হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ১৪

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ১৪
নন্দিনী চৌধুরী

হাতে একটা ছবি নিয়ে বসে আছে একটা ছেলে।ছবিটাতে একটা মেয়ে শাড়ি পড়া নীল রং এর।মেয়েটার মুখে কোনো সাজ নেই।চুলগুলো খুলা।বাতাসে উড়ছে চুল গুলো,মুখে এক চিলতে হাসিঁ।ছেলেটা মেয়েটার ছবিতে একটা চুমু দিয়ে বলে,

“কেমন আছো শরৎশুভ্রতা।ভালো আছো।আমাকে মনে পরে তোমার।আচ্ছা আমার শুন্যতা কি তুমি অনুভোব করো।খুব জানতে ইচ্ছা করে আমার মতো তুমিও কি ভালোবাসা অনুভব করো।তোমার কি আমার মতো “হৃদয়ের স্পন্দন “হয়।আমি ভেবেছিলাম তোমাকে জানাবো মনের কথা।কিন্তু দেখো চেয়েও যেতে পারছিনা তোমার কাছে।ভালোবাসি শরৎশুভ্রতা খুব ভালোবাসি।”
ছবিটা বুকে জরিয়ে শুয়ে পরে ছেলেটা।চোখের কোণে নোনাঁ জল এসেগেছে তার।চোখ বন্ধ করেই চুপ করে শুয়ে থাকে সে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সকালের মিষ্টি রোদে ঘুম ভাংগে শুভ্রতার।আড়মোড়া ভেংগে উঠে পড়লো সে।উঠে ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে আসলো।সাবিনার জন্য স্যুপ আর বাকিদের জন্য নাস্তা বানাতে লাগলো।নাস্তা বানিয়ে টেবিলে সব রেখেদিলো।এখনো কেউ ঘুম থেকে উঠেনি।শুভ্রতা কলেজে যাওয়ার ড্রেস পড়ে বেরিয়ে আসে।রাস্তার ধার দিয়ে হেটেঁ যাচ্ছে শুভ্রতা।সকালের বাতাসটা ভালোই লাগছে তার।শুভ্রতা হেটে হেটে যাচ্ছে তখন খেয়াল করলো একটা বাচ্চা ছেলে বল দিয়ে খেলতে খেলতে একদম রাস্তার মাঝে এসে গেছে।

একটা দ্রুত ট্রাক ওর দিকে এগিয়ে আসছে।শুভ্রতা জলদি দৌড়ে ছেলেটার কাছে গেলো ওকে বাঁচাতে। শুভ্রতা ছেলেটাকে কোলে নিয়ে যাওয়ার আগেই দেখে ট্রাক একদম ওদের কাছে চলে আসছে।শুভ্রতা চোখ বন্ধ করে নিলো।আল্লাহ আজ কি শেষ হয়ে যাবে ও।কিছুক্ষন পর শুভ্রতা অনুভব করলো কিছুই হয়নি ওর বরং ও কোনো বলিষ্ট হাতের মাঝে বন্দি আছে।শুভ্রতা আসতে করে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে একটা মাস্ক পড়া লোক ওকে আগলে ধরে রেখেছে।চোখে তার কালো সানগ্লাস।শুভ্রতাকে তাকাতে দেখে লোকটা ওকে ছেড়ে দিলো।ইতিমধ্য বাচ্চাটার মা বাবা আসলো।শুভ্রতাকে ধন্যবাদ দিলো তারা।শুভ্রতাও তাদের কাছে বাচ্চাকে দিয়ে বলে পরেরবার খেয়াল রাখতে।বাচ্চাকে নিয়ে তারা চলে যায়।এভার আবার শুভ্র‍তা লোকটার দিকে তাকায়।শুভ্রতা ধির কন্ঠে বলে,

শুভ্রতা:ধন্যবাদ আপনাকে।আমার আর বাচ্চাটার জীবন বাচাঁনোর জন্য।
আরিয়ান:এরপরের বার রাস্তায় সাবধানে চলা ফেরা করবেন।
শুভ্রতার মাস্কের ভিতর থেকেও কন্ঠ বুজে যায়।একদম শিশিরের মতো কন্ঠ তার।শুভ্রতা চমকে যায়।প্রতিউত্তরে সে কিছু বলবে তখন একজন অফিসার এসে বলে,
অফিসার:আরিয়ান স্যার।গাড়ি ঠিক হয়েগেছে।
আরিয়ান:ঠিক আছে চলো।
আরিয়ান আর অফিসারটা চলে গেলো।শুভ্রতা অবাক নয়নে চেয়ে রইলো তাদের দিকে।
শুভ্রতা:এসব কি ভাবছি আমি।শুধু কন্ঠ একরকম বলে কি উনি শিশির হতে যাবে নাকি।আমিও না একটা পাগল।

শুভ্রতা রিকশা নিয়ে চলে গেলো কলেজে।
আরিয়ান আজকে থানায় না গিয়ে এসেছে একটা বাড়িতে।সেখানে এসে গাড়ি থেকে নেমে সোজা চলে গেলো উপরে।উপরেএ রুমের দরজা খুলে একটা রুমে গেলো সে।বিরাট বড় একটা ছবি লাগানো দেয়ালে।আরিয়ান ছবিটায় হাত দিয়ে স্পর্শ করছে।

আরিয়ানের চোখে পানি জমে গেছে।আরিয়ান চোখের পানি মুছে চোখ মুখ শক্ত করে বলে,
তোমার মৃত্যুর আসল রহস্য আমি বের করবোই।এই রহস্য জানার জন্যেইতো আমার এতো বড় বলিদান।আমাকে যে জানতেই হবে সব।এই নতুন পরিচয় নিয়েই আমি আসল অপরাধিকে ধরবো।
আরিয়ান চোখের পানি মুছে মাস্ক পরে সানগ্লাস লাগিয়ে বেরিয়ে আসে বাড়ি থেকে।
রেস্ট্রুয়েন্টে বসে আছে মৌ হাসান মুখামুখি।মৌকে দেখে হাসানের খুব চিন্তায় আছে।হাসান মৌকে জিজ্ঞেশ করলো।

হাসান:মৌ কি হইছে তোমার?
মৌ:একটা জিনিশ ভাবছি।
হাসান:কি?
মৌ:আচ্ছা হাসান তুমি কি একটা জিনিশ খেয়াল করেছো?
হাসান:কি?
মৌ:যখন শিশির স্যার মারা গেলো সেদিন মেহেদি কিন্তু তেমন রিয়েক্ট করেনি।আবার যখন হেডকোয়াটার থেকে ওকে শিশির স্যারের জায়গা দিতে চাচ্ছিলো ও না করলো।কিন্তু আরিয়ান স্যার যে এখন শিশির স্যার এর জায়গায় আসলো মেহেদি এখানেও তেমন রিয়েক্ট করেনি।আমি যতটুকু মেহেদিকে চিনি ওর তো এতো ঠান্ডা থাকার কথা না।দিব্বি ও আরিয়ান স্যারের সাথে কাজ করছে।কিন্তু ওর তো শিশির স্যারেএ চলে যাওয়ার কোনো আফসোস নেই।

হাসান:হুম জিনিশটা আমিও খেয়াল করেছি।তবে ওতোটা গায়ে মাখিনি।তবে তুমিও যখন বলছো তখন ব্যাপরটা ভাবার।তোমার কি মনে হচ্ছে বলতো।
মৌ:আমার মন বলছে ওই আরিয়ান আমাদের শিশির স্যার।এটা কোনো কাকতালিও কথা হতেই পারেনা।যে শিশির স্যার মারা যাওয়ার এক মাসের মাথায় তার মতো দেখতে কেউ এখানে চলে আসলো।আমার দৃড়ো বিশ্বাস এটাই শিশির স্যার।

হাসান:কিন্তু সেটা কিভাবে হবে।উনি তো নতুন এসেছেন এখানে।আর তার থেকে বড় কথা উনি শিশির হলে উনি নিজের ফ্যামিলিতে না গিয়ে কেন অন্য ফ্যামিলিতে থাকছে।আর আরিয়ান স্যার আগে সিলেটে ছিলেন।এখানে জয়েন করার ২দিন আগে এই শহরে এসেছেন।উনি শিশির কিভাবে হবে।
মৌ:এই সব কিছু জন্যেই তো মানতে পারছিনা।আবার মন বলে উনিই শিশির।নাহলে তুমি ভাবো সেই তেজ,সেই রাগ সেই একই তাকানো কিভাবে কারো এক হতে পারে।আমার মাথায় আসছেনা কিছু।
হাসান:তুমি বেকার চিন্তা করছো।এগুলা নিয়ে চিন্তা করোনা।চলো যাওয়া যাক।
মৌ:চলো তাহলে।

শুভ্রতা বাসায় এসে শিশিরের রুমে আসলো।শুভ্রতা রোজ গুছিয়ে রাখে রুমটা।আজ বোড্ড বেশিই মনে পরছে শিশিরকে।শুভ্রতা শিশিরের ছবির সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো,
“তুমি প্রেম বীরোহ দিয়েছিলে”
“আমি সদরে তা গ্রহন করেছিলাম”
“তুমি শুন্যতায় পুড়িয়েছিলে”
“আমি তাতে পুড়ে জ্বলে গিয়েছিলাম”
“তুমি চোখের জোলে ভিজাতে চেয়েছিলে”
“আমি আজোও ভিজে যাচ্ছি সেই জোলে”
“তুমি হৃদরের স্পন্দন বন্ধ করে দিয়েছো”
“আমি সেই হৃদয়ের স্পন্দন আজোও অনুভোব করছি”

শুভ্রতা শিশির ছবিটা ছুঁয়ে দিচ্ছে।শুভ্রতা এক কঠিন শুন্যতা অনুভোব করছে।শুভ্রতা অনুভোব করছে সে যে কতটা ভালোবেসেফেলেছে শিশিরকে।তাইতো অনুভোব করছে এই হৃদয়ের স্পন্দন।
সাবিনা বেগম রুমে বসে আছেন।মহুয়ার বিয়ের পাশাপাশি শুভ্রতার বিয়ের কথা ভাবছেন তিনি।কিন্তু শুভ্রতাকে বলার সাহস সে পাচ্ছেনা।শখ ছিলো নিজের ছেলের বউ করার কিন্তু হায় ভাগ্যের কি পরিহাস।আজ ছেলেটা নেই বলে অন্যের ঘরে পাঠাতে হবে মেয়েটাকে।সাবিনা ভেবেনিয়েছেন শুভ্রতার সাথে কথা বলবেন তিনি।

একটা চেয়ারে বসে আছেন একজন লোক।হাতে তার একটা ছবি।ছবিটা দেখছেন আর শয়তানি হাসি দিচ্ছেন তিনি।ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,
“অনেক দিনের শখ আমার পুরন হয়েছে।যেভাবে তোর বাবা মারা গেলো সেই একই কারনে তুই সে ভাবে মরলি।আমার পথে আর কোনো বাধা নেই।ইসসস ভাবতেই কষ্ট লাগছে তোর মা বোন আর শুভ্রতার জন্য।হাহাহাহা,এভার কে বাঁচাবে তোর বোন আর শুভ্রতাকে।
বস্!

কারো ডাকে পিছনে ফেরে লোকটা।তার এক চেলা দাঁড়ানো তার সামনে।
লোকটা:বল
চেলা:বস থানায় এক নতুন অফিসার এসেছে।আরিয়ান মাহামুদ।এসেই হারিয়ে যাওয়া মেয়ে গুলোর ইনভেস্টিকেশন শুরু করেছে।আমাদের যে দুইটা লোক অখানে পুলিশ সেজে আছে তারা জানালো আজকে।
বস:উম,,,শোন আগে ফিরোজদের জেল থেকে ছাড়াতে হবে।তারপর ওই অফিসারকে দেখছি।আর এখন খুজে কি লাভ।মেয়েগুলোকে পাচার করা শেষ।তোরা আগামিকাল জেলে হানা দে।ফিরোজকে বের করতে হবে।

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ১৩

চেলা:ঠিক আছে বস।
আরিয়ান নিজের রুমে বসে আছে।হারিয়ে যাওয়া মেয়েটাকে এখনো খুজে পায়নি তারা।কোনো হদিস মেলেনি মেয়েটার।তার মধ্য আরো ৪টা নতুন মেয়ের নিখোঁজ এর রিপোর্ট এসেছে।আরিয়ান বুজতে পারছেনা কি করবে।আরিয়ান চুপ করে বসে আছে।ফিরোজরা যদি জেলেই আটকে থাকে তবে এই নতুন মেয়ে চুরি করা ধান্দাবাজ এলো কারা।আরিয়ান খুব চিন্তায় পরেগেছে।মেহেদিকে কল করে রুমে ডাকলো সে।
মেহেদি:স্যার ডেকেছেন?
আরিয়ান:হ্যা আসো ভিতরে আসো।
মেহেদি:জ্বী স্যার বলুন।
আরিয়ান:আচ্ছা মেহেদি আমাকে আপনাদের আগের আইজির ফাইলটা একটু খুজে দিনতো।ওই কেসের সাথে এই কেসের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা দেখবো।
মেহেদি:আমাকে আপনি একদিন সময় দিন স্যার।আমি ফাইল ডেটা বেয থেকে ফাইল বের করে আপনাকে দিবো।

আরিয়ান:আচ্ছা এখন আপনি যান।
মেহেদি:আচ্ছা স্যার।
আরিয়ান হেলান দিয়ে বসে পড়লো।ফোন ওন করে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বলে,
“তোমার ছোঁয়া পেতে মন বোড্ডো চাচ্ছে”
“ভোরের প্রথম প্রহরের প্রহলিকা তুমি আমার”
“রজনীর চন্দ্রের উপমা হয়ে আছো তুমি”
“এই মনের চিলেকোঠায় নাম যে লেখা আছে”
“শুধুই তোমার হে প্রানপ্রেয়শী”।

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ১৫