এক প্রহর ভালোবাসার সিজন ২ গল্পের লিংক || নুসাইবা রেহমান আদর

এক প্রহর ভালোবাসার সিজন ২ পর্ব ১
নুসাইবা রেহমান আদর

~কোন সাহসে তুমি এই মেয়েকে শিকদার বাড়ির বউ করে এনেছো যার চাল চুলোর ঠিক নেই? এই অসভ্য মেয়েটাকে কিভাবে তুমি বিয়ে করতে পারলে। তুমি জানতে নাএই মেয়েটার সাথে তোমার বড় ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছিল ?
সাইফ নিজের মায়ের মুখে যখন শুনলো তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর সাথে বড় ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছিলো তা শুনে সে আকাশ থেকে পরলো।

সাইফ কল্পনাতেও আনে নাই, যে মেয়েটাকে সে পালিয়ে বিয়ে করবে ওই মেয়েটাই তার বড় ভাইয়ের হবু স্ত্রী বের হবে। শুধু যে সাইফ অবাক হয়েছে তা না। সাইফের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা সদ্য শ্বশুরবাড়িতে পা রাখা মেয়েটি রাফিয়াও তার স্বামী এবং শাশুড়ি মায়েরর দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটির বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে লোককে বিয়ে করবে না দেখে পালিয়ে গিয়েছিল তার ভালোবাসার মানুষের সাথে সেই মানুষটাই তার ভাসুর বের হলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

~আমি কিভাবে বুঝবো যে রাফিয়ার সাথে ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। আমি তো বাড়িতে ছিলাম না। আমার কি দোষ তুমি আমাকে কখনো ছবি দেখাইছো ভাইয়ের হবু স্ত্রীর?
~আমিও বা কিভাবে বুঝবো তুই এই ছোটলোক মেয়েটাকে বিয়ে করে বাড়িতে তুলে আনবি। আমার ভাবতে প্রচন্ড অবাক লেগেছে এই মেয়েটা এতিম দেখে তাকে আমি আমার বাড়ির বউ করে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। ভালো মনে করে আর সে কিনা শিকদার বাড়ির মান-সম্মান ডুবিয়ে ভরা বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে চলে যায়। এবং এই বাড়ির ছোট ছেলেকে বিয়ে করে ফিরে আসে। এমন একটা পরিস্থিতিতে কিভাবে থাকবি সাইফ তুই তোর ভাইকে চিনস না?

সাইফ পড়েছে সমস্যায় একদিকে তার ভালোবাসার মানুষ অন্যদিকে তার শ্রদ্ধার বড় ভাই। ছেলেটা ভাইয়ের কথা ভাবছে সাথে স্ত্রীর কথাও ভাবছে। যদি সে আগেই টের পেতো যে বড় ভাইয়ের সাথে তারই প্রিয়তমার বিয়ে ঠিল হয়েছে তখন না হয় ভাইকে বুঝিয়ে বলতে পারতো যে ঐ মেয়েটাকে সে ভালোবাসা। নিজের ভালোবাসার কথা যদি সাইফ তার বড় ভাইকে বুঝিয়ে বলতে পারতো তাহলে আজ তাকে পালিয়ে যেতে হতো না। কিন্তু ভাগ্যক্রমে সে বাসা থেকে দূরে থাকায় কখনোই জানা হয় নাই কার সাথে বড় ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে।

তার ভালোবাসার মানুষের বিয়ে ঠিক হয়েছে যখন থেকে শুনেছে তখন থেকে অন্য কিছু তার মাথায় ঘুরে নাই।
রাফিয়া অসহায় চোখে তার স্বামী সাইফের দিকে তাকিয়ে আছে। সে ভাবছে আজ তার স্বামী তার পক্ষ নিবে নাকি বড় ভাইয়ের কথা ভেবে তাকে ছেড়ে দিবে। এসব কথার মাঝেই একটি সুদর্শন ছেলে গাড়ি থেকে নেমে তাদের দিকে এগিয়ে আসে। ছেলেটিকে এগিয়ে আসতে দেখে সাইফের প্রচণ্ড ভয় হচ্ছে। সাইফ ভালোভাবে জানে তার ভাই কখনো সম্মানের সাথে সমঝোতা করে না। বিবাহ আসরে তাকে কত বড় অপমান হতে হয়েছে এটা ভেবেই তার রুহু কেঁপে উঠেছে।
বড় ছেলের দিকে তাকিয়ে মিসেস নুরজাহান শিকদার কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না। কোন এক কারণে তার বড় ছেলে তাকে পছন্দ করে না কিন্তু অসম্মানও করে না।

~ভাই আমার কথা তুমি একবার শুনো আমি জানতাম না যে রাইফার সাথেই তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
ছেলেটি রাগী চোখে তার ছোট ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দেয়।
~কেন যদি জানতে পারতি ওই মেয়েটার সাথেই আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তাহলে নিজের ভালোবাসার মানুষের আমার সাথে বিয়ে হতে দিতি?যখন এই জিনিসটা করতে পারবি না তাহলে এসব কথার মানে কি। আমি আর এই বিষয়ে কোনো কথা শিকদার বাড়িতে চাই না। এভাবে আমাকে অপমানিত না করে প্রথমে যদি জানিয়ে দিতে তাহলে আমি নিজেই বিয়েটা বন্ধ করে দিতাম। বুঝতে পেরেছিস তুই আমার সম্মানে কতটা আঘাত লেগেছে?

~আই এম সরি ভাই আমি সত্যিই জানতাম না। আমি যদি জানতাম তাহলে তোমাকে আগেই সব বলে দিতাম। আমার মাথা ঠিক ছিল না ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে এই কথা শুনে।
সাইফের প্রচণ্ড খারাপ লাগছে এটা ভেবে তার ভাই তার সাথে রাগ করে আছে।
সাইফের কথা না শুনে সাফোয়ান তার মায়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,,
~ছোট আম্মিজান তাড়াতাড়ি দুই বউ বরণ করার জন্য তৈরি হন। শিকদার বাড়ির বড় বউ গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছে।কতক্ষন বসে থাকবে সে।

সিকদার বাড়িতে উপস্থিত থাকা সকল মানুষ ঝটকার উপরে ঝটকা খেয়েই যাচ্ছে। সাফোয়ান শিকদার এবার কাকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে।
~শিকদার বাড়ির বড় বৌ মানে ভাজইজান আপনি কি বিয়ে করেছেন? কিন্তু বড় ভাবিজান মানে ইয়ে থুক্কু ছোট ভাবিজান তো ছোট ভাইজান কে বিয়ে করেছে না?

ছোট বোন সাইফার প্রশ্নে তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় সাফোয়ান। ভাইয়ের এমন রাগান্বিত চেহারা দেখে চুপচাপ সেখান থেকে সরে যায় সাইফা। সে যে ভুল জায়গায় ভুল প্রশ্ন করে ফেলছে এই কথাটি তার কিছুক্ষণ পরে মনে হয়েছে।
~কোন সমস্যা আমি বিয়ে করেছি দেখে কারো? যাই হোক আমার বিবাহিত স্ত্রীর যেন এই বাসায় কোন অসম্মান না হয়। এটা খেয়াল রাখবেন, আমি আমার রুমে গেলাম। আপনাদের আদিখ্যেতা শেষ হলে ওকে পাঠিয়ে দিবেন।

কাউকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সাফোয়ান হনহন করে বাড়ির ভিতরে চলে গেল। এদিকে সবাই হতভম্ব হয়ে সাফোয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। একদিকে নতুন বউ রাফিয়া ও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে কোন কথা বলছে না। অন্যদিকে মিসেস নুরজাহান সিকদার তার মেয়েকে বলে।
~সাইফা যাও গাড়ি থেকে তোমার বড় ভাবিকে বের করে নিয়ে আসো। সাইফ তোমার ছোট কাকি কে ঘরে গিয়ে বরণডালা তৈরি করতে বলো।
~জি আম্মু যাচ্ছি।

সাইফা মায়ের আদেশ পেয়ে সুর সুর করে গাড়ির সামনে চলে গেলো। তার নিজের কাছেও মনে হচ্ছে তাড়াতাড়ি বড় ভাবিকে দেখতে হবে। কোন মেয়েকে তার বড় ভাই বিয়ে করে নিয়ে এসেছে।
গাড়ির এক কোনায় জুবুথুবু হয়ে বসে আছে। সানা সে ভাবতেও পারছে না তার বিয়ে হয়ে গেছে। তার বড় বোনের ভুলের জন্য যে এভাবে তাকে মাশুল দিতে হবে সে ভেবেও পায়নি। আজ তার বড় বোন যদি বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে গিয়ে না থাকতো তাহলে সাফওয়ান তাকে জোর করে বিয়ে করতে পারত না।দুনিয়াতে যদি মানুষের টাকা থাকে ক্ষমতা থাকে তাহলে সে কিনা করতে পারে এটাই তার প্রমাণ। একজন নাবালিকা মেয়েকে ক্ষমতার জোরে বিয়ে করে নিয়ে আসলো অথচ কেউ কিছু বলতে পারল না।

সাইফা গাড়ির দরজা খুলে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সানার দিকে। বাড়ির বড় বউ যে তার থেকেও ছোট এটা কল্পনার বাইরে ছিলো। সাইফা কি কোন কথা না বলে এভাবে গাড়ির ভিতরে তাকিয়ে থাকতে দেখে ধমকে উঠে নুরজাহান শিকদার।
~ওভাবে হাঁ করে গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছো কেন সাইফা? তাড়াতাড়ি কর।
মায়ের ধমক খেয়ে তাড়াতাড়ি সানাকে উদ্দেশ্য করে বলে সাইফা।

~ভাবিমনি আপনি বের হয়ে আসুন গাড়ি থেকে। এভাবে আর কতক্ষণ গাড়ির মধ্যে বসে থাকবেন?
একটি মেয়ের গলার আওয়াজে তার দিকে ঘুরে তাকায় সানা। তার থেকে বয়সে বড় একটি মেয়ে তাকে ভাবিমনি ডাকছে এটা যে তার কাছে কতটা অবাক এর বিষয় সে ভেবে পাচ্ছে না। এটাই লেখা ছিল তার কপালে। এখন এই বাড়ির মানুষ তার সাথে কি ব্যবহার করে কে জানে।

সানা চুপচাপ সাইফার সাথে গাড়ি থেকে নেমে সামনে আগায়। বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়াতেই সাইফ মিসেস নুরজাহান সিকদার এবং রাফিয়া চোখ বড় বড় করে সানার দিকে তাকিয়ে আছে। অন্যদিকে একজনের দিকে তাকিয়ে সানার দুই চোখ ছলছল করে উঠলো। সে ভাবতেও পারেনি এই অবস্থায় তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে এই মেয়েটি।অনেক কান্না পাচ্ছে সানার তবুও নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলো সে।

নুরজাহান বেগম মনে মনে প্রচন্ড অসন্তুষ্ট হয়েছেন সাফোয়ানের বউ দেখে। তবুও সে কিছু বলতে পারবে না।কারণ সাফোয়ানের উপর সে কিছু বললে সাফোয়ান বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে যাবে। নুরজাহান শিকদার স্বামীকে কথা দিয়েছিলো যতোদিন বেচে থাকবে ততোদিন সাফোয়ান কে এ বাড়ি থেকে দূরে যেতে দিবেনা।

এক প্রহর ভালোবাসার সিজন ২ পর্ব ২