আমার মেয়ে || writter – Khadija Akter || Valobashar golpo

আমার মেয়ে পর্ব ১
Khadija Akter

— “তোমার গর্ভের এই সন্তানটি আমার মা চায় না।”
–কিন্তু সন্তানটি আমি চাই রাশেল!
–তোমাকে শুরুতেই বলেছিলাম,আমার মায়ের কোনো কথায় অবাধ্য না হতে।এই একটা শর্ত মানিয়েই তোমাকে বিয়ে করে এনেছিলাম।আমাদের সংসারে থাকতে হলে আমার মায়ের সব কথা মানতে হবে।
তাই আমার মা যা বলছে তুমি তাই করবে।

–আমি তোমার মায়ের সব কথাই শুনে চলি আর তুমি তা বেশ ভালো করেই জানো রাশেল।কিন্তু তাই বলে তোমার মায়ের নির্দেশে আমি আমাদের বাচ্চাকে হত্যা করবো রাশেল?সিরিয়াসলি?
–তুমি যে বাচ্চাকে এখনো জন্মই দাওনি, সে বাচ্চাকে হত্যা করার কথা কেনো আসছে?কেউ কিছুই বুঝতে পারবে না,তুমি শুধু মায়ের কথা মতো চলো।

–নো ওয়ে,আমি কিছুতেই এই বাচ্চার কিছু হতে দিব না।সন্তানটিকে আমি ফীল করি রাশেল,জীবন্ত একটা সত্ত্বা আমার মধ্যে তিলতিল করে বেড়ে উঠছে।এই ছোট্ট মাসুম বাচ্চাটিকে আমি কি করে মেরে ফেলতে পারি!
–অত কথা শুনতে চাই না,কাল ক্লিনিকে যাব।রেডি থেকো।
দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আর মাত্র ১ মাস পর যখন আমি আমার গর্ভের সন্তানটিকে পৃথিবীর আলো দেখাবো,তখনই বাঁধ সাধলো আমার বাবুর বাবা।
তার মা অর্থাৎ আমার শাশুড়ী নাকি এই বাচ্চা চায় না!এই বাচ্চা যেনো পৃথিবীতে জীবিত অবস্থায় ডেলিভারি না হয় সেই ব্যবস্থা করতে বললেন আমাকে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমার অনাগত সন্তানের একটাই দোষ কারন সে পুরুষ লিঙ্গের অধিকারী নয়!
যে শিশুটি আমার গর্ভে বেড়ে উঠছে সে একজন কন্য সন্তান।
পরদিন তো আমার শাশুড়ী আর স্বামী মিলে আমাকে বেশ জোর করেই একটা স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলেন।ইনজেকশন দিয়ে পেটের ভিতরেই বাচ্চাটাকে মেরে ফেলার ইচ্ছা উনাদের।
ওয়াশরুমের নাম লরে তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আমি সেখান থেকে পালিয়ে আমার বাপের বাড়ি চলে আসলাম।
আমার স্বামীরা ৫ ভাই,তাদের কোনো বোন নেই।ভাইদের মধ্যে আমার স্বামীই সবচেয়ে ছোট।তার অন্যান্য ভাইয়ের ঘরেও কোনো মেয়ে সন্তান নেই!সবার ঘরেই ৩/৪ টা করে ছেলে সন্তান।সবাই যৌথভাবেই থাকি আমরা।
নতুন নতুন বিয়ে করে যখন ঐ বাড়িতে পা রেখেছিলাম,তখন থেকেই একের পর এক অদ্ভুত নিয়ম কানুন দেখে আসছি ঐ বাড়ির।

কোনো একদিন কথায় কথায় বড় জা’কে বলেছিলাম,”কি অদ্ভুত তাই না ভাবী!আপনাদের কারো সংসারেই আল্লাহ একটা মেয়ে দিল না।অথচ মেয়ে ছাড়া এতো বড় সংসারটা একদমই পরিপূর্ণ লাগছে না।”
বড় জা আমার কথা শুনে কিছুই বলেনি সেদিন,শুধু একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ছেড়েছিলেন।
তার আরও কিছুদিন পরে মেজো জা’য়ের কাছ থেকে জানতে পেরেছিলাম আমাদের এতো বড় সংসারে কোনো মেয়ে সন্তান না থাকার আসল কারণ।
আমার জা’য়েদর গর্ভে মেয়ে সন্তান আসলেই নাকি আমার শাশুড়ী বিভিন্ন লতাপাতা আর বোনাজি ওষুধ খাইয়ে ভ্রুন অবস্থাতেই বাচ্চাকে নষ্ট করে দেন।

আর মায়ের এই কাজে ছেলেরা কোনো রকম আপত্তিও করে না বরং প্রত্যেকে পূর্ণ সম্মতি দেয়।
গর্ভে ছেলে সন্তান আসলেই সবাই খুব খুশি।যদি দেখে ছেলে হবে তাহলে সেই বউকে মাথায় করে রাখা হবে যতদিন না পর্যন্ত বাচ্চা ভূমিষ্ট হচ্ছে। কিন্তু যদি মেয়ে হয়! মেয়ে হলে তো শাশুড়ী তার নিজের আপন পদ্ধতি অবলম্বন করেন।
আমার শাশুড়ীর মতে,মেয়ে সন্তান নাকি একটা অভিশাপ যা তাদের বংশে কালি লাগিয়ে দিবে!তাই জন্মের আগেই মেরে ফেলা হয় কন্য সন্তানদের!

রাশেল মানে আমার স্বামীর বাড়িতে আরেকটা নিয়ম হলো,কেউ ক্লিনিকে গিয়ে আল্ট্রা করতে পারবে না।যতটা সম্ভব বাড়ির বউদের ডাক্তারি চিকিৎসা থেকে দূরে রাখেন আমার শাশুড়ী।
তিনি নিজেই বউয়ের পেট দেখে টিপেটুপে বলে দিবেন,গর্ভে যে শিশুটা বড় হচ্ছে সে ছেলে নাকি মেয়ে!
কি আশ্চর্য! এই যুগেও এরকমটা হচ্ছে!
এরকম অদ্ভুত কথা শুনার পর থেকেই আমার মনটা সবসময় দুরুদুরু করতে থাকে।
সবসময় ভাবতে থাকি,একদিন না একদিন তো আল্লাহর রহমতে আমার গর্ভেও সন্তান আসবে।আর সেই সন্তান যদি মেয়ে সন্তান হয়!তাহলে আমি কি করে আমার নিষ্পাপ বাচ্চাকে এভাবে ঝরে যেতে দেখবো।
আমার জা’য়েরা সবাই অশিক্ষিত আর গরীব ঘরের সন্তান বিধায় সব কিছু চুপচাপ মেনে নিয়ে মুখ বুজে পড়ে থাকে স্বামীর সংসারে।
কিন্তু আমি?আমি ও গরীব ঘরের সন্তান কিন্তু আমি তো অশিক্ষিত নই,আমি কি করে এই অন্যায় মেনে নেই!

আমি যে পড়াশোনা করি তা আমার শাশুড়ী একদমই দেখতে পারতেন না,তাই মাস্টার্স পরীক্ষার ৪ মাস আগেই রাশেলকে দিয়ে অনেক বলিয়ে অনুরোধ করে তারপর চলে এসেছিলাম বাপের বাড়ি।
আমাকে পড়তে দেখলেই নাকি শাশুড়ীর গায়ে আগুন জ্বলে।তার চোখের সামনে আমাকে পড়তে দেখতে নাহয় সেজন্যই বাপের বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন তিনি।
বাপের বাড়ি যাওয়ার কিছুদিন পরেই বুঝতে পারি আমি অলরেডী ১ মাসের প্রেগন্যান্ট।
আমি ভয়ে তখন শ্বশুর বাড়ির কাউকেই জানাইনি,এমনকি রাশেলকেও না।আগে নিজে নিশ্চিত হয়ে নিতে চেয়েছিলাম আমার গর্ভের শিশুটি ছেলে নাকি মেয়ে!

৪ মাস পর আমার মাস্টার্সের পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষা শেষ হতে আরও ২ মাস লেগে যায়।
তখন আমি ৭ মাসের প্রেগন্যান্ট।এরকম বাচ্চা গর্ভে নিয়ে অনেক কষ্ট করে,ঝড়ঝাপটা সামলে পরীক্ষাগুলো শেষ করতে হয়েছে।
ইতিমধ্যে আমি জেনে গিয়েছিলাম যে আমার গর্ভে যে সন্তানটি বড় হচ্ছে ধীরে ধীরে, সে কোনো ছেলে সন্তান নয়,বাচ্চাটি মেয়ে!
এই ৭মাসে রাশেল ৩/৪ বার আমার সাথে দেখা করতে আসলেও আমি তার সামনে কখনো বুঝতে দেইনি কিছু,সেও সহজ সরল ধরণের তাই কিছুই বুঝেনি।

তাছাড়া আমার বাবার বাড়ির পরিবেশ তেমন একটা ভালো না হওয়ায় রাশেল এসে নিজেই বেশিক্ষণ থাকতে চাইতো না,তাড়াতাড়ি চলে যেত।আমার জন্য এটা বেশ সুবিধাই হয়েছিল।
কিন্তু পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরেও আমি যখন শ্বশুরবাড়িতে যেতে চাচ্ছিলাম না।রখন একদিন না জানিয়ে শাশুড়ী নিজেই আমার বাবার বাড়িতে এসে উপস্থিত হোন।
ঠিক সেদিনই ঘটলো আসল বিপত্তিটা।

আমার মেয়ে পর্ব ২