শেষটা সুন্দর পর্ব ১
অজান্তা অহি
‘তরী আপু,রাতের বেলা তুমি যখন ঘুমিয়ে পরেছিলে তখন নির্ঝর ভাইয়া তোমার এত এত ছবি তুলেছে আর তোমার গালে পাপ্পিও দিয়েছে।’
সাত বছর বয়সী ফুফাতো বোনের কথা শুনে চমকে নির্ঝরের মুখপানে তাকালো তরী।লম্বামতন ফর্সা ছেলেটার চেহারা ও পোশাকে আভিজাত্যের ছাপ!লম্বাটে মুখে তীক্ষ্ণ একজোড়া চোখ, চিকন ভ্রু,গোলগাল নাক, আর ভরাট ঠোঁট নিয়ে সুদর্শন একটা ছেলে।এই ছেলে কেন তার মতো সাধারণ চেহারার একটা মেয়ের ছবি লুকিয়ে তুলবে?
তরী কপাল কুঁচকে নির্ঝরের দিকে কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে বলল,
‘জ্যোতি যা বলছে তা কি সত্য?আপনি লুকিয়ে আমার ঘুমন্ত অবস্থার ছবি তুলেছেন নির্ঝর ভাই?আর…’
বাকি অংশটুকু উচ্চারণ করতে পারলো না তরী।তার প্রশ্নে নির্ঝর গলায় ঝুলানো দামী ক্যামেরার দিকে এক পলক তাকাল।দাঁত চেপে চোখ সরু করে জ্যোতির দিকে তাকাতে জ্যোতি ভয় পেয়ে দৌঁড়ে পালাল।জ্যোতির গমন পথের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মাথার ঘন চুলে একবার আঙুল চালালো সে।তারপর বিরক্তি প্রকাশ করে বলল,
‘তুমি কি নিজেকে মিস ডায়না ভাবো তরী?তোমার মতো এমন ক্ষ্যাত একটা মেয়ের ছবি আমি তুলবো?তাও আবার লুকিয়ে?এই নির্ঝর শাহরিয়ারের ক্যামেরায় ছবি উঠার মতো যোগ্যতা তোমার আছে?আবার চুমুও খাব?তোমাকে চুমু খাওয়ার থেকে ডাস্টবিনকে চুমু খাওয়া বেটার।’
মুহূর্তে তরীর মুখটা কালো হয়ে গেল।কালবৈশাখী ঝড়ের ঘনকৃষ্ণ মেঘে ঢেকে গেল মনের আকাশ।দু হাতে ওড়না চেপে ধরে বড় করে শ্বাস নিল সে।কিছুতেই চোখে জল আসতে দেয়া যাবে না।নিজেকে সামলে আজকের এত আনন্দের দিনটা মাটি করে দেওয়া কুৎসিত মনের মানুষটির দিকে আরেক পলক তাকাল।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নির্ঝর নামের ছেলেটি তরীর একমাত্র ফুপির দেবরের ছেলে।ফুপির বাড়ি সিলেট।কিন্তু বাবার চাকরিসূত্রে নির্ঝর ছোটবেলা থেকে পরিবারের সাথে ঢাকাতে থাকে।সেজন্য তরী ফুপির বাসায় মাঝে মধ্যে আসলেও নির্ঝরের সাথে কখনো দেখা হয়নি।নির্ঝরকে সে দেখেছিল সাত-আট বছর আগে একটা পারিবারিক অনুষ্ঠানে।বহু বছর পর দ্বিতীয় বারের মতো গতকাল সন্ধ্যায় নতুন করে পরিচয় হয়েছে।গতকাল কয়েক মিনিট কথা বলে ছেলেটাকে ভালো মনে হয়েছিল।কিন্তু আজ তার নোংরা মনের পরিচয় পেল।প্রথমবারের মতো এত সুদর্শন একটা ছেলের কুৎসিত আর বিকৃত মানসিকতা তার ভেতরটা পুড়িয়ে দিল।
নির্ঝরের গুনগুন শব্দে তরীর ভাবনার সুতোয় টান পড়লো।তাকিয়ে দেখলো নির্ঝর জায়গা বদল করেছে।সিঁড়ির পাশে দাঁড়িয়ে সামনের দৃশ্যের ছবি তুলছে।
ফুপির বড় ছেলে জীবন ভাইয়ার আজ বিয়ে।সেই উপলক্ষে তরী দুদিন হলো ফুপির বাড়ি এসেছে।এতক্ষণ ভালো সময় কাটছিলো।কিন্তু নির্ঝর নামক ছেলেটা যেন হুট করে তার ভালো থাকার পাহাড়টা ধ্বসে দিল।
তরী দমে গেল না।চারপাশে একবার নজর বুলিয়ে নির্ঝরের দিকে এগিয়ে গেল।কন্ঠে বিষ ঢেলে নিচুস্বরে বলল,
‘একদম ন্যাকা সাজার চেষ্টা করবের না মি. নির্ঝর শাহরিয়ার!ঢাকাতে থেকে চরিত্রের কতটা অবনতি করেছেন তা টের পাচ্ছি।তবে শুনুন,ঢাকার বাতাস গায়ে মেখে সব জায়গা ঘুরবেন না।তাহলে শরীরের সবগুলো হাড়গোড় মাংস থেকে আলাদা হয়ে যাবে।’
নির্ঝর ক্যামেরা থেকে চোখ সরিয়ে বিস্ময় নিয়ে বলল,
‘হোয়াট?’
‘আমার ছবি কেন তুলেছেন তার কৈফিয়ত চাই।ছি!কতটা জঘন্য আপনার মন মানসিকতা।না জানি ঘুমের মধ্যে আমার কাপড়চোপড় ঠিক ছিল কি না!কি কি করেছেন কে জানে!’
তরীর মুখের সর্বত্র দুশ্চিন্তা এসে ভর করলো।নির্ঝর দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘আর একটা কথা বলবে তো তোমাকে আমি ভয়ংকর শাস্তি দিবো।বললাম তো আমি ছবি তুলিনি তোমার।’
‘তাহলে কি একটা বাচ্চা মেয়ে মিথ্যে বলবে আমাকে?’
নির্ঝর ফু দিয়ে কপালের চুলগুলো সরিয়ে দিল।মেকি হেসে বলল,
‘জ্যোতিকে তোমার বাচ্চা মেয়ে মনে হয়?হাউ ফানি!ওর মতো বিচ্ছু পৃথিবীতে দুই পিস নেই!’
তরী ঠোঁট কামড়ে গভীর চিন্তায় ডুবে গেল।কার কথা বিশ্বাস করবে?নির্ঝর নাকি জ্যোতি?কুঁচকানো কপালে সে নির্ঝরের দিকে তাকালো।গম্ভীর মুখে অনবরত সামনের ছবি তুলে যাচ্ছে সে।
তরী আচমকা নির্ঝরের সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো।ডান হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘আপনার ক্যামেরা দিন।ছবি তুলেছেন কি না আমি পরখ করবো!’
নির্ঝর সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরা দু হাতে চেপে ধরে বলল,
‘ইম্পসিবল!’
‘কেন?অসম্ভব কেন?’
বলে তরী অপেক্ষা করলো না।নির্ঝরের ক্যামেরা হাত দিয়ে স্পর্শ করতে নিল।হাত এগিয়ে নিতে খপ করে তার হাত ধরে ফেলল নির্ঝর।নির্ঝরের আচমকা স্পর্শে ভেতরটা কেঁপে উঠলো তরীর।তড়িঘড়ি করে হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার আগেই নির্ঝর তার হাত ছুঁড়ে ফেলে দিল।দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট।ক্যামেরায় হাত দেয়া মানে আমার কলিজায় হাত দেয়া!ওই নোংরা হাতে ক্যামেরা স্পর্শ করার দুঃসাহস দেখাবে না।’
নির্ঝরের কন্ঠের প্রখরতায় কিছুটা পিছিয়ে এলো তরী।উসখুস করে কিছু বলতে নিতে সিঁড়ি মাড়িয়ে হইহই করে সবাই নিচে নামা শুরু করলো।বরযাত্রী যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।বিকেল তিনটে বাজতে চলল!
সিঁড়ি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দেখলো নির্ঝর সরে পড়েছে।জীবন ভাইয়া আর তার বন্ধুদের সাথে হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলছে।
তরী বিড়বিড় করে বলল,
‘বজ্জাত ছেলে!আজ তোর ক্যামেরা না ভেঙে আমি ভাত খাব না।এই মুহূর্ত থেকে আমি ক্যামেরা ভাঙার জন্য অনশন শুরু করলাম।’
হাতে কারো স্পর্শ পেতে তরী চমকে গেল।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো ফুপি।সে তাকাতে ফুপি স্পষ্ট সুর তুলে বললেন,
‘এখানে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করছিস কেন?বরযাত্রীর সাথে যাবি না?তাড়াতাড়ি গিয়ে চুলগুলো খোঁপা করে আয়।দশ মিনিটের মধ্যে সবাই রওনা দিবে।’
তরী শাড়ির কুঁচি একটু নেড়েচেড়ে ঠিক করলো।পিঠময় ছড়িয়ে থাকা মাথার খোলা চুলগুলো একবার ছুঁয়ে দিয়ে বলল,
‘ও ফুপি!চুল খোলা থাক না!’
‘খবরদার না।যা গরম পড়েছে!মরে যাবি।যা রুমে গিয়ে বেঁধে আয়।অনেকটা পথ যেতে হবে।’
‘তুমিও কি যাবে?’
‘আমি না!আমি বাদে সবাই যাবে।সবাই মানে সবাই!’
ফুপি তাড়া দিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল।সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।যে যার যার কাজে ব্যস্ত।তরী আড়চোখে একবার নির্ঝরের দিকে তাকালো।নির্ঝর গলায় ঝুঁলানো ক্যামেরাটা তার পাশের সোফায় নামিয়ে পাঞ্জাবির হাতা গুটাচ্ছে।তার মনোযোগ অন্যদিকে।
সঙ্গে সঙ্গে তরীর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।শাড়ির আঁচল টেনে লম্বা করে ঘোমটা দিল সে।তারপর পা টিপে টিপে নির্ঝরের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো।চারপাশে এক বার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বেশ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে সে সোফার উপরের ক্যামেরাটা হাতে নিল।চোখের পলকে সেটা শাড়ির আঁচলের তলায় লুকিয়ে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে মন খুলে হাসলো তরী।ইশ!কি যে ভালো লাগছে!ক্যামেরাটার যে একটা গতি করতে পেরেছে এই সুখে তার এক পায়ে দাঁড়িয়ে নাচতে ইচ্ছে করছে।বজ্জাত ছেলে!
“আমি তোর আয়না হবো আজ!
তুই শুধু ইচ্ছে মতো সাজ,
রোদ্দুরে, যায় উড়ে কোন জাহাজ!”
গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে তরী মাথার চুল খোঁপা করে ফেলল।কিছু খোলা চুল কানের দু পাশে রেখে সে নিজের দিকে তাকালো।তারপর ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল।ছিটকিনি খুলে দরজার হাতলে হাত রেখে টান দিতে তার বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো।দরজা খুলছে না।
মনের ভুল ভেবে সে আবার দরজায় টান দিল।একবার নয়,দু বার নয়,বার বার সে টান দিল এবং একটা সময় বুঝতে পারলো যে কেউ বাইরে থেকে দরজা লক করে দিয়েছে।ভয়ার্ত মুখে সে কয়েকবার দরজায় কড়াঘাত করলো।কোনো প্রতিত্তর এলো না।কিছুক্ষণ বিমূঢ় হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো সে।হঠাৎ এক দৌঁড়ে জানালার দিকে এগিয়ে গেল।কাচ সরিয়ে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো, গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বিয়ের বাস,মাইক্রো কোনোটাই নেই!তাকে না নিয়েই চলে গেল সবাই?
চোখের কোণে জলের অস্তিত্ব অনুভব করলো তরী।খট করে দরজা খোলার শব্দে সে পেছন ঘুরে তাকাল।কালো পাঞ্জাবির উপর সোনালি কারুকার্য পরিহিত নির্ঝর দরজা ঠেলে রুমের ভেতরে ঢুকলো।তরীর বিস্ময়মিশ্রিত চোখের দিকে এক পলক চেয়ে আচমকা ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিল সে।
apu ey golper porer part gula den na kno … golpo ta kob interesting porer partgula taratare den….
Apu eii golper part gulo den onkdin thekei to den na
Sob part ak sathe video dewa ase ai part last a to video add kore dewai ase na dekhe thakle giye dekhen abar