হয়নি বলা শেষ পর্ব 

হয়নি বলা শেষ পর্ব 
Writer-Afnan Lara

-“এমন করলি কেন?আমি এনামুলের সাথে আড্ডা দিতে যাব ব্যস”
.
-“না যাবি না।আমি তোর হাসবেন্ড না?আমি বলছি তুই সেটা শুনবি। বেশি কথা বললে আবার চলে যাব বিদেশ আর কখনও আসবো না”
.
ঊষা ছলছল চোখে তাকিয়ে রাগ করে উঠে চলে গেলো সোজা ওয়াসরুমে।শাড়ীটা চেঞ্জ করে এসে একটা সেলোয়ার কামিজ পরে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।ভোর জানে বাসা ছেড়ে কোথাও যাবে না।ঠিক তাই।বাসার সামনের বাগানটায় গিয়ে বসে আছে সে।ভোর গেলো না তার রাগ ভাঙ্গাতে।তবে সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ঊষাকে দেখছে।বাগানে বসে সে বারবার বাসার দরজার দিকে তাকাচ্ছে ভোরের অপেক্ষায়। ভোর মুচকি হেসে ওর অপেক্ষা করা দেখে যাচ্ছে। একটা সময়ে ঊষা চলে আসলো এদিকে।সেটা দেখে ভোর আগের জায়গায় বসে পড়েছে ফোন নিয়ে।ঊষা রুমে এসে বললো,”আমার রাগ তোর কাছে কিছুই না?বেস্টফ্রেন্ডের রাগ ভাঙ্গাতে জানস না মানলাম,বাট আমি তোর ওয়াইফ হই।ওয়াইফ হিসেবেও তো রাগ ভাঙ্গাতে পারতি।সেটা না করে বসে বসে ফোন টিপছিস।একদম বাপের বাড়ি চলে যাব”

-“আমাকে ছেড়ে এক মিনিট ও থাকতে পারবি না তুই।তা ভালো করে জানা হয়ে গেছে”
.
ঊষা আলমারি থেকে একটা হলুদ রঙের শাড়ী নিতে নিতে বললো,”আর তুই পারবি বুঝি?”
.
ভোর এক দৃষ্টিতে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বললো”আমিও পারবো না।তুই যেমন আমিও তেমন।ক্লিয়ার”
.
ঊষা কথার উত্তর না দিয়ে শাড়ীটা হাতে ওয়াসরুমে চলে গেছে আবার
ভোরের অফিস থেকে কল আসায় সে উঠে চলে গেলো সেদিকে।ঊষা শাড়ীটা পরে বের হয়ে ওকে কোথাও পেলো না।মা বললো ও নাকি অফিসে গেছে।তাই মন খারাপ করে ওর অপেক্ষা করতে করতে শুয়ে পড়লো বিছানার এক কোণে।রাত আটটার দিকে ভোর ফিরলো অফিস থেকে।বাসায় ঢুকে মা বাবার সাথে কিছু আলাপ করলো।ভাবলো ঊষা আসবে।কিন্তু সে আসছেনা দেখে কথা শেষ করে ও গেলো দেখতে।রুমে এসে দেখলো ঊষা ঘুমাচ্ছে বিছানার এক পাশে।
গায়ে হলুদ শাড়ীটা।মসলিনের।কেনো ডিজাইন নেই তাতে।এক রঙা শাড়ী।তাতেই ওকে বেশ লাগছে।ভোর পা টিপে টিপে হেঁটে ওর পাশে এসে বসলো।গালে হাত দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে দেখলো ওকে
এরপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আস্তে করে বললো,”সুন্দরী নারী”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“আমি বালিকা”
.
-“একই।তবে নারী মানায়।বালিকা হলি কি করে?ঘুমাচ্ছিলি না?চোখ বন্ধ করে নাটক করছিলি তাহলে?”
.
-“আমার কপাল ছুঁয়েছিস সবার আগে তাতেই জেগে গেলাম।এতক্ষণ কই ছিলি তুই?”
.
-“অফিসের কাজে ব্যস্ত ছিলাম।ভাইয়া বিদেশে সামলাচ্ছে আর আমি দেশে।তা হুট করে দিনে দুবার শাড়ী পরার মানেটা জানতে পারি?”
.
-“ঐ আসলো এনামুলের জন্য
ওকে বাসায় ডিনারের জন্য ডেকেছি তো তাই”
.
কথাটা বলে ঊষা বিছানা থেকে নেমে চুল ঠিক করতে করতে চললো দরজার দিকে।তারপর কি মনে করে ফোন নিয়ে বললো,”আগে ওকে কল করবো।কতক্ষণ লাগবে সেটাও তো জানতে হবে।যদি এখন আসে তো ডিনারের আগে নাস্তা করাবো।ডিনার তো এগারোটায়”

ভোর টান দিয়ে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বললো,”না ফোন দিবি না।কিসের কথা ওর সাথে?আর ওকে এখানে ডেকেছিস কি জন্য?আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলও হুম?আমি তোর হাসবেন্ড হই।”
.
-“তো?এনামুল আমাদের দুজনেরই ফ্রেন্ড হয়।সেই সূত্রে ওকে ডেকেছি আমি।তোর কি?ফোন দে আমার।”
.
ভোর ফোনটা উপরে তুলে বললো”নিতে পারলে নে”

ঊষা ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে এসে ফোনটা নেওয়ার চেষ্টা করছে।ভোর দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে হাসছে আর ফোনটা একবার নিচে আর একবার উপরে ধরছে
ঊষা ভোরের হাতে চিমটি কেটে ফোন নিয়ে এক দৌড় দিলো
ভোর ছুটে গিয়ে ওর হাত ধরে টান দিয়ে আটকে ফেললো ওকে।ঊষা হাঁপিয়ে বললো,”তোর এত ভয় কিসের যদি এনামুল আসে?”
.
-“না আসবে না।তোকেও ওর সামনে যেতে দেবো না”

-“কিন্তু কেন?”
.
-“কারণ আমি চাইছিনা ও তোকে শাড়ীতে দেখুক”
.
-“তাহলে শাড়ী ছাড়াই যাই?”
.
নায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া!
.
-“উফ!আমি তোর কথাই চলি নাকি?আমি শাড়ী পরেই যাব ব্যস!টাটা।হাত ছাড় আগে”
.
-“না ছাড়ব না।তুই যাবি না এনামুলের সামনে।”

-“কারণ বলতে হবে তাহলে আই প্রমিস আমি এনামুলের সামনে যাব না”
.
-“কারণ হলো আমি চাই না কেউ তোকে দেখুক অন্য নজরে”
.
-“কেমন নজরে?”
.
-“প্লিস যাস না ঊষা!বোঝার চেষ্টা কর”
.
ঊষা ভোরের ছলছল চোখ দেখে ফিক করে হেসে দিয়ে বললো”এনামুল আসছে না।মজা করছিলাম।হাত ছাড়!বলদ একটা!”

ভোর হাত ছেড়ে দিয়ে কপাল কুঁচকে বললো,”আমাকে জেলাস ফিল করিয়ে তোর কি লাভ? ”
.
ঊষা ভোরের থুঁতনি টেনে দিয়ে বললো,”তাহলে মানছিস যে তুই জেলাস”

ভোর মুচকি হেসে চলে গেলো অন্য কাজে।ঊষা সফল হয়েছে ভেবে নাচতে নাচতে চলে গেলো ভোরের মাকে কাজে হেল্প করতে।ওর পরনে শাড়ী দেখে মা ভীষণ খুশি হলেন।ঊষা তেমন শাড়ী পরা পছন্দ করে না।কিন্তু এবার পরেছে তার মানে নিশ্চয় তার মন ভালো।সবচেয়ে বড় কথা হলো ভোর চাইতো ঊষা যেন শাড়ী পরে।ওদের দুজনকে আলাদা করে কিছু তো ভালো হলো এই ভেবে মা খুশি হলেন।ঊষা নাকি আজ নিজের হাতে ভোরের জন্য ঝাল পিঠা বানাবে।গায়ে ময়দা মাখামাখি করে পাক্কা দু ঘন্টা ধরে পরিশ্রম করে ঝাল পিঠা বানালো সে।

ততক্ষণে ডিনারের টাইম হয়ে গেছে।তাও তার এক কথা ভোরকে খেতেই হবে।বাটি সাজিয়ে রুমে এসে হাজির সে এখন।ভোর ল্যাপটপে মুভি দেখছিল ঊষাকে পিঠা হাতে আসতে দেখে বেশ অবাক হলো সে।কপাল কুঁচকে সবার আগে বললো ওর শরীর ঠিক আছে কিনা।ঊষা বালিশ একটা ওর মুখে মেরে দিয়ে বললো,”তোর জন্য পিঠা বানাতে আবার শরীর খারাপ হওয়া লাগে নাকি রে বেয়াদব!চুপচাপ খা পিঠা।কত কষ্ট করে বানালাম আমি।”
ভোর ল্যাপটপ রেখে পিঠা একটা মুখে দিয়ে চিবিয়ে বললো”বাহ!ভালোই ঝাল দিলি।আই লাইক ইট।ঝাল পিঠায় ঝাল না হলে ভালো লাগে না”

ঊষা গোল হয়ে বসলো ওর সামনে।তারপর পিঠা একটা হাতে নিয়ে হা করলো মুখে পুরবে বলে।ভোর ওর হাত আটকে বললো,”তুই ঝাল খেতে পারিস না।শুধু শুধু এখন ঝাল খেয়ে আমার মাথা খারাপ করার ফন্দি আঁটছিস?”
.
-“আমার বানানো পিঠা আমিই খাব না?”
.
-“না খাবি না।আমি পারবো না তোর সাথে সাথে পানি নিয়ে ছুটতে”
.
কথা শেষে ভোর মুখ তুলে তাকিয়ে দেখলো ঊষা পিঠা মুখে পুরে চুপ করে আছে। এখনও চিবায়নি।ভোর ওর মুখটা টিপে পিঠাটা বের করে নিয়ে ফেলে দিলো।ঊষা আরেকটা নিলো খাবে বলে।ভোর ওর হাত থেকে সে পিঠাটাও কেড়ে নিয়ে ছুটলো
ঊষা ছলছল চোখে তাকিয়ে থেকে বললো”খেতে দিবি না আমায়?”
এরপর নাক টেনে মুখটা গোমড়া করে বসে থাকলো সে।ভোর ফ্রিজ থেকে পানির বোতল এনে ওর সামনে বসে পিঠার বাটিটা এগিয়ে ধরে বললো”নে খা।ঝালে ধরলে পানি খাইয়ে দেবো!”

ঊষা পিঠা মুখে দিয়ে চিবিয়ে নিতেই যখন ঝালে ধরলো তখন সে চোখ মেলে দেখলো ভোর পানির বোতল হাতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।ঊষা ভোরের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো ওকে।পানি খেলো না
আস্তে করে বললো,”আমার ঝাল কমাতে পানির প্রয়োজন নেই।এমনি থাকলেই ঝাল কমে যাবে”
.
-“তুই ঠিক আছিস তো?”
.
-“আমার কি হবে?একটু রোমান্টিক কথা বললেও তোর আমার শরীরের কথা জিজ্ঞেস করতে হবে?”
.
-“যে মেয়েটার মুখে ভোরের জন্য মধু যোগ করা কথা বের হতো না কখনও সে ইদানিং মধু মিশ্রিত কথা বলে,কাজ করে! অবাক হবো না??আশ্চর্য বিষয় তো এটা।যে কেউ অবাক হয়ে থাকবে”
.
-“অবাক হয়ে থাক।এমন নড়ছিস কেন?আমি কিন্তু আরও কিছুক্ষণ এমন করে জড়িয়ে ধরে রাখবো তোকে বলে দিলাম”

-“সমস্যা নেই।নড়ছি কারণ আপনার হাতের চুড়ির চাপে আমার হাতে দাগ বসে যাচ্ছে ম্যাডাম”
.
-“আপনি বলবি না।তুই বলবি।”
.
-“ভালোবাসিস?”
.
ঊষা চুপ করে আছে।তারপর নড়েচড়ে আরেকটু টাইট করে ধরে বললো”আর তুই?”
.
ভোর ও চুপ করে আছে।
ঊষা ভোরকে ছেড়ে দিয়ে পিঠার বাটিটা নিয়ে চলে যেতে যেতে বললো,”তুই যেমনটা আমিও তেমনটা”
.
-“কেমনটা?”
.
-“ভালোবাসিটা”
.
-“মাথা গুলিয়ে গেলো।আমি যেমন টা ও তেমনটা।সেই যেমনটা তেমনটা হলো ভালোবাসিটা।মানেহহহহ?মাথা ঘুরছে আমার।কি বললো এগুলো।”

ঊষা পিঠার বক্স টেবিলে রেখে আবার চলে যাওয়ার সময় দেখলো ভাবী বড় ভাইয়ার সাথে ভিডিও কলে কথা বলছেন।সে একটু উঁকি মারলো
ভাবী একটা কাঁথা সেলাই করতে করতে বলছেন”ভালোবাসি অনেকখানি”
.
ভাইয়াকে দেখা যায়।কথটাা শুনে তিনি লজ্জায় লাল হয়ে আছেন।ঊষা গালে হাত দিয়ে ওদের কথা শুনছিল।ভোর টান দিয়ে নিয়ে আসলো ওকে সেখান থেকে।এনে বললো,”কারোর কথা এভাবে শুনা ব্যাড ম্যানার।তোকে তো আগে এসব করতে দেখিনি”
.
-“আরে দেখছিলাম ভালোবাসি শুনলে কেমন লাগে।”
.
-“কেমন লাগে?”
.
-“লজ্জায় লাল হয়ে যায়।তার মানে তোকে বললে তুইও এমন করবি?”
.
-“তুই আমাকে বলবি ঊষা”?

ঊষা বোকার মতন তাকিয়ে থেকে এক দৌড় দিলো।ভোর ওকে আটকে বললো,”আজ বলতেই হবে”
.
-“হবেনা বলা”
.
-“হবেই বলা”
.
-“না!!”
.
ঊষা হাত ছাড়াতে যুদ্ধ করতে করতে ফ্লোরে বসে পড়েছে।সবাই ডিনার করতে এসে দেখলো ভোর আর ঊষা মারামারি করছে।
.
-“কি হলো ভোর?এমন করছিস কেন তোরা?”
.
-“না মা আসলে!!”

ভোর ঊষার হাত ছেড়ে দিয়ে থতমত খেয়ে পালিয়ে আসলো ওখান থেকে।ঊষা ফ্লোর থেকে উঠে দাঁত কেলিয়ে চোরের মতন কেটে পড়েছে
বাবা মা খেতে বসেছেন এবার।বাবা প্লেটের দিকে তাকিয়ে বললেন,”ওদের দুজনকে দেখে কেউ বলবে না যে ওদের বিয়েটা হয়ে গেছে।ম্যাচিউর মানুষ এমন করে?”
.
-“ওরা তো বিয়ের আগে বেস্টফ্রেন্ড ছিল।এরকমটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার।”
.
-“এরপরে তারা বাবা মা হবে।তাদের মধ্যে ম্যাচিউর ভাবটা আসা দরকার।”

ভোরের বাবার কথা শুনে কাশি উঠে গেলো ভোরের মায়ের।পানি খেয়ে বললেন”পরেরটা পরে দেখা যাবে।
——-
ডিনার সেরে বিছানায় শুয়ে ভোর মাথার উপর হাত উল্টে রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে।ঊষা শাড়ীটা পাল্টে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।শাড়ী এত সময় ধরে পরে রাখার অভ্যাস তার নেই।ভোরের জন্যই পরেছিল
আপাতত সেলোয়ার কামিজ পরে ধপ করে বিছানায় এসে বসে পড়লো সে।ভোর ঘুমাচ্ছে দেখে ওর ফোনটা নিলো চুপিচুপি।আজ ফেসবুকে না ঢুকে গ্যালারিতে গেলো সে।
সেখানে নিজের ছবি বেশি দেখতে পেয়ে মুচকি হাসলো।একটা একটা করে ছবি দেখতে দেখতে শেষে একটা ছবিতেই চোখ আটকে গেলো তার।ভোরের হাত জড়িয়ে ধরে বাসের সিটে ঘুমানোর দৃশ্য।ভোর লুকিয়ে তুলেছিল।যে কেউ দেখলে বলতো বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড।ছবিটাকে সে তার আইডিতে পাঠিয়ে দিলো
এরপর নিজের ফোন নিয়ে ছবিটা সেভ করে প্রোফাইলে দিয়ে শান্তিতে শুয়ে পড়েছে সে।
-“ভোর নিশ্চয় কাল সকালে ছবিটা দেখে চমকাবে।ভাববে আমি জেনে গেছি তার গ্যালারিতে লুকায়িত আমার ছবিটার কথা।হিহি!খুব মজা হবে তখন।”

পরেরদিন চোখ খুলে ভোর নিজের হাতের মুঠোয় বন্দি করা একটা চিরকুট পেলো। শোয়া থেকে উঠে বসে চিরকুটটা খুললো সে।
তাতে লেখা,”ক্ষমা করে দিস!তোর ঊষা আর বেশি দিন বাঁচবে না।তোকে ছেড়ে চলে যাবে বহুদূর।আমার আর ভালোবাসি না বলে কোলে বাচ্চা নেওয়া হলো না”

ভোর চিরকুটটা ফেলে ছুটলো রুমের বাহিরে।ঊষা মজা করছে নাকি সিরিয়াস সেটা নিয়ে মাথায় সবকিছু একসাথ হয়ে ঘুরছে।বাবা মা,ভাবী,বোন কেউ নেই কোথাও।ভোর মাথায় হাত দিয়ে বাসা থেকে বের হতেই থেমে গেলো।সবাই বাগানে। একসাথে বসে চা খাচ্ছে।ভোর স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে কোমড়ে হাত দিয়ে ঊষাকে খুঁজতে লাগলো এবার।ছাদ থেকে কারোর হাসির আওয়াজ শোনা গেলো।ভোর ভ্রু কুঁচকে পিছনে তাকিয়ে বললো”আজ তোকে খেয়েছি!”
.
কথাটা বলো ভোর ছুটে গেলো ওদিকে।ঊষা হাসতে হাসতে দরজা অবধি আসলো নেমে যাবে বলে কিন্তু তার আগেই ভোর ওকে ধরে ফেললো।হাতদুটো একসাথ করে ধরে সে বললো,”এবার পালাবি কই?আমাকে হার্ট এ্যাটাক দিতে এমনটা করলি তুই।এত শয়তানি তোর মনে?”
.
-“সরি সরি।একটু ফান করলাম।দেখতে চাইলাম তুই কি করিস”
.
-“তো কি দেখলি?”
.
-“দেখলাম আমি ফান করলেও তোর একটিবারের জন্যও সেটা ফান মনে হয়নি।এই ব্যাপারে তুই সিরিয়াস
দ্যাটস্ ইম্প্রেসিভ!”

-“তোর ইম্প্রেসিভের গুষ্টি কিলাই।বেয়াদব মেয়ে একটা।আমার জান বের হয়ে আসছিল আর একটুর জন্য।একদম ছাদ থেকে ফেলে সত্যি সত্যি মেরে দিব তোকে।”
.
ঊষা মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়ে ভোরকে জড়িয়ে ধরলো।কানের কাছে ফিসফিস করে বললো”বল না ভালোবাসি”
.
-“শুনে কি হবে?”
.
-“শুনে শান্তিতে মরতে পারবো”
.
-“তাহলে বলবো না।”
.
-“ধুর!”

ঊষা ভোরকে ছেড়ে চলে আসলো ছাদ থেকে।ভোর রেলিং ধরে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আর ও বাবা মায়ের মাঝে বসে গাল ফুলিয়ে ওকে দেখছে।এবারের রাগটা একটু কড়া করলো সে।সারাদিন ধরে ভোরের সামনে যায়নি।ওর সাথে কথাও বলেনি।রাতে ঘুমাতে আসার সময় হয়ে গেলো তাও আসছে না দেখে ভোর রুম থেকে বেরিয়ে ওকে ডাক দিলো।ভাবী ডাইনিং থেকে প্লেট নিতে নিতে বললেন ঊষা গেস্ট রুমে শুয়েছে।ভোর তাই সেদিকে গেলো।গিয়ে দেখলো ঊষা বালিশ বুকে ধরে চোখ বুজে শুয়ে আছে।ঠাস করে দরজা আটকানোর আওয়াজ কানে আসতেই চোখ মেললো সে।ভোর গম্ভীর গলায় বললো”কি?এত রাগ কিসের?”
.
-“কিসের রাগ জানিস না তুই?তোর সাথে আমার কথা নাই।নিজের রুমে যা।এখানে এসেছিস কেন?”
.
ভোর ঊষার পাশে বসে বললো”না আমি এখানে ঘুমাবো”
.
-“তাহলে আমি যাই”
.
ঊষা বিছানা থেকে নামতে যেতেই ভোর ওর হাতটা ধরে ফেললো।ওকে কাছে টেনে বসিয়ে বললো”কিছু কথা হয়না বলা।বুঝে নিতে হয়।অনুভব করতে হয়।বললেই সেটা ভালোবাসা হয় না ঊষা।তুই তো ম্যাচিউর।এটা বুঝতে তোর কষ্ট হয় কেন তাহলে?”

-“তোকে আমি চিনি।পরে একদিন বলবি আমি তো তোকে ভালোবাসি না
মনে মনে কি ভেবে নিয়েছিস।অগ্রিম ভাবিস কেন!!
সুতরাং যা বলবি সোজাসুজি বল”
.
-“জানি না”
——
এই টোনাটুনির বিয়ের বয়স এক বছর পূর্ন হলো আজকে।তাদের খুনসুটি আজও সেই আগের জায়গাতেই আছে।তবে একটু বেটার হয়েছে আগের চেয়েও
এখন তারা ভালোবাসি না বলে সেটা প্রকাশ করে দেখায়।তবে তাদের মাঝে সে সম্পর্কটা গড়ে ওঠার কথা সেটা আজও হয়নি।এ্যানিভার্সারির কেক কেটে একে অপরকে খাইয়ে দিয়ে মুখে কেক মাখামাখি করে দুজনে একসাথে ওয়াসরুমে এসে মুখ পরিষ্কার করছে এখন।ঊষা টিসু দিয়ে মুখ মছতে মুছতে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বললো”নরমাল কাপল হলে আমাদের এখন কিউট কিউট বাবু থাকতো।তাই না?”

-“আমরা এ্যাবনরমাল?”
.
-“একদম।তুই তো আমায় ভালোইবাসিস না।তোর থেকে এসব আশাও করি না আমি।”
.
-“তুই বুঝি বাসোস?”
.
-“হ্যাঁ আমি তো অনেক ভা….”
.
-“ভা?”

-“ভালো আছি।তুই বললেও কি আর না বললেও কি
আই ডোন্ট কেয়ার।”
.
ভোর মুখটা ধুয়ে আলমারি খুলে একটা কাগজ বের করলো।ঊষার সামনে বসে তাতে সাইন করে বললো”নে সাইন কর”
.
-“কিসের কাগজ এটা?”
.
-“পড়ে দেখ।সাইন করতে দ্বিধা করবি না ঠিক আছে?আমি রেডি হচ্ছি ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে আমার”

ঊষা কাগজটা পড়ে চোখ বড় করে ভোরের দিকে তাকালো
ভোর হাতে ঘড়ি পরছে।ঊষা বিছানা থেকে নেমে ভোরকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো”তুই আমাকে ডিভোর্স দিবি?এটা সিরিয়াস নাকি ফান করছিস?”
.
ভোর ঊষাকে ছাড়িয়ে একটু দূরে গিয়ে বললো”ফান কেন হবে।কাগজ তো আর মিথ্যে না।ফটাফট সাইন করে দে।আমার আবার একজন আছে।যে আমাকে ভালোবাসি দুইশবার বলেছে।আরও বলবে ভবিষ্যতে।টাইম ওয়েস্ট করিস না।”
.
-“তুই আমাকে ভালোবাসিস না ভোর?আজ আমাদের এ্যানিভার্সারি!”

-“তোহ??যে এ্যানিভার্সারির কাপলের মাঝে প্রেম ভালোবাসা নাই সেটা আবার কিসের এ্যানিভার্সারি?”
.
-“তুই আমাকে ছেড়ে দিবি?থাকতে পারবি আমায় ছাড়া?”
.
-“পারতে হবে।কারন তুই তো আমায় ভালোবাসিস না”
.
কথাটা বলতে বলতে ভোর কাগজটা মেলে ধরে বললো”নে সাইন করে দে”
.
ঊষা কেঁদে ফেললো।চোখ মুছতে মুছতে কাগজটা হাতে নিলো সে।কান্নার জন্য সই করতে পারছে না।শুধু কান্না এসে যাচ্ছে।ভোর চোখ বন্ধ করে মনে মনে নিজেকে বকে কাছে এসে ঊষাকে জড়িয়ে ধরলো।ওর এমন কান্না দেখে বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার।ওকে বুকে আগলে ধরে মাথায় হাত রেখে সে বললো,”বোকা মেয়ে এটা ফান ছিল।মিথ্যে ডিভোর্স পেপার।কেঁদে ভাসিয়ে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিবি তাও আই লাভ ইউ বলবি না?থাক বলতে হবে না।এভাবেই জীবন কেটে যাবে”

ঊষা কেঁদে কেঁদে বললো”তুই ও তো বলিস না।শুধু আমাকেই দোষ দেস”
.
ভোর ঊষাকে কোলে তুলে নিয়ে বললো”এতদিন হয়নি বলা যে আমি তোকে কতটা ভালোবাসি।খুশি?”
.
ঊষা চোখ মুছে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে।মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না তার।
ভোর ওকে বিছানায় রেখে নিজে ওর গায়ের সাথে ঘেঁষে বসলো।ঊষা এক দৃষ্টিতে ভোরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।ভোর ওর হাতটা ধরে বললো”বেস্টফ্রেন্ড থেকে থেকে কবে যে তোকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম টের পেলাম বিয়ের পরে।হয়ত বিয়ে না হলে টের পেতাম না। আমরা একজন আরেকজনকে ছাড়া এক মূহুর্ত ও থাকতে পারি না।চোখের সামনে না থাকলে কেমন কেমন লাগে।দূরে গেলে বুক জ্বলে।দিন খারাপ যায় আর এতদিন সেটাকে আমরা জাস্ট বন্ধুত্ব ভেবে এসেছি
বিয়ের এক বছর পূর্ন হওয়ার পর আমাদের সৎ বুদ্ধি হলো।অবশ্য শুধু আমার বুদ্ধিটা হলো।তোর হয়নি।তুই এখনও মুখ ফুটে কিছু বলিস নি।”

ঊষার চোখে পানি জমে আছে।ডিভোর্স পেপার দেখে পায়ের তলার মাটি সরে গেছিলো ওর
পরিস্থিতি বুঝে কাগজ দিয়ে দুম করে ভোরের মাথায় মেরে দিয়ে সে বললো”তুই একটা বেয়াদব!আমার কলিজা উল্টে গিয়েছিল তোর এমন সিরিয়াস লুক দেখে”
.
-“কি করবো তোর মুখ থেকে কথা বের করার জন্য এই ট্রিকস্টা ফলো করার হলো
তাও লাভ হলো কই?উল্টে আমাকেই বলে দিতে হয়েছে।
আবারও প্রমাণ করলি অলওয়েজ তুই জিতবি
আর আমি হারবো”

ঊষা ভোরের কাঁধে হাত রেখে বললো”জ্বী না।ঊষাকে ভালোবাসি বলে আপনি জিতে গেছেন।কারণ ঊষাও আপনাকে ভালোবাসে।আপনার মুখ থেকে কথাটা শোনার অপেক্ষায় ছিল এতদিন।”
.
ভোর মাথা ঘুরিয়ে ঊষার দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপর ঊষাকে আস্তে করে একটা ঠেলা দিয়ে বললো”তাহলে বলেন বিয়েটা করিয়ে পরিবার ঠিক করেছে কিনা?”
.
-“একদম বেশ করেছে।”
.
ভোর ঊষার নাক টেনে দিয়ে বললো”তোর মুখে যেন এই মিষ্টি হাসিটা সবসময় থাকে”

-“আর আমার পাশে যেন সবসময় তোকে পাই আমি।”
——–
ঊষা আর ভোরের ভালোবাসার প্রহর শুরু হলো সেইদিন থেকে যেদিন তারা একে অপরকে ভালোবাসে সেটা স্বীকার করেছিল।আরও কটা বছর কেটে গেছে।তাদের ভালোবাসার উপহার হয়ে এখন তাদের মাঝে একজন ছোট্ট সদস্য ও এসেছে।নাম তার আরহাম।
আরহামকে দোলনায় বসিয়ে দূরের একটা সিমেন্টের বেঞ্চিতে বসলো দুজন।ঊষা ভোরের দিকে ফিরে বললো”তাহলে আমরা ঐ কাপলদের কাতারে পড়ি না যারা ভলোবাসি না বলেই কোলে বাচ্চা নিয়ে ঘুরে?”
.
-“একদম”
.
-“তাহলে আমরা কিরকম কাপল?”
.
-“আমরা ভলোবাসি বলে সেই ভালোবাসাকে একটা নাম দিয়ে তাকে কোলে নিয়ে ঘুরার মতন কাপল।”

ঊষা মুচকি হেসে ভোরের কাঁধে মাথা রেখে বললো”আরহাম বড় হলে ওকে বলবো বেস্টফ্রেন্ডকে বিয়ে করতে
বেস্টফ্রেন্ড এমন একজন যাকে কিনা কিছু বুঝাতে হয় না।সে বুঝে যায়
তার সাথে হাজার ঝগড়া হলেও তার গতি একদিনের বেশি হয় না।একদিন বেশি বললাম।একদিন ও হয় না।এই ঝগড়া তো এই মিটে যাওয়া।জীবনে এমন একজন থাকাটা খুব জরুরি”
.
-“হ্যাঁ তারপর কে কাকে ভালোবাসে সেটা নিয়ে এক বছর ধরে যুদ্ধ?”
.
-“সবাই তো আমাদের মতন না ভোর।তুই আর আমি তো ভীতু।এক বছর ধরে আমাদের হয়নি বলাই ঘুরছিল।বাকিরা তো আর এমন হবে না।”

-“সেটাই।তবে বেশি দেরি করা ঠিক না
নাহলে হাত ফসকে ডিভোর্স হয়ে যেতে পারে”
.
ঊষা দুম করে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে বললো”ঐদিনের কথা মনে আসলে এখনও বুক কাঁপে আমার।এরকম ফান আর কখনও করবি না তুই।”
.
-“মা দেখো আমার ফ্রেন্ড।”
.
ভোর ঊষার দিকে বাঁকা চোখে তাকালো।ঊষা মুচকি হেসে বললো”আচ্ছা বাবা”
.
আরহাম তার নতুন ফ্রেন্ড মিতাকে নিয়ে চললো দোলনায় দুলবে বলে।ভোর নড়েচড়ে বললো”বাহ!আমার ছেলে দেখি এখন থেকেই বান্ধুবী বানিয়ে ফেলেছে।”

-“মেয়েটা মোটা না একটু?আমার ছেলেটা আহারে!”
.
ভোর ভ্রু কুঁচকে বললো”তুমিও তো মোটা।আমি সামলাই না তোমারে??”
.
-“আমি মোটা??তোমার ছেলের গার্লফ্রেন্ড থেকেও ভালো স্লিম আছি।”
.
-“আমি যেমন মটু রে পছন্দ করেছিলাম তেমনই আমার ছেলেও মটু পছন্দ করে।ইশ কত মিল আমাদের।”
.
ঊষা দাঁত কেলিয়ে বললো”হ্যাঁ।আমার ছেলেও তোমার মতন বড় হয়ে মিতাকে বিয়ে করে দেরিতে লাভ ইউ বলবে”
.
-“মা শুনো!”

-“হ্যাঁ বাবা বলো।”
.
-“মিতা বললো আমায় সে ভালোবাসে”
.
ভোর পানি খাচ্ছিল তখন।কথাটা শুনে ওর কাশি উঠে গেছে।কাশতে কাশতে বললো”কি??আর তুমি?”
.
-“আগে তো আমি বললাম।তারপর ও বললো।এবার আমরা জামাই বউ তাই না?”

হয়নি বলা  পর্ব ৭+৮

ঊষা মাথায় হাত দিয়ে ভোরের দিকে তাকালো।ভোর হাসবে নাকি কাঁদবে সেটা বুঝছে না।তার গুনধর পিচ্চি ছেলে তার পিচ্চি গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে আবার দোলনায় দুলছে।ঊষা হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যাচ্ছে।ভোর নিজের হাসি থামিয়ে বললো”কত প্ল্যান করলাম এই ছেলেকে নিয়ে আর সে পানি ঢেলে দিলো পুরোটাতে।হায় হায় রে।মানইজ্জত কিছু রইলো না আর”

-“ঠিক বলছো।মিসেস দিলুর মেয়ে আগে প্রোপোজ করলে ভালো হতো।শেষে কিনা আমাদের ছেলেই করলো।ধুর ভাল্লাগে না”
.
-“যা হবার হইছে।বাদ দাও।চলো বাড়ি ফিরি।সন্ধ্যা হয়ে আসছে”
.
আরহাম মিতার হাত ধরে ঊষার সামনে এসে বললো”মিতা আমার সাথে এখন থেকে থাকবে বলেছে”
.
ভোর আরহামকে কোলে নিয়ে বললো”ওর আম্মু ওকে বকবে তো।।তোমরা আরেকটু বড় হলে বেড়াতে পারবা।মিতু নয়তো কেঁদে দিবে বাবা মাকে না দেখলে”

আরহাম মিতার দিকে তাকিয়ে বললো”মিতা আমায় প্রমিস করেছে সে কাঁদবে না”
.
ঊষা মিতার হাত ধরে বললো”চলো এদের আজকেই বিয়ে করাই দিই।কি বলেন মিসেস দিলু?”
.
মিসেস দিলু এগিয়ে এসে মিতাকে কোলে নিয়ে বললো”বিয়ে করিয়ে দিলে দুটোই মিলে কাঁদবে।তার চেয়ে বরং তাদের বুঝজ্ঞান হোক তখন দেখা যাবে”

ঊষা আর ভোর একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো”আমাদের বিয়ের দিন আমরা দুজনে কেঁদেছিলাম তাও বিয়ের বয়সে এসে।ওরা ও কাঁদবে।
শেষে আবার হাসবে।তাও ভালো।শেষটা যেন হাসি দিয়ে হয়।
শেষ কান্নার হলে সেই শেষ সুন্দর হয়না।

(লেখাঃ Afnan Lara ) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন

1 COMMENT

Comments are closed.