হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ১১

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ১১
নন্দিনী চৌধুরী

পুরা এলাকা খুজেঁও চাঁপাকে খুজে পায়নি শিশির।ব্যার্থতা নিয়ে ক্লান্ত শরীরে বাসায় এসে আসলো।রুমে এসে সোজা ওয়াশরুমে গেলো।লম্বা শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসলো শিশির।একটা টাউজার আর গেঞ্জি পরে বসে পরলো সোফায়।ঘড়িতে এখন ৩ বেজে ২০মিনিট হয়েছে।পুরাটা রাত তারা চাঁপাকে খুজেছে।আশে পাশের পুলিস অফিসেও খবর দিয়ে দিয়েছে সে।চাঁপাকে সেও খুব ভালোবাসে নিজের ছোট বোনের মতো।মেয়েটা এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাবে তা সে ভাবতে পারেনি।শিশির সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে।হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে শিশিরের রুমে আসলো শুভ্রতা।শুভ্রতা ভালোই জানে শিশির যে না খাওয়া।বাড়িতে এসেই চলে গেছে চাঁপাকে খুজতে।শুভ্রতা খাবার নিয়ে শিশিরের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,

শুভ্রতা:শুনছেন।
শিশির চোখ বন্ধ করে রেখেছিলো।শুভ্রতার ডাকে চোখ মেলে তাকায় সে।
শিশির:এতো রাতে তুমি।এখনো ঘুমাও নি কেন তুমি?
শুভ্রতা:আপনার জন্য খাবার এনেছি।সেই দুপুর থেকে আমি জানি আপনি না খাওয়া।বাসায় এসেই বেরিয়েগেছিলেন।নিন খেয়ে নিন।নিজে যদি সুস্থ না থাকেন।তাহলে অন্য সবাইকে কিভাবে ভালো রাখবেন।
শুভ্রতা শিশিরের সামনে খাবার গুলো রাখলো।শিশিরের পেটেও খুদা থাকার কারনে সেও চুপচাপ খেয়ে নিলো।শুভ্রতা পাশের সোফায় বসে শিশিরের খাওয়া দেখছে।খাওয়া শেষে শুভ্রতা সব প্লেট নিয়ে চলে যেতে নিলে শিশির বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

শিশির:মা, মহুয়া তুমি খেয়েছা?
শুভ্রতা:মামনিকে কিছুটা খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়েছি।মহুয়া আপু খেয়ে এসেছিলো বান্ধুবিদের সাথে তাই আর খায়নি।
শিশির:আর তুমি?
শুভ্রতা:ভালো লাগছেনা।জানেন আমাকে যেদিন আমার মামি না খাইয়ে রেখেছিলো সেদিন এই চাঁপা ওর ভাগের খাবারটা আমাকে খেতে দিয়েছিলো।আজকে মেয়েটা দুপুর থেকে নিখোঁজ।এখনো তার কোনো খোজ আমরা পাইনি এখনো।জানিনা ও আদৌ ভালো আছে কিনা।

শিশির:আই এম সরি।আমি সব জায়গায় খুজেছি ওকে।আমাদের অফিসাররা খুজে চলেছে ওকে।আই প্রমিস আমি চাঁপাকে সুস্থ ভাবে তোমার কাছে নিয়ে আসবো।
শুভ্রতা:সত্যি আপনি চাঁপাকে নিয়ে আসবেন।
শিশির:হ্যা।এখন যাও কিছু খেয়ে নেও তারপর ঘুমিয়ে যাও।
শুভ্রতা:ঠিক আছে।
শুভ্রতা চলে যাওয়ার পর শিশির পুনরায় আবার সোফায় বসে বলতে লাগলো,

-~তোমার চোখেতে দেখেছি মায়াবি নেশা-~
-~মনেতে জেগেছে তাই ভালোবাসার আশা-~
-~কি নজরে তাকিয়েছিলে হয়েছি দিশেহারা-”
-~স্বপ্ন জুরে তুমি এখন
মনের রাজ্যে নীল কন্যা-~
দিন নেই রাত নেই
তোমার ভাবনায় ঘুম নেই-*
হয়ে যে গেলো ভালোবাসা জীবনের নেশা
এইটাই যেনো এখন জীবনে বেচেঁ থাকার শেষ আশা”

একবার এই কেস আমি সমাধান করে নেই।তারপর তোমাকে আমি আমার মনের কথা জানাবো।ইয়েস আই ফিল ইন লাভ ফোর ইউ।জানিনা কিভাবে আমার মনে তুমি এভাবে জায়গা করে নিলে।তোমাকে কিভাবে আমি এতো ভালোবেসে ফেলেছি।শুধু জানি আমি তোমাকে ভালোবাসি।
কলেজের ক্যান্টিনে বসে আছে সায়ান।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে সে।এখন আর প্রিয়ার জন্য কোনো মন খারাপ নেই তার।সায়ান রাফির সাথে কথা বলছিলো। তখন সেখানে প্রিয়া এসে হাজির হলো।প্রিয়াকে দেখেও সায়ান না দেখার ভান করে এবার ও চলে যেতে নিলে প্রিয়া সায়ানের হাত ধরে ফেলে।সায়ান তাতে রেগে যায় প্রিয়ার দিকে ঘুরে ওর গালে লাগিয়ে দেয় এক থাপ্পড়।

সায়ান:হাউ ডেয়ার ইউ?আমাকে টাচ্ করার সাহস পেলে কই।
প্রিয়া চোখ মুছতে মুছতে বলে,
প্রিয়া:তুমি আমাকে মারো সমস্যা নাই।কিন্তু একবার আমার কথাটা শুনো।বেশি না ৫টা মিনিট আমাকে দেও প্লিজ সায়ান।
সায়ান:কেন তোমার ধনি বয়ফ্রেন্ড রাহাত কই যে আমার কাছে ৫মিনিট চাইতে আসছো?
প্রিয়া:রাহাত আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
সায়ান:ও আই সি এই জন্য তুমি আমার কাছে এসেছো।তো তোমার ধনি বয়ফ্রেন্ড তোমাকে ছাড়লো কেন।অন্য মেয়ে পেয়ে তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে তাইতো?

প্রিয়া:রাহাত শুধু আমাকে না আমার শরীরটাকে ভালোবেসে।আমাকে ইউজ করে এখন আমাকে ছেড়ে দিয়েছে।আমি প্রেগন্যান্ট শুনে আমাকে অনেক অপমান করে বাচ্চা নষ্ট করতে বলে চলে গেছে।
সায়ান:ওহো।দেখলেতো প্রিয়া যার জন্য তুমি আমাকে ঠকালে সেই তোমাকে ছেড়ে চলে গেলো।আমি প্রিয়া তোমার সাথে কোনোদিন কিছু জন্য জোর করিনি।আর তুমি রাহাতের বেড পর্যন্ত চলে গেলে।আর এখন তার বাচ্চা পেটে নিয়ে ঘুরছো।

এখন রাহাত তোমাকে ছেড়ে দেওয়ায় তুমি আমার কাছে এসেছো এই আশায় তাইতো যেনো আমি বাচ্চাটাকে নিজের পরিচয় দেই।কিন্তু তোমার ধারনা একদম ভুল আমি বাচ্চাকে তো দূর তোমাকেই আমার জীবনে আনবোনা।তোমার মতো লোভী মেয়েদের সাথে এমনটাই হয়।তোমরা শুধু টাকা চেনো।ভালোবাসা বলতে তোমাদের মাঝে কিছু নেই।আর আমিই ও তোমার মতো তোমার অন্ধ ভালোবাসাকে বিশ্বাস করে আমার আসল ভালোবাসার মানুষটাকে হারালাম।যাই হোক তোমাকে যেনো আমি আর আমার আশে পাশে না দেখি।আমি এখন শুধু তোমাকে ঘৃণা করি।আমার মনে তোমার মনে কোনো ভালোবাসা আর নেই।এখন তুমি আসতে পারো।

সায়ান প্রিয়ার হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে রাফির সাথে হাটা দিলো।আর প্রিয়া সেখানেই দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগলো।সে সায়ানের কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছিলো।সেতো বাচ্চাটাকে নষ্ট করে ফেলেছে।এখন তাকে তার বাবা মা বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে এক অন্য জায়গায়।তবুও শেষ বারের মতো বেহায়ার মতো এসেছে সে সায়ানের কাছে।জানতো সায়ান তাকে এভাবেই অপমান করবে।কিন্তু তবুও খুব কষ্ট লাগছে তার।
একটা বন্ধ রুমের ভেতর আটকে রাখা হয়েছে চাঁপাকে।চাঁপার হাত পা দুইটোই বাধা।চাঁপা কাল থেকে সেন্সলেস হয়ে পরে আছে।অনেক ভাড়ি ডোজের ড্রাগ তাদের শরীরে দেওয়া হয়েছে ওর।প্রত্যেকটা মেয়েকে আনার পরেই এভাবে নেশা গুলো শরীরে ডুকানো হয়।বাহিরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে ফিরোজ।

ফিরোজ:তাহলে ৪০টা মেয়ে রেডি।
আব্বাস;হ্যা তাহলে এদের পাঠাবো কবে?
ফিরোজ:পরশু শুক্রুবার।পরশুদিন পাঠাবো।
আব্বাস:ঠিক আছে।
ফিরোজ:আর শোন কাজটা রাতেই করতে হবে পুলিশ চারিপাশে পাহারা দিচ্ছে।রাতের দিকেই কাজ করতে হবে।
আব্বাস:ঠিক আছে।
শিশির সকালে এসে লেগে পরেছে কাজে।
শিশির সব অফিসারদের একত্র হতে বললো,

শিশির:আগামি শুক্রবার আমাদের খুব গুরুত্বপুর্ন একটা মিসন আছে।৪০টা মেয়ে এক সাথে পাচার হবে শুনেছি।আমাদের মেয়েগুলোকে উদ্ধার করতেই হবে যেকোনো মুল্যে।
মেহেদি:স্যার আপনি কি জানতে পেরেছেন কারা আছে এসবের পিছনে?
শিশির:ধরে নেও তেমনি কিছু।আমাদের যেভাবেই হোক সব গুলো মেয়েকে উদ্ধার করে আনতে হবে।এট এনি কোস্ট।সো সবাই বি প্রিপেয়ার।

সবাই:ওকে স্যার।
সবাই চলে যাওয়ার পর শিশির মৌকে কল লাগায়।
মৌ:জি স্যার।
শিশির:যা বলেছিলাম সব হয়েছে?
মৌ;জি স্যার আমরা তাকে একদম চোখে চোখে রেখেছি।পালানোর কোনো সুযোগ নেউ।
শিশির:ওকে আগামি শুক্রবার রেডি থাকবেন।আর হ্যা অবশ্যই সাবধানে কাজ করবেন।
মৌ:জি আচ্ছা স্যার।
শুক্রুবার রাতে,,,,,

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ১০

প্রত্যেকটা মেয়েকে অজ্ঞান অবস্থায় গাড়িতে তোলা হচ্ছে।৪০টা মেয়েকে জাহাজে করে পাচার করা হবে দুবাই।সেখানে আর দল আছে তারা মেয়েগুলোকে নেবে।ফিরোজ বসে বসে সিগারেট টানছে।তখন তার ফোন বেজে উঠলো।ফিরোজ ফোন রিসিভ করতেই আজমির কান্না কন্ঠে বললো,
আজমির:ফিরোজ ভাই আমার মেয়েটারে ছেড়ে দেন ভাই।আমার একটা মাত্র মেয়ে।আমার মেয়েটাকে পাচার কইরেন না দয়া করেন ভাই।

ফিরোজ:দেখ ভাই তোকে তো বলছি তো ৫০লাক্ষ টাকা আমারে দে আর মাইয়া নিয়া যা।
আজমির:ফিরোজ ভাই আমি এতো টাকা কই পামু।আমার কাছে এতো টাকা নাই।দয়া করেন ভাই।আমার মেয়েটারে ছেড়ে দেন।
ফিরোজ:দেখ আজমির তুই জানস এই সব ধান্দায় মা বইন বলতে কিছু নাই।তোর মনে নাই আমার বউরেও তো বেইচ্চা দিছিলাম।এহন আবার কত বিয়া করছি।আর তোর মাইয়া একটা হইলেও পোলা তো আছে একটা তাইলে সমস্যা কি।দেখ ভাই হুদা কেচাল করিস না।এক ঘন্টা পর সব মাইয়া জাহাজে পাডামু।এহন রাহি ফোন।

ফিরোজ কল কেটে আবার সিগারেট টানতে লাগলো।আজমির কান্নায় ভেংগে পরেছেন।আর কোনো উপায় নেই মেয়েটাকে বাচাঁনোর।
সব মেয়ে ট্রাকে উঠানো শেষ।এবার জাহাজে যেখানে আছে সেখানে যাওয়ার জন্য বের হয়ে যাচ্ছে সবাই।প্রত্যেকটা গাড়িতে ৫জন করে লোক দেওয়া হয়েছে।একে একে প্রত্যেকটা ট্রাক বের হয়ে গেলো।

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ১২