হয়নি বলা পর্ব ৩+৪ || নতুন রোমান্টিক গল্পের লিংক

হয়নি বলা পর্ব ৩+৪
Writer-Afnan Lara

-“উঠ!খাবি না?”
.
-“না!খিধে নেই।তুই খা”

ভোর উঠে চলে গেলো খাওয়ার জন্য।ঊষা উঠে বসে ঘুম ঘুম চোখে বর্ডার বানালো বিছানায় মাঝখানটায় তারপর আবার শুয়ে পড়লো।ভোর রুমে আসার আগে মা আসলেন রুমে ওকে ডাকতে কারন ও আসছিল না।এসে দেখলেন বিছানায় কুশন দিয়ে বর্ডার বানানো।এমন এক ধমক দিলেন তিনি যে ঊষা লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়েছে।মাথা চুলকিয়ে বললো”কি হয়েছে?”

-“কি হয় নাই সেটা বল।এসব কি?টিভি সিরিয়ালের মতো বর্ডার দিয়ে ঘুমাস?তোদের দেখে মানুষ বলতো হাজার বছরের প্রেম কিন্তু তোদের বিয়ে দিয়ে বুঝতেছি যে ওটা প্রেম ছিল না অপ্রেম ছিল।বিয়ে হয়ে গেছে সেটা মানতে এত সময় লাগে?”
.
-“এত সময়?মা!!!কাল বিয়ে হয়েছে।আমার তো এক বছরের বেশি লেগে যাবে
হয়ত সারাজীবন ও লাগতে পারে”
.
-“চুপ!পরেরমাসে ভোরের পরিবারকে সুখবর দিবি নাহলে…

-“মানে আমি প্রেগন্যান্ট হতাম?ভোর আমার হাত ধরলে ওরে চড় মাইরা দিই আর তুমি এসব কি আবদার করো?জীবনেও না।ভোর নিজেও আমাকে বউ হিসেবে মানে না”
.
-“ভোরের কথা বাদ দে।তুই নিজেই তো ওকে মানিস না।নিজে মান দেখবি সে নিজেও তোকে মেনে নিচ্ছে”
.
-“আমি কেন মানবো?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“আমি পারবো না এই মেয়েকে ঠিক করতে।পাগল হয়ে যাব।দুটো ছেলে নিয়েও আমার এত কষ্ট পোহাতে হয়নি যতটা এই একটা মেয়েকে নিয়ে করতে হচ্ছে।যা খুশি কর।যেদিন দেখবি হাত থেকে সব খসে গেছে সেদিন চেঁচিয়েও লাভ হবে না।”
.
ঊষা বালিশ মাথায় চেপে শুয়ে পড়েছে।ভোর মিনিট পাঁচেক পর এসে দেখলো ঊষা ঘুমানোর মতন ভাব ধরে শুয়ে আছে তবে পা নাড়াচ্ছে বলে বোঝা গেলো ঘুমায়নি এখনও।সে পাশে বসে বললো”আন্টির ধমক শুনলাম।আবার কি করেছিস?”

-“কি আর করবো।আমি যা করি তার উল্টোটা মায়ের পছন্দ।উনি চায় আমি তোকে… ”
.
-“কি?”
.
-“কিছু না।বাদ দে।ঘুমা।মাঝখানে কুশন দিছিলাম মা নিয়ে গেছে।”
.
ভোর হাসতে হাসতে শুয়ে পড়লো।এরপর ফোন বের করতেই ঊষা এদিকে ফিরে বললো”সারাদিন ফেসবুকে কি?”

-“আমি সারাদিন যাই না।রাতেই আসি আর তখনই তোর সমস্যা হয়।যা রেখে দিলাম”
.
ভোর এবার চোখ বন্ধ করে ফেলেছে।ঊষা উঠে বসে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
-“এই গাধাটা নাকি আমার হাত থেকে ফসকে যাবে।এরে তো আমি…”
.
ভোর চোখ খুলে বললো”আমাকে কি?চুপচাপ ঘুমা নাহলে মেরে ঘুম পাড়াবো”

ঊষা কপাল কুঁচকে শুয়ে পড়লো
পরেরদিন সকালে যখন সে চোখ খুলেছে দেখতে পেলো ভোর জানালার গ্রিলে হাত রেখে ফোনে কার সাথে যেন তর্ক করছে
তর্কে পেরে উঠছে না বলে হাঁপাচ্ছে।ভোর এরকম করে।তর্কে না পারলে পেরেশান হয়ে যায়।ঊষা কান পেতে বুঝার চেষ্টা করলো ঘটনাটা কি।তো বুঝলো যে ভোরদের কোম্পানি থেকে পার্সেল এক ক্লায়েন্টের কাছে ২২৩টা যাওয়ার কথা। গেছে ২২৫টা
বাকি দুটো তারা ফেরত দিচ্ছেন না বলেই তর্ক চলছে।ঊষা ফোনটা কেড়ে নিয়ে কানে ধরে বললো”বাকি দুইটা না দিলে ঐ ২২৩টা কেড়ে নিয়ে আসবো চিনো আমারে?ভোরের ওয়াইফ আমি।চোর কোথাকার!!!একদম চুরি করার কোসে ফেলবে।হয় আমাদের বাকি পার্সেলের টাকা দাও নাহলে ঐ পার্সেল ফেরত দাও।ফ্রি তে জিনিস নিয়ে ব্যবসা শুরু করা দেখাই দিব”

ভোর মাথায় হাত দিয়ে চুপ করে আছে।ঊষা ফোনটা ওর হাতে দিয়ে বললো”বেকুব!সামান্য ঝগড়াও করতে জানে না।
না ভুল বললাম।তুই তো সারাদিন আমার সাথেই ঝগড়া করিস।”
.
-“ঊষা উঠেছিস? এদিকে আয়!”
.
-“আসছি!”

মায়ের ডাক শুনে ঊষা ছুটে চলে গেলো।ভোর মিজানের সাথে কথা বলে সিলেটের বাস টিকেট বুক করে নিয়েছে।ঊষা ভোরের জন্য নাস্তা রেডি করছে মায়ের সাথে।মা জানালো আজ নাকি ঊষার ফুফুরা আসবেন ভোরকে দেখতে।হুট করে বিয়ে হওয়ায় তারা বরিশাল থেকে আসতে পারেননি।তৈরি ছিলেন না বলে।এখন আসছেন দেখতে
ঊষা বললো”তো?”

-“তো তোর জামাইয়ের কানের নিচে কাজল লাগিয়ে দে।তোর ফুফাতো বোনগুলোকে তো চিনস।যে সুন্দর সুন্দর।তার উপর গায়ে পড়া স্বভাব”
.
ঊষা আড় চোখে ভোরের দিকে তাকালো
ভোর তখন ড্রয়িং রুমের দেয়ালচিত্র দেখছিল।ঊষা দাঁত কেলিয়ে বললো”এর সামনে যত সুন্দরী এনে দাঁড় করাও না কেন মাথায় তার একজনের ছবি আছে।ঘুরঘুর করে সারাদিন ”
.
-“সেই তোরাই আবার বলিস তোদের স্বামী স্ত্রী হওয়া ঠিক হলো না”

-“মা কিছু সম্পর্ক স্বামী স্ত্রী না হয়ে শুধু বন্ধুত্বেও টিকে থাকা যায়।আমাদের দুজনেরই ফিলিংস একই রকম।আমি ওকে নিয়ে যা ভাবি ও ঠিক তাই ভাবে আমাকে নিয়ে।আমাদের মাঝে প্রেম আসেনি কখনও”
.
-“আসবে।আল্লাহ তুমি আমার দোয়া কবুল করো”
.
-“মা??আমি যদি ভোরকে আই লাভ ইউ বলি ও হাসতে হাসতে বিছানায় লুটোপুটি খাবে”
.
-“তার সাথে তুইও লুটোপুটি খাইস।যা এসব জামাই বাবাজির সামনে টেবিলে দিয়ে আয়
নিজে আবার চিকেন লেগ পিস নিয়ে নিস না।আমি অনেক যত্ন করে আলাদা মশলা দিয়ে এটা রেঁধেছি।তোর জন্য মুরগির অন্য পিস আছে।ওটা খাবি।আর এটা জামাইকে দিবি”

ঊষা ভেংচি কেটে চলে গেলো।ভোরের সামনে খাবারগুলো রেখে চলে আসলো নিজের রুমে।ফুফুর ওর ড্রেসআপ নিয়ে অনেক অনেক সমস্যা। এসে এই টপসে দেখলে বাবাকে বলবে মেয়েকে আর আদবকায়দা শেখালে না।
-“আমাকে এখন হয় সেলোয়ার সুট পরতে হবে নাহয় শাড়ী পরতে হবে।সেলোয়ার সুটই পরি।আমার বাসাই তো।শ্বশুর বাড়ি হলে এক কথা ছিল”

জামা পরতে গিয়ে বিছানার উপর ভোরের শার্টটা দেখে সেটাকে হাতে নিয়ে ঊষা উল্টে পাল্টে দেখলো।ভোর কখনও ওকে ওর শার্ট পরতে দিতো না।পালিয়ে যেতো।তবে বরাবরই ঊষার ঐ শার্টের উপর লোভ হতো।কারণ হলো কেউ কোনো কিছু মানা করলে সেটার উপর তার বেশি লোভ জাগে।কেন মানা করত তা সে জানে না।হয়তবা তার ভালোলাগে না কোনো মেয়ে তার শার্টে হাত দিক।

-“এখন তো আমি নরমাল মেয়ে না।তার স্ত্রী।তাহলে পরতেই পারি!
মেয়েরা দেখতাম ছেলেদের শার্ট পরে কত ছবি তুলে।আমার কত স্বাদ ছিল।ভাইয়ারা আজীবন পাঞ্জাবি পরে।আর জ্যাকেট।ওসব ভাল্লাগেনা।বাবা তো যে শার্ট পরত সেটা একদমই সাদামাটা।সেটা পরে ছবি তুলে আর কি হতো।এতদিনে পেলাম এই শার্ট।আজকে পরেই ছাড়বো।”

সেলোয়ার পরে তার উপরে শার্টটা পরে নিলো সে।কামিজটা বিছানায় ফেলে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে।কোমড়ে হাত দিয়ে দুলতে দুলতে বললো”এই জন্যই তো বলি ভোর আর ঊষা একই জিনিস।আমাকে একদম ভোরের মতন লাগছো।হিহি।ওরে দেখাবো?যদি রাগ করে?রাগ করবে না।আমি তো ওর বউ।”

ভোর খাওয়া শেষ করে রুমে এসে দেখলো তার শার্ট পরে ঊষা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মডেলিং করছে।
ঊষা ওকে দেখতে পেয়ে আয়নার সাথে লেগে গিয়ে বললো”সরি।”
.
-“সরি বলে আর কি লাভ।পরেই তো ফেলছিস”

ঊষা ভ্রু কুঁচকে বললো”আগে পরতে দিতি না কেন?”
.
-“কারণ আমার শার্টের প্রতি অধিকার আমার ওয়াইফের আছে।এখন তো আপনি সেই ওয়াইফ হয়ে গেলেন তাই যত ইচ্ছে পরতে পারেন।পরার পর খুলে আবার ভাঁজ করে রেখে দিয়েন নাহলে ক্যালাবো”
.
-“একটা ছবি তুলে দিবি?প্রোফাইলে দিয়ে লিখবো-
,, বেস্টফ্রেন্ড যখন বর!,,,
,,তখন তার শার্ট আমার”,,,
.
-“এই পোশাকে যদি ছবি দিছস তো তোরে রাইখা আমি সিলেট যাব।আমার ওয়াইফ হওয়ার নাম নিয়ে আমার শার্ট পরেছিস ভালো।তবে যেহেতু আমার ওয়াইফ তুই সেটা স্বীকার করেছিস সুতরাং ওয়াইফ হয়ে হাসবেন্ডের কথা মতন এসব ছবি আপ দিতে পারবি না।খারাপ দেখায়।আমার ভালো লাগলো না”
.
ঊষা কপাল কুঁচকে বললো”তোর কি হলো বল তো?আমালে পসেসিভ বলে এখন নিজেই তো সেটা হয়ে যাচ্ছিস।”

-“আগে কে হয়েছিল?ইউ!!”
.
-“তোর সাথে কথায় পারবো না।তোর শার্ট তুই রাখ”
.
ঊষা বোতামে হাত দিয়ে কি মনে করে আরেকদিকে ফিরে গেলো। ভোর ও মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললো”আমি বাহিরে থেকে ঘুরে আসি।বাজার করবো তোদের বাসার জন্য।ততক্ষণে আমার শার্ট আগের জায়গায় রেখে দিবি।”

ভোর মাথার চুল ঠিক করে চলে গেলো।ঊষা দশ বিশটা ছবি তুলে শার্টটা খুলে নিজের কামিজ পরে নিয়ে ছবিগুলো নিয়ে বসলো।
-“কি এমন ক্ষতি আছে এই ছবিতে।দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা”
ঊষা ছবিগুলো সব ভোরের হোয়াটস্এপে পাঠিয়ে দিলো।তারপর চুপ করে বসে থাকলো।ভোর তখন মাছ বাজারে ছিল।মেসেজ আসার আওয়াজ পেলেও দেখার সাধ্য ছিল না।হাতে ইয়া বড় রুই মাছ ঝুলানো ছিল।সব নিয়ে রিকশায় উঠে ফোন বের করে মেসেজ চেক করে চোখ বড় করে ফেললো সে।এদিক ওদিক তাকিয়ে হাতের পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে ফোনটা আবার রেখে দিলো পকেটে।

-“ঊষা আগেও এরকম দুষ্টুমি করত হবে এই টাইপের ছবি এই প্রথম পাঠালো।আগে বেস্টফ্রেন্ড হিসেবে জ্বালাতে।এখন ওয়াইফ হিসেবে আরও দ্বিগুণ জ্বালাচ্ছে অথচ বাসর রাতে আমাকে প্রায় মেরেই ফেলছিল কেন ওকে আমি বিয়ে করেছি সেটা বলে বলে।”

-“কিরে ঊষা?শুনলাম তুই তোর বেস্টফ্রেন্ডকে বিয়ে করেছিস?”
.
ঊষা জামের ভর্তা কচলাতে কচলাতে বললো”হ্যাঁ আপু ঠিক ধরেছো।”
.
-“তাহলে তো ভালোই।একজন আরেকজনকে ভালো বুঝিস।”
.
-“হ্যাঁ।একদমমমম”

-“ঐ তো এসেছে মনে হয়।দাঁড়া আমি দরজা খুলবো।”
ঐশী ছুটে গেলো দরজা খুলবে বলে।ঊষা তার আগে গিয়ে দরজার কাছে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বললো”ভোর??যা এনেছিস বাহিরে রেখে আবারও দোকানে যা।চাপাতা শেষ”
.
ভোর ব্যাগগুলো রেখে আবারও গেলো।ঐশী মুখ বাঁকিয়ে ব্যাগগুলো ভেতরে এনে বললো”তোর বরকে একটুর জন্য দেখলাম না”
.
-“আরে কত দেখবা আপু।আজ সারাদিন দেখবা।এখন জাম খাও ধরো।

ঐশীর হাতে জাম ধরিয়ে দিয়ে ঊষা হাত ধুয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো ভোরের জন্য।ভোর ওর হাতে চাপাতার প্যাকেট ধরিয়ে ভেতরে ঢুকেছে।ঐশী জামের বাটিটা রেখে বললো”তুমি ভোর?”
.
-“আসসালামু আলাইকুম আপু”
.
-“ওয়ালাইকুম আসসালাম।আমি তোমার বয়সের কিন্তু।
.
-“ঊষার বড় তো।তাহলে আমার ও বড় হবেন সম্পর্কে”

ঐশী ভোরকে দেখেই যাচ্ছে। ঊষা ভোরকে ঠেলতে ঠেলতে বললো”আপু তোমার বাচ্চা কাঁদছে”
.
-“এ্যাহ!!আমার বাচ্চা?আমি তো বিয়েই করিনি!”
.
-“স্বপ্নে দেখছিলাম তোমার বাচ্চা আম্মু আম্মু করে কাঁদছিল।তাই বললাম।”
.
-“তোর এই শয়তানি আর গেলো না।
আসো না ভোর বসো।আমরা গল্প করি।জাম খাবে?”

ভোর কিছু বলার আগেই ঊষা বললো”ও জাম খায় না”
.
-“কেন?”
.
-“না মানে আসলে আমার কাছে কেমন যেন লাগে জাম”
.
-“লবণ মরিচ দিয়ে ভালো মাখানো হয়েছে।খেয়ে দেখতে পারো”
.
ঊষা ভোরের দিকে তাকিয়ে বললো”ভেতরে পোকা আছে।বিরবির করে যে ওরকম।খাবি?চামচ এনে দিব?”
.
ভোর চোখ কপালে তুলে সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো”আমার না ওয়াসরুমে যেতে হবে।আসি”

-“কিরে ঊষা!!কি সুন্দর জাম খেতো।এসব মনে করিয়ে দিলে আর খাওয়া হবে?”

-“আরে ও জাম খায় না।শুধু শুধু কনভিন্স করছিলা।
বসো আমরা মিলে খাই।
—–
ফুফু আর মা ব্যস্ত দুপুরের রান্না নিয়ে।আর ঊষা ব্যস্ত ঐশীর থেকে ভোরকে বাঁচানো নিয়ে।মা শুধু বলেছিল দেখে রাখতে কিন্তু এই ঐশী আপুটা তো ভোরের পিছুই ছাড়ছে না।গা জ্বলে জ্বলে চামড়া উঠে যাওয়ার মতন অবস্থা হয়ে গেছে ঊষার

ভোর এতক্ষণ ধরে ফোনে গেমস খেলছিল।মাঝে মাঝে লক্ষ করছিল ঊষার দিকে।ঊষা তার জরুরি কাজ রেখে কিনা দরজার ফাঁকে চোখ রেখে নখ কামড়াচ্ছে।বিষয়টা ভাববার মতন।যে ঊষা কিনা এ সময়ে বসে বসে এক গাদা চকলেট খেতো সে কিনা এখন ডিটেক্টিভ হয়ে গেলো?
-“কিরে?কি হলো তোর?”

-“কই কি হবে আবার।দরজাটা সুন্দর না?তাই দেখছি”
.
-“তোর কি মনে হয় আমি তোর ঐ ফুফাতো বোনকে দেখে লাট্টু হয়ে যাবো?”
.
-“না সে বিষয়ে ভরসা আছে তোর উপর।তবে ঐশী আপুর উপর একটুও ভরসা নেই।”
.
-“জেলাস ফিল হয়?তোকে ঠিক বুঝি না আমি।আমাকে বিয়ে করার জন্য তোর বাবা মাকে তোর ঘাঁড় ধরতে হয়েছে আর সেই তুই কিনা এখন পসেসিভ হয়ে গেলি!কদিন পর না জানি বাচ্চার আবদার করে বসিস।সেই ভয়ে আছি”

-“দেখ ভোর!ভালোবাসা আর স্বামী স্ত্রীর যে সামাজিক সম্পর্ক সেটা এক না।এমন অনেক কাপল আছে যাদের মধ্যে ভালোবাসা নাই তবে কোলে দুটো বাচ্চা আছে।”
.
-“তো তুই বোঝাতে চাইছিস আমরা জীবনে প্রেম ভালোবাসার কাতারে যাব না কিন্তু কোলে দু তিনটা বাচ্চা থাকবে?
হাহাহাহাহা!!হাসতে হাসতে মরে যেতে ইচ্ছে করছে আমার”
.
-“চুপ থাক।তোর ফ্যামিলি আর আমার ফ্যামিলি যে হারে চাপ দিচ্ছে!আমার মনে হয় চোখে ওড়না বেঁধে বাচ্চার আবেদন করতে হবে তোর কাছে।”

-“তুই চোখে ওড়না বেঁধে সব ভুলে থাকতে চাইলেও আমি পারবো না।আমার দ্বারা অসম্ভব।হ্যাঁ মানলাম অনেক কাপল আছে যাদের একজন আরেকজনের মাঝে বন্ডিং নাই তারপরেও তাদের বাচ্চা আছে কিন্তু আমি সেরকম হতে পারবো না।আমার কাছে ভালোবাসা আর সামাজিক সম্পর্ক একই মাইনে রাখে।”
.
-“তোর প্রেমে পড়া,তোকে ভালোবাসা ইম্পসিবল ব্যাপার”
.
-“সেম আমার কাছেও।সুতরাং বাচ্চার ম্যাটার বাদ দে।”

-“আমি কবে বাচ্চা বাচ্চা করলাম??তোর পরিবার যে কদিন পর আবদার করে বসবে সেটার কথা বলছি আমি।তোর পরিবার তুই সামলাবি।এরপর যদি নিজে চোখে ওড়না বেঁধে এসে বলিস”ঊষা রে আই থিংক আই হ্যাভ টু ডু দিস” তখন আচ্ছা পেটান পেটাবো তোকে।এমন মার মারবো না তোর বাবা এসে বলবে”কে কাকে মারলো”
.
ভোর হালকা কেশে বললো”বাবা এত জলদি এসব বলবেন না।আমার বড় ভাইয়া হয়েছিল বাবা মায়ের বিয়ের ছয় বছর পর”
.
-“সেটা কেন জানিস?আমাকে আন্টি বলেছিল।তোর বাবার নাকি কি সমস্যা ছিল তাই
আচ্ছা তোর কোনো সমস্যা নেই তো?”

ভোর সোজা হয়ে বসে নড়েচড়ে বললো”এদিকে বাচ্চা নিবি না বলে দিলি এখন আবার সমস্যা আছে কিনা জিজ্ঞেস করছিস?এবার তোকে আমি মারবো।”
.
-“ইউরেকা!!পেয়ে গেছি বুদ্ধি।যখন আমাকে তোর ফ্যামিলি বলবে বাবুর মা হতে তখন বলবো তোর সমস্যা আছে।”
.
-“কি!!তোর মাথা ঠিক আছে?”
.
হোয়াটএভার।এই টপিক বাদ
দরজা দেখছিলাম।আমাকে দরজা দেখতে দে।”

সেদিন বিকালে ভোরের বাবা ফোন করে জানালেন সে যেন ঊষাকে নিয়ে ফিরে আসে।তাই ভোর ওকে নিয়ে ফিরে আসলো বাসায়।মেহমান এখনও আগের মতনই আছে।ঊষা সুযোগ পেলেই ভোরের রুমে এসে বসে থাকে।আর মেহমানরা সুযোগ পেলেই ওকে টেনে হিঁচড়ে ড্রয়িং রুমে নিয়ে আসে।ওর অনেক প্রশংসা শুনেছে ভোর মেহমানদের কাছ থেকে
ঊষা নাকি ম্যাচিউর!এটা শুনে ভোর আসার পর থেকে হাসতে হাসতে ওর পেটে খিল ধরে গেছে।ঊষা তাও আবার ম্যাচিউর??ঊষা আর একটা বাচ্চার তফাৎ শুধু বডিতে।বাকি সব আচার আচরণ সেম।

ঊষা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ভোরের কাঁধে মাথা রেখে বললো”আর কতজনকে সালাম দিতে হবে?আমার গলা শুকায় গেছে রে।চল না কোথাও যাই।”
ভোর ওকে টিকেটের কথা বললো।আজ ভোরবেলায় তারা রওনা হবে
কথাটা শুনে ঊষা দাঁত কেলিয়ে সোজা হয়ে বসে গরম গরম চা খেয়ে নিয়েছে।
-“আহ শান্তি।শুধু ঘুরবো আর ঘুরবো।জীবন সুন্দর”
.
ভোর ঘাঁড় ঘুরিয়ে বললো”যখন সিলেট থেকে আবার ফিরে আসবি তখন ও একই সিচুয়েশন থাকবে”
.
-“ঊষা একটু আসবে?তোমায় মা ডাকছে”

বড় ভাবীর আওয়াজ পেয়ে ঊষা ছুটে চলে গেলো সেদিকে।ভোর গ্যালারি ঘেঁটে কিছু ছবি দেখছে
যতগুলো ছবি আছে সবগুলোতে ঊষা আছে।যদি ভোরের একটাও সিঙ্গেল ছবি পাওয়া যায় সেটাতে হয় ঊষার হাত থাকবে নয়ত পা থাকবে নয়ত মাথা থাকবে।ভোর ছবি তোলার সময় সব রকমের ডিস্টার্ব সে করে ওকে।সে এবার ফোন রেখে রুম থেকে বের হলো।ভেবেছিল কাল থেকে অফিস যাবে।কিন্তু হানিমুনে না গেলে বাসার সবাই চেপে ধরবে। সবার আগে ধরবে ঊষা।মন চায় বলে দিই যে ও আমোদ করতে যাচ্ছে।আমার সাথে প্রেম করতে নয়।

ঊষাকে এক গাদা শাড়ী ধরিয়ে দিলেন ভোরের মা।এগুলো নাকি হানিমুনে গিয়ে পরবে সে।ওদিকে ঊষা ঠিক করে রেখেছিল একদিন সাদা জিন্স পরবে,আরেকদিন নীল জিন্স পরবে,আরেকদিন ইয়েলো।কিন্তু শাড়ী?
.
-“কি হলে ঊষা তোমার পছন্দ হয়নি?”
.
বড় ভাবী হেসে বললেন”আরে মা কি যে বলেন না! হানিমুনে কেউ ওসব পরে?সেলোয়ার সুট নয়ত ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরবে সে।”

-“এমনি বললাম
কি পরবে সেটা তোমার ব্যাপার।তবে আজ থেকে এই শাড়ীগুলো তোমার।যত্নে রেখো।আমার শাশুড়ির দেওয়া সব শাড়ী দুই ভাগ করেছি
দুই ছেলের বউকে দেওয়া শেষ।আমার কাজ ও শেষ”
.
ঊষা মাথা নাড়িয়ে হেঁটে চললো।ড্রয়িং রুমের উপর দিয়ে ভোরের রুমে যাওয়ার পথে ওকে দেখে ইশারা করলো এদিকে আসতে।ভোর তখন তার দূর সম্পর্কের আন্টির সাথে কথা বলছিল।পাঁচ মিনিট পর এসে জিজ্ঞেস করলো”কি হয়েছে”
.
-“আমরা যে হানিমুনে যাব।আসলে কি ছবি দেখতে চাইবে কেউ?”

-“চাইবে মানে।বড় ভাইয়া হানিমুন থেকে এসে পর্দায় ভিডিও দেখাইছিল সমুদ্রে দৌড়ানোর।”
.
-“এ্যাহ!কিন্তু আমি যে টপস আর জিন্স পরবো ভেবেছিলাম”
.
-“স্বাভাবিক। তুই তো এসবই পরিস।আচ্ছা একদিন শাড়ী পরিস।তখন ভিডিও করে সেটা সবাইকে দেখাবো”
.
-“ঠিক আছে।ডান।”
——
-“ঘুমোচ্ছিস??এই ভোর??ঘুমোচ্ছিস?”

-“না ঘুমে থেকে আমোদ করছি।তুই এমন কেন রে ঊষা?ঘুম থেকে উঠিয়ে বলিস ঘুমাচ্ছিলাম কিনা।রাতের দুটোর সময় মানুষ কি জেগে থাকবে?আমাকে দেখে তোর জেগে থাকা মানুষ মনে হলো?”
.
-“তুই তো একদম সোজা হয়ে শুয়ে ছিলি তাই ভাবলাম ঘুমাসনি”

-!আমি এমন ভদ্রভাবেই ঘুমাই।তোর মতন না যে মাথা এক জায়গায় পা আরেক জায়গায়।”
.
-“ভোর শুন!”
.
-“কি?”

-“ভোর হতে দেরি নেই।উঠে পড়।রেডি হবি না?বাস ধরতে হবে তো”
.
-“তুই রেডি হ গিয়ে।আমার তেমন সময় লাগে না
সব তো ব্যাগে ভরেই নিছি।আগে বল এত জলদি উঠানোর জন্য তোকে কি শাস্তি দেওয়া যায়?”
.
-“আমাকে আইসক্রিম কিনে দিস”
.
-“এটা শাস্তি?এটা তো তোর আবদার পূরণ করা।দাঁড়া আজ তোকে কাতুকুতু দিব”

-“না না একদম না।খবরদার!”

ভোর বিছানা থেকে নেমে হাতের কব্জি কচলাতে কচলাতে এগিয়ে গেলো।ঊষা বালিশ সামনে ধরে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
.
-“আর জীবনে তোকে ঘুম থেকে তুলবো না সত্যি”
.
ভোর দেয়ালের এক পাশে হাত রেখে বললো”তাহলে তুই ঠিক কর কি শাস্তি দেবো”
.
ঊষা দাঁত কেলিয়ে বললো”আমার চুল টেনে দে।তাও কাতুকুতু দিস না।তুই না ভালো?”
.
ভোর শয়তানি হাসি দিয়ে ওর হাত থেকে বালিশটা কেড়ে নিলো।ঊষা ভয়ে মনে হয় এখনই জ্ঞান হারাবে।ঢোক গিলে বললো”কাতুকুতুর মতন বড় টর্চার আর কিছু হতে পারে না”

ভোর হাসি দিয়ে শুরু করলো কাতুকুতু দেওয়া।ঊষা হাসতে হাসতে ফ্লোরে বসে গেছে।ভোর কাতুকুতু দেওয়া বন্ধ করে ওর মুখ চেপে ধরলো।মাঝরাতে এমন আওয়াজ শুনলে বাকিরা উল্টাপাল্টা ভাববে।হয়ত চোর ভেবে ছুটেও আসতে পারে।দুজনেই ফ্লোরে বসে থাকলো চুপচাপ।ঊষা আড় চোখে তাকালো ভোরের দিকে।ভোর মাথাটা হেলিয়ে দিয়ে আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করছে বসা অবস্থায়।ঊষা ভোরের বুকে হাত দিয়ে কাতুকুতু দেওয়া শুরু করে দিলো এবার।ভোর এত ভয় পেলো।হেসে দিয়ে ঊষার হাতদুটো আটকে ফেললো সে।ঊষা হাসতে হাসতে বলছে”প্রতিশোধ নিয়ে নিলাম”

-“আমার কাতুকুতু বেশি নাই”

-“তাহলে এরকম হাসছিস কেন?আরও দিই দাঁড়া”
.
ঊষা উঠে দাঁড়িয়ে গায়ের জোর দিয়ে আরও বেশি কাতুকুতু দিচ্ছে।ভোর ওর হাতদুটো মুচড়ে ধরে উঠে দাঁড়িয়ে বললো”আমার সাথে পারবি না।”
.
-“হাত ছাড়! নাহলে পরে যখন রেহায় পাবো তখন তোর খবর আছে”
.
-“কি করবি?সিলেটের চা বাগানে বেঁধে রেখে আসবো। আমাকে চেনা আছে তো?”
.
-“আমাকে ছাড়া এক মিনিট থাকতে পারবি তুই?”

-“যা ছেড়ে দিলাম।ঘুমা।এখনও অনেক দেরি আছে ভোর হওয়ার।”
.
কথা শেষ করে ভোর আবারও আগের মতন ভদ্রভাবে শুয়ে পড়েছে।ঊষা ওর পাশে বর্ডার বানিয়ে এদিক ওদিক ফিরচে।নড়াচড়া করছে।ভোর মুখ ঘুরিয়ে বললো”আমাকে দেখতে যখন এতই মন চাচ্ছে তো বালিশ সরা।আমি কি তোকে টাচ করতে যাব নাকি?”
.
ঊষা দুইটা বালিশ সরিয়ে বললো”ঘুম আসে না কি করি বলতো?”

-“ডাল চাল একসাথে করে বেছে নে বসে বসে।”

ঊষা ভোরের ফোনটা নিয়ে গেমস খেলা শুরু করে দিয়েছে।ভোর ওর গেমস খেলা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছে
—–
-“ঊষা??দেখ সকাল হয়ে গেছে”
.
-“না।ঘুমোতে দে”
.
-“অলরেডি ভোর পাঁচটা বাজে।উঠ নাহলে তোকে রেখে চলে যাব আমি।”
.
-“হাত ধরে টান দে।উঠার শক্তি নাই আমার।”
.
ভোর টেনে উঠালো ওকে।ব্যাগ দুটো হাতে নিয়ে দেখলো ঊষা সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছে আবার।অনেক জোর করে ওকে রুম থেকে বের করিয়ে আনলো সে
একটা ক্যাব ডেকে স্টেশন অবদি এসে বাস উঠলো তারা।ওমা!! ঊষার ঘুম গায়েব।এবার আরেক জ্বালাতন করছে তা হলো খাবার নিয়ে।ভোর ওর হাতে ব্যাগ রেখে গেলো চিপস কিনতে।দোকানদার চিপস চকলেট প্যাকেটে ঢুকিয়ে বললো”এই বয়সে বাচ্চার বাপ হয়ে গেলেন!”

হয়নি বলা পর্ব ১+২

ভোর ভ্রু কুঁচকে বাসের দিকে তাকিয়ে বললো”আসলে আমার ওয়াইফ এখনও বাচ্চা।আমাদের বাচ্চার কথা পরে ভাবনা হবে”
.
প্যাকেটটা এনে ঊষার হাতে ধরিয়ে দিয়ে শান্তিতে বসলো সে।ঊষা সাউন্ড করে চিপস খাচ্ছে আর বাহিরে দেখছে জানালা দিয়ে।
চিপস রেখে চোখ বড় করে সে বললো”ইস রে ভুলে গেলাম।”
.
-“কি ভুললি।জলদি বল।বাস ছাড়েনি এখনও”
.
-“এত বড় ভুল আমাকে দিয়ে হয়ে গেলো রে।ইশ।এখন কি হবে।আম্মুউউউ”

-“আগে বলবি তো যে কি আনিস নি?”

-“মা আমাকে একটা বোয়াম দিয়েছিল চাপাতা আনতে।সেটা নিতে ভুলে গেছি।যদিও আরএফএলের একটা মিনি সাইজের বালতি নিছি চাপাতা আনার জন্য তাও ঐ বোয়ামটা আনলে বুয়াকেও দিতে পারতাম।ধুর কি ভুল হলো”
.
-“কিহ?আর ইউ সিরিয়াস?তাই তো বলি এরকম ব্যাগ ফুলে আছে কেন।আমি আর কত জানবো তোর ব্যাপারে??’
.
-“যত দিন গড়াবে ততই আমাকে নতুন ভাবে চিনবি।আমাকে চেনার দিন তোর শেষ হবে না”

-“ভালো হয়েছে ভুলে গেছিস।নাহলে ঐ খালি বোয়াম নিয়ে আমার জার্নি করতে হতো ব্যাগে তো বিন্দু মাত্র জায়গা নেই।তোকে ওরা চাপাতা এত আনতে দেবে?”
.
-“না দিলে অনেক অনেক ব্ল্যাকমেল করবো”

-“কিরকম ব্ল্যাকমেল?”
.
ঊষা মুখ ফিরিয়ে ভোরের দিকে চেয়ে বললো”ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল”
.
-“আহারে।আর ওরা তোর ইমোশনাল লুক দেখে বাগানের চাপাতা দিয়ে দেবে?তাও এক বালতি?”

হয়নি বলা পর্ব ৫+৬