হৃদয়হরণী পর্ব ৫

হৃদয়হরণী পর্ব ৫
তানিশা সুলতানা

কথায় থাকে না “শখের পুরুষকে দেখে শখ মেটে না”
ছোঁয়ার বেপারটাও তেমন৷ শখের পুরুষ এতো আকর্ষণীয় কেনো হয়? এতো লোভ কেনো জন্মায় তার প্রতি?
এই যে ছোঁয়া মানুষটাকে এতো দেখে তবুও তো মন ভরে না। আরও দেখতে ইচ্ছে করে।
সে খাচ্ছে। কোনো দিকে না তাকিয়ে খেয়ে যাচ্ছে। ছোঁয়া নিজের খাওয়া রেখে তাকেই দেখতে ব্যস্ত। এই ছেলেটা মারুক কাটুক অপমান করুক। তবুও ছোঁয়ার এই ছেলেটাকে চায়।

“তুমি সুখ না হয়ে দুঃখ হও। তবুও অন্যের না হয়ে আমার হও”
মনে মনে কয়েকবার কথাটা বলে ছোঁয়া।
“ছোঁয়া এখানকার কলেজে ভর্তি হবে না কি আবার ফিরে যাবে?
সিফাতের কথায় সাদির থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় ছোঁয়া। সত্যিই তো কি করবে?
এখানকার কলেজে ভর্তি হবে? কিন্তু কিছুদিন পরে সাদি নতুন জব পেলে তো আবার চলে যাবে দূরে কোথাও। তখন কি করবে? কি করে দেখবে সাদিকে?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ছোঁয়ার চোখে পানি চলে আসে। মমতা বেগম তার গালে রুটি পুরে দিয়েছে। সে কোনোরকমে রুটি গিলে বলে
” আমাকে বিয়ে দিয়ে দাও জিজু৷ আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। বিয়ে হয়ে গেলে নিশ্চয় তাকে এতোটা মনে পড়বে না।
সকলে অবাক হয়ে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। সিমি বুঝতে পারে ছোঁয়ার কথার মানে। সাবিনা বেগম হাত বুলিয়ে দেয় মাথায়।ছোঁয়া যে মজা করে বলছে না সেটা তার চোখের পানি দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

সাদি বিরক্ত হয়। রুটির মধ্যে করলা ভাজি দিয়ে তা মুখে পুরে এক পলক তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
ছোঁয়া তাকিয়েই ছিলো তাই চোখাচোখি হয়ে যায়।
সাদি চোখ ফিরিয়ে নিয়ে নিজের খাওয়াতে মন দেয়।
সাবিনা বেগম ছোঁয়ার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে

“সোনা মা কান্না করে না। সাদুর বিয়েটা দিয়েই তোমাকে বিয়ে দিয়ে দেবো।
ছোঁয়ার কান্না থামে না। সাদির বিয়ে হয়ে যাবে? বুকটা অসম্ভব ভাবে পুরতে থাকে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু পারে না।

” আমি বিয়েটা করতে দিবো না। আমার ফিলিংস কি এতো সস্তা না কি? ভালোবেসেছি মানে আমারই হতে হবে। বিয়ে করতে যাবে? খু*ন করে ফেলবো আমি।
নিজেকে শান্ত করার জন্য মনে মনে বলে ছোঁয়া।

“আব্বা আমি মেয়ে পেয়ে গিয়েছি। তোর ছোট ফুপির ভাসুরের মেয়ে। মেয়েটা মাশাআল্লাহ। অনর্স শেষ করেছে।
আজকেই দেখতে যাবো ভাবছি। তুই কি বলিস?
সাদি জবাব দেয় না। সিফাত ভ্রু কুচকে তাকায়। তার গম্ভীর ভাই বিয়ে করবে? তবে সে খুশি। বিয়ে করলে হয়ত এই গম্ভীর ভাবটা চলে যাবে।

সিমি বোনের দিকে তাকিয়ে আছে। সে কখনোই চায় না ছোঁয়ার সাথে সাদির কোনো সম্পর্ক হোক। ছোঁয়া উড়ন্ত একটা পাখি। সাদির মতো লোহার খাঁচা তার জন্য না।
মমতা বেগম এক গাল হেসে বলে
” আজকেই যামু বউ৷ দেরি করমু কেন? পছন্দ হইলে আজকেই আংটি পড়িয়ে দিমু। আর এই সপ্তাহের মধ্যেই বিয়ে ফাইনাল করমু।

তোমার আব্বার তো আবার মাথা গরম। চাকরি হইলেই বাড়ি থেকে চলে যাইবো। আমরা বাইচা আছি কি না মইরা গেছি খবর টাও তো নিবো না।
সাথে বউ পাঠিয়ে দিতে পারলে নিশ্চিত হওয়া যাবে। সে অন্তত একটু খবর টবর দিবে।
মমতা সঠিক কথা বলেছেন। তার সিদ্ধান্তকে সবাই সায় জানায়। ছোঁয়ার আর খাওয়া হয় না। সে উঠে চলে যায়। পেছন থেকে মমতা বেগম ডাকে কিন্তু সে পেছন ফিরে তাকায় না।
ছোঁয়ার দিকে মন না দিয়ে সবাই মেয়ে দেখতে যাওয়ার কথা বলতে থাকে।

সাদি রুমে ঢুকতেই দেখতে পায় ছোঁয়া তার বিছানায় বসে আছে। এবং তারই টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে নাক মুছছে।
সাদি চুপচাপ রুমে ঢুকে টেবিলের ওপর থেকে ফোন নিয়ে সোফায় বসে পড়ে।
ছোঁয়া তাকিয়ে আছে। সাদি কিছু বলবে তার অপেক্ষায়। কিন্তু গোমড়ামুখো জলহস্তী কিছুই বলছে না। একটা মানুষ এমন কি করে হতে পারে?
সাদি কিছু বলবে না বুঝতে পেরে ছোঁয়া বিছানায় টিস্যু ফেলে সাদির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

“আপনি কেনো বিয়ে করবেন?
সাদি ফোনের স্কিনে চোখ রেখেই জবাব দেয়
” আরেকটা থা*প্প*ড় খেতে না চাইলে বেরিয়ে যাও।
ছোঁয়া সাদির পাশে বসে পড়ে।

“যাবো না৷ আপনার বাড়ি না কি এটা? মালিকের মতো ধমকাচ্ছেন। এটা আমার দাদার বাড়ি। এই বাড়ির আনাচে-কানাচে আমার অধিকার রয়েছে। আমি যেখানে খুশি বসতে পারি। যেখানে খুশি যেতে পারি। আপনি বলার কে? হু আর ইউ?
সাদি জবাব দেয় না। সে ফোনে ইন্টারেস্টিং কিছু দেখছে। ছোঁয়ার কথা তার কানে ঢুকেছে কি না বোঝা মুশকিল।
ছোঁয়া বিরক্ত হয়। এই পাথরকে কি করে বোঝাবে সে?

” আপনি কেনো বুঝতে পারছেন না?
খানিকটা চেঁচিয়ে বলে ছোঁয়া। সাদি ফোন রেখে চোখ বন্ধ করে শ্বাস টানে
“সাট আপ ইডিয়েট। যাও এখান থেকে। আদারওয়াইজ থা*প্প*ড়ে গাল লাল করে দিবো।
ছোঁয়া দুই হাতে চুপ টেনে কিছুখন মাথা নিচু করে বসে থাকে। তারপর হাতের সামনে থাকা সাদির ল্যাপটপ ফ্লোরে ফেলে দেয়। সাদি কিছুই বলে না। সে ফোন দেখছে। ছোঁয়া সাদির ফোনটা নিয়ে দেয়ালে ছুঁড়ে মারে।
সাদি অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় তাকায়। ছোঁয়া দাঁতে দাঁত চেপে সাদির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে বলে

” বিয়ে আপনার আমাকেই করতে হবে। চ্যালেন্জ করলাম আপনাকে। আপনার রুমে আপনার খাটে আপনার পাশে আমি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের এতটুকু ছায়াও আসতে দিবো না আমি।
আমি ছাড়া অন্য কোনো মেয়েকে টাচ করার কথা ভুলে যান।
চাপকে তো আমি গাল লাল করতে পারবো না। তবে আপনার চুল টেনে ছিঁড়তে পারবো।
শয়তান বেডা

বলেই ছোঁয়া হনহনিয়ে চলে যায়। সাদি ছোঁয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
ল্যাপটপ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এটা ভাঙাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ফোন?
প্রথম মাসের বেতন দিয়ে অল্প দামে ফোনটা কিনেছিলো সাদি। চাকরি নেই। হাতে টাকা নেই। এখন ফোনটাও গেলো।
বিরক্ততে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে সাদি। আবার সেই বাবার কাছে হাত পাততে হবে?

ছোঁয়া খুশি হয়েছে ফোনটা ভাঙতে পেরে। কথায় কথায় রাগ দেখানো না? এবার থেকে এভাবেই প্রতিশোধ নিতে হবে।
ছোঁয়া নিজের ফোনে একটা গান চালিয়ে ওড়না ফেলে উরাধুরা নাচতে থাকে। ফোন আর ল্যাপটপ ভেঙে তার মনে হচ্ছে সে বিশ্ব জয় করে ফেলেছে।

কিন্তু ছোঁয়ার নাচ বেশিখন টিকতে পারে না। সাদি হনহনিয়ে ছোঁয়ার রুমে ঢুকে পড়ে। বিছানা থেকে ফোনটা নিতে যেতেই ছোঁয়া খপ করে নিজের ফোনটা ধরে ফেলে।
“আমার ফোন ভাঙবেন না। কয়দিন আগে বাবা এক বস্তা টাকা দিয়ে কিনে দিয়েছে।
সাদি ছোঁয়ার হাতের দিকে তাকায়। পোরা হাত দিয়ে শক্ত করে ধরেছে।
” সিনক্রিয়েট করো না। ফোনটা দাও। আমার ইমপটেন্ট কল আসবে।
ছোঁয়া বুঝতে পারে। তার ফোনটা এখন লাটসাহেব নিয়ে যাবে।

“ফোনটা দিলে বিয়ে করবেন বলেন।
সাদি ছোঁয়ার কথা কানে নেয় না। আস্তে করে ছোঁয়ার হাতটা ধরে। প্রথমবার সাদির ছোঁয়া পেলো ছোঁয়া। অদ্ভুত ভাবে শরীরটা কেঁপে ওঠে। চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে।
সাদি বা হাতটা ধরে ডান হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেয়।

হৃদয়হরণী পর্ব ৪

” আপনার ছোঁয়ায় মধু মেশানো আছে গোমড়ামুখো। সেই মধু আমার হৃদয়হরণ করে নিচ্ছে।
সাদি ছেড়ে দিতে চায় ছোঁয়ার হাত কিন্তু তখনই ছোঁয়া একটা অদ্ভুত কাজ করে ফেলে

হৃদয়হরণী পর্ব ৬