বেগম বিরক্ত হয়ে বললেন,,” কি হলো হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছো কেন? বললাম না একটা সেট নিয়ে যাও। নাকি এসব পছন্দ হয় না?”
মধু চমকে উঠা গলায় বলল,” কি যে বলেন না আন্টি পছন্দ হবে না কেন? আমি তো অবাক হয়ে যাচ্ছি। আপনি সত্যিই আমাকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিয়েছেন আমার তো বিলিভ হচ্ছে না।”
মধুর চোখ মুখ উজ্জ্বল দেখালো।

নাফিসা বেগম মুখশ্রী গম্ভীর রেখেই বললেন,,” যা বলেছি তা করে যাও এখানে থেকে। বাড়তি কথায় না বাড়িয়ে।”
মধু বলল,” বলুন না আন্টি প্লিজ, আমাকে কি মেনে নিয়েছেন! প্রথম যখন এই বাসায় এসেছিলাম কত ভালোবাসা দিয়েছিলেন আর এখন চোখে চোখ রেখে কথা বলতে চান না। এতোটাই পর করে দিয়েছেন।”

” নেবে নাকি রেখে দেব আবার তুলে।”
বলেই নাফিসা বেগম গয়নার বাক্সে হাত দিতে যায়।
মধু দৌড়ে এসে বলে,,” নেব তো। সবগুলোই এতো সুন্দর কোনটা রেখে কোনটা নেব বুঝতে পারছি না। মন চাইছে সব গুলোই নিয়ে নেই।”

” সব গুলো দিতে পারব না। তোমার আরো লাগলে এক্সটা কিনে দেব। এই তিন সেট আমার তিন ছেলের ব‌উয়ের জন্য। এক সেট চিত্রাকে দিয়েছে। তুমি একটা নিবে। বাকি সমুদ্র ও ফাহাদের ব‌উয়ের জন্য গচ্ছিত থাকবে।”
” আচ্ছা, আমি একটাই নেব আপনি পছন্দ করে দেন কোনটায় আমাকে মানাবে, সুন্দর লাগবে।”
আহ্লাদি গলায় বলল মধু।
নাফিসা বেগম ওর কথা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে পান বানিয়ে মুখে দিল। ও তাকিয়ে আছে তার দিকে।

” আন্টি আমাকে ও একটু দেবে?”
নাফিসা বেগম বললেন,,” কি দেব?”
” তোমার মতো পান বানিয়ে দিবে। আমার খুব খেতে ইচ্ছে করছে। তোমার ঠোঁট কি সুন্দর লাল টুকটুকে হয়ে থাকে। লিপস্টিক ছাড়াই, আমিও পান খেয়ে ঠোঁট লাল বানাবো।”

” না এসব তোমার খাওয়া যাবে না।”
” কেন আন্টি আপনি খেতে পারলে আমি পারব না কেন?”
নাফিসা বেগম কড়া চোখে তাকাল মধুর দিকে আর বিড়বিড় করে ওকে কিছু বলে, নিজেই একটা বক্স উঠিয়ে ওর হাতে দিল।

মধু মুখ খুলতে যাবে নাফিসা বেগম ওকে হাত দিয়ে থামিয়ে বললেন,,” আমার ছেলের অনেক সময় ধরে বাইরে দাঁড়িয়ে অস্থির হচ্ছে। যাও তার অস্থিরতা কমাও। আমি তার ব‌উকে মারতে ডাকি নাই।”
মধু চোর ধরা পরলে যেমন মুখ লুকিয়ে পালাতে চায় মধু ও তেমন অবস্থা হলো।

জিভে কামড় দিয়ে আমতা আমতা করতে লাগল। তারপর আর একটা কথা ও না বলে বাইরে চলে এলো। দেখল ফুয়াদ দাঁড়িয়ে পায়চারি করছে। মধু কে এগিয়ে আসতে দেখেই হাফ ছেড়ে বাঁচল যেন। ওর দিকে এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বলল,,” কি হলো এতো সময় লাগল কেন? আম্মু কি বকেছে তোমায়? হাতে কি এটা? এটা তো….”
মধু বলল,,” ফিসফিস করে কথা বলে‌ আর কি হবে! আন্টি তো জানেই আপনি বাইরে আছেন।”

“কি? আম্মু জানল কি করে আমি বাইরে আছি। তুমি বলেছ?” কপট রাগ দেখিয়ে বলল ফুয়াদ।
” আমাকে কি পাগলা কুকুরের কামড়েছে আমি তাকে এটা বলতে যাব। আন্টি একাই বলল, আপনি বাইরে আছেন কীভাবে জানলে আমি কি জানব‌।”
ফুয়াদ আর এক মুহূর্তও ওখানে দাঁড়াল না নিজের রুমের দিকে হাঁটা ধরল। মধু ও ওর পেছনে পেছনে আসছে। সিঁড়ির কাছে এসে বলল,,” কি হলো আপনি আমার সাথে রাগ করলেন নাকি আমি এখানে কি করেছি? আমি কি জানতাম নাকি আন্টি জানে!”

ফুয়াদ বলল,,” এজন্য বলেছিলাম একাই যাও। বেশি ভয় পাও আম্মু এখন কি ভাববে আমি তার আছে ব‌উ রেখে নিশ্চিন্তে থাকতে পারি না‌।”
” আই এ্যাম সরি।” মুখ গোমড়া করে বলল মধু।
রুমে এসে মধু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বক্স খুলে গলায় কানে ঝুমকা পরতে লাগল।
” এটা আম্মু তোমাকে দিয়েছে?” বিস্মিত কন্ঠে বলল ফুয়াদ।
” হুম এটা দিতেই ডেকেছিল। সুন্দর না?”

মধু গলায়, কানে, মাথায় টিকলি, নাকে নথ ও হাতে বালা পরে ফুয়াদ কে দেখিয়ে বলল।
ফুয়াদ মধুর নাকে থেকে নথ খুলে বলল,,” এগুলো সুন্দর না। কিন্তু আমার প্রেয়সীর গায়ে স্থান পেয়েছে বলে সুন্দর হয়ে উঠেছে। কারণ আমার চোখে সুন্দরের প্রতিমা তুমি। তুমি যা দিয়েই নিজেকে সাজাবে তাতেই আমার চোখে অপরুপা সুন্দরী লাগবে।”

” ইশ,” বলেই মধু দুহাতে মুখ ডেকে ফেলল লজ্জায়।
তারপর চোখ থেকে হাত সরিয়ে বলল,,” নথ খুললেন কেন?”
নাকে থাকা ছোটো ডায়মন্ডের ফুল দেখিয়ে বলল,,” ওটাই পারফেক্ট আছে। এটার প্রয়োজন নাই।”
” ওকে।”

মধু ফের আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে সব খুলতে লাগল। সব খুলে আবার বক্স এ সুন্দর করে তুলে রাখে। তারপর ফুয়াদের কাছে এসে ওর কাঁধে মাথা রাখে আর বলে,,” ফোনে এতো কি হ্যা ব‌উ রেখে। খালি ফোনে ডুবে থাকেন। বিয়ে করে ভালোবাসা কমে গেল নাকি‌!”
গাল ফুলিয়ে বলল মধু।
ফুয়াদ ফোন অফ করে বলল,,” ভাইয়া কে কল

করলাম ফোন অফ। সেই যে সকালে বাসা থেকে বের হলো আর কোন খোঁজখবর নাই।”
” সমুদ্র ভাইয়া তো এমন করে আগে থেকেই। এতো টেনশন করছেন কেন?”
” হুম করে কিন্তু ফোন অফ রাখে না। কারো ফোন রিসিভ না করলে ও আমার ফোন রিসিভ করে। কিন্তু আজ তো…”
“মন খারাপ করছেন কেন? এতো দিন আপনি ছিলেন না সবাই টেনশনে ছিল ভাইয়া ও নিজের মতো সময় কাটাতে পারেনি তাই হয়ত আজ একটু নিজের মতো সময় কাটাচ্ছে।”

ফুয়াদ বলল,,” হয়ত। আচ্ছা বাদ দাও। আম্মু তোমার সাথে ভালো করে কথা বলেছে?”
” হুম কথা তো ভালোই বলেছে কিন্তু মুখটা গম্ভীর করে রেখেছিল।‌ কিন্তু আমার মনে হয় আমার উপর থেকে রাগ পরে যাচ্ছে। কিন্তু জড়তার জন্য সেটা দেখাতে পারছে না আন্টি।”
” কীভাবে বুঝলে?”

” মিতুল আপুর কাহিনী শোনার পর থেকেই আন্টি পরিবর্তন হয়ে গেছে দেখেছেন।”
” হুম আম্মু তো মিতুলের বাসায় ও গিয়েছিল সেখানে গিয়ে কি করল কিছুই তো জানি না কিন্তু যাই করুক মিতুলের ভূত মায়ের মাথা থেকে নেমেছে এটাই শান্তি।”
” আন্টি তো প্রথম থেকেই আমাকে আদর করে। শুধু আপনার জন্য তার সাথে আমার এই ঝামেলা হয়েছিল।”
ফুয়াদ ভ্রু কুঁচকে বলল,,” আমার জন্য?”
মধু বলল,,” হুম আপনার জন্য। আপনি আমায় ভালো না বাসলে তো এসব কিছুই হতো না। আন্টির চোখে আমি এখনো আদুরেই থাকতাম।”

ফুয়াদ মধু কে কাঁধ থেকে তুলে বলল,,” ফুয়াদ তোমায় ভালো না বাসলে তার বাসায় ও আসতে পারতে না, আর না তার মায়ের আদর খেতে পারতে। ক্রেডিট সব দিক দিয়েই আমার।”
” আসার সব কথাই আমার মনে আছে। কি ভাব টাই না দেখিয়েছিলেন। কথাই বললেন না আমি কোথায় সবাইকে ছেড়ে আপনার কাছে গেলাম আর আপনি পাত্তাই দিলেন না।”

” তুমি আমার কাছে এসেছিলে রিয়েলি? তুমি না মিতুলের সাথে কথা বললে!”
” ওটা তো দেখানোর ছিল। আমি তো আপনার থেকে কিছু প্রত্যাশা করেই গিয়েছিলাম। আর দুইজনে কি এ্যাটিডিউট দেখিয়েছিলেন।”
” পুরোনো কাসুন্দি ঘেঁটে লাভ কি? তখন আমিও তোমার নজর কাড়তে একটু এ্যাটিডিউট দেখিয়েছিলাম। আর তুমিও তাই করেছিলে।”

” আমার এতো আলগা এ্যাটিডিউট নাই আপনার মতো। কম বাজে আচরণ করেন নাই আমার সাথে। কিচ্ছু ভুলি নাই আমি হু।” ঠোঁট উল্টো গাল ফুলিয়ে বলল মধু।
” এই যে এতো ভালোবাসা দিলাম। লড়াই যুদ্ধ করে বিয়ে করলাম এসব মনে রাখো না। কোন কালে কি করেছিলাম, তাও তোমার নজরে আসতে সেটাই নিয়ে পড়ে আছো। এটাই মেয়ে জাতি ভুলে গেছিলাম।”
” মেয়ে জাতি মানে কি হ্যা! অপমান করছেন তাই না?”
” আসো ভালোবাসা দেই।”

বলেই ফুয়াদ মধুকে কাছে টানল। মধু লাফ দিয়ে সরে গিয়ে বলল,,” লাগবে না ভালোবাসা। অপমান করে ভালোবাসা দিতে আইছে। আপনার ভালোবাসা নিয়ে আপনি থাকেন আমি গেলাম।”
বলেই মধু রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। ফুয়াদ ওর হাত খপ করেই ওরে ফেলে আর বলে,,” ক‌ই যাবা? তিন্নি ও তো বাসায় নাই।”

” আমি কারো কাছেই যাচ্ছি না। আমি তিন্নির‌ রুমে একাই থাকতে পারি।” দাঁতে দাঁত চেপে বলল।
” একা থাকতে দিলে তো যাবে। বিয়ে করেছি কি একা থাকার জন্য। আমার ভালোবাসা আদর তোমায় তো গ্রহণ করতেই হবে জান।”

প্রেয়সী পর্ব ৫৮

মধু কটমট করে ফিরে তাকাল ফুয়াদের দিকে তারপর কিছু বলতে যাবে ফুয়াদ ওকে এক টানে পাঁজকোলে তুলে নিয়ে বলল,,” যত রাগ অভিমান দেখানোর পরে দেখাবে। এখন আমি কিছুই শুনতে চাই না। আমার এখন তোমাকে লাগবে মানে লাগবে।”

প্রেয়সী পর্ব ৫৯(২)