শেষটা সুন্দর পর্ব ১
জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা
‘এই যে তুই ছেলেকে না দেখেই কবুল বলে দিলি, এখন যদি বাসর ঘরে গিয়ে দেখিস, ছেলে বোবা, অন্ধ বা কালা, তখন কী করবি?’
বান্ধবীর প্রশ্নের জবাবে মেহুল কেবল দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এই বিয়ে নিয়ে কস্মিনকালেও তার কোনো আগ্রহ ছিল না। ছেলে যেমনই হোক তাতে তার কী। সে তো এমনিতেও ঐ ছেলেকে কখনো স্বামী হিসেবে গ্রহণ করবে না।
মেহুলের মৌনতা দেখে তার বান্ধবী পুনরায় জিজ্ঞেস করল,
‘কিরে, ভয় পাচ্ছিস? আরে এত ভয় পাস না। ভাইয়াকে আমরা দেখেছি। মাশাল্লাহ, তুই একবার দেখলেই প্রেমে পড়ে যাবি।’
মেহুল তখন নাকের পাল্লা ফুলিয়ে রাগি স্বরে বলল,
‘আমাকে কি তোদের মতো অসভ্য মনে হয়, যে যাকে দেখব তার প্রেমেই পড়ে যাব?’
‘আরে বোকা, উনি তো তোর স্বামী। তুই উনার প্রেমে পড়বি না তো কার প্রেমে পড়বি?’
মেহুল দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘কারো প্রেমে না। প্রেমে পড়ার জন্য আমি বিয়ে করেনি। বিয়ে করেছি শুধু আমার অসুস্থ বাবাকে সুস্থ করার জন্য।’
তার বান্ধবী হেসে বলল,
‘সেই যেই জন্যই করিস না কেন, ভাইয়ার প্রেমে তো তুই অবশ্যই পড়বি।’
মেহুলের মেজাজ এমনিতেই ঠিক নেই। তার উপর এসব কথা তার মেজাজের আরো বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। সে ভ্রু কুঁচকে তার বান্ধবীর দিকে চেয়ে বলল,
‘এখান থেকে উঠ। যা ভেতরে গিয়ে দেখ সবাই কী করছে। আর মা’কে বল, আমি আর বেশিক্ষণ এখানে বসে থাকতে পারব না। আমাকে যেন ভেতরে নিয়ে যায়।’
মেহুলের বান্ধবী তার কথা মতো ভেতরে চলে যায়। মেহুল একাই বসে থাকে। বিরক্তির ছাপ তার চোখে মুখে স্পষ্ট। এই ভারি গহনা আর শাড়ির চাপে সে যেন আরো নেতিয়ে পড়ছে। চারদিকের এত আলোকসজ্জাও তাকে শান্তি দিচ্ছে না। কেন এত আয়োজন?
যেখানে কনের’ই তার নিজের বিয়ে নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই, সেখানে কেন এত আয়োজন করতে হবে। মেহুলের রাগে দুঃখে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। সে তার মাথার উপর থেকে দুপাট্টা’টা একটানে খুলে ফেলে দেয়। তখনই তার রুমে তার মা আসেন, সাথে আসেন আরেকজন ভদ্র মহিলা। মেহুলের মা রামিনা বেগম জোরপূর্বক হেসে মেহুলের কাছে গিয়ে বসলেন। বললেন,
‘খুব গরম লাগছে, মা? আরেকটু অপেক্ষা করো, তারপরই ফ্রেশ হতে পারবে।’
মেহুল রাগে চোখ মুখ খিঁচে বলল,
‘মা, আমার অসহ্য লাগছে।’
রামিনা বেগম চোখের ইশারায় তাকে চুপ হতে বললেন। তখন উনার সাথে আসা ভদ্র মহিলাটি বললেন,
‘আমরা আর কিছুক্ষণ পরই চলে যাব। তখন এসব ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নিও। এসব পরে থাকা আসলেই খুব বিরক্তের কাজ।’
মেহুল হেসে বলল,
‘যাক শুনে ভালো লাগল, আপনি অন্তত আমার কষ্টটা বুঝেছেন।’
মেহুলের কথা শুনে তার মা রেগে গেলেন। তিনি তার দিকে গরম চোখে চেয়ে বললেন,
‘তোমার শাশুড়ি হোন উনি।’
মেহুল হেসে বলল,
‘হ্যাঁ মা, জানি তো। আমার একমাত্র শাশুড়ি মা।’
ভদ্র মহিলাটিও তখন হেসে মেহুলের মাথায় হাত রেখে বললেন,
‘হে হে, তুমিও আমার একমাত্র ছেলের বউ।’
মেহুল আর জবাবে কিছু বলল না। আগের মতোই মুখ কালো করে বসে রইল। উনারা দুজন বেরিয়ে গেলেন। মেহুলের কেন যেন খুব রাগ হচ্ছে। সবার প্রতি রাগ হচ্ছে। আর সবথেকে বেশি রাগ হচ্ছে, ঐ লোকটার প্রতি যাকে সে বিয়ে করেছে। অথচ একবারের জন্যও যাকে দেখেনি। ঐ লোকটাই বা কেমন, উনিও নিজে থেকে একবার দেখা করতে চাইলেন না। আশ্চর্য! মা বিয়ে ঠিক করেছেন, আর উনিও নাচতে নাচতে বিয়ে করে ফেলেছেন। নির্ঘাত কোনো ক্যাবলাকান্ত হবে। হোক, তাতেও মেহুলের কিছু যায় আসে না। বরং ক্যাবলাকান্ত হলেই ভালো, তার কথায় উঠ বস করাতে পারবে।
শ্বশুরবাড়ির সবাই চলে গেল। মেহুলের কাবিন হয়েছে বিধেয় তাকে আর তার হাজবেন্ডকে রেখেই সবাই চলে যায়। মেহুল তার মা বাবার রুমে। তার রুম সেই সন্ধ্যা থেকে সাজানো হচ্ছে। আর ঐ ভদ্র লোক, যার সাথে মেহুলের বিয়ে হয়েছে, মেহুল শুনেছে উনি নাকি এখনও তাদের ড্রয়িং রুমে আছেন।
বিয়ে হয়ে গিয়েছে অথচ এখনও একবারের জন্য লোকটার তার বউকে দেখার ইচ্ছে হলো না। মেহুলের হঠাৎ চিন্তা এল, লোকটারও কি তার মতো বিয়েতে মত ছিলনা নাকি? হয়তো সেই জন্যই উনি বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরও মেহুলের সামনে একবার আসেনি। যদি এমন কিছু হয়, তবে সেটা তার জন্যই ভালো হবে। তবে সে বিয়ে করেও মুক্তি পাবে। তাকে আর কোনো বাধা ধরা নিয়মের মাঝে চলতে হবে না। ঐ লোক চলবে ঐ লোকের মন মতো, আর সে চলবে তার মন মতো।
কথাগুলো মনে মনে ভেবে বেশ খুশি হয় মেহুল। বেশ স্বস্তিও পায় সে। বিয়ে নামক ঝামেলার কারণে তার জীবন তো আর থেমে যাবে না।
একটু পর মেহুলের মা রামিনা বেগম একটা খাবারের প্লেট নিয়ে রুমে এলেন, তাকে খাইয়ে দেওয়ার জন্য। মা’কে দেখে মেহুল মুখে কুলুপ এঁটে বসল। সে খাবে না। রামিনা বেগম মুখের সামনে খাবার ধরে বললেন,
‘ন্যাকামো না করে খেয়ে নে।’
মেহুল ভ্রু কুঁচকে চাইল। বলল,
‘আমি ন্যাকামো করছি, মা?’
‘হু, করছিস। স্বাভাবিক জিনিসটাকে তুই স্বাভাবিক ভাবে কেন মেনে নিতে পারছিস না? বিয়েটা যখন করেই ফেলেছিস, তখন বিয়েটা মেনে নে। অযথা ঝামেলা করিস না।’
মেহুলের চোখ ছলছল করে। টুপ করে তার উষ্ণতা গাল বেয়ে গড়িয়েও পড়ে। সে নাক টেনে বলে,
‘আমি কী ঝামেলা করেছি, মা? আমি কি চাইলে ঐ মহিলার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারতাম না, উনাকে সব বলে দিতে পারতাম না? পারতাম। কিন্তু, কেন করিনি জানো? তোমার আর বাবার কথা ভেবে। তোমার আর বাবার কথা ভেবে আমি সবকিছু মুখ বুজে মেনে নিয়েছি। যাকে বলেছো, তাকেই বিয়ে করেছি। তাও তুমি এখন বলছো, আমি যেন কোনো ঝামেলা না করি? আমি ঝামেলাটা করলাম কোথায়?’
‘করিসনি। আর ভবিষ্যতেও কিছু করিস না। তোর বাবা কষ্ট পাবেন।’
মেহুল তাচ্ছিল্য ভাবে হাসি দেয়। শুকনো মুখে বলে,
‘একটা সন্তান সব থেকে বেশি কষ্ট কখন পায় জানো? যখন তার মা বাবা তাদের কষ্টের দোহাই দিয়ে তার উপর কিছু চাপিয়ে দেয়। মা, তুমি জানতে গান জিনিসটাকে আমি কত ভালোবাসি? অথচ বিয়ের আগেই ঐ বাড়ি থেকে শর্ত রাখল, আমার গান গাওয়া বন্ধ করতে হবে।
তোমরাও তাতে এক কথায় রাজি হয়ে গেলে। একটা বারের জন্যও আমার কথাটা ভাবলে না। আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি সেটা ভাবলে না। ঐ ভদ্র মহিলা বললেন, উনি আমাকে পড়াশোনা করাবেন, কিন্তু চাকরি করার দরকার নেই। উনার ছেলের টাকাই নাকি আমি শুয়ে বসে শেষ করতে পারব না। আর তোমরা তাতেও রাজি হয়ে গেলে।
আমার ইচ্ছা অনিচ্ছার কোনো মূল্যই দিলে না। আর আমিও আমার অসুস্থ বাবার কথা রাখতে, আমার মা’র মুখে হাসি ফুটাতে নিজের সবকিছুকে বিসর্জন দিলাম। আর এতকিছুর পরও তুমি বলছো, আমি যেন অযথা ঝামেলা না করি? না মা, নিশ্চিন্তে থাকো। আমি আর কোনো ঝামেলা করব না। এখন যদি উনারা বলেন, আমার আর পড়াশোনার করার কোনো দরকার নেই, তবে আমি তাতেও রাজি হয়ে যাব। উনারা যা বলবেন, আমি সবকিছু অক্ষরে অক্ষরে মেনে নিব, তবু তোমাদের মাথা নিচু হতে দিব না। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো, মা।’
মেয়ের কথাগুলোতে যে কতটা যন্ত্রণা বেরিয়ে আসছে সেটা মা ঠিকই বুঝতে পারছেন। তবে মেয়ের সামনে তাকে কঠোর থাকতেই হবে। তিনি একবার নরম হয়ে গেলে, মেয়েও তাকে পেয়ে বসবে। তখন আর সে কোনোভাবেই এই বিয়ে মেনে নিতে চাইবে না। তাই তাকে কঠিন হতেই হবে, যতটা সম্ভব।
রামিনা বেগম মেয়ের মুখে খাবার পুরে দিয়ে বললেন,
‘জীবনকে সহজ চোখে দেখলেই, জীবন সহজ। সবকিছু নির্ভর করছে তোমার দৃষ্টিভঙ্গির উপর। রাবীর ভালো ছেলে, ও তোমাকে ভালো রাখবে। আর স্বামীর সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারলে স্বামীই তোমার সব ইচ্ছে পূরণ করবে।’
‘প্রয়োজন নেই। আমার ইচ্ছে আমি একাই পূরণ করব। আমার কাউকে প্রয়োজন নেই।’
মেহুলকে তার বান্ধবীরা তার রুমে রেখে যায়। নিজের রুম দেখে সে যেন চিনতেই পারছে না। চারদিকে ফুলের সুবাসে মৌ মৌ করছে। তবে এত এত সুন্দরও যেন তার মনকে আকর্ষিত করতে পারছে না। সে বিরক্ত হয়ে ধপ করে তার বিছানায় গিয়ে বসে। কিছুক্ষণ পরেই তার রুমের দরজায় খট করে শব্দ হয়।
সে বুঝতে পারে, লোকটা চলে এসেছে। সে ঝিম মেরে বিছানায় বসে থাকে। লোকটা দরজা আটকে দিয়ে মেহুলের দিকে ঘুরে তাকায়। মেহুলের মাঝে কোনো হেলদুল না দেখে লোকটা খানিক বিস্মিত হলো। তার জানা মতে এই মুহুর্তে নিয়ম অনুযায়ী নতুন বউ এসে স্বামীকে সালাম করে। তবে তার বউয়ের মাঝে এরকম কিছুর আভাস না পেয়ে সে চিন্তিত। তাই সে ধীর পায়ে এগিয়ে যায়। মেহুলের সামনে দাঁড়িয়ে মিহি স্বরে বলে,
‘আসসালামু আলাইকুম।’
লোকটার মুখে সালাম শুনে মেহুল বিব্রত কন্ঠে জবাব দেয়,
‘ওয়ালাইকুমুস সালাম।’
লোকটা তারপর তার থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে বসে। মেহুল এখনও মাথা নিচু করেই বসে আছে। তার সামনের মানুষটার দিকে তাকানোর ইচ্ছে তার হচ্ছে না। লোকটা কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলে,
‘এই বিয়েতে যে আপনার মত ছিল না, সেটা আমি জানি।’
মেহুল চকিত হয়। বিস্ময় নিয়ে লোকটার মুখের দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে ভ্রু কুঁচকে ফেলে সে। বলে উঠে,
‘আপনি!’
apu ey golper porer part gula den na kno … golpo ta kob interesting porer partgula taratare den….
Apu eii golper part gulo den onkdin thekei to den na
Sob part ak sathe video dewa ase ai part last a to video add kore dewai ase na dekhe thakle giye dekhen abar