হয়নি বলা পর্ব ৫+৬

হয়নি বলা পর্ব ৫+৬
Writer-Afnan Lara

-“না দিলে তুই আছিস না?তুই ম্যানেজ করে দিবি।”
ভোর তাচ্ছিল্য করে হেসে উড়িয়ে দিলো ঊষার কথাটা।বাস জার্নি শেষ হতে হতে রাতের দশটা বেজে গেছে।ঊষা পুরো বাসে ওকে জ্বালিয়ে খেলেও এখন বাস থেকে নামার পর তার ঘুম আর কোথাও ধরে না।যেন এখনই পড়ে যাবে
সব ভুলভাল সময়ে ওর ঘুম আসে।হোটেলে এসে ফোন বের করে মাকে জানিয়ে দিলো সে যে তারা পৌঁছে গেছে।
ফোন টেবিলের উপর রেখে শার্টের কয়েকটা বোতাম খুলে বড় করে শ্বাস নিলো সে।তারপর পিছনে তাকিয়ে দেখলো ঊষা দুহাত ছড়িয়ে বিছানার মাঝখানে শুয়ে পড়েছে।মুখে হাসি ফুটিয়ে ভোর ওর কাছে এসে দাঁড়ালো।ওকে সরিয়ে কিনারায় নেবে বলে ওর হাত ধরতেই চোখ খুলে ফেললো সে।চোখ বড় করে বললো”কি করবি তুই?তোর শার্টের বোতাম খোলা কেন?”

-“আমার প্রতি বিশ্বাস নাই তোর?”
.
-“হুম!”
ঊষা মাথায় হাত দিয়ে কিনারায় চলে গেলো নিজে নিজেই।
ভোর তার একটা টিশার্ট নিয়ে সেটা পরে টিভিটা অন করে বললো”কি খাবি বল।অর্ডার করছি”
.
-“খিধে নেই।আচ্ছা চিংড়ির ঝোল আর সাদা ভাত খাব”
.
-“খিধে নেই অথচ এসব খাবি?”
.
-“খিধে থাকলে চিকেন খেতাম।তুই খাইয়ে দিবি।আমি নিজের হাতে খাব না”
.
-“কেন?”
.
-“ঐ যে খিধে নেই তাই”
.
-“তোকে নিয়ে আমি আর পারবো না রে।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ভোর দরজা লক করে বের হয়ে চলে গেলো।কিছুদূর যাওয়ার পর কারোর দৌড়ে আসার আওয়াজ পেয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখলো ঊষা ওড়না গলায় পেঁচিয়ে দৌড়ে আসছে।হাঁপাতে হাঁপাতে বললো”আমাকে রেখেই চলে এলি?”
.
-“তুই না ঘুমাচ্ছিলি?টায়ার্ড ছিলি আর আমি তো খাবার অর্ডার করতে যাচ্ছি।ঘুরতে নয়।”
.
-“যাই হোক যাচ্ছিস তো।আমিও তোর সাথে যাব।”

ভোর মেনু কার্ড দেখে খাবার কোনটা অর্ডার করবে তা দেখছে।ঊষা ওর পিঠের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে হোটেলটা দেখছে।
-“এটা এক্সেলসিউর হোটেল।মধুমালতি।
বেশ দেখতে।রিসোর্টের মতন।সুইমিং পুল ও আছে।ভোরকে চুবানো যাবে হিহি”

-“কিরে?ওমন হাসছিস কেন?”
.
-“না কিছু না।পুলের দিকে যাবি?”
.
-“জীবনেও না।আমার খুব ভালো করে জানা আছে তুই আমাকে পুলে ফেলবি”

ঊষা হাত দুটো পিছনে নিয়ে বললো”না ফেলবো না
জাস্ট দেখবো।কাল তো আমরা অন্যিকে যাব তাই আজকে দেখে নিলে ভালো হতো না?খাবার আসতে তো সময় লাগবে ”
.
-“ভুল বলিসনি।আচ্ছা চল।আমার থেকে দূরে দূরে থাক।
তোকে একটুও বিশ্বাস করি না”
.
ঊষা মুখ বাকিয়ে হাঁটা শুরু করে দিয়েছে।পুল অবদি এসে খুশিতে এক লাফ দিয়ে উঠলো সে।ভোর হাত ভাঁজ করে পুলটা দেখছে।ঊষা বললো”ভোর আমাকে দেখ তো”
.
ভোর ওর দিকে তাকাতেই দেখলো মুচকি হাসি দিয়ে এগিয়ে আসছে সে।ভোরের সামনে দাঁড়িয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে বললো”আমাকে কি রোমান্টিক লাগছে তোর?”

ভোর ব্রু কুঁচকে বললো”না তো!কাঁধে হাত রাখলেই তো আর রোমান্টিক হয়ে যায় না”
.
-“ওহ আচ্ছা।তাহলে ঊষা দুষ্টুই ভালো।”
কথাটা বলে এক ধাক্কা দিয়ে ভোরকে পুলে ফেললো সে।ভোর এক ডুব দিয়ে বললো”তোকে ছাড়বো না”
.
-“ধরলে তো ছাড়বি।”
কথাটা বলে ঊষা পিছিয়ে গেলো
ভোর পুল থেকে উঠে ঊষাকে শক্ত করে ধরে টেনে হিঁচড়ে পুলে ফেললো।ঊষা চেঁচিয়ে বললো”ভোর এটা ঠিক করলি না।তোরেও চুবাবো”
.
দুজন দুজনকে চুবিয়ে এখন হাসতে হাসতে শেষহয়ে যাচ্ছে।ঊষা ভোরের মুখটাকে দুহাত দিয়ে ধরে বললো”পানিতে চুবানোর পর তোকে একদম নায়কের মতন লাগছে”

-“তাহলে যেটা করার সেটা করে ফেল”
.
ঊষা দাঁত কেলিয়ে আরেক চুবানি দিয়ে বললো”নে করে নিলাম”
.
-“ধুর!”
.
-“তুই চাস আমি তোকে কিস করি?আমিও পাগল না আর তুই ও না”
.
-“এমনি বলে দেখলাম তোর রিয়েকশান কেমন হয়।সর!!মুখ ওমন করে ধরেছিস কেন?”
.
-“আমরা তো এখন হাসবেন্ড ওয়াইফ তাই না?”
.
-“হুম।কেন?”
.
-“না কিছু না।চল যাই খাবার খাব”

ঊষা পানি থেকে উঠে ওড়না গায়ে পেঁচিয়ে হাঁটা ধরলো।ভোর ওর পিছু পিছু আসছে।রুমে এসে ঊষা নিজের জামা খুঁজছে পরার জন্য। ভোর তার গায়ের শার্ট খুলে ঊষার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।
-“বন্ধুত্বের রিলেশন নিমিষে হাসবেন্ড ওয়াইফে পরিণতে হলে দুনিয়া পাল্টে যায়।এতদিন ওর দিকে এভাবে কখনও তাকাইনি আর আজ চোখ চলে যাচ্ছে।উফ! আমি কত খারাপ”
.
ঊষা জামাটা হাতে ধরে কপাল কুঁচকে বললো”নিজের কপালে নিজে চড় মারছিস কেন?কি হয়েছে তোর?”
.
-“না কিছু না।জলদি চেঞ্জ কর”
.
-“আমাকে কেউ দেখতে আসবে নাকি?”
.
-“না।আমি দেখবো তো তাই বলছি।এরকম ভেজা বেড়ালের মতন দাঁড়িয়ে না থেকে চেঞ্জ কর”

ঊসা ভেংচি কেটে চলে গেলো।ভোর চুপচাপ বিছানায় বসে থাকলো
ঊষা টপস আর প্লাজু পরে হাজির।ভোর কিছু বললো না।দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে টিভি দেখছে সে।ঊষা তাই চলে গেছে বারান্দায়।ভোর এক নজর ওদিকে তাকিয়ে আবারও টিভি দেখতে লাগলো।ঊষা সেখান থেকে বললো”ভোর এদিকে আয় না!একা একা ভাল্লাগছে না”
.
-“তুই আয়।টিভিতে দারুন একটা বাংলাদেশি সিরিয়াল চলে।”আরমান ভাই ফাইসা গেছে”
.
-“ওটা অনেকবার দেখছি।এদিকে আয় না।”
.
ভোর টিভি অফ করে বারান্দার দিকে যেতেই ঊষা ওর হাত ধরে ইশারা করে নিচের একটা কাপল দেখালো।তারা ছোটাছুটি করছে সামনের বাগানটায়।
ঊষা মুচকি হেসে বললো”কি সুইট তাই না?”
.
-“সুইট তো আমরাও হতে পারি”

ঊষা ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো”তোর কি শরীর খারাপ?তুই না বিয়েতে রাজি ছিলি না?”
.
-“আমি কথার কথার বলি। জাস্ট দেখতে চাই তোর কি ধারনা।যদি তুই আমাকে মানতে পারিস।আমি কেন পারবো না।আফটার অল আমরা এখন লিগালি হাসবেন্ড ওয়াইফ”
.
-“এ্যাহ!তার মানে বুঝাতে চাস আমি আগে বেহায়া হবো?মানে আগে আমি তোকে প্রোপোজ করতাম?”
.
-“হোয়াট প্রোপোজ?বিয়ে তো হয়েই গেছে।আর কিসের প্রোপোজ?”
.
-“তোর সাথে কথা বলে এত সুন্দর ভিউ দেখা নষ্ট করলাম।যা তুই টিভি দেখ গিয়ে।”
.
-“তোকে নিয়ে যাব”

ভোর ঊষাকে টেনে নিয়ে আসলো।দুজনে গাল ফুলিয়ে বিছানায় বসে বসে টিভি দেখছে এখন।হঠাৎ ঊষা ভোরের দিকে ফিরে বললো”তুই সত্যি আমাকে মেনে নিবি?”
.
ভোর আড় চোখে তাকিয়ে বললো”না নিব না।যা মুড়ি খা!”
.
-“তাহলে তোরেও আমি মেনে নিব না।যা তুই”
.
ঊষা ও আরেকদিকে ফিরে শুয়ে পড়লো।ভোর টিভিটা অফ করে দরজা খুলে খাবারের ট্রেটা এনে টেবিলের উপর রেখে বললো”রাগ করলি তো?নিজের হাতে নিজের খাবার খা তাহলে।আমি আমার খাবার খেয়ে নিচ্ছি।
.
ঊষা মাথা বাঁকিয়ে বললো”কে রাগ করেছে?আমি তো রাগের ভান করলাম।তুই না খাইয়ে দিলে খাব না কিন্তু”

ভোর প্লেট নিয়ে পাশে এসে বসতেই ঊষা এগিয়ে আসলো কাছে।এক লোকমা নিজে খেয়ে আরেক লোকমা ঊষাকে খাইয়ে দিলো।
খাওয়া শেষ করে ভোর হাত ধুয়ে এসে দেখলো ঊষা ঘুমিয়ে পড়েছে।লাইট অফ করে দিয়ে ট্রেটা রুম সার্ভিসের লোক ডেকে দিয়ে আসলো।এরপর ঊষার পাশে বসে ফোন বের করলো ফেসবুকে যাবে বলে।কিন্তু কেন যেন আজ মন চাইলো না
ফোনটা রেখে ঊষার দিকে এক নজর তাকালো সে।আজ বর্ডার করেনি।করবেই বা কি করে।বালিশ শুধু দুটোই আছে।ভোর সেটা ভেবে কিঞ্চিত হাসলো তারপর নিজেও শুয়ে পড়লো চুপচাপ।পরেরদিন সকাল সকাল দুজনে একসাথে উঠেছে ঘুম থেকে।দুমিনিট আগে পরে।
ঊষা মাথা ধরে কাঁথা গায়ে দিয়ে বসে আছে।কাল রাতে পানিতে ডুব দেওয়ায় তার মাথা এখন ছিঁড়ে যাচ্ছে।ভোর হালকা কাশছে।ঠাণ্ডা লেগেছে হয়ত।ঊষা নিজের মাথা ব্যাথা উপেক্ষা করে বললো”রঙ চা আনবি?”

ভোর অবাক হয়ে বললো”তুই রঙ চা খাবি?মাথা ঠিক আছে তো?”
.
-“হ্যাঁ।কেন খেতে পারি না?”
.
-“জীবনেও তো খাসনি। তোর অপছন্দের তালিকায় রঙচা শীর্ষে তাই জিজ্ঞেস করলাম”
.
-“তুই সহ খাবি।তোর ঠাণ্ডা লেগেছে তাই আনতে বলছি।এমনি এমনি তো খাবি না সেটা জানা আছে”
.
-” ফাইন।রঙ চা আর কফি,ঠিক আছে?”
.
-“হুম।”

ভোর চলে গেছে।ঊষা নিজের ফোনের চেয়ে ভোরের ফোনের প্রতি ইন্টারেস্ট বেশি দেখায়।তাই এখন ভোরের ফোন নিয়ে টিপাটিপি করছে।দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে সুন্দর করে ঠিকঠাক হয়ে বসে পড়লো সে।ভোর অর্ডার দিয়েছি বলে ফোন হাতে নিয়ে সোফায় বসলো।ফেসবুকে ঢুকে দেখলো তার আইডি থেকে পোস্ট করা “ঊষা!!মাই কিউটি ওয়াইফ”আবার ঊষার একটা ক্যান্ডিড ছবিও দেওয়া।এটা কিন্তু সে দেয়নি।তাহলে কে দিলো?
.
ঊষা চোরের মতন টিভি অন করে সেটা দেখছে।ভোর এগিয়ে এসে বললো”নিজের ক্যান্ডিড ছবি কেউ নিজে পোস্ট দেয়?তাও আমার ফোন থেকে।তুই এত দুষ্টুমি কেন করিস বল তো?আমি জীবনে এরকম ক্যাপশন দিয়ে কোনো পোস্ট দিয়েছিলাম?”
.
-“দেস না তো এখন থেকে দিবি।সিম্পল।”
.
-“জলদি চা খেতে হবে।মাথা ব্যাথার সাথে এবার মাথা ঘুরছে আমার।”
.
-“আয় চুল টেনে মাথা টিপে দেবো”

-“থাক দরকার নাই।যে পোস্ট দিছেন তাতে আমার অসুখ বাড়ছে।এবার আমার মাথায় হাত দিলে হসপিটালে যেতে হবে।চুপচাপ টিভি দেখেন আপনি ঊষা ম্যাডাম”
.
ঊষা ভ্রু কুঁচকে বললো”তোর একটাই দোষ”.
.
-“কি?”
.
-“তুই আমার সবকিছু ভালোই ভালোই মেনে নেস।হিহি”

-“মেনে না নিলে আজ আমার স্ত্রী থাকতি না।
আমি থাকতাম আমেরিকা আর তুই থাকতি ফ্যাশন ডিজাইনার।সব ওলটপালট হয়ে গেলো আমার এই স্বভাবের কারণে।যাই হোক।কোনো কিছু ঘটলে তার ভালো খারাপ দুটো দিকই থাকে। এখনও তাই।”
.
ঊষা একটু এগিয়ে এসে বসে বললো”ভালো দিক কি?”
.
-“ঐ যে বেস্টফ্রেন্ড বউ হলো।তাকে হাতে ধরিয়ে আমার ব্যাপারে কিছু জানাতে হবে না।সে অলরেডি জানে বুঝে”
.
-“আর খারাপ দিক?”
.
-“জেনে বুঝে মাত্রাতিরিক্ত ডিস্টার্ব করে।”
.
-“যা!আজ থেকে তোকে ডিস্টার্ব করবো না।দেখবি তুই নিজে এসে বলবি”ঊষা প্লিস আমায় ডিস্টার্ব কর”
.
-“হুহ!দেখা যাক।”
—–
দুজনে রেডি হয়ে এবার চললো চা বাগানের দিকে।ভোর সানগ্লাস পরে বারবার ঊষার দিকে তাকাচ্ছে।ঊষা তার আরএফএলের বালতিটাকে ভ্যানিটি ব্যাগের মতন হাতে ঝুলিয়ে হাঁটছে মডেলদের মতন।পাতা আনবে মানে আনবেই।
চাবাগানে আসার পর ভিউ দেখা বাদ দিয়ে সে পাতা একটা একটা করে ছিঁড়ছে।ভোর মাথায় হাত দিয়ে বললো”নির্ঘাত পুলিশে ধরবে আমায় তোর কারণে”

-“আরে রাখ তো।বালতিটা লুকিয়ে আনছি কত কষ্ট করে।পাতা নিতে দে আমায়।”
.
ভোর ঊষার একটা ছবি তুলে নিয়ে বললো”পোস্ট দিয়ে ট্যাগ মেরে দিব।ক্যাপশন হবে ‘ঊষা দ্যা গ্রেটেস্ট থিপ'”
.
-“দে।সাথে সাথে ব্লক মারবো তোকে”
.
-“তুই না বলেছিলি আমাকে আর জ্বালাবি না?তাহলে এটা কি?চা পাতা নেওয়াও তো জ্বালানোর কাতারে পড়ে”
.
-“না পড়ে না।ওটা আগে থেকে ঠিক করা ছিল।যা দূরে গিয়ে দাঁড়া।আমাকে আমার কাজ করতে দে।”

ভোর ফোন নিয়ে ছবি তুলতে তুলতে একটু দূরের দিকে চলে গেছে।ঊষা বালতি অর্ধেক ভর্তি করে নিচে রেখে ছুটে গেলো ভোরের কাছে।ভোর একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে বললো”বালতি ভর্তি হলো?”
.
-“সবাই কেমন করে যেন তাকাচ্ছে”
.
-“যাক তোর সুবুদ্ধি হলো তাহলে”

-“মানুষ তাকাচ্ছে সেটা ব্যাপার না।বালতি তো ভর্তি করবোই।কাজে ব্রেক দিয়ে এলাম।এই আর কি”
.
-“চাপাতা নেওয়ার আবার ব্রেক টাইম ও আছে?বাপরে বাপ!”

ঊষা এখন মন খারাপ করে শুকনো মাটির উপর বসে আছে কারণ ভোর তার অফিসের একটা কাজ নিয়ে ব্যস্ত। প্রায় এক ঘন্টা ধরে শুধু কথাই বলে যাচ্ছে। ঊষা অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে এখন বোর হয়ে বসে আছে মাটিতে।ভোরের সেদিকে খবর নেই।সে ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত
ঊষা তার ফোনটা নিয়ে রুমাকে ফোন করে আবোলতাবোল বলা শুরু করেছে
– “হ্যালো এনামুল কেমন আছো??হ্যাঁ আমি ভালো।আনরোমান্টিক হানিমুনে এসেছি এই আর কি।
জামাই তো কাজে।কেন যে বিয়েটা করলাম!”

-“কিরে এসব কি বলিস?আমি হচ্ছি রুমা।চিনস না আমাকে??”
.
-“চিনি তো তোকে।তুই কত ভালেবাসতি আমায়।সেই ছোট্টকাল থেকে”
.
ভোর ঊষার দিকে তাকিয়ে ব্রু কুঁচকে এগিয়ে আসলো
.
-“হ্যাঁ রে এনামুল তোকে তো ইদানিং ম্যাচিউর লাগে।দেখতে ফাইনালি জোসসসস”
.
ভোর ছোঁ মেরে ফোনটা ওর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে কানে ধরে বললো”রুমা!ঊষার এসব কথা শুনতেছো তোমার আর কাজ নাই?”

-“থ্যাংক গড!! তুই অন্তত আমায় চিনলি ভোর।ঊষা সেই কখন থেকে এনামুল এনামুল করে যাচ্ছে।”
.
-“ওরে আমি মাথা থেকে পা পর্যন্ত চিনি।এসব নাটক করে আমাকে জেলাস ফিল করাতে চেয়ে উল্টে নিজে বেকুবের মতন ব্যবহার করছে।রাখছি বাই”
.
-“তুই ঘুরতে এসে অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ততা দেখাস কেন আমায়?”
.
-“তো কি করবো?তোকে কোলে করে সব জায়গায় ঘুরবো?তোকে তো টাচ করতে গেলেও চড় মারতে আসিস”
.
-“আমি হোটেলে ফিরে যাচ্ছি।তোর সাথে কথা নাই।বাইই”

ঊষা সোজা হাঁটা ধরেছে।ভোর ফোন পকেটে পুরে ওর পিছু পিছু গেলো।আজকের ঘুরাফিরা একেবারে ক্যানসেল হয়ে গেছে ঊষার রাগের চাপে।দুজনে এখন হোটেলের রুমে দুই কোণায় বসে আছে।উষা বিছানায় আর ভোর সোফায়।
কারোর মুখে কথা নাই।
.
-“কি?আপনাকে নাকি আমি টাইম দেই না?এখন এমন করে বসে আছেন কেন?আসেন আপনাকে কোলে নিয়ে ঘুরি”
.
-“আমার তো বলা উচিত যে তোর তো অফিস আর অফিস এখন হুদাই বসে আছিস কেন?ফোনে কথা বল না”

-“গুড আইডিয়া।”
.
দুজনে এবার মুখ ঘুরিয়ে বসে গেছে।ঊষা ফোন বের করে ভোরের সব পিকে হাহা দিয়ে আসলো।ভোর গিয়ে ঊষার হাহা পোস্টে ওয়াও দিয়ে আসলো এটাতে ও বেশি রাগে।
ঊষা ভোরের দিকে চেয়ে বললো”ওয়াও রিয়েক্ট উঠা নাহলে তোরে শেষ করে দিব”
.
-“উঠাবো না।কি করবি?”

ঊষা বালিশ দুটো নিয়ে হনহনিয়ে এসে কটা বাড়ি দিয়ে দিলো।ভোর ওর হাত থেকে একটা কেড়ে নিয়ে সেও বাড়ি দেওয়া শুরু করে দিছে।দুজনে মারামারি করতে করতে একটা পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে এখন বসে আছে চুপচাপ।কিছুক্ষণ পর ঊষা দাঁত কেলিয়ে বালিশ নিয়ে আবারও এক বাড়ি দিয়ে দৌড় দিলো বারান্দার দিকে।ভোর ওকে থামাতে গিয়ে কোমড় ধরলো আগে।ঊষা থেমে গেছে।ভোর হাসতে হাসতে বললো”এবার থামলি কেন?পালাবি না?”
.
ঊষা মুখ ঘুরিয়ে বললো”কোমড় থেকে হাত সরাবি নাকি পুলিশের কাছে ফোন দিতাম?”
.
ভোর হাত ছেড়ে দিয়ে বললো”আমি বলবো ধরছি আমার বউরে।সে হুদাই আপনাদের ফোন করে জ্বালিয়েছে।ওকে জেলে নিয়ে যান বরং”

ঊষা মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো।ভোর মাথার চুলে হাত দিয়ে চুলগুলোকে এলোমেলো করে সোফায় এসে বসলো আবার।ঊষা নিচের বাগানটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে পিছন ফিরে তাকালো ভোরের দিকে।ভোর ও তাকিয়ে ছিল।দুজনে একসাথে হেসে ফেললো।রুমে এসে ঊষা ওর পাশে বসে বললো”তোর আর আমার ঝগড়া বেশি দূর যায় না কেন?”
.
-“কারণ তুই চাস না।আমিও চাই না।তাই দুজনের একসাথে একসময়ে ভাব হয়ে যায়”
.
কথাটা শেষ করতেই কল আসলো ভোরের।বাবার কল।ফোন কানে ধরে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো সে।বাবা জানালো একটা কাজে ভোর আর তার ভাইয়াকে দেশের বাহিরে যেতে হবে।
শুধু একজনে হবে না বলে ভোরকেও সঙ্গে যেতে হবে।সে যেন ঊষাকে ঢাকায় এনে ভাইয়ার সাথে রওনা হয়।
.
ফোন রেখে ভোর বললো ব্যাগ রেডি করতে
ঊষা জিজ্ঞেস করলো, “কি জন্য”।
ভোর জানালো তারা ঢাকায় ফিরছে।তাকে বিদেশ যেতে হবে।

-“কি বলিস?সিলেট তো ঘুরাই হলো না।মাত্রই তো এলাম”
.
-“কাজে যেতে হচ্ছে।ঘুরতে না।জলদি কর।আজ ঢাকায় ফিরে আবার আমায় রওনা হতে হবে অন্যদিকে।”
.
ঊষা মন খারাপ করে ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছে।তারপর হঠাৎ কি মনে করে বললো,”আমাকে নিবি?”
.
-” না।বাবা শুধু আমাকে আর ভাইয়াকে যেতে বলেছে।তোকে না”
.
ঊষা আরও বেশি মন খারাপ করে ব্যাগ গুছিয়ে হাঁটা ধরলো ভোরের সাথে।হোটেলে দুপুরের খাওয়া শেষ করে দুজনে এবার বাস ধরেছে।ঊষা গাল ফুলিয়ে রেখেছে।কোনো কথা বলছে না
ভোরের হাতে সময় নেই ঊষার রাগ ভাঙ্গানোর।সে বসে বসে ভাইয়ার সাথে কথা বলছে ফোনে।বাসায় আসার পর রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে চলে গেলো ভাইয়ার সাথে।যাওয়ার সময় একবার পিছনে তাকিয়ে ঊষাকে টাটা দিয়ে গেলো।
ঊষা এখন ভোরের মায়ের সাথে বসে আছে সোফায়।উনি টিভি দেখতে দেখতে বললেন,”মন খারাপ কেন?কদিন পর আবার চলে আসবে”

-“না ওর জন্য মন খারাপ না।আমার তো মন খারাপ কারণ ভালো করে ঘুরতে পারলাম না তাই ”
.
-“এ্যাহ!আচ্ছা একটা কথা বলোতো,ভোরকে তোমার পছন্দ না?”
.
ঊষা একটু নড়েচড়ে বললো”ও তো আমার বন্ধু। বন্ধু হিসেবে ওকে তো অপছন্দ করি না”
.
-“অপছন্দ করো না বুঝলাম।কিন্তু পছন্দ করো কি?”
.
ঊষা মাথা চুলকাচ্ছে ভোরের মায়ের প্রশ্নে।তারপর বললো”আন্টি জানেন আপনার ছেলেও তো আমায় পছন্দ করে না।ও বিয়েটা করতে চায়নি”

-“ভোরের মা হই আমি।ওকে আমি তোমার চেয়ে ভালো বুঝি।ও তোমায় পছন্দ করে নাকি ভালোবাসে সেটা আমি প্রমাণ পেয়েছি একদিনেই।তুমিও পেয়ে যাবা।”
.
ঊষা মাথা নাড়িয়ে রুমে চলে আসলো।
-“ভোরের মা বুঝাতে চান ভোর আমাকে ভালোবাসে।”
আচ্ছা তাকেই জিজ্ঞেস করে নেবো।এখন ঘুমাই”
.
ঊষা বালিশ বুকে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।পুরো সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে গেছে।ভাবী কয়েকবার ডেকে গেছেন তাও উঠলো না সে।ঘুমাচ্ছে শুধু।তার অনুভব হয় যে ভোর তার কাছেই।চোখ খুলে দেখলো সত্যি তাই।বিছানায় তার পাশে বসে সে ফোন টিপছে।ঊষা ভাবলো সে স্বপ্ন দেখছে।রাত তখন বারোটা দুই বাজে।সে নিজের হাতটা ভোরের পিঠের উপর রেখে বললো”স্বপ্নে এলি কেন?”

ভোর ফোনের উপর থেকে চোখ সরিয়ে ঊষার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।ঊষা আরেকটু এগিয়ে মাথা ওর পিঠের সাথে লাগিয়ে বললো”মনে হয় যেন সত্যি এসেছিস।তোর আম্মু বললো,”তুই নাকি আমায় ভালোবাসিস?”
.
ভোর চমকে ঊষার দিকে তাকিয়ে বললো,”জানি না”
.
ঊষা ঘুমের ঘোরে হাসলো তারপর আরেকদিকে ফিরে চুপ হয়ে গেলো আবার।ভোর ঊষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো”ম্যাডাম আমি সত্যি সত্যি এসেছি।”
ঊষা লাফ দিয়ে উঠে বসে বললো,”সত্যি?কিন্তু তুই না চলে গেছিলি?”

-“এয়ারপোর্ট অবদি যাওয়ার পর কল আসলো বাবার যে আমাদের কাজটা আরও পরে হবে এখন হবে না।তাই ফিরে আসলাম।”
.
ঊষা চোখ ডলে বললো”আমি ভাবলাম স্বপ্ন।ইশ!”
.
-“এখন ডিনার করবি নাকি আজও আমি খাইয়ে দেবো?মা বলেছে তুই নাকি কিছু খাসনি”
.
-“না আনি খাবো।তুই ফ্রেশ হ।আমি খাবার আনতেছি।
.
-“বাপরে এত সেবা?আমি কই রাখবো?”

ঊষা হেলেদুলে ঘুমের ঘোর মাথায় চাপিয়ে হেঁটে ডাইনিংয়ের দিকে গেছে।আজ রুমে ঢুকার সময় মা ভোরের হাত ধরে একটা কথা বলেছিলেন।কথাটা ছিল যে ঊষা ওকে ভালোবাসে।মোট কথা ওরা দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসে পার্থক্য হলো কারোর মনে সাঁই দেয় না যে আদৌ তারা প্রেমে পড়েছে কিনা।ভালোবাসে কিনা।এতদিন বন্ধুত্বের বন্ধনে আঁটকে থাকায় নতুন একটা সম্পর্ককে তারা মানতে চাইছে না।কিন্তু তারা নিজেও জানে না তাদের মাঝে অনেক আগেই ভালোবাসাটা এসে বসে আছে।এবার তাদের মেনে নেওয়ার পালা।হয়তবা বুঝে নেওয়ার পালা।
ভোর ফোন রেখে দরজার সাথে হেলান দিয়ে ঊষার কাজ দেখছে।এলোমেলো চুলগুলোকে খোলা রেখে কাজ করছে সে
ওড়না কাঁধে ঝুলানো ছিল সেটা এখন ফ্লোরে পড়ে আছে।তার খবর নেই।প্লেটে ভাত বাড়ছে চুপচাপ।ভোর হাসি দিয়ে কাছে এসে নিচ থেকে ওড়নাটা তুললো।তারপর ওর গায়ে পরিয়ে দিয়ে বললো”এখানেও খেতে পারি”

-“নাহ।বাকিরা জেগে যাবে।বড় ভাইয়া ডিনার করছিল?”
.
-“আমি এসেছি দুই ঘন্টা আগে।ভাইয়া খেয়ে ঘুমিয়েও পড়েছে”
.
ঊষা ভোরের হাতে ওর প্লেট ধরিয়ে দিয়ে রুমের দিকে চললো।
ভোর সুন্দর মতন খাচ্ছে কিন্তু ঊষা তার প্লেটে আঙ্গুল দিয়ে ভাতের উপর গোল গোল ঘুরাচ্ছে।একটুও খাচ্ছে না
.
-“কিরে খাচ্ছিস না কেন?”
.
-“খাব তো”
.
-“আমি খাইয়ে দি।প্লেট দে”
.
ঊষা এক গাল হাসি দিয়ে বললো,”তুই বুঝলি কি করে যে আমার নিজের হাতে খেতে মন চাইছিল না?”

-“জার্নির পর তুই নিজের হাতে খাস না তা খুব ভালোমতন জানা আছে।জাস্ট অবাক হলাম এটা শুনে যে তুই নিজের হাতে খেতে রাজি হয়েছিলি”
.
-“শুধু আমার কথা ভাবলে তো হবে না।তুই ও তো কত জার্নি করেছিস তাই আর বলিনি’
.
ভোর মৃদু হেসে ওকে খাবারটা খাইয়ে দিলো।এরপর বিছানায় বসে ভোর বললো,”আচ্ছা মা তোকে কিছু বলেছিল আমাকে নিয়ে?”
.
ঊষা মাথার চুলে খোঁপা করতে করতে বললো”ঐ যে লাভ সাভ নিয়ে বলেছিল”
.
-“আমাকেও”

দুজনে দুমিনিট চুপ থেকে ফিক করে হেসে দিয়ে একত্রে বললো”আমরা নাকি আবার প্রেম করবো!”
হাসতে হাসতে শেষ তারা।হাসি থামিয়ে একটা সময়ে ঊষা বললো,”তুই বলতে পারলি না তুই আমাকে ভালোবাসিস না।তুই আমায় জানি না বললি কেন?তুই কি বাচ্চা?”
.
-“কি জানি!!সহজ ভাষায় না বলতে পারতাম এটা ঠিক তবে জানি না কেন বললাম সেটাও জানি না”
.
-“কচু জানিস তুই।ঘুমা এখন।কাল মা আবার জিজ্ঞেস করলে বলিস শুধু না।ঠিক আছে?”
.
-“আর তুই কি বলবি?”
.
-“আমি বলবো…..”
.
-“হুম?”

-“আমি বলবো ‘না’।বাসি না”
.
ভোর ঊষাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো,”দেখি আমায় বল তো তুই আমায় ভালোবাসোস কিনা?”
.
ঊষা চোখটা ট্যারা করে বললো,”বললে কি ট্রিট দিবি?”
.
-“দেবো।আগে বল শুনি”
.
-“বলবো?”
.
-“হ্যাঁ বল”
.
-“জানি না”

কথাটা বলে ঊষা হাসতে হাাতে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েছে।ভোর কাঁথা চেপে ধরে বললো,”কবে বদলাবি তুই?”
.
-“যেদিন তুই বদলে যাবি ঠিক সেদিন।এখন ঘুমা”
.
ভোর ও শুয়ে পড়েছে।
যেমন ভাবা তেমন কাজ।পরেরদিন ঊষা সকাল সকাল মাকে নাস্তায় হেল্প করতে যখন রান্নাঘরে গিয়েছিল মা ওকে চেপে ধরলো বলতে যে তার ছেলেকে ঊষা ভালোবাসে কিনা।
ঊষা নানা কাজের বাহানা দিয়ে পালিয়ে রুমে চলে এসে ভোরের কাঁচা ঘুম ভাঙিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো সে মায়ের থেকে কি করে বাঁচবে

হয়নি বলা পর্ব ৩+৪

ভোর চোখ ডলতে ডলতে বললো”বলে দে যে বাসোস না”
.
-“কেমন যেন লাগছে”

ভোর উঠে বসে বললো”কেমন লাগছে?ফিলিং লাভ?”
.
-“ধুর!!একটু সিরিয়াস হস না!”
.
ভোর দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে ওয়াসরুমের দিকে যেতে যেতে বললো”আমি সবসময় সিরিয়াস থাকি।তুই ফান হিসেবে নেস”

কথাটা শুনে ঊষা চুপ করে গেছে।
-“মানে কি বললো ভোর?সবসময় সিরিয়াস মানে?যা বুঝলাম ও আমার মুখ থেকে আগে কথা বের করতে চায়।বুঝি না এই ছেলেটা এমন কেন।আরে এসব তো ছেলেদের কাজ।প্রোপোজ করা।ভালোবাসা স্বীকার করা এগুলো তো ছেলেরা করবে।আমি মেয়ে হয়ে কেন??আমার একটা বান্ধুবী ছিল।নাম হলো উর্মি।সে একটা ছেলেকে খুব ভালোবাসতো।গিয়ে বলেও দিয়েছিল
কিন্তু কি লাভ হলো।ছেলেটা ভাব দেখিয়ে চলে গেলো।এখন আমার সাথেও যদি এমন হয়?আমি তো জানি না আদৌ ভোর আমাকে ভালোবাসে কিনা।পছন্দ করে কিনা।

হয়নি বলা পর্ব ৭+৮