হয়নি বলা পর্ব ৭+৮

হয়নি বলা পর্ব ৭+৮
Writer-Afnan Lara

-“আমি ভাবছি কি করে ওদের দুজনকে একসাথে মিলেমিশে থাকতে দেখবো।জানোই তো শরীর বড্ড খারাপ থাকে।
কদিন বা বাঁচবো।মরে যাওয়ার আগে ছোট ছেলেটার জীবনটাকে সুন্দর ভাবে গুছানো দেখে যেতে চাই।”
.
-“মা আপনি তো অনেক বুঝিয়েছেন ওদের
তাও তো ওরা বুঝছেই না যে তারা একে অপরকে ভালোবাসে।আচ্ছা আমি একটা বুদ্ধি দেবো?”

-“বলো শুনি”
.
-“ওদের এক মাসের জন্য আলাদা করে দিন।একেবারে কন্ট্যাক্ট অফ।দেখবেন একজন আরেকজনের আগে এসে ভালোবাসি বলবে”
.
-“সেটা কি করে সম্ভব বলো?”
.
-“কাল পরশুর দিকে আপনার বড় ছেলে আর ভোর ভাই তো বিদেশ চলে যাবে।বাবাকে বলে তাদের বেশ অনেকদিন থাকার ব্যবস্থা করে দিবেন।তাহলেই তো হয়”
.
-“ঠিক বলছো।দেখি শেষ চেষ্টা করে।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মা নাস্তা সেরে চলে গেলেন বাবার সাথে কথা বলতে।ওদিকে ভোর আর ঊষা ছোটাছুটি করছে বালিশ নিয়ে।মারামারি শেষ করে আবারও ফোন বের করে একজন আরেকজনের পোস্টে রিয়েক্টের বন্য শুরু করে দিয়েছে।হঠাৎ দরজায় নক হওয়ায় দুজনে আলাদা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো
বাবা এসে বলে গেলেন ভোরকে অনেকদিনের জন্য ওর ভাইয়ার সাথে বিদেশ থাকতে হবে।কাল রওনা হবে।কালকেই কাজটা শুরু হবে।আর ডি লে হবে না
.
ভোরের মন খারাপ হয়ে গেলো।সাথে ঊষার ও।ঊষা হাত থেকে ফোন রেখে চুপ করে আছে।ভোর তার ব্যাগটা আলমারির উপর থেকে নামিয়ে বললো,”তাহলে তো ভালোই।আমাকে ছাড়া শান্তিতে থাকতে পারবি”

-“হুম।কেউ জ্বালাবে না।ভাবতেই ভাল্লাগে”
.
-“আমারও ভাল্লাগবে।কেউ মারামারি করতে আসবে না।”
.
কথা শেষ করে ভোর ব্যাগটা গুছিয়ে বের হলো রুম থেকে।ঊষা ওর ব্যাগের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।ভাবী এসে বললেন,”আমার তো অভ্যাস আছে।কিন্তু নতুন হিসেবে তোমার তো খারাপ লাগছে তাই না?”
.
-“না মানে….”
.
-“ওখানে নাকি সুন্দর সুন্দর মেয়ে আছে।আমাকে তোমার ভাইয়া বলে।ওদের পোশাক ও নাকি অনেক সুন্দর।গায়ের রঙ ফর্সা”

ঊষা ভ্রু কুঁচকে বললো”তো?”
.
-“তো দিনে ২০বার ফোন দিয়ে ভোরের ভাবনা তোমার উপরই রেখো।”
.
ভাবীর ডাক পড়ায়য় তিনি চলে গেলেন।ভালো করে কথা বলতে পারলেন না।ঊষা তার একটা ছবি খুঁজে বের করে ছবিটা ফ্রেম সহ ভোরের ব্যাগের জামাকাপড়ের ভেতর ঢুকিয়ে দিতে গিয়ে দেখলো আগে থেকেই ওর একটা ছবি রাখা সেখানে।ভোরের এমন কাজে ঊষা একেবারে অবাক হয়ে গেছে।ভোর কিনা ওর ছবি নিয়ে বিদেশ যাবে।এটা নিয়ে আজ হাতেনাতে ধরতে হবে ওকে।ভোর সেসময়ে রুমে ঢুকলো বিসকুট খেতে খেতে।ঊষা কোমড়ে হাত দিয়ে ওর সামনে এসে বললো”আমার ছবি তোর জামাকাপড়ের ব্যাগে কি করে?”

ভোর চোখ বড় করে থতমত খেয়ে বললো”ঐ আসলে আমার ছবি নিতে গিয়ে ভুলে তোর ছবি নিয়ে ফেলেছি।দ্যাটস্ ইট।”
.
-“ওহ!আমিও তাই ভাবি আমার ছবি নিয়ে তুই বিদেশ যাবি কেন”
.
-“হ্যাঁ”
.
-“তাহলে আমি তোর ছবি রেখে দিই তোর ব্যাগে আর আমার ছবিটা আমার কাছে”
.
ভোর ঊষার হাত থেকে ছবিটা নিয়ে বললো,”দে আমি তোর ছবি রেখে দিব জায়গা মতন।তোকে এখন মা ডাকছে”
.
-“ওহ,আগে বলবি না।”

ঊষা ছুটে চলে গেলো।ভোর ঊষার ছবিটা আবারও ব্যাগে ঢুকিয়ে রেখে মুচকি হাসলো।কাল সকালে চলে যাবে ভোর।ঊষা রুমে এসে ব্যাগ খুলতে গেলো আবার দেখবে বলে ছবিটা আছে কিনা। কিন্তু ভোর ততক্ষণে লক করে ফেলেছে।
.
-“কিরে?লক করলি কেন?আচ্ছা আমার ছবিটা কই রাখলি?”
.
ভোর ফোন রেখে বললো,”তোর ছবি তো আলমারিতে বেগুনি রঙের শাড়ীটার নিচে রেখে দিছি।পরে দেখে নিস এখন আয় তো এই পোস্টটা দেখবি”
.
ঊষা কপাল কুঁচকে এগিয়ে এসে বললো,”দেখি কিসের পোস্ট? ”

-“স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন।”
.
-“এসব কি?আমি তোরে খুন করবো?আন্দাজে!”
.
-“না দেখালাম আর কি।যে হারে মারামারি করিস তো ভাবলাম আমাকেও মেরে ফেলতে পারিস”
.
-“ওসব আর হবে না আগামী এক মাসেও”
.
মায়ের কথা শুনে দুজনে দরজার দিকে তাকালো
মা ভেতরে আসতে আসতে বললেন,”তোর বাবাকে বলতে শুনলাম এক মাসের বেশি সময় থাকতে হবে তোকে ওখানে”
.
ভোর মুখটা ফ্যাকাসে করে বললো,”ওহ!”

ঊষা রোবটের মতন দাঁড়িয়ে আছে।মা ভোরের জন্য পিঠার একা বক্স এনে রেখে গেলেন যাতে ও ব্যাগে ভরে নেয়।আরও কত জিনিসপাতি রেডি করছেন তিনি।ঊষাকে বুঝাতে চান এক মাস অনেক বেশি একটা সময়।সময় আছে ভেবে নাও নাহলে পস্তাবে।কিন্তু ঊষা তো ঊষাই।বেকুবের মতন মাকে হেল্প করে যাচ্ছে ভোরের জন্য সব রেডি করতে।মা অবশেষে বুঝলেন ভোর ওকে ছেড়ে গেলেই ও ইম্পর্টেন্সটা বুঝতে পারবে
রাতে ডিনার শেষ করে ঊষা যখন রুমে আসলো ভোরকে দেখলো ও বারান্দার ফুলগাছগুলোকে ঠিক করছে।
ঊষা সেখানে দাঁড়িয়ে বললো,”তোর ফুলগাছ গুলো আমি ভালোমতন দেখাশুনা করবো।এসে দেখবি ফুল আর ফুল”
.
ভোর ঘাঁড় ঘুরিয়ে বললো,”নিজের যত্ন ও নিস।তোর তো বেশ অর্ধেক যত্ন আমি নিই।এখন যখন আমি থাকবো না।তোকে তো তোর পুরো খেয়ালটা রাখতে হবে।”

-“আমার জন্য এত দরদ?”
.
-“জ্বী না।তুই নিজের খেয়াল না রাখলে সিক হয়ে পড়বি তখন আমার গাছের যত্ন কে নেবে?”
.
-“ওহ হ্যাঁ।তুই ও নিজের খেয়াল রাখিস।তোর তো বছরে একবার জ্বর হয়।আর যখন হয় তখন দশজন মিলে সেবা করা লাগে তোর।”
.
-“সেটা ঠিক।হাওয়া বদলে এমনি এমনি জ্বর আসে।ওটা সিম্পল ব্যাপার।”
.
-“ভালো।দিনে দুই তিনবার ভিডিও কল দিবি তো?নাকি ওখানে গিয়ে আমাকে ভুলে যাবি?”
ভোর ঊষার নাক টেনে দিয়ে বললো,”যদি ভুলেও যাই তোর কি তাতে?কে হোস আমার?”
.
-“বেস্টফ্রেন্ড”
.
-“বিয়ে হয়ে গেলে আর কিসের বেস্টফ্রেন্ড?”
.
ঊষা কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,”আমি তো তোর দুটোই হই।
বেস্টফ্রেন্ড আর বউ ও।”
.
-“হুহ!আগে ফ্রেন্ড ছিলি এই আর কি।
আর কি চরিত্র তোর আমার লাইফে?”

ঊষা রেগে মেগে চলে আসলো বারান্দা থেকে।ভোরের ও খারাপ লাগলো।কিন্তু কি করবে এত এত প্রশ্নের জবাব জানতে চাওয়ার পরেও সে বারবার মুখ ফিরিয়ে নেয় এটাই তার দোষ।
সেই রাতে আর তাদের কথা হয়নি।পরেরদিন সকাল সকাল ভোর বেরিয়ে গেলো তার ভাইয়ার সাথে।ঊষা দরজার কিনারায় দাঁড়িয়ে ওর চলে যাওয়া দেখলো।সারাদিন খুশি খুশি সব কাজ করে গেছে ঊষা।বারবার বলেছে ভোরকে সে মিস করছে না।একটুও না।এই তো বেশ ভালো আছে সে।আর কি চাই।

যখন রাত হলো তখন তার মনে হলো একাকিত্ব তাকে চেপে ধরেছে।শূন্য রুমটা দেখে কান্না আসছে তার।ভোরকে প্রচণ্ড রকম ভাবে মিস করতে লাগলো সে।ফোনের দিকে তাকিয়ে চট করে কল করলো ভোরকে।আন রিচেবল আসে।
-“ও হ্যাঁ বিদেশে তো আর এই সিমে কল ঢুকবে না।
ভোর মনে হয় এখনও বিদেশে পৌঁছায়নি।পৌঁছে তো কল দেওয়ার কথা।
কিন্তু এতক্ষণে তো পৌঁছে যাওয়ার কথা।তাহলে?”
বালিশ বুকে ধরে ফেসবুকে ঢুকলো সে।ভোর একটিভ নেই বলে ফেসবুকের নিউজফিড কিছুক্ষণ স্ক্রল করে ফেসবুক থেকেও বেরিয়ে আসলো সে।
-“সবে আটটা বাজে।ঘুমাতে যাব বারোটায়।এতক্ষণ কি করি?ভাবী তো পিন্টুকে পড়াচ্ছে।বাকিরা যে যার রুমে।বাবা বাসায়।নাহলে মায়ের কাছে যেতাম।ভোরের ছোটবোনটাও পড়ছে।এত একা থাকা যায়?বাসা ভর্তি মানুষ থাকার পরেও আমায় একা বসে থাকতে হচ্ছে।”

ফোন বাজছে।ঊষা বারান্দা থেকে ছুটে আসলো রিসিভ করতে।
-“ভোরের কল এসেছে মনে হয়।বিদেশি নাম্বার।
হ্যালো।ভোর?”
.
-“হুম”
.
-“কি হলো?টায়ার্ড?”
.
-“অনেকখানি।জাস্ট বলতে ফোন করলাম যে আমি পৌঁছে গেছি।বাই”
.
-“আরেহ শুন তো।যাঃ কেটে দিলো।কোথায় ভাবলাম ভিডিও কল দিব।কথা বলবো রাত বারোটা পর্যন্ত।ধুর ভাল্লাগে না।কিচ্ছু ভাল্লাগে না।”

ভোর ঘুমিয়ে পড়েছে।ঊষা সারারুমে পায়চারি করতে করতে শেষে সোফাতেই শুয়ে পড়েছে।পরেরদিন সকাল সকাল উঠে ভোরকে ফোন করলো আবার।ভোর কেটে দিয়ে মেসেজ দিলো সে ক্লাইন্টের সামনে।
ঊষা ফোন ছুঁড়ে মেরে বসে থাকলো বিছানায় উপর।ভোরের মা উঁকি দিয়ে ঊষাকে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে হাসলেন।তারপর আবার চলে গেলেন।তিনি বুঝতে পেরেছেন তার প্ল্যান কাজ হচ্ছে।

বারান্দায় যাওয়ার দরজাটার উপর একটা ডোরবেল আটকানো।বাতাসের কারণে সেটা দুলছে আর আওয়াজ করছে।ঊষা ডোরবেলটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এই ডোরবেলটা সে ভোরকে গিফট করেছিল এক বছর আগে।কাছে এসে ডোরবেলটা ছুঁয়ে দেখলো সে।এবার ফুলগাছগুলো ওর নজরে আসায় পানি এনে সেগুলোতে পানি দেওয়া শুরু করে দিলো সে।ভোর গাছ প্রেমি।গাছগুলোর পাতার চাকচিক্য দেখেই বুঝা যায় সে অনেক যত্ন করতো এগুলোর।এক এক করে সবগুলোতে পানি দিয়ে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো সবে দশ মিনিট হয়েছে।
-“কি আজব!দিন যাচ্ছেই না।গোটা একটা মাস কি করে থাকবো আমি?”
.
দুপুর হয়ে গেছে।মনটা খারাপ করে দুপুরের খাবারটা সেরে ঊষা ফোন নিয়ে ভোরকে কল করলো
ভোর এবার রিসিভ করেছে

-“তোর কি আমার কথা একবারও মনে পড়ে না?আমার কষ্ট হয় না?জানিস কতক্ষণ ধরে তোর কলের অপেক্ষাই ছিলাম?একবার তো ফোন ও করিস না।”
.
-“সরি!মাত্র হোটেলে আসলাম।গায়ের শার্টটাও খুলিনি।বাই দ্যা ওয়ে কষ্ট লাগে কেন?আমি নেই বলে তোর তো আরও খুশি হওয়ার কথা।”
.
-“ভিডিও কল দিবি নাকি নাম্বার ব্লক লিস্টে ফেলবো?”
.
-“আচ্ছা দিচ্ছি বাট আমায় তো চেঞ্জ করতে হবে।খাওয়ার ব্রেকে আসছি।খেয়ে আবার যেতে হবে।ভাইয়া পাশের রুমে”
.
-“ফোন রেখে যা।আমি তোর রুম দেখবো।”
.
ভোর ফোনটা বালিশের সাথে রেখে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।ঊষা ওর রুমটা দেখছে চোখবড় করে।ভোর ফ্রেশ হয়ে এসে ফোনের সামনে বসলো।ঊষার চোখমুখ দেখে অবাক হলো সে তারপর জিজ্ঞেস করলো যে কি হয়েছে।
.
-“কি হবে?”

-“তোর চোখ মুখ এমন দেখায় কেন?ঠিকমত খাসনি?নাকি ভ্যা ভ্যা করে শুধু কাঁদতেই ছিলি?”
.
-“কে বললো।তুই যাওয়ায় বেশি ঘুম আসলো শান্তিতে।তাই ঘুমিয়েছি মনমত।”
.
-“তাই নাকি।রাখি তাহলে।আরও ঘুমা।আমি খেয়ে কাজে যাব”
কথাটা বলে ভোর কল কেটে দিলো।মূহুর্তেই ঊষার মন আরও খারাপ হয়ে গেছে।ভোরের টেবিল থেকে কিছু ম্যাগাজিন বের করে ফ্লোরে বসে পড়ায় মন দিলো সে।পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়লো ওখানেই।রাত এগারোটার দিকে ভোর কল করলো ওকে।রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ভোর বকাবকি শুরু করে দিয়েছে।কারণ ওকে নাকি বাসার সবাই খাওয়ার জন্য দুইশবার ডেকে গেছে তাও সে খেতে আসেনি
ফ্লোর থেকে উঠে বিছানায় বসে ঊষা বললো,”ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ম্যাগাজিন পড়তে পড়তে।হঠাৎ ফোন করলি।সব ঠিক আছে তো?”

-“তুই ঠিক আছিস তো?”
.
-“হ্যাঁ।একদম ঠিক।কবে আসবি?”
.
-“দুইদিন ও হলো না এখনও।এক মাস হতে অনেক দেরি।”
.
-“আমি কাল বাবার বাসায় যাব।এখানে একা একা লাগে।যে যার মতন ব্যস্ত।”
.
-“ঠিকমত কল রিসিভ করলেই হবে।আচ্ছা যাস।ভিডিও কল দেবো?”
.
ঊষা মুচকি হেসে সাথে সাথে ভিডিও কল দিলো।দুজনে দুই দেশে থেকে একজন আরেকজনকে দেখছে।ঊষা এক দৃষ্টিতে ভোরের দিকে তাকিয়ে আছে।ভোর ও চেয়েছিল এতক্ষণ।পরে কি যেন ভেবে চোখ নামিয়ে নিলো

-“চোখে চোখ রাখতে এমন মেয়েদের মতন লজ্জা পাচ্ছিস কেন?”
.
-“কিসের লজ্জা?চোখে কি যেন পড়ছিল তাই চোখ নামিয়ে নিলাম।”
.
ঊষা মুচকি হেসে চেয়ে রইলো।ভোর জিভ দিয়ে ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে হালকা হেসে বললো”ভিডিও কলেও ভালো লাগছে তোকে ”
.
-“বাব্বাহ!ভোর কিনা আমার প্রশংসা করছে!ভাবা যায়?তা হঠাৎ আমায় ভালো লাগলো?”
.
-“কেন?ভালো লাগতে পারে না?আমায় কেমন লাগছে সেটাও তো বললি না”
.
-“তোকে বাঁদরের মতন লাগে”

ভোর বালিশ নিলো মারবে বলে পরে মাথায় আসলো তারা অনেকদূরে এখন।তাই মন খারাপ করে বালিশটা রেখে দিয়ে বললো”ফ্রেন্ডশিপের পর থেকে এই প্রথম আমরা এতদূরে।আগে কখনও এরকম সিচুয়েশন ফেস করতে হয়নি তাই না?”
.
-“হুম।কিন্তু তুই তো বলেছিলি বিয়ে না হলে বিদেশে ঘুরতে যেতি।তখন কি হতো?”
.
-“এখন যেমন ভাবে কাটাচ্ছি।মনে হয় শূন্য শূন্য লাগে সব।”
.
-“আমারও।”
কথাটা বলে ঊষা ফোনের স্ক্রিনে হাত রাখলো।ভোর ও রাখলো।ঊষা আস্তে করে বললো”জলদি আসতে পারবি না?”
.
ভোর শুনলো না।চুপ করে থেকে কিছুক্ষণ পর বললো”আচ্ছা রাখি।পরে কথা হবে”

ঊষা মাথা নাড়িয়ে কল কেটে দিলো।
ভোর হেলান দিয়ে শুয়ে বিছানায় ওর পাশের দিকটায় তাকিয়ে আছে।ঊষাকে সে কতটা মিস করে তা বলে বুঝাতে পারে না।
-“মন চাইছে ছুটে চলে যাই ওর কাছে।কেন এত টান?আমি সিওর যদি বলি ভালোবাসি তাহলে চড় মেরে বসবে আর নয়ত হেসে উড়িয়ে দেবে।নিজেও বলবে না আমাকেও বলার সুযোগ -সাহস কোনোটাই দেবে না।”
.
ভোরের শোয়ার জায়গাটায় হাত বুলিয়ে ঊষা গেলো আলমারির কাছে।ভোরের একটা শার্ট নিয়ে সেটা পরে পুরো রুমে হাঁটাচলা করলো কিছুক্ষন।জীবনে এরকম ভাবে কখনও কাউকে সে মিস করেনি।করবেই বা কি করে।ভোর তো এ প্রথমবার ওর থেকে দূরে গেছে।এতদিন তো কাছে কাছে ছিল।প্রতিদিন দেখা হতো ওর সাথে।

ঊষা বালিশে মাথা রেখে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো ভোরের ভিডিও কল আসছে আবারও।দেরি না করে রিসিভ করলো সে।মনে ছিল না যে তার গায়ে ভোরের শার্ট।ভোর কাগজপত্রে সাইন করতে করতে বললো,”একা একা ভালো লাগছিল না বলে আবার ফোন দিলাম।কথা বলবি নাকি ঘুমাবি?”
কথা শেষ করে ঊষার দিকে তাকালো সে।ঊষা চুপ করে ওকে দেখছে।ওর গায়ের শার্টটা চিনতে পেরে ভোর মুচকি হাসলো কিন্তু কিছু বললো না।
-“বললে হয়ত খুলে ফেলবে তার চেয়ে না বলাই ভালো।”
ঊষা মাথার নিচে হাত ভাঁজ করে রেখে বললো,”চলে আয় না।কাজ কি বেশি জরুরি?”

-“হ্যাঁ।আমার হাতে কিছুই নেই।মিস করছেন নাকি?”
.
-“হুহ!একটুও না।আন্টি মিস করে তো তাই বললাম জলদি আয়।”
.
-“ভালোবাসিস আমায়?”
.
ঊষা চোখ নামিয়ে ফেলে বললো,”জানি না”
.
-‘জানতে হবে না।মুড়ি খা।বাই।আমার ঘুম আসে আর হ্যাঁ আমার শার্টটা খুলে রেখে দে।”

ঊষা চটজলদি উঠে বসে গায়ের দিকে তাকিয়ে চমকে গেছে।ভোর ততক্ষণে কল কেটে দিয়েছিল।নিজের মাথায় নিজে চড় মেরে শার্টটা খাঁমছে ধরে চুপ পরে আছে ঊষা।
পরেরদিন সকালের নাস্তা শেষ করে জামাকাপড় গুছিয়ে ঊষা চলে আসলো বাপের বাড়ি।ওমা এখানে এসেও বোর হচ্ছে সে।বাবা অফিসে,ভাইয়ারা অফিসে,মা রান্না নিয়ে ব্যস্ত।
-“কেমন লাগে এবার?”
ব্যাগপত্র এক পাশে রেখে বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে সে।
ভোরের কাজ আরও বেড়ে যাওয়ায় আজ সারাদিনে সে ফোন একবারও করেনি।ঊষা ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে এবার।উদ্দেশ্য এয়ারপোর্ট।সেখানে এসে গাপটি মেরে বসে থাকলো।বাবা মাকে বলে এসেছে সে ভোরদের বাসায় যাচ্ছে তাই তারা আর ফোন করেনি।ভোর রাতের এগারোটার সময় কল করলো ওকে।রিসিভ করেই ঊষা বললো, সে এয়ারপোর্টে
.
-“কিহ?কেন?”
.
-“কোথাও ভাল্লাগে না আমার।হয় তুই ফিরে আসবি নাহয় আমি এখন তোর কাছে চলে আসবো।”
.
-“তোর তো পাসপোর্ট নেই।আসবি কি করে?পাসপোর্ট বানাতেও তো কত ভেজাল আর সময় লাগবে।যা বাসায় ফিরে যা আমি দেখছি কি করা য়ায়”
.
-“তুই আসবি না?”

-“এত জলদি আসা সম্ভব না।বোঝার চেষ্টা কর।এত রাতে বাহিরে থাকা সেফ না।প্লিস বাসায় ফিরে যা। শাকিল ভাইয়াকে কল করে বলছি তোকে যেন নিয়ে যায়।ওয়েট কল করছি”
.
-“একদম না।তুই আসবি নয়ত আমি এখন পাসপোর্ট ছাড়াই বিদেশ চলে আসবো”
.
-“বাচ্চামি করিস না ঊষা”
.
ঊষা কল কেটে দিলো।ভোর দেরি না করে ঊষার বড় ভাইয়া শাকিলকে ফোন করে জানালো সে যেন ওকে এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে যায়।শাকিল যতক্ষনে এয়ারপোর্ট পৌঁছালো ততক্ষণে ঊষা সেখান থেকে চলেও গেছে।কোথায় গেছে কেউ জানে না।ভোরদের বাসায় এসে দেখলো সবাই মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।ঊষা মুখটা গোমড়া করে ভোরের রুমের দিকে যেতে যেতে বললো,”আর কোথাও যাব না”
এরপর ফোন নিয়ে বাবাকে কল করে জানিয়ে দিলো সে বাসায় ফিরেছে।ভোর অনেকবার কল করেছে তাও সে ধরেনি।ফোনটা অফ করে রেখে দিয়েছে শেষে।দুইটা ঘুমের ঔষুধ খেয়ে কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে পড়লো।
পরেরদিন দুপুর অবদি ভোরের মা ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে ওর কাছে এসে বসে ভোরকে ফোন করলেন।জানালেন যে ঊষা কাল রাত থেকে কিছু খায়নি।ঘুম থেকেও উঠছে না।

ভোর জেদ ধরে আর কল করলো না ওকে।ঊষা বিকেলের দিকে উঠে দুবার বমি করে এখন আধমরা হয়ে শুয়ে আছে বিছানায়।ওর অসুস্থতার খবর পেয়ে ওর মা আর ছোট ভাই এসেছে ওকে দেখতে।
ভোর রাগ করে থাকলো পাক্কা একদিন।এরপর ফোন করলো ঊষাকে।তার ফোন বন্ধ দেখে কল দিলো মাকে।মা জানালো ঊষার শরীর খারাপ।ঔষুধ খেতে হলে মুখে কিছু দিতে হবে কিন্তু সে কিছুই খাচ্ছে না।
-“অনেক হয়েছে বোঝাপড়া।ভালোই ভালোই দুজনকে এক করতে এত কিছু করলাম কিন্তু কিছুই হলো না।এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই তোদের দুটের এই হাল?জলদি চলে আয় এখানে।তোর ভাইয়া সব সামলাবে।”
পরেরদিন একটা নতুন সকাল শুরু হলো।দূর্বল শরীর নিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে রেখেছিল ঊষা।শরীরের চেয়েও মন বেশি খারাপ।এতদিন তো দূরে থেকে কথা হতো আর আজ দুদিন ধরে কথাটাও হয়নি।দুপক্ষের রাগের কারণে এমনটা হলো।চোখ একবার খুলে ডোরবেলটা একবার দেখে আবারও চোখ বন্ধ করে ফেললো সে।রুমের দরজা খোলার আওয়াজ কানে এসে লেগেছে।
আস্তে করে ঊষা বললো”ভাবী আমি নিজে গিয়ে খেয়ে নিবো।এখন বাদ দাও”

দরজাটা খুলে এবার আটকানোর আওয়াজ আসলো কানে।ঊষা ভাবলো ভাবী চলে গেছে।সে বিছানা থেকে নেমে বারান্দাতে এসে গ্রিল ধরে চুপ করে রইলো।বড় করে শ্বাস নিয়ে চোখ খুলে গ্রিল থেকে হাত সরিয়ে রুমের দিকে আসতে যেতেই তার মনে হলো শরীরের ভার ধরে রাখার শক্তি তার মধ্যে নেই।মূহুর্তেই নিচে পড়ে যেতে লাগলো সে।ভোর আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে ফেলেছে ওকে ঠিকসময়ে।ঊষা ভাবলো সে স্বপ্ন দেখছে।মাথা উঁচু করে ভোরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে।এরপর ভোরের মুখটা দুহাত দিয়ে ধরে বললো”কেন এসেছিস স্বপ্নে?বাস্তবে আসতে পারিস না?দেখে যেতে পারিস না তোর ঊষা কেমন আছে?”
.
ভোর ঊষাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের দিকে চললো।ঊষা ওর শার্টের বোতমগুলোকে মুড়িয়ে ধরে সেখানে মাথাটা রাখলো।ভোর ওকে নামাতে নিতেই ঊষা মাথাটা শার্টের সাথে ঘষে বললো”স্বপ্ন হলেও ঠিক আছে চলবে।এভাবেই থাক না।ভালো লাগছে।তোর গায়ের গন্ধটা নিতে দে।কতদিন এভাবে স্বপ্নে পাই না তোকে”
.
ভোর ওকে কোলে নিয়েই বসে থাকলো।ঊষা দুমিনিটের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছিল।চোখ খুলে আবারও ভোরের কোলে নিজেকে দেখে এবার তার বোঝা হয়ে গেলো যে এটা তাহলে স্বপ্ন নয় বরং সত্যি।ওর কোল থেকে সাথে সাথে নামতে যেতেই ভোর ধরে ফেললো ওকে।
-“থাক”

-“ভোর তুই সত্যি এসেছিস?আমি ভাবলাম স্বপ্ন দেখছি।”
.
ভোর ঊষার মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করিয়ে বললো”তোর কারণে এক মাসের কাজ মাঝ পথে ফেলে দেশে ফিরতে হয়েছে।এর শোধ তোকে দিয়েই উঠাবো”
.
ঊষা ঢোক গিলে বললো”কি করবি তুই আমার সাথে?”
.
-“তোকে ঝাপটে ধরে….”
.
-“ঝাপটে ধরে?”
.
-“ভিডিও কলের সামনে বসিয়ে দেবো।ক্লাইন্টদের সামনে প্রোডাক্ট নিয়ে আলোচনা করবি।”
কথাটা বলে ভোর ঊষাকে বিছানায় রেখে দিয়ে হাতের কব্জি চাপতে চাপতে বললো”দুদিন না খেলে তোর ভার কমে যাওয়ার কথা।তারপরেও কি ভারী লাগছে তোকে।আমার হাত শেষ একেবারে”

-“তোকে কে বলেছিল আমায় কোলে নিতে?”
.
ঊষা বিছানা থেকে নেমে এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো”সত্যি তো এটা?নাকি সুপার ডুপার স্বপ্ন দেখছি”
.
কথাটা বলে ঊষা ভোরকে জড়িয়ে ধরলো।মুচকি হেসে মুখটা ওর বুকে লুকিয়ে বললো”এখন শান্তি।আর কখনও যাবি না।গেলে আমাকে নিয়ে যাবি।মনে হয় মরেই যাচ্ছিলাম”
.
-“আমিও।থাকতে পারলাম না তোকে ছাড়া।”
.
ঊষা মাথা তুলে বললো”কিছু বললি?”

-“নাহ।চল ব্রেকফাস্ট করবি আমার সঙ্গে।দুদিন ধরে অনেক ছাড় দিয়েছিস খাবারে।আর না।
শরীরের কি হাল করেছেন তিনি।কদম রাখলেই ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যাচ্ছেন।আমি না আসলে তো এরপরে হসপিটালে ভর্তি করাতে হতো তোকে।চল আমার হাত ধরে।সবার সামনে তো আর কোলে করে নিয়ে যেতে পারি না।”
.
ঊষা ভোরের হাত জড়িয়ে ধরে ওর সাথে টেবিল অবদি আসলো।বাবা মা খাবার খাচ্ছিলেন তখন।ঊষাকে খেতে আসতে দেখায় খুশি হলেন তারা।বাবার খাওয়া শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি উঠে চলে গেছেন।মা ওদের একা রাখতে নিজের প্লেট নিয়ে চলে গেলেন অন্যদিকে।ভোর নিজের হাতে প্লেট সাজিয়ে ঊষাকে খাইয়ে দিচ্ছে।ঊষা ভোরের বামহাতটা চেপে ধরে বসে আছে।ভোর ওকে খাবারটা খাইয়ে দিয়ে নিজে খাচ্ছে এখন।
ঊষা পাঁচ মিনিট আগেই উঠে চলে গেছে রুমে।ভোর খাওয়া শেষ করে মায়ের সাথে কিছু কথা বলে রুমে এসে দেখলো ঊষা একটা শাড়ী পরে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কালো ব্লাউজের সাথে লাল জর্জেটের শাড়ী।বেশ লাগছে।চুলগুলোকে এলোমেলো করে ছেড়ে দিয়েছে।ভোর ব্রু কুঁচকে বললো”তোর মাথা ঠিক আছে তো?”

ঊষা শাড়ীর আঁচল ঠিক করে বললো”কেন?তোর ভাল্লাগেনি?”
.
-“লেগেছে।ওহ আচ্ছা আমার জন্যে এসব?আমাকে ইম্প্রেস করতে?”
.
-“কে বললো?এনামুলকে ইম্প্রেস করবো।ভিডিও কল দিয়ে।কেন তোর কোনো সমস্যা?”
.
-“এনামুল??তোর আবার এনামুলের সাথে কথা হলো কবে?”
.
-“নাহলে হবে।সর তো।আমি এখন ওরে কল দিব।”
.
ঊষা ফোন নিয়ে বসলো বিছানার উপর।ভোর কোমড়ে হাত দিয়ে ওর পাশে বসে বললো”দেখি আমিও এনামুলকে দেখবো”
.
-“দেখ তাহলে।”

হয়নি বলা পর্ব ৫+৬

ঊষা এনামুলকে কল করলো মেসেঞ্জারে
.
-“হাই ঊষা কেমন আছো?”
.
-“খুব ভালো।আমায় কেমন লাগছে আগে সেটা বলো”
.
-“তোমাকে তো সবসময় ভালো লাগে।লালে তো আরও জোস লাগছে।”

ভোর ব্রু কুঁচকে বললো”আর আমায় কেমন লাগছে বন্ধু?”
.
-“আরে ভোর যে।তোকে তো ভালো লাগেই।তা ঊষা হঠাৎ ফোন করলে যে?”
.
-“তোমায় না খুব মিস করছিলাম।কতদিন বসে আড্ডা দেওয়া হয় না”
.
ভোর মুখটা ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে।ঊষা একটু ব্যাঁকা হয়ে বসে বললো”কাল মিট করবা?”
.
ভোর ফোনটা কেড়ে নিয়ে বললো”ঊষা নামকরা ব্র্যান্ডের মদ খেয়েছে তো তাই এমন করছে।ডোন্ট মাইন্ড এনামুল।পরে একদিন কথা হবে বাই

হয়নি বলা শেষ পর্ব