হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৩৮

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৩৮
সাদিয়া জাহান উম্মি

আরাবী ঘুমোচ্ছে।কড়া ডোজের মেডিসিন খাওয়ার কারনে ইদানিং আরাবীর ভীষণ ঘুম পায়।জায়ান ওর পাশেই বসা ছিলো।এমন সময় ইফতির কণ্ঠস্বর পাওয়া গেল, ‘ ভাইয়া আছো?কথা ছিলো একটু।’

ইফতির গলার স্বরে উঠে দাড়ালো জায়ান।তারপর ধীর আওয়াজে বলে,’ হু! আসছি দারা।’
জায়ান আরাবীর গায়ে ভালোভাবে কাথা টেনে দিলো।তারপর ধীর পায়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসল।ইফতি জায়ানকে দেখেই বিচলিত কণ্ঠে বলে,’ ভাইয়া! জরুরি কথা বলবো।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ হুম! বাগানেচল।আরাবী ঘুমোচ্ছে।আওয়াজে জেগে যেতে পারে।’
জায়ান আর ইফতি রুম থেকে সরে গিয়ে বাগানের নিরিবিলি জায়গায় গিয়ে বসল।জায়ান শীতল গলায় প্রশ্ন করে,’ হ্যা বল। কি বলবি!’
‘ ভাইয়া সেদিন তোমায় বললাম নাহ।আমার এক ফ্রেন্ড ওই হাসপাতালের ডক্টর।সাথে ওর আম্মুও ডক্টর ওই একই হাসপাতালের।’

ইফতির কথায় জায়ান ভ্রু-কুচকালো। বলল, ‘ হ্যা তো?’
ইফতি বলল, ‘ আমি আমার সেই ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলেছিলাম।সাথে আন্টির সাথেও।আন্টিকে বিষয়টা জানাতে উনি আমায় তারিখ’টা জিজ্ঞেস করেছিলো।আমিও বললাম।তারিখটা বলতেই কেমন যেন তিনি থমথমে হয়ে গিয়েছিলো।শুধু বলল তোমাকে নিয়ে যেন তার সাথে দেখা করি।আমার মন বলছে ভাইয়া।কিছু একটা ঘাপলা আছে।’
জায়ানের কোচকানোর ভ্রু-জোড়া আরও কুচকে আসে।কি এমন হলো?যে তারিখ বলতেই তাকে যেতে বলল।জায়ান বলল, ‘ ঠিকই বলছিস ইফতি।কিছু একটা তো সমস্যা অবশ্যই আছে।’

‘ এখন তুমি কবে যাবে?’
‘ তিনি আমায় কবে যেতে বলেছেন?’
ইফতি বলল,’ তুমি গেলেই নাকি হবে।’
‘আচ্ছা তাহলে কাল যাবো নেহ।’
‘ ওকে।তাহলে আমি আন্টিকে জানিয়ে দিবো নেহ।’
‘হুম দিস!’

কোচিং শেষে নূর বাহিরে দাঁড়িয়ে ওর ক্লাসমেট একটা ছেলের সাথে কথা বলছে।ফাহিম কোচিং-এর সকল কাজ শেষ করে বের হচ্ছিলো। গেটের সামনে নূরকে একটা ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে ভ্রু-কুচকে আসে ওর।হঠাৎই রাগ উঠে গেলো ফাহিমের। ইদানিং নিজেকে নিজেই বুঝতে পারেনা ফাহিম।ওর কিযে হয়েছে।নূরকে অন্য কোন ছেলের সাথে কথা বলতে দেখলেই ওর রাগ লাগে।

এমনটা আরাবীর এক্সি’ডেন্ট হয়েছিলো সেদিন নূরের সাথে একটু একান্তভাবে কথা বলেছিলো।নূর ওকে শান্তনা দিয়েছিলো ওইদিন থেকেই নূরের প্রতি আলাদা একটা অনুভূতি কাজ করে ফাহিমের।এই অনুভূতির নাম কি দেবে ফাহিম জানে নাহ।এইযে ফাহিমের যে রাগ লাগছে নূরকে অন্য একটা ছেলের সাথে দেখে।এটা তো অহেতুক রাগ তাই নাহ?মনকে বুঝ দিচ্ছে ফাহিম।তাও মন কথা শুনলে তো? ফাহিম মনের কথা শুনেই এগিয়ে গেলো নূরের কাছে। কথার মাঝে হঠাৎ ফাহিমকে দেখে থেমে যায় নূর।আঁড়চোখে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।ফাহিম থমথমে গলায় বলে,’ নূর,এদিকে আসো। ‘

‘ কেন স্যার?’
‘ একটু দরকার আছে।’
‘ বাট স্যার কোচিং-এর কথা তো কোচিং-এর মধ্যেই বলতে হয়।এখন তো কোচিং টাইম শেষ।তাই যা বলার কাল বলবেন।’
নূর ফাহিমকে মুখের উপর ঘুরিয়ে পেচিয়ে না করে দিলো। খুব সুক্ষভাবে অপমান যাকে বলে।ফাহিম দাঁতেদাঁত চিপল।রাগল ঝাড়ল পাশে দাঁড়ানো ছেলেটার উপর।ফাহিম বলে, ‘ এই ছেলে?তোমার পড়ালেখা নেই?ক’টা বাজে?বাড়ি যাও না কেন?কোচিং-এর টেস্টে কি বাজে রেজাল্ট করেছ সেই খেয়াল আছে?’

ধমক খেয়ে ছেলেটা ভয় পেলো।তড়িঘড়ি করে চলে গেলো দ্রুত পায়ে।ফাহিম এইবার তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল নূরের দিকে।রাগি গলায় বলে,’ ওই ছেলের সাথে এতো কথা কিসের তোমার?’
নূরের একরোখা জবাব, ‘ তাতে আপনার কি?’
‘ নূর আমায় রাগিও নাহ।’
‘ আশ্চর্য! এখানে তো আপনি রেগে যাবেন এমন কিছুই হয়নি।অন্তত আমার চোখে তো পরছে নাহ।’

হাত চেপে ধরল ফাহিম নূরের।ব্যাথা পেলো নূর।তাও কিছু বলল নাহ।ফাহিম টেনে নূরকে নিয়ে কোচিং সেন্টার থেকে বেড়িয়ে আসল।তারপর বলে,’ তুমি আমাকে ইগনোর করছ কেন?’

‘ আপনাকে ইগনোর কোথায় করলাম স্যার? আপনিই তো সেদিন বলেছিলেন না কোচিং-এ যাতে আপনার সাথে ক্লাস বাদে।অহেতুক কথা যেন না বলি।’
নূরের সাথে কোচিং-এ প্রথম দেখার দিনের স্মৃতি মনে পরে গেলো ফাহিমের।মেজাজ খানিকটা ঠান্ডা হলো।মেয়েটা কি তবে অভিমান করেছে?সেদিনের ওর বলা কথার জন্যে?তবে ফাহিম যা করেছিলো তা নূরের ভালোর জন্যেই তো করেছিলো।ফাহিম ঠান্ডা গলায় বলল,’ আমি যা বলেছিলাম তোমার ভালোর জন্যেই তো বলেছিলাম।’

‘ তো?আমি তো আপনার কথাই মানছি।’
ফাহিম দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।তারপর হুট করে বললে, ‘ আচ্ছা সরি।’
চমকে গেলো নূর।ও কখনও ভাবতেই পারেনি ফাহিম ওকে এইভাবে হুট করে সরি বলবে।আসলে সত্যিই নূর অভিমান করেছিলো ফাহিমের সেদিনের ব্যবহারের কারনে।কিন্তু ফাহিমের এই একটা সরি বলাতেই যেন অভিমানের পাহাড় ধ্বসে পরে গেলো নূরের।নূরের চোখ ভরে উঠতে চাইল।তাও সামলে নিলো নূর নিজেকে।ধীর গলায় বলে, ‘ আমি বাসায় যাবো স্যার?’

‘ এতো অভিমান কিসের নূর?আমি জানি তুমি আমায় ভালোবাসো।’ ফাহিমের সোজাসাপটা কথায়।
নূরের যেন চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম।ও তো কখনও এই লোকটাকে ভালোবাসার কথা বলেনি।অথবা এমনও কোন আঁচড়ন করেনি।যা দেখলেই লোকটা বুঝে যাবে ও লোকটাকে ভালোবাসে।তাহলে কিভাবে বুঝল লোকটা? নূরের অবাক হওয়া মুখশ্রী দেখে হাসল ফাহিম।তারপর বলে, ‘ অবাক হয়েছ তাই নাহ?যে আমি জানলাম কি করে?’

নূর জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে তাকাতেই ফাহিম আবার বলে, ‘ আমি তোমার চোখ পড়তে পারি নূর।তোমার চোখে আমি স্পষ্ট আমার জন্যে ভালোবাসা দেখতে পাই।’
নূরের বুক ভাড় হয়ে আসল কষ্টে।লোকটা বুঝে যে ও লোকটাকে ভালোবাসে। তাও ওকে এতোটা অবহেলা করে।কেন করে?কেন এতো কষ্ট দেয় ওকে?নূর ধরা গলায় বলে, ‘ জেনেশুনে তাও তো কষ্ট দেন আমাকে।’

‘ আমায় বিয়ে করবে নূর?’
এইবারের চমকে যেন নূরের হার্ট এ’ট্যাক হয়ে যাবে।এটা কি বলল ফাহিম?সত্যিই কি বিয়ের কথা বলল ওকে? নাকি ও ভুল শুনল? ওর মাথা খারাপ হলো নাকি লোকটার মাথা খারাপ হলো? নূর কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, ‘ আপনি ঠিক আছেন?কিসব বলছেন আপনি?’

ফাহিমের সরল গলায় জবাব,’ চলো বিয়ে করে ফেলি নূর।তুমি তো আমায় ভালোবাসো তাই নাহ?প্রমিস করছি বিয়ের পর একটুও অবহেলা করবো নাহ।’
‘ কিন্তু আমায় তো আপনি ভালোবাসেন নাহ।ভালোবাসেন? সত্যি সত্যি উত্তর দিবেন।’
‘ নাহ ভালোবাসি নাহ।’

তাচ্ছিল্য হাসল নূর।ফাহিম ওকে ভালোবাসে না সেটা নূর ভালোভাবেই জানে।নূর তাচ্ছিল্যভরা কণ্ঠে বলে,’ যেহেতু আমায় ভালোবাসেন নাহ।সেখানে বিয়ে করার প্রশ্নই আসে নাহ।আমি আপনাকে ভালোবাসি ঠিকই।কিন্তু যে আমায় ভালোবাসে নাহ।তাকে বিয়ে আমি করব নাহ। আমাকে দয়া দেখাতে হবে নাহ।আমি কারও দয়ার পাত্রি হতে চাই নাহ।’

‘ আমি তোমায় ভালোবাসি না ঠিকই নূর।তবে সত্যি বলছি আমি তোমাকে মন থেকে আমার স্ত্রীর রূপে চাইছি।আমি তোমাকে দয়া করছি নাহ নূর।’
‘ প্লিজ আপনি থামুন। আমি আর কিছু শুনতে চাই নাহ।’

বলেই নূর চলে যেতে নিতেই ফাহিম ওর হাত টেনে ধরে।গম্ভীর স্বরে বলে, ‘ আমি তোমাকে ভালোবাসি নাহ ঠিকই। তবে তুমি আশেপাশে থাকলে আমার ভালোলাগে।তোমার জন্যে মনের মাঝে আলাদা একটা অনুভূতি কাজ করে নূর।ভালোলাগে তোমার কথা শুনতে।এখন এটাকে আমি কি বলব আমি জানি নাহ।তবে আমি এটুকু জানি আমি তোমার সাথেই সারাজীবন ভালো থাকবো নূর। তুমি শুধু একটু মানিয়ে নিও।’

ফাহিম অতোটা মনের কথা ব্যক্ত করতে পারে নাহ।তবে যেটুকু পারল মনের কথা সবটা বলে দিলো নূরকে।নূর আর পারল না নিজেকে ধরে রাখত। এতোটা অপেক্ষার পালা এইবার শেষ হয়েই গেলো তবে।নূর ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। নূরকে কাঁদতে দেখে ভড়কে যায় ফাহিম।কি করবে দিশা পাচ্ছে না।

চারপাশে তাকাল ফাহিম।দেখল কেউ আছে নাকি! না কেউ নেই।নিশ্চিত হতেই নূরকে বুকে টেনে নেয় নূর।নূর ফাহিমের একটুখানি ছোঁয়া পেতেই।আরো সিটিয়ে যায় ফাহিমের কাছে।ফাহিম আলতো হাতে নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।নরম গলায় বলে,’ কেঁদো না নূর।আমায় হাতটা একবার ধরো বিশ্বাস করে।ওয়াদা করলাম তোমার এই হাত আমি কোনদিন ছাড়বো না।আজীবন এইভাবেই আমার বুকের মাঝেই আগলে রাখব।’

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৩৭

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন।কেমন হয়েছে বলতে বলব নাহ।কারন গল্পটা ইদানিং অনেক খারাপভাবে লিখছি আমি।এইতো আর কয়েকটা পর্ব।এরপরেই শেষ হয়ে যাবে।একটু সহ্য করে নিন।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৩৯