অনেক সাধনার পরে পর্ব ১৮

অনেক সাধনার পরে পর্ব ১৮
অরনিশা সাথী

দুদিন পরের কথা। গোসল সেরে সবেই ভেজা কাপড় হতে নিজের ঘর থেকে বের হয়েছে শাহানা বেগম। উদ্দেশ্য ছাদে যাওয়া। ভেজা কাপড় গুলো শুকোতে দিবে যে। হঠাৎ সদর দরজায় চোখ পড়তেই অবাক হোন তিনি। লাগেজ নিয়ে ভিতরে ঢুকছে নিবির। পেছনে কিয়ান আছে। ওর কাঁধে বড় একটা কার্টুন। শাহানা কাপড়ের বালতিটা ফ্লোরে রেখে দুই কদম এগিয়ে এলো ওদের দিকে। দুজনকেই বেশ খুশি খুশি লাগছে। শাহানা বেগম বললো,

–“লাগেজ কার্টুন এসব নিয়ে তোরা কোত্থে___”
কথা শেষ করতে পারলো না শাহানা বেগম। তার আগেই নিবির আর কিয়ানের পেছন পেছনেই আরো একটা লাগেজ হাতে ভিতরে ঢুকলো নুহাশ। শাহানা বেগম থমকে গেলো। এতগুলো দিন পর ছেলেটাকে চোখের সামনে দেখে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে গালে মুখে হাত বুলায়। অশ্রুসিক্ত নয়নে বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–“তুই এসেছিস বাবা? তোর অপেক্ষায় পথ চেয়েই তো বসেছিলাম আমরা। আমাকে জানিয়ে আসবি না?”
নুহাশ হেসে শাহানা বেগমকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললো,
–“বলে আসলে সারপ্রাইজ হতো নাকি?”
শাহানা বেগম নুহাশের বুকে মাথা রেখে কেঁদে দিলো। ক্ষানিকটা বাদেই মাথা উঁচু করে নুহাশের সারা মুখে হাত বুলিয়ে বলে,

–“কত শুকিয়ে গেছিস তুই। খাস না ঠিক মতো? এবার এসেছিস খাওয়া নিয়ে আর কোনো টালবাহানা শুনবো না তোর।”
নিবির বললো,
–“অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছে মা। ওকে একটু ফ্রেস হয়ে বিশ্রাম নিতে দাও।”
–“হ্যাঁ হ্যাঁ বাবা তুই ঘরে যা। বিশ্রাম নে, আমি নামায পড়ে খাবার দাবারের ব্যবস্থা করছি।”
–“বাবা, নির্ঝর ওরা কোথায়?”
–“তোর বাবা মার্কেটে গেছে। আর নির্ঝর ঘুমিয়েছে।”
–“বাবা আবার মার্কেটে কেন গেছে?”

–“ওই মাঝে মাঝে গিয়ে দেখে কর্মচারীরা দোকান পাট ঠিকঠাক সামাল দিচ্ছে কিনা।”
–“আচ্ছা আমি ঘরে গেলাম। বাবাকে ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বলো।”
শাহানা বেগম সম্মতি জানায় নুহাশ আর না দাঁড়িয়ে হনহনিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়। ওর পিছু নিলো কিয়ান। অনেক কথা জমে আছে যে। আর নিবিরও পা বাড়ালো নিজের ঘরের দিকে।

ছাদে দাঁড়িয়ে আছে রুজবা আর ফারিন। কিছুক্ষণ হলো দুজনে ছাদে উঠেছে। রুজবার দৃষ্টি আকাশ পানে। আর ফারিন অন্যপাশে গিয়ে কিয়ানের সাথে ফোনে কথা বলছে৷ রুজবার কাছে ওদের সম্পর্কটা বেশ লাগে। চার বছর হতে চললো ওদের সম্পর্কের। লুকিয়ে চুড়িয়ে এত গুলো বছর ধরে একে অপরের সাথে আছে। একজন অপর জনকে ভালোবাসে অথচ রুজবা, নুহাশ আর আদিরা ব্যতীত অন্য কেউ জানেই না কথাটা। দুজন দুজনকে যেন চোখে হারায়। এত গুলো বছরেও ভালোবাসা কমেনি। দুজনের মাঝে অসম্ভব ভালোবাসা।
ফারিন কথা শেষ করে রুজবার পাশে এসে দাঁড়ালো। রুজবা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

–“ফাইনালি কথা শেষ হলো? কথা বলছিলি তুই আর এদিকে হাঁপিয়ে উঠছিলাম আমি।”
ফারিন মৃদু হেসে বললো,
–“গুড নিউজ আছে।”
রুজবা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। কিছুক্ষণ ভেবে বললো,

–“কিয়ান ভাইয়া কি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসছে নাকি?”
–“তেমন কিছু না।”
রুজবা এবার সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
–“তাহলে কি?”
–“নুহাশ ভাই ফিরেছে। তা’ও আবার কেন জানিস?”
রুজবা দুদিকে মাথা নাড়ালো। যার অর্থ ও জানে না। ফারিন আরো হাসিখুশি ভাবে বললো,

–“শুধুমাত্র তোর জন্য। কিয়ানের থেকে তোর ব্রেক-আপ প্লাস সুইসাইড করতে যাচ্ছিলি এটা শুনেছে উনি। সেজন্যই দুদিনের মধ্যে দেশে ফিরেছে। তুই অন্যকাউকে ভালোবাসিস, অন্য ছেলের জন্য মরতে যাচ্ছিলি তবুও তোর কথা শুনে ছুটে এসেছে উনি। ভাব তাহলে লোকটা ঠিক কত্তটা ভালোবাসে তোকে।”

কিছু সময়ের জন্য থমকে গেলো রুজবা। নুহাশ দেশে ফিরেছে? তা’ও শুধুমাত্র ওর জন্য? লোকটা এত ভালোবাসে কেন ওকে? ও তো মানুষটাকে ভালোবাসা দিতে পারেনি। বরং কষ্টটাই দিয়ে গেছে। তারপরেও ওর পাগলামির কথা শুনে আমেরিকা থেকে ছুটে এসেছে লোকটা৷ রুজবা কি এত ভালোবাসা আসলেই ডিজার্ভ করে? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো। অন্যদিকে যাকে সবটা উজার করে ভালোবাসলো, যার জন্য মরার চিন্তা করেছিলো সে ফিরেও তাকায়নি একবারো। নিদ্রাকে নিয়ে হেসেখেলে দিন কাটাচ্ছে। ফারিন রুজবার কাঁধে হাত রেখে বললো,

–“কিরে কি ভাবছিস?”
–“কেন জানিয়েছিস উনাকে এসব? নিজের ব্রাইট ফিউচার রেখে কেউ এভাবে একটা মেয়ের জন্য ছুটে আসে? তার উপর মেয়েটা তাকে ভালোও বাসে না।”
–“সবাই নিজের ক্যারিয়ার আর ব্রাইট ফিউচার এর কথা চিন্তা করে না। কেউ কেউ নিজের ক্যারিয়ার ছেড়ে দিতেও দ্বিধা করে না নিজের ভালোবাসার মানুষটার জন্য। নুহাশ ভাই তাদেরই একজন।”

রুজবা এখানেও জারাফ আর নুহাশের মাঝে ব্যাপক পার্থক্য খুঁজে পেলো। জারাফ সুন্দর ক্যারিয়ারের জন্য নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে ছেড়ে নিদ্রাকে চুজ করেছে। এত দিনের সম্পর্ক নিমিষেই ভেঙে দিয়েছে। আর নুহাশ ভালোবাসার মানুষটার করা পাগলামির কথা শুনে ছুটে এসেছে নিজের ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা না করেই। অথচ রুজবা ওকে ভালোবাসে না। জারাফ’ও তো ভালোবাসেনি। ভালোবাসলে কি আর ছাড়তে পারতো? ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রুজবা।

ফারদিন পরিবারের আজ সন্ধ্যায় উৎসব উৎসব আমেজ। এতদিন বাদে বাড়ির ছোট ছেলে বাড়ি ফিরেছে। ওকে পেয়ে সবাই ভীষণ রকমের খুশি। নির্ঝর নুহাশের গলা জড়িয়ে ধরে বসে আছে। শাহানা আর আদিরা কিচেনে সন্ধ্যার নাস্তা বানাচ্ছে। নিবির নুহাশ নোমান সাহেব তিনজনেই সোফায় বসে আছে। নোমান সাহেব টিভিতে খবর দেখছে। অন্য সবার মতো তিনিও ভীষণ খুশি নুহাশের ফিরে আসায়।

উনার অনেক আদরের ছেলে এই নুহাশ। ছোট থেকে যা চেয়েছে তাই পেয়েছে। বলতে গেলে চাওয়ার আগেই সবকিছু পেয়েছে। তাই ওর রাগ জেদটাও নিবিরের তুলনায় অনেক বেশি। একরোখা ছেলে, যা বলবে তাই করবে। এই যে এতদিন এত বলে বলেও দেশে ফেরানো যায়নি, অথচ হুট করেই কাউকে কিচ্ছু না জানিয়ে চলে এলো। সে যে বরাবরই নিজের মর্জিতে চলা মানুষ এটা এই তল্লাটে কম বেশি সবাই জানে।

শাহানা আর আদিরা নাস্তার ট্রে এনে রাখলো টি-টেবিলে। এতদিন বাদে নুহাশ আসায় হরেক রকমের নাস্তা বানিয়েছে তিনি। সাথে রাতের জন্য নুহাশের সব ধরনের পছন্দের খাবার তো আছেই। শাহানা নাস্তার ট্রে রেখেই কিচেনে ছুটছিলো। নুহাশ মায়ের হাত টেনে ধরে নিজের পাশে বসিয়ে বললো,
–“বসো তো এখানে। এসেছি পর থেকে কিচেনে ছোটাছুটি করেই যাচ্ছো। তোমার ছেলে এত খায় না মা। এত এত রান্না কেন কষ্ট করে করছো?”

–“আমি জানি আমার ছেলে অত খায় না। কিন্তু তাই বলে এত দিন বাদে বাড়ি ফিরেছিস আমি তোকে রান্না করে নিজের মন মতো খাওয়াবো না? বেশি না খেলেও সব আইটেম থেকে একটু একটু তো খেতেই হবে বাবা। সব তোর পছন্দের রান্না।”
নুহাশ হার মানলো। জানে শাহানা বেগমকে বলে লাভ নেই। নুহাশ প্রসঙ্গ পালটে বললো,

–“কথা আছে সবার সাথে।”
শাহানা বেগম ব্যস্ত ভঙ্গিতে উঠে বললো,
–“শুরু কর, আমি আসছি।”
–“বসো বললাম না।”
–“তরকারিটা নামিয়ে আসছি বাবা। ওটা নামালেই শেষ।”

–“আচ্ছা তাড়াতাড়ি এসো।”
নুহাশ কথাটা বলতেই শাহানা বেগম ব্যস্ত পায়ে কিচেনে চলে গেলো। হাতের কাজ শেষ করে মিনিট দশেক বাদে এসে বসলেন নুহাশের পাশে। বললো,
–“এবার বল কি বলবি।”
নুহাশ কোনো ভনিতা ছাড়াই বললো,

–“আমার দেশে আসার পেছনে একটা কারণ আছে।”
নোমান সাহেব টিভি বন্ধ করে বললো,
–“আমরা’ও জানি কোনো কারণ ছাড়া তুমি আসোনি। বলো কি কারণ।”
নুহাশ অকপটে বললো,
–“বিয়ে করবো আমি।”

নিবির পানি খাচ্ছিলো। আগের বারের মতো এবারেও বিষম খেলো ছেলেটা। মুখ ফসকে সব পানি বেরিয়ে এলো৷ কাঁশতে শুরু করে দিলো নিবির। আদিরা দ্রুত গিয়ে নিবিরের পিঠে হাত বুলায়। শাহানা বেগম অস্থির স্বরে বললো,
–“আহা! আস্তে খাবি তো বাবা। তাড়াহুড়ায় কেউ পানি খায়?”
নিবির নিজেকে শান্ত করে বললো,

–“তাড়াহুড়ায় বিষম উঠেনি মা। তোমার ছেলের কথা শুনে হয়েছে এমন।”
আদিরা চোখের ইশারায় চুপ থাকতে বললো নিবিরকে। নিবির সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায় নুহাশের দিকে৷ এটা সত্যিই ওর ভাই তো? এত সাহস নুহাশ পায় কোথায়? যেখানে নিবির ওর থেকে বড় হয়েও এত সাহস দেখাতে পারে না। নুহাশ দুই দুবার বাবার সামনে বসে বিয়ের কথা বলে দিচ্ছে।

আর ওর একবার আদিরার কথা বলাতেই হাটু কেঁপেছে। এক মূহুর্তের জন্য মনে পড়লো সেসব কথা। দ্রুত অতীত থেকে ফিরে আসে ও। ওসব মনে করতে চায় না। নিবিরের মুখে আদিরার কথা শুনে ঠাঁটিয়ে চ/ড় মেরেছিলো নোমান সাহেব। কেননা তখন নিবিরের বয়স খুব কম ছিলো, সবে কলেজের গন্ডি পেরিয়ে ভার্সিটি উঠেছিলো। সেই চ/ড়ে/র কথা মনে হতেই ওর অজান্তে বা হাতটা বা গালে চলে গেলো। ইশ্ কি চ/ড়/টা মেরেছিলো নোমান সাহেব। আদিরা ফিক করে হেসে দিলো নিবিরের কান্ডে। আদিরার হাসির শব্দে সবাই ওর দিকে তাকালো। তারপর আবার নিবিরের দিকে তাকায়। শাহানা বেগম ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

–“সে কি তুই গালে হাত দিয়ে বসে আছিস কেন?”
নিবির শাহানা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“আচ্ছা মা, আমি একবার বাবার কাছে আদিরাকে বিয়ের কথা বলায় বাবা আমায় যে চ/ড়/টা মেরেছে মনে পড়লে এখনো গালটা ব্যাথায় টনটন করে। আর নুহাশ দুই দুইবার বিয়ের কথা বললো বাবা তো একবারো চ/ড় মারলো না। সত্যি করে বলো আমি তোমাদের আপন ছেলে তো?”

নিবিরের কথায় নুহাশ আর শাহানা বেগম ফিক করে হেসে দেয়। হাসি আটকে রাখতে পারে না নোমান সাহেব’ও। আদিরা হাসার সুযোগ পেয়ে এবার যেন হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। বারবার নিবিরের উপর ঢলে পড়ছে। নির্ঝর শুধু বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে সবার হাসি দেখছে। নিবির আদিরাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বললো,

–“সরে বসো, এদিকে উনাকে বিয়ে করার কথা বলায় আমি চ/ড় খেয়েছিলাম অন্যদিকে উনি সেসব শুনে হাসছে। আজব পাবলিক।”
শাহানা বেগম হাসি থামিয়ে বললো,
–“শোনো পাগল ছেলের কথা৷ তুই আমার নিজের ছেলে। পর হবি কেন? আমার কোল আলো করে প্রথমে তো তুই’ই এসেছিস।”
নোমান সাহেব গলা ঝেড়ে বললো,

–“তখন তুমি সবে কলেজের গন্ডি পেরিয়ে ভার্সিটি উঠেছো। ও-সময়ে কেউ বিয়ের কথা ভাবে? আর তোমার ভাই তো ছোট থেকেই একরোখা, জেদী। যা বলে তাই করে। জানো না?”
–“আজকে প্রথম বারের মতো আফসোস হচ্ছে জেদী আর একরোখা না হওয়ার জন্য। যদি হতাম তাহলে সেদিন আর তোমার ওই শক্তপোক্ত হাতের চ/ড় খেতে হতো না আমায়।”
নিবিরের কথায় আবারো মৃদু হাসলো সকলে। নিবির নুহাশকে বললো,

–“এবার আবার কাকে বিয়ে করবি বলে ফেল।”
নুহাশ ভ্রু কুঁচকে বললো,
–“এমন ভাবে বলছো যেন আমি আগেও শ’খানেক বিয়ে করেছি।”
–“তা করিসনি, কিন্তু বলেছিলি তো একবার।”
–“রুজবাকেই বিয়ে করতে চাই।”

এবারেও চমকালো সবাই। শুধুমাত্র আদিরা ছাড়া৷ কেননা আদিরা সব জানে। নুহাশ আর কিয়ান দুজনেই সব শেয়ার করে ওর কাছে। নুহাশ বাড়ি ফিরেই বিকেলে সব বলেছে আদিরাকে। নোমান সাহেব তেতে উঠে বললেন,
–“আবারো বিয়ের দিন বিয়ে করবো না বলে চলে আসার জন্য মেয়েটাকে বিয়ে করতে চাইছো?”
নুহাশ ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দেয়,

–“উঁহু, এবার বিয়ে করবো। কারো কোনো মানা শুনবো না আমি।”
শাহানা বেগম সবটাই জানেন। তাই তিনি বললেন,
–“কিন্তু রুজবা যে___”
–“সম্পর্ক ভেঙেছে মা। দ্বিতীয় বারের মতো একটা সুযোগ পেয়েছি রুজবাকে নিজের করার। এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না। সবাই তো আর দ্বিতীয় সুযোগ পায় না মা।”

নোমান সাহেব’ও সবই জানেন এ বিষয়ে। নিবির’ও জানেন। নুহাশ চলে যাওয়ার পরই শাহানা বেগম সবাইকে বলেছে নুহাশ কেন ওদিন ফিরে এসেছিলো। নিবির বললো,
–“কিন্তু রুজবা এবারেও যদি____”
–“সেজন্যই এবার আগে ওর সাথে আমি নিজে কথা বলবো। ও রাজি হলে তারপর তোমরা কথা বলবে রুজবার বাবার সাথে।”
নোমান সাহেব বললো,

–“একবার বিয়ে ভেঙে এসেছিস, এরপরেও কি রায়হান সাহেব রাজি হবে?”
–“হবে, না হলে তোমরা বোঝাবে। এতেও যদি না হয় তখন আমি নিজে কথা বলবো।”
নুহাশের কথায় বাধ্য ছেলের মতো ঘাড় কাত করলো নোমান সাহেব।

পাশাপাশি একটা বেঞ্চিতে বসে আছে নূহাশ আর রুজবা। ওদের থেকে বেশ ক্ষানিকটা দূরেই অন্য একটা বেঞ্চিতে বসা কিয়ান-ফারিন। কিয়ান ফারিনের হাত ধরে বসে আছে। ফারিন নিশ্চিন্ত মনে মাথা রেখেছে কিয়ানের কাঁধে। ওদের দেখলে রুজবার চোখ জুড়িয়ে যায়। নুহাশ পাশ থেকে বললো,

–“তুমি চাইলে এমন একটা মূহুর্ত আমাদের’ও হতে পারে রুজবা।”
রুজবা চমকায়, অবাক হয়৷ তড়িৎ গতিতে তাকায় নুহাশের পানে। নুহাশের দৃষ্টি সামনের ওই পুকুরের স্বচ্ছ পানিতে। রুজবার বুক ভারী হয়ে আসে। লোকটা তো জানে ও জারাফকে ভালোবাসে তাহলে এসব কেন বলছে? নুহাশ বলে,
–“ভুল মানুষকে ভালোবেসে তো এতটা কষ্ট পাচ্ছো, তার জন্য মরতে বসেছিলে সে নিয়েছে তোমার খোঁজ? কতটা গাধী হলে ওই ছেলের জন্য মরতে যাও তুমি আমি সেটাই ভাবছি।”

–“খোঁচা মারলেন?”
–“কিয়ানের থেকে যখন কথা গুলো শুনেছিলাম আমার তখন কি ইচ্ছে করছিলো জানো?”
রুজবা প্রশ্ন চোখে তাকালো নুহাশের দিকে। নুহাশ বললো,
–“ওই মূহুর্তে তুমি আমার সামনে থাকলে চড়িয়ে গাল লাল করে দিতাম। মরার শখ একদম ঘুচিয়ে দিতাম।”

রুজবা চুপ থাকে। এরকম কথা তো রুজবা জারাফের থেকে আশা করেছিলো। ভেবেছে জারাফ ওকে ফোন দিয়ে বলবে এসব ওর করা পাগলামির জন্য। কিন্তু এমন কিছু হয়নি। রুজবার ভাবনা সম্পূর্ণ ভুল ছিলো। গত আড়াই মাসে জারাফ একটা বারের জন্যও ফোন করেনি ওকে। নুহাশ রুজবার মুখপানে কিছুক্ষণ পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকলো। কত শুকিয়ে গেছে মেয়েটা। আগের সেই চঞ্চল রুজবাকে খুঁজে পাচ্ছে না নুহাশ। এতটা নিরব হয়ে গেলো মেয়েটা? নুহাশ ভাবনা থেকে বেরিয়ে বললো,

অনেক সাধনার পরে পর্ব ১৭

–“আমাকে কি একটা সুযোগ দেওয়া যায় রুজবা? কথা দিচ্ছি মাঝপথে ছেড়ে যাবো না। হালাল ভাবে চাই তোমাকে আমি।”

অনেক সাধনার পরে পর্ব ১৯