হয়নি বলা গল্পের লিংক || Writer-Afnan Lara

হয়নি বলা পর্ব ১+২
Writer-Afnan Lara

গোলাপ গাঁদায় সাজানো রুমটা দেখতে বেশ লাগছে।বিয়েবাড়িতে আসা কয়েকজন এক এক করে সবাই রুমটা দেখে চলে গেলো।রাত ১০টা বাজে তখন।বিছানায় গোলাপের পাপড়ি দিয়ে বর বউয়ের নাম লেখা।(V+U)
দরজা থেকে খাট অবদি ফ্লোর জুড়ে গোলাপের পাপড়ি ছিঁটানো।কমন বাসর ঘর যেমন হয় ঠিক সেরকম
বাসরঘরটা যাদের তারা এই রুমটাতেই আছে এখন।বউ যার নাম ঊষা সে সোফায় গালে হাত দিয়ে বসে বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছে অগ্নি দৃষ্টিতে যেন তার নতুন বরকে কাঁচা গিলে খেয়ে নেবে।আর বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন তার বর।নাম হলো ভোর।

তিনি হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছেন এদিকে ফিরেই।দুমিনিট একজন আরেকজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে নিলো।তাদেরকে জোর করে তাদের পরিবার বিয়ে দিয়েছে আজ।দুজনের চোখে আগুন জ্বলছে এখন।বাবাকে দোষ দিতে না পেরে এখন একে অপরকে দোষ দিচ্ছে

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

শেষে রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে ঊষা তার পাশ থেকে কুশন একটা নিয়ে ভোরের মুখের উপর মেরে বললো”আমাকে বিয়ে করার তর সইছিল না তোর?এই ছিল তোর মনে?”
.
-“এক্সকিউজ মি!তোকে বিয়ে করার ইচ্ছা আমারও ছিল না!আমি এই বিয়ে থেকে পালানোর সব চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম।”
.
-“আমি চেষ্টা করিনি?৩বার পালিয়েছিলাম আমার রুম থেকে তাও বাবা ধরে এনে বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে দিয়েছিল।”
.
-“তোর জন্য আমার ক্যারিয়ার শেষ।চাকরি পেয়ে ভাবলাম বন্ধুদের নিয়ে আমেরিকা,অস্ট্রেলিয়া,লন্ডন সব জায়গায় ঘুরবো তা আর হলো কই।গলায় বউ নামের একটা দায়িত্ব ঝুলিয়ে দিলো বাবা -মা”

-“সব তোর দোষ।তুই ছেলে হয়ে মুখের উপর না করে দিতে পারলি না?তোর কারনে আমার এতদিনের ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে।জানিস আজকে আমার পরীক্ষা ছিল?”
.
-“আমি অনেকবার না করেছি।আমি কি জানি বাবার কলিজার দোস্ত তোর বাবা??”
.
-“আমি জানতাম?”
.
-“তোর যা খুশি তাই কর।!”

-“আমার কাজে যদি দখল দিছস তো মেরে ভূত বানিয়ে দেবো।এই জন্য ছেলেদের বেস্টফ্রেন্ড বানাতে নাই।শেষে কিনা বেস্টফ্রেন্ডের বউ হতে হলো।কষ্টে পানি খেতে ইচ্ছে করছে আমার”
.
-“যা ফুট!তোকে এমনিতেও কোনো ছেলে বিয়ে করতো না।ভোর ভালো ছেলে বলে তার বউ হতে পেরেছিস”
.
-“তুই কেমন ভালো তা দীর্ঘ ৬বছর তো জেনে আসছি।মাফ কর আর জানার ইচ্ছা নাই আমার”
.
-“তোর সাথে কথা বলাই বেকার।আরে আমি কি ইচ্ছে করে বিয়েটা করলাম?তুই নিজেই তো দেখলি আমি কতবার না না না করছি।”
.
-“আমি ঘুমাতে যাই।আর একটা কথাও বলবি না।বিয়েটা তোর দোষে হইছে সেটা আমি জানি।তুই মানা করলে আঙ্কেল নিশ্চয় মেনে যেতো।আমি কতবার বাবাকে বলেছি আমি এখন বিয়ে করতে চাই না। বাবা আমার কথা শুনছে না দেখেই তো তোকে বললাম বিষয়টা দেখ।আমার বর বললেন”ঊষা ডোন্ট ওয়ারি।আমি এই বিয়ে হতেই দেবো না দেখিস”
বাহ তার ডোন্ট ওয়ারি একেবারে বাসর অবদি নিয়ে আসলো আমাকে।এখন ওয়ারি না করতে বলস না কেন?বেয়াদব একটা”

-“শুন ঊষা!আমার ও মেজাজ খারাপ।উল্টো আমাকে দোষ দিয়ে রাগ বাড়াইস না।”

ঊষা আরেকদিকে ফিরে শুয়ে পড়েছে।ভোর চুপচাপ আলমারি খুলে টিশার্ট আর জিন্স নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো।ঊষা মাথা তুলে দেখে আবার শুয়ে পড়েছে।ফ্রেশ হয়ে এসে ভোর বিছানায় শুয়ে ফেসবুক অন করলো।ঊষা মাথা তুলে বললো”লাইট অফ কর!তোর জন্য কি সারারাত জেগে থাকবো নাকি আমি?”
.
-“আমার সব কিছুতেই তোর সমস্যা তাই না?এতদিন তো আমার পাশে বসে অন্ধকারে হরর্ ফিল্ম ও দেখতি। এখন গায়ে জ্বালা করে?”

-“হ্যাঁ করে।তোর সাথে বিয়ে হয়েছে তা ভেবে মেজাজ বিগড়ে আছে আমার।”
.
ভোর রাগ করে ফোনটা রেখে দিয়ে শুয়ে পড়েছে।রাত তিনটা বাজে অথচ দুজনের চোখে ঘুম নেই।দুজনেই উপরের ছাদটার দিকে তাকিয়ে আছে।ঊষা আড় চোখে তাকিয়ে বললো”ঘুমোচ্ছিস?”
.
-“নাহ”
.
-“কাল থেকে তুই সোফায় শুবি।আমার কোমড় ব্যাথা হয়ে গেছে এতক্ষণ শুয়েই।আর পারবো না জীবনে”

-“তুই চাইলে আমার পাশে বর্ডার দিয়ে শুতে পারিস।আমার সমস্যা নাই”
.
ঊষা একটা কুশন ওর মুখে আবারও ছুঁড়ে মেরে বললো”তোর প্রেম পাচ্ছে?”
.
-“যাক বাবা।দরদ দেখালেও সেটা দোষ হয়ে যায়।”
.
-“দেখাবি না দরদ।তোর দরদ আমার দরকার নাই।”

দুজনে চুপ থেকে ঘুমিয়ে পড়েছে এবার।পরেরদিন সকাল সকাল ভোর চোখ খুলে দেখলো ঊষা কোমড়ে হাত দিয়ে ব্রু কুঁচকে ওকে দেখছে পাশে দাঁড়িয়ে।ভোর বললো”কি হইছে?”
.
-“তোর আম্মু ডাকছে।এই শীতের ভেতর আমাকে গোসল করে বের হতে বলছে”
.
-“তো?করে নে”
.
-“কেন করবো?”
.
-“তো করিস না”

-“তোর মাকে কি জবাব দেবো?”
.
-“চুল হালকা ভিজিয়ে শাড়ী বদলে নে তাহলে দেখে মনে হবে গোসল করেছিস”
.
-“হুমমমম।ভালো বুদ্ধি।আমি যাচ্ছি তাহলে!”

ঊষা তার বিয়ের শাড়ী বদলে একটা নীল শাড়ী পরে দরজা খুলে ড্যাং ড্যাং করে হাঁটা ধরলো।আহা চুল একটু ভিজিয়ে প্রমাণ করতে চাচ্ছে সে গোসল করেছে।
.
-“ঊষা গোসল করেছো?”
.
-“হ্যাঁ আন্টি”
.
-“বসো নাস্তা করবে।”

ভোরের আম্মুর কথা শুনে ঊষা চেয়ারে টেনে বসলো চুপচাপ।সবাই রোবটের মতন বসে বসে খাচ্ছে।ভোরের পরিবারের একেকটা মানুষ খুবই গম্ভীর রকমের।ভোর নিজেও মুখ কালো করে থাকত সবসময়।ভোরের বেষ্টফেন্ড হওয়ার পরেও সে কখনও ওদের বাসায় আসতো না।ভোর আনতে চাইতো না কারণ ওর পরিবার এসব পছন্দ করে না। হাতে ব্রেড আর জ্যাম নিয়ে বসে আছে ঊষা।সকালে বড় জোর রুটি নয়ত ভাত খাওয়া হতো।কিন্তু ব্রেড জ্যাম খাওয়া হতো না কারণ ওর অভ্যাস নেই এত কম খাবার খাওয়ার।সকালে কম খেলে সারাদিন মাথা ঘুরায় তার।ভোর ফ্রেশ হয়ে ঊষার পাশে এসে বসেছে।বাবা গম্ভীর গলায় বললেন”মেহমানরা সব আসবে।বুয়াকে পাঠিয়ে তোমাদের রুম পরিষ্কার করে নিবা।অনেক ফুল পড়ে আছে।ফুল একদিনের বেশি আর ভাল্লাগে না”

-“ঠিক আছে বাবা”
.
-“ঊষাকে তোমার পছন্দ হয়েছে নাকি এখনও মনে পালাই পালাই করছো?”
.
ঊষা মনে মনে বলছে”আমারই তো পালাতে মন চাচ্ছে।আপনার ছেলে কি আমায় জাজ করবে।ওর তো হাড্ডি ভেঙ্গে দিব একেবারে”
.
-“হ্যাঁ।ঊষা সুইট একটা মেয়ে!”

কথাটা শুনে ঊষা চোখ কপালে তুলে ভোরের দিকে তাকালো।চিমটি কেটে ফিসফিস করে বললো”পাম দাও ভালো কথা।এমন পাম দিও না যে ফেটে তোমার গালে চড় মাইরা দিই”
.
-“তোর ভালো করলেও গায়ে লাগে?বাবাকে বলতাম যে এই কাঁচামরিচ আমার পছন্দ হয়নি?”
.
-“বলে দেখ না!মেরে ভূত বানিয়ে দেব”
.
বাবা উঠে চলে গেলেন খাবার শেষ করে।ঊষা ব্রু কুঁচকে বললো”জানিস তো আমি সকালে এগুলো খাই না।তোরা কি আর কিছু খাবি না?”

-“হুম।চা পাবি এখন।তারপর দুপুরে লাঞ্চ”
.
-“এ্যাহ??আমাকে মারতে বিয়ে করেছিস তাই না?”
.
ভোরের আম্মু এগিয়ে এসে বললেন”এগারোটার দিকে গরম ভাত /মাংস হয়ে যাবে।তুমি খেয়ে নিও তখন।”

ঊষা দাঁত কেলিয়ে হ্যাঁ জানালো।ভোর উঠে রুমে ফেরত গেছে আবার।ঊষা ওর পিছু পিছু এসে বললো”সর!আমি বিছানায় ঘুমাবো।কাল সারারাত ঘুমাতে পারিনি”
ভোর মাথায় হাত দিয়ে ফেলেছে।ঊষা পেছনে তাকিয়ে দেখলো বুয়া দরজার পেছনে ঝাড়ু দিচ্ছে।জিভে কামড় দিয়ে ঊষা বললো”হে হে!ইয়ে মানে তোষক নতুন তো তাই ঘুম হয়নি”

বুয়া হাসতে হাসতে চলে গেলো।ঊষা ভোরের গায়ে দুম করে কিল বসিয়ে ওর পাশে বসে বললো”অফিসে যাবি না?”
.
ভোর ভ্রু কুঁচকে বললো”আই এম ইউর হাসবেন্ড।সম্মান দিয়ে কথা কবি।এসব তুই তুকারি কি আবার?”
.
-“তোরে তুই না কইলে আমার পেটের ভাত হজম হয় না।আই এম সরি।আজীবন তুই বলেই যাব।আপনি/তুমিতে আসতে আমায় না খেয়ে থাকতে হবে”

-“যাচ্ছি অফিসে”
.
-“তোর হিটলার বাবা তোকে আজ অফিস যেতে মানা করেছিল না?”
.
ভোর রেগে আবারও বিছানায় এসে বসে বললো”হুম”
.
-“এত স্ট্রিক্ট পরিবারে কি করে বড় হয়েছিস তুই?আর আমার মতন এরকম বাঁচাল মেয়েকেও বেষ্টফ্রেন্ড বানিয়ে ফেলছিস।”

ভোর হাত ভাঁজ করে ঊষার দিকে তাকিয়ে বললো”আমার বাবা এত স্ট্রিক্ট হওয়ার পরেও তো তোকে এই বাড়ির পুত্রবধূ করে এনেছে।আর আমি তো তার ছেলে।আমার কথা আর কি বলবো!”

কথাটা বলে ভোর পাশে তাকিয়ে দেখলো ঊষা ঘুমিয়ে পড়েছে।ওর পাশ থেকে সরে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো সে।যে মেয়েটা এখন তার স্ত্রী সে হলো তার ভার্সিটি লাইফের বেষ্টফ্রেন্ড।এই একটাই মেয়ে ফ্রেন্ড ছিল ওর।তবে দুজনের মাঝে কখনও ভালোবাসার ফিলিংস তৈরি হয়নি।এরই মাঝে তাদের বাবারা তাদের ধরে বিয়ের বন্ধনে জুড়ে দিলেন।দুজনের একজনেরও বিয়েতে মত ছিল না।ভোর ৪বার পালিয়েছে আর ঊষা তিনবার।তাও ঘুরেফিরে ধরা খেয়ে বিয়েটা করতেই হলো।খুনসুটি ছাড়া তাদের সম্পর্কটা আর কোনো রুপ নেয়নি।কাল যে বাসর রাত ছিল তার ছিঁটেফোটাও বোঝা যাচ্ছে না এখন।গায়ের হালকা নীল পাঞ্জাবিটার দিকে চেয়ে ভোরের মনে পড়লো সে নতুন বর।ঊষা হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে।যেন সে নিজের বাসায় আছে।ভোরের সাথে অনেক ফ্রি সে।তাই একটা নতুন বাড়িতে এসেও ওর মনেই হয় না যে সে তার পরিবার থেকে দূরে।

ভোর দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ওকে দেখছে।ওর বাচ্চামো আর বন্ধুত্ব বজায় রাখার জেরেই ঊষাকে ওর ভাল্লাগে।
বাহিরে মেহমানদের কোলাহলে ঊষার কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে গেছে।চোখ ডলতে ডলতে সামনে তাকিয়ে দেখলো ভোর সোফায় বসে নিউজপেপারের পাতা উল্টাচ্ছে।

-“আমি কোথায়?”
.
-“শ্বশুরবাড়ি”
.
-“ওহ!এগারোটা বাজছে?ভাত খাব!”
.
-“বাজছে।”

ঊষা এক দৌড়ে গেলো ডাইনিংয়ের দিকে।ডাইনিং অবদি এসে দেখলো সব মেহমান সেখানে।পা পিছিয়ে পালাতে যেতেই একজন খপ করে ধরে বললেন”এই তো নতুন বউ”
কাজ সেরেছে।এবার সবাই ওকে ঝাপটে ধরে দেখাদেখির পর্বশুরু করে দিয়েছেন।ঊষা খাবারের কথা মনে করে মন খারাপ করে সবার মাঝখানে বসে আছে।ভোর পেপার পড়া শেষ দিয়ে তার রুম গুছিয়ে নিচ্ছে।ঊষা রুমের ১৩টা বাজিয়ে রেখেছে।এত আগোছালো মেয়েটা!!আমি যেমন সেরকম না পেয়ে তার উল্টোটা পেলাম।!”

তাহসিনের কল আসছে।রিসিভ করতেই সে হেসে হেসে বললো”কিরে ব্যাটা!!তোরা দুটোই মিলে তাহলে প্রেম করতি??আমরা তো ধরে নিছিলাম তোরা জাস্ট বেষ্টফ্রেন্ড এখন দেখি তারা জামাই বউ হয়ে গেছে।বিশ্বাস হয় না রে ভাই।তুই এত চালু!”

ভোর তৈরি হয়ে ড্রয়িং রুমে এসে দেখলো ঊষা নাক টানছে আর টেবিলের উপর খাবার দেখছে।
-“মানে কি খায়নি এখনও?এর রাগ আমার উপর দিয়ে ঝাড়বে।আমি বরং পালাই।”
ভোর চুপিচুপি বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে তার বোনকে ফোন করে বললো সে যেন সুযোগ বুঝে ঊষাকে কিছু খাইয়ে দেয়।
ঊষাকে সবার মাঝ থেকে টেনে এনে ভোরের ছোটবোন খাবার খেতে দিলো ভোরের রুমে।ঊষা লোকমা মুখে দিচ্ছে আর ভোরের কথা ভাবছে।কতটা কিপটা হলে মানুষ বউকে এভাবে একা ফেলে পালিয়ে যেতে পারে।আজ ওর একদিন কি আমার যতদিন লাগে!

-“তুই না ভোরের বেস্টফ্রেন্ড ছিলি?তাহলে বিয়ের কথা উঠার পর থেকে ওকে এরকম ঘৃনা করা শুরু করেছিস কেন?”
-.
করবো না?বেস্টফ্রেন্ডকে জাস্ট ফ্রেন্ডই ভালো লাগে।বর হিসেবে মানায় না বুঝলে মা?”
.
-“আমাকে বুঝিয়ে লাভ নেই।আমি নিরপেক্ষ মানুষ।বুঝিয়েও বা কি হবে।বিয়ে তো হয়ে গেছেই এবার মানিয়ে নে একজন আরেকজনকে।
.
আমাকে আজ তোমাদের সাথে নিয়ে যাবা না?ভোরকে নিতে হবে না
.
তোর বাবা পারলে তোকে রেখে ভোরকে নিয়ে যাবে।এত কথা না বলে খেতে বসেছিস খা।তোর রুমটা দেখতে দে।আমার মেয়ের শ্বশুরবাড়ি দেখি আমার শ্বশুরবাড়ির চেয়েও সুন্দর।

ঊষা মুখ বাঁকিয়ে চিকেন খেতে খেতে ভোরকে কয়েকবার ফোন করলো।সে ফোন ও তুলছে না।
মা রুম দেখতে দেখতে বারান্দায় চলে গেছেন।রুমে ঢুকলো পপি।পপি হলো ভোরের ক্লাসমেট।ঊষা আর ভোর আলাদা ডিপার্টমেন্টের ছিল বলে ক্লাসের বন্ধুরা তাদের আলাদা আলাদা।পপিকে দেখে ঊষা খাওয়া বন্ধ করে ফেলেছে।পপি ওর পাশে বসে বললো”ভোর তোমার মধ্যে কি দেখেছিল আমি আজ পর্যন্ত এর উত্তর পেলাম না।আমাকে কি ওর নজরে পড়তো না?হেঁটে হেঁটে খালি বলতো আমি আর ঊষা অনলি ফ্রেন্ড।আর এখন একেবারে বিয়েটাই করে নিলো!”

ঊষা কপাল কুঁচকে মূহুর্তেই ৩২কপাট দাঁত বের করে পপির হাত জোড় করে ধরে বললো”সিরিয়াসলি তুমি ভোরকে লাইক করো?তাহলে তুমি ওর সাথে পালিয়ে যাও।আমি হেল্প করবো তোমাদের”
.
পপি ব্রু কুঁচকে বললো”আর ইউ সিরিয়াস?বিয়ে হয়ে গেছে তোমাদের।ফান করবা না।আমার মুড নাই”
.
আমি ফান করছি না।আমার ও এই বিয়েতে মত ছিল না।পরিবার জোর করে দিছে।তুমি চাইলে ভোরকে বিয়ে করে নিতে পারো।ঝামেলা শেষ হবে।আমি চাই না কমন বউয়ের মতন সংসার করতে।আমার কত স্বপ্ন আছে।ক্যারিয়ার আছে

“চুপ থাক বেয়াদব!”
মা বারান্দা থেকে এসে ঊষার কান টেনে ধরে পপিকে বললেন”মা তুমি একটু বাহিরে যাবা এরে একটু ঠিক করতে হবে”
.
পপি পা টিপে টিপে রুম ছেড়ে পালালো।মা ঊষার গালে চড় একটা মেরে দিয়েছেন।ঊষা গালে হাত দিয়ে বললো”মারলে কেন?আমি কি সত্যি সত্যি পালাতাম নাকি?”
.
পালানোর কথা মুখেও আনবি না।বিয়েরদিন তোকে চড় মারলে আজ এইদিন দেখতে হতো না

ভোর দুপুর দুইটার দিকে বাড়ি ফিরেছে।এতক্ষণ বাসার কাছের একটা দোকানে বসে ছিলো মিজান আর সুমনের সাথে।রুমে ঢুকে দেখলো ঊষা কালকের মতন বউ সেজে গাল ফুলিয়ে বিছানার কিণারায় বসে আছে।দরজায় দুবার টোকা দিয়ে ভেতরে আসলো সে।ঊষা ঘাঁড় ঘুরিয়ে বললো”তখন ওভাবে পালালি কেন?আমাকে ভয় লাগে না তোর?”
.
লাগে না একটুও।
.
বউয়ের খাওয়া দাওয়ার দিকে নজর দেওয়া উচিত।সেটা না করে….

পপিকে দেখলাম বাহিরে।কথা হয়েছে ওর সাথে?
.
ঊষা উঠে দাঁড়িয়ে বললো”মেয়েটা কত সুন্দর তাই না?”
.
হ্যাঁ সুন্দর তো।
.
ঠুস!!!!!
.
আউচ লাগলো মাথায়।কুশন মারতি ঠিক ছিল।পানির বোতল মারলি কেন?

তোর এত বড় সাহস।বউ সামনে রেখে অন্য একটা মেয়েকে সুন্দর বলিস
.
ভোর টিসু দিয়ে মুখ মুছে কপাল কুঁচকে বললো”তোর মাথা ঠিক আছে তো?মদ খেয়েছিস?তুই পসেসিভ হচ্ছিস তাও আমার উপর!!মাই গড”
.
ঊষা মুখ বাঁকিয়ে বিছানায় আবার বসে পড়ে বললো”মা শিখিয়ে দিছে
বলছে কোনো মেয়েকে তোর কাছে ধারেও যেন ঘেঁষতে না দিই
.
একটা মেয়ে লাইফে ঢুকছে।আর জায়গা নাই কোথাও।এরে নিয়েই আমার জান বের হয়ে যাওয়ার মতন অবস্থা।আর লাগবে না ভাই

আসবো ভোর?
.
দরজার দিকে দুজনে তাকিয়ে দেখলো পপি দাঁড়িয়ে আছে।ভোর বললো”আসো”
.
পপি গিয়ে ভোরের পাশে সোফায় বসলো তারপর বললো”ঊষা বললো তোমরা নাকি বিয়েতে হ্যাপি না?”
.
ভোর ঊষার দিকে তাকিয়ে আছে।ঊষা কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”ওসব ভুলে যাও।এখন আমরা হ্যাপি কাপল।বিয়ে তো হয়ে গেছে তাই না??এখন আর এসব বলে লাভ আছে?

ভোর মনে মনে ভাবছে ঊষা এসব বলছে??বাহ আন্টি বাহ!কি শিক্ষা দিলেন আপনার মেয়েকে।দারুন!এটাই তো চেয়েছিলাম।
.
সেকি!তুমি না সিরিয়াসলি বললে আমার আর ভোরের সেটিং করে দিবা
.
ঊষা কপাল ঘঁষতে ঘঁষতে বললো”আমি না খিধায় আবোলতাবোল বকি।তুমি তখনকার কনভারজেশনকে আবোলতাবোল ধরে নাও।”
.
পপি ভোরের দিকে অসহায় লুক নিয়ে বললো”তুমি আমায় লাইক করো না?আমি যে তাকালে টেডি স্মাইল দিতা সেটা কি ছিল?”

ঊষা মাথার থেকে ববি পিন খুলতে খুলতে বললো”ভোর তো আমার দিকে তাকিয়েও টেডি স্মাইল দেয়।আমি তো এত মিনিং বের করিনাই এতদিন”
.
পপি আর কথায় না পেরে চলে গেলো।ঊষা দরজার ফাঁক দিয়ে ওর চলে যাওয়া দেখে ফিসফিস করে বললো”আমি কি এই মোটা শাড়ীটা এখন খুলতে পারি?নাকি আরও সময় এভাবে থাকতে হবে?”
.
ভোর ফোন টিপতে টিপতে বললো”বাসায় যে টপস পরতি ওটা পরার কথা মাথায় নিলে এবার আমি তোরে চড় মেরে দিব”
.
ঊষা শাড়ীর কুচি ধরে বললো”সেলোয়ার সুট পরতে চেয়েছিলাম।তোর আম্মুকে ডেকে জিজ্ঞেস করি?”

উহু!বসে থাক।এসি অন করবো?
.
লাগবে না।আমার শীত লাগছে।চেঞ্জ করতে চাইছি কারন শাড়ীটাতে খোঁচা খোঁচা লাগছিল।যাই হোক মিজান আজকে আমায় ফোন করেছিল।বললো তোকে মেনে নিতে।কি মানবো তোকে?অনেক আগ থেকেই মেনে আসছি
.
ভোর হালকা কাশি দিয়ে নড়েচড়ে বললো”ওর কথায় পাত্তা দিস না”
.
বিকালে তো চলে যাব।টপস পরবো বাসায় গিয়ে।এসব শাড়ী পরার হেবিট নাই আমার।ভুল টাইমে বাবা বিয়ে দিয়েছে।
.
আচ্ছা আসছি আমি।ভাইয়া ডাকছে হয়ত।

ভোর রুম থেকে বের হতেই তার বড় ভাই শামীমের সামনা সামনি পড়লো।শামীম ওর হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে বললো”খামটায় হানিমুন টিকেট নেই।চেক আছে।তোদের যেখানে ইচ্ছা ঘুরে আসবি।আমার তরফ থেকে দিলাম।”
.
শামীম চলে যেতেই ভোরের হাত থেকে খামটা ছো মেরে নিয়ে নিলো ঊষা।বিছানায় গোল হয়ে বসে লিস্ট করছে এখন—লিপস্টিক ২০টা।আইলাইনার দশটা!!
.
ভোর হাত ভাঁজ করে বললো”ওটা হানিমুনের জন্য দিছে।তোর মেকআপের জন্য না”
.
ঊষা পেছনে তাকিয়ে বললো”তো তুই আমাকে নিয়ে হানিমুনে যাবি?আর ইউ সিওর?”

ভোর ঢোক গিলে ঊষার পাশে বসে বললো”আমি না একদম এসবের জন্য রেডি ছিলাম না রে।তুই ও না।বাট একের পর এক দায়িত্ব ঘাঁড়ে এসে পড়ছে।কি করবো?”
.
আই থিংক আমাদের ঘুরে আসা উচিত।মাঝখানে অলটাইম বর্ডার থাকবে বিছানায়।ওকে?
.
ডান!কোথায় যাবি?
.
ঊষা দাঁত কেলালো।ভোর মাথায় হাত দিয়ে বললো”প্লিস!আমি সিলেট যাব না।আর ভাল্লাগে না।তুই সিলেট ছাড়া আর কিছু বুঝিস না?”

একজন চা প্রেমির কাছে সিলেট প্রেমিক/প্রেমিকার মতো।শুধু গিয়ে একবার দেখতে ইচ্ছে করে।ছুঁতে ইচ্ছে করে!
খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করে!
.
আমি সিলেট যাব না।দ্যাটস ফাইনাল!
.
আমি সিলেট যাব এন্ড ইটস ফাইনাল

বিকালে দুজনকে নিয়ে ঊষার পরিবার বাসায় ফিরেছে।ঊষা ছুটে গিয়ে আগে এই ৭০কেজি ফিল হওয়ার মতন শাড়ীটা বদলে নিজের নরমাল টপস আর প্লাজু পরে গলায় ওড়না ঝুলিয়ে কতগুলো চিরকুট নিয়ে ফ্লোরে বসে পড়েছে।ভোরকে ঊষার বাবা মা বিকালের নাস্তা খেতে দিয়েছেন।ঊষা কতগুলো চিরকুট লিখে গুছিয়ে রাখলো একটা কাঁচের বাটিতে।ভোর নাস্তা করে রুমে আসতেই বাটিটা ওর দিকে ধরে বললো”নে একটা নে।চিরকুটে যেটা লেখা থাকবে ওখানেই আমরা যাব”
.
ওকে!
.
ভোর একটা চিরকুট তুললো।ওটাতে লেখা সিলেট।ঊষা নাচতে নাচতে বললো”যেতে তাহলে হবেই”

ভোর মুখটা ফ্যাকাসে করে বাকি চিরকুট গুলো খুলে দেখলো সবগুলোতেই সিলেট লেখা।ঊষা খিল খিল করে হাসতে হাসতে এক দৌড় দিলো। ভোর ধরে ফেললো ওকে।
“এত শয়তানি আসে কই থেকে?”
.
মাথা থেকে।হাত ছাড় নাহলে কামড়ে দেবো
.
ভোর হাত ছেড়ে দিয়ে হেসে ফেললো।ঊষা মায়ের কাছে গিয়ে বললো সে সিলেট যাবে।মা ওর হাতে একটা বোয়াম ধরিয়ে দিয়ে বললেন”এটা ভর্তি করে চা পাতা আনিস”

ঊষা ব্রু কুঁচকে তাকালো
.
মা বোয়ামটা সরিয়ে বললেন”কিরে?পারবি না?”
.
এত ছোট বোয়াম?বড় সাইজের একটা দাও
পুরো বাগান উঠাই আনমু।
.
ঊষা এদিকে আয় একটু!
.
আসছি!

ঊষা রুমে এসে দেখলো ভোর গায়ের পাঞ্জাবিটা খুলতে গিয়ে বেহাল অবস্থা করে ফেলেছে।হাত আটকে এখন খুলতে পারছে না। পুনরায় পরতেও পারছে না
ঊষা এক মিনিট হেসে ওর পাঞ্জাবিটা খুলে দিলো।ভোর দম ফেলে বললো”ভাবলাম মরে যাব”
.
ঊষা মুখে সিলেটের চিরকুটটা পুরে একটা কাগজ নিতে নিতে বললো”তোর আগে আমি মরবো দেখে নিস।”

ভোরের বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠলো।মরার কথা আগে কখনও তারা দুজন বলেনি। তবে আজ বলে খারাপ লাগলো বিষয়টা
ঊষা পাত্তাই দেয়নি।ফটাফট কাগজপত্র গুছিয়ে টেবিলে রেখে ভোরের দিকে ফিরে বললো”আমি অনেক গুছানো মানুষ বুঝলি!কিন্তু তোর রুমটা গুছাতে গেলেই আলসেমি আসে কি করবো?”

আমাকে আজাইরা দেখিস কিনা তাই।আচ্ছা আমি একটু বাহিরে থেকে ঘুরে আসি।তুই তিড়িংবিড়িং কর এখানে।
.
ভোর অন্য একটা পাঞ্জাবি পরে চলে গেলো।ঊষা বিছানায় বসে একটা সেলফি তুলে তার বেস্টু যে কটা আছে ওদের দিয়ে বললো”গার্লস!আমার বেস্টফ্রেন্ড থুক্কু আমার বর বাহিরে গেছে।আমি ফ্রি আছি। তোমরা কি আসবা আমার সাথে পপকর্ন খেতে আর আড্ডা দিতে?”

একসাথে সবাই লিখলো আসতেছি।ঊষা টিভি অন করে সোফায় বসে পড়েছে।সে এই পরিবারের একমাত্র মেয়ে।ভাই আছে দুইটা।তারা এখন বাহিরে।কি একটা কাজে গেছে।বাবাও বাহিরে।মা আছে তিনি তার রুমে।ঊষা তার বান্ধুবি কটা নিয়ে রুম বসে আলাপ করছে এখন।বিয়ে নিয়ে নয়।ফ্যাশন ডিজাইনের নেক্সট এক্সাম কবে সেটা নিয়ে।ওরাও কেউ বিয়ের কথা জিজ্ঞেস করলো না কারণ ঊষা ইন্টারেস্ট দেখায়নি।

ভোর ও সেই একই সিচুয়েশনে আছে।বন্ধুদের সাথে
আড্ডা জমালেও তার যে বিয়ে হয়েছে কিংবা আজ বৌভাত সেটা নিয়ে কোনো কথা ওঠেনি।কারণ ভোর একবার এক টপিক উঠাচ্ছিল।ওদেরকে বিয়ে নিয়ে কিছু বলার সুযোগই দেয়নি সে। রাত নয়টায় দুজন দুই দিক থেকে ফ্রি হলো।ঊষার বান্ধুবীরা চলে গেছে।ভোরের ও আড্ডা শেষ।ঊষা এত লাফালাফি করেছে যে এখন এ অসময়ে ঘুমাচ্ছে বিছানার এক কোণায়।ভোর ওর পাশে বসে থাকলো কিছু সময়।ঊষার আম্মু ওকে ডাকলো ডিনার করতে আসতে।

হয়নি বলা পর্ব ৩+৪