হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ১৩

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ১৩
নন্দিনী চৌধুরী

“কেনো মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে”
“তোমারে দেখিতে দেয়না”
“মোহমেঘে তোমারে দেখিতে দেয়না”
“মোহমেঘে তোমারে অন্ধ করে রাখে ”
“তোমারে দেখিতে দেয়না”
“মাঝে মাঝে তবো দেখা পাই”
“চিরদিন কেনো পাইনা”
“মাঝে মাঝে তবো দেখা পাই”
“চিরদিন কেনো পাইনা”
“ওহে কি করিলে বলো পাইবো তোমারে”
“রাখিবো আখিঁতে আখিঁতে”
” ওহে এতো প্রেম আমি কোথা পাবো নাহ্”
“তোমারে হৃদয়ে রাখিতে,আমার সাধ্য কি বা”
“তোমারে দয়া না করিলে কে পাবে”
“তুমি আপনি না এলে কে পারে হৃদয়ে রাখিতে”
“মাঝে মাঝে তবো দেখা পাই চিরদিন কেনো পাইনা”

হাতে গিটার নিয়ে বারান্দায় বসে গানটা গাচ্ছে আরিয়ান।চোখ দুটো বন্ধ করে আছে সে।নিজের জীবনে কত কিছু ঘটে যায় যা আমরা বুজিনা।মাঝে মাঝে নিজে ইচ্ছা করেও হারিয়ে যেতে হয়।আপন মানুষ গুলোকে ছেড়ে নিজ ইচ্ছা না থাকলেও চলে যেতে হয়।আরিয়ানের মা আরিয়ানের রুমে আসলো।
আরিয়ানের মা:কিরে বাবু আজকে তোর প্রথম দিন কেমন গেলো থানায়?
আরিয়ান:হুম মা ভালোই গেছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আরিয়ানের মা:তোর বাবা তোকে এখানে এনে দিয়ে ভালোই করেছে।কত দূরে আগে ছিলি। এখন ঘরের ছেলে ঘরে এসে গেছে এতে আমি খুব খুশি।আচ্ছা তুই খেতে আয় আমি খাবার দিচ্ছি।
আরিয়ান:আচ্ছা মা।
আরিয়ানের মা রুম থেকে চলে গেলো।আরিয়ান গিটার রেখে রুম থেকে চলে আসে।

আরিয়ান মাহমুদ।ইকলবাল মাহামুদের এক মাত্র ছেলে।মা বাবার খুব আদরের ছেলে।ইকবাল মাহামুদ একজন আইজি অফিসার।ছেলেকেও তিনি আইজি বানিয়েছেন।আরিয়ান এতোদিন সিলেটে কর্মঅধিন ছিলো।মাত্র তিনদিন আগে ঢাকা এসেছে।আরিয়ানের ফ্যামিলি শুধুই ওর মা আর বাবা।
কলেজে যাওয়ার জন্য রিকশা খুজতেছে শুভ্রতা।এখন আর সে গাড়িতে যায়না কলেজে।শুভ্রতা রিকশা খুজতেছিলো তখন পিছন থেকে ওর নাম ধরে একজন ডাক দেয়,

“শুভ্রতা!”
শুভ্রতা কন্ঠটা শুনে পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে সায়ান দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে।সায়ানকে দেখে অনেক অবাক হয়ে যায় শুভ্রতা সাথে কিছু ভয় ও পেয়েগেছে।শুভ্রতাকে হচকিয়ে যেতে দেখে সায়ান মলিন হেসে বলে,
সায়ান:কেমন আছো শুভ্রতা?
শুভ্রতা আমতা আমতা করে বলে,
শুভ্রতা:জি আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি আপনি?
সায়ান:হ্যা আছি ভালো।এই রোডে কি করছো।আর বাড়ি আসছোনা কেন তুমি?

শুভ্রতা:এই রোডে আমার কলেজ।আর বাড়ি বলতে আপনি ঠিক কোন বাড়ি বুজাচ্ছেন।আমার জন্য অই বাড়ি সেদিনই বন্ধ হয়ে গেছে যেদিন আমাকে আপনার মা একটা বুড়ো লোকের সাথে বিয়ে দিচ্ছিলো। আর তাও আবার সে একজন নারী পাচার কারি।আমাকে ১০লাক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিচ্ছিলো আপনার মা।ধন্যবাদ মামাকে আমাকে আর চাঁপাকে পালাতে দিয়েছিলো।নাহলে আজ আমার জীবন কোন নড়কে যেতো আমি নিজেও জানতাম না।তো আপনি এখানে কেন।আর আমার সাথে কথা বলছেন কেন।আমার মতো মেয়ের সাথে আপনার কথা বলা কি মানায় সায়ান ভাই।

সায়ান:আম সরি শুভ্রতা।আমি আমার ভুল বুজতেপেরেছি।আমি তোর মন ভেংগেছিলাম তাই আল্লাহ আমাকেও তার শাস্তি দিয়েছে।প্রিয়া আমাকে ধোকা দিয়েছে।আমাকে ও ভালোবাসেনি।বিশ্বাস কর আমি প্রতিশোধ নিতে চাইলেও তোর প্রতি কিছুটা দুর্বলতা অনুভব করেছি।কিন্তু প্রিয়ার জন্য সেসব পাত্তা দেইনি।এখন আমি বুজতে পারছি আমি প্রিয়াকে না তোকেই ভালোবাসি।হ্যা রে শুভ্রতা আমি তোকে অনেক ভালোবাসিরে।প্লিজ আমাকে আর একবার সুযোগ দে।তোকে কথা দিচ্ছি তোকে আমি কোনো কষ্ট আর পেতে দেবোনা।

সায়ানের কথায় শুভ্রতা পেট চেপে জোরে জোরে হাসে তারপর হাসতে হাসতে বলে,
শুভ্রতা:সায়ান ভাই মানুষ যে কত সার্থপর তা আপনাকে না দেখলে জানতাম না।আপনাকে আমি ভুল করে একটা থাপ্পর মেরেছিলাম বলে আপনি দুই বছর আমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করেন।আমি আপনার জন্য অনেক পাগল ছিলাম।অনেক ভালোবাসতাম আপনাকে তা জানার পরেও আপনি আমার সাথে অভিনয় করে গেলেন।

বিয়ে করবেন বলে কাজী অফিসে নিয়ে সবার সামনে আমাকে কয়লার ড্রাম কালী ফক্কিনির বাচ্চা বলে অপমান করেছেন।আমার কি যোগ্যোতা আছে আপনার বউ হবার তাও বলেছেন।আমাকে হাজার অপমান করেছেন।আপনি প্রিয়াকে ভালোবাসেন বললেন।এখন আজ সে আপনাকে ভালোবাসেনা বলে আপনাকে ঠকিয়েছে বলে আপনি এখন অনুভব করলেন আপনি আমায় ভালোবাসেন।আপনার মনে হলো আপনি আমার প্রতি দুর্বল।কিন্তু আসল কথাটা কি জানেন সায়ান ভাই।আসল কথা হচ্ছে আপনি প্রিয়ার সাথে টক্কর দিতে আমার কাছে এসেছেন।

প্রিয়া এখন অন্য কারো সাথে আছে সেটা আপনি সয্য করতে পারছেন না তাই এখন আমার কাছে এসেছেন।এখনো সময় আছে সায়ান ভাই।একজন ভালো মানুষকে ভালোবাসুন।নিজেকে পরিবর্তন করুন।এভাবে অহংকার নিয়ে বেচেঁ থাইকেন না।এভার অন্তত ভালো হোন।আর বললেন সুযোগ সেটা আমি কোনোদিন আপনাকে দেবোনা।আমি আপনাকে অনেক বিশ্বাস করেছিলাম।কিন্তু আপনি আমাকে ঠকিয়েছেন।আর সব থেকে বড় কথা আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি সায়ান ভাই।তাই আপনাকে সুযোগ দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসেনা আর সুযোগ সেতো দুরের কথা।আমি আসি সায়ান ভাই।ভালো থাকবেন।

শুভ্রতা কথা গুলো বলে একটা রিকশা ধরে চলে গেলো।আজ আর সে কলেজ করবেনা।শুভ্রতা বাড়িতে এসে সোজা শিশিরের রুমে চলে গেলো।এক আলাদা শান্তি সে পায় এই রুমে আসলে।আলাদা ভালোলাগা।
শুভ্রতা শিশিরের ছবির সামনে এসে দাঁড়ালো।ছবিতে শিশির একটা ব্লাক ডেনিম প্যান্ট পরা সাথে হোয়াইট টি শার্ট।চোখে সানগ্লাস পরা।শুভ্রতা শিশিরের ছবিটা ছুয়েঁ ছুয়েঁ দেখছে।

“শুনেছি মানুষ যাকে ভালোবাসে তার শুন্যতা নাকি তাকে অনেক পোড়ায়।আচ্ছা ভোর শিশির আপনাকে কি আমি ভালোবাসি।যদি ভালো না বাসি তাহলে আপনার শুন্যতা আমাকে এতো পোড়ায় কেন।আমি তো আর নিতে পারছিনা এটা।ফিরে আসুন না একদম সকালের নতুন ভোরের মতো আমার জীবনে।শীতের সকালের শিশিরের মতো আপনার শরৎশুভ্রতার জীবনে ফিরে আসুন দয়া করে।”

থানায়,,,,,,
আরিয়ান সকালেই চলে এসেছে থানায়।অফিসাররা তাকে সালাম দিয়ে শুভ সকাল জানিয়ে যার যার ডিউটিতে চলে যায়।আরিয়ান আশা মাত্র একজন মহিলা আর পুরুষ আসে তার রুমে।কন্সটেবল তাদের নিয়ে এসেছে ওর রুমে।
কন্সটেবল:স্যার ওনারা আপনার সাথে কথা বলতে এসেছে।
আরিয়ান:ঠিক আছে ওনাদের ভিতরে আসতে বলো।
কন্সটেবল ওদের ভিতরে দিয়ে চলে যায়।
আরিয়ান:বসুন আপনারা আর বলুন কি সমস্যা?
লোকটা:স্যার আমার নাম জহির আর এই আমার স্ত্রী মালা।স্যার আমাদের দুই ছেলে মেয়ে আমার বড় মেয়ে রাহি আজিকে ৪দিন নিখোঁজ।

আরিয়ান:৪দিন ধরে নিখোঁজ আর আপনারা আজকে এসেছেন রিপোর্ট লিখাতে?
জহির:না স্যার আমরা আগেও গেছিলাম রিপোর্ট লেখাতে।আমি সিলেটে থাকি এখানে এসেছিলাম বোনের বাড়িতে।আসার দুইদিন পরেই আমার মেয়ে নিখোঁজ।আমি এখানে রিপোর্ট লেখাতে আসলে আপনার অফিসার আমার মেয়েকে বাজে অপবাদ দিয়ে রিপোর্ট লেখে না।স্যার বিশ্বাস করেন আমার মেয়ে একদম ভালো।স্যার দয়া করে আমার মেয়েকে খুজে দেন।স্যার দয়া করেন।
আরিয়ান:আপনি শান্ত হোন।আমি কথা দিচ্ছি আপনার মেয়েকে খুজে দেবো।আপনার মেয়ের একটা ছবি আর ইনফোরমেশন গুলো আমাকে দিন।

জহির:এইযে স্যার নেন এইখানে সব।
আরিয়ান:ঠিক আছে আপনি আসুন।আমি খুজা শুরু করছি।
জহির:ধন্যবাদ স্যার অনেক ধন্যবাদ।
জহির চলে যাওয়ার পর আরিয়ান বাহিরে এসে সব অফিসারদের ডাকে।আরিয়ানের ডাকে সবাই এসে হাজির হয়।আরিয়ান সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,

আরিয়ান:”আমাদের গায়ে এই পোশাকটা দেওয়া হয়েছে আইনের রক্ষার জন্য।সাধারন মানুষকে রক্ষা করতে।তাদের সাহায্য করতে।এই পোশাকটা এই জন্য দেওয়া হয়নি।যে এটা দিয়ে আমরা যা ইচ্ছা তাই করবো।এই পোশাক গায়ে দেওয়ার আসল লক্ষ্য একটাই অন্যায় কারীকে ধরা।তাদের শাস্তি দেওয়া।সাধারন জনগন আমাদের কাছে নিজেদের সুরক্ষিত ভাবে।কিন্তু আমরা তাদের সেই সুরক্ষা দেইনা।এই পোশাকটা গায়ে জরিয়ে নিজেকে নিজে রাজা ভাবী।চারদিন আগে এক মেয়ের মিসিং কেস আসছিলো।কিন্তু আপনারা তার কেস না লিখে তার বাবাকে মেয়েটার নামে খারাপ কথা বলেছেন।হোয়াই?কে করেছেন এটা আন্সার মি!!

হাসান:স্যার শফিক স্যার করেছেন
শফিক ভয়ে ঘামছে এতোটুকু সে বুজেগেছে যে এ শুধু দেখতে কিছুটা শিশির নয় শিশিরের মতোই রাগি।আরিয়ান শফিকের কাছে এসে বলে,
আরিয়ান:আপনাকে আমি ২মাসের সাসপেন্ট দিলাম।যদি ২মাসে নিজেকে পরিবর্তন করতে পারেন তবে এখানে আসবেন।আর যদি না পারেন তবে ২মাস পর রিজাইন লেটার নিয়ে শেষবারের মতো এখানে আসবেন।নাউ গেট আউট।

শফিক:স.সরি স্যার।
আরিয়ান:আই সে গেট আউট!!!!(চিল্লিয়ে)
শফিক চলে যায় মাথা নিচু করে।আরিয়ান সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
এই মেয়েটাকে ২৪ঘন্টার ভেতরে হদিস করতে হবে।অলরেডি ৪দিন হয়ে গেছে মেয়েটা নিখোঁজ।সবাই কাজে লেগে পরুন।
সবাই:ইয়েস স্যার।
আরিয়ানের নির্দেষ মতো সবাই কাজে লেগে পরে।

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ১৪