হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ১৫

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ১৫
নন্দিনী চৌধুরী

শুভ্রতার বিয়ের কথা চলছে।শুভ্রতা চুপচাপ বিয়েতে মত দিয়েদিয়েছে।একজন মায়ের অনুরোধ সে কি করে ফেলবে।তার বিপদে তারা যে তাকে অনেক সাহায্য করেছে।আশ্রয় দিয়েছে।সেই মানুষটার কথা ফেলবে কি করে সে।সাবিনার অনুরোধ রাখতেই চুপ করে রাজী হয়েগেছে সে বিয়েতে।
৪দিন আগের রাতের কথা,

শুভ্রতার সাবিনার বেগমের রুমে তাকে খাইয়ে মেডিসিন দিতে এসেছিলো।সব কিছু গুছিয়ে শুভ্রতা চলে যেতে নিলে সাবিনা তাকে ডাক দেয়।
সাবিনাঃশুভ্রতা শোন।
শুভ্রতাঃহ্যা মামনি বলো।
সাবিনাঃএদিকে আমার কাছে এসে বস।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

শুভ্রতা সাবিনার কাছে গিয়ে বসলো।সাবিনা শুভ্রতার হাতটা নিজের হাতের ভিতরে নিয়ে বললো,
সাবিনাঃশুভ্রতা আমি যদি তোর কাছে কিছু চাই তুইকি আমাকে ফিরিয়ে দিবি মা।
শুভ্রতাঃতোমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো সাদ্ধ্য আমার নেই মামনি আর না আছে সেই সাহস।তুমি যা চাও আমি তাই তোমায় দেবো।দরকার হলে নিজের জীবনটাও দিয়ে দেবো।
সাবিনাঃজীবন নয়রে।একটা নতুন জীবনের শুরু চাইছি আমি।

শুভ্রতাঃমানে?
সাবিনাঃশুভ্রতা আমি তোর বিয়ে দিতে চাচ্ছি।তোর এখন বিয়ের বয়স হয়েছে।জানিনা কবে আল্লাহ আমাকেও ডাক দেন। তাই তার আগেই আমি তোর আর মহুয়ার বিয়েটে দেখে যেতে চাই।তুই রাজী হয়ে যা মা।
শুভ্রতা সাবিনার কথা শুনে চুপ হয়ে যায়।সে কি বলবে সে জানেনা তবুও সে একটু সময় চেয়ে নেয়।সাবিনাকে শুইয়ে দিয়ে শুভ্রতা শিশিরের রুমে আসে।শিশিরের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সে।ছবিটায় হাত রেখে বলতে লাগলো,

“আমাকে মাফ করে দেবেন।আমি মামনির কথা ফেলতে পারবোনা।মামনি অনেক আশা করে আমার কাছে চেয়েছেন বিয়েতে রাজী হবার জন্য।আপনি যেমন আমার বিপদে আমার পাশে ছিলেন তেমনি মামনিও আমার পাশে ছিলো।এ বাড়িতে আমাকে চাঁপাকে আশ্রয় দিয়েছিলো।তার এই সামান্য চাওয়া আমি ফেলতে পারবোনা।নিজের ভালোবাসাকে বুকে চাপা দিয়ে আমি এই বিয়েটা করবো শুধু মামনিকে খুশি করতে।আমাকে মাফ করে দিয়েন।”

শুভ্রতা কথা গুলো বলে বেরিয়ে আসে শিশিরের রুম থেকে।হ্যা সে রাজী এই বিয়েতে।সে তার মামনির জন্য এই বিয়েটা করবে।খুশি করবে তার মামনিকে।পরের দিন সকালেই শুভ্রতা সাবিনাকে জানিয়ে দেয় সে রাজী।সাবিনা এটা শুনে খুব খুশি হয়।পাত্র তার আগে থেকেই পছন্দ ছিলো।তাই আর দেড়ি না করে পাত্রের মা বাবাকে ডাকান তিনি।
বর্তমানে,,

আজকে দেখতে আসছে শুভ্রতাকে পাত্রের মা বাবা।শুভ্রতাকে মহুয়া একটা গোলাপি কালারের শাড়ি পড়ায়।মুখে একদম নরমাল একটু সাজ।হাতে দুটো চিকন চুড়ি পরিয়ে দেয়।পাত্রের মা বাবা চলে এসেছেন।সাবিনাকে হুইল চেয়ারে করে চাঁপা নিয়ে আসে।সার্ভেন্টস তাদের বসার জায়গা দেয়।সাবিনা তাদের সাথে কথা বলতে শুরু করেন।চাঁপা নাস্তা পানি নিয়ে আসছে।কিছুক্ষন পর মহুয়া শুভ্রতাকে নিয়ে আসে ড্রয়িং রুমে।শুভ্রতাকে ছেলের মা বাবা সামনের সোফায় বসায়।শুভ্রতা বসে দুজনকেই সালাম দেয়।পাত্রের মা,
পাত্রের মাঃমাসাল্লাহ।তোমার নাম কি মা?

শুভ্রতাঃজি নৌশিন আহমেদ শুভ্রতা।
পাত্রের মাঃবেশ তুমি কিসের পড়ো?
শুভ্রতাঃইন্টার সেকেন্ড ইয়ার।
পাত্রের মাঃআচ্ছা।আমি আরিয়ানের মা।আর উনি অরিয়ানের বাবা।যার সাথে তোমার বিয়ে হচ্ছে সে হলো আমাদের ছেলে আরিয়ান মাহামুদ।আরিয়ান তোমাকে আগে দেখেছে তাই আর দেখতে আসেনি।ওর পছন্দেই আমি তোমাকে দেখতে আসলাম। আমাদের ও তোমাকে অনেক ভালো লেগেছে।আমরা এই বিয়েতে রাজী।ভাবি আপনার কোনো আপত্তি নেইতো।

সাবিনা:না ভাবি আমার কোনো আপত্তি নেই।সত্যি বলতে আমিতো ভাবতে পারিনি আমার ছেলের মতো দেখতে আপনার ছেলেও হবে।আমি আরিয়ানের মাঝে আমার শিশিরকে দেখি।আমার কোনো আপত্তি নেই এই বিয়েতে।তবে ভাবি আমার শুভ্রতার গায়ের রং কালো বলে সবাই ওকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে।আপনারা ওকে সেরকম করিয়েন না।আমার অনুরোধ এটা।

আরিয়ানের মা:ছিহ ছিহ ভাবি কি বলছেন এসব।আমরা মানুষ অমানুষ নই।গায়ের রং কোনো ভ্যালু রাখেনা।যেটা ভ্যালু রাখে তা হলো এই মানুষের মন।মানূষ যত সুন্দর হোক দেখবেন অনেক সুন্দর মানুষের মনটা কত কালো।আবার কত কালো মানুষের মন কত সাদা।শুধু গায়ের রং দিয়ে মানুষ বিচার করা উচিত নয়।আমরা শুভ্রতাকে পছন্দ করেছি।কারন আমরা জানি শুভ্রতা কত ভালো মনের মেয়ে।আর আমার আরিয়ান ওর কালো রং দেখেই ওকে পছন্দ করেছে।তাহলে ভাবি আগামি শুক্রুবার শুভ কাজ সেরে ফেলি।
সাবিনা:আলহামদুলিল্লাহ।অবশ্যই ভাবি।এই চাঁপা যা মিষ্টি নিয়ে আয় মিষ্টি মুখ করি।

এরপর সবাই মিষ্টি মুখ করলো।শুভ্রতাকে একটা আংটি পড়িয়ে দিয়ে গেলেন আরিয়ানের মা।শুভ্রতা এখনো চুপচাপ বসে আছে।সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার।আরিয়ান মানে সেই লোকটা যাকে ও সেদিন রাস্তায় দেখেছিলো।যে ওকে বাঁচিয়েছিলো।তার সাথেই ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে।সব থেকে আজব এই লোকটা একদম শিশিরের মতো দেখতে।আচ্ছা শুভ্রতার অচেতন মন যা ভাবতে তা কি হতে পারে।আরিয়ান কি শিশির হতে পারে?

আরিয়ান আর মেহেদি বসে আছে এক সাথে ধাবায়।দুজনেই চা খাচ্চে।মেহেদি মুচকি মুচকি হাসছে দেখে আরিয়ান তাকে বলে,
আরিয়ান:কি ব্যাপার হাসছো কেন?
মেহেদি:না মানে এমনি স্যার।
আরিয়ান:এমনিতো পাগলেরা হাসে।তুমি পাগল হলে কবে?
মেহেদি:উইমা না না পাগল না।আসলে স্যার ভাবছি আপনার বুদ্ধির সাথে কেউ পারবেনা।কিভাবে নিজেকে মৃত বানিয়ে আবার আরিয়ান হয়ে ফিরে আসলেন।আবার এখন কিভাবে শুভ্রতা ম্যাম কে বিয়ে করছেন।সত্যি স্যার আপনার বুদ্ধির জবাব নেই।

আরিয়ান মেহেদির কথা শুনে হালকা হাসলো।তারপর চায়ের কাপ রেখে উঠে দাঁড়ালো।
আরিয়ান:মানুষ যখন ভালোবাসে তখন তার ভালোবাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সব করতে পারে।আমি আমরা শরৎশুভ্রতাকে অনেক ভালোবাসি কিন্তু চাইলেই তার সামনে যেতে পারবোনা।কারন আমার শত্রুরা ওত পেতে বসে আছে আমার পরিবারের ক্ষতি করার জন্য।আমি চাইনা আমার একটা ভুল পদক্ষেপ মা,মহুয়া,শুভ্রতা,চাঁপার জীবনে বিপদ আনুক।শুভ্রতাকে বিয়ে করছি একান্ত ওকে নিজের কাছে রাখার জন্য।আমি জানি ইতিমধ্য তারা জেনে গেছে আমি যে নিউ অফিসার হয়ে এখানে আসছি।তাই আমাকে তারা দেখার আগে শুভ্রতাকে নিজের কাছে আনতে চাচ্ছি।মা,মহুয়া চাঁপার জন্য আমি অনেক করা গার্ড এর ব্যবস্থা করে রেখেছি।কিন্তু শুভ্রতাকে নিয়ে রিস্ক নিতে চাইনা।তবে মেহেদি আমাদের চোখ কান আরো খোলা রাখতে হবে।

মেহেদি:জ্বী স্যার।কিন্তু স্যার আপনি মিস্টার ইকবালকে সত্যি কথা জানাবেন কিভাবে।যে তার আসল ছেলে আরিয়ান……।
আরিয়ান:জানি এটা শোনার পর তারা অনেক ভেংগে পরবে।কিন্তু আপাদত জানাবোনা।একজন মা তার সন্তানকে কাছে পেয়ে অনেক খুশি।তার খুশিটা এতো তাড়াতাড়ি কেড়ে নিতে চাইনা।আমার এখন অনেক কাজ বাকি আছে।আসল আরিয়ানকে খোজা।আমার বাবার হত্যাকারীকে খোজা।এর জন্যইতো আমার এই রুপ।

মেহেদি:কিন্তু স্যার একটা কথা আমার মাথায় আসছেনা।মানে আসল আরিয়ান আর আপনার চেহারা এক কি করে হলো।মানে এটা একটা ম্যাজিক না।
আরিয়ান:আমাদের চেহারা এক কারন আসল আরিয়ান আমার নিজের আপন ভাই।
মেহেদি:কি!!!
আরিয়ান:হ্যা।

মেহেদি:কি বলছেন স্যার আমার তো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব।
আরিয়ান:আসতে আসতে সব জানতে পারবা।এখন চলো থানায় যাওয়া যাক।
রাতে শুভ্রতা বসে আছে বারান্দায়।আকাশে একটা গোল থালার মতো চাঁদ উঠেছে।শুভ্রতা চাঁদটাকে দেখছে বসে বসে।তখন ওর ফোনে কল আসলো।শুভ্রতা ফোন হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার থেকে কল।শুভ্রতা ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আরিয়ান বলে উঠে,

আরিয়ান:আসসালামু আলাইকুম।
শুভ্রতা চমকে যায় কন্ঠটা শুনে তবুও নিজেকে সামলে সালামের উত্তর দেয়।
শুভ্রতা:ওয়ালাইকুমুস সালাম।জ্বি কে বলছেন?
আরিয়ান:আমি আরিয়ান মাহামুদ।আমার মা আজকে আপনাদের বাসায় এসেছিলো বিয়ে কথা ফাইনাল করতে।
শুভ্রতা বুজতে পারলো এবার এটা আরিয়ান।তার অচেতন মন বার বার এই আরিয়ানের মাঝে শিশিরকে খোজে।তাইতো সে চমকে যায় বার বার।শুভ্রতা আসতে করে উত্তর দেয়,

শুভ্রতা:জ্বী চিনতে পেরেছি।
আরিয়ান:কেমন আছেন আপনি?
শুভ্রতা:আলহামদুলিল্লাহ আপনি?
আরিয়ান:আলহামদুলিল্লাহ।কি করছেন?
শুভ্রতা:জ্বী কিছুনা।
আরিয়ান:আপনার এই বিয়েতে অমত আছে কি?

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ১৪

শুভ্রতা:জ্বী না।আমার কোনো অমত নেই।আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজী আছি।
আরিয়ান:হুম গুড।আচ্ছা তাহলে আপনি ঘুমান আমি কল রাখলাম।
আরিয়ান কল রেখে নিজেই নিজেকে বকতে লাগলো,

“সালা শিশির তুই কি বলতো,আরে নিজের বউয়ের সাথে এখোনি কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছিস। তাহলে সামনে সংসার করবি কিভাবে।আর তার উপর তাকে তুই ভালোবাসিস।কই প্রেম আলাপ করবি তানা দেখো কি হাই হ্যালো করে রেখে দিলি ফোন।না রে ভাই শিশির তোর ধারা প্রেম হবেনা।শিশির থেকেও হয়নি।আর আরিয়ান হয়েও হবেনা।তবে তাতে কি বিয়ে করবে প্রেম করবো?।হু। ”

আরিয়ান নিজের মনে বীড়বীড় করতে লাগলো।আর এদিকে শুভ্রতা ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকানো।
“কি আজব লোকরে বাবা।যাকে বিয়ে করছে তার ব্যাপারে কিছু জানতেও চাইলোনা।খালি হ্যালো হাই বলে রেখে দিলো।কে জানে কোন পাথরের সাথে ঘর করতে যাচ্ছি।এক পাথরকে ভালোবেসেছিলাম।এখন আবার আরেক পাথরের সাথে ঘর করতে যাচ্ছি।দূর দূর ভাল্লাগেনা দূর।”

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ১৬