এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ১৯

এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ১৯
নুসাইবা রেহমান আদর

সাফোয়ানের কথা সবাই খুব মনোযোগ সহকারে শুনছে।কারো আইডিয়া ছিল না যে সাফোয়ান সবকিছু আগে থেকে জানতে পারে।সাফোয়ান যদি সবকিছু আগে থেকে জেনে থাকে তাহলে এতদিন চুপচাপ কেন ছিল। সবকিছু জেনেশুনেও সেই কোন একশন অ্যাকশন কেন নেয় নাই।

সানা:আচ্ছা সাফোয়ান আপনি সব জানা সত্ত্বেও এতদিন চুপচাপ কেন ছিলেন? চুপচাপ থাকার মানুষ না আপনি। তবু এত কিছু জানা সত্ত্বেও এতটা শান্তভাবে এতদিন কিভাবে ছিলেন।
লিমা বেগম শিহাব সাহেব ভয়ে রীতিমতো ঘামছে সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে। সাফোয়ান আর সাইফ এত কিছু কিভাবে জানলো তারা বুঝতে পারছেনা। তারা এত খবর কোথায় পেল? তাদের কাপাকাপি দেখে সাফোয়ান মুচকি হাসি দিয়ে বলল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সাফয়ান:ভয় পাবেন না আঙ্কেল ভয় পেয়ো না মম।আমি তো শুধু প্রমাণের অপেক্ষায় ছিলাম তার উপর সানার মা বাবা তোমাদের কাছে।এতদিন আমি তাদের প্রচুর খোঁজ করেছিলাম তবুও ঠিকানা পাই নাই। তবে গত দুই দিন আগে জানতে পারি তায়া সানাত মা-বাবাকে খুন করে ফেলছে।
সাফোয়ানের কথা শেষ হতেই তার দিকে সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সানা আর রাফিয়ার মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। তাদের কল্পনায় ছিলো না যে তাদের মা-বাবা বেচে নাই। যতোই তারা খারাপ করে থাকুক, তবুও মৃত্যুর মতো এতো ভয়ংকর শাস্তি?

সানা: আপনার মাথা ঠিক আছে কি বলছেন আপনি?
রাফিয়া: সাফোয়ান ভাইয়া এটা কিভাবে সত্যি হয়?
সবার কথা শুনে লিমা বেগম বিকট হাসি দিয়ে উঠে। হাসতে হাসতে সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠে।
লিমা বেগম: যখন সবাই সত্যিটা শুনেই ফেলেছ তাহলে আর কিসের লুকানো? হ্যাঁ এসব আমি আর শিহাব মিলে করেছি। কারণ আর কতকাল আমর অভাবে অভাবে দিন কাটাতাম?

শিহাব সাহেব: হ্যাঁ এসব আমার ভাবনা ছিলো। আবরার আমার বন্ধু ছিলো। আবরার জানতো না আমি বিবাহিত।ওর সাথে বন্ধুত্ব ছিলো ২ বছরের ও বেশি। হঠাৎ শুনি ভাবি মারা গেছে। সাফোয়ান ও ছোট তখন আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। সাইফের মায়ের সাথে পরামর্শ করে তাকে আবরারের পিছে তাকে লাগিয়ে দেই। যাতে করে সে আবরার এর ভরসার কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠতে পারে। আবরার কে নিজের কথা জালে আটকে বিয়ে করে নিতে পারি। আমাদের সব পরিকল্পনা মতই হচ্ছিল।

লিমা, আব্বাকে বিয়ে করে নিতে সক্ষম হয়। আবরারের দুর্বল যায়গা ছিলো সাফোয়ান।তাই লিমা বেশি বেশি সময় কাটাতো সাফোয়ানের সাথে। তার দেখাশোনা করত তাকে খাবার খাওয়ানো সব করতো।তখম সাইফ এক বছরের ছিলো। লিমা নিজেকে বিধবা হিসেবে উপ স্পন করেছিলো। সাইফকে আবরার নিজের সন্তান হিসেবে পরিচয় দেয়। ধীরে ধীরে আবরারের বিশ্বাস জিতে নেয় লিমা। একদিন জানা যায় যে সব সমত্তি সাফোয়ান প্রাপ্ত বয়স্ক হলে যখন বিয়ে করবে সেই স্ত্রীয়ের নামে যাবে।এর আগে সাফোয়ানের কিছু হয়ে গেলে তা অনাথ আশ্রমে চলে যাবে।লিমা আর আমি মিলে আবরার কে খু*ন করে ফেলি।ঘুমের মাঝ স্ট্রক করেছে বলে মাটি দিয়ে দেই। এরপর থেকে আমরা সাফোয়ান কে লালন – পালন করি।সাফোয়ান সব জানে বাসার পুরানো কাজের লোক থেকে।তবে সবটা জানার আগে তাকেও সরিয়ে দেই।

সাইফ: ছিহ ড্যাড আমার ভাবতেও লজ্জা লাগছে তোমরা এতো নোংরা । ভাবতেও ঘৃনা লাগে আমরা তোমাদের সন্তান।
লিমা: বাকিটুকু শুনে নাও সাইফ। আমরা সব তোমার জন্যই করেছি। তুমি ছাড়া কেউ ছিলো আমাদের আর? আমাদের একমাত্র ছেলে না তুমি? শান্ত হও।
সাইফ: এত অন্যায় করার পর,এত পাপের সম্পত্তি আমি চাই না আম্মু।

সাফোয়ান: শান্ত হও সবাই।আরো অনেক জিনিশ জানার বাকি আছে তোমাদের। এইযে আমার সাথে সানার বিয়ে সব আংকেলের পরিকল্পনা। সানার আব্বু আম্মুকে টাকা-সম্পত্তির লোভ দেখিয়ে রাজি করিয়ে ফেলে। সানার বয়স বাড়িয়ে আমার বউ করে আনে।যাতে ছোট সানাকে ভুলভাল বুঝিয়ে সব সম্পত্তি নিয়ে নিবে। ভুল হয়ে যায় তখন তাদের যখন সানাকে নিয়ে আমি সিরিয়াস হই। সানার প্রেগন্যান্সির খবরে তারা ভয় পেয়ে যায়। বাচ্চাকে দুনিয়ার আলো না দেখানোর পরিকল্পনা করে।

সানার মা-বাবাকে হাত করে আবারো সানাকে বাচ্চা নষ্টের মেডিছিন খাওয়ায়। আমরা সানাকে নিয়ে ব্যাস্ত তখন সানার মা-বাবা ক বাংলাদেশ ছাড়ার কথা বলে মেরে আমদের দেশের বাড়িতেই কবর দিয়ে ফেলে। আমার বডিগার্ড কুদ্দুস ভাই যখন বুঝতে পারে তখন তাকেও গুম করে রাখে।বাচ্চা হারানো,সানার খারাপ অবস্থা কুদ্দুস ভাইয়ের নিরুদ্দেশ হওয়া আমাকে ডিপ্রেশনে ফেল দেয়। কিছুদিন আগে আমি কুদ্দুস ভাইকে খুজে পাই।উদ্ধার করার পর তার কাছেই সব জানতে পারি। থানায় অলরেডি জিডি করা।পুলিশ তদন্ত করছে। একজন মন্ত্রীর নাকের ডগায় বসে এসব ষরযন্ত্র করব আর আমি টের পাবোনা?

সাফোয়নের কথায় এবার শিহাব সাহেব আর লিমা বেগম ভয় পেয়ে যায়। এমনিতেও ওদের সাথে পেরে উঠবে না। ওখান থেকে পালাতে হবে ভেবে নেয়।
লিমা বেগম: সাইফ আমরা তোমার আপন মা- বাবা আমাদের সাহায্য করবেনা? আমাদের বাচাও তুমি।এখান থেকে যেতে সাহায্য করো।

সাফোয়ান: আমার বাবা কে হ ত্যা, আমার সন্তান দুনিয়ার আলো দেখতে দেন নাই? এতো এতো খুনের পরেও আপনাদের চেহারায় সামান্য অপরাধবোধের চিহ্ন নাই। আমি আপনাদের ক্ষমা করবো? কিভাবে ভাবলেন? আমার থেকে খারাপ কেউ আছে আর? জিহাদ গার্ড ডেকে এনে এনাদের আমার ঠিকানায় নিয়ে যাও।পরে ওদের ব্যাবস্থা করবো আজ আর আমার সময় নাই।

সাফোয়ানের কথা মতো দুইজন কে নিয়ে যাওয়া হলো। তাদের আকুতি মিনতি কেউ সুনলো না। সবাই ঘৃনিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো শুধু। মানুষ শত অন্যায়ের পর ও শান্তির ঘুম দেয়।
সানা, রাফিয়া একে অপরকে জরিয়ে ধরে কান্না করছে। তাদের মা-বাবা নাই বিশ্বাস হচ্ছেনা।
সাইফ; তারাও কম অন্যায় করে নাই ভাবি। এভাবে কান্না করবেন না। অন্যায় করা মানুষ যতোই আপন হোক না কেন। নিজেদের শক্ত করুন,তারা আপনার দোষী,আপনার না হওয়া সন্তানের দোষী ।।

সাইফ ঠিক বলছে তারা কার জন্যে কান্না করে যরা তাদের সাথে এতবড় অন্যায় করছে? সাইফ ও কি স্ট্রং। সবার কথা শেষ হতেই রেহানা সাফোয়ানের কাছে দৌড়ে গেলো।তার চোখেমুখে কৌতুল খেলা করছে।
রেহানা: কুদ্দুস কই আছে, কেমন আছে ভাই?
সাফোয়ান: ভালো আছে এখন।সপ্তাখানিক পরেই বাসায় আনা হবে।

রেহানার বুক থেকে এক চাপা পাথর বেরিয়ে গেলো। কাউকে না বলতে পারলেও সে যে কুদ্দুস নামক মানুষ টা কে ভালোবাসতো। কুদ্দুসের হারিয়ে যাওয়ার খবর যে তাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিয়েছিলো।ভালবাসার মানুষ টা কে হারানো যে কি কষ্টের। এতোদিন এই এক মানুষের অপেক্ষায় যে সে কাটিয়ে দিয়েছে।সবাই নিজেদের কষ্টে এতোটাই ডুবে ছিলো যে তাদের মাঝে চলা রেহানার চাপা কষ্টগুলা কেউ উপলব্ধি করতে পারে নাই।
সাফোয়ান সবাইক নিজেদের ঘরে যেতে বলে সানাকে কোলে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। সিনথীয়ার মাথাব্যথা হয়ে আছে এত এত জিনিস গুলা জেনে। সব তার মাথার উপর দিয়ে গেছে। মা-বাবক এতোটা খারাপ কিভাব?

সাইফ: রাফু আমার সাথে একটু ছাদে যাবি?
সাইফে দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে রাফিয়া যে সাইফের মধ্যে কি চলছে। তাই বিনাবাক্যে সাইফের সাথ্ব ছাদে চলে যায়।ছাদে গিয়ে সাইফ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
সাইফ: আমি তোকে খুব ভালোবাসি রাফিয়া।আমার লাফ থেকে হারিয়ে যাইস না। আমি আর কাউক হারতে চাইনা। মা-বাবা তাদের নিজেদের ভুলে তাদের এই পরিনতি ডেকে এনেছে।

এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ১৮

রাফিয়া; কষ্ট পাইয়েন না। যা হয়েছে ভালোর জন্য করেছে আল্লাহ। আমার সেই কিশোরী মন যে কবেই আপনাকে দিয়ে ছিলো। আপনি বুঝতেও পারেন নাই?

এক প্রহর ভালোবাসার শেষ পর্ব